৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)

মাইকেল এইচ. হার্ট

ইংল্যাণ্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথ তাঁর প্রথম আইন সভার অধিবেশনে যে স্মরণীয় উক্তিটি করেছিলেন, সম্ভবতঃ সেটাই ছিল তাঁর জীবনের আন্তরিকতার ছোঁয়ায় রাঙানো প্রথম ও শেষ বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, “আমার প্রজাদের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা ভিন্ন আমার কাছে পৃথিবীর কোন কিছুই মূল্যবান নয়।” যদিও টিউডরদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল অসংখ্য মানুষকে, আর সেই রক্তস্নাত পিচ্ছিল পথ ধরেই তিনি আরোহণ করেছেন সিংহাসনে, তবুও কিন্তু তিনি তাদের ভালবাসা অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন। শুধু অর্জন নয়। সে ভালবাসা তিনি রক্ষাও করেছিলেন; হ্যাঁ, তাঁর রাজত্বের শেষ দিকের দুঃখময়, বিবর্ণ দিনগুলোতেও যখন তাঁকে চিত্রিত করা হয়েছে শয়তানিতে ভরা ঝগড়াটের এক রক্তবর্ণা স্ত্রীলোক হিসাবে তিনি লালায়িত ছিলেন যুব-সম্প্রদায়ের ভালবাসার জন্য; যদিও অবশ্য এর জন্য উচ্চ-পদস্থ বা সাধারণ, কোন ব্যক্তিকেই বঞ্চিত করতে বা বিপদে ফেলতে তাঁর হাত এতটুকু কঁপেনি। পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্খিতা মহিলা এই এলিজাবেথ প্রেমাসক্তিতে ছিলেন উদ্দাম, বল্পহারা, নির্মম, নিষ্ঠুর। একটুকরো নিখাদ ভালবাসার জন্য তিনি পারতেন না এমন কোন কাজই পৃথিবীতে ছিল না।

সিংহাসনে যখন তিনি বসেন তখন তার বয়স মাত্র পঁচিশ পূর্ণ যৌবনবতী, অসম্ভব সুন্দরী, প্রচণ্ড বুদ্ধিমতী এবং ভাবপ্রকাশহীন চতুর ও কুটিল এক মহিলা। তাঁর জন্মের বৈধতা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন উঠতে পারে, যে কাগজে অ্যারাগণের ক্যাথারিন-এর বিবাহকে অস্বীকার করে অ্যান বোলিনকে রাণী করার কথা বলা হয়েছিল সেই কাগজের বক্তব্যের সত্যাসত্যকে ঘিরে অনেক শ্লেষোক্তি থাকতে পারে কিন্তু কেউ কখনোই এটা অস্বীকার করতে পারবে না যে এলিজাবেথ ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরীর কন্যা। তাই তাঁর কেশদামে লালচে-সোনালীর স্পর্শ, চোখের মণিতে নীলিময় আভা এবং গোলাপী ত্বকে সজীবতা ও মসৃণতার ছোঁয়া লাগা ছাড়াও জন্মসূত্রে তিনি তার বাবার কাছ থেকে লাভ করেছিলেন তার তীক্ষ্ণ উপস্থিত বুদ্ধি, কূটনৈতিক দক্ষতা, প্রচণ্ড ঔদ্ধত্য, সৌজন্যহীন অহংভাব, চূড়ান্ত বিবেকহীনতা এবং শিক্ষানুরাগ। আর, অ্যানববালিনের মেয়ে হিসাবে এইসব বৈশিষ্ট্য এবং গুণের সঙ্গে তিনি যোগ করেছিলেন নারীসুলভ সমস্ত রকমের চাতুর্য ও কৌশল। এলিজাবেথ সম্পর্কে স্পেনে-–এর রাষ্ট্রদূত তার নিজস্ব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখে জানিয়েছিলেন ফিলিপকে–“শত সহস্র নারকীয় জীবের সমাহার হল এই মহিলা”।

এলিজাবেথ জন্মগ্রহণ করেন ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে; কিন্তু তাঁর পিতা অষ্টম হেনরী তাকে খুশি মনে মনে নিতে পারেন নি। কেননা তিনি চেয়েছিলেন যে কোন পুরুষ বংশধর এসে বহন করুক ঐতিহ্যশালী এই টিউডর বংশের ধারা; বিশেষতঃ অজস্র বাধা আর প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে তিনি যেখানে অ্যান বোলিমকে রাণী করেছিলেন সেখানে। সামান্য প্রতিদান হিসাবে সেও তো তাকে একটা পুত্র-সন্তান উপহার দিতে পারত। এলিজাবেথ যদি কন্যাসন্তান না হয়ে পুত্রসন্তান হতেন তো অ্যান বোলিনকে হয়ত তিন বছরের শিশুকে ফেলে রেখে ফাঁসি কাঠে তার উচ্চাকাঙ্খী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হতো না। শিশু হিসাবে একাকীত্ব, ভীতি, বেদন এবং দুঃখ সম্বন্দে এলিজাবেথ-এর অভিজ্ঞতা আর পাঁচটা শিশুর থেকে ছিল অনেক বেশি। খুব ছোট্ট বয়স থেকে হঠাৎ মৃত্যুজনিত ভয় ছিল তার চিরসাথী এবং নিজের জন্মের কলঙ্ক ছিল কায়ার ছায়ার মতো সর্বদা সম্মুখে লম্ববান। তাঁর ছোটবেলার বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে প্রকৃত পক্ষে বন্দীদশায়। তবু ভাল, গৃহশিক্ষক, প্রচুর পুস্তক এবং ছোট্ট বৈমাত্রেয় ভাই এডোয়ার্ড-এর সাহচর্যে তিনি কিছুটা তৃপ্তি লাভ করেছিলেন। সর্বোপরি, রজার অ্যাস্চাস এবং ব্যালডাসেয়ার-এর অভিভাবকত্বে ‘হ্যাটফিলড হাউস’–এ কাটানো শান্ত দিনগুলো ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুখের স্মৃতিগুলোর অন্যতম।

এরপর ১৫৪৭ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম হেনরী মারা গেলেন এবং সিংহাসনে বসলেন দশ বছরের বালক ষষ্ঠ এডোয়ার্ড, সঙ্গে অভিভাবক হিসাবে থাকলেন তার মামা ডিউক অব সমারসেট। কিছুদিনের মধ্যেই দিকচক্রবালে ঘনিয়ে এল চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ। সমারসেট ক্ষমতালোভী হলেও সেরকম ধূর্ত ছিলেন না; তাছাড়া এটাও নিদারুণ ভাবে সত্য ছিল যে ওই বালক রাজা শারীরিকভাবে এমনই দুর্বল ও অথর্ব ছিল যে তার পক্ষে পরিপূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় পৌঁছানো কখনই সম্ভব ছিল না। তাই অষ্টম হেনরীর উইল অনুযায়ী উত্তরাধিকারী হিসাবে তার পরেই ছিল অ্যারাগণের ক্যাথারিন-এর কন্যা মেরী টিউডর–এর নাম এবং সবশেষে ছিল এলিজাবেথ এর নাম। তবে, এদের দুজনের কাছেই ভয়াবহ বিপদস্বরূপ ছিল ফ্রান্সের পঁফের স্ত্রী ও অষ্টম হেনরীর বড় বোন মার্গারেট, এর নাতনী এবং স্কটল্যাণ্ডের সিংহাসনের ভবিষ্যৎ দাবীদার মেরী স্টুয়ার্ট। আসলে, ইংল্যান্দ্রে সিংহাসনের উপরও মেরী স্টুয়ার্ট–এর দাবী ওই দুই টিউডর যুবরাণীর চেয়ে অনেক বেশি ও জোরালো ছিল; কিন্তু মেরী টিউডর এর মতো তার ক্যাথলিক ঘেষা মনোভাব তাকে ইংল্যাণ্ডের জনগণের সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত করেছিল, এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার ফ্রান্সের রাণী হওয়া, যা তার ইংলণ্ডেশ্বরী হওয়ার পক্ষেও অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল।

এই পরিস্থিতি যেমন ঘোরালো হয়ে উঠল তার ফলে জন্ম নিল পারপরিক সন্দেহ, কুটিল ষড়যন্ত্র এবং নোংরা চক্রান্ত ও তার পাল্টা চক্রান্ত। এদিকে ষোল বছর পূর্ণ হবার আগেই মারা গেলেন ষষ্ঠ এডোয়ার্ড এবং সঙ্গে সঙ্গে মাথাচড়া দিয়ে ওঠবার চেষ্টা করল লেডী জেন গ্রেই। অবশ্য, সে প্রচেষ্টা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা হল; তবে এই ব্যর্থ অভ্যুথানের সঙ্গে যেহেতু এলিজাবেথ-এর যোগসাজসের খবর যথেষ্ট যুক্তি সহকারে সমর্থিত হল। তাঁর এই সৎবোনকে মেরী, তৎক্ষণাৎ পাঠিয়ে দিলেন দুর্গের অন্তরীণ; এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির যে অবধারিত শাস্তি মৃত্যু– সেটা এলিজাবেথ এড়াতে পারল কেবলমাত্র স্পেনের ফিলিপ ও তার বাবার হস্তক্ষেপের জন্য। পরবর্তীকালে যখন ফিলিপ ও এলিজাবেথের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন ফিলিপ এটা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেন নি যে তারই জন্য এলিজাবেথ আজ জীবিত। আর, জীবন ফিরে পেয়ে সে কিনা তর জীবনদাতারই জীবন নিতে উদ্যত। যাই হোক, নিষ্ঠুর মেরীর রাজত্বের পাঁচটা যন্ত্রণাময় বছর এলিজাবেথ কাটালেন লর্ড সেমুর-এর রাজসংসারে। এই সেমুর হলেন অষ্টম হেনরীর শেষ রাণী ক্যাথারিন পার–এর দ্বিতীয় স্বামী, বয়সে যিনি তার স্ত্রীর থেকে অনেক ছোট ছিলেন।

এলিজাবেথ অবশ্য তাঁর বিমাতা ক্যাথারিন-এর নতুন স্বামীর বেশ প্রিয় পাত্রীই হয়ে উঠেছিলেন। কারণ, পঞ্চদশবর্ষীয়া রাজকুমারীর হৃদয়ে সুখের যে ঢেউ সুদর্শন সেমুর তুলেছিলেন তাঁর যৌবনের তটে। তাই ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাথারিন মারা যেতেই সেমুর এলিজাবেথ এর কাছে সরাসরি প্রস্তাব করলেন। সেমুর-এলিজাবেথ সম্পর্কের প্রকৃত চেহারা হয়ত আমরা কোনদিনই জানতে পারব না, কিন্তু যে লোকনিন্দা ও কলঙ্কের আর্বতে তিনি নিজেকে এবং এলিজাবেথকে ডুবিয়েছিলেন তাতে যুগ্ম মৃত্যুদণ্ড প্রায় অবধারিত ছিল। কারণ, সেমুর-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাজদ্রোহিতার; তিনি চেয়েছিলেন এলিজাবেথকে বিয়ে করে ইংল্যাণ্ডের সিংহাসন অধিকার করতে। শেষ পর্যন্ত একদল পুঁদে উকিলের প্রাণান্তকর জেরায় জেরবার হয়ে এলিজাবেথ তার নির্দোষিতা প্রকাশ্যে ঘোষণা করার পর তারা দুজনে তাদের শির ও সম্মান কৌনক্রমে বাঁচালেন।

এদিকে প্রোটেস্টান্ট শহীদদের রক্তে ইংল্যাণ্ডের মাটি তখন লাল। প্রতিশোধের উন্মত্ত আক্রোশে ও চিৎকারে ইংল্যাণ্ডের আকাশ-বাতাস রীতিমত উত্তপ্ত। প্রেমের জোয়ারে অবগাহন করে থাকলেও এলিজাবেথ কিন্তু স্বচ্ছ, তীক্ষ্ণ, কঠিন ও নীরব দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে যাচ্ছেন তার সৎ-বোন মেরীর একটার পর একটা ভুল ও অন্যায় পদক্ষেপ। অবশেষে ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে করুণ ব্যর্থতার প্রতিমূর্তি এই নিঃসন্তানা এবং ঘৃণিতা মেরীকে মৃত্যু এসে মুক্তি দিয়ে গেল। সমগ্র ইংল্যাণ্ড আনন্দের আর খুশির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠল– তবে সে খুশি ও আনন্দ এলিজাবেথ এর সিংহাসন আরোহণের জন্য ততটা নয় যতটা মেরীর মৃত্যুর জন্য।

যে বছরে মেরী মারা গেল, সেই বছরেই নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এলিজাবেথ ইংল্যাক্সে রাণী হলেন, আর এমন একটা সময়ে তিনি সে দেশের হাল ধরলেন যখন ইংল্যাণ্ড ধুকছে মারাত্মক মহামারীর কবলে পড়ে এবং সাংঘাতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ফ্রান্সে রক্তক্ষয়ী ও অর্থক্ষয়ী যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। মেরীর পাঁচ বছরের ওই রাজত্বকালে দেশটা একেবারে ধ্বংসের গহ্বরে তলিয়ে গিয়েছিল–তার সম্মান ও মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হয়ে ছিল, মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছিল এবং দেশবাসীরা ধর্মীয় মতদ্বৈধলয় জর্জরিত ছিল। অনেকে নাকি এই মত পোষণ করে যে এলিজাবেথ এর রাজ্যাভিষেকে যে খুশির রোশনাই আর আনন্দের বন্যা বয়ে গেছিল সেটা দেশবাসীর কাছে প্রায় অপরিচিত নতুন এক রাণীকে বরণ করার জন্য নয়, বরং তার বোনের স্বস্তিদায়ক মৃত্যুকে স্বাগত জানাবার জন্য।

লালচে-সোনালী কোকঁড়ান চুল, ম্লান মুখ, তীক্ষ্ণ নীল চোখ এবং দুধসাদা লম্বা হাত সব মিলিয়ে এলিজাবেথকে সত্যিই রাজনন্দিনী বলে মনে হত এবং এর জন্য মনে মনে। তার একটা অহংকারও ছিল। এহেন যুবতী রাণীর কুমারীত্ব আবার কূটনৈতিক মহলে দারুণ কৌতূহলও আগ্রহের সঞ্চার করেছিল। অতএব ধান্দাবাস রাষ্ট্রদূত গুপ্তচরের দল ইউরোপের বিভিন্ন রাজকুমার ও রাজভ্রাতার জন্য কোটনাগিরি শুরু করে দিল। সিংহাসনে আরোহণ করেই এলিজাবেথ তার মন্ত্রীসভার অনুমোদন নিয়ে গঠন করলেন সেরা এক উপদেষ্টামণ্ডলী; এবং এক্ষেত্রেও তিনি তাঁর প্রতিভার ছাপ রাখলেন। তবে তাদের উপদেশ ও মতামতের উপর যে তিনি চলতেন তা কিন্তু নয়; তিনি বরং তাদের সুচিন্তিত পরামর্শের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটাতেন তাঁর ব্যক্তিগত বুদ্ধি ও চিন্তা-ভাবনা এবং সিদ্ধান্ত যেটি নিতেন সেটি ছিল তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব। লউ বালে, উইয়িম সেসিল ছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী এবং ওই পদেই আমৃত্যু তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে রাণীর সেবা করে গেছেন চল্লিশ বছর ধরে। এক ঐতিহাসিক লিখেছিলেন–”তিনি ছিলেন এমনই একজন মহিলার অনুগত এবং উপযুক্ত এক কর্মচারী এমনই একজন মহিলার যার ডান হাত কখনই জানতে পারত না তার বাম হাত কি করতে যাচ্ছে।”

এরপর, তার প্রধানমন্ত্রী ও নতুন মন্ত্রিসভাকে নিয়ে এলিজাবেথ তার দেশের দূত গৌরব পুনরূদ্ধারে ব্রতী হলেন। প্রথম কয়েকটা বছরে প্রচন্ড ব্যয় সংকোচ করে এবং ব্যাপক হারে কর বসিয়ে তিনি দেশকে ঋণমুক্ত করলেন। ফ্রান্সের সাথে যখন তার শান্তি। চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে, সেই সময় ফ্রান্সের বন্দর শহর ক্যালেই যাতে তার হস্তগত না হয় তার জন্য তোষামোদ করে ও ভয় দেখিয়ে তার উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন স্পেন এর রাজকুমার ফিলিপ; তাকেও তিনি কৌশলে বাগে আনতে সচেষ্ট হলেন; কিন্তু শেষ চাল হিসাবে যখন ফিলিপ তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখলেন, এবং উল্টোদিকে আবার ইংল্যাণ্ডের ক্যাথলিকদের ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতার দিকেও শঙ্কিত নেত্রে চেয়ে থাকলেন এলিজাবেথ তখন খানিকটা দোটানার মধ্যে পড়ে গেলেন। তারপর আলাপ আলোচনায় ক্যালেকেই বিক্রি করে দিলেন এবং সেই সঙ্গে একেবারে নাকচ করে দিলেন ফিলিপ এর প্রস্তাব। ওই মাসেই চার্চ অফ ইংল্যাণ্ড তার অস্তিত্ব লাভ করল।

এলিজাবেথ এর বিরুদ্ধে বরাবরই একটা অভিযোগ ছিল যে তিনি ছিলেন এক মোহিনী নারী। আপাতবিরোধীভাবে এটা যেমন সঠিক, তেমনি বেঠিকও। শোনা গেছে, তার বৃত্তের ধারে কাছে যে যুবকই এসেছে, পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনি তার যৌবনরস পান করেছেন। সম্ভবতঃ এসেক্স এর সঙ্গেই তার প্রেম যথেষ্ট গভীরতা লাভ করেছিল; কিন্তু স্পেন-এর ফিলিপ, তার সম্পর্কিত ভাই ডন জন এবং অস্ট্রিয়ার আর্কডিউক চার্লস, আনজাউ এর হেনরী কিংবা তার ভাই ফ্রান্সিস–এদের সকলের সঙ্গেই তার সলাজ সম্পর্ক ছিল ঠাণ্ডা রাজনীতি সঞ্জাত। তাঁর এই নিস্পৃহ এবং শীতল আবরণ কিন্তু তার পরিকল্পিত সাফল্যেরই অঙ্গীভূত। দুঃসাহস ও যৌবনের আগুনে উত্তপ্ত এবং বিত্ত ও ভোগের লালসায় উত্তেজিত একটা দেশে তিনি চোখ ঝলসানো কোন স্বর্ণ শিখর নয়, ছিলেন রজতশুভ্র পর্বত শৃঙ্গের মতো মহিমান্বিত এক শীতল ব্যক্তিত্ব, যাকে ধরা যায় কিন্তু বেঁধে রাখা যায় না, যার স্পর্শে জাগে শিহরণ কিন্তু তা দেয় না কোন নির্ভরতা। জাঁকজমক, আড়ম্বর ও যে কোন বিলাসিতার প্রতি তার তীব্র আসক্তি। রাজকীয় কোন অনুষ্ঠান বা শোভাযাত্রা, যা বর্ণাঢ্যতায় ও জৌলুষে সাধারণ মানুষের চোখকে ধাঁধিয়ে দেয় এবং তাদেরকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেয় তার জন্য তিনি স্বয়ং পৃষ্ঠাপোষকতা করতেন। অন্যদিকে আপামর জনসাধারণের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন উৎসাহ ও প্রেরণার এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি যাকে আদর্শ করে অসংখ্য সাহসী, মেধাবী, এমনকি বিবেক বুদ্ধিহীন মানুষও বেরিয়ে পড়েছিল স্থলে, জলে ও রণাঙ্গণে কিছু একটা করে দেখাবার নেশায়। তবে ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তিনি মোটেই প্রশ্রয় দিতেন না। কারণ, তার এটা ভালভাবেই জানা ছিল যে ইংল্যাণ্ডে পূর্ণধর্মান্তরিত করার জন্য স্পেন থেকে যে বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্ম প্রচারকদের পাঠানো হয়েছিল, তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল তার দেশে বিদ্রোহ ও রাজদ্রোহের বীজ বপন করা। ওদিকে ওই ধর্মসংস্কারকের তাদের অন্ধ বিশ্বাসের প্রতি অকপট ও অবিচল আস্থা নিয়ে থাকায় এবং সমগ্র ইংল্যাণ্ডেরও ক্যাথলিক ভাবধারার প্রতি সহানুভূতি পোষণ করায় তার সিংহাসনের গায়ে তিনি অনুভব করলেন মৃদু তরঙ্গাঘাত। অতএব, এলিজাবেথ ক্যাথালিকদের অযথা হয়রান এবং তাদের উপর নির্যাতন করতে শুরু করে দিলেন। কিন্তু গ্রণি-র বক্তব্য ছিল অন্যরকম তার মতে–“এলিজাবেথই হলেন প্রথম ইংরেজ শাসক যিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ধর্মীয় নির্যাতনের অভিযোগ তাঁর শাসন ব্যবস্থার উপর একটা বিরাট কলঙ্ক স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। তাই শুধু মাত্র ধর্মীয় মতদ্বৈধতার কারণে কোন মানুষকে হত্যা করার চেষ্টাকে তিনি সরাসরি অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছিলেন।”

তবে ক্যাথলিকদের ধর্মবিশ্বাসের উপর তার সহানুভূতি থাকলেও ‘চার্চ অফ ইংল্যাণ্ড’ ছিল তার নিজের দেশের ধর্মকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করাবার জন্য তিনি তো তাকে একটু উঁচুতে তুলে ধরবেন; কারণ এই ধর্মের উপর তার দুর্বলতা অনেক বেশি। আর সেই জন্যই ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে লংসাইড-এর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে স্কটল্যাও এর রাণী মেরী যখন সীমান্ত পেরিয়ে তার দেশে আশ্রয় ভিক্ষা করলেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা পেলেন– তবে তা কারাগারে। তার মানে এই নয় যে এলিজাবেথ তার সৎ-বোনকে ঘৃণা করতেন; আসলে, একজন ক্যাথলিকের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক পোটস্টান্ট এর বিরাগভাজন তিনি হতে চান নি। অতএব মেরির স্থান হল কারাগারে দীর্ঘ আঠারো বছর তাকে এক দূর্গ থেকে আরেক দুর্গে স্থানান্তরিত হতে হল।

ইতিমধ্যে এলিজাবেথও সুচতুরভাবে জনসাধারণের বিশ্বাসকে কাজে লাগাতেন। ইংল্যাণ্ডবসীদের ধারণা ছিল যে মেরী স্পেনের সঙ্গে পঁচিশ বছরের জন্য যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল ইংল্যাণ্ডের সিংহাসন করায়ত্ত করা। তার এও মনে। হল যে ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করেও ফিলিপ যদি তাঁকে একবার মুঠোর মধ্যে ভরতে পারে, তাহরে ইংল্যাণ্ডের সিংহাসনের উপর মেরীর দাবী অনেকটা জোরদার হবে এবং সেই সঙ্গে ত্বরান্বিতও হবে ইঙ্গ-ফরাসী চুক্তি আর ঠিক এই জিনিসটাই শেষ পর্যন্ত ফিলিপ চেয়েছিলেন।

অন্যদিকে মেরীর আঠারো বছরের বন্দীদশায় এলিজাবেথকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা হয়ে যাচ্ছিল। আর এলিজাবেথও এই সময়টায় গুপ্তহত্যার ভয়ে আতঙ্কে সিটিয়ে থাকতেন, এর ফলে তাঁর টেবেলকে তিনি স্বাভাবিকভাবে উপভোগ্য করতে পারেন নি। তবু তিনি মেরীকে প্রাণদণ্ড দেননি। অবশেষে আর এক জঘন্য ষড়যন্ত্রের খবরে ভীত ও ক্ষিপ্ত হয়ে ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে মেরী সম্পর্কিত সমস্ত দায়দায়িত্ব তিনি অর্পণ করলেন মেরীরই জিম্মাদার পলিট এর উপর এবং সে সম্পর্কিত হুকুমনাময় তাঁর নিজের সই ও সীলমোহর দেবার ব্যাপারে বলির পশু করলেন তাঁর নিজস্ব সচিব ডেভিডসনকে।

ঠিক তার পরের বছরেরই স্প্যানিশ জাহাজের উপর ইংরেজ অভিযানকারীদের দুর্ব্যবহারে রীতিমত কুপিত হয়ে ফিলিপ তার রণতরীর বহরকে পাঠালেন নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকায় যেখানে শত্রুপক্ষ ব্যাপভাবে তার স্বার্থক্ষুণ্ণ করে যাচ্ছিল। ওদিকে শত্রুপক্ষ এই হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি ছিল না; তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র বা গোলাবারুদ, কোনটারই মজুদ ছিল না। খারাপ কিছু একটা যাতে না ঘটে যায় তার জন্য এলিজাবেথকেও লণ্ডন ত্যাগ করে চলে যেতে বলা হল। নৈরাশ্যবাদীর, প্রমাদ গুনলেন যে হানাদারদের মদতে এই সুযোগ দেশের অভ্যন্তরে একটা আদর্শের জন্য বলি প্রদত্ত আপাময় জনসাধারণের নিষ্ঠাকে সম্বল করে তিনি নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন উপযুক্ত মুহূর্তে তাঁকে নিরাশ করল না। তাই টিলাবেরীতে এক সমাবেশে তাঁর সৈন্যবাহিনীর উদ্দেশ্য তিনি বললেন, “আমার প্রিয় এবং বিশ্বস্ত দেশবাসীর প্রতি একতিল সন্দেহ বা অবিশ্বাস নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। আমি জানি আমি একজন নারী; তাই শরীরগত কারণে আমি ক্ষীণ ও দুর্বল হতে পারি, কিন্তু হৃদয়টা আমার রাজার মতো। এটা ভাবতে আমার রীতিমত দুঃখ ও ঘেন্না হয় যে পারমা অথবা স্পেন কিংবা ইউরোপের কোন যুবরাজ আমার রাজ্যের সীমান্তে এসে নিঃশ্বাস ফেলে যাচ্ছে।” তার বক্তব্যের সমর্থনে সৈন্যদের মধ্য থেকে যে হর্ষধ্বনি উঠল তা মিলিয়ে যাবার আগেই হঠাৎ এক দূত ডেক থেকে ছুটতে ছুটতে তাঁর কাছে এসে উপস্থিত হল এবং জানাল যে তার বিশ্বাস ব্যর্থ হয়নি। কারণ, ঈশ্বরের সহায়তায় ইংরেজরা স্পেনীয় আরমাডাদের হটিয়ে দিয়েছে। সানন্দে তিনি তাই ঘোষণা করলেন, “দেখুন, ঈশ্বর শুধু সৎ এবং সাহসীদেরই সাহায্য করেন। তাই তাঁর দৈব বায়ুর সাহায্যে তিনি আমাদের শত্রুপক্ষকে এক ফুঙ্কারে উড়িয়ে দিয়েছেন।”

তাই তার সোনালী রাজত্বের গৌরবময় দিন হিসাবে গণ্য করা হয় ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দের এই ১৭ই নভেম্বর তারিখটিকে। কারণ দেশের প্রধান হিসাবে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে তার কর্তব্যই শুধু সম্পাদন করেননি তিল তিল করে যে দেশকে তিনি নিজের হাতে গড়েছেন এবং তাকে সম্মানের ও গৌরবের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছেন, চরম বিপর্যয় ও ধ্বংসের হাত থেকে সেই দেশকে তিনি সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষাও করেছেন। এরপর ইংল্যান্ড তার মহত্বের ও শৌর্যের শান্ত জলরাশির উপর দিয়ে তপ্ত মরালীর মত খুশিমনে ঘুরে বেড়িয়েছে, আর তিনি নিজে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছেন তাঁর প্রিয় দেশবাসীর অন্তর থেকে। শেষে, সম্পূর্ণ একাকী এবং ভগ্নমনা অবস্থায় তিনি পেতে। চাইলেন একটু প্রেমের উষ্ণ পরশ; কিন্তু সেখানেও তিনি প্রত্যাখাত হলেন। কারণ, সুদর্শন, তরুণ ও স্বেচ্ছাচারী নাইট এসেক্স যে এলিজাবেথকে জানতেন তিনি ছিলেন অহংকারী এবং তেজী এক মহিলা এবং রাজানুগ্রহের প্রতিও তাই তাঁর ছিল চরম এক অবজ্ঞা ও ঘৃণা। তিনি অপেক্ষা করেছিলেন সময়ের করাল থাবায় ক্ষত বিক্ষত কুৎসিৎ ও বিগতযৌবনা এক নারীকে দেখার জন্য। সময়ের চাপে তিনি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে নুইয়ে পড়লেও এসেক্স-এর ধারনা ছিল যে ওই টিউডর অগ্নিশিখা যতই স্তিমিত অবস্থায় থাকুক না কেন তাকে গিলে খাবার পক্ষে তা তখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। তার আশঙ্কা একদিন সত্যে পরিণত হল। ১৬০১ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সেই এসেক্সকে ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিতে হল; তার মৃত্যুর সাথে এলিজাবেথ এর হৃদয়ের মৃত্যু ঘটল।

অহংকার যেমন ছিল এলিজাবেথ-এর জীবনের চালিকাশক্তি, তেমনি তা ছিল তাঁর প্রেমের দাহিকাশক্তিও। অহংকার ছিল তাঁর জীবনের উত্থান, তাঁর জীবনের পতনও। তাই জীবেনর প্রান্তসীমায় পৌঁছেও মাজে মাঝে দেখা গেছে পড়ন্ত সূর্যের দীপ্ত কিরণ– গমগম করে বেজে উঠেছে তার উচ্চকিত হাসির সুরেলা অনুরণন, শোনা গেছে চাঁছাছোলা ভাষায় স্পষ্টাপষ্টি বক্তৃতা যা রাষ্ট্রদূতদের অনুপ্রাণিত করেছিল সত্য কথা বলতে এবং রুক্ষ নাবিকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল কাব্য রচনা করতে। কিন্তু এসবই ছিল নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপের দেদীপ্যমান শিখার মত হঠাৎ এক উজ্জ্বল বিচ্ছুরণ।

১৬০৩ সালে ২৪শে মার্চ এসেক্স-এর মৃত্যুর ঠিক দু’বছর পরেই ইংল্যান্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথ-এর জীবনদীপ চিরতরে নির্বাপিত হয়ে গেল। ফ্যারাওদের পিরামিড-এর চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল তাঁর স্মৃতিসৌধ আর সেই স্মৃতিসৌধ ছিল তাঁর স্বদেশ, যাকে তিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে জগৎসভায় সর্বশ্রেষ্ঠর আসনে বসিয়েছিলেন।

কারোর কোন উপদেশ কেমন করে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে তার কৌশল আয়ত্ব করে এবং অচিরেই তড়িঘড়ি কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে না ফেলে, আগামী কল সম্ভবতঃ ভাল কিছু ঘটতে পারে সেই আশায় সেই কাজকে ফেলে রাখা–এই নীতিতে বিশ্বস করে এবং ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্পেন ও পর্তুগাল-এর সমুদ্রোপকূলে খবরদারি করার প্রবণতাকে চিরদিনের মত কমিয়ে দিয়েছিলেন; ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে লুথারের সমর্থকদের লেলিয়ে দিয়ে নিজের দেশে স্থাপন করেছিলেন চার্চ অফ ইংলণ্ড, এযাবৎ পৃথিবী যা দেখেনি এবং অদূর ভবিষ্যতে দেখবে বলে মনে হয় না সেই সব কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সৈনিক, আবিষ্কারক, বিজ্ঞানী প্রভৃতি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি ছিলেন আলোকদায়িনী সূর্যের মত সক্ষাৎ অনুপ্রেরণার প্রতিমূর্তি।

এলিজাবেথ সারাজীবন কুমারীই রয়ে গেছিলেন। শোনা যায় তার নাকি কিছু একটা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে তা ঘটনা বা রটনা যাই হোক না কেন, ঐতিহাসিকদের কথাটা বিশ্বাস করাই যুক্তিযুক্ত এবং তা শ্রেয়ও বিয়ে তিনি করেন নি ঠিকই, কিন্তু ভাল তিনি বেসেছিলেন এবং তা গভীরভাবে ও আন্তরিকভাবে। আর সেই ভালবাসার, প্রেমের পাত্রটি ছিল তার অতি আদরের স্বদেশ-ইংল্যাণ্ড।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন