কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ২

সৈকত মুখোপাধ্যায়

শিলিগুড়ি থেকে পাঙ্খাবাড়ি হয়ে যে রাস্তাটা কার্শিয়ং-এর দিকে চলে গেছে তারই মাঝ বরাবর একটা সরু ফ্যাকড়া বেরিয়ে পুবদিকের পাহাড়ের ঢাল ধরে উঠতে শুরু করেছে। ওটাই কুকড়াঝোরা যাওয়ার রাস্তা। প্রথম দু-তিন কিলোমিটারের মধ্যে দুয়েকটা পাহাড়ি গ্রাম আর চা-বাগান দেখেছিলাম। তারপর থেকেই দু-পাশে শুধু ঘন শাল আর বাঁশের জঙ্গল।

পনেরো কিলোমিটারের মাথায় হঠাৎই দুপাশের সেই জঙ্গলের চেহারা বদলে গেল। বড় বড় গাছের জায়গায় দেখা গেল ঘন ঝোপঝাড়। আমাদের ড্রাইভার কমল গুরুং দু-দিকে হাত দেখিয়ে বললেন, এইখানেই পাহাড়ের ঢাল জুড়ে কুকড়াঝোরার চা বাগান ছিল স্যার। এখন চায়ের গাছগুলোকে মেরে ফেলে জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে। আর পাঁচ বছরের মধ্যে চারপাশের বাঁশবনের থেকে জায়গাটাকে আর আলাদা করতে পারবেন না। আর ওই দেখুন, টি-এস্টেটের ঘরবাড়ি।

কমল গুরুং যেদিকে আঙুল তুলে দ্যাখালেন, সেদিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই, জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে বেশ কয়েকটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আমাদের গাড়ি আর একটু এগোতেই রাস্তা থেকে নীচে দেখতে পেলাম বিরাট একটা টিনের শেড। শেডটার গায়ে এখনো সাদা রঙে ইংরিজিতে লেখা কুকড়াঝোরা শব্দটার কয়েকটা অক্ষর পড়া যাচ্ছে। ড্রাইভারসাহেব বললেন, এটাই ছিল ফ্যাক্টরি। এখানেই কাঁচা চা-পাতা থেকে চা তৈরি হত।

আর দুটো বাঁক ঘুরেই আমরা কুকড়াঝোরা চা বাগানের মরচে ধরা লোহার গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। নুড়ি পাথরের রাস্তা, যাকে বলে ‘গ্র্যাভেল রোড’। বর্ষায় নুড়ি ধুয়ে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। সেই জলকাদা আর গর্তে ভরা রাস্তা দিয়ে খুব সাবধানে গাড়ি চালিয়ে কমল গুরুং যে বাংলোটার সামনে গাড়ি পার্ক করালেন সেরকম বিশাল বাংলো আমি সিনেমার বাইরে আর কোথাও দেখিনি। পাইন-কাঠের দেয়াল আর টালির ছাদ। চারিদিক ঘিরে চওড়া বারান্দা। চা-বাগানের এই চরম দুর্দশার দিনেও কে যেন অনেক যত্নে বাংলোর সামনে একটুকরো ফুলের বাগান বাঁচিয়ে রেখেছে।

গাড়ি থেকে নামতেই আমাদের যে রিসিভ করল, তার নাম ডাম্পি মাহাতো। এর কথা সুধাবিন্দুবাবু আমাদের বলে রেখেছিলেন। ডাম্পি মাহাতো এই বাংলোর কেয়ার-টেকার কাম কুক কাম সিকিউরিটি অফিসার। পঁচিশ ছাব্বিশ বছর বয়স হবে। এই শীতেও প্যান্টের ওপরে শুধু একটা খাকি ফুল-শার্ট, যার পকেটের ওপর কুকড়াঝোরা টি-এস্টেটের সুতোয় বোনা নামটা এখনো চেষ্টা করলে পড়া যায়।

ডাম্পিভাইয়ের পাথরে খোদাই করা চেহারা। ঝলমলে হাসি আর বড় বড় চোখদুটো দেখলেই বোঝা যায় ভীষণ সৎ আর সরল। সুধাবিন্দুবাবু সেদিন কথায় কথায় বলেছিলেন, মাহাতো-রা নাকি গত একশো বছর ধরে এই কুকড়াঝোরার নুন খেয়েছে। এখানে ওদের চার-পুরুষের বাস। তাই ডাম্পির হাতে বাংলোর সমস্ত সম্পত্তি একশোভাগ নিরাপদ।

ডাম্পিভাই শিলিগুড়ির মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করেছে। চমৎকার ইংরিজি আর বাংলা বলতে পারে।

আমরা পৌঁছনোর পনেরো মিনিটের মধ্যে ডাম্পিভাই কাঠের উনুন জ্বেলে হাত-পা ধোয়ার জল গরম করে দিল। গিজার কাজ করবে না, কারণ কুকড়াঝোরায় গত ছ’মাস ধরে বিদ্যুত নেই। টি-গার্ডেনের যে নিজস্ব সাপ্লাই-লাইন সেটা নাকি ট্র্যান্সফর্মার সমেত গত বর্ষায় ভেঙে পড়েছে। পয়সার অভাবে আর সারানো হয়নি।

আলোর জন্যে বাংলোর মধ্যে তিনটে বড় বড় ব্যাটারি-ল্যাম্প আছে। তাছাড়া প্রত্যেক দেয়ালে দেয়ালগিরি আর হ্যারিকেনও রয়েছে। কিন্তু ল্যাপটপ, মোবাইল কিম্বা বুধোদার ক্যামেরার ব্যাটারিগুলোতেও চার্জ দেওয়া যাবে না। সুবিধে হচ্ছে, এখানে টাওয়ারের অবস্থা এতই করুণ যে, মোবাইল কিম্বা ল্যাপটপ খুব বেশি ইউজড হবে বলেও মনে হয় না।

এইসব অসুবিধের কথা জেনেই আমরা কুকড়াঝোরায় এসেছি। বুধোদা বলে, অ্যান্টিক কখনো এয়ার-কন্ডিশনড সুপারমার্কেটে সাজানো থাকে না। যারা অ্যান্টিক-হান্টার তাদের কষ্ট করার মানসিক প্রস্তুতি থাকা উচিত। আর আমাদের তা রয়েছেও। যখন কালো অর্কিডের খোঁজে নাগাল্যান্ডের জঙ্গলে গিয়েছিলাম তখন তো জঙ্গলের মধ্যে হ্যামক টাঙিয়ে শুতে হয়েছিল। তার তুলনায় কুকড়াঝোরা তো স্বর্গ।

চা-টা খেয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়েই বুধোদা বলল, চল রুবিক, বেরোবো।

আমি বললাম, কোথায় যাবে?

বুধোদা বলল, সে কী রে! কাজ শুরু করতে হবে না? অ্যান্টিক খোঁজার কাজ?

আমি বললাম, সুধাবিন্দুবাবু তো বললেন, সেসব এই বাংলোর মধ্যেই রয়েছে।

বুধোদা হান্টার-শ্যুটা পায়ে গলাতে গলাতে বলল, সে তো রইলই। যখন খুশি দেখা যাবে। কিন্তু তার মানে কি বাইরে কিছু থাকবে না? ধর, ছোটবেলায় কলকাতার রাস্তার ধারে কিছু লোহার বাথ-টাবের মতন জিনিস দেখতাম। পরে জেনেছি ওগুলো ছিল ঘোড়াদের জল খাবার জায়গা। যখন ঘোড়ায় টানা ট্রাম ছিল তখনকার স্মৃতিচিহ্ন, এখন অ্যান্টিক। এই চা-বাগানেও সেরকম কিছু পড়ে থাকতে পারে তো!

বড্ড শীত করছিল। তাই গাঁইগুঁই করে বললাম, দেড়শো বছর আগের জিনিস কি আর পড়ে থাকে?

বুধোদা বলল, বড় বড় শহরে হয়তো থাকে না, কারণ, সেখানে পরিবর্তনটা বড্ড জোরকদমে হয়। কিন্তু কুকড়াঝোরার চেহারা দেখে কি তোর মনে হচ্ছে, এখানে সময় অতটা বদলেছে? চল, ওঠ!

বুধোদার কথাটা ঠিক। কে বলবে মাত্র আড়াই-ঘণ্টার দূরত্বে শিলিগুড়ি বলে একটা আধুনিক শহর রয়েছে? এখানে কাঠের বাংলো, নুড়িপাথরের রাস্তা, কপিকল লাগানো পাতকুঁয়ো আর হ্যারিকেনের আলো দেখে মনে হচ্ছিল আঠেরোশো একানব্বই-এর পর খুব বেশি সময় কাটে নি।

ডাম্পির অজস্র কাজের সঙ্গে আরো একটা কাজ জুড়ে গেল। এবার ও হল আমাদের গাইড। এক হাতে একটা বড় টর্চ আর অন্য হাতে একটা লাঠি নিয়ে ও আমাদের সঙ্গে রাস্তায় পা দিল। তবে তার আগে বাংলোর মেন দরজায় বড় একটা তালা ঝুলিয়ে দিতে ভুলল না।

আমরা দুজন ডাম্পির পেছন পেছন এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে হাঁটছিলাম। রাস্তা বলতে কিছুই আর প্রায় অবশিষ্ট নেই। যে বুনোগাছ আর লতাগুলো এই তিনবছরের মধ্যে চা-গাছগুলোকে মেরে ফেলেছে তারাই মাঝে মাঝে রাস্তার ওপরেও উঠে এসেছে। তাই হাঁটতে হচ্ছিল খুব সাবধানে।

এখানে এসে থেকেই দেখছি আকাশ মেঘলা। পাগলের গায়ে জড়িয়ে রাখা ছেঁড়া কম্বলের মতন তার রং। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। জলের ওপর কালির ফোঁটার মতন দ্রুত অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ছিল চারিদিকে।

অন্ধকার আরো একটু জমাট বাঁধতেই ডাম্পিভাই খুঁত-খুঁত করতে শুরু করল। কেবলই বলছিল, চলুন, বাংলোয় ফিরি। কাল সকালে আবার আপনাদের বাকিটা দেখিয়ে দেব। চলুন।

বুধোদা একটু বিরক্ত হয়েই বলল, বাংলোয় বসে থাকার জন্যে তো আমরা আসিনি ডাম্পি, একটা কাজ নিয়ে এসেছি। কেন? তোমার আরেকটু থাকতে অসুবিধে কোথায়? হাতে টর্চ রয়েছে তো।

বুধোদার ধমক খেয়ে ডাম্পি চুপ করে গেল।

চলতে চলতে আমরা চা-বাগানের কুলিবস্তির মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সুধাবিন্দু বসাক বলেছিলেন, যখন চা বাগান তৈরি হয়, তখন এই কুলি-বস্তিতে এক হাজারের ওপর শ্রমিক বাস করত। পাঁচবছর আগে যখন চা-বাগান বন্ধ হয়, তখন সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছিল দুশোয়। আর এই মুহূর্তে, ডাম্পিভাই জানাল, সব মিলিয়ে কুড়িজন কর্মচারী ফ্যামিলি নিয়ে রয়েছেন। তারা হয় পাহারাদার নয় তো সাফাইকর্মী। আমাদের দুপাশে সারসার একতলা বাড়ি। এই বাড়িগুলোকেই একটু আগে দূর থেকে দেখেছিলাম। কাছে এসে দেখলাম, বেশিরভাগই ফাঁকা। কেউ থাকে না ওইসমস্ত কোয়ার্টারে। জানলা দরজার পাল্লা খসে পড়েছে। কোনো কোনো বাড়ির ছাদের টালির চাল ধসে পড়েছে মেঝের ওপর। আমাদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে কী যেন একটা জন্তু ওরকমই একটা ভাঙা ঘরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে একদম আমাদের সামনে দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেল। চমকে উঠেছিলাম। বুধোদা বলল, শেয়াল।

ওর মধ্যেই কয়েকটা ঘরে আলো জ্বলছিল। বাচ্চাদের গলার আওয়াজও পাচ্ছিলাম। সেরকম একটা ঘরের দিকে আঙুল তুলে ডাম্পিভাই বলল, ওই দেখুন স্যার। ওটাই আমার ঘর। বউ আর তিনবছরের একটা ছেলে আছে। চলুন একবার আমার ঘরে।

বুধোদা ডাম্পির পিঠে হাত রেখে বলল, পরে আসব। আমরা তো এখন কয়েকদিন এখানেই থাকছি।

মিনিট সাত আট চলার পরে কুলি-বস্তির সীমানা পেরিয়ে আমরা আবার ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে গেলাম। এখন আমাদের বাঁ-দিকে যে বিল্ডিংটা দেখা যাচ্ছে সেটাও আমরা আসবার পথে দেখেছি। চা পাতা প্রসেস করার কারখানা। করুগেটেড টিনের ভাঙা শেড, হেলে পড়া চিমনি আর গেটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা কয়েকটা ভাঙা ট্রাক্টর দেখলেই বোঝা যায় কারখানার ভেতরে বহুদিন মানুযের পা পড়েনি।

এরপরেই রাস্তাটা ইউ-টার্ন নিয়ে একটা ছোট টিলার মাথায় উঠতে শুরু করল। এখানে বোধহয় কোনোকালেই চা গাছ লাগানো হয়নি। যে জঙ্গল দেখলাম, তা অন্য জায়গার মতন নতুন গজিয়ে ওঠা জঙ্গল নয়। একেবারে আদিম সব পাইনগাছের এক বন নিরেট দেয়াল হয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই অবধি পৌঁছিয়ে আমার আর এগোতে ইচ্ছে করছিল না। বুধোদাও দেখলাম সরু পাকদন্ডি রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

ডাম্পি আবার বলল, চলুন স্যার। ফিরি।—ওর গলায় স্পষ্ট ভয়।

বুধোদা বলল, কেন? কী আছে ওদিকে?

ওদিকে স্যার…ওদিকে…ওই টিলার মাথায় পুরোনো চার্চ আর গোরস্থান। একশোবছর আগে ওই চার্চ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দিনের বেলাতেও ওদিকে যাই না স্যার।

কেন? চার্চ বন্ধ হয়ে গেল কেন?—জিগ্যেস করল বুধোদা।

ডাম্পি চুপ।

ওদিকে যাও না কেন?—বুধোদা আবার জিগ্যেস করল।

ইতিমধ্যে টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর তার সঙ্গে ছুরির ফলার মতন ঠান্ডা হাওয়া। আমি জ্যাকেটের হুডটা মাথার ওপর তুলে দিলাম। ডাম্পি বলল, প্লিজ স্যার। সে সব কথা এখানে দাঁড়িয়ে বলা যাবে না। বাংলোয় চলুন, বলছি।

বুধোদা আমার আর ডাম্পির মুখের দিকে তাকিয়ে বোধহয় বুঝল আর জোর করাটা ঠিক হবে না। তাই বলল, আচ্ছা চল।

বাংলোর দরজায় পৌঁছেছি কি পৌঁছইনি, টিপটিপ বৃষ্টিটা ঝমঝমিয়ে নামল। আমরা তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।

বাংলোয় ইলেকট্রিসিটি নেই, কুকড়াঝোরায় মোবাইলের টাওয়ার নেই। কিন্তু যা আছে, তাকে রাজকীয় বললেও বোধহয় কম বলা হবে। বুধোদা একটা একটা করে জিনিসের দিকে তাকাচ্ছিল আর তার ঠিকুজি কুলুজি সব বলে চলেছিল। বাথরুমের মগ-বালতি, টাওয়েল-ন্যাপকিন আর বিছানার লেপ-তোশক বাদে কোনও জিনিসটারই বয়স দেখলাম আশি বছরের কম নয়। এমনকী দেয়ালে যে দেয়ালগিরি গুলো আলো দিচ্ছিল সেগুলোও নাকি ব্রিটিশ আমলের।

বুধোদা শেষমেষ একটা সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, এ একটা রত্নভান্ডার, বুঝলি রুবিক। জিনিসগুলো এতদিন ধরে যে এইভাবে মেইনটেইন করেছেন, তার জন্যে বসাকদের ধন্যবাদ দিতেই হয়। সত্যিকারের শিক্ষিত কোনও কালেকটারের হাতে পড়লে এগুলো আরো অনেকদিন ভালো থাকবে, আর সেটার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। কাল সকাল থেকে ক্যাটালগ বানানোর কাজে নেমে পড়ব, কেমন? কই হে ডাম্পি, তোমার চিকেন কদ্দুর? গন্ধ যা ছেড়েছে তাতে তো আর ধৈর্য ধরা যাচ্ছে না।

বলতে না বলতেই ডাম্পিভাই হলঘরের ডিনার-টেবলে খানা লাগিয়ে দিল। বারোজন বসার মতন বিলিতি ওক কাঠের টেবিলে আপাতত আমরা মাত্র দুজন। খাবার বলতে গরম গরম হাতরুটি, অড়হড় ডাল, কাঠের আঁচে রান্না করা দেশি মুরগির কারি আর স্যালাড। ডাম্পিভাই খাবার সার্ভ করবার আগেই বুধোদা দেখলাম চট করে একবার চিনেমাটির প্লেটটা উলটে দেখে নিল। তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, কোনোদিন কি স্বপ্নেও ভেবেছিলাম, নাইনটিন হান্ড্রেড অ্যান্ড টেনের জার্মান পোর্সেলিনে রুটি খাবো!

আমি পাশ থেকে বললাম, এটা কি তাই?

অফকোর্স তাই। তোর নিজের প্লেটটা উলটে দ্যাখ, একটা হেলমেট আর তির ধনুকের লোগো আছে। যারা তৈরি করেছিল সেই কোম্পানির লোগো। কিন্তু তাদের নাম কিম্বা ইনিশিয়ালটুকু নেই। কেন নেই জানিস?

বুধোদার কথা শুনে শ্বেতপদ্মের পাপড়ির মতন হালকা আর সাদা ডিনার-প্লেটটা উলটে একবার লোগোটা দেখে নিলাম। তারপর সেটাকে সাবধানে নামিয়ে রেখে জিগ্যেস করলাম, কেন?

বিশ্বযুদ্ধের আগে, তখন জার্মানদের সঙ্গে ইংরেজ আর ফরাসিদের ভীষণ শত্রুতা। ইংল্যান্ড কিম্বা ফ্রান্সের লোক যদি জানতে পারে জিনিসটা জার্মানিতে তৈরি তাহলে তারা সে জিনিস কিনবেই না। তাই তখনকার জার্মান ম্যানুফাকচারাররা বাসনপত্রের পেছনে শুধু নিজেদের লোগোটুকু দিয়েই ছেড়ে দিত। এই হেলমেট আর তির-ধনুক যেমন ব্যাভেরিয়ার মিটারটাইখ কোম্পানির লোগো। এগুলোকে বলা হয় ‘পোর্সেলিন মার্ক’। যে কোনো অ্যান্টিক পোর্সেলিনের বাসন কিনতে গেলে আগে এই পোর্সেলিন মার্কটা যাচাই করে নিতে হয়।

জিগ্যেস করলাম, এরকম কত পোর্সেলিন মার্ক আছে?

বুধোদা বলল, আমেরিকা, ইওরোপ, চায়না, জাপান সব মিলিয়ে কয়েক হাজার হবে।

সব তোমার মুখস্থ?

ধুত পাগল! তাই আবার হয় না কি? তবে বড় বড় কোম্পানিগুলোর লোগো চিনি। বাকিগুলোর জন্যে ক্যাটালগ আছে।

সাড়ে আটটার মধ্যে আমাদের খাওয়া দাওয়া সারা হয়ে গেল। রান্নাঘর গুছিয়ে ডাম্পি বলল, স্যার, আমি তাহলে ঘরে ফিরে যাচ্ছি। কাল সকাল সাড়ে-ছটায় আপনাদের বেড-টি দিয়ে ডেকে দেব। আমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে।

বুধোদা বলল, দাঁড়াও দাঁড়াও। না, দাঁড়াবে কেন? এখানে আমার পাশে এসে বস। তারপর বল, কেন তোমাদের চার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেনই বা ওই টিলাটার পায়ের কাছ থেকে পালিয়ে এলে? কিসের ভয়?

সকল অধ্যায়

১. অ্যান্টিক আতঙ্ক – ১
২. অ্যান্টিক আতঙ্ক – ২
৩. অ্যান্টিক আতঙ্ক – ৩
৪. অ্যান্টিক আতঙ্ক – ৪
৫. অ্যান্টিক আতঙ্ক – ৫
৬. অ্যান্টিক আতঙ্ক – ৬
৭. অ্যান্টিক আতঙ্ক – উপসংহার
৮. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ১
৯. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ২
১০. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৩
১১. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৪
১২. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৫
১৩. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৬
১৪. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৭
১৫. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৮
১৬. কুকড়াঝোরার নেকড়েমানুষ – ৯
১৭. খুনি ম্যাজিক – ১
১৮. খুনি ম্যাজিক – ২
১৯. খুনি ম্যাজিক – ৩
২০. খুনি ম্যাজিক – ৪
২১. খুনি ম্যাজিক – ৫
২২. খুনি ম্যাজিক – ৬
২৩. খুনি ম্যাজিক – ৭
২৪. খুনি ম্যাজিক – ৮
২৫. খুনি ম্যাজিক – ৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন