৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)

মাইকেল এইচ. হার্ট

এ প্রজ্ঞাবান মানুষটির জন্ম হয় ইংল্যন্ডের মন্মথশায়ারের ট্রেলাক গ্রামে। জন্মতারিখ (১৮৭২ সালে ১৮ই মে)। ইংল্যন্ডের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। দাদু লর্ড জন রাসেল ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। বাবা ভাইকাউন্ট ছিলেন পার্লামেন্টের সদস্য। পরিবার পরিকল্পনা সপক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি তার সদস্যপদ হারান। তার মাও ছিলেন উদারনৈতিক চরিত্রের মহিলা। শৈশবেই বাবা-মাকে হারান রাসেল।

এই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “আমার ছেলেবেলা ছিল চরম বিয়োগান্তক। জন্মের এক বছর পরেই বাবা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। চাচা হঠাৎ উন্মাদ হয়ে গেলেন। মা আর বোন একই সাথে ডিপথেরিয়ার মারা গেলেন। ১৮ মাস পর বাবা মারা গেলেন। ভাই ফ্রাঙ্ক কাঁদছিল, আমি চুপ করে সব দেখছিলাম।”

মা-বাবার অবর্তমানে শিশু রাসেলের সব ভার নিজের হাতে তুলে নেন দাদী রাসেল।

বাড়িতেই পড়াশুনা শুরু হল। একজন জার্মান গভর্নেস ও ইংরেজ শিক্ষকের তত্ত্ববধানে তিনি সাহিত্য, বিজ্ঞান, অঙ্কের পাঠ নিতে আরম্ভ করলেন। ভাইয়ের কাছে শিখতেন জ্যমিতি। কিন্তু তার প্রিয় বিষয় ছিল বীজগণিত।

১৮৯০ সালে আঠারো বছর বয়সে কেমব্রিজের ট্রিনটি কলেজে ভর্তি হলেন। তার বিশেষ আগ্রহ ছিল গণিতে। এখান থেকে গণিতে প্রথম হলেন ট্রাইপোস। পরে সপ্তম বাংলার।

গণিত ছাড়াও তার আকর্ষণ ছিল দর্শনে। দর্শনে সম্মানের সাথে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজের ফেলো নির্বাচিত হলেন।

কেমব্রিজে ছাত্র অবস্থাতেই পরিচয় হয় অ্যালিস পিয়ার্সন স্মিথ নামে এক আমেরিকান তরুণীর সাথে। অল্পদিনেই দুজনে গভীর প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ১৮৯৪ সালে দুজনের বিয়ে হল। রাসেল তখন মাত্র ২২ বছরের যুবক।

বিয়ের অল্প কিছুদিন পর রাসেল জার্মানিতে গিয়ে সেই সময়কার বিখ্যাত অঙ্কশাস্ত্রবিদ অধ্যাপক ভায়ারট্রাসের সাথে একসাথে গণিত সংক্রান্ত কিছু কাজকর্ম করলেন। এখানে তিনি গণিতে অধ্যাপনাও করেছেন।

১৯০০ সালে রাসেলের জীবনে ঘটল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্যারিসে বসেছিল দর্শনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

ইংল্যান্ডে ফিরে এসে তিনি এবং অধ্যাপক হোয়াইটহেড একই সাথে গবেষণা শুরু করলেন। ১৯০২ সাল থেকে ১৯১০ দীর্ঘ আট বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর প্রকাশ করলেন গণিতশাস্ত্র সম্বন্ধনীয় যুগান্তকারী রচনা প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা (Principia Mathematica)।

প্রিন্সিপিয়া উত্তরকালে গণিতজ্ঞদের কাছে এক অমূল্য গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। অঙ্কশাস্ত্রের উপর এমন প্রামাণ্য গ্রন্থ খুব কমই রচিত হয়েছে। দুই মহান পণ্ডিতের অক্লান্ত সাধনার ফলশ্রুতি এই গ্রন্থ।

১৯০৮ সালে তিনি লন্ডনের রয়াল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হলেন। তার প্রিন্সিপিয়া রচনা শেষ করে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়লেন। তিনি পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার ব্যাপারে মনস্থির করলেন।

১৯১০ সালে লিবারেল পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড়ালেন। কিন্তু স্থানীয় ভোটদাতারা সরাসরি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলল, রাসেল ঈশ্বর মানেন না, চার্চে যান না। এমন লোককে ভোটে নির্বাচিত করার কোন অর্থই হয় না। ভোটে পরাজিত হলেন রাসেল।

উত্তরকালে আরো দুবার তিনি পার্লামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, দুবারই পরাজিত হন।

১৯১৪ সালে শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। রাসেল ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। তিনি ইংল্যান্ডের মানুষদের সঙ্গী মনোবৃত্তির তীক্ষ্ণ সমালোচনা করলেন।

তার এই যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের জন্য সমস্ত দেশবাসীর কাছে অপ্রিয়ভাজন হয়ে উঠলেন। রাসেলকে অভিযুক্ত করা হল এবং তার বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করা হল। তিনি জরিমানা দিতে অস্বীকার করলেন। এর জন্যে তার গ্রন্থাগারের অধিকাংশ বই বিক্রি করে জরিমানার অর্থ আদায় করা হল।

১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে, তিনি ট্রিবিউনাল পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করবর অপরাধে কারারুদ্ধ হলেন। ইংল্যান্ডের মিত্রপক্ষ আমেরিকার বিরুদ্ধে এই লেখার জন্য ছ মাসের জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা হল। কারাদণ্ড ভোগ করার অপরাধে তাকে ট্রিনটি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে বিতাড়িত করা হয়।

কারাগারে বসেও এই জ্ঞানতাপস বৃথা সময় নষ্ট করেননি। এই সময় রচনা করলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ Introduction to Mathematical Philosophy। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি কোন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাননি। এই সময় লেখা ও বক্তৃতা দিয়ে উপার্জন করতেন।

ইতিমধ্যে রাশিয়ায় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। দেশে গড়ে উঠেছে সমাজতন্ত্র। রাসেল। সমাজবাদের প্রতি আকৃষ্ট হলেন।

১৯২০ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলন। রাসেল ইংল্যান্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি হিসাবে রাশিয়ায় গেলেন। এখানে সাক্ষাৎ হল লেনিনের সাথে। রাশিয়ার নতুন সমাজব্যবস্থা দেখে হতাশ হয়েছিলেন রাসেল।

তার এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখেন “The practice and theory of Bolshevism”। রাশিয়ার ভ্রমনের পর তিনি চীনে যান। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

চীনে এসে পিকিং ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বক্তৃতা দিলেন। ছাত্রদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন।

চীন ভ্রমণের পর তিনি “চীনের সমস্যা” বলে একটি বই লেখেন। তাতে চীনের মানুষ, তাদের সংস্কৃতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

চীনে থাকার সময় ঠাণ্ডা লেগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীরের অবস্থা এত খারাপ হয়েছিল, সকলে তার জীবনের আশা প্রায় ত্যাগ করেছিল।

কিন্তু রাসেল অদম্য প্রাণশক্তির জোরে সুস্থ হয়ে উঠলেন। এই সময় তাকে যিনি অক্লান্ত সেবা-যত্ন করে সুস্থ করে তোলেন তার নাম ডোরা ব্লাক। ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে রাসেল ডোরাকে বিবাহ করেন।

তিনি জীবনে চারবার বিবাহ করেছিলেন, এছাড়া বহু নারীর প্রেমে পড়েছিলেন।

তার প্রথমা স্ত্রী অ্যালিস ছিলেন স্বামীর প্রতি খুবই অনুরক্ত। কিন্তু একদিন পাহাড়ি পথে সাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎ তার মনের মধ্যে অ্যালিসের সম্বন্ধে অদ্ভুত এক শূন্যতা সৃষ্টি হল। তার প্রতি সব আকর্ষণ হারিয়ে ফেললেন। বাড়ি ফিরেই অ্যালিসের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা আনলেন।

ইতিমধ্যে মোরেল নামে এক বিবাহিত মহিলার প্রেমে পড়ে গেলেন রাসেল। অল্পদিনের মধ্যেই এই প্রেম ছিন্ন হয়ে গেল। এবার রাসেলের সঙ্গিনী হলেন মিস ডোরা ব্ল্যাক। বিবাহ না করলেও দুজনে স্বামী-স্ত্রীর মত থাকতেন। চীন থেকে ফেরার পর রাসেল ডোরাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন।

রাসেলের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল না। নিজে পৈত্রিক সম্পত্তি বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে দান করে দিয়েছিলেন। এই সময় শুধুমাত্র লেখাই ছিল তার জীবিকা অর্জনের পথ। রাসেল শিক্ষা সম্বন্ধে বরাবরই গভীরভাবে চিন্তা করতেন। শিক্ষা সম্বন্ধীয় এই সব চিন্তা-ভাবনাকে তিনি প্রকাশ করেছেন তার দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ “On education” ও “Education and the social order”-এ।

১৯২৯ সালে তিনি রচনা করলেন তার চেয়ে বিতর্কিত এবং উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ “ম্যারেজ অ্যান্ড মরালস” (Marriage and Morals)।

ডাক এল আমেরিকা থেকে। সপরিবারে গেলেন আমেরিকাতে। প্রথমে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন তারপর লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিলেন। এক বছর পর (১৯৪১) ডাক এল নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনের অধ্যাপনা করবার জন্য। কিন্তু তার ম্যারেজ অ্যান্ড মরালস বই-এর ইতিমধ্যে চারদিকে তর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। কলেজের এক ছাত্রীর মা অভিযোগ জানাল রাসেলের মত মানুষ শিক্ষক হলে তার মেয়ের সর্বনাশ হবে।

এছাড়া একজন বিশপ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাল তিনি ধর্ম ও নৈতিকতার বিরোধী। বিচারক ম্যাকগীহান এই অভিমতের সমর্থন করে আদেশ দিলেন রাসেলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। এর জন্যে তিনটি কারণ দেখালেন। প্রথমত, রাসেল আমেরিকার নন, দ্বিতীয়ত, অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হবার জন্য তিনি কোন পরীক্ষা দেননি, তৃতীয়ত, তিনি যা লিখেছেন তা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক।

এই প্রসঙ্গে আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন এই সুন্দর পৃথিবীতে যাজকরাই বার বার মানুষকে উত্তেজিত করে আর প্রতিভাবানরা হয় নির্বাসিত।

এই সময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউলিয়াম জেমস স্মারক বক্তৃতা দেবার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানান হল। তাকে বারনেস ফাউনডেশনের তরফ থেকে দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত করা হল। তিনি এখানে পর পর বেশ কয়েকটি বক্তৃতা দিলেন। হঠাৎ তাকে পদচ্যুত করা হল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি যে সব বক্তৃতা দিয়েছেন তা মোটেই উন্নত মানের নয়। সবচেয়ে বিস্ময়ের, এই সময় তিনি যে সব বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা সংকলন করে প্রকাশিত হল “পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস।” এই যাবকাল পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস প্রসঙ্গে যত বই লেখা হয়েছে এটি তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

এই সময় চাকরি হারিয়ে খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর সাথে ছিল তৃতীয় স্ত্রী প্যাট্রিসিয়া স্পেন্স এবং শিশুপুত্র কনরার্ড।

এইবার ডাক এল ইংল্যান্ড থেকে। তার পুরানো কলেজ প্রিনটি পুনরায় অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত করলেন। দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পর কেমব্রিজ তার অপরাধের প্রায়শ্চিত্য করল। এই আমন্ত্রণ পেয়ে লন্ডনে ফিরে এলেন রাসেল।

ইংল্যান্ডে ফিরে এসে প্যাট্রিসিয়ার সাথে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হল। কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেল।

বিবাহ বিচ্ছেদ, আর্থিক সংকট, যুদ্ধ তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা কোন কিছুই কিন্তু তার সৃজনীশক্তিকে সামান্যতম ব্যাহত করতে পারেনি। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হল তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আর একটি রচনা “Human Knowledge-its scope and limits”। ক্রমশই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছিল দেশে দেশে। তিনি যখনই যে দেশে যেতেন, অভূতপূর্ব সম্মান বর্ষিত হত তার উপর। প্রকৃতপক্ষে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ববাসীর কাছে বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক।

অবশেষে এল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। ৯৫০ সালে তার ম্যারেজ অ্যান্ড মরাল বইটির জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হল।

আশি বছরে পা দিলেন রাসেল। এডিথ ফিঞ্চ নামে আমেরিকান মহিলাকে তিনি বিবাহ করলেন। এডিথ তার চতুর্থ ও শেষ স্ত্রী। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এডিথের কাছ থেকেই তিনি সুখ ও শান্তি পেয়েছিলেন। এতদিন রাসেল ছিলেন জ্ঞানের পূজারী ব্যক্তিগত জীবনের সুখ ভোগ, ছোট-বড় সামাজিক সমস্যা, এই ছিল তার জগৎ। ব্যক্তি জীবনের বহু কিছুর মধ্যেই লক্ষ্য করা গিয়েছে স্বার্থপরতা হীনমন্যতা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি।

নিজের ছাত্রকে, বন্ধুকে প্রতারিত করতে যার সামান্যতম বাধেনি, মনুষ্যত্বের চেয়ে অর্থ যার কাছে বড় হয়ে উঠেছিল, তিনিই আবার নিজের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সমস্ত অর্থই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দান করে যান।

প্রকৃতপক্ষে রাসেলের মধ্যে ছিল দ্বৈত্য সত্তা-ব্যক্তিসত্তা এবং সামাজিকসত্তা। জীবনের প্রথম ৮০ বছর ব্যক্তিসত্তাই ছিল প্রবল কিন্তু উত্তরকালে সমগ্র মানব সমাজ, পৃথিবী হয়ে উঠল তার কর্মভূমি।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে এগিয়ে এলেন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। যারা পৃথিবীর বুকে প্রচার করতে চেয়েছিলেন শান্তি বাণী। এদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন রাসেল আর আইনস্টাইন-তারা প্রকাশ করলেন এক ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাব।

জাপানের হিরোসিমায় আণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন সমস্ত মানব সভ্যতার অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হতে চলেছে।

পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানী পদার্থবিদদের কাছে আবেদন করে বললেন, একমাত্র আপনারাই পারেন সমস্ত পৃথিবীকে রক্ষা করতে। আসুন সকলে মিলে পৃথিবী থেকে পারামাণিক যুদ্ধের সব সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিই।

পৃথিবী থেকে সব পারমাণবিক অস্ত্র নিশ্চিহ্ন করার জন্য স্থাপিত হল “ক্যাম্পেন ফর নিউক্লিয়ার ডিসআর্মামেন্ট” (Campaign for Nuclear Disarmament)। রাসেল হলেন এর প্রেসিডেন্ট। তিনি ইংল্যান্ডের নেতবন্দের কাছে আবেদন রাখলেন তারা যেন পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে অহেতুক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় না নামে। তিনি ব্রিটেন, আমেরিকা এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি লিখলেন কিন্তু তার সেই ডাকে কেউ সাড়া দিল না।

এবার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নেমে পড়লেন রাসেল। ১৯৬১ সালে ট্রাফালগার স্কোয়ারে ত্রিশ হাজার মানুষের মিছিলে ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিলেন। তাকে আইন ভাঙার অপরাধে সাত দিনের জন্য কারারুদ্ধ করা হল। বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়, রাসেল তখন প্রায় নব্বই বছরের বৃদ্ধ। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিশ্বশান্তির জন্য প্রতিষ্ঠিত হল “বারট্রান্ড রাসেল পিস ফাউন্ডেশন”। যে রাসেল একদিন শিষ্যকে ন্যায্য প্রাপ্য দেননি, তিনি তার জীবনের সমস্ত উপার্জিত অর্থ তুলে দিলেন এই পিস ফাউন্ডেশনে।

শান্তি আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক হলেও কিন্তু তার লেখনী স্তব্ধ হয়নি। তবে এইবার আর দর্শন গণিত নয়, লিখলেন, “ওয়ার ক্রাইমস ইন ভিয়েনাম” এবং এতে তিনি সমস্ত পৃথিবীর সামনে আমেরিকান সৈন্যদের ভিয়োমে অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরলেন।

এ সময় প্রকাশকদের তাগিদে রচনা করলেন তার তিন খণ্ডে আত্মজীবনী। এই আত্মজীবনী তিন খণ্ডে বিভক্ত (১৮৭২-১৯১৪), (১৯১৪-১৯৪৪), (১৯৪৪-১৯৬৭) রচনার প্রথমেই তিনি বলেছেন তিনটি শক্তি তার জীবনকে চালিত করেছে। প্রথম প্রেমের আকাক্ষা, জ্ঞানের তৃষ্ণা, মানুষের জীবনের দুঃখ-বেদনার অনুভূতি।

রাসেলের সমস্ত জীবন ছিল কর্মময়। কমবেশি প্রায় ৭৫টি বই লিখেছিলেন। এই বইগুলোর মধ্যে ফুটে উঠেছে তার অগাধ পাণ্ডিত্য, প্রখর যুক্তবোধ, অসাধারণ মনীষা এবং অপূর্ব রচনাশৈলী।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন