স্বর্গাদপি – অলোকেশ ভট্টাচার্য্য

বিশ্বরূপ মজুমদার

দুই নাবালক সন্তানের জননীর ভীষণ জ্বর। ছোটটির বয়স দশ। বড়টির সতেরো। বিধবা হয়েছেন কিছুদিন পূর্বেই। বছর ঘোরেনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরে জেনেছেন বসতবাড়ির এক কোণের দুটি ঘর ছাড়া তাঁদের আর কিছু নেই, দেওর কীভাবে যেন স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে সব লিখিয়ে নিয়েছেন।

ঘরের জানলা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়েছে ঘরে। খানিকক্ষণ আগেই দুই ভাই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে অচৈতন্য মা’র পাশেই। দয়া করে পাড়ার ডাক্তারকাকু এসে পরীক্ষা করে দেখে নিদান দিয়ে গেছেন বাড়িতে রেখে কিছু করা সম্ভব নয়।

কপর্দকশূন্য দুই নাবালকের অঝোরে অশ্রু বিসর্জন করা ছাড়া আর কিছুই করণীয় ছিল না।

রাত তখন ক’টা ঠিক জানা নেই। ছোট ছেলেটির হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চাঁদের আলোয় দেখল একটা ছায়ামানুষ। মায়ের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ভঙ্গিটা যেন খুব চেনা।

ঘোর কাটতে সারা শরীর শিউরে ওঠে। ওই হাতা গোটানো বাংলা শার্ট, ওই ঢোলা পাজামা সে তো ভোলার নয়। চিৎকার করে ওঠে সে, “তুমি কেন এসেছ। চলে যাও, চলে যাও তুমি। আমার মাকে আমি তোমায় নিয়ে যেতে দেব না।” ছায়ামানুষ হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়।

ছোট’র চিৎকারে বড় ভাইও উঠে বসে। লাইট জ্বালিয়ে ক্রন্দনরত ভাইকে সান্ত্বনা দিতে থাকে।

“কিচ্ছু হবে না মনা, কিচ্ছু হবে না আমাদের মায়ের।” সে ভাবে ভাই নিশ্চয়ই মায়ের জন্য কাঁদছে।

ওদিকে মা হঠাৎ অস্ফুটে ‘উহ’ বলে ককিয়ে ওঠেন। দুই ভাই তাকিয়ে দেখে একটা কাঁকড়া বিছে মায়ের কপালের ঠিক মধ্যিখানে দংশন করেছে। মা তাই অচৈতন্য অবস্থায়ও ককিয়ে উঠেছেন।

প্রথমে বাকরুদ্ধ তার পরে ডুকরে কেঁদে ওঠে দুই ভাই।

সকাল বেলা। দুই ভাই ঘুম ভাঙলে দ্যাখে — মা ঘর মুছছেন।

কিন্তু আজও ছোট ছেলেটির মনে প্রশ্ন জাগে — ওই ছায়ামানুষটি কে ছিলেন? বাবা!

***

অলোকেশ ভট্টাচার্য্য

আশেপাশে দেখতে পাওয়া সাধারণ মানুষদের মতোই একজন সাধারণ মানুষ। যারা নিজেরাই হয়তো জানতে পারেন না নিজস্ব কোনও গুণ তাদের মধ্যে রয়েছে কি না? যদি কোনওভাবে কোনও গুণ প্রকাশ পেয়েও যায় এবং তার ফলে যদি তারা প্রশংসিত হন তবে গর্বিত হওয়ার বদলে এক লজ্জামিশ্রিত অস্বস্তিই অনুভব করেন বেশি। লেখক এই ধরনের মানুষদেরই একজন। ব্যক্তিজীবনে বহু অসফল ব্যবসার কাণ্ডারি, নামকরা কয়েকজন গায়কের গাওয়া কিছু গানের শখের গীতিকার, থিয়েটার, সিনেমা ও সিরিয়ালের অনামী অভিনেতা এবং পরিবার ও পরিচিতজনেদের কাছে ভরসাযোগ্য এক মানুষ।

সকল অধ্যায়

১. নোলা – স্নেহা আদক
২. তাপ্পর… – ডঃ সাম্য মণ্ডল
৩. কালচক্র – দেবলীনা বিশ্বাস
৪. রসের খোঁজে – অঙ্কন মুখোপাধ্যায়
৫. রক্তপিপাসু – মোনালিসা সাহা দে
৬. ফেরা – দেবদুলাল কুণ্ডু
৭. ঘড়ি – কেয়া চ্যাটার্জী
৮. স্বর্গাদপি – অলোকেশ ভট্টাচার্য্য
৯. আলিঙ্গন – রিয়া মিত্র
১০. খেলাঘর – প্রীতম গুহ
১১. সেই রাতে – নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
১২. ছবি – মধুমিতা মুখার্জী
১৩. মুখোশ – শঙ্কর চ্যাটার্জী
১৪. ঋণশোধ – সৌমী গুপ্ত
১৫. সহযাত্রী – উস্রি দে
১৬. রিসর্টে এক রাত – অমিতাভ সাহা
১৭. জীবন্ত কথা – মহুয়া সমাদ্দার
১৮. অন্ধকারের জীব – রিয়া ভট্টাচার্য
১৯. রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ – মঞ্জিলা চক্রবর্তী
২০. ভিত্তিহীন – মৃণাল নন্দী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন