বিশ্বরূপ মজুমদার
“বাহ, জায়গাটা তো চমৎকার!” জানলা খুলেই বলে উঠল মৌ। কলকাতার অফিস থেকে বদলি হয়ে তন্ময় এসেছে এই ছোট্ট পাহাড়ি এলাকায়। অফিস থেকেই ঠিক করে দিয়েছে থাকার জায়গা। পাহাড়ের কোলে একটা বাংলো। জানলা খুললেই কুয়াশা মাখা পর্বত শিখর। মৌয়ের উচ্ছ্বাস দেখে হেসে ফেলে তন্ময়।
বাংলোটা সাজানো। আলাদা করে কোনও আসবাবপত্র আনতে হয়নি। উপরি পাওনা মাথার ওপর পুরনো আমলের ঝাড়লণ্ঠন আর একটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক। ঝাড়বাতিটা জ্বললেও ঘড়িটা আর চলে না। তাতে কোনও অসুবিধে নেই অবশ্য। ঘড়িটা বরং বৈঠকখানার শোভা বাড়িয়েছে।
সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে তন্ময়। ভোটের মুখে সরকারি কাজে দম ফেলার ফুরসৎ পায় না। মৌ সারাদিন একলাই কাটায়। বই পড়ে, গান শোনে, ছবি আঁকে, কখনও বা হাঁটতে বেরোয়। পাহাড়ের কোলের নিঃসঙ্গ সময়টা সে বেশ উপভোগ করে।
তন্ময় ক্লান্ত শরীরে বিছানায় গা দিলেই ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু ক’দিন ধরে একটা অদ্ভুত ঘটনা দেখে মনে বেশ খটকা লাগে মৌয়ের। রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে তন্ময় ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফেরে সেই ভোরে। কিন্তু সকালবেলা এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে কোনও উত্তর দিতে পারে না। যেন মনেই নেই কিছু। মৌ মনে মনে ঠিক করে সমস্যাটার সমাধান করতে হবে।
রাত দুটো। মৌয়ের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল ঠান্ডা স্রোত। সে কি ঠিক শুনছে? হ্যাঁ, ঠিকই তো, ঘড়িটা বাজছে — ঢং ঢং। কিন্তু ঘড়িটা তো চলে না। হঠাৎ দেখল তন্ময় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। দরজা খুলে বেরিয়ে গেল নিঃশব্দে। মৌ সঙ্গে সঙ্গে তার পিছু নিল। ঘড়িটা বেজে চলেছে — ঢং ঢং। তন্ময় ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। মৌ সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখল তন্ময় আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল ঘড়ির ভেতর। মৌয়ের সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল।
“মৌ, মৌ?” তন্ময়ের ডাকে হুঁশ ফিরল তার। চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়েছে তন্ময়। ওকে দেখেই ধড়মড়িয়ে উঠে দাঁড়াল মৌ। তন্ময় বলে উঠল, “কী হয়েছে মৌ? তোমার চিৎকারের আওয়াজ শুনে দৌড়ে এলাম ঘর থেকে। তুমি এখানে কেন?” মৌ কোনও উত্তর দিতে পারে না। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ঘড়িটার দিকে। নির্জীব বস্তুটা যেন তার দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গের হাসি হাসছে।
***
কেয়া চ্যাটার্জী
জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। আপাদমস্তক বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থী। অনেক বাধা পাওয়া সত্ত্বেও ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। কয়েক বছর শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বর্তমানে এক পুত্র সন্তানের জননী হওয়ায় কর্মজীবন স্থগিত রয়েছে। লেখালেখির থেকেও পড়তে বেশি ভালোবাসেন। মানুষের মনের কথা ও ছোটদের রঙিন জীবন নিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করেন। ভালো লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন প্রতি মুহূর্তে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন