৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)

মাইকেল এইচ. হার্ট

১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চীনের হুনান প্রদেশের এক গ্রামে মাও জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে অবস্থাপন্ন। চাষবাসই ছিল তার প্রধান পেশা। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই পড়াশুনা করতেন। পড়াশুনার প্রতি তার ছিল গভীর আগ্রহ। পাঠ্যসূচির বাইরে যখন যে বই পেতেন তাই পড়তেন। তাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করত চীনের ইতিহাস, বীর গাথা। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাও ছিলেন সবচেয়ে বড়।

পরে তার দুই ভাই কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিহত হয়। গ্রামের স্কুলের পাঠ শেষ করে কিছুদিন গ্রামেই পড়াশুনা করলেন। প্রায় জোর করেই বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হুনানের প্রাদেশিক শহরে এলেন। ভর্তি হলেন এখানকার হাই স্কুলে। এই সময় নিয়মিত স্থানীয় লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশুনা করতেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি লাইব্রেরীর অর্ধেকের বেশি বই পড়ে শেষ করে ফেলেছিলেন।

১৯১৮ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি এলেন পিকিং শহরে। এই প্রথম তিনি প্রদেশ ছেড়ে বার হলেন। জীবনের এই পর্যায়ে দুবেলা দুমুঠো খাবার সংগ্রহের জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হত।

এক বছর পর মাও ফিরে এলেন তার গ্রামে। স্থানীয় একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পেলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি সমতাদর্শী কয়েকজন তরুণকে সাথে নিয়ে একটি পত্রিকা প্রকাশ করলেন।

১৯২১ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠল। এর ৫০ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে মাও-ও ছিলেন।

ইতিপূর্বে মাও বেশ কিছু রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় চীনে সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বের কুয়োমিংতাং দল অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। চীনা কমিউনিস্ট দল (CCP) এবং কুয়োমিংতাং (K.M.T) এর মধ্যে সংযুক্ত ঐক্য গড়ে উঠল।

রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির তরফে এই ঐক্যকে সমর্থন জানানো হল। চিয়াং কাইশেক গেলেন মস্কোতে। সেখানে তাকে সান ইয়াৎ সেনের উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করা হল।

ইতিমধ্যে মাও বিবাহ করেছেন তার এক শিক্ষকের কন্যাকে-ইয়াং কাই হুই। হুই পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অবস্থাতেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সেই সূত্রেই দুজনে নিকট সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৩০ সালে আন্দোলনের কাজে জড়িত থাকার সময়েই নিহত হন হুই।

CCP এবং KMT দুই রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রভেদ প্রকট হয়ে উঠল। মাও-এর উপর ভার ছিল এই দুটি দলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা।

চীন ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক দেশ। দেশের শতকরা আশি জন মানুষই ছিল কৃষিনির্ভর। তৈরি হল জাতীয় কৃষক আন্দোলন সংগঠন। এই সংগঠনের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হল মাও-এর উপর।

অল্পদিনের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি এবং মাও-এর সামনে এক সংকট দেখা দিল।

মাও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছিলেন গতানুগতিক পথে নয়, কৃষকদের মধ্যে থেকেই বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। ১৯২৭ সালে তিনি হুনানের কৃষক আন্দোলনের উপর এক বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে পার্টি নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানালেন, অবিলম্বে দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলা হোক। দলের অধিকাংশেরই এ ব্যাপারে সম্মতি ছিল না। তারা কৌতুক করে বলত ‘গেঁয়োদের আন্দোলন। মাওয়ের প্রস্তাব সমর্থিত হল না। তা সত্ত্বেও দলের মধ্যে বেশ কিছু সদস্য এর সমর্থনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এল।

কৃষক আন্দোলনের প্রতি এই প্রকাশ্য সমর্থনে কুয়োমিংতাং এর সাথে বিরোধ প্রকট হয়ে উঠল। সাথে সাথে কুয়োমিংতাং এর সভাপতি চিয়াং কাইশেক-এর কমিউনিস্ট বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল। দেশ জুড়ে শুরু হল কমিউনিস্টদের প্রতি সক্রিয় বিরোধিতা। নিষিদ্ধ করা হল কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে। দলের অধিকাংশ নেতাকে বন্দী করা হল। সাধারণ কর্মচারীদের উপর শুরু হল অত্যাচার।

মাও সে তুং আত্মগোপন করে পালিয়ে এলেন হুনানে। নতুন করে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে হাত দিলেন। সেই সময় ফসল কাটার কাট শুরু হয়েছে। মাও ক্ষেতমজুরদের নিয়ে শুরু করলেন ‘শরঙ্কালীন শস্য আন্দোলন’। কিন্তু আন্দোলনের বিস্তার ঘটার আগেই চিয়াং কাইশেকের অনুগামীরা ঝাঁপিয়ে পড়ল আন্দোলনকারীর উপর। নির্মম হাতে ভেঙে দেওয়া হল আন্দোলন। ধরা পড়লেন মাও। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হল। কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় বন্দীদশা থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচালেন মাও।

কিন্তু তার এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাল না কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। মাওকে দলের পলিটব্যুরো এবং দলের সাধারণ সমিতি থেকে পদচ্যুত করা হল।

মাও দলের মধ্যে এতখানি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদান্তে সামান্যতম বিচলিত হলেন না। তিনি তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে উৎখাত করা সম্ভব হবে না। উত্তর ও মধ্য চীনে গড়ে তোলা হল ছোট ছোট বিপ্লবী সংগঠন। হুনানের সীমান্ত প্রদেশে মাও সংগঠিত করলেন প্রায় এক হাজার কৃষককে। রাত কাটাতে হয় পাহাড়ে-জঙ্গলে। সেখানেই চলে মহড়া।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এক দল সৈন্য পাঠানো হল। মাও জানতেন মুখোমুখি যুদ্ধে জয়লাভ অসম্ভব। শুরু হল পাহাড়-জঙ্গল থেকে অতর্কিতে আক্রমণ। কয়েকদিনের মধ্যেই পরাজিত হল সমস্ত সেনাবাহিনী। তাদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হল।

প্রবল শীত আর অনাহারে কৃষক বাহিনীর অনেকেই মারা পড়েছে কিন্তু অদম্যমনোবল, সাহস আর উদ্যমে অবশিষ্টদের নিয়ে গড়ে তুললেন তার লাল ফৌজ। এই লাল ফৌজের সহায়তায় ছোট ছোট অঞ্চল দখল করে সেখানে স্বাধীন সরকার গড়ে তুললেন।

১৯২৮ সাল নাগাদ তার সাহায্যে কৃষক নেতা চু তে বিরাট বাহিনী নিয়ে এগিয়ে এলেন। চু মাও-এর নীতিতে বিশ্বাস করতেন।

এই সময় কমিউনিস্ট পার্টির অধিকাংশ সদস্যই আত্মগোপন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে তাদের কার্যদারা এতখানি সীমিত হয়ে পড়েছিল, মাও হয়ে উঠলেন কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম পুরোধা।

মস্কোতে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির আন্তজার্তিক সম্মেলনে স্টালিন মাও-এর বিপ্লবী প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানালেন। তাকে আবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করা হল।

চিয়াং কাইশেক তার বাহিনীকে আদেশ দিলেন কমিউনিস্টদের সমূলে বিনাশ করতে। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে চারবার বিশাল বাহিনী পাঠনো হল বিদ্রোহীদের দমন করবার জন্য। এই বাহিনী ছিল সম্পূর্ণ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত তবুও তারা জয়লাভ করতে পারেনি। এ পাহাড় অরণ্য অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল সৈন্যদের অগম্য কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ মাও-এর লাল ফৌজের অদম্য মনোবল এবং শৃঙ্খলাবোধ। লাল ফৌজের সাফল্যের পেছনে আরো একটি বড় কারণ ছিল স্থানীয় মানুষের সহায়তা।

চিয়াং অনুভব করতে পারছিলেন এর সুদূর প্রসারিত প্রতিক্রিয়া। তাই জার্মান সামরিক উপদেষ্টাদের পরামর্শ মত পঞ্চমবার প্রায় এক লক্ষ সৈন্যের বিশাল অভিযানের প্রস্তুতি নিলেন।

সামরিক বাহিনী বীরদর্পে এগিয়ে চলল। এই সুসজ্জিত বাহিনীর প্রতিরোধ করা সম্ভবপর ছিল না মাও-এর লাল ফৌজের। তারা ক্রমশই পিছু হটতে আরম্ভ করল। একের পর এক মুক্ত অঞ্চল অধিকৃত হতে থাকে চিয়াং কাইশেকের বাহিনীর।

লাল ফৌজ পিছু হটতে হটতে এসে কিয়াংসাই পার্বত্য প্রদেশে। এই স্থান প্রশিক্ষণের উপযুক্ত বিবেচনা করে মাও উত্তর-পশ্চিমে বিখ্যাত চীনের প্রাচীরের কাছে এসে আশ্রয় নিলেন।

১৯৩৪ সালের অক্টোবরে লাল ফৌজের শুরু হল ঐতিহাসিক অভিযান। এই অভিযান সহজসাধ্য ছিল না। পথের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টেও লাল ফৌজের মনোবল এতটুকু ভেঙে পড়েনি। প্রত্যেকেই ছিল মা-এর বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ। অবশেষে অক্টোবর ১৯৩৫ সালে তারা এসে পৌঁছল উত্তরের সেনসি প্রদেশে। এখানেই শিবির স্থাপন করলেন মাও। ইতিমধ্যে আরো বহু তরুণ কৃষক শ্রমিক এসে যোগ দিয়েছে লাল ফৌজে। সেখানে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হল। বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে আবার গড়ে উঠল মুক্ত স্বাধীন শাসনব্যবস্থা।

এই সময় একজন আমেরিকান সাংবাদিক এডগার স্নো বহু কষ্টে চীনা কমিউনিস্ট ঘটিতে গিয়ে পৌঁছান। তার এই অভিজ্ঞতার কথা পরবর্তীকালে বিবরণ দিয়েছেন তার বিখ্যাত “চীনের আকাশে লাল তারা” (Red star over China) বইতে। মাও সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন “যেমন মজার তেমনি গম্ভীর দর্বোদ্য প্রকতির মানুষ। তার মধ্যে জ্ঞান আর কৌতুকের এক আশ্চর্য সমন্বয় ঘটেছে। নিজের অভ্যেস পোশাক-পরিচ্ছদ সম্বন্ধে যতখানি উদাসীন, নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সম্বন্ধে ততখানিই সজাগ। কি অফুরন্ত প্রাণশক্তি, রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভাধর।

মাও একদিকে যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে জনজাগরণ গড়ে তুলছিলেন, অন্যদিকে তখন চিয়াং কাইশেকের বাহিনী দেশের শত শত কমিউনিস্ট ও তরুণ ছাত্রকে হত্যা করতে আরম্ভ করল। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও কৃষকের উপর চলতে থাকে নির্যাতন।

এই সময় উত্তরাঞ্চলে শুরু হল জাপানী আক্রমণ। জাপান সরকার বুঝতে পেরেছিল চীনের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছে কমিউনিস্ট বিরোধী অভিযানে।

মাও অনুভব করতে পেরেছিলেন জাপানী আক্রমণের বিপদ। তাই কুয়োমিংতাং এর সাথে ইতিপূর্বে তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে জাপানীদের প্রতিরোধ করতে চেয়েছিলেন।

এই সময় সেনসি প্রদেশের কাছে আকস্মিকভাবে বন্দী হলেন চিয়াং কাইশেক ও তার সেনাদল। লাল ফৌজের তরফে জোরালো দাবি উঠল চিয়াং কাইশেককে হত্যা করা হোক। মাও তার গভীর দূরদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন চিয়াং কাইশেককে হত্যা করে জাপানী আগ্রাসন রোধ করা সম্ভব নয়। তিনি তাকে মুক্তি দিলেন যাতে সম্মিলিতভাবে জাপানীদের আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

ইতিমধ্যে পৃথিবী জুড়ে শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। পরাজিত হল জাপানের সৈন্যবাহিনী। কিন্তু বিপ্লবের আগুন নিভল না। লাল ফৌজ তখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রান্তে প্রান্তে। চিয়াং কাইশেক উপলব্ধি করতে পারছিলেন মাও-এর নেতৃত্বে যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তাকে ধ্বংস করবার মত তার ক্ষমতা নেই। তাই আমেরিকার সাহায্য প্রার্থী হলেন। কিন্তু আমেরিকান মদতপুষ্ট হয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না চিয়াং কাইশেক। লাল ফৌজের সৈন্যবাহিনী চারদিক থেকে পিকিং শহর ঘিরে ফেলল। আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাহায্যে চিয়াং পালিয়ে গেলেন ফরমোসা দ্বীপে। ১লা অক্টোম্বর ১৯৪৯ সালে লাল ফৌজ পিকিং দখল করে নিল। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হল। তার চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হলেন পঞ্চান্ন বছরের মাও সে তুং। সমাপ্ত হল তার দীর্ঘ সংগ্রাম।

কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল মানুষের মন থেকে বিপ্লবের উন্মাদনা ক্রমশই ফিকে হয়ে আসছে হ্রাস পাচ্ছে মাও-এর জনপ্রিয়তা।

দেশে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল। নেতৃত্বের এক অংশ তার সাথে একমত না হলেও সরাসরি বিরুদ্ধাচারণ করতে সাহস পেল না। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত বৈশিষ্ট্য ছিল মানুষের স্বেচ্ছাকৃত উদ্যমের উপর। মাও বিশ্বাস করতেন আর্থিক কারণে নয়, আদর্শগত উৎসাহেই মানুষ কাজ করবে। কিন্তু অচিরেই প্রমাণিত হল তার বাস্তবতাশূন্য তাত্ত্বিক মতাদর্শের ব্যর্থতা।

দেশ জুড়ে শুরু হল কমিউনিস্ট নেতৃত্বের প্রতি তীব্র সমালোচনা। বিতর্কের ঝড় বয়ে গেল চারদিকে। এর মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল ছাত্ররা।

মাও এর বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলনের ডাক দিলেন। তার উদ্দেশ্যে ছিল সরকারী আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমালোচনা করা-দ্বিতীয়ত জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। সেই সাথে দেশবাসীকে মার্কসীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে সাংস্কৃতিক অবক্ষয়কে রোধ করা।

এই আন্দোলনকেই বলা হয়েছিল সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। লাল ফৌজের মধ্যে যে সব ছাত্র ছিল তারাই এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। এছাড়াও ছিল শিক্ষক অধ্যাপক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল মাওয়ের চতুর্থ পত্নী (প্রাক্তন অভিনেত্রী) চিয়াং চিং।

সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলেছিল ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত। এর পরবর্তীকালে • চীনের রাষ্ট্রনৈতিক ও সমাজ জীবনে বিরাট পরিবর্তন দেখা গেল। প্রকৃতপক্ষে এতদিন পর্যন্ত চীন নিজেকে বিশ্বের সমস্ত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এই বার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলল। ইউরোপে পাঠানো হল বাণিজ্য প্রতিনিধি দল। বিদেশীদের দেশে আসবার অনুমতি দেওয়া হল। যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অস্তিত্বকে চীন অস্বীকার করেছিল দীর্ঘদিন, ১৯৭১ সালে তার সদস্য পদ গ্রহণ করল।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিশেষত কৃষিক্ষেত্রে চীন অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে। সর্বক্ষেত্রেই ছিল মাও-এর অবদান। কয়েক শো বছরের শোষিত বঞ্চিত দরিদ্র অবক্ষয়ের অন্ধকারে ডুবে যাওয়া একটি জাতিকে তিনি দেখিয়েছিলেন আধুনিকতার আলো।

মাওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তিনি স্টালিনের মতই সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। কমিউনিস্ট বিরোধীদের নির্মমভাবে ধ্বংস করেছিলেন। বিপ্লব উত্তরকালে দেশে যখন শান্তি শৃঙ্খলা সুস্থিরতার প্রয়োজন, মাও অনাবশ্যকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কোরিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ, তিব্বত দখল, ফরমোসা সংক্রান্ত বিবাদ, ভারত আক্রমণ, রাশিয়ার সাথে বিবাদ। মাও ভেবেছিলেন বিপ্লবের সময় যেবাবে গণজাগরণ ঘটাতে সমর্থ হয়েছিলেন, উত্তরকালেও তা বর্তমান থাকবে। মাও বিশ্বাস করতেন এক অন্তহীন বৈপ্লবিক সংগ্রাম। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি প্রত্যেক বিপ্লবী উত্তরকালে হয়ে ওঠে সংশোধনবাদী নয়তো ক্ষমতালিন্দু।

তাই তার অজান্তেই দেশে গড়ে উঠেছিল তার বিরুদ্ধ শক্তি। যারা মাও-এর বার্ধক্যের সুযোগ নিয়ে প্রকৃত রাষ্ট্রক্ষমতা চালিত করত। তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে মাও মারা গেলেন। গ্যাং অব ফোর’ নামে চারজনের একটি দলকে বন্দী করা হল। এদের মধ্যে ছিলেন মাও-এর বিধবা পত্নী। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল।

ব্যক্তি জীবনের দোষত্রুটি বাদ দিলে মাও ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি আজন্ম। বিপ্লবী। তিনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র বিপ্লবের মধ্যে দিয়েই মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র পূর্ণতা লাভ করতে পারে। আর এর বিশ্বাসের শক্তিতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যাবহুল রাষ্ট্রের।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন