৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)

মাইকেল এইচ. হার্ট

মানব সভ্যতার ইতিহাসে গ্রীকদের দান অতুলনীয়। দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রেই পৃথিবীর মানুষ তাদের কাছে ঋণী। দর্শনে সক্রেটিস, প্লেটো, এ্যারিস্টটল মানুষের চিন্তা মনীষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ্যাসকাইলাস, সোফাক্লিস, ইউরিপিদেস বিশ্বের নাট্য সাহিত্য ভাণ্ডারকে পূর্ণ করেছেন তাদের অবিস্মরণীয় সব নাটকে। বিজ্ঞানের জগৎকে আলোকিত করেছেন হিপোক্রেটস, ইউক্লিড, আর্কিমিডিস, পিথাগোরাস। মানুষের মনের অন্ধকারের বুকে এঁরা জ্ঞানের আলো জ্বেলেছিলেন।

এই সব মহান মানুষের মধ্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিপোক্রেটস। তাঁকে বলা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক। যে সময় তাঁর জন্ম সেই সময় চিকিৎসা বিজ্ঞান ছিল। কুহেলিকায় ঢাকা। শুধুই কুসংস্কার আর বিচিত্র সব তন্ত্রমন্ত্রের মধ্যেই চিকিৎসকদের জ্ঞান। সীমাবদ্ধ ছিল।

প্রাচীন গ্রীসদেশে চিকিৎসার দেবতা ছিলেন অ্যাপেলো। তার হাতে থাকত দণ্ড। একে বলা হত হার্মিসের দণ্ড। এই দণ্ড চিকিৎসাবিদ্যার প্রতীক। গ্রীসের বিভিন্ন স্থানে এই অ্যাপেলোর মন্দির ছিল। লোকে অসুস্থ হলে এই মন্দিরে গিয়ে পূজা দিত, শূকর ভেড়া। উৎসর্গ করত। মন্দিরের পুরোহিতরাই প্রধানত ছিল চিকিৎসক। তারা খুশিমত চিকিৎসার নানান বিধান দিত। লোকে ভাবত দেবতার ক্রোধে মানুষ অসুস্থ হয়। পুরোহিতরা দেবতার প্রতিনিধি, তারা ইচ্ছা করলে সেই রোগ সুস্থ করে তুলতে পারে। এইভাবে এক শ্রেণীর পুরোহিত সম্প্রদায় গড়ে উঠল, চিকিৎসাই হল তাদের প্রধান পেশা। কালক্রমে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চিকিৎসার সম্বন্ধে তারা কিছু জ্ঞান অর্জন করল। যে যেটুকু জ্ঞান অর্জন করত তাকে অ্যাপেলো প্রদত্ত মনে করে গোপন করে রাখত। তখন চিকিৎসাবিদ্যাকে বলা হত গুপ্ত বিদ্যা। এই বিদ্যা শুধুমাত্র পিতা তার সন্তানকে দিত।

হিপোক্রেটস ছিলেন এমনি এক চিকিৎসকের পুত্র। তিনি যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রায় একই সময়ে গ্রীসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সক্রেটিস, এসকাইলাস, কিছু পরে সোফোক্লিস প্লেটোর মত মহান দার্শনিক নাট্যকাররা। তাদের মুক্ত স্বাধীন চিন্তা হয়ত হিপোক্রেটসকে প্রভাবিত করেছিল।

হিপোক্রেটসের জন্য অ্যাপিয়ান সাগরের “কস” দ্বীপে। তাঁর জীবন সম্বন্ধে বিশেষ কোন তথ্য উদ্ধার যায় না। সামান্য যেটুকু তথ্য পরবর্তীকালে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার ভিত্তিতে জানা যায় হিপোক্রেটসের বাবা ছিলেন কসের অ্যাপোলো মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। সেই সূত্রে সমাজে ছিল যেমন প্রভাব তেমনি প্রতিপত্তি। সুখ-স্বচ্ছন্দ্যের মধ্যেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন তিনি।

শিক্ষার সূত্রপাত হয় তার পিতার কাছে। পিতার কাছ থেকে যাবতীয় গুপ্তবিদ্যা তিনি অর্জন করেছিলেন। ছেলেবলা থেকেই হিপোক্রেটস ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। সেই সময় একমাত্র এথেন্সে চিকিৎসাশাস্ত্র সংক্রান্ত কিছু পড়াশুনা হত। হিপোক্রেটস পিতার কাছ থেকে সব কিছু শিক্ষা লাভ করবার পর এথেন্সে গেলেন চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করতে। সেখানে তার শিক্ষক ছিলেন ডিমোক্রিটাস। তিনি ছিলেন সে যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তি। বিজ্ঞান, গণিত, দর্শন তিনটি বিষয়েই ডিমোক্রিটাসের ছিল অসাধারণ পাণ্ডিত্য। এছাড়াও এথেন্সের আরো কয়েকজন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতের কাছে হিপোক্রেটস শিক্ষা লাভ করেন।

সেই যুগে এথেন্স ছিল শিক্ষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হত লাইসিয়াম–এর অর্থ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এক একটি লাইসিয়াম এক এক জন প্রখ্যাত শিক্ষকের অধীনে গড়ে উঠত। প্রত্যেকে নিজের অধিগত বিদ্যা ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা জ্ঞানের সামান্য অংশই ছাত্রদের দিতেন। নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের বেশির ভাগ অংশই প্রকাশ করতেন না। হিপোক্রেস চিকিৎসকের পুত্র হলেও নিজের গভীর জ্ঞান, বাস্তব যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন, যে যুগের চিকিৎসা ব্যবস্থার ভ্রান্তি আর দোষত্রুটি। তার অবৈজ্ঞানিক দিকগুলো তার চোখে প্রকট হয়ে উঠেছিল।

তিনি ঠিক করলেন বিভিন্ন চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাঁদের জ্ঞানকে অর্জন করতে হবে। কিন্তু কাজটি সহজ ছিল না। কারণ বেশির ভাগ চিকিৎসকই ছিলেন অহংকারী দাম্ভিক। হিপোক্রেটস তাঁদের অনুগত শিষ্য হয়ে নানান স্তুতি প্রশংসায় তাদের মন জয় করে নিতেন। তারপর নিজের অসাধারণ প্রতিভায় অল্পদিনের মধ্যেই গুরুর সব জ্ঞান আয়ত্ত করে নিতেন।

তাছাড়া এথেন্সে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা আসতেন। তাদের কাছ থেকে নানাভাবে শিক্ষা অর্জন করতেন। এই ভাবে সেই যুগের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্বন্ধে পরিপূর্ণ একটি ধারণা গড়ে তুললেন এবং এর মধ্যেকার ভ্রান্তি, ভুল-ত্রুটি, মিথ্যাচার, প্রতারণা কোন কিছুই তার অজানা রইল না। তিনি স্থির করলেন এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দূর করে প্রকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনা করবেন।

তিনি তার চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত করলেন। শুরু হল রুগীর চিকিৎসা। এতদিনকার প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে এ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তখন শুধুমাত্র রোগীর রোগের উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা বিধান দিত। অন্য কিছু জিজ্ঞাসা বা বিচার করবার প্রয়োজন মনে করত না। কিন্তু হিপোক্রেটস বললেন, একজন প্রকৃত চিকিৎসকের উচিত রোগ নয়, রুগীর চিকিৎসা করা। একটি উপসর্গ বা রোগ লক্ষণের উপর নির্ভর করে রোগ নির্ণয় করা উচিত নয়। একজন চিকিৎসকের রোগীর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন যেমন রোগীর প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা, তাঁর পিতা-মাতা বা অন্যদের রোগের ইতিহাস, তার কাজকর্ম, কোন পরিবেশে সে বাস করে। এই সব তথ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই রোগীর সঠিক চিকিৎসা প্রণালী নির্ধারণ করতে হবে।

অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসক হিসাবে তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। দূর দূরান্ত থেকে রোগীর দল এসে ভিড় করে তাঁর কাছে। তাঁর মত একজন তরুণ চিকিৎসকের জনপ্রিয়তা, সেই সাথে তাঁর নতুন নতুন মতবাদের কথা শুনে এথেন্সের প্রবীণ চিকিৎসকের দল তাঁর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল। হিপোক্রেটস শুধু যে চিকিৎসকের পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন তাই নয় চিকিৎসাবিদ্যার নামে ভণ্ডামি শঠতার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। তিনি পুরোহিত সম্প্রদায়ের সব ফাঁকিকে প্রকাশ করতে আরম্ভ করলেন। এতদিনকার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়ে যেতে দেখে পুরোহিত আর চিকিৎসকের দল হিপোক্রেটসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আরম্ভ করল। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার শুরু হল। হিপোক্রেটস উপলব্ধি করতে পারলেন তার পক্ষে এথেন্সে থাকা নিরাপদ নয়। তিনি এথেন্স ত্যাগ করে অনত্র চলে গেলেন।

কয়েক বছরের মধ্যেই নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি গড়ে তুললেন হিপোক্রেটস। এর ভিত্তি ছিল যুক্তি আর প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং বস্তুনিষ্ঠ চিন্তা-ভাবনা।

সেই যুগে শবব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ছিল। মনে করা হত এ কাজ ধর্মবিরুদ্ধ। সেই কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থান, তাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে কারোরই বিশেষ কোন জ্ঞান ছিল না—তাছাড়া প্যাথলজি শরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে মানুষের বাস্তব কোন ধারণা ছিল না। এ সব অসুবিধা সত্ত্বেও মানবদেহ সম্বন্ধে বহু ক্ষেত্রে হিপোক্রেটস নির্ভুল ধারণা করে চিকিৎসার বিধান দিয়েছেন। যেমন তাঁর লেখা হাড় ভাঙা এবং হাড় সরে যাওয়ার উপর একটি বই থেকে জানা যায় তিনি তখন আধুনিক কালের চিকিৎসা ব্যবস্থার মতই ভাঙা হাড় জোড়ার জন্য সেই জায়গায় এক টুকরো কাঠ দিয়ে তার উপরে ব্যান্ডেস বাধবার নির্দেশ দিয়েছেন। পেশী সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রেও তিনি নির্ভুল চিকিৎসার বিধান দিয়েছেন।

সেই যুগে গ্রীসদেশে শরীরচর্চাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিম্বা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে হত্যা করবার বিধান দেওয়া হত। মনে করা হত সুস্থ সবল নাগরিকদেরই বেঁচে থাকবার অধিকার আছে। খেলাধূলা ব্যায়ামচর্চার জন্য গ্রীসের সর্বত্র অসংখ্য ব্যায়ামাগার গড়ে উঠেছিল। এই সব কেন্দ্রে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটত। এখানে নিয়মিত যেতেন হিপোক্রেটস। খেলোয়াড়দের পেশী অস্থি সংক্রান্ত যে সব অসুবিধা দেখা দিত তা থেকে জ্ঞান লাভ করে তিনি চিকিৎসার বিধান দিতেন। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক শল্য চিকিৎসার সূচনা তিনি করেছিলেন।

সমকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জেহাদ ঘোষণা করে তিনি হিউমোরাল বা মানবদেহ নির্গত বিভিন্ন ধরনের রস সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তিনি মনে করতেন মানুষের দেহ তার মানসিকতা, আচার-ব্যবহার, তার অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর প্রধান কারণ এই দেহ নিঃসৃত রস বা হিউমোর। এই রস কখনো বা শীতল, কখনো কখনো উষ্ণ, কখনো বা শুষ্ক হতে পারে। এই রসের পরিবর্তনের অর্থ দেহের স্বাভাবিকতার পরিবর্তন।

পরবর্তী কালে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যিনি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানী গ্যালন (১৩০-১৯৯ খ্রিঃ) এই হিউমোরালা মতবাদকে গ্রহণ করেছিলেন এবং এ চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই মতবাদই সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে এই মতবাদ, হিউমোর মানব দেহকে নিয়ন্ত্রিত করে, বাতিল বলে গণ্য হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে দেহকোষের তরল পদার্থ, রক্ত, বিভিন্ন গ্রন্থি নির্গত রস মানব শরীরকে সুস্থ রাখবার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

বর্তমান কালে মানবদেহে কোন কারণে তাপ বৃদ্ধি পেলে তাকে অসুস্থ বলে বিবেচনা করা হয় এবং সেইভাবে চিকিৎসা করা হয়। হিপোক্রেটসই প্রথম মানবদেহের তাপের হাস-বৃদ্ধিকে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসাবে গ্রহণ করেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হিপোক্রিটাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল বিভিন্ন ধরনের ঘা, ফোঁড়া, কাটা, পচনের কারণ ও প্রতিকার নির্ণয়। এই বিষয় নিয়ে তিনি গভীরভাবে অনুশীলন করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন অপরিচ্ছন্নতা ও দূষিত দ্রব্য ব্যবহারই এই সব রোগের বৃদ্ধি ঘটায়। তাই তিনি পরিষ্কার পানি, ব্যান্ডেজ, ঔষধ। ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন।

মৃগীরোগ সম্বন্ধে শুধু সেই যুগে নয়, বর্তমান কালেও বহু মানুষের ধারণা, কোন অপদেবতা কিম্বা শয়তান যখন মানুষের উপর ভর করে তখন মৃগীরোগ হয়। কিন্তু সেই যুগে হিপোক্রেপটস তার অন দি স্যাক্লেড ডিসিস গ্রন্থে লিখেছেন আর দশটি ব্যাধির মতই মৃগী একটি ব্যাধি এবং সুনির্দিষ্ট কারণেই এই ব্যাধির সৃষ্টি হয়। সেই যুগের প্রচলিত সংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে হিপোক্রেটস তার শিষ্যদের কাছে নিজের জ্ঞানকে উজাড় করে দিতেন যাতে তারা চিকিৎসার আলোকে ছড়িয়ে দিতে পারে বৃহত্তর মানব সমাজের কাছে। মহান দার্শনিক প্লেটোর সাথে হিপোক্রেটসের পরিচয় ছিল। তিনি হিপোক্রেটসকে বলছেন চিকিৎসাবিদ্যার এক মহান গুরু আদর্শ শিক্ষক।

হিপোক্রেটস তাঁর জীবনব্যাপী গবেষণা, পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতার আলোয় যে জ্ঞান লাভ করেছিলেন, তাকে তিনি বিভিন্ন রচনায় লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন। এই সব রচনার সংগ্রহ ছিল প্রায় সাতাশিটি খণ্ডে। এক একটি খণ্ডে এক একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার একটি সংগ্রহশালা থেকে এই সব রচনার কিছু কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।

এই সব রচনা থেকে জানা যায় হিপোক্রেটস শুধু রোগ বা রোগীদের সম্বন্ধেই আলোচনা করেননি, তিনি চিকিৎসকদের প্রতিও বহু নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন এবং এই নির্দেশগুলো সর্বকালেই প্রযোজ্য। যেমন তিনি বলেছেন যে চিকিৎসক রোগীর প্রাসঙ্গিক সর্ব বিষয়ে খোঁজ না নিয়ে শুধুমাত্র রোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কখনোই মহৎ চিকিৎসক হতে পারেন না। তিনি বলতেন জীবন ছোট কিন্তু বিধ্যা বিরাট। সকল বিদ্যার মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যাই শ্রেষ্ঠ। শুধু মাত্র কিছু অজ্ঞ চিকিৎসকের জন্যেই এই বিদ্যা অন্য সব বিদ্যার পেছনে পড়ে রয়েছে।

এই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানী সমস্ত অজ্ঞতা আর কুসংস্কারের অন্ধকারকে দূর করে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যুক্তিনিষ্ঠ তত্ত্ব আর তথ্যের। তাই তিনি শুধু সে যুগে নন, সর্ব যুগে চিকিৎসকদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

যাতে চিকিৎসকরা তাদের সুমহান আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হন সেই কারণে তিনি তার ছাত্রদের বিদ্যা শিক্ষা শেষ হলে শপথ করাতেন। একে বলা হল “হিপোক্রেটিস শপথ”। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্ররা আজও এই শপথ নিয়ে থাকেন। আমি আমার জীবন ও এই পেশাকে পবিত্র, সুন্দর, নির্মল করে রাখব।’

হিপোক্রেটিসের নামাঙ্কিত এই শপথবাক্য আজও সর্বদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষানবীশ হওয়ার পূর্বে উচ্চারণ করিতে হয়। এই থেকেই হিপোক্রেটিস ও তাঁর অনুগামী চিকিৎসকদের সেবার আদর্শ ও সুমহানত্ব-র পরিচয় পাওয়া যায়।

যিনি আমাকে এই ব্যাখ্যাদান করছেন তাকে আমার নিজ পিতামাতা জ্ঞান করব। তার সন্তান-সন্ততিরা এই বিদ্যালাভে অভিলাষী হলে বিনাব্যয়ে শিক্ষাদান করব। আমি যে পথ্যাপথ্যের নির্দেশ দেব তা আমার যোগ্যতা ও বিচারবুদ্ধি অনুসারে রোগীর উপকারার্থে নির্ধারিত হবে। আমার কাছে চাইলেই কোনও ব্যক্তিকে কোন মারাত্মক ও ক্ষতিকারক ওষুধের পরামর্শ দেব না। রোগীর এবং তাদের পরিবারের সকল তথ্য সাধারণের কাছে গোপন রাখব। আমার জীবন ও শাস্ত্রকে আমি বিশুদ্ধ এবং পবিত্র রাখব। এই শপথ যথাযথ পালন করে সকল লোকের প্রশংসার পাত্র হয়ে আমি যেন আমার জীবন ও শাস্ত্র সমভাবে উপভোগ করতে পারি। শপথভ্রষ্ট হলে আমার ভাগ্যে যেন বিপরীত ঘটে।

যুগে যুগে এই আদর্শ চিকিৎসককে ন্যায়-সত্য ও সেবার পথে অবিচলিত রেখেছে

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন