৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)

মাইকেল এইচ. হার্ট

বিশ্ববিজ্ঞানের মহানায়িকা মেরি কুরি, মাদাম কুরি নামেই সমধিক পরিচিত। রেডিয়াম ও পোলনিয়াম এই দুই তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কার করে তিনি পদার্থ ও রসায়ন বিদ্যার মহাসম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।

মাদাম কুরির সম্পূর্ণ নাম মার্জা ক্লোডোস্কা। তিনি পোল্যাণ্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ১৮৬৭ খ্রি: ৭ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে মার্কা সর্বকনিষ্ঠ। বাবা স্থানীয় একটি স্কুলের পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক। মাও সুশিক্ষিতা, ব্যক্তিত্বময়ী। সংসারের খরচ সংকুলানের জন্য তিনি মেয়েদের পড়াবার জন্য একটা স্কুল খুলেছিলেন।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লিখতে পড়তে শিখে গিয়েছিলেন মার্জা। তাঁর পড়ার আগ্রহও ছিল প্রবল।

অ্যাডভেঞ্চারের গল্প থেকে শুরু করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই, নানা আবিস্কারের গল্প, যখন যা হাতের নাগালে পেতেন সব গোগ্রাসে গিলতেন।

পনের বছর বয়সের মধ্যেই তিনি রুশ জার্মান দুই ভাষাই ভালভাবে শিখে নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বাবাই ছিলেন উৎসাহদাতা। মাত্র এগারো বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মা মারা গেলেন। সেই সময় এই মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক বলতে কিছুই ছিল না।

মার্জার দিদি ব্রনিয়া এবং দাদা জোজিও হাইস্কুলে সেরা ফল করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। মার্জাও একই স্কুল থেকে সবচেয়ে ভাল ফল করে স্নাতক হলেন, পেলেন স্বর্ণপদক।

ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফলাফলের জন্যই ক্লোডোস্কার পরিবার অঞ্চলে বিশেষ সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল।

ষোল বছর বয়সে স্কুল থেকে বেরিয়ে মার্জা স্থির করলেন প্যারিস যাবেন ডাক্তারি পড়বার জন্য।

কিন্তু বাবার আর্থিক সামর্থ্য ছিল সীমিত। বড়দি ব্রনিয়ারও সাধ প্যারিসে গিয়ে ডাক্তারি পড়বেন। প্যারিসে রেখে দুই মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবার মত সঙ্গতি বাবার ছিল না। বাবার মুখে এই নিদারুণ কথা শুনে মার্জার মন ব্যথিত হলেও হতাশ হলেন না। তিনিই বাবাকে আশ্বস্ত করে জানালেন যে দিদিই আগে প্যারিসে পড়তে যাবে। তাঁর পড়ার খরচ জোগাবার জন্য তিনি এখানে কিছু একটা কাজ জুটিয়ে নেবেন। দিদি পাশ করে দেশে ফিরে এলে তিনি সেখানে যাবেন। তখন তার পড়ার খরচ চালানো দিদির পক্ষে অসম্ভব হবে না।

এই ব্যবস্থা মতই দিদি ব্রনিয়া প্যারিস চলে গেলেন। আর তাঁর পড়ার খরচ চালাবার জন্য মার্জা ওয়ারশতেই এক ধনী পরিবারে গভর্নেসের চাকরি নিলেন। সেখানে বাড়ির কত্রী ছিলেন খুবই বদমেজাজী। ফলে মার্জা বছরখানেকের বেশি টিকে থাকতে পারলেন না। কিন্তু কাজ ছাড়া থাকবার তো উপায় ছিল না। দিদিকে প্যারিসে নিয়মিত খরচের টাকা পাঠাতে হয়।

চেষ্টা চরিত্র করে এবারে এক রুচিসম্পন্ন ভদ্র পরিবারে কাজ পেলেন–সেই গভর্নেসেরই। এখানে পরিবারের আবহাওয়ার সঙ্গে সহজেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিলেন।

কিন্তু সুখ তো বেশিদিন কপালে সয় না! মার্জারও তাই হল। ঘটনাক্রমে পরিবারের এক সুদর্শন যুবকের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়েন। কিন্তু বিয়ে সম্ভব হল না।

অভিজাত পরিবারের ছেলের সঙ্গে সামান্য বেতনভূক পরিচারিকার বিবাহ যে অকল্পনীয় ব্যাপার।

যুবকটি তাঁর অভিভাবকদের কথা জানিয়ে মার্জার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতেই শেষ হয় না। পরিবারে কর্তারা কাজ থেকে ছাঁটাই করলেন মার্জাকে।

চরম হতাশা ও অপমান নিয়ে আবার নতুন করে কাজের সন্ধানে নামতে হল মার্জাকে।

এমনি জীবন-সংগ্রামের কঠিন পথে চলতে চলতে মার্জা অল্প বয়সেই যথেষ্ট পরিণত হয়ে উঠলেন। প্রতিকূলতার মধ্যে মর্যাদার সঙ্গে লড়াই করবার প্রেরণা তিনি এভাবেই লাভ করেছিলেন।

পাঁচ বছর প্যারিসে পড়াশোনা করে দিদি ব্রনিয়া ডাক্তার হলেন। কিন্তু তিনি আর দেশে ফিরলেন না। সেখানেই এক যুবককে বিয়ে করে সংসার পাতলেন।

গোটা পরিকল্পনাটাই পাল্টে গেল। মার্জার আর ডাক্তারী পড়তে প্যারিস যাওয়া সম্ভব হল না। খরচ যোগাবে কে?

উনিশ শতকের শেষ দিকে পোল্যাণ্ড ছিল রাশিয়ার জারতন্ত্রের শাসনাধীন। মার্জার তরুণী বয়সকালে পোল্যাণ্ড রুশ-বিরোধী স্বাদেশিকতার আবহাওয়া জোরদার হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার আন্দোলনে মাজার শিক্ষক পিতা ছিলেন অন্যতম পুরোধা পুরুষ। মার্জাও বাবার সঙ্গে আন্দোলনে ভিড়ে গেলেন।

পোল্যাণ্ডের নানাস্থানে গোপনে স্বদেশী স্কুল গড়ে উঠেছিল। তেমনি একটি স্কুলে মার্জা শিক্ষয়িত্রীর কাজ করতে লাগলেন। তিনি ছাত্রদের পড়াতেন অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন। এইভাবে দুবছর কাটল। ১৮৯১ খ্রি: প্যারিস থেকে দিদি ব্রনিয়া হঠাৎ চিঠি পাঠালেন পত্রপাঠ সেখানে চলে যাবার জন্য। মার্জার ডাক্তারী পড়ার খরচ তিনিই জোগাবেন। এতদিন পরে আশার আলো আবার মার্জার্কে আশান্বিত করে তুলল। কোনরকমে পথ খরচ সংগ্রহ করে তিনি প্যারিসে রওনা হয়ে পড়লেন। প্যারিসে পৌঁছে মার্জা কিন্তু দিদির সঙ্গে দেখা করলেন না।

সুখী সংসারের গৃহিণী ব্ৰনিয়া। তার ওপরে ততদিনে একটি সন্তানও হয়েছে তার। সংসারে খরচ তো বেড়েছে।

এর ওপর বোঝা হয়ে উপস্থিত হলে দিদি তো কোন সময়ে স্বামীর বিরাগভাজন হয়ে উঠতে পারেন।

এমনি সাত-পাঁচ ভেবে মার্জা দিদির বাড়িতে আর গেলেন না। প্যারিসের আলো বাতাসহীন বস্তি অঞ্চল লাতিন কোয়ার্টারে নামমাত্র ভাড়ায় মাথা গোঁজার মত একচিলতে একটা ঘর ভাড়া করলেন।

নরকতুল্য সেই নোংরা, চোর জোচ্চোর-ভবঘুরে ভরা পরিবেশে নতুন জীবন শুরু হলো মার্জার।

যেই স্বপ্ন নিয়ে প্যারিসে এসেছিলেন, তা বাতিল করে ভর্তি হলেন প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে, পদার্থবিদ্যার ক্লাশে।

এখানে নিজের নামও পাল্টে ফেললেন। মার্জার নতুন নাম হল মেরি ক্লোডোস্কো।

চরম দারিদ্র্য, অনাহারে ও অসুস্থ পরিবেশের মধ্যে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া চালিয়ে যেতে লাগলেন মার্জা। দিদি এই কৃসাধনের বিন্দুবিসর্গ-ও জানতে পেলেন না। বছর দুই এভাবেই কাটল। কিন্তু দীর্ঘদিন অনাহারে আধপেটা খেয়ে শরীর একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল, জীবনীশক্তিও শেষ বিন্দুতে এসে পৌঁছেছিল।

একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ করতে করতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। সহপাঠীদের শুশ্রূষায় জ্ঞান ফিরে পেয়ে শুনলেন, ডাক্তার জানিয়েছেন, পুষ্টির অভাবে ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে।

বন্ধুরাই ডায়েরী হাটকে দিদি ব্রনিয়ার ঠিকানা জোগাড় করল। ব্রনিয়া খবর পেয়ে ছুটে এসে কঙ্কালসার বোনকে বাড়িতে নিয়ে তুললেন। দিদির আন্তরিক সেবাযত্নে সে যাত্রা প্রাণরক্ষা হল মার্জার।

সুস্থতা ফিরে পেতেই আবার ফিরে এলেন নিজের লাতিন কোয়ার্টারের নরকে। ব্ৰনিয়ার অনেক কাকুতি মিনতিতেও নিজের কঠিন জীবনসাধনার পরিবর্তন ঘটালেন না।

১৮৯৩ খ্রি: মার্জা সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করে স্নাতক হলেন। পরের বছর গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করলেন।

এতদিন পরে একটু হাঁপ ছাড়বার অবকাশ পেলেন মার্জা। এই সময়েই একদিন তাঁর এক বন্ধু কোভস্কির বাড়িতে আলাপ হল পদার্থবিদ্যার এক তরুণ গবেষকের সঙ্গে। তার নাম পিয়েরি কুরি।

এই ভদ্রলোক ইতিমধ্যেই বিদ্যুতের সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র ও পিজো বিদ্যুৎ আবিস্কার করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।

পরবর্তীকালে আদর্শবাদী গবেষণাপাগল এই তরুণ গবেষকই মার্জাকে জীবনসঙ্গিনী করে নেন। মার্জা হলেন মাদাম কুরি। সময়টা ১৮৯৫ খ্রি:।

বিশ্ববিজ্ঞানের পরম বিস্ময়কর দম্পতির জীবনের যাত্রারম্ভ হয় এভাবেই।

পিয়েরি প্যারিসের এক মিউনিসিপ্যাল স্কুলে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন পড়ান। তবে গবেষণার সূত্রে পদার্থবিদ হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত লাভ করেছেন। আর্থিক অবস্থা খুব সুবিধের নয়।

মাসমাইনের সামান্য টাকাতেই দুজনে মিলে কোনরকমে সংসার সামলাতে লাগলেন। এরই মধ্যে তাদের স্বপ্ন দেখারও বিরাম নেই।

বিয়ের দু’বছর পরেই ১৮৯৭ খ্রি: কুরি দম্পতির প্রথম কন্যা সন্তান আইরিনের জন্ম। হল।

কুরি দম্পতির এই প্রথম কন্যাটি পরবর্তীকালে প্রমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্বখ্যাতি লাভ করেছিলেন।

১৯২৬ খ্রি: আইরিনের বিয়ে হয়েছিল রেডিরিক জোলিয়েট নামের এক পদার্থ। বিজ্ঞানীর সঙ্গে।

স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে গবেষণা করে ১৯৩৫ খ্রি: নতুন তেজস্ক্রিয় মৌল আবিস্কার করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

আইরিনের জন্মের কয়েক বছর পরেই দ্বিতীয় কন্যা ইভার জন্ম হয়। সংসারের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে খরচ। কিন্তু সম্বল তো সেই মিউনিসিপ্যাল স্কুলের মাসমাইনের টাকা।

সংসারের সব অভাব-অভিযোগ ভুলে রইলেন কুরি দম্পতি নিজেদের গবেষণার মধ্যে ডুবে থেকে।

১৯৯৬ খ্রি: হেনরি বেকেরেল নামে এক ফরাসি বিজ্ঞানী ইউরেনিয়াম ঘটিত খনিজ থেকে এক রশ্মি আবিস্কার করেন। তার নাম গামা রশ্মি। এই আবিস্কারের পর থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে থাকেন যে ইউরেনিয়াম বা তার কোনও যৌগের অবশ্যই আলো শোষণের ক্ষমতা রয়েছে। সেই আলোই নিশ্চয় রশ্মির আকারে বিচ্ছুরিত হয়।

বিজ্ঞানীরা অনুমানই যা করেছিলেন, ভাবনার স্বপক্ষে কোন বাস্তব প্রমাণ খাড়া করতে পারছিলেন না।

পিয়েরি মার্জাকে পরামর্শ দিলেন এই সমস্যাটিকে নিয়েই তার ডক্টরেটের থিসিস তৈরি করতে।

গবেষণার কাজে নানা সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি দরকার। কিন্তু সেসব কিনবার টাকা কোথায়? মার্জা হতাশ না হয়ে স্বামীর তৈরি যন্ত্রপাতি, বিকিরণ পরিমাপের যন্ত্র–এসব নিয়েই গবেষণার জন্য তৈরি হলেন।

পিয়েরি যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, সেখানে একটি পরিত্যক্ত ঘর ছিল। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানেই ল্যাবরেটরি গুছিয়ে নেওয়া হল। তারপর দুজনে মিলে আরম্ভ করলেন গবেষণা।

মার্জা দেখলেন, ইউরেনিয়াম ঘটিত যৌগই কেবল নয়, ইউরেনিয়াম ধাতু থেকেও রহস্যময় বিকিরণ বেপরোয়াভাবে বেরিয়ে আসছে। এই বিকিরণের গোপন উৎস সন্ধান করতে গিয়ে মাঞ্জা লক্ষ করলেন পরমাণুর মধ্যেই রয়েছে এই গোপন উৎস।

বিকিরণের বৈশিষ্ট্যটি ইউরেনিয়াম ধাতুরই একটা পারমাণবিক অবস্থা। বিকিরণের এই বৈশিষ্ট্যই হল রেডিও অ্যাকটিভিটি।

ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে এমন কোন মৌল আরও আছে কিনা, সেই অনুসন্ধান কাজে এবারে মার্জা আত্মনিয়োগ করেন।

দীর্ঘ অনুসন্ধানের কাজে নানা খনিজ খুঁজতে খুঁজতে মাজা খুঁজে পান পিচ ব্লেড। এর মধ্যেই পাওয়া গেল ভয়ঙ্কর সেই বিকিরণ। ইউরেনিয়ামেরই অনুরূপ সেই বিকিরণ এই খনিজের সারা অবয়ব জুড়ে।

আরও একটা ব্যাপার হল, খনিজ পিচ ব্লেড থেকে যে বিকিরণ বিচ্ছুরিত হচ্ছে, তার তেজ ইউরেনিয়ামের চেয়ে বহুগুণ বেশি।

ধীরে ধীরে মার্জা খনিজ পিচ ব্লেড থেকে বিশুদ্ধ অবস্থা অর্থাৎ বিশেষ তাপমাত্রায় কতগুলো পদার্থ যোগ করে নানা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এক ধরনের মৌলকে আলাদা করে নিলেন।

স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘ চার বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে প্রকৃতির এক অজানা রহস্যের উন্মোচন ঘটানো সম্ভব হয়। মার্জা দুটি সম্পূর্ণ নতুন মৌল আবিষ্কার করে পৃথক করে নেন।

এই মৌল দুটোর একটির নাম দিলেন পোলনিয়াম। মাতৃভূমি পোল্যাণ্ডের নামে এই মৌলটিকে উৎসর্গ করে এই নাম দিলেন।

দ্বিতীয় মৌলটির নাম দেন রেডিয়াম। ইউরেনিয়াম নামের এক অংশ হেঁটে রেডিয়েশন বা বিকিরণ শব্দের রেডি বসিয়ে নামকরণ করা হল।

নতুন আবিষ্কৃত রেডিয়াম মৌলটির তীব্রতা ইউরেনিয়ামের তুলনায় পনের লক্ষ গুণ বেশি। পিয়েরির তৈরি বিকিরণের পরিমাণ পরিমাপের যন্ত্রই তা বলে দিল।

এই বিস্ময়কর আবিস্কারের কথা ছড়িয়ে পড়তে দেরি হল না। পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন উঠল।

কুরি দম্পত্তির এই মহৎ গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে হেনরি বেকেরেলের সঙ্গে যুক্তভাবে তাদের দেওয়া হল ১৯০৩ খ্রি: পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার।

অসুস্থতার জন্য তাদের কারোর পক্ষেই সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে গিয়ে পুরস্কার নেওয়া সম্ভব হয়নি। আশ্চর্য যে এই বিজ্ঞানী দম্পতির জন্য ফরাসি সরকারের কোন তাপ উত্তাপ দেখা গেল না। না দেওয়া হল তাদের কোন আর্থিক সাহায্য না করে দেওয়া হল একটি ভাল ল্যাবরেটরি। কোন সম্মান প্রদর্শন তো দূরের কথা।

গবেষণার সুবাদে কেবল ১৯০৪ খ্রি: মাদাম করি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করলেন।

রেডিয়াম ও পোলনিয়াম আবিস্কার ও এই দুই দুটি ধাতব মৌলের নিষ্কাশন পদ্ধতি উদ্ভাবনের পর বিশ্ববিজ্ঞানের নতুন একটি শাখার উদ্ভব হল। তার নাম রেডিয়েশন সায়েন্স বা তেজস্ক্রিয় বিজ্ঞান।

মার্জা রেডিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন বটে, এর তেজস্ক্রিয়তার স্বরূপ তিনি নির্ণয় করে উঠতে পারেননি

তাঁর অসম্পূর্ণ কাজটি করেছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ১৯০২ খ্রি:। তিনি বিশ্লেষণ করে দেখান যে তেজস্ক্রিয়তা হল আসলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের স্বতঃস্ফূর্ত ভাঙ্গন দশা।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রচণ্ড চাপে অবস্থিত মৌল কণিকা প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যাগত তারতম্যের ফলেই ঘটল ভাঙ্গন দশা।

নিউক্লিয়াসের এই বিশেষ অবস্থার কথা রাদারফোর্ডই সর্বপ্রথম বিশ্ববিজ্ঞানকে অবহিত করেন।

১৯০৬ খ্রি: ১৯শে এপ্রিল, প্যারিসের এক রাস্তায় আকস্মিক দুর্ঘটনায় পিয়েরি কুরির মৃত্যু হয়।

এ বিপর্যয়ের কিছুদিন পরেই মাদাম কুরি সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের পদে মনোনীত হলেন।

মাদাম কুরিই হলেন ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে প্রথম মহিলা যিনি অধ্যাপনার আসনে ব্রতী হন।

১৯১১ খ্রি: দ্বিতীয়বার নোবেল পেলেন মাদাম কুরি। এবারে পদার্থ বিদ্যায় নয়। রসায়নে।

রেডিয়ামকে বিশুদ্ধ মৌলরূপে পৃথক করা ও তার পারমাণবিক ওজন নির্ণয় করার কৃতিত্বের জন্যই তিনি এই পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

এই সুবাদে ফরাসি সরকার মাদাম কুরিকে একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি উপহার দিয়ে তাদের পূর্বেকার ভুলের সংশোধন করলেন। এই ল্যাবরেটরির নাম রাখা হয় কুরি ইনস্টিটিউট অব রেডিয়াম। মাদাম কুরিই হলেন এই প্রতিষ্ঠানের সর্বেসর্বা।

১৯১৪ খ্রি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তাণ্ডব নেমে এলো পৃথিবীর বুকে। মানবতাবাদী মাদাম কুরি আর ল্যাবরেটরির ঘরে আবদ্ধ থাকতে পারলেন না। গবেষণা ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করলেন। তার আবিস্কৃত রেডিয়ামকে আহতদের চিকিৎসায় ব্যবহার করে তাদের সুস্থ করে তুলতে লাগলেন।

চার বছর পৃথিবীময় মৃত্যুর তাণ্ডব ঘটিয়ে অবশেষে ১৯১৮ খ্রি: মহাযুদ্ধের অবসান ঘটল। মাদাম কুরিও আবার ফিরে গেলেন তার ল্যাবরেটরিতে।

দীর্ঘকাল তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করার ফলে মাদাম কুরি রক্তের কোষগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ফলে ১৯৩৪ খ্রি: তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেন।

সমস্ত চিকিৎসা ও চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সেই বছরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশ্ববিজ্ঞানের এক অত্যাশ্চর্য প্রতিভা।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন