বিশ্বরূপ মজুমদার
অনেকদিন ধরে একটা গল্প লিখব ভাবছিলাম। কিন্তু ভালো গল্পের আইডিয়া মাথায় আসছিল না। কিছু খুচরো আইডিয়া মাথায় আসছিল, যা দিয়ে ভালো গল্প লেখা যায় না। অনেক চেষ্টাতেও যখন লিখতে পারলাম না, তখন ভাবলাম, একটু নিরিবিলি পরিবেশে গিয়ে ভাবি। তাহলে যদি কোনও আইডিয়া মাথায় আসে। শহরের এই কাউয়া ক্যাঁচক্যাঁচির মধ্যে গল্পের আইডিয়া মাথায় আসবে না। ডুয়ার্স ঘুরে আসব ঠিক করলাম। অনলাইন-এ একটা রিসর্ট বুক করে ফেললাম। অফ সিজন ছিল, বুকিং পেতে কোনও অসুবিধা হল না। লোকেশনটা আলিপুরদুয়ারের চকোয়াখেতির কাছেই। ওখান থেকে কাছেই চিলাপাতা ফরেস্ট শুরু হয়েছে, দূরে সবুজে মোড়া পাহাড়ের হাতছানি আর চা বাগানও আছে। বেশ ভালো, নিরিবিলি পরিবেশ।
দু’দিন পরেই রিসর্টে গিয়ে হাজির হলাম। খুব সুন্দর গাছপালা ঘেরা দোতলা বিল্ডিং। সামনে বিভিন্ন ফুল, অর্কিডের বাগান, থাকার রুম দশ-বারোটা হবে। অফ সিজন বলে একটু বেশিই নিরিবিলি মনে হল। টুরিস্ট খুব বেশি ছিল না। গ্রাউন্ড ফ্লোরে দুটো ফ্যামিলি এসেছিল। আমি দোতলায় একটা রুম নিলাম। দোতলায় আর কাউকে চোখে পড়ল না। রুমে ফ্রেশ হয়ে নীচতলায় ডাইনিং রুমে দুপুরের খাবার খেয়ে গাড়ি করে চিলাপাতা জঙ্গল ঘুরতে বেরোলাম। পিচের রাস্তার দু’-ধারে জঙ্গল। অজস্র সারি সারি উঁচু উঁচু গাছ, শুধু সবুজ আর সবুজ। রোদ ঝলমলে ওয়েদার ছিল। গাড়ির জানালা দিয়ে জঙ্গলের টাটকা বাতাস এসে ব্রেন সেলগুলো চাঙ্গা করে দিল। যেতে যেতে এক জায়গায় ঝোপের মধ্যে বাইসন চোখে পড়ল, আরেক জায়গায় দেখলাম ময়ূর। জঙ্গল ঘুরে ন্যাশনাল হাইওয়েতে উঠে মেন্দাবাড়ি হয়ে পোরো বস্তি ঘুরে রিসর্টে ফিরে এলাম।
বিকেল হয়ে গিয়েছিল। চা-বিস্কুট খেয়ে রিসর্ট থেকে বেরিয়ে চকোয়াখেতি গ্রামটা একটু হেঁটে বেড়িয়ে দেখতে লাগলাম। রাস্তার দু’-ধারে বিঘের পর বিঘে ফাঁকা ধানের ক্ষেত। তখন ধান কাটা হয়ে গিয়েছিল। ধান ঝাড়াই করে খড়গুলো ক্ষেতের মধ্যেই জায়গায় জায়গায় পুঞ্জীভূত করে রাখা ছিল। ক্ষেতের সংলগ্ন গাছপালা ঘেরা কিছু কিছু জনবসতিও চোখে পড়ল। সুপারির গাছ ছিল প্রচুর। দূরে অনেকটা এলাকা জুড়ে শালের বন চোখে পড়ল। সেই নিরালা অনাড়ম্বর গ্রামের রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে ভালোই লাগল। সন্ধে নামলে রিসর্টে ফিরে এলাম। রুমে বসে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। তারপর জানলা খুলে বাইরের অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রান্তরের দিকে চেয়ে রইলাম। দিগন্তবিস্তৃত শূন্য ধানক্ষেতের দিকে চেয়ে মনটা উদাস হয়ে আসছিল। আটটা বাজতে রাতের খাবারের জন্য ডাক এল। আমি নীচতলায় গিয়ে খাবার খেয়ে রুমে ফেরার সময় রিসেপশনের ছেলেটা বলল, “বাইরে আবার হাঁটতে যাবেন নাকি?”
আমি বললাম, “না।”
ছেলেটা বলল, “আমি তাহলে গেট বন্ধ করে দিচ্ছি। রাতে কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন। আমি এখানেই আছি।”
—“আচ্ছা”
রুমে চলে এলাম। তখন রাত মোটামুটি সাড়ে আটটা। ভাবলাম, শোবার এখনও দেরি আছে। খাতা কলম নিয়ে কিছুক্ষণ বসি, যদি কোনও আইডিয়া মাথায় আসে। জানালা দিয়ে শিরশির করে ঠান্ডা হাওয়া আসছিল। তাই জানালার পাল্লাটা চাপিয়ে দিলাম। টেবিলে বসে কপালে হাত দিয়ে কতক্ষণ বসে ছিলাম খেয়াল নেই। দরজা ঠেলার শব্দ শুনে ঘুরে দেখি, দরজায় একজন ইয়ং ছেলে দাঁড়িয়ে। বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ হবে। বলল, “আসতে পারি?”
বললাম, “এসো।”
—“আপনার সঙ্গে একটু গল্প করতে এলাম।”
—“তুমি কোন রুমে উঠেছ?”
—“এই পাশের রুমেই…”
—“তোমাকে তো সারাদিনে দেখলাম না!” (বিস্ময়ের সুরে বললাম)
—“সারাদিন তো ছিলামই না, দেখবেন কী করে?”
—“ওহ, তাহলে সন্ধের দিকে এসেছ?”
—“না, এইমাত্র ঢুকলাম।”
—“এত রাতে?”
—“রাত আর এমন কী! ন’টা। সবে তো সন্ধে।”
—“তোমরা ইয়ং জেনারেশন সব রাত জাগা পাবলিক। এখানে অবশ্য রাত ন’টা অনেক রাত।”
—“তা আপনি এখানে খাতা কলম নিয়ে কি করছেন?”
—“তেমন কিছু না। একটা গল্প লিখব ভাবছিলাম।”
—“শখের লেখক বুঝি!”
—“হ্যাঁ। ঠিকই বলেছ।”
—“তা প্লট কিছু মাথায় এল?”
—“না, এখনও আসেনি”
—“আমার গল্প শুনবেন?
—“কী গল্প?”
—“আমার লাইফের গল্প। বেশ সাসপেন্স আছে। যদি চান তো শোনাতে পারি।”
—“শুনি তাহলে। গল্প শুনতে আর আপত্তির কী থাকতে পারে!”
—“একটা সিগারেট ধরাই? আপত্তি নেই তো?”
আমি সম্মতি দিতে ছেলেটা সিগারেট ধরিয়ে আমার টেবিলের কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসল। গল্প শুরু হল। গল্পটা ওর বয়ানেই লিখছি—
বছর তিনেক আগের কথা। আমি তখন দিল্লিতে থাকতাম। জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতাম। ইউনিভার্সিটির হস্টেলে থাকতাম। ওখান থেকে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল আমার সঙ্গে। সেই ঘটনাটাই বলছি। সেবার এক রাজনৈতিক ইস্যুতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের জেরে ইউনিভার্সিটির পঠন-পাঠন শিকেয় উঠল। হস্টেলে আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। বেশিরভাগ বন্ধুই ছিল নন-বেঙ্গলি। ঘনিষ্ঠদের মধ্যে একজন ছিল বিকাশ। ও উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি ব্রাহ্মণ ছিল। ওর দাদুর বাড়ি ছিল নৈনিতালে। ক্লাস যেহেতু বন্ধ ছিল, তাই বিকাশ আমাকে বলল, “চল, এই সুযোগে ক’দিন দাদুর বাড়িতে থেকে তোকে পাহাড় ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।” ও অবশ্য হিন্দিতে বলেছিল, আমি বাংলায় বলছি।
আমি এককথায় রাজি হলাম। আমরা পরদিনই বেরিয়ে পড়ব ঠিক করলাম। উত্তরাখণ্ডের মনোরম পাহাড় আর জঙ্গল ঘোরার স্বপ্ন আমার অনেকদিনের ছিল। তাই পরদিন সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিলাম। কিন্তু বিকাশের ব্যাঙ্কে একটা জরুরি কাজের কথা মনে পড়ে গেল। তাই আমাকে বলল, ‘তুই যখন তৈরি হয়ে গিয়েছিস, তখন চলে যা। আমি ব্যাঙ্কের কাজ সেরে এগারোটার মধ্যে রওনা হব। দাদুকে বলে দিচ্ছি। বাসস্ট্যান্ড থেকে তোকে গাড়ি করে নিয়ে যাবে। লাল মারুতি গাড়ি। স্ট্যান্ডে নেমে দাদুকে ফোন করে নিস।’
আমি বললাম, ‘বয়স্ক লোকটাকে কষ্ট দেবার কী দরকার?’
বিকাশ : ‘বয়স্ক! দাদু এখনও শক্তপোক্ত। দিব্যি হাঁটাহাঁটি করেন। কোনও অসুখবিসুখ নেই। আমরা পাহাড়ের লোক ভাই।’
আমি : ‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’
আমি বাসে রওনা হয়ে গেলাম। দুপুর দুটো নাগাদ নৈনিতাল বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম। নেমে এদিক-ওদিক দেখতে লাগলাম। কিছুদূরে একটা লাল মারুতি দাঁড়িয়ে ছিল। আমি আর দাদুকে ফোন করলাম না। সোজা গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ড্রাইভারের সিটে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসে ছিলেন। আমি বললাম, ‘দাদু, আমি রাজেশ। বিকাশ আমার কথা বলেছে নিশ্চয়ই। ওর আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে। চলুন আমরা ততক্ষণে বাড়ি চলে যাই। পরে এসে ওকে নিয়ে যাব।’
ভদ্রলোক সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন। দু’দিকে ঘন উঁচু উঁচু গাছপালা ছাওয়া চওড়া পাহাড়ি রাস্তা। রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়ল পাহাড়ের কোলে বিশালাকৃতি লেক আর পাহাড়ের গা ঘেঁষে চলমান সাদা মেঘের নয়নাভিরাম দৃশ্য। চোখ জুড়িয়ে যায়। তার উপর বেশ সুন্দর ঠান্ডা ওয়েদার। ঘণ্টাখানেক যাবার পর এক জায়গায় বাঁক নিয়ে একটা সরু পাথুরে রাস্তা ধরে কিছুদূর গিয়ে এক জনশূন্য জঙ্গলের মধ্যে এসে গাড়ি থামালেন ভদ্রলোক। অনতিদূরে দৃষ্টিনন্দন সবুজে মোড়া পাহাড় আর চারপাশে শুধুই গাছগাছালি। বাঁশগাছের পাতায় পাতায় মাতাল হাওয়ার তোড়ে শন্ শন্ শব্দ অবিরাম শোনা যাচ্ছিল। ফুরফুরে টাটকা বাতাস প্রাণভরে ফুসফুসে ভরে নিচ্ছিলাম আমি। এক নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ছিল চারিদিকে। মনে হচ্ছিল সময় যেন থমকে গেছে। সামনেই একটি পাকা দোতলা বাড়ি। তবে অবাক লাগল জঙ্গলের মধ্যে এমন অদ্ভুত জায়গায় বাড়ি, আশেপাশে কোনও জনবসতি নেই।
ভদ্রলোক আমাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন। বেশ বড় বাড়ি, নীচতলাতেই গোটা চারেক ঘর, কিন্তু বাড়িতে উনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। লক্ষ করলাম, ভদ্রলোক ভীষণ চুপচাপ। এত বড় বাড়ি, ফাঁকা সুনসান। উনি হয়তো একটু বেশি নির্জনতাপ্রেমী। বাড়ির একদম পেছনদিকে একটা ঘরে আমার থাকার বন্দোবস্ত করেছিলেন। আমাকে সেই ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, “স্নান-টান করে নাও। আমি তোমার খাবার ব্যবস্থা করছি।”
ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবলাম, বিকাশ কতদূর এল, একটু খবর নেওয়া দরকার। ফোন করতে গিয়ে দেখি, মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। ওই ঘরের পেছন দিকের দরজাটা খুলতেই বাড়ির বাইরে বেরনোর রাস্তা দেখতে পেলাম। বাড়ি থেকে বেরিয়েই জঙ্গল, তবে ঘন জঙ্গল নয়, ফাঁকা ফাঁকা। কিছুদূর এদিক-ওদিক ঘুরে দেখতে লাগলাম, মোবাইলের নেটওয়ার্ক আসে কিনা। কিন্তু কোনও নেটওয়ার্ক আসছিল না। ফাঁকা জঙ্গলের মধ্যে আরও খানিকটা এগিয়ে গেলাম। জঙ্গলের রাস্তা গাছের ঝরা পাতায় ঢেকে গিয়েছিল। শুকনো পাতার ওপর দিয়ে চলার সময় মচমচ শব্দ হচ্ছিল। তখন পড়ন্ত বিকেল। এক জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া গেল। বিকাশকে ফোন করে বললাম, ‘এ কেমন অদ্ভুত জায়গায় তোর দাদুর বাড়ি, ফোনের নেটওয়ার্কই নেই। শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল।’
বিকাশ বলল, ‘তুই বাড়ি পৌছে গেছিস?’
আমি : ‘হ্যাঁ। আমি তো অনেকক্ষণ আগেই এসেছি।’
বিকাশ : ‘তাই নাকি! কখন পৌঁছলি! তুই তো দাদুকে ফোন করিসনি। বাড়ির ঠিকানা জানলি কী করে?’
আমি বিস্ময়ের সঙ্গে বললাম, ‘ফোন করব কী! গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল আর তোর দাদু-ই তো আমাকে ড্রাইভ করে ওঁর বাড়িতে নিয়ে এলেন।’
বিকাশ বলল, ‘কী বলছিস! দাদু তো কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বললেন, তোর ফোন আসেনি। উনি তোর জন্য অপেক্ষা করছেন বাসস্ট্যান্ডে।’
আমি : ‘হ্যাঁ! সে কী!’
গল্পের মধ্যে ইন্টারাপ্ট করলাম। বললাম, “হ্যাঁ! উনি কি তাহলে বিকাশের দাদু নন?”
ছেলেটা : “আরে শুনুনই না গল্পটা”- বলে গল্প চালিয়ে গেল।
পুরো আকাশ থেকে পড়লাম। হঠাৎ ফোনের নেটওয়ার্ক চলে গেল। কল কেটে গেল। মাথায় কিছু ঢুকছিল না। তখনই কাঁধে কারও হাতের ঠান্ডা স্পর্শ অনুভব করলাম। আঁতকে উঠে পেছন ফিরে দেখি, সেই বয়স্ক লোকটিই, যিনি আমাকে ড্রাইভ করে নিয়ে এসেছিলেন। আমার মনে ভয় বাসা বেঁধেছিল। ভ্রূ-কুঞ্চিত করে একবার লোকটির দিকে তাকালাম। লোকটি যদি বিকাশের দাদু না হন, তাহলে কে? কেনই বা আমাকে এখানে নিয়ে এলেন? উনি কি আমার কোনও ক্ষতি করতে চান? এসব প্রশ্ন মনে জাগছিল। কিন্তু মনের ভাব বাইরে প্রকাশ করলাম না। ভাবলাম, আতঙ্কিত হয়ে পড়লে বিপদ আরও বাড়তে পারে। আর এই নির্জন জঙ্গলে কেউ আমাকে বাঁচাতে আসবে না। তাই ঠান্ডা মাথায় ভদ্রলোককে বললাম, “মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না। তাই ঘুরতে ঘুরতে এতদূর চলে এসেছি।”
ভদ্রলোক আদেশের স্বরে বললেন, “এখানে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো নিরাপদ নয়। বাড়ি চলো।”
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “আচ্ছা, চলুন।”
জঙ্গলের মধ্যে অনেকটা চলে গিয়েছিলাম। ভদ্রলোকের পিছুপিছু আসতে লাগলাম। কীভাবে এখান থেকে পালানো যায়, তাই ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে বাড়িটার কাছে চলে এলাম। ভদ্রলোক বাড়িতে ঢুকে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করে আমাকে বললেন, “খাবার তৈরি করেছি। খেয়ে নাও।”
আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। একজন অপিরিচিত লোক কেন আমাকে এ বাড়িতে নিয়ে এল, বুঝতে পারছিলাম না। বললাম, “আমি বিকাশ এলে তবেই খাব। ওর জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে। ওর এতক্ষণ চলে আসা উচিত ছিল। রাস্তায় কোনও বিপদ-আপদ হল কিনা জানা দরকার।”
ভদ্রলোক ধীর কণ্ঠে বললেন, “আচ্ছা, তুমি খেয়ে নাও। তারপর ওর খোঁজ করছি।”
আমি এবার জোর গলায় বললাম, “না, এখনই খোঁজ করা দরকার। আর দেরি নয়। আমি রাস্তায় এগিয়ে দেখছি।”
ভদ্রলোক আমার কথা শুনে বিরক্ত হলেন। তারপর কী একটা ভেবে বললেন, “আচ্ছা দাঁড়াও। উপর থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে আসছি। তারপর বেরোচ্ছি। সন্ধে নামতে চলেছে। একা একা বাইরে বেরনো এখন নিরাপদ নয়।” — বলে ভদ্রলোক উপরে চলে গেলেন।
আমি নীচে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওপরের ঘর থেকে অনেকক্ষণ ধরে কিছু খোঁজার আওয়াজ আসছিল। হঠাৎ আমার মনে হল, গাড়ির চাবি তো সদরদরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতেই বাঁ দিকে কি-হোল্ডারে ঝোলানো দেখেছিলাম।
তাকিয়ে দেখি, ঠিক তাই। তখন ভাবলাম, ‘গাড়ির চাবি তো এখানে! উনি তাহলে উপরে কী খুঁজছেন?’
খুব ভয় পেয়ে কোনও দিকে না তাকিয়ে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়তে লাগলাম। যে সরু পাথুরে রাস্তা ধরে এই বাড়িতে এসেছিলাম, সেই রাস্তা ধরেই উল্টোদিকে বড় রাস্তার দিকে দৌড়তে লাগলাম। আমার হাতে মোবাইল ফোন ছিল আর চেক করছিলাম ফোনে নেটওয়ার্ক আসে কি না। কারণ, বিকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলে আমি কঠিন বিপদে পড়ব। ফোনে নেটওয়ার্ক আসছিল না। অনেকটা দৌড়নোর পর বড় রাস্তার ধারে এসে পৌঁছলাম। মোবাইলে দেখলাম, নেটওয়ার্ক এসেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ফোন লাগালাম বিকাশকে।
বিকাশ বলল, ‘আমি কিছুক্ষণ আগেই দাদুর গাড়িতে করে বাড়ি এসে পৌঁছলাম।’
আমি বললাম, ‘প্লিজ, তুই আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার কর।’
বিকাশ বলল, ‘তুই বড় রাস্তার ধারেই থাক। আমি এখনই দাদুর সঙ্গে গিয়ে তোকে নিয়ে আসছি।’
বিকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরে একটু স্বস্তি পেলাম। ততক্ষণে সন্ধে নেমে চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আমি জানতাম, ওই বয়স্ক ভদ্রলোক আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ওখানেও চলে আসবেন। তাই গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলাম, যাতে উনি এলেও আমাকে দেখতে না পান। হলও তাই। ওই ভদ্রলোক গাড়ি নিয়ে বারকয়েক রাস্তা দিয়ে ঘোরাঘুরি করলেন। বুঝতে পারলাম, উনি আমাকেই খুঁজছেন কিন্তু অন্ধকারে আমাকে দেখতে পেলেন না।
অনেকক্ষণ বাদে বিকাশ আর ওর দাদু গাড়ি নিয়ে ওখানে এসে পৌঁছল। বিকাশকে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। গাড়িতে করে বিকাশের সঙ্গে যাবার সময় সব ঘটনা ওকে বিস্তারিতভাবে বললাম। বিকাশের দাদু বললেন, ‘এখানে কিছু দুষ্কৃতী শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে অপহরণ করে বেড়ায়। হতে পারে এটা ওদেরই কাজ।’ বিকাশ বলল, পরদিনই পুলিশে নালিশ জানাবে।
আবার গল্পের মাঝে ইন্টারাপ্ট করে বললাম, “বাহ! বেশ সাসপেন্স আছে তো!”
ছেলেটা বলল, “তারপর শুনুন।”
আমার কাছে গোটা ব্যাপারটা রহস্যময় মনে হচ্ছিল। আমাকে অপহরণ কে করবে, আমি তো এখানে আগে কখনও আসিনি, এখানে আসার কথা আগের দিনই বিকাশের সঙ্গে ঠিক হয়েছিল। ওই ভদ্রলোক জানলেনই বা কীভাবে যে আমি নৈনিতালে আসছি। আশ্চর্যজনকভাবে গাড়ির রংও মিলে গেল। ভদ্রলোক কি কোনও কালা জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক জানেন, যা দিয়ে মাইন্ড রিড করা যায়। শুরু থেকেই ওঁর হাবভাব একটু অস্বাভাবিক ঠেকেছে। উনি বেশিরভাগ সময়েই ছিলেন নিশ্চুপ। খুব কম কথা বলছিলেন, যতটা না বললেই নয়, ততটাই। ওঁর অভিসন্ধি কী ছিল, বোঝা যায়নি।
বিকাশের দাদুর বাড়ি পৌঁছে সারাদিনের অস্বাভাবিক ঘটনার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু একটা দুশ্চিন্তা আমার অবচেতন মনে ঘোরাঘুরি করছিল। তাই ভালো ঘুম হচ্ছিল না। রাতে একবার ঘুম ভাঙলে সামনের দেয়ালে আবছা আলোয় কার যেন ছায়া দেখতে পেলাম। আমি বিকাশের সঙ্গেই শুয়েছিলাম। ওকে যেই ডাকতে যাব, ছায়াটা সরে গেল। পরদিন সকালে বিকাশ ও দাদুর সঙ্গে ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট করছিলাম। হঠাৎ দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবির দিকে চোখ যেতে পুরো হাঁ হয়ে গেলাম।
বিকাশ বলল, “কী হল রে?”
আমি বললাম, “ইনিই তো সেই ভদ্রলোক, যিনি আমাকে কাল ওঁর ডেরায় নিয়ে গিয়েছিলেন।”
বিকাশ : “অসম্ভব, হতেই পারে না।”
বিকাশের দাদু পাশ থেকে বললেন, “তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে রাজেশ। উনি আমার বড়দা। অনেক বছর আগে উনি মারা গেছেন।”
আমি : “মারা গেছেন!”
বিকাশের দাদু : “হ্যাঁ। দশ-বারো বছর আগে। সংসারে ওঁর মন ছিল না। বিবাগী ধরনের মানুষ ছিলেন। বিয়ে-শাদি করেননি। যৌবন বয়সেই তন্ত্রসাধনার ভূত ওঁর মাথায় চেপেছিল। বাড়ির লোকজনেরা আপত্তি করেছিল। শোনেননি। ভবঘুরের মতো নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতেন। শেষে এক সিদ্ধ তান্ত্রিকের সন্ধান পেয়েছিলেন। তাঁর শিষ্য হয়ে ডাকিনী, হাঁকিনী, ইত্যাদি বশ করার সাধনা করতেন। ডাকিনী, হাঁকিনীরা সব মরণোত্তর দশার জীব। এঁদের বিশেষ ক্ষমতা আছে। এঁরা ভালো-মন্দ দুই ধরনেরই হয়। তন্ত্রবিদ্যা দ্বারা এঁদের বশ করে কারও মঙ্গল যেমন করা যায়, তেমনি অনিষ্টও করা যায়। কিন্তু এঁদের নিয়ে খেলা করা বিষাক্ত সাপ নিয়ে খেলা করার মতন। একটু অসাবধান হলেই এঁরা প্রাণে মেরে ফেলতে পারে। দাদার সঙ্গেও তা-ই হল। তন্ত্রসাধনায় দীক্ষিত হয়ে উনি শ্মশানে-মশানে পড়ে থাকতেন, রাতবিরেতে শবদেহ নিয়ে কী সব বিচিত্র ক্রিয়াকলাপ করতেন। শেষের দিকে অস্বাভাবিক খ্যাপাটে উন্মত্ত ধরনের হয়ে উঠেছিলেন। ওঁর কাছে যেতেই আমাদের ভয় হত। একদিন সকালে ওঁকে শ্মশানের ধারে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।”
আমি তো পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ কী করে সম্ভব! এতক্ষণ লোকটার সঙ্গে সময় কাটালাম। আর এঁরা বলছে ছবির ব্যক্তি সেই ব্যক্তি নয়! এত বড় ভুল আমার হবে না। যাই হোক, ওরা আমার কথা বিশ্বাস করল না।
বিকাশ বলল, “কালকের কথা ভুলে যা। চটপট তৈরি হয়ে নে। গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরোব।” আমি তৈরি হয়ে নিলাম। বিকাশও রেডি হল। বেরোতে যাব, বিকাশ বলল, “গাড়ির একটা ডকুমেন্ট খুঁজে পাচ্ছি না। রাস্তায় অনেক সময় চেকিং হয়। তুই গাড়িতে গিয়ে বোস। আমি একবার আলমারিতে খুঁজে দেখে আসছি।”
আমি গাড়িতে গিয়ে পেছনের সিটে বসলাম। বিকাশ একটু পরেই এসে গাড়ি স্টার্ট দিল। আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমি বিকাশকে পেছন থেকে বললাম, “আমার শার্ট-প্যান্ট আরও অন্যান্য জিনিসপত্র যে ব্যাগে রাখা ছিল, সেটা তো ওই ভদ্রলোকের বাড়িতেই রয়ে গেছে। আমাকে কিছু শপিং করতে হবে রে।”
বিকাশ : “শপিং করতে হবে কেন? ওনার বাড়ি থেকেই উদ্ধার করব। তুই ঘাবড়াচ্ছিস কেন।”
বিকাশের কথাবার্তা একটু বেশি ডেসপারেট মনে হল। ও গাড়ি নিয়ে ওই রাস্তা বরাবর চলতে লাগল, যে রাস্তা দিয়ে আমরা গতকাল এসেছিলাম। গত রাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি, তাই আমার একটু ঝিমুনি এসেছিল। চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। বড় রাস্তা থেকে মোড় নিয়ে গাড়ি যখন সেই সরু পাথুরে রাস্তায় ঢুকল, তখন একটু ঝাঁকুনি দিল আর আমার ঝিমুনি কেটে গেল। আমার ভীষণ ভয় ভয় লাগছিল। বিকাশ এত সাহসী হয়ে উঠল কী করে; যেচে ওই ভদ্রলোকের গাড্ডায় গিয়ে পড়া কি ঠিক হবে; ওঁর কি মতলব সেটাই তো পরিষ্কার নয়, ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে গতকাল যেখানে ওই ভদ্রলোক এসে গাড়ি থামিয়েছিলেন, ঠিক সেখানেই এসে গাড়ি দাঁড়াল।
আশ্চর্য হয়ে গেলাম বাড়িটার দিকে তাকিয়ে। গতকাল যে বড় বাড়িটাতে এসে উঠেছিলাম, আজ সেটা ভগ্নদশাপ্রাপ্ত হয়ে একটা ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। ঘরের দরজা, জানালা ভাঙা, ইঁট, পাথর, প্লাস্টার ইত্যাদি জায়গায় জায়গায় স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে; মনে হচ্ছিল বহু বছর আগের পরিত্যক্ত বাড়ি। আমার মাথায় কিছুই আসছিল না। আশপাশের সবকিছু একইরকম ছিল, শুধু বাড়িটাই একটা ধ্বংসস্তূপ।
কেমন যেন একটা আতঙ্ক গ্রাস করল। মনে হচ্ছিল, কোন অপ্রাকৃতিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছি আমি। চারিদিক নিস্তব্ধ। হঠাৎ আমার মোবাইল বেজে উঠল। এতেও আশ্চর্য হলাম। কারণ, গতকাল এখানে কোন নেটওয়ার্ক ছিল না। নেটওয়ার্কের জন্য কত ঘুরতে হয়েছে। যাই হোক, ফোন তুলে দেখি, বিকাশের দাদুর ফোন।
ফোন রিসিভ করতেই দাদু বললেন, ‘কোথায় গেলে তুমি? আমরা তো তোমার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছি!’
আমার গলা কেঁপে উঠল। বললাম, ‘আপনারা অপেক্ষা করছেন মানে? আমি তো বিকাশের সঙ্গে গাড়িতে চলে এলাম।’
দাদু : ‘কোথায় চলে গেলে? বিকাশ তো গাড়িতেই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।’
ফোনে দাদুর পাশ থেকে বিকাশের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। আশ্চর্যজনকভাবে ফোনটা তখনই ডিসকানেক্ট হয়ে গেল। ভয়ে আমার হৃৎস্পন্দন আচমকা বেড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম, তাতে আর প্রকৃতিস্থ থাকতে পারলাম না। ড্রাইভারের সিটে বসে ছিলেন সেই ভদ্রলোক, যার কবল থেকে গতকাল অনেক কষ্টে রেহাই পেয়েছিলাম। ভদ্রলোক বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন, আমি পেছন থেকে ওঁর দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আকস্মিক খলখল অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। আমার আর জ্ঞান রইল না।
এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছেলেটার গল্প শুনছিলাম। উত্তেজিত হয়ে বলেই ফেললাম, “কী ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে তোমার সঙ্গে!”
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখি, ওর মুখটা বড্ড বিষণ্ণ, ফ্যাকাশে লাগছে। রক্তশূণ্য হলে যেরকম হয়, অনেকটা সেরকম।
প্রবল উৎসাহ নিয়ে বললাম, “এরপর কী হল?”
সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘর পরিপূর্ণ হয়েছিল।
ছেলেটা মৃদুস্বরে বলল, “জানালার পাল্লাটা খুলে দিন তো। ধোঁয়ায় ঘরটা ভীষণ গুমোট লাগছে।” আমি উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিলাম। ঘরে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গল্প শুনতে শুনতে আমার সেদিকে কোনও খেয়ালই ছিল না। জানলা খুলে দিতে সিগারেটের কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়া বাইরে বেরিয়ে গেল। বাইরের দমকা ঠান্ডা বাতাস এসে প্রাণ জুড়িয়ে দিল।
জানালা খুলে দিয়ে পেছন ফিরে দেখি, ছেলেটা নেই। আরে, এই তো ছিল ছেলেটা। কোথায় গেল! গল্পের শেষটা তো জানা হল না।
বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছিল গল্পটা শুনতে। ভাবলাম, নিশ্চয়ই ওর ঘরে গেছে। রুম থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে দেখি, তালা ঝোলানো। বেশ অবাক হলাম। এরই মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেল ছেলেটা! গ্রাউন্ড ফ্লোরে অ্যাকোয়াগার্ড ছিল। তাই ভাবলাম খাবার জল আনতে গেল কিনা, ওখানেও দেখতে পেলাম না। রিসেপশনের ছেলেটা মেঝেতে তোশক পেতে ঘুমোচ্ছিল। ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, আমার পাশের ঘরে যে ছেলেটা উঠেছে, ও কোথায় গেল?”
ও চোখ কচলাতে কচলাতে বলল — “আপনার পাশের ঘরে! ওখানে তো কেউ ওঠেনি!”
—“সে কী কথা! এতক্ষণ ধরে আমার সঙ্গে যে গল্প করে গেল!”
—“দোতলায় আপনার পাশের ঘরে কেন, কোনও ঘরেই গত তিন-চার দিনের মধ্যে কেউ আসেনি। আপনি চাইলে রেজিস্টার খুলে দেখাতে পারি।”
***
অমিতাভ সাহা
কোচবিহার শহরের বাসিন্দা। শখের বশে লেখালিখি করেন। ছোটবেলায় লেখালিখির শুরু। তবে মাধ্যমিকের সময় থেকে পড়াশোনার চাপে ও কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ দশ-বারো বছর লেখালিখির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। এখন চাকরি জীবনে এসে লেখালিখির প্রতি আবার একটা টান অনুভব করছেন। মূলত ছোটগল্প লিখতেই পছন্দ করেন। “উত্তরবঙ্গ সংবাদ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি অণুগল্প। তাছাড়া ছোটদের ওয়েব ম্যাগাজিন ‘জয়ঢাক’ ও ‘একপর্ণিকা’-য় লেখকের লেখা কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হয়েছে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন