সৈকত মুখোপাধ্যায়
হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ-নম্বর বাসটা মহাত্মা গান্ধী রোডের মুখে ঢুকতে না ঢুকতেই বুধোদা তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়ল। অগত্যা পেছন পেছন আমিও নামলাম। বাসটা চলছিল, তবে শামুকের চেয়ে একটু আস্তে; তাই নামতে অসুবিধে হয়নি।
পেছন থেকে ডাক দিয়ে বুধোদাকে জিগ্যেস করলাম, কী হল? প্রতাপদাদুর বাড়ি তো নাখোদা মসজিদের কাছাকাছি। তাহলে চিৎপুরের মোড়ে নামলেই তো ভালো হত।
বুধোদা গম্ভীরমুখে বলল, কয়েকটা জরুরি জিনিস কিনতে হবে। সেগুলো আবার এখানে ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই বলে প্রথমে দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে পাঁচশোগ্রাম মিহিদানা সীতাভোগ কিনল। তারপর রাস্তা পেরিয়ে উলটোদিকের ফুটপাথে যাদব-ব্রাদার্স থেকে লম্বা প্যাঁড়া কিনল সাড়ে-সাতশো।
মিষ্টির প্যাকেটগুলো আমার ব্যাকপ্যাকের মধ্যে ঢোকাতে ঢোকাতে বুধোদা বলল, বাবার মুখে শুনেছি, প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় বাবাকে প্রায়ই দাদুর জন্যে এইদুটো মিষ্টি কিনে নিয়ে যেতে হত। দাদুও নাকি তাঁর ছাত্র-অবস্থাতেই মিহিদানা আর লম্বা প্যাঁড়ার প্রেমে পড়েছিলেন। তাহলেই ভেবে দ্যাখ, দোকানগুলোর বয়স কত।
এই বলে বুধোদা একটা প্যাঁড়া আমার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে আরেকটা নিজের গালে চালান করে দিয়ে বলল, এত বছরেও না বদলেছে দোকানগুলোর চেহারা না বদলেছে মিষ্টির স্বাদ।
ক্ষীর, পেস্তাকুচি আর এলাচ-গুঁড়োর স্বাদে ভরপুর প্যাঁড়া চিবোতে- চিবোতে বললাম, তাহলে এগুলোও অ্যান্টিক, বলো বুধোদা।
আলবাৎ। উল্টোদিক থেকে ছুটে-আসা একটা ঝাঁকামুটেকে অদ্ভুত কায়দায় ডজ করে বুধোদা বলল, ভেবে দেখতে গেলে বড়বাজার জায়গাটা নিজেই একটা আস্ত অ্যান্টিক। তুই দুদিকের বাড়িঘরগুলো একটু খেয়াল করে দ্যাখ। কোনোটাই কি একশোবছরের কম পুরোনো বলে মনে হচ্ছে? জানলার মাথায় আর্চ, বারান্দায় রট আয়রনের রেলিং, দেয়ালে পঙ্খের কারুকাজ আর খড়খড়ি-বসানো কাঠের জানলা—এসব সৌন্দর্য কি আর এখনকার বাড়িঘরে খুঁজে পাবি? এমনকী…একটু সরে আয়, নাহলে ট্রামের ধাক্কা খাবি…এমনকী বাড়িগুলোর গায়ে যে ভাঙাচোরা টিনের সাইনবোর্ডগুলো দেখছিস, খুঁজলে ওর মধ্যেও বেশ কয়েকটার গায়ে ইতিহাসের গন্ধ পাবি। চোঙাওলা গ্রামাফোন আর ইকমিক কুকারের বিজ্ঞাপন তো আমি নিজেই এখানকার বাড়ির দেয়ালে ঝুলতে দেখেছি।
কথা বলতে বলতে আমরা দুজনে মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে চিৎপুরের মোড়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এবার ডানদিকে বাঁক নিয়ে চিৎপুর রোড মানে রবীন্দ্র সরণি ধরে নাখোদা মসজিদের দিকে এগোলাম। রবিবারের দুপুর, তাই তবুও একটু মানুষের মতন হাঁটতে পারছিলাম। অফিসের দিনে এসব জায়গায় পেছন থেকে গোঁত্তা আর সামনে থেকে ধাক্কা না খেয়ে দু-পাও হাঁটা যায় না।
তাহের আলি লেনে পৌঁছনোর মধ্যে বুধোদা মাত্র একবারই থেমেছিল। চিৎপুর রোডের সারিসারি আতরের দোকানগুলোর মধ্যে যেটা সবচেয়ে বড় আর পুরোনো সেটার সামনে। বুধোদাকে দেখে মেহেদিরঙে দাড়ি ছোপানো মালিক যেভাবে তড়িঘড়ি গদি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তাতে বুঝলাম বুধোদার সঙ্গে ওনার বেশ খাতির রয়েছে। ওনার সঙ্গে ফিসফিস করে কিছু কথাবার্তা সেরে নিয়ে বুধোদা আবার হাঁটতে শুরু করল। নিজের মনেই বলল, শুনলে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। কিন্তু এই তোজাম্মেলভাইয়ের কাছে এখনো নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের আমলের কয়েক শিশি আতর রয়ে গেছে। ওর পূর্বপুরুষেরাই মেটিয়াবুরুজে নবাবকে আতর সাপ্লাই দিত কিনা।
জিগ্যেস করলাম, সেই আতরও নিশ্চয় অ্যান্টিক?
বুধোদা বলল, অবশ্যই। আতরের কথা বাদ দে। বেলজিয়ান-ক্রিস্টালে তৈরি আতরের শিশিগুলোরই এক-একটার দাম এখন লাখ টাকার ওপর।
হাওড়া থেকে বাসে ওঠার সময়েই প্রতাপবাবুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমরা আসছি। উনি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন। আমাদের আসতে দেখে নীচে নেমে সদর দরজা খুলে দিলেন এবং ভারি যত্ন করে ঘরদোর ঘুরিয়ে দেখালেন।
বাড়িটা দোতলা হলেও একটু সরু-টাইপের। তাই ঘর বেশি নেই। ওপরে দুটো আর নীচে একটা—মোট তিনটে। নীচে একটা ঘর কম হওয়ার কারণ, ওখান থেকেই বাথরুম আর রান্নাঘরের জায়গা বার করতে হয়েছে। প্রতাপদাদু বললেন, দোতলার ঘরদুটো ব্যবহার করে না। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হয়। খাওয়া-শোওয়া, লোকজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করা—সবকিছুই ওই একতলার ঘরটায়।
একতলার ঘরটা বেশ বড়। আসবাবপত্র দেখে বুঝলাম, ওটাই একসঙ্গে ওনার স্টাডি, ড্রইংরুম এবং বেডরুম। ওই ঘরেই বইয়ের আলমারি, ওই ঘরেই অতিথিদের বসার জন্যে সস্তার সোফাসেট আবার ওই ঘরেই রয়েছে একটা বড় খাট, আলনা এবং কাঠের আলমারি।
আমরা সোফাসেটে বসলাম। ওনার কাজের মাসি চা দিয়ে গেলেন। সঙ্গে অত্যন্ত মুখরোচক গাঠিয়া আর ধোকলা, যেগুলো মুখে দিয়েই বুধোদা বলল, কটন স্ট্রিটের গুজরাটি খাবারের দোকানের প্রোডাক্ট। প্রতাপদাদুর মুখের হতভম্ব হাসিটা দেখে বুঝলাম, বুধোদা ভুল বলেনি।
চা খাওয়া শেষ হলে বুধোদা ভারি মন দিয়ে এবং অনেক সময় নিয়ে একটা একটা করে পুরো বাড়ির সমস্ত জিনিস খুঁটিয়ে দেখল। প্রতাপবাবুর দাদুর গড়গড়া থেকে ওনার বাবার ম্যাজিকের বাক্স অবধি সবকিছু। তারপর দেখল ওনার বাবার আমলের ফার্নিচারগুলো—ওই খাট, আলনা, আর কাঠের আলমারিটা। বুধোদা খাটের গদি তুলে, আলনার নীচের ডালা সরিয়ে, আলমারির ডবল-পাল্লা খুলে তন্ন তন্ন করে সব দেখল। সবই খুব সাদামাটা জিনিস। না আছে কোনো কারুকার্য, না আছে পালিশের বাহার। আলমারিটার ভেতরে তাক অবধি নেই। যেন একটা লম্বা বাক্সকে মাটির ওপরে খাড়া করে রাখা হয়েছে। তার মধ্যেই প্রতাপদাদুর অল্প কিছু জামাকাপড় রাখা আছে। তবে জিনিসগুলো শক্তপোক্ত নিশ্চয়ই। না-হলে এতদিন ধরে প্রতাপবাবু ব্যবহার করছেন কেমন করে?
বুধোদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, নাঃ। বুঝলাম না, এসব নিয়ে তন্ত্রাচার্যের কোন উপকারটা হবে। আপনার বাড়িতে গোপন কুঠুরির মধ্যে গুপ্তধন-টন নেই আশা করি। অবশ্য তা যদি থাকতও, তাহলে তো শুধু বাড়িটুকু কিনলেই সুবিনয় মুস্তাফি সেটা পেয়ে যেতেন।
প্রতাপবাবু বললেন, যাই হোক। তোমার মতন একজন এক্সপার্ট সবকিছু দেখে গেল, এবার আমি নিশ্চিন্ত। সামনের বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলায় সুবিনয় আসছে। ওর সঙ্গে কথাবার্তা পাকা করে ফেলব তাহলে।
বুধোদা বলল, তাই করুন। নতুন বাড়িতে সেটল করার পর একবার ফোন করবেন। আমরা গিয়ে আপনার বাবার সম্বন্ধে আরো গল্প শুনে আসব। আজ আসি।
একমিনিট। প্রতাপদাদু কর্নার-টেবল থেকে একটা শক্তপোক্ত পীজবোর্ডের বাক্স এনে বুধোদার হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন, তুমি আমার জন্যে যা করলে তার জন্যে একটা দক্ষিণা তো তোমার পাওনা হয়। এটা রাখো।
বুধোদা বাক্সটা হাতে নিয়ে বলল, এটা কী?
দ্যাখো না। খুলে দ্যাখো।
বুধোদা প্যাকেটটা খুলতেই বেরিয়ে এল একটা স্টিলের হাতকড়া, যাকে ইংরিজিতে বলা হয় হ্যান্ডকাফ। একটা মোটা লোহার চেনের দুদিকে দুটো কড়া লাগানো। প্রত্যেকটা কড়ার কব্জার গায়ে চাবির ফুটো দেখলে বোঝা যায়, কব্জা খুলে হাতের মধ্যে কড়াটা পরিয়ে চাবি এঁটে দিলে আর ওই কড়া হাত থেকে খুলবার উপায় থাকবে না।
বুধোদা আর আমি দুজনেই অবাক হয়ে হাতকড়াটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছিলাম। ভালোমতন বুঝতে না পেরে বুধোদা চোখে প্রশ্ন নিয়ে প্রতাপদাদুর মুখের দিকে তাকাল। প্রতাপদাদু বললেন, ঠিকই করে রেখেছিলাম, বাবার ম্যাজিক দেখানোর উপকরণগুলোর মধ্যে থেকে তোমাকে একটা কিছু দেব। কিন্তু তাস, রুমাল কিম্বা পালকের ঝাড়নগুলোর অবস্থা তো নিজের চোখেই দেখলে। ওগুলো কি আর কাউকে দেবার মতন অবস্থায় রয়েছে? এটা নেহাত স্টিলের তৈরি, তাই এতদিনেও টসকায়নি।
এটা দিয়ে উনি ম্যাজিক দেখাতেন?
হ্যাঁ, বাবার একটা বিখ্যাত খেলা ছিল এই হাতকড়ার বাঁধন থেকে মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে মুক্ত করে বেরিয়ে আসা। কেমন করে করতেন জানি না, কিন্তু শুনেছি, এই হাতকড়া দিয়ে দর্শকরাই ওনার হাতদুটো একটা থামের সঙ্গে বেঁধে দিত। বলাই বাহুল্য, চাবিটাও দর্শকদের কাছেই থেকে যেত। তার আগে বাবার সারা শরীর সার্চ করে দেখে নেওয়া হত, কোথাও লুকোনো চাবি-টাবি রয়েছে কিনা। তারপর বাবাকে একটা সাধারণ পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই বাবা পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে আসতেন। হাতের হাতকড়া তখন আর ওনার হাতে নেই। তুমি ম্যাজিক ভালোবাসো, ম্যাজিশিয়ানদের শ্রদ্ধা করো। তোমার কাছে নিশ্চয় এর একটা মূল্য থাকবে।
বুধোদাকে এরকম বিহ্বল হয়ে পড়তে কমই দেখেছি। হাতকড়াটাকে একবার কপালে ছুঁইয়ে আবার বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল। তারপর আর একটাও কথা না বলে নেমে গেল রাস্তায়।
ভেবেছিলাম, প্রতাপরঞ্জন রক্ষিতের কাহিনি এখানেই শেষ হয়ে গেল। একজন বৃদ্ধের মনে কিছু সংশয় দেখা দিয়েছিল। বুধোদা সেই সংশয় কাটিয়ে দিয়ে এসেছে। বুঝিনি, কাহিনির শেষ নয়, একটা পরিচ্ছেদ কেবল শেষ হল। পরের পরিচ্ছেদের পাতা উলটোবে আর ঠিক পাঁচমিনিট বাদে—আমি আর বুধোদা তাহের আলি লেন থেকে যে-মুহূর্তে আবার চিৎপুর রোডে পা দেব।
তাহের আলি লেন আর চিৎপুর রোডের জংশনে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন স্বয়ং সুবিনয় মুস্তাফি—তন্ত্রাচার্য। গাড়িটা প্রথমে দেখতে পাইনি, একটু দূরে পার্ক করানো ছিল। এমনকী উনিই যে সুবিনয় মুস্তাফি, নিজে থেকে এগিয়ে এসে পরিচয় না দিলে সেটাও বুঝতে পারতাম না। কারণ, ওনার পরনে সেদিন মোটেই রক্তাম্বর-টক্তাম্বর ছিল না। একটা সাদা সাফারি-স্যুট পরেছিলেন আর চোখে ছিল ধোঁয়াটে সানগ্লাস। তবে ঘাড় অবধি বাবরি চুল, গলার সোনার চেন আর হাতের আংটি-টাংটিগুলো প্রতাপদাদুর ডেসক্রিপশনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল। ভদ্রলোক এগিয়ে এসে দু-হাত জোড় করে বুধোদাকে নমস্কার করে বললেন, নমস্কার মিস্টার মজুমদার। অধমের নাম সুবিনয় মুস্তাফি। আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল। সময় হবে?
বুধোদা ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করল, আমাকে চিনলেন কেমন করে?
ভদ্রলোক বললেন, গত রবিবার আমার একটি কর্মচারী প্রতাপরঞ্জনবাবুর পেছন-পেছন আপনার উত্তরপাড়ার বাড়ি অবধি পৌঁছে গিয়েছিল। আপনি বিখ্যাত মানুষ, তাই আপনার পরিচয় জানাটা তার পক্ষে তেমন কঠিন হয়নি।
আমি তো কোন ছাড়, বুধোদা অবধি লোকটার স্পর্ধা দেখে একটু থমকে গেল। আমি বুধোদার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে গত কয়েকবছরে বহু ক্রিমিনাল দেখেছি। খুনজখমও কম দেখিনি। কিন্তু আজ কলকাতার আলো ঝলমলে, ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় এই সুবিনয় নামের ছোটোখাটো চেহারার লোকটাকে দেখে আর তার কথা শুনে মনের মধ্যে এমন একটা ভয় ছড়িয়ে পড়ছিল, যেমনটা আমার আগে কখনো হয়নি। অবশ্য আতঙ্ক জিনিসটা সবসময় আকার-আকৃতি থেকে আসে না। একটা ছোট মাকড়শা দেখলেও তো তার বিষের কথা ভেবে ভয় করে। বুঝতে পারছিলাম, আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে-থাকা এই লোকটা মাকড়শার মতনই বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক।
বুধোদা কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে মুস্তাফির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নজর নামিয়ে আনল রিস্টওয়াচের দিকে। তারপর আবার ওনার দিকে তাকিয়ে বলল, মিনিট পাঁচেক সময় আছে হাতে। যা বলবার বলে ফেলুন।
এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলে যদি আমার গাড়িতে গিয়ে বসি? অসুবিধে হবে?
প্রয়োজন নেই। যা বলবার এখানেই বলুন।
আশাকরি আপনি তন্ত্রমন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। আত্মা কিম্বা পরলোকেও না।
একদম ঠিক ধরেছেন। কোনো ধরনের অলৌকিকেই বিশ্বাস নেই আমার। ব্যাপারটা আপনার পক্ষে একটু অসুবিধেজনক বুঝতে পারছি। কিন্তু কিছু করার নেই।
সুবিনয় মুস্তাফি একটা ছোট দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। হাতের পাতাদুটোও ওলটালেন। তবে, মুখের মিচকে-হাসিটা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, এসব হতাশার ভঙ্গি-টঙ্গি আসলে অভিনয় ছাড়া কিছু নয়। উনি বললেন, না, বোধিসত্ত্ববাবু! আমার পক্ষে অসুবিধেজনক নয়। অসুবিধেজনক আপনাদের পক্ষে। কাকাবাবুকে অন্যরকমের কোনো পরামর্শ দেবেন না। ওই বাড়িটা আমি কিনব।
এটা কি থ্রেটনিং?—বুধোদার চোয়ালদুটো শক্ত হয়ে উঠল।
আজ্ঞে না। এটাই বাস্তব। আমার ইচ্ছেয় বাধা দিলে আপনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কারণ আমার ইচ্ছেগুলো ঠিক আমার ইচ্ছে নয়। ওগুলো এক অতিজাগতিক পরিকল্পনার অংশ। সেই পরিকল্পনার মধ্যে ওনার ওই উত্তরমুখী বাড়িটাও রয়েছে, যেটা তৈরি হয়েছিল এমন একটা জমিতে যেখানে তিনশোবছর আগে একটা কবরখানা ছিল। ওর চেয়ে ভালো সাধনপীঠ আর হয় না।
বুধোদা কিছুক্ষণ সুবিনয়বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর অসম্ভব ঠান্ডা-গলায় বলল, আমি ওনাকে এইমাত্র বাড়িটা বিক্রি করার পরামর্শই দিয়ে এসেছিলাম। আপনি এইভাবে আমাকে থ্রেট করতে না এলেই ভালো করতেন। কারণ এতে হল কি, আমার মনে নতুন করে একটা সন্দেহের বীজ ঢুকে গেল। সেই বীজ থেকে গাছ গজালে আপনার সমস্ত অতিজাগতিক পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যাবে। চল রুবিক!
বুধোদার পাশাপাশি প্রায় কুড়ি-পা হেঁটে যাওয়ার পর একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। দেখলাম ঠিক মাকড়শার মতনই চকচকে চোখে সুবিনয় মুস্তাফি আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন