আলিঙ্গন – রিয়া মিত্র

বিশ্বরূপ মজুমদার

স্নান করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে গত রাতের কোঁচকানো বিছানার চাদরটা দেখে লজ্জায় লাল হয়ে গেল শাইন। রিঙ্গোটা যে কী করে না! আয়না দিয়ে নিজের গলার লাভ-বাইটগুলো দেখে আপনমনেই হেসে উঠল সে।

ভেজা চুলেই বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে বিছানার চাদরের মধ্যে লজ্জায় মুখ লুকাল সে। প্রাণ ভরে জোরে নিঃশ্বাস নিল। এখনও যেন রিঙ্গোর শরীরের গন্ধ ছড়িয়ে রয়েছে পরতে পরতে। ঘরের টিভিটা চলছে আপনমনে, সেদিকে একফোঁটাও কান নেই শাইনের। কাল সারারাত ধরে রিঙ্গো যে চরম আদর করেছে তাকে, তার রেশ এখনও কাটছে না তার মন থেকে।

বাড়ি অন্যত্র হলেও চাকরিসূত্রে এখানে থাকে শাইন। এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়ে একাই থাকে সে। রিঙ্গোর সঙ্গে ওর বহু বছরের সম্পর্ক, ফলে এর আগেও ওরা অনেকবারই গভীরভাবে মিলিত হয়েছে কিন্তু কাল রাতের মতো এত ভালোলাগা কখনও এর আগে উপলব্ধি করেনি শাইন। রিঙ্গো প্রায়ই বাইক নিয়ে তার ফ্ল্যাটে চলে আসে। কাল রিঙ্গোর আসার কথা ছিল না। ফোন না-করেই হঠাৎ আসায় বেশ সারপ্রাইজডই হয়েছিল শাইন, পাশাপাশি খুব খুশিও হয়েছিল। তাই, বোধহয় কালকের আদরগুলো একটু অন্যরকমই লেগেছে।

রিঙ্গোর কথা ভাবতে ভাবতেই কাল রাতের মতো একটা হালকা ভালোলাগার ভাব, একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব জড়িয়ে ধরছে শাইনকে। তন্দ্রার মধ্যেই রিঙ্গোর পেশীবহুল দুই হাতের তীব্র আলিঙ্গন অনুভব করছে সে। ওর সুঠাম বুকের বন্ধনে হারিয়ে যাচ্ছে শাইন। ওর শরীরটা মিশে যাচ্ছে রিঙ্গোর শরীরের সঙ্গে, তীব্রভাবে ওঠানামা করছে রিঙ্গোর শরীরটা। চরম ভালোলাগার আবেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে শাইনের শরীর জুড়ে। অস্ফুট শীৎকার ও মুহুর্মুহু শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে শাইন। অস্পষ্টভাবে কানে আসছে টিভির আওয়াজ, ‘গত সন্ধ্যায় হাইওয়ের ওপরে একটি ট্রাকের সঙ্গে বাইকের দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত ট্রাকচালক সুখময় পাল ও বাইকচালক রিঙ্গো ডিসুজা…।’ টিভির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে ঘরময় আর শাইন ডুবে যাচ্ছে গভীর ভালোলাগার মধ্যে দিয়ে ঘুমের আবেশে ক্রমশ…।

***

রিয়া মিত্র

কুচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক বাংলা নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ। বর্তমানে বেলঘরিয়ার অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। চোদ্দ বছর বয়সে “এখন একাল” নামে স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রথম গল্প ছাপার অক্ষরে বেরোয়। বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবজিন ও পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশ হয়। ‘প্রতিলিপি’, ‘গল্প কুটির’-এর মতো ভার্চুয়াল সাইটে বা ‘নন্দিনী’, ‘সারাবেলা’-র মতো পত্রিকাতে নিয়মিত লেখা ছাপা হয়। বিভিন্ন যৌথ গল্প সংকলন, কাব্য সংকলন ও অণুগল্প সংকলনে লেখা বেরিয়েছে। একক গল্প সংকলন “ফেরারি মন”।

সকল অধ্যায়

১. নোলা – স্নেহা আদক
২. তাপ্পর… – ডঃ সাম্য মণ্ডল
৩. কালচক্র – দেবলীনা বিশ্বাস
৪. রসের খোঁজে – অঙ্কন মুখোপাধ্যায়
৫. রক্তপিপাসু – মোনালিসা সাহা দে
৬. ফেরা – দেবদুলাল কুণ্ডু
৭. ঘড়ি – কেয়া চ্যাটার্জী
৮. স্বর্গাদপি – অলোকেশ ভট্টাচার্য্য
৯. আলিঙ্গন – রিয়া মিত্র
১০. খেলাঘর – প্রীতম গুহ
১১. সেই রাতে – নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
১২. ছবি – মধুমিতা মুখার্জী
১৩. মুখোশ – শঙ্কর চ্যাটার্জী
১৪. ঋণশোধ – সৌমী গুপ্ত
১৫. সহযাত্রী – উস্রি দে
১৬. রিসর্টে এক রাত – অমিতাভ সাহা
১৭. জীবন্ত কথা – মহুয়া সমাদ্দার
১৮. অন্ধকারের জীব – রিয়া ভট্টাচার্য
১৯. রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ – মঞ্জিলা চক্রবর্তী
২০. ভিত্তিহীন – মৃণাল নন্দী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন