৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)

মাইকেল এইচ. হার্ট

পুরো নাম মাইকেলেঞ্জেলো বুয়োনারত্তি। বাবার নাম লোদভিকো। মাইকেলেঞ্জেলোর জন্মের ১৪৭৫ পরেই তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাধ্য হয়েই তার জন্যে ধাত্রী নিয়োগ করা হল। ধাত্রী একজন পাথর খোদাইকারীর স্ত্রী। নিজেও অবসরে পাথরের কাজ করতো।

ছয় বছর বয়সে মা মারা গেলেন মাইকলেঞ্জেলোর। তিন বছর এক অস্থির টানাপোড়েনে কেটে গেল। দশ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেন। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পাশ করার পর ব্যবসা করবে। কিন্তু ছেলের ইচ্ছে অন্য রকম, পাড়ার একটি ছেলে গিরলানদাইও নামে এক শিল্পীর কাছে ছবি আঁকা শেখে।

একদিন বাবার কাছে প্রসঙ্গটা তুলতেই লোদভিকো গর্জে উঠলেন। কিন্তু মিকেলেঞ্জেলোর প্রচণ্ড আগ্রহের কাছে শেষ পর্যন্ত তাকে মাথা নত করতে হল। ১৩ বছর বয়সে ভর্তি হলেন গিরলাদানাইওর স্টুডিওতে। স্কুলের পড়া শেষ হল, শুরু হল ছবি আঁকা।

বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। একদিন ঘুরতে ঘুরতে মাইকেলেঞ্জেলো এসে পড়লেন মেদিচি (ফ্লোরেন্স গণরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রধান) প্রাসাদের কাছে। চোখে পড়ল স্কালপচার গার্ডেন। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন। কি অপূর্ব সব মূর্তি সাজানো রয়েছে চারদিকে। দেহের আকৃতি চোখের তারায় মুখের ভাবে তারা যেন এক রক্ত মাংসের প্রতিমা। কিছুদিনের মধ্যেই ডাক পেলেন ভাস্করদের স্কুল থেকে।

*****

কি মূর্তি পড়বেন মাইকেলেঞ্জেলো! হঠাৎ মনে পড়ে গেল একটা বইতে পড়েছিলেন প্রাচীন রোমের অরণ্য দেবতা ফনের কথা। অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশু। চোখ বুজতেই মনের কল্পনায় ফুটে উঠল সেই রূপ, চকখড়ি দিয়ে পাথরের উপর আঁকতে বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফনের বিচিত্র চেহারা ফুটে উঠল পাথরের উপর।

তিনদিন অবিশ্রান্ত কাজ করার পর শেষ হল মূর্তি। যেন জীবন্ত ফন পৌরাণিক জগৎ থেকে উঠে এসে দাঁড়িয়েছে স্কালপচার গার্ডেনে।

কয়েকদিন পর স্কালচার গার্ডেনের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন লরেঞ্জ দ্য মেদিচি। এখানকার প্রতিটি মূর্তি তার চেনা কিন্তু এই নতুন মূর্তিটি কোথা থেকে এল। দাঁড়িয়ে পড়লেন লরেঞ্জ। তাকে দেখেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন মিকেলেঞ্জলো। তাঁর দিকে ফিরে লরেঞ্জ বললেন, কে এই মূর্তি তৈরি করেছে?

–ইওর এক্সলেন্সী! আমি এই মূর্তি তৈরি করেছি।

-তোমার ফনকে দেখে তো মনে হচ্ছে বৃদ্ধ তাই না? বৃদ্ধ মানুষের মুখে কি সব ক’টা দাঁত থাকে?

থমথম খেয়ে গেলেন মাইকেলেঞ্জেলো। একথা তো তার মনে আসেনি। কিছু বলার আগেই মেদিচি তার পিঠে সামান্য চাপড় মেরে এগিয়ে গেলেন।

লরেঞ্জ চলে যেতেই কয়েক মুহূর্তে চিন্তা করলেন মাইকেলেঞ্জেলো, তারপর ছেনি তুলে নিলেন। পরদিন বাগানে আসতেই ফনের মূর্তির দিকে চোখ পড়ল লরেঞ্জের। তার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন বারতোলদো। লরেঞ্জ তাকে বললেন, কি ব্যাপার, একদিনে ফনের বয়স মনে হচ্ছে কুড়ি বছর বেড়ে গিয়েছে। ওপরের দুটো দাঁত নেই, নিচের একটা দাঁত নেই, মুখের উপরে চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, এতটুকু ভুল নেই কোথাও।

বারতোলদো বললেন, গতকাল আপনি চলে যাবার কিছুক্ষণ পর মাইকলেঞ্জেলো এই কাজ করেছে।

মুগ্ধ হলেন লরেঞ্জ। বললেন, এখন থেকে ওকে আর বাইরে থেকে যাতায়াত করতে হবে না। ও আমার প্রাসাদে আমার পরিবারের সঙ্গেই থাকবে। এখান থেকেই ও সব কিছু শিখবে।

মেদিচি প্রাসাদ। শুরু হল মাইকলেঞ্জেলোর নতুন জীবন। এখানে কবি শিল্পী সাহিত্যিক, দার্শনিকদের সান্নিধ্য এগিয়ে চলল তার সাধনা।

হঠাৎ ফ্লোরেন্সের মাটিতে আবির্ভূত হল এক মূর্তিমান কালাপাহাড়। ফ্লোরেন্সের প্রধান গীর্জার যাজক হিসাবে নির্বাচিত হয়েই সাভানারোল হুঙ্কার ছাড়লেন, মেদিচিরা স্বৈরাচারী, তারা শিল্পের নামে সাহিত্যের নামে যা করছে তা ধর্মবিরুদ্ধ। বর্তমানে মানুষ যা করছে তা অন্যায়, পাপ।

মাইকেলে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ক্রমশই সাভানারোলের প্রভাব বেড়ে চলে। লরেঞ্জ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অবস্থার মধ্যেই মাইকেল দুটি মূর্তি তৈরি করলেন– ম্যাডোনা, সেন্টারের যুদ্ধ। আর একটি নতুন মূর্তির কাজে হাত দিয়েছেন এমন সময় খবর এল লরেঞ্জ মারা গিয়েছেন। লরেঞ্জের বড় ছেলে পিয়েরো তার পিতার আসনে বসলেন। তবু মিকেলের মনে হল তাঁর জীবনের আদর্শ পুরুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। এ আসন আর পূর্ণ হবার নয়।

মাইকেলের মনে হল আর এখানে থাকা সম্ভব নয়, রওনা হলেন বেলেনায় কিন্তু সেখানেও অশান্তির আগুন। আবার ফ্লোরেন্সে ফিরে এলেন।

নিজের কাছে সামান্য যেটুকু অর্থ ছিল তাই দিয়ে কিনলেন একটুকরো পাথর। কয়েকদিনের মধ্যেই তাই দিয়ে তৈরি করলেন এক “কিউপিড” এক শিশুমূর্তি মাথার তলায় হাত দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এক বন্ধু পরামর্শ দিল পুরনো জিনিস বলে বেঁচে দাও, ভাল দাম পাবে। মাইকেলেঞ্জেলো তাতে সায় দিলেন, ব্যবসাদার বন্ধু তখন নিজেই কিনে নিলেন। রোমে গিয়ে কার্ডিনাল রিয়ারিয়োকে বিক্রি করবার সময় ধরা পড়ে গেলেন। বিরারিয়ো বুঝতে পারলেন, এটি কোন প্রাচীন শিল্পকর্ম নয়। কিন্তু তার ভাল লাগল মূর্তির কাজ। শিল্পীকে দেখার আকাঙ্ক্ষায় লোক পাঠালেন ফ্লোরেন্সে।

শেষ পর্যন্ত পোপের আদেশে সাভনারোলোকে বন্দী করা হল। অসহ্য নিপীড়ন করে ১৪৯৮ সালের ২৩ মে সাভানারোলকে পুড়িয়ে মারা হল। শেষ হল দুঃস্বপ্নের যুগ। কিন্তু সেখানে থাকতে আর মন চাইছিল না মাইকেলেঞ্জেলোর। এমন সময় রোম থেকে কার্ডিনালের ডাক এল। আর অপেক্ষা করলেন না। যাত্রা করলেন রোমের উদ্দেশ্যে।

কার্ডিনাল রিয়ারিয়ে তাকে একটা ৭ ফুট পাথর দিয়েছেন, কিন্তু কাজ আরম্ভ করবার অনুমতি দেননি।

মাইকেলেঞ্জেলোর মনে হল আর কিছুদিন এভাবে বসে থাকলে এতদিন ধরে যা কিছু শিখেছিলেন তার সব কিছু ভুলে যাবেন। মনের আনন্দে দিনরাত কাজ করে চলেন। মাত্র তিনদিনে শেষ হল কিউপিড। ছোট্ট এক শিশু, একরাশ উজ্জ্বল হাসি ছড়িয়ে আছে তার কচিমুখে।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন। হঠাৎ একদিন রোমের রাজপথে দেখা হল বালদুচ্চির সঙ্গে। ছেলেবেলাকার বন্ধু এখন রোমের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কার ইয়াকোপো গাল্লির কর্মচারি। মাইকলেঞ্জেলোর কিউপিড দেখেই বালদুচ্চি বলে ওঠে এ মূর্তি তুমি আমার মনিব গাল্লির কাছে নিয়ে চল।

মূর্তি দেখে বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে গেলেন গাল্লি। এই মূর্তির জন্য তিনি ৭৫ ডুকাট দিলেন। একটি ছোট মূর্তির জন্য ৭৫ ডুকাট! আনন্দে তাঁর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।

গাল্লি শুধু তাকে উৎসাহ দিলেন না, নিজের বাগানবাড়িতে আশ্রয় দিলেন। তাঁর ভরণপোষণের সব ব্যয়ভার করলেন।

তারই চেষ্টায় বড় কাজের দায়িত্ব পেলেন। একজন বৃদ্ধ কার্ডিনাল তাঁর উপাসনা কক্ষের জন্যে একটা মূর্তি গড়তে চেয়েছেন।

মাইকেলেঞ্জেলো নাম দিলেন পিয়েটা অর্থাৎ বেদনা। শুরু হল পিয়েটা, একটু একটু করে পাথরের বুক চিরে বেরিয়ে এল প্রথমে মেরীমাতা তারপর তার কোলের উপর শয়ন মৃত যীশু।

পাঁচ বছর কেটে গেল। অন্তরে মাতৃভূমি ফ্লোরেন্সের ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন মাইকেলেঞ্জেলো। একদিন শেষ রাতে রওনা হলেন ফ্লোরেন্সের দিকে।

ফ্লোরেন্সে এসেই মাইকেলেঞ্জেলো শুনলেন সতেরো ফুট লম্বা বিরাট একটা পাথর দিয়ে চারদিকে বহু আলোচনা চলেছে। এর মালিক স্থানীয় উল ব্যবসায়ী সমিতি কিছুতেই স্থির করতে পারছিলেন না, তারা এই বিরাট এবড়ো-থেবড়ো মার্বেল পাথরটিকে নিয়ে কি করবেন।

মাইকেলেঞ্জেলো গিয়ে দেখা করলেন সোদেরিনির সাথে। দুজনেই পূর্ব পরিচিত। সামান্য দ্বিধাগ্রস্ত সোদেরিনি। শেষ পর্যন্ত তার মনে হল কে জানে সমস্ত ইটালিতে এই একমাত্র পুরুষ যে পারবে এই পাথরে ফুল ফোঁটাতে।

মাইকেলেঞ্জেলোর মনে হল শক্তি আর আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যেই জন্ম নেবে তার ডেভিড। কাজ শুরু হল। কি নিষ্ঠা আর একাগ্রতা! প্রতিটি মানুষ বিস্ময়ে অবাক হয়ে যায় কি অমানুষিক পরিশ্রম করে চলেছেন মাইকেলেঞ্জেলো। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা পার হয়ে যায়, অবশেষে শেষ হল বিশাল আকৃতির ডেভিড। ব্যঞ্জনা আর অভিব্যক্তিতে মনে হল বাইবেলের যুগ থেকে ফ্লোরেন্সের মাটিতে উঠে এসেছে এক জীবন্ত ডেভিড।

ডেভিডের কাজ শেষ হবার কিছুদিন পরেই রোম থেকে ডাক এল। এবার আমন্ত্রণ করেছেন স্বয়ং পোপ। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরেন্স ত্যাগ করে রোমের পথে যাত্রা করলেন মাইকেলেঞ্জেলো।

কিন্তু দুর্ভাগ্য মাইকেলেঞ্জেলোর। ষড়যন্ত্রে মাসের পর মাস চুপচাপ বসে রইলেন। অবশেষে বিরক্ত হয়ে ফিরে এলেন ফ্লোরেন্সে।

ফ্লোরেন্সে ফিরে আসতেই আবার ডাক এল পোপের কাছ থেকে। বাধ্য হয়ে আবার ফিরে এলেন রুমে।

এবার পোপ আদেশ দিলেন সিসটাইন চ্যাপেলের ভেতরের ছাদে প্রভু যীশু আর তাঁর বারোজন শিষ্যের ছবি আঁকতে হবে।

সিটাইন চ্যাপেল। ভ্যাটিকান সিটির প্রধান চ্যাপেল। আকৃতি আর বৈশিষ্ট্যে বিরাট কেল্লার মত। প্রায় তিনতলা সমান উঁচু। আকাশের মত উঁচু ছাদ।

বিশাল ভারা হল। আঁকার সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে ভারা বেয়ে উপরে উঠলেন। উপর থেকে চারদিকে পুরো ছাদটা তিনটে ভাগে বিভক্ত। একপ্রান্তে শুরু হল ১২ জন শিষ্যের ছবি। বাইবেলের বর্ণনা আর ধ্যানের কল্পনা দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে হবে এই ছবি।

তাঁকে সাহায্য করবার কেউ নেই। যারাই আসে, কাজের চাপে পালিয়ে যায়। একা একা কাজ করে চলেন মিকেলেঞ্জেলো। কখনো বসে কখনো শুয়ে, কখনো কাত হয়ে, কখনো হেলে। গায়ের উপর রং ঝড়ে পড়ে, চোখে রঙের ছিটে লাগে। ঘাড় টন টন করে, ক্লান্তিতে শরীর অবশ হয়ে আসে।

ভারার উপরেই শুয়ে পড়েন। আঠারো-কুড়ি ঘণ্টা কাজ করতে করতে ভুলে যান সব ক্ষুধা তৃষ্ণা, পোশাক পাল্টাবার কথা, দশ-বারো দিন পর অর্ধমৃত মানুষের মত নেমে আসেন, তারপর আবার উঠে যান। এতটুকু বিশ্রাম নেবার অবকাশ নেই। এ তাঁর সৃষ্টির সাধনা।

এক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হল। প্রথমে চিত্রকরের কাজ বলে যাকে অবহেলা করেছিলেন এখন তাই তাকে গভীরবাবে আকর্ষণ করছে। পোপের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। অন্য দুটি ছাদে আঁকবেন বাইবেলের সৃষ্টির আর ধ্বংসের চিত্র। হাসিমুখে পোপ অনুমতি দিলেন।

প্রথমে শুরু করলেন আদম ইভ আর স্বর্গোদ্যানের চিত্র। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন পৃথিবী, পানি, আকাশ, জীবজন্তু সব শেষে মানুষ। প্রথম মানুষ আদম ইভের কাহিনী, স্বর্গ থেকে বিচ্যুতি।

দুবছর কেটে গেল এই কাহিনী শেষ করতে। তারপর প্রলয় প্লাবন। সমস্ত পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ তাই ক্রুদ্ধ ঈশ্বর পৃথিবীতে মহাপ্লাবন ডেকে এনেছেন। সবাই ডুবে যাচ্ছে শুধু নোয়া তরণী নিয়ে ভেসে যাচ্ছে।

দীর্ঘ চার বছর বাদে শেষ হল সিসটাইল চ্যাপেলের বিরাট চিত্র। সৃষ্টির ব্যাপ্তিতে গভীরতম উৎকর্ষতায় সিসটাইনের এই চিত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি।

নতুন পোপের অনুরোধে ফ্লোরেন্সে ফিরে গিয়ে মেদিচি পরিবারের জন্য তৈরি করলেন দুটি সমাধি মন্দির। উপরে মেদিচি পরিবারের দুজনের প্রতিমূর্তি। নিচে একদিকে দুটি নারীমূর্তি। তারা ঊষা আর রাত্রি। অন্যদিকে দুটি পুরুষমূর্তি সন্ধ্যা আর দিন–বেঁনেসার প্রাণসত্তার পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে এই মূর্তিগুলোর মধ্যে।

ফ্লোরেন্সের কাজ শেষ করে ফিরে এলেন রোমে। তখন নতুন পোপ হয়েছেন তৃতীয় পল। লরেঞ্জের আদর্শে মানুষ মাইকেলেঞ্জেলোকে ডেকে বললেন, তুমি আগেকার পোপেদের অমর করেছ তোমার সৃষ্টির মধ্যে। এবার আমার ইচ্ছা পূর্ণ কর। তুমি জান সিসটাইন চ্যাপেলের সবচেয়ে বড় দেওয়ালটা এখনো ফাঁকা পড়ে রয়েছে, ওখানে তুমি শেষ বিচারের ছবি আঁক। আমি মনে করি তুমিই ইটালির শ্রেষ্ঠ শিল্পী, তুমিই পারবে এই কাজ করতে।

ছবি দেখে দুচোখ আঙুল চাপা দিল সকলে। ছি ছি প্রভু যীশু মাতা মেরী কারো গায়ে একটু টুকরো পোশাক নেই। এ দেখাও পাপ। প্রতিবাদের গুঞ্জন উঠল চারদিকে, কিন্তু পোপের সমর্থন থাকায় মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারল না। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর শেষ হল শেষ বিচার।

শেষ বিচারের পর্বেই মাইকেলেঞ্জেলোর জীবনে এলেন ভিত্তোরিয়া। রোমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। বিদুষী কবি ধর্মীয় সাধিকা। বয়স ছেচল্লিশ।

জীবনের প্রৌঢ় বেলায় (তেষট্টি বছর বয়সে) মাইকেলেঞ্জেলোর সাথে আলাপ হল ভিত্তোরিয়ার। প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হলেন। তাঁর ব্যথাভরা দিনগুলোর কথা শুনতে শুনতে নিজের অন্তরে অনুভব করলেন গভীর আকর্ষণ। এতদিন শিল্পের জন্যেই জীবনের প্রতি তার ছিল আকর্ষণ, এবার এল মানবীয় বোধ।

রাতের বেলায় মোমবাতির সামনে বসে একটা কবিতা লিখলেন। কতদিন কবিতা লেখেননি। ভিত্তোরিয়া তার মনের মধ্যে সেই কবিসত্তা আবার জাগিয়ে তুলেছে। শুরু হল কবিতা লেখা লোহার মত কঠিন হাত থেকে এবার ঝরে পড়তে থাকে প্রভাতের মত স্নিগ্ধ সনেটগুচ্ছ।

পোপ পল আবার ডেকে পাঠালেন। এবার দায়িত্ব পড়ল অসমাপ্ত সেন্ট পীটার্স গীর্জার কাজ শেষ করতে হবে।

কাজ শুরু হল। কি উদ্যম আর পরিশ্রম। হু হু করে কাজ এগিয়ে চলল। দেরি করার মত আর সময় নেই। এমন সময় খবর এল ভিত্তোরিয়া মৃত্যুশয্যায়। মিকেলেঞ্জেলো ছুটে গেলেন। অচেতন হয়ে শুয়ে আছেন ভিত্তোরিয়া। কাগজের মত সাদা তবু মনে হল তার মধ্যে ফুটে উঠেছে এক অপার্থিব সৌন্দর্য।

হঠাৎ পোপ তৃতীয় পল মারা গেলেন। নতুন পোপ হলেন চতুর্থ পল। মাইকেলেঞ্জেলোর প্রতি তার গভীর ঘৃণা আর বিদ্বেষ। পোপ হয়েই তিনি আদেশ দিলেন শেষ বিচারের ছবি অশ্লীল। এ ছবি সিসটাইন চ্যাপেলের দেওয়াল থেকে মুছে ফেলে দেওয়া হোক।

কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় তুললেন রোমের শিল্পীরা। বেঁনেসার নব চেতনা তাদের মনের সব অন্ধকার দূর করে এক নতুন আলোয় রাঙিয়ে দিয়েছে। তাই আদেশ দিলেন শেষ বিচার। (Last Judgment) মুছে ফেলা হবে না। শুধু ছবির নগ্নতা ঢেকে দিতে হবে পোশাকের আবরণে। আর এ কাজের ভার পড়ল মাইকেলেঞ্জেলোর ছাত্র দানিয়েল দ্য ভলতেরার উপর। চারদিকে ভলতেরার নাম ছড়িয়ে পড়ল।

কৌতুকভরে কিম্বা কট্টরপন্থীদের যোগ্য জবাব দেবার জন্যেই আঁকলেন লেডা ও হাঁস। তার কোন সৃষ্টিতেই কামনার প্রকাশ নেই। এ ছবিতেই প্রথম আঁকলেন নগ্ন লেডা শুয়ে আছে আর হাসরূপী দেবতা তাকে জড়িয়ে আছে। মিলনের আনন্দে তারা বিভোর। কিন্তু ধর্মীয় গোড়ামিতেও এ ছবি চিরকালের মত হারিয়ে গিয়েছে।

লেডা ও হাঁসের মত মিকেলেঞ্জেলোর আরো অনেক সৃষ্টিই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাঁর যে সৃষ্টি কালকে অতিক্রম করে বেঁচে আছে তাতেই তিনি মহত্তম শ্রেষ্ঠতম।

জীবন শুরু করেছিলেন ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে। তারপর চিত্রকর, তারপর কবি, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হলেন সেন্ট পিটার্স গীর্জার স্থপতি।

১৫৬৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, গীর্জার কাজ শেষ হয়ে এসেছিল। অসুস্থ মাইকেলেঞ্জেলো বিছানা থেকে জানলা দিয়ে দীর্জার দিকে তাকালেন।

মাইকেলেঞ্জেলোর মনে হল শিল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি সমস্ত জীবন ধরে যে পরিপূর্ণ মুক্তির অন্বেষণ করেছেন, এতদিনের তার পালা শেষ হয়েছে। এবার পরিপূর্ণ বিশ্রাম। পরম তৃপ্তিতে চোখ বুজলেন মাইকলেঞ্জেলো।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন