৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)

মাইকেল এইচ. হার্ট

সভ্যতার আদি যুগ থেকেই মাটির মানুষ বিস্ময়ভরা চোখে চেয়ে থাকত আকাশের দিকে। আকাশের চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা সব কিছুই তার কাছে ছিল অপার বিস্ময়ের। বিজ্ঞানের কোন চেতনা তখনো মানুষের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেনি। তাই অনন্ত আকাশের মতই ছিল তার সীমাহীন কল্পনা।

ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে জন্ম নিতে থাকে জ্ঞানের চেতনা। কত প্রশ্ন জেগে ওঠে তার মনে। এই বিশ্ব প্রকৃতির অপার রহস্য ভেদ করবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। জিজ্ঞাসু মন আর এই জিজ্ঞাসা থেকেই শুরু হল অনুসন্ধান।

আকাশের রহস্যভেদের চর্চায় মানুষ কবে থেকে নিয়োজিত হল তার সঠিক কোন তারিখ নেই। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা প্রথম শুরু হয়েছিল চীন দেশে। তবে তাদের উপলব্ধি বা গবেষণার বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

ব্যাবিলনের জ্যোতির্বিদরা প্রথম ঋতুর আবর্তন উপলব্ধি করে তারা এক বছর নির্ণয় করেন। তাদের হিসাবে ছিল ৩৬০ দিনে এক বছর হয়।

বিশ্ব প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে প্রথম যে মানুষটি আলোর পথ দেখান তাঁর নাম পিথাগোরাস। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বর্তমান তুরস্কর অন্তর্গত ইজিয়ান সাগরের বুকে সামোস দ্বীপে তাঁর জন্ম হয়। জ্ঞানের আকর্ষণে তিনি কিশোর বয়সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। নানান দেশ ভ্রমণ করে মিশরে যান। সেখানকার পুরোহিতদের কাছে শিখেছিলেন জ্যোতিবিদ্যা ও জ্যামিতি। ইতালির ক্রোনায় এসে তিনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুললেন। জ্ঞানের সাধনাতেই তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মূলত অঙ্কশাস্ত্রবিদ হলেও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনিই প্রথম উল্লেখ করেছিলেন–এই পৃথিবী ও গ্রহ আপন অক্ষের চারদিকে আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু তার এই অভিমতকে কেউ গ্রহণ করেনি।

তার পরে এলেন প্লেটো ও অ্যারিস্টটল। মানুষের জ্ঞান চিন্তা ভাবনার জগতে এক নতুন দিগন্তের দ্বারকে উন্মোচন করলেন। এর পাশাপািশি কিছু ধারণার কথা প্রকাশ করলেন যা মানুষের জ্ঞানের জগতে অন্ধকার যুগ নিয়ে এল। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অ্যারিস্টটল কোন পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা ছাড়াই একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল পৃথিবী স্থির। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা একই পথে আবর্তিত হচ্ছে। চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। তার এই মতবাদকে মানুষ অভ্রান্ত বলে মেনে নিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৩০ সালে অ্যারিস্টার্চ তার অভিমত প্রকাশ করেন যে সূর্যই এই সৌরমন্ডলের কেন্দ্রবিন্দু এবং স্থির। কিন্তু এই অভিমতকে সকলেই অগ্রাহ্য করল।

পরবর্তীকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নানান তত্ত্ব উদ্ভাবন করলেন। তার এই সব তত্ত্বই উদ্ভাবন করলেন। তার এই সব তত্ত্বগুলোই ছিল ভুল। তিনি বললেন বিশ্ব একটা গোলক এবং তা গোলকের মতই ঘুরছে। পৃথিবীও একটি গোলাকার বস্তু এবং তা বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। পৃথিবী স্থির, সূর্যই তার চারদিকে ঘুরছে। তার এই অভিমতের সপক্ষে একটি মানচিত্রও অঙ্কন করেন। অ্যারিস্টটল ও টলেমির এই সব তত্ত্ব ও সূত্রগুলো প্রায় চোদ্দশো বছর ধরে মানুষ অভ্রান্তু সত্য বলে মেনে নিয়েছে, কেউ তার ভুলভ্রান্তি নিরুপণ করার চেষ্টা করেনি।

যীশুর জন্মের পরবর্তীকালে যখন বাইবেল রচিত হল, বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য সম্বন্ধে বাইবেলের রচনাকারদের সামনে টলেমির সিদ্ধান্তগুলোই বর্তমান ছিল। তাই তারা সেই সব অভিমতকেই বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন। অল্প দিনের মধে তা ধর্মের অঙ্গ হিসাবে পরিগণিত হল। পরবর্তীালে মানুষ বাইবেলের প্রতিটি কথাকেই ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিল। কারোর মনেই ছিল না কোন সংশয় বা জিজ্ঞাসা। এমনকি বৈজ্ঞানকিরাও বাইবেলকে অভ্রান্ত বলে মেনে নিল।

এর পেছনে আরো একটি কারণ ছিল ইউরোপের বুকে তখন চার্চের অপ্রতিহত প্রতাপ? একজন সম্রাটের মতই ছিল পোপের ক্ষমতা। অর্থ সম্পদ লোকজন কোন কিছুই কম ছিল না। একটি চার্চ হয়ে উঠেছিল ক্ষমতা, ভণ্ডামি আর সন্ত্রাসের কেন্দ্রভূমি। যে সব বিজ্ঞানী পণ্ডিতরা চার্চ এবং বাইলকে মেনে চলত, তাদের নানাভাবে সাহায্য করা হত। কিন্তু যদি কখনো কেউ চার্চ বা বাইবেলের বিরোধী একটি শব্দও উচ্চারণ করত তখন তাকে কঠোর হাতে দমন করা হত। কারাগারে পাঠান হত, নয়ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হত। ধর্মের আজ্ঞাবহ হয়ে বিজ্ঞান এক অন্ধকার যুগেই পড়ে ছিল।

এই অন্ধকারের মধ্যেই অল্প কয়েকজন মানুষ এগিয়ে এলেন। তারা মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে, ধর্মের বন্ধনকে ছিন্ন করে প্রতিষ্ঠা করলেন নতুন সত্যকে। তাদের আবিষ্কৃত সত্যের আলোয় বিজ্ঞান নতুন পথের সন্ধান পেল। এইসব মহান বিজ্ঞানীদের অগ্র পথিক যিনি তাঁর নাম নিকোলাস কোপার্নিকাস।

১৪৭৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডের থর্ন শহরে কোপার্নিকাসের জন্ম। থর্ন বাল্টিক সাগরের কাছে ভিসটুল নদীর তীরে ছোট বন্দর শহর। বাবা ছিলেন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী।

কোপার্নিকাসের পারিবারিক নাম ছিল নিকলাস কোপার্নিক। কোপার্নিক শব্দের অর্থ বিনয়ী। শুধু নামে নয়, আচার ব্যবহারে স্বভাবেও কোপার্নিকাস ছিলেন যথার্থই বিনয়ী।

ছেলেবেলা থেকেই কোপার্নিকাসের আকাশ গ্রহ নক্ষত্র সূর্য চন্দ্র তারা সম্বন্ধে ছিল গভীর কৌতূহল। এই সব বিষয়ে বাবা মাকে নানা প্রশ্ন করতেন। কিন্তু অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরই জানা ছিল না ব্যবসাদার বাবার। কোপার্নিকাসের কাকা ছিলেন ধর্মযাজক পণ্ডিত মানুষ। ভাইপোর জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহ দেখে একটি বই পাঠিয়ে দিলেন। এই বইটি ছেলেবেলায় কোপার্নিকাসের সব সময়ের সঙ্গী ছিল।

যখন তার দশ বছর বয়েস, বাবা মারা গেলেন। বালক কোপার্নিকাসের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধের তুলে নিলেন কাকা লুকান ভাসেনরোড। কাকার বাড়িতে বিশাল বড় গ্রন্থাগার ছিল। এখানেই বাবাকে হারানোর দুঃখ ভুলে গেলেন। সারাদিন নানান বিষয়ে বই পড়তেন। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করত বিজ্ঞান আর সাহিত্য।

পড়াশুনায় এই আগ্রহ দেখে কাকা তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কাকাকে ধর্মপ্রচারের কাজে প্রায়ই বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হত। কোপার্নিকাসও তাঁর সঙ্গী হতেন। এই দেম ভ্রমণ তাঁর মনের উপর এক সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল।

স্কুলের পড়া শেষ করে ১৮ বছর বয়েসে কোপার্নিকাস ক্র্যাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। সেই যুগে ক্র্যাকাও গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র ছিল। সেই যুগের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ব্রডজেৎস্কি ছিলেন এখানকার শিক্ষক। কোপার্নিকাস কলাবিভাগের ছাত্র হলেও বেশির ভাগ সময়েই গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের চচাং করতেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার এই আগ্রহ দেখে কাকা বলতেন, আকাশের দিকে না তাকিয়ে মাটির দিকে তাকাও।

কাকার ইচ্ছা অনুসারে তিনি ডাক্তারিতে ভর্তি হলেন। ডাক্তারি পাশ করলেন। কিন্তু মানুষের দেহের জটিলতার চেয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জটিলতাই তাকে বেশি আকৃষ্ট করত। তাই স্থির করলেন ইউরোপের শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি ইতালিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করবেন। কাকা তাঁকে পড়বার অনুমতি দিলেন।

ইতালিতে যাওয়ার আগে কিছুদিন তিনি ছবি আঁকায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি চিত্রকলায় দক্ষ হয়ে উঠলেন।

২৩ বছর বয়েসে তিনি ইতালির বেলেগনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। এখানে তিনি চার বছর অধ্যয়ন করেন। এই সময় প্রধানত গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করতেন। গ্রীক ও ল্যটিন ভাষা শিখলেন যাতে গ্রীক ভাষায় লেখা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই পড়তে পারেন। তাছাড়া প্রাচীন আরব পণ্ডিতদের লেখা বহু বই গ্রীক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। তিনি এই সমস্ত বইগুলো গভীর মনোযোগ সহকারে পড়াশুনা করতেন। বেলেগনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন ডোমেনিকো মারিয়া দ্য নোভারার। তিনি কোপার্নিকাসকে খুবই স্নেহ করতেন। তাঁকে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় নানাভাবে সাহায্য করতেন। দুজনে একই সাথে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতেন। এই সব পর্যবেক্ষণের বহু তথ্য তিনি পরে তাঁর রচনায় অন্তর্ভুক্ত করেন। যথাসময়ে তিনি বেলেগনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করে রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিলেন।

সেই সময় টলেমির সিদ্ধান্তগুলোই ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রধান পাঠ্য। কিন্তু কোপার্নিকাসের মনে টলেমির সিদ্ধান্তগুলো সম্বন্ধে সন্দেহ জেগে ওঠে। পৃথিবী এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, তাকে কেন্দ্র করে সূর্য তারা চাঁদ ঘুরছে। এই মতকে তিনি অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারেননি।

ক্লাসে যখন কোপার্নিকাস ছাত্রদের টলেমির সিদ্ধান্ত পড়াতেন তখন তাঁর বার বার মনে হত তিনি কি ছাত্রদের ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন! প্রকৃত সত্যকে জানবার জন্য তাঁর সমস্ত মন ব্যাকুল হয়ে উঠত। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস ও টলেমির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা অভিমত পোষণ করতেন তাদের যুক্তির সিদ্ধান্তগুলো গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করতে আরম্ভ করলেন।

শুধু অ্যারিস্টরাস নয়, পরবর্তী যুগে ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লসের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ওরসিমি অ্যারিস্টটলের অভিমতের বিরুদ্ধে গতিশীল পৃথিবীর ধারণার কথা বলেন। কুপার নিকোলাস নামে এক পণ্ডিত বলেন, গ্রহ-নক্ষত্রের মত পৃথিবীও আবর্তিত হচ্ছে। লিওনার্দ দ্য ভিঞ্চিও বিশ্বাস করতেন পৃথিবী স্থির নয়, গতিশীল। তিনি বললেন, শুধু মাত্র বিশ্বাস নয়, পরীক্ষার দ্বারাই একমাত্র প্রকৃত সত্যে উপনীত হওয়া যায়। তাছাড়া কোপার্নিকাসের শিক্ষক ডোমেনিকোও অ্যারিস্টটলের মতে বিশ্বাস করতেন না।

এই পরস্পর বিরোধী অভিমতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোপার্নিকাসের মনে হল প্রকৃত সত্যকে উদঘাটন করতেই হবে। যে বিষয়ে তিনি নিজেই সন্দিহান কেমন করে তা ছাত্রদের পড়াচ্ছেন এমন সময় একটি ছাত্র তাকে প্রশ্ন করল, আপনি যা বলছেন তা কি বিশ্বাস করেন?

দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন কোপার্নিকাস। মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিলেন। ফিরে এলেন কাকা লুকাসের কাছে ফ্রাউয়েনবর্গে। এখানে তিনি গ্রাম্য যাজকের কাজ নিলেন। এই সময় থেকে শুরু হল তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজার পালা। কার অভিমত সঠিক টলেমি না পিথাগোরাস? ফ্রাউয়েনবার্গ ছিল একটি পাহাড়ি গ্রাম। অল্পদিনের মধ্যেই সেখানকার মানুষদের সাথে একাত্ম হয়ে গেলেন কোপার্নিকাস। তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে বিচলিত হয়ে পড়তেন। গীর্জার কাজের চেয়ে মানুষের সেবার কাজেই তার ছিল বেশি আনন্দ। অসুস্থ মানুষেরা তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য আসত। অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসক হিসাবে তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

কোপার্নিকাস ছিলেন বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী। নানা বিষয়ে ছিল তাঁর সহজাত দক্ষতা। গ্রামের মানুষদের জল আনবার জন্য দীর্ঘ দু মাইল দূরে নদীতে যেতে হত। তিনি পাহাড়ের মাথায় বাঁধ বেঁধে দিয়ে গ্রামে জল নিয়ে এলেন। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন জ্ঞান ও দয়ার প্রতীক।

শুধুমাত্র চিকিৎসা আর সমাজসেবা নয়, রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্বন্ধেও তাঁর ছিল সুগভীর জ্ঞান। তিনি নানা ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিতেন। অর্থনীতির উপর তিনি একটি বই লিখেছিলেন। এই বইতে সে যুগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নানান ভুল ত্রুটির উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর বহু অভিমত সরকার গ্রহণ করে। তিনি দেখেছিলেন একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকরা বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা তৈরি করে। তিনি বললেন এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। এক অঞ্চলের মুদ্রা অন্য অঞ্চলের মানুষ গ্রহণ করতে চায় না। তাছাড়া বিদেশী বণিকদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করবার সময় নানান অসুবিধা দেখা দেয়। লাভের আশায় শাসকেরা ইচ্ছামত মুদ্রামান কমায় বা বাড়ায়। কোপার্নিকাস সারা দেশে একই ধরনের মুদ্রা চালু করার কথা বললেন। তাছাড়া মুদ্রামান কমানোর বিপক্ষেও তিনি অভিমত প্রকাশ করতেন।

কোপার্নিকাসের আর একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হল আধুনিক ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করা। ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার পর থেকে তাতে বিশেষ কোন সংশোধনের কাজে হাত দিলেন এবং সঠিকভাবে দিন মাস বছরের হিসাব নির্ণয় করলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনিই প্রথম বছরের সঠিক কাল পরিমাণ আবিষ্কার করেন।

সমস্ত কাজের অন্তরালে চলছিল তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাধনা। তাঁর মনে হত যদি সূর্য পৃথিবীর চারদিকে একই বৃত্তাকার পথে আবর্তিত হয় তাহলে ঋতু পরিবর্তন হয় কি করে? তখনো দূরবীন আবিষ্কার হয়নি। রাতের পর রাত তিনি আকাশের দিকে চেয়ে পর্যবেক্ষণ করতে চেষ্টা করতেন তার অনন্ত রহস্য। এবং প্রতিটি পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধানের ফলাফল তিনি খাতায় পাতায় লিখে রাখতেন। এতদিন পর্যন্ত টলেমির লেখা আলমাগেস্ট গ্রন্থখানিই ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান গ্রন্থ। প্রায় ১৪০০ বছর ধরে মানুষ এর প্রতিটি যুক্তিকেই নির্ভুল বলে মনে করত। কিন্তু কোপার্নিকাস এই বইটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে উপলব্ধি করলেন, টলেমির বিপরীত ধারণা অর্থাৎ গ্রহগুলো সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করছে, এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলে খালি চোখে প্রতিদিন আমরা বিশ্ব প্রকৃতির যে পরিবর্তন দেখছি তার ব্যাখ্যা আরো অনেক সহজ হয় এবং টলেমির জ্যামিতিক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।

বেশ কয়েকজন প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর রচনার মধ্যে তাঁর অভিমতের সপক্ষে যুক্তি খুঁজে পেলেন। কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণের জন্য খালি চোখের উপরই নির্ভর করতে হত। দূরের আকাশ তাঁর পক্ষে দেখা সম্ভব হত না। খালি চোখে যতটুকু দেখেছিলেন এবং ১৫০৫ এবং ১৫১১ সালে দুটি সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে এই বিশ্ব প্রকৃতির গঠন সম্বন্ধে একটা ধারণা গড়ে তোলেন, এবং প্রধানত তার উপরে ভিত্তি করেই গণিতের সূত্রের সাহায্যে ছাড়াই কিভাবে এত নির্ভুলভাবে স্থির করেছিলেন তা ভাবতে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়।

টলেমি যখন গবেষণায় নিমগ্ন, কিছু মানুষ তার উদারতা সরলতার সুযোগ নিয়ে নানানভাবে বিব্রত করতে আরম্ভ করল। এরা সাধারণ মানুষের কাছে নানাভাবে প্রচার করতে আরম্ভ করল, একটা নিতান্তই বোকা লোক খালি চোখে দেখতে পায়, ‘সূর্য আমাদের চারদিকে ঘুরছে আর পৃথিবী স্থির’ আর কোপার্নিকাস মানুষকে বোকা বানাতে বলছে পৃথিবী ঘুরছে আর সূর্য স্থির।

কোপার্নিকাস জানতেন তিনি যে সূত্র আবিষ্কার করেছেন তা সাধারণ মানুষের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। যুগ যুগ যে অন্ধ বিশ্বাস তাদের উপর পাহাড়ের মত চেপে রয়েছে, সহজে তাকে দূর করা সম্ভব নয়। এতে শুধু তাদের কুসংস্কারই নয়, অন্ধ বিশ্বাসের উপরেই আঘাত হানবে। এবং এর প্রতিক্রিয়া হতে ভয়ঙ্কর। সেই কারণে মুষ্টিমেয় কিছু অনুরাগীর কাছেই নিজের অভিমত প্রকাশ করেছিলেন।

যখন তাঁর বিরুদ্ধবাদীরা তাঁর অভিমতের বিরুদ্ধে প্রচার করছিল, কোপার্নিকাসের বন্ধুরা তাঁকে এর প্রতিবাদ করবার জন্যে অনুরোধ করলে তিনি শুধু হাসিমুখে বললেন, এই সব মূর্খ মানুষগুলোর চিৎকারে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথে সামান্যতম পরিবর্তন ঘটবে না। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, শিক্ষক মানুষেরাও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রূপ উপহাস করতেন। প্রটেস্টান্ট ধর্মগুরু মার্টিন লুথার বললেন, কোপার্নিকাস একজন নির্বোধ। গোটা জ্যোতির্বিজ্ঞানকেই ওলট-পালট করে দিতে চাইছে। আর একজন বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, পৃথিবী স্থির, কেউ একে নড়াতে পারবে না।

দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতাকে কখনোই তিনি প্রকাশ করেননি। সাধারণ মানুষের বিদ্রূপ উপহাসের চেয়ে পোপের ইনইকুইজিসিনের ভয় ছিল অনেকে বেশি। বাইবেলের বিরুদ্ধে কিছু প্রচার করার অর্থই নিশ্চিত মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া।

জীবন সায়াহ্নে এসে কোপার্নিকাস তাঁর জীবনব্যাপী পর্যবেক্ষণ আর আবিষ্কারকে প্রকাশ করলেন তার যুগান্তকারী গ্রন্থে দি রিভোলুশনিবাস আররিথার কোয়েলেসটিয়াম (মহাজাগতিক বস্তুগুলোর ঘূর্ণন)। বইটি রচনা করলেও প্রকাশ করলেন না।

এই বইটির প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল পৃথিবী আপন অক্ষের চারদিকে আবর্তনশীল। কিন্তু মানুষ তা জানে না। তাদের অনুমান জ্যোতিষ্করাই পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীর আহ্নিক আবর্তনই সত্য। আকাশের বুকে গ্রহ নক্ষত্রের যে আপাত আবর্তন ও লক্ষ্য করা যায় তা পৃথিবীর প্রকৃত আবর্তনের প্রতিফলন মাত্র। এই অভিমতের সপক্ষে তারা বলতেন জাহাজ ছাড়লে মনে হয় দেশ-বন্দর সব পিছনে সরে যাচ্ছে।

কোপার্নিকাসের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত ছিল সূর্যই কেন্দ্রে অবস্থান করছে। পৃথিবী সহ প্রত্যেকটি গ্রহ সূর্যই কেন্দ্রে অবস্থান করছে। পৃথিবীসহ প্রত্যেকটি গ্রহ ব্যাসার্ধের নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আপন আপন বৃত্তপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধুমাত্র চাঁদই পৃথিবীর চারদিকে বৃত্তপথে ঘুরছে। তারকারা বহু দূরে বৃত্তপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।

তাঁর এই অভিমত ছিল সরল, সহজ এবং সুসমন্বিত। পিথাগোরাস বিশ্বত্ত্ব সম্বন্ধে যে অভিমত পোষণ করতেন তার সঙ্গে বহু ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার অনুমান ভুল ছিল। টেলিস্কোপের অভাবে তাঁর পক্ষে বহু দূরের আকাশ গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভবপর হয়নি। অন্যদের তথ্যের উপরেই প্রধানত তাকে নির্ভর করতে হত। সে যুগে বৃত্তগতিই বিশ্বের স্বাভাবিক গতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কোপার্নিকাসও তাই বিশ্বাস করতেন। এ বইটি ছিল কথোপকথনের ভঙ্গিতে লেখা। টলেমি–পৃথিবীর আহ্নিক গতি থাকলে এমন তীব্র বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হত যে কোন পাখি তার নীড় ছেড়ে বার হলে আর ফিরে আসতে পারে। টলেমি–আহ্নিক গতি থাকলে পৃথিবী সাথে ঘুরছে তাই পাখিরা কুলায় ফিরে আসতে পারে। টলেমি–আহ্নিক গতি থাকলে পৃথিবী ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেত।

কোপার্নিকাস–আহ্নিক গতি না থাকলে দূরের আকাশের তারারা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে, একথা স্বীকার করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তাহলে তারাদের গতি হবে আরো তীব্র, সে-ক্ষেত্রে তারারা কেন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না।

যুক্তিনিষ্ঠ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কোপার্নিকাস তাঁর রচনা প্রকাশ করলেন না। তিনি শুধুমাত্র একটি সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করলেন। তখনকার মানুষ এটিকে মজাদার কাহিনী বলে মনে করেছিল। এর মধ্যেকার বৈজ্ঞানিক সত্যকে কেউই উপলব্ধি করতে পারেনি। মার্টিন লুথারের অনুগামীরা এর মধ্যেকার কিছুটা সত্যকে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছিল। লুথার ছিলেন যেমন পোপের বিরোধী তেমনি আধুনিক চিন্তা-ভাবনার বিরোধী। বাইবেলের প্রতি তাঁর ছিল অন্ধ বিশ্বাস। তিনি কোপার্নিকাসের বিরুদ্ধে লিখলেন–

“পুণ্যগ্রন্থে এই কথাই লিখেছেণন যীশু–
সূর্যকে স্থির থাকতে বললেন, পৃথিবীকে নয়।”

জীবনের শেষ পর্বে এসে কোপার্নিকাসের সাথে পরিচয় হল রেটিকাস নামে এক তরুণ জার্মান পণ্ডিতের সাথে। রেটিকাস কোপাণি কাসের অভিমতকে স্বীকার করতেন। তিনি রিভোলুশনিবাস পড়ে মুগ্ধ হলেন। তাঁরই আন্তরিক অনুরোধে শেষ পর্যন্ত কোপার্নিকাস এই বই প্রকাশ করতে সম্মত হলেন। তখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাই বই প্রকাশের দায়িত্ব দিলেন রেটিকাসের উপর। যাতে যাজক সম্প্রদায়ের অনুমোদন পাওয়া যায় তাই কোপার্নিকাস এই বইটি উৎসর্গ করলেন তৃতীয় পোপ পলকে।

নুরেমবার্গের একজন মুদ্রাকর আন্দ্রে ও সিথান্ডারের ছাপাখানায় এই বই ছাপার ব্যবস্থা হয়। আন্দ্রেই ছিলেন লুথারপন্থী–তাছাড়া এই বই প্রকাশিত হলে কোপার্নিকাসের সাথে তাকেও যে বিপদগ্রস্ত হতে হবে এই ভয়ে ভীত হয়ে পড়লেন। তাই বইয়ের প্রথমে লিখেছিলেন, এই বইয়ের বিষয়বস্তু পুরোপুরি সত্য নয়। অনুমানের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তা সত্য না হওয়াই সম্ভব। এই কথাগুলোর মধ্যে দিয়ে তিনি সত্যমিথ্যার একটা সংশয়াচ্ছান্ন ধারণার সৃষ্টি করলেন যাতে প্রয়োজন এই বইটির বিষয়বস্তু মিথ্যা বলে চালানো যেতে পারে।

শুধু তাই নয়, ওসিথান্ডার ইচ্ছামত বই থেকে বহু নাম তুলে দিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অরিস্টার্কাসের নাম। যিনি প্রথম গভীর বিশ্বাসের সাথে বলেছিলেন সূর্য স্থির পৃথিবী গতিশীল। এ বই প্রকাশিত হওয়ার পর বহুদিন পর্যন্ত পণ্ডিতরা কোপার্নিকাসের সমালোচনা করেছে, তিনি পূর্বসূরীদের ঋণ স্বীকার করেননি। পরে যখন মূল পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় তখন জানা যায় প্রকৃত তথ্য।

১৫৪৩ সালে বইটি প্রকাশিত হল। তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। শোনা যায় যখন এই বইটি ছাপা অবস্থায় তাঁর কাছে এসে পৌঁছল তখন তার পড়ে দেখবার মত অবস্থা ছিল না। তিনি শুধু দুহাতে বইটি কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলেন, তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁর মৃত্যু হল (১৫৪৩ সালের ২১ মে)। কোপার্নিকাস এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে যে সত্যের প্রতিষ্ঠা করলেন তার উপর ভিত্তি করে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন, আইনস্টান জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্তকে উন্মোচন করলেন।

তিনি যে শুধু একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছিলেন তাই নয়, তিনি ইউরোপের প্রথম বিজ্ঞানী মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, অন্ধকার বিশ্বাসের মূলে তীব্র আঘাত হেনেছিলেন। তাই বিংশ শতকের মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোপার্নিকাসই হচ্ছেন আধুনিক যুগের পথিকৃৎ।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন