রক্তপিপাসু – মোনালিসা সাহা দে

বিশ্বরূপ মজুমদার

মানুষ মারাটা অভ্যাসের থেকেও নেশায় পরিণত হয়েছে। নাহলে প্রতিদিনই ওর একজনকে মারতেই হবে? অদ্ভুত! ও নিজে কী, তাও তো বুঝে উঠতে পারলাম না আজও। মানুষ, নাকি মানুষের মতো শুধুই একটা অবয়ব? রোজই খুন করে চলেছে, ভয়ঙ্করভাবে খুন। আজও করতে চলেছে। রক্তের মতো টুকটুকে লাল দুটো চোখ আর তার থেকেও বিচ্ছিরি দুটো লম্বা সুঁচালো দাঁত নিয়ে অর্ধদৃশ্যমান লোকটা ছুটে চলেছে সেনোরিটার দিকে। কবরস্থানের মধ্যেই সেনোরিটা দৌড়াচ্ছে, প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। তাকে বাঁচতেই হবে। ‘হেল্প মি প্লিজ!’ তার গলা ধরে আসছে। কী হল? এত ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল কেমন করে? আজ তো পূর্ণিমা ছিল! চাঁদও কী নিভে গেল? অসময়ের গ্রহণ? সেনোরিটা একটু থামল। দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু থামা তো চলবে না। ওই তো সে এগিয়ে আসছে লম্বা লম্বা পা ফেলে। না! আরও… আরও জোরে তাকে দৌড়াতে হবে! অনেক বড় লম্বা লম্বা পা ফেলে যেতে হবে। যেমন করেই হোক, তাকে এগোতেই হবে। কিন্তু সে তো জানে না কতটা সফল হবে সে! হঠাৎই সামনে থাকা এক বেদিতে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সেনোরিটা। আর কিছুই করার নেই। পিছন থেকে বীভৎস লোকটা ওর ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দিল।

আর সহ্য করতে পারছিলাম না আমি। টিভিটা বন্ধ করে দিলাম। এই জন্যই সূর্য আমাকে বারণ করেছিল এই নতুন সিরিয়াল কিলারের ভৌতিক ধারাবাহিকটা দেখা শুরু না করতে! আসলে সূর্য জানে আমার স্নায়ু কত দুর্বল! এর আগেও এই ধরনের ইংলিশ মুভি দেখতে গিয়ে আমি একবার সকলের মাঝে চিৎকার করে যাচ্ছেতাই কাণ্ড ঘটিয়েছিলাম। তবু এইসব অলৌকিক থ্রিলার দেখার নেশা আমার মিটল কই?

জল খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ের দিকে এগোতে গেলাম আমি। আরে আরে! আমার পরিস্থিতি বুঝে সূর্যই হাসি মুখে এগিয়ে এসে আমাকে জল দিয়ে গেল। একেই বলে সার্থক জীবনসঙ্গী! জলটুকু খেয়ে শান্তি পেলাম। নিজের পরিস্থিতি দেখে নিজেই হেসে ফেললাম আমি। দরদর করে ঘেমে প্যাচপ্যাচে হয়ে রয়েছে এখনও আমার কপাল। সেই ঘামে সিঁদুর গলে পড়ছে। সত্যিই! কী ভীতু আমি! সামনে রাখা রুমাল নিয়ে মুখটা আলতো হাতে মুছে নিলাম। হাতে রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে আবার টেলিভিশন অন করতে গেলাম। কিন্তু ঘাড়ের কাছে হঠাৎ ব্যথা করতে লাগল কেন? উফ্! অসহ্য ব্যথা। এ কী! রক্ত পড়ছে তো! হাত দিয়ে দুটো গভীর ফুটো অনুভব করলাম আমি আমার ঘাড়ে। হঠাৎই খেয়াল হল সূর্য তো এখন বাড়িতেই নেই, ও তো ওর অফিসে এখন। মেইন গেটও ভিতর থেকে বন্ধ! তবে কী… তবে কী…!

হঠাৎই ঘরের সব আলো নিভে গেল। এক নারীকণ্ঠের আর্তনাদ গ্রাস করে নিল পুরো ঘরটাকে।

***

মোনালিসা সাহা দে

জন্ম মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। পিতার কর্মসূত্রে স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে কান্দীতে। ছোট থেকেই সাহিত্যানুরাগী, ডায়েরি লেখার অভ্যাস, টুকটাক লেখালিখি, বই পড়ার নেশা জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়েও সাহিত্যের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ হেতু স্নাতক স্তরে বাংলা সাহিত্যে পদার্পণ এবং পরবর্তীকালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে এম.এ। বর্তমানে গৃহবধূ ও সাহিত্যচর্চারত। বহু পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত। গত দুই বছর ধরে বেশ কয়েকটি সংকলনেও স্থান পেয়েছে তাঁর লেখা কবিতা ও গল্প। একক গল্প সংকলন – ‘নাগরিক প্রেতাত্মারা’। লেখিকা আবেগপ্রবণ, কল্পনাবিলাসী ও ব্যক্তিত্বময়ী। জীবনে সর্বাধিক বিশ্বাস ও ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি।

সকল অধ্যায়

১. নোলা – স্নেহা আদক
২. তাপ্পর… – ডঃ সাম্য মণ্ডল
৩. কালচক্র – দেবলীনা বিশ্বাস
৪. রসের খোঁজে – অঙ্কন মুখোপাধ্যায়
৫. রক্তপিপাসু – মোনালিসা সাহা দে
৬. ফেরা – দেবদুলাল কুণ্ডু
৭. ঘড়ি – কেয়া চ্যাটার্জী
৮. স্বর্গাদপি – অলোকেশ ভট্টাচার্য্য
৯. আলিঙ্গন – রিয়া মিত্র
১০. খেলাঘর – প্রীতম গুহ
১১. সেই রাতে – নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
১২. ছবি – মধুমিতা মুখার্জী
১৩. মুখোশ – শঙ্কর চ্যাটার্জী
১৪. ঋণশোধ – সৌমী গুপ্ত
১৫. সহযাত্রী – উস্রি দে
১৬. রিসর্টে এক রাত – অমিতাভ সাহা
১৭. জীবন্ত কথা – মহুয়া সমাদ্দার
১৮. অন্ধকারের জীব – রিয়া ভট্টাচার্য
১৯. রক্তে রাঙা রুদ্রাক্ষ – মঞ্জিলা চক্রবর্তী
২০. ভিত্তিহীন – মৃণাল নন্দী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন