রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ – মঞ্জিলা চক্রবর্তী

বিশ্বরূপ মজুমদার

“ইঁ… ইঁ… ইঁ…”, আরে কী হল, হঠাৎ ওরকম করছ কেন? কী হল… কী কষ্ট হচ্ছে তোমার… বলো?”

মলিনা স্বামীকে ফেলে দরজা খুলে হাঁক দিল, “মা… বাবা… তাড়াতাড়ি আসুন, আপনাদের ছেলে কেমন যেন করছে…!”

মাঝরাতে নতুন বউয়ের ডাকাডাকিতে শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পরিবারের সকলেই প্রায় হাজির হল তার ঘরে। কিন্তু ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই। আজই ছিল মলিনার ফুলশয্যার রাত্রি। হঠাৎ অভিজিৎ মানে মলিনার স্বামীর হিক্কা উঠতে শুরু করে, তারপর সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আতঙ্কে চোখ বড় বড় করে কিছু বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ ছাড়া কিছু বের হয় না। এরপর পরিবারের ছোট ছেলেটি মুহূর্তে শেষ! কান্নার রোল উঠল বাড়িময়। মলিনা হতবিহ্বল হয়ে স্বামীর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে রইল, দু’নয়ন অশ্রুসিক্ত। তার যেন এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না এমন একটা ঘটনা ঘটেছে বা ঘটতে পারে! কী এমন ঘটল যে সুস্থ, সবল মানুষটা ফুলশয্যার ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় যন্ত্র স্তব্ধ হয়ে গেল!

ফলস্বরূপ সেই রাতের পর শ্বশুর বাড়ি থেকে নানান অপবাদ, অপমান সঙ্গে নিয়ে মলিনা বাপের বাড়ি ফিরে আসল। সকলের আদরের হাসিখুশি প্রাণচঞ্চল মলি একেবারে চুপচাপ নিষ্প্রভ হয়ে গেল। যে মেয়েটার জীবনের ডিকশনারিতে সিরিয়াসনেস বলে কোনও শব্দই ছিল না জীবন মানে মজা আর আনন্দ… সেই মেয়েটিই এখন গুরুগম্ভীর প্রস্তর মূর্তি!

ছাত্রছাত্রীদের প্রিয়, স্টাফের সবচেয়ে ছোট, সকলের পছন্দের ছোটদি যখন পুনরায় কর্মক্ষেত্রে যোগদান করল কেউ যেন এই মলিন মলিনাদিকে আগের সঙ্গে মেলাতে পারল না। অদৃষ্টের পরিহাস, অনেক কিছুই তো মেলে না, তাও আমাদের মেনে নিতে হয়, মেনে চলতেও হয়…।

* * * * *

ইতিমধ্যে মলিনাদির এই স্কুলে কেটে গেছে আরও কয়েক বছর। তিনি কিন্তু একইরকম আছেন। চেষ্টা করেও কেউই তাকে বদল করতে পারেনি।

౼ “মলিনা… ও মলিনা, আরে তাড়াতাড়ি দেখবি আয়। আমাদের ইংরাজীর নতুন স্যার এসেছেন।”

শ্যামলীদির কথাতে কোনও ভ্রূক্ষেপ না করে মলিনাদি চক-ডাস্টার রেখে, ধীরে সুস্থে হাত ধুয়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে নির্বিকার চিত্তে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। এমন সময় হেডস্যার নিজেই নতুন স্যারকে সঙ্গে নিয়ে চলে এলেন স্টাফ রুমে, “এই যে আমাদের ইংরাজীর নতুন শিক্ষক শ্রীমন্ত বসু। উনি এস. এস. সি-র রেকমেন্ডেশন পেয়ে দেখা করতে এসেছেন। এখন শুধু জয়েনিং লেটার পাওয়ার অপেক্ষায়।”

জয়েনিং লেটার হাতে পেতে পেতে আরও হপ্তাখানেক কেটে গেল তার। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সে নতুন স্কুলে যোগদান করল। কলকাতা শহরের এক প্রান্ত থেকে দক্ষিণবঙ্গের আরেক প্রান্তে তার স্কুল। প্রতিদিন সাত সকালে উঠে তৈরি হয়ে খাবারপাতি সঙ্গে নিয়ে বাসে চেপে বসে। সময়মতো স্কুলে পৌঁছে আগে খাওয়া দাওয়া সেরে নেয়। তারপর সারাদিন স্কুল করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধে অতিক্রান্ত। কিন্তু কী এক অদ্ভুত কারণে শ্রীমন্তের সেই অর্থে ক্লান্তি আসে না। এত দূর জার্নি করেও সে বেশ রয়েছে। সহকর্মীরা কেউ কেউ তাকে উপযাচক হয়ে পরামর্শ দিয়েছেন স্কুলের কাছাকাছি ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে যাওয়ার জন্য। বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছেন। দিনের শেষে না ফিরলেই নয়। সেদিন টিফিনের সময় যেমন কি এক কথা প্রসঙ্গে ভাস্কর স্যার বললেন, “আরে আপনি এতদূর রেগুলার যাতায়াত না করে ছেলেদের হস্টেলে থেকে যেতে পারেন তো। তারপর না হয় সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরলেন।” বলেই রহস্যময়ভাবে হেসে মলিনাদির দিকে আড় চোখে তাকালেন। মলিনাদি নির্লিপ্তভাবে সামনে খোলা খবরের কাগজটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েক জোড়া চোখও যে তাঁর উপর গিয়ে পড়েছিল সেটাও শ্রীমন্তের চোখ এড়াল না।

নয় নয় করে টিচিং নন-টিচিং মিলিয়ে প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন স্টাফ তার স্কুলে। কিন্তু সেই প্রথম দিন থেকে দেখছে সে এই মলিনাদি কেমন যেন রহস্যময়ী, কোনও প্রয়োজন অতিরিক্ত কথা বলেন না। আসেন, ক্লাস নেন, চলে যান। নিজের কাজের বাইরে কথা বলা যেন বারণ। অথচ অল্প বয়স, তার থেকে ছোট বা খুব বেশি হলে সমবয়সী হবে। দেখতে শুনতেও মন্দ নয়। গায়ের রং চাপা শ্যাম বর্ণ, মাথা ভর্তি কোঁচকানো কালো কেশ। টিকালো নাক, ছোট কপাল, একেবারে যেন শ্যামা মায়ের মুখখানি কেটে বসানো। আর সেই মুখখানাতে যেন চির বিষাদের এক কালো প্রলেপ ল্যাপা। কানাঘুষো যতদুর শুনেছে শ্রীমন্ত, মলিনাদি বিধবা। কিন্তু এত কম বয়সে কীভাবে এমন অঘটন ঘটল সেসব বিষয়ে সে কিছু শোনেনি। কিছু একটা রহস্য তো রয়েছে তাকে ঘিরে!

এই স্কুলে আসার পর থেকে একটা বিষয় খেয়াল করেছে শ্রীমন্ত, কেউ যেন তাকে অলক্ষ্যে নজর রাখছে, ‘কে সে?’ সেই প্রথম দিন এসেই তার একটা উদ্ভূত অনুভূতি হয়েছিল! একলা যখন মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল তার ঘাড়ের কাছ দিয়ে হঠাৎ গরম নিঃশ্বাস বয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পেছন ফিরে তাকিয়ে কাউকেই সে দেখতে পায়নি। তখনই সে চুপ মেরে হস্টেল বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসব কথা সে কাউকে বলতেও পারেনি।

* * * * *

ইতিমধ্যে এই স্কুলে নতুন স্যারের মাস ছয়েক কেটেও গেছে। পনেরোই আগস্ট স্কুলের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হবে। সকাল সকাল উপস্থিত হতে হবে সকলকে। সেই কারণে আগেরদিন স্কুল করে শ্রীমন্ত বাড়ি না ফিরে হস্টেলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

হস্টেল বিল্ডিংয়ের একতলার চারটি রুমে ছেলেরা থাকে। পাশে একটা ছোট রুমে হস্টেল সুপার অশোকবাবু থাকেন। সুতরাং শ্রীমন্তকে হয় ছেলেদের সঙ্গে নয় আশোকবাবুর সঙ্গে থাকতে হয়। কিন্তু সে দোতলার উপরে সিঁড়ি ঘরের পাশে যে ঘরটি পড়ে রয়েছে সেখানে থাকত চাইল। অশোকবাবু শশব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, “ও ঘর দীর্ঘদিন বন্ধ, ওখানে থাকবেন না। তাছাড়া ওখানে আলোর ব্যবস্থাও নেই।”

౼ “ও আমার কোনও অসুবিধা হবে না, একটা মোমবাতি দিলেই চলবে।”

শ্রীমন্ত জোর করাতে অশোকবাবু আর কিছু বললেন না। বরং ছেলেদের দিয়ে ঘরটা সাফসুতরা করিয়ে দিলেন।

শ্রীমন্ত স্কুল ছুটির পর ওঘরে গিয়ে হাজির হল। জানালার পাশে একখানা চৌকি পাতা। চৌকিতে বসে মাঠের দিকে তাকাল। দু’চোখ জুড়িয়ে গেল। চোখ ফেরাল সে ঘরটার মধ্যে, “দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ ঘরে আগে লোক বসত করত। অথচ এমন সুন্দর একটা ঘরে এখন কেউ থাকে না কেন কে জানে!”

ঘরটাতে ঢোকার পর থেকে গা-টা কীরকম ভারী লাগছিল, একটা অস্বস্তির অনুভূতি হচ্ছিল তার। সে সব বিশেষ পাত্তা না দিয়ে সে নিজের সঙ্গে আনা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সেদিন রাতে থাকার মতো ঘরটা জোগাড় করে নিল।

সন্ধেটা সে নীচে ছাত্রদের সঙ্গে কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে আটটা নাগাদ ছাদের ঘরে ফিরে গেল। সামনে অফুরন্ত রাত্রি, চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঝুম অন্ধকার, শ্রীমন্ত দাঁড়িয়ে থাকল জানালার গরাদ ধরে। সবুজ মাঠের উপর দিয়ে চাঁদের আলো ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে থাকল আত্মমগ্ন হয়ে। কতক্ষণ যে এভাবে কেটে গেছে খেয়াল নেই তার। হঠাৎ সম্বিৎ ফিরল, “শ্রীমন্ত… শ্রীমন্ত…” ডাক শুনে। তৎক্ষনাৎ চারদিকে তাকাল সে কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। মোমবাতির আলোটাও নিভে গেছে কখন। এবার তার বুকটা সত্যি কেঁপে ওঠল। ভাবল নীচে চলে যাবে নাকি। সিঁড়ির কাছে গিয়ে দেখে নীচের বাতি নিভে গেছে, ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অগত্যা ঘরে ফিরে এসে দেরি না করে শুয়ে পড়ল সে। সারাদিনের ক্লান্তিতে তার দু’চোখে ঘুম নেমে এল।

౼ “কিন্তু এ কী! দুলছে… দুলছে… খাটটা দুলছে… শ্রীমন্ত পড়ে যাচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে…। ওই তো আবার শোনা যাচ্ছে কেউ ডাকছে তাকে, “শ্রীমন্ত…, শ্রীমন্ত…!”

হঠাৎ কে একজন শ্রীমন্তের হাত ধরে নিল। আগে কখনও তাকে দেখেনি সে।

“কে এই লোকটা? কোথা থেকেই বা এল? আমায় বা বাঁচাল কেন? আরে মুহূর্তে লোকটা আবার কোথায় উধাও হয়ে গেল, এই তো এখানেই ছিল।

“ওই তো, এই ঘরেই রয়েছে। চারপাশে ঘুরছে…ঘুরছে, মাঝখানে চক্ষু নিমীলিত করে বসে আছেন কেউ! আরে এ তো আমাদের মলিনাদি! তার সামনে যজ্ঞের আগুন জ্বলছে। সেই আগুনের তাপে মুখটা উত্তপ্ত রক্তাভ। আগুনের উল্টোদিকে জটাধারী তান্ত্রিক। তার মুঠোয় কী যেন রয়েছে। সেটা অগ্নিকুণ্ডের উপরে ধরে তান্ত্রিক মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন। লোকটির সাত পাক সম্পূর্ণ হলে তান্ত্রিক চোখ খুললেন। হস্ত প্রসারিত করতে দেখা গেল তার মধ্যে রয়েছে রুদ্রাক্ষ। তাজা রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ! তিনি লোকটিকে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলেন পাশের সিঁদুর কৌটো দেখিয়ে। লোকটি দেরি না করে সেখান থেকে রুদ্রাক্ষ ছুঁইয়ে মলিনাদির সিঁথিতে পরিয়ে দিলেন। মলিনাদি অনেকক্ষণ মন্ত্রাবিষ্ট হয়ে বসেছিলেন। সিঁথিতে সিঁদুর পরানোর সঙ্গে সঙ্গে অচৈতন্য হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন। তান্ত্রিক সোল্লাসে হেসে উঠলেন হো হো করে। লোকটিও হাতের মুঠোতে থাকা রুদ্রাক্ষের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন। তার কার্যসিদ্ধি হয়েছে।

শ্রীমন্ত চিৎকার করে উঠল, “মলিনাদি… মলিনা… উঠুন।”

সে বিছানার উপর বসে দরদর করে ঘামছে, বুকের ভেতর দুম দুম করে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্ধকার ঘরে কেউ নেই, সে একা।

* * * * *

পরদিন সকাল সাতটায় শ্রীমন্ত তৈরী হয়ে স্টাফ রুমে হাজির হল। সকলের কৌতূহলী দৃষ্টি তার দিকে। তাকে বড় ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে। অভিজিৎ স্যার হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ভাই কেমন কাটল তোমার কালরাত্রি?”

হেঁয়ালির উত্তর দিল সে, “বেশ… দিব্যি।”

এই প্রথম মলিনাদি তার দিকে মুখ তুলে তাকাল। সেও তার চোখে চোখ রাখল। স্পষ্টত সে দৃষ্টি ছিল যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ!

পনেরোই আগস্টের অনুষ্ঠান শেষে সবাই বেরিয়ে পড়ল। শ্রীমন্ত একটু এগিয়ে গিয়ে মলিনাদিকে ধরল, “আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে।”

౼ “আমার যে কোনও কথা নেই।”

౼ “আমি আপনাকে বাঁচাতে চাইছি।”

౼ “আমাকে বাঁচাতে গেলে যে আপনি শেষ হবেন!”

সেদিন আর কোনও কথা হল না। শ্রীমন্ত কেমন ঘোরের মধ্যে বাড়ি ফিরল। ফিরে সে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ল। অকারণে ধূম জ্বর, মাথা থেকে জ্বর নামানো যায় না। বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ল সে, ‘রুদ্রাক্ষ… রক্তে রাঙা… মলিনা।’ এই ধরনের অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকল।

অনেক ডাক্তার বদ্যি করেও তাকে যখন সারানো সম্ভব হল না তখন তার মা তারাপীঠের মায়ের মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের শরণাপন্ন হলেন। তিনিই সন্ধান দিলেন তারাপীঠের এক স্বনামধন্য তান্ত্রিক সদানন্দ স্বামীর। ছেলের সুস্থতার জন্য তিনি হাজির হলেন স্বামীজীর কাছে। স্বামীজী যা বললেন তা চমকে উঠার মতো, “তোর ছেলের উপর এক অতৃপ্ত আত্মার নজর পড়েছে। সে ওকে বাঁচতে দেবে না। কারণ তোর ছেলে যে মেয়েমানুষকে বাঁচাতে চায় সে বন্দি হয়ে আছে ওই অতৃপ্ত আত্মার বন্ধনে। আর এই সব কিছুর মূলে রয়েছে একটি প্রচণ্ড শক্তিশালী রুদ্রাক্ষ, সে রক্ত চায়। এ এক মন্দ পিশাচ সিদ্ধ তান্ত্রিকের কাজ।”

শ্রীমন্তের মা স্বামীজীর পায়ে পড়লেন, “আমার ছেলেকে বাঁচান, যেমন করেই হোক!”

– “তোর ছেলেকে ওই মেয়েমানুষের থেকে দূরে থাকতে বল। যে যাবে ওই মেয়ের সংস্পর্শে তাকেই ও শেষ করে দেবে। নাহলে ওকে রক্ষা করা মুশকিল। এই নে তারা মায়ের মন্ত্রপূত রক্ষাকবচ। এটা যতক্ষণ ওর সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ ওর প্রাণনাশ করতে পারবে না।”

౼ “বাবা, কোনওভাবেই কী ওর থেকে পুরোপুরি নিস্তার সম্ভব নয়?”

౼ “যতক্ষণ না ওই রুদ্রাক্ষ নষ্ট হচ্ছে ততক্ষণ ওর থেকে মুক্তি নেই!”

౼ “রুদ্রাক্ষ কোথায় আছে বাবা? তাকে কীভাবে নষ্ট করা যাবে?”

౼ “ওই অতৃপ্ত আত্মা যেখানে ঘোরাঘুরি করছে সেখানেই ধারেকাছে কোথাও রয়েছে। আর ওই রুদ্রাক্ষকে নষ্ট করা খুব সহজ কাজ নয় রে। ওর প্রভাবে ওই অতৃপ্ত আত্মা রুদ্র মূর্তি ধারণ করতে পারে। তখন প্রাণ সংশয় হলে আমায় দোষ দিস না, সাবধান করে দিলুম।”

౼ “ওটা যে আমার ছেলের কর্মক্ষেত্র, ওকে যে নিত্যদিন যেতেই হবে ওখানে। তাছাড়া আমার ছেলেটা যেমন ঠান্ডা তেমন জেদি। বাবা কিছু একটা উপায় বলুন ওর থেকে মুক্তি পাওয়ার।”

౼ “ওই রুদ্রাক্ষকে উদ্ধার করে রাত্রির অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে জলে বিসর্জন দিতে পারলে তবেই ওই অতৃপ্ত আত্মার হাত থেকে পরিত্রাণ পাবে!”

* * * * *

প্রায় মাসখানেক পরে শ্রীমন্ত স্কুলে যোগদান করল। তার অসুস্থতার খবর স্কুলে সবাই জানত। তবুও তাকে দেখে তাঁরা অবাক না হয়ে পারল না। মলিনাদি পর্যন্ত খানিক তাকিয়ে রইল তার দিকে। চোখের তলায় কালি, ওজন কমে গিয়ে রোগে ভোগা জীর্ণ শীর্ণ চেহারা, চোখেমুখে অসুস্থতার স্পষ্ট ছাপ। তাকে দেখে মায়া হল মলিনার।

সেদিন স্কুল ছুটির পর মলিনাদি ইচ্ছে করে দেরি করল বের হতে, যাতে শ্রীমন্তের সঙ্গে কথা বলতে পারে। শ্রীমন্তও সেটা বুঝতে পেরে বের হতে গড়িমসি করল। স্টাফ রুম ফাঁকা হলে মলিনা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থভাবে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছেন আপনি?”

౼ “তা জেনে আপনার লাভ কী?”

౼ “সেই জন্যই তো সেদিন আপনাকে বললাম, আমার থেকে দূরে থাকুন।”

౼ “সত্যিটা আমায় বলবেন?” বলেই শ্রীমন্ত মলিনার হাতটা চেপে ধরল।

বিদ্যুতের ঝটকার মতো মলিনা তৎক্ষনাৎ ওর হাতটা সরিয়ে নিল, “আমায় স্পর্শ করবেন না, আপনাকে যে শেষ করে দেবে।” বলেই কেঁদে ফেলল।

౼ “আমায় শেষ করা যে অত সহজ নয়, তাহলে সেদিন রাতেই শেষ করতে পারত!”

মলিনা একটু আস্বস্ত হয়ে বলতে শুরু করল, “আমি যখন এই স্কুলে জয়েন করি তখন হস্টেল সুপার ছিলেন রথীনবাবু। আমার থেকে বছর দশেকের বড়। আমায় পছন্দ করতেন। জোর করে ডেকে ডেকে কথা বলতেন, কখনও গল্প করতেন। কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেয়। উনি আমার উপর অধিকার ফলানোর চেষ্টা করতে থাকেন। আমি অন্য স্যারেদের সঙ্গে গল্প করলে রেগে যেতেন। আমি বিষয়টাকে পাত্তা দিতাম না, বরং মজা পেতাম। গ্রীষ্মের ছুটি পড়বে যেদিন উনি বললেন যাওয়ার আগে ওঁর রুমে একবার যেন দেখা করে যায় কি একটা পুজো আছে। আমি গেলে ওঁর খুব ভালো লাগবে। সেদিন শ্যামলীদি আসেননি, সুতরাং ছুটির পর আমি একাই গেলাম ওঁর ঘরে। গিয়ে দেখি একজন সাধুবাবা যজ্ঞ করছেন। আমায় তার সামনে বসতে বললেন আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। বসলাম আমি। বসার পর বুঝলাম আমি যেন মন্ত্র দ্বারা সংবেশিত হয়ে পড়ছি। কী ঘটছে, কেন ঘটছে কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না। একসময় অচেতন হয়ে পড়ি। যখন জ্ঞান ফেরে তখন প্রায় সন্ধে। সেদিন বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। ফিরে দেখি কপালময় সিঁদুর। তৎক্ষনাৎ ধুয়ে ফেলি।

“যাই হোক, ছুটির পর স্কুল খুলে গেলেও আমি ওঁর থেকে দূরে দূরে থাকতাম। কিন্তু থাকলে কী হবে আমি ভালোই বুঝতে পারতাম আমার উপর কেউ নজর রাখছে। তারপর হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে। এসব কারণের জন্য আমিও আপত্তি জানাইনি। তারপর বিয়েটা নানান বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে সম্পন্ন হলেও ফুলশয্যার রাতে ঘটল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অঘটন। এবং এই ঘটনার পিছনেও যে রথীনবাবুরই হাত ছিল…!

“তারপর সব যখন শেষ হয়ে গেল স্কুলে যোগদান করে শুনলাম সেই রাতে রথীনবাবুরও মৃত্যু হয়েছিল। কী ঘটেছিল কেউ জানে না। সকালে ওই ঘর থেকে ওঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। ওর হাতময় রক্ত আর সিঁদুর লেগেছিল। যাইহোক, সকলে আজও মনে করে দু’জনের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। কিন্তু বিশ্বাস করুন…!”

শেষ কথাগুলো আর মলিনা বলে উঠতে পারল না। এসব শুনে শ্রীমন্ত প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করল, “আপনার রুদ্রাক্ষের কথা মনে আছে?”

౼ “শক্ত কিছু একটা দিয়ে আমার কপালে সিঁদুর পরিয়েছিল, সেটা কি আমি দেখিনি, সেটাই কি তাহলে?”

౼ “হুম, সেটাই উদ্ধার করতে হবে। নাহলে আমার আপনার কারোর মুক্তি নেই! আর দু’সপ্তাহ পর স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ে যাবে। ছুটি পড়ার আগের রাতে আমি ওই ঘরে থাকব, যা করার করতে হবে।”

মলিনা চিৎকার করে কেঁদে ওঠল, “না, ওই রুমে আপনি কোনও মতেই থাকবেন না।”

౼ “ওই ঘরে যে যেতেই হবে, ওখানেই রয়েছে সেই রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ। যার মধ্যে আপনি বন্দিনী।”

౼ “তাহলে আমিও আপনার সঙ্গে যাব।”

শুনে শ্রীমন্ত মৃদুস্বরে বলল, “আচ্ছা, তাহলে এই ক’দিন আমরা একে ওপরের সংস্পর্শে আসব না এবং অত্যন্ত সাবধানে থাকব।”

অত্যন্ত কুণ্ঠা ভরে মলিনা বলল, “এইসব নিয়ে আবার হইচই লোক জানাজানি হবে না তো?”

শ্রীমন্ত হেসে উত্তর দিল, “সে তো নির্ভর করছে আপনার উপর। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে এবার কিন্তু লোক জানাজানি হতে পারে…।”

আর দেরি না করে তারা পৃথক পৃথক বেরিয়ে পড়ল।

* * * * *

পঞ্চমীর দিন মর্নিং স্কুল হয়ে পুজোর ছুটি পড়ে যাবে। আজ চতুর্থী। হস্টেলের ছেলেদের এক দিন আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দূর দূরান্তে নিজেদের বাড়ি পৌঁছতে পারে। সুপারও ভিন জেলার মানুষ হওয়ায় ছেলেদের সঙ্গে বিদায় নিয়েছেন। উপরের ঘরের চাবিটা রেখে গেছেন শ্রীমন্তর জন্য। আজ রাতে সে হস্টেলের সেই ঘরেই থাকার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।

যথারীতি ছুটির পর সে হাজির হল সেই ঘরে। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল তার।

এদিকে হস্টেল পুরোপুরি ফাঁকা। সন্ধে নেমে এসেছে। চারিদিকে কী ভীষণ নিস্তব্ধতা, নির্জনতা। এমন থম মারা পরিবেশ সে আগে কখনও দেখেনি। গাছের পাতাটা পর্যন্ত নড়ছে না যেন! এ কীসের পূর্বাভাস! হঠাৎ দরজা দড়াম করে খুলে গেল। সে ফিরে তাকাল সেদিকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে দেখল মলিনাদি দরজায় দাঁড়িয়ে।

“ও আপনি ওমনভাবে দরজা খুললেন, আমি তো ভাবলাম…”

“দরজা তো খোলাই ছিল। আমি ভাবলাম আপনি খুলে রেখেছেন।”

দু’জনেই দু’জনের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি করে সেই অদৃশ্য ছায়ার দিকে তাকাল। ঠিক সেই সময় দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। শ্রীমন্ত দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। বাতাসে শোনা গেল নিষ্ঠুর হিসহিসে হাসি, “হা হা হা…”

মলিনার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। শ্রীমন্ত তাকে সাহস যোগাল, “ভয় পাবেন না, আমরা ভয় পেলেই ওর জয়। দরজা বন্ধ থাক আমাদের প্রথম কাজ এখন এই ঘরেই। আপনি এই ঘরের নাড়ি নক্ষত্র সব জানেন। হাত লাগান… রুদ্রাক্ষটা খুঁজে বের করতেই হবে।”

ঘরের চারকোণায় চারটে বড় মোমবাতি জ্বেলে দিল সে। নিজেদের জিনিসপত্রগুলো ঢাই করে টেবিলের উপর রাখল। খুঁজতে শুরু করল তন্নতন্ন করে। একমুহূর্তে দমকা বাতাসে মোমবাতির শিখা দপ করে নিভে গেল। অন্ধকারে ডুবে গেল ঘর। সঙ্গে সঙ্গে শ্রীমন্ত পকেট থেকে টর্চটা বের করল। টর্চের আলোতে খুঁজতে থাকল। হঠাৎ চৌকিটা খাড়া হয়ে দড়াম করে পড়ল শ্রীমন্তের পিঠের উপর। সে মুখ তুবড়ে পড়ল সামনের দেওয়ালে, টর্চটা ছিটকে পড়ল মাটিতে। মলিনা তাকে তুলতে উদ্যত হলে অদৃশ্য ভয়ংকর শক্তি তাকে দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে ধরল। তারপর টেবিল চেয়ারগুলো দিয়ে তার উপর আঘাত করতে থাকল। মলিনার চিৎকারে তার জ্ঞান ফিরল। কোনওক্রমে উঠে সে টর্চটা একহাতে ও অন্যহাতে বুকে ঝোলান কবচটা চেপে ধরে দেওয়াল বরাবর দেখতে থাকল। হঠাৎ নজরে এল দেওয়ালে একটা জায়গায় সামান্য চটানো। সে সেদিকে এগিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড ঝড়ের বেগে টেবিল চেয়ারগুলো উড়ে এল তার দিকে, তাকে আঘাতের পর আঘাত হানল। রক্তাক্ত হল তার শরীর। দমল না, সেও তখন প্রচণ্ড শক্তিতে চটানো জায়গাটা খুঁড়তে থাকল, ভেতরের খদলে হাত ঢুকিয়ে দিল। হাতে যেন আগুনের ছেঁকা খেল সে। সেই গরম তাপ অগ্রাহ্য করে পুনরায় হাত ঢুকিয়ে বের করে আনল একটা লাল শালু কাপড়ের পুটুলী। উত্তেজিত হয়ে বলল, “মলিনা পেয়েছি…”

মলিনার তখন শেষ নিঃশ্বাস ফেলার উপক্রম, অদৃশ্য হাতকে সে কিছুতেই গলা থেকে সরাতে পারছে না। শ্রীমন্ত তখন কোনওরকমে নিজের রক্ষা কবচটি স্পর্শ করাল মলিনার শরীরে। মলিনা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সঙ্গে সঙ্গে বাইরের জানলাটাও দুমদাম করে বন্ধ হয়ে গেল। এই ঘরে বন্দি হল দু’জন। শ্রীমন্তের হাতের শালু কাপড়টা খুলতেই দেখে গেল লাল সিঁদুর ও রক্তে জমাট বাঁধা সেই রুদ্রাক্ষ। রুদ্রাক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা উষ্ণ বাতাসের প্রচণ্ড দমকায় দরজা জানালাগুলো খুলে গেল। শ্রীমন্ত রুদ্রাক্ষটাকে প্রাণপণ শক্তিতে হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে দরজা জানালা দড়াম দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল। সে ফিরে দরজা ধাক্কাতে থাকল। কিন্তু খুলতে পারল না। ভেতর থেকে মলিনা বলল, “তুমি যাও শ্রীমন্ত… ওটাকে বিসর্জন দাও। আমি এমনিতেই মরে আছি ও আর আমায় নতুন করে মারতে পারবে না!”

শ্রীমন্ত রুদ্রাক্ষটাকে হাতে চেপে নিয়ে পড়িমরি করে দৌড়ল স্কুল মাঠের বড় পুকুরটার দিকে। দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে পড়ল পুকুরে। ততক্ষণে মলিনাকে ছেড়ে সেও পিছু নিয়েছে…। সর্ব শক্তি নিয়ে শেষ কামড় দিল শ্রীমন্তকে। জলের মধ্যে ঘাড় চেপে ধরে চুবিয়ে রাখল তাকে। চোখে নাকে মুখে জল ঢুকে যাচ্ছে… নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, সত্যি সে তলিয়ে যাচ্ছে… তলিয়ে যাচ্ছে… জলের তলায়। ভুলে গেছে হাতে মুষ্টিবদ্ধ রুদ্রাক্ষের কথা। ক্রমে শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে, মুক্তি পাওয়া হল না তার আর!

এমন সময় শুনতে পেল দূর থেকে কেউ ডাকছে তাকে, “শ্রীমন্ত… শ্রীমন্ত… ফিরে আয় বাবা।” এ ডাক তার মায়ের… তারা মায়ের মুখটা জলছবি হয়ে ভেসে উঠল তার চোখে।

ভুস করে ভেসে উঠল সে। ‘জয় মা তারা…’ বলে রুদ্রাক্ষটাকে বিসর্জন দিল জলে। জলের মধ্যে প্রবল আন্দোলন ঘটল। উথলে ওঠা দুধের মতো তরঙ্গ পাড় ছুঁল। তুরিত উপরে উঠে এল সে। তরঙ্গ নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য ছায়ার উপস্থিতিও গায়েব হল।

এতক্ষণে খেয়াল হল ডান হাতের তালুটা সম্পূর্ণ ঝলসে গেছে তার। হঠাৎ মনে পড়ল মলিনার কথা, দৌড়ল সেই ঘরের দিকে। দরজা হাট করে খোলা, মলিনা মেঝেতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোনওরকমে প্রাণটা ধুকপুক করছে তার! তবে ঘরটার মধ্যে আর কোনও আলোড়ন ছিল না। সে তখন কাল বিলম্ব না করে তাকে পাঁজাকোলা করে গ্রামের দিকে এগোল, মলিনাকে যেমন করেই হোক বাঁচাতে হবে, নাহলে ওই অতৃপ্ত আত্মারই জয় হবে।

তারপর গ্রামের মানুষের সহায়তায় মলিনার জ্ঞান ফিরল। তারাই তাদের দু’জনকে মাঝরাতে মলিনার বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করে দিল।

পরদিন এক নতুন সকাল, চারিদিকটা অনেক বেশি আলোকিত। মা এসেছেন, দূরের চণ্ডীমণ্ডপে শঙ্খ, ঘণ্টার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে…। শ্রীমন্ত বিদায় নিয়ে এগোল বাড়ির পথে। যাওয়ার আগে মলিনাকে বলল, “তোমার যদি আপত্তি না থাকে আমার উপর ভরসা করতে পারো।”

মলিনা মৃদু হেসে উত্তর দিল, “ওসব থাক না, এই তো বেশ আছি।”

শ্রীমন্ত স্মিত হেসে বলল, “অতৃপ্ত আত্মা কিন্তু অপেক্ষায় থাকল!”

***

মঞ্জিলা চক্রবর্তী

জন্ম ১৯৮০ সালে। পেশায় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। ভ্রমণ ও আলোকচিত্র বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ। স্কুল জীবনে লেখালেখির শুরু এবং প্রবন্ধ রচনায় একাধিক পুরস্কার লাভ। স্কুল-কলেজ ম্যাগাজিনে লেখালেখির গণ্ডি পেরিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম লেখা কিশোর ছোটগল্প প্রকাশিত হয় “আনন্দবাজার পত্রিকা স্কুলে”-র পাতায়। বিভিন্ন প্রথম সারির পত্র-পত্রিকা – “নবকল্লোল”, “কথাসাহিত্য”, “কৃত্তিবাস”, “সুখবর রবিবারীয়”, “আজকাল সফর” এবং অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প, অণুগল্প ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। অসংখ্য শিশু-কিশোর সাহিত্য পত্রিকা এবং বিভিন্ন ট্রাভেল ম্যাগাজিন ও সংবাদ পত্রেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বহু সংকলনে গল্প ও কবিতা লিখেছেন এবং নিয়মিত লেখালেখি করে চলেছেন।

সকল অধ্যায়

১. নোলা – স্নেহা আদক
২. তাপ্পর… – ডঃ সাম্য মণ্ডল
৩. কালচক্র – দেবলীনা বিশ্বাস
৪. রসের খোঁজে – অঙ্কন মুখোপাধ্যায়
৫. রক্তপিপাসু – মোনালিসা সাহা দে
৬. ফেরা – দেবদুলাল কুণ্ডু
৭. ঘড়ি – কেয়া চ্যাটার্জী
৮. স্বর্গাদপি – অলোকেশ ভট্টাচার্য্য
৯. আলিঙ্গন – রিয়া মিত্র
১০. খেলাঘর – প্রীতম গুহ
১১. সেই রাতে – নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
১২. ছবি – মধুমিতা মুখার্জী
১৩. মুখোশ – শঙ্কর চ্যাটার্জী
১৪. ঋণশোধ – সৌমী গুপ্ত
১৫. সহযাত্রী – উস্রি দে
১৬. রিসর্টে এক রাত – অমিতাভ সাহা
১৭. জীবন্ত কথা – মহুয়া সমাদ্দার
১৮. অন্ধকারের জীব – রিয়া ভট্টাচার্য
১৯. রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ – মঞ্জিলা চক্রবর্তী
২০. ভিত্তিহীন – মৃণাল নন্দী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন