সৈকত মুখোপাধ্যায়
ক্যাফে-কফি-ডে’র শোভাবাজার আউটলেটে বসেছিলাম আমি আর বুধোদা। এক রাউন্ড করে ক্যাপুচিনো শেষ করে ফেলেছি। এক প্যাকেট কুকিজও শেষ। অন্যমনস্কভাবে মেনুকার্ডটা ওলটাতে ওলটাতে ভাবছিলাম, আর কী নেওয়া যায়। কিছু না নিয়ে এতক্ষণ বসে থাকাটা খারাপ দেখায় তো।
বুধোদা এতক্ষণ জর্জ বেস্টের ড্রিবলিং-স্কিল নিয়ে কী যেন বলছিল। আমি সেরকম মন দিচ্ছি না দেখে থেমেও গিয়েছিল। হঠাৎ বলল, রুবিক! ছাতিমগাছটায় কত ফুল ফুটেছে দ্যাখ। পাতা দেখা যাচ্ছে না।
সিসিডির সামনের রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যার জনস্রোত হাতিবাগানের দিকে চলে যাচ্ছিল। পুজো আসছে। বাজারও জমে উঠছে। সেই ভিড়টিড় টপকে বুধোদার নজর চলে গেছে রাস্তার উলটোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে-থাকা বিশাল ছাতিমগাছটার দিকে।
বুধোদা এটা পারে। মনকে খুব সহজেই একটা চিন্তা থেকে অন্য চিন্তায় সরিয়ে নেওয়ার কাজটা ও বরাবরই ভীষণ ভালো পারে। ওর নিজের কথায় ‘সুইচ-অন, সুইচ-অফ’।
ছাতিমের ল্যাটিন নাম জানিস?—বুধোদা জিগ্যেস করল।
এই রে, না তো।
Alstonia scholaris। ওরকম হাঁ করে তাকিয়ে থাকিস না। বটানিতে আমারও জ্ঞান শূন্য। তবে দুয়েকটা নাম মনে থেকে যায় তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্পটার জন্যে। এই ছাতিমের কথাই ধর। কোনো এককালে গাছটার নরম কাঠ দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ড আর পেনসিল তৈরি করা হত। সেসব জিনিস আবার পণ্ডিত মানে স্কলারদের কাজে লাগত। আর তার থেকেই স্কলারিস। বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে ছাত্রছাত্রীদের এখনো ছাতিমপাতার মানপত্র দেওয়া হয় জানিস তো? তার অবশ্য কারণ অন্য।
আমি বললাম, বাবা! আমি তো ভাবতাম সায়েন্টিফিক-নেমের মধ্যে শুধু আবিষ্কর্তার নাম থাকে। ইতিহাসও থাকে তাহলে?
নিশ্চয়। যেমন ধর কুর্চি। এত সুন্দর গাছ, এত সুন্দর ফুল। বাংলা নামটাও এত মিষ্টি। কিন্তু ল্যাটিন নাম Holarrhena antidysenterica। নামটার গায়ে কেমন ওষুধ-ওষুধ গন্ধ লেগে আছে না? কী আর করা যাবে? গাছটার ছাল থেকে যে সত্যিই ডিসেন্ট্রির মানে রক্তআমাশার ওষুধ তৈরি হয়।
বুধোদার ভাঁড়ারে অনেক বিষয়েই এরকম অনেক গল্প আছে, কিন্তু মোটেই সেগুলো বলতে চায় না। ওর ধারণা তাতে পণ্ডিতি ফলানো হয়ে যায় এবং ও যেহেতু পণ্ডিত নয়, কাজেই সেটা ওকে মানায় না। তবু আজকে যে বুধোদা নিজে থেকেই নানান বিষয়ে এত কথা বলে যাচ্ছে, তার কারণটা দিব্যি বুঝতে পারছিলাম। ও আমাকে অন্যমনস্ক রাখতে চাইছে। চাইছে দীপার দিক থেকে আমার মনটাকে সরিয়ে নিয়ে আসতে।
দীপা মানে সপ্তদ্বীপা রায়। নিবেদিতা গার্লস স্কুলের ক্লাস-নাইনে পড়া পুঁচকে একটা মেয়ে, কিন্তু হাবভাব দেখলে মনে হয় মাস্টার্স-ডিগ্রি করে ফেলেছে। মেয়েটাকে কেন যে বুধোদা এত তোল্লাই দেয় সেটা ঠিক বুঝি না। আমাকে শুনিয়ে-শুনিয়ে প্রায়ই বলে মেয়েটা খুব কারেজিয়াস, খুব বুদ্ধি। আমি একদিন আর থাকতে না পেরে জিগ্যেস করেছিলাম, সপ্তদ্বীপার বুদ্ধি-টুদ্ধি কি আমার চেয়ে বেশি? তাতে বুধোদা বাঁকা হেসে বলেছিল, মা ব্র&য়াৎ অপ্রিয়ম সত্যম। যে সত্যি কথা শুনতে ভালো লাগে না, সেই সত্যিকথা বলতে নেই।
রেগেমেগে জবাব দিইনি। তবে ভাবছিলাম সেই লোহুরঙের ডাইনির ঘটনার পরে বুধোদা দীপার আর কোন কেরামতি দেখল যে, এতবড় কথাটা বলে ফেলল? আমি ওর কত অভিযানের কত দিনের সঙ্গী। ওর একটুও বাধল না আমাকে এভাবে ডাউন দিতে?
তাই গত রবিবার চিৎপুর থেকে ফেরার পথে যখন বুধোদা বলল, সুবিনয় মুস্তাফির তন্ত্রের আসরের চেহারাটা একবার দেখে আসতে পারলে ভালো হত, তখন আমিই বলেছিলাম, তুমি-আমি তো সেই কাজটা পারব না বুধোদা, সুবিনয়বাবু চিনে ফেলবেন। তা তোমার সেই সাহসী মেয়েটিকেই বলো না একবার ঘুরে আসতে।
বুধোদা যে আমার কথায় এমন পটাং করে রাজি হয়ে যাবে সেটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। পারলে বলতাম না। কিন্তু বুধোদা তখনই আমার পিঠ-টিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। এইজন্যেই তোকে এত ভালোবাসি রুবিক। সত্যি, দীপা যদি হাতিবাগানের আশ্রমে ঢুকে পড়ে, ওকে কেউ খেয়ালও করবে না। ভাববে উপস্থিত ভক্তদের কারুর সঙ্গে এসেছে। ঠিক আছে, চল, এখনই একবার ওর বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। তোর কাছে দীপার ফোন নম্বর আছে?
এই প্রশ্নটাও বিশুদ্ধ লেগ-পুলিং। বুধোদা খুব ভালো করেই জানে, আমার কাছে দীপার সেলফোনের নম্বর আছে। মাঝেমাঝে আমাদের কথাবার্তাও হয়।
কথা না বাড়িয়ে ফোন নম্বরটা বুধোদাকে দিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা আসছি এইটুকু জানিয়ে দিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে কুড়িমিনিটের মধ্যে পৌঁছেও গিয়েছিলাম দীপাদের বাগবাজারের বাড়িতে। দীপা আর ওর বাবা-মা, মানে মণিদীপা কাকিমা আর সুদীপকাকুও খুব আগ্রহ নিয়ে বুধোদার মুখে প্রতাপ রক্ষিতের বিপদের কথা শুনলেন এবং দেখে অবাক হলাম, মেয়ে তো বটেই, বাবা-মাও অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়ে নেচে উঠলেন। আজব লোকজন হয় সত্যি।
সে যাইহোক, আমাদের অরিজিনাল প্ল্যানটা একটু বদলাল। ঠিক হল, দীপা একা যাবে না, মণিকাকিমাও সঙ্গে যাবেন। তাতে ব্যাপারটা আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে। ওনারা বলবেন, সুদীপকাকু মিজোরামে চাকরি করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন। ছমাসের ওপর তাঁর কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। এখন তন্ত্রাচার্য যদি তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন একটু বলে দেন।
দীপাদের ড্রইংরুমে বসেই মণিকাকিমা নেট সার্চ করে সুবিনয় মুস্তাফির সেক্রেটারির নম্বর বার করলেন এবং আমাদের সামনেই খুব আকুল গলায় সেক্রেটারিকে সেই বানানো বিপদের কথা বলে মঙ্গলবার সন্ধেয় একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে নিলেন। প্রতি মঙ্গলবার সুবিনয় মুস্তাফি ওনার পুজোর ঘরে প্রেত নামান। তারপর ওনার পোষা ভূতেরাই মানুষের নানান সমস্যার সমাধান করে দেয়। এসব কথা হাতিবাগান মোড়ের ব্যানারে বড়-বড় করে লেখা আছে।
অবশ্য সেক্রেটারি এটাও বলে দিয়েছিলেন যে, অ্যাপয়েন্টমেন্টটা তখনই কনফার্মড হবে, যখন ওদের অ্যাকাউন্টে দীপার মা একহাজার টাকা ট্রান্সফার করবেন। মণিকাকিমার ডিকশনারিতে দেখলাম, ‘পরে’ বলে কোনো শব্দ নেই। টাকাটাও তখনই সুবিনয় মুস্তাফির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, রুবিক, তোকে দিনকে-দিন কী সুন্দর দেখতে হচ্ছে রে। গার্লফ্রেন্ডরা তোকে ছেড়ে থাকতে পারে?
দীপা অগ্নিদৃষ্টিতে একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আজই সেই মঙ্গলবার।
এখন আমি আর বুধোদা ক্যাফে-কফি-ডের ভেতরে বসে অপেক্ষা করছি, দীপার কাছ থেকে সেই ভূত নামানোর গল্প শুনব বলে। কিন্তু মিথ্যে বলব না, আমার বেশ চিন্তা হচ্ছে। কেবলই মনে পড়ছে, এর আগে প্রতাপবাবুকে ফলো করে সুবিনয় মুস্তাফির স্পাই উত্তরপাড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। কে বলতে পারে, গত রবিবার সেরকমই কোনো স্পাই আমাদের ফলো করে দীপাদের বাড়ি পৌঁছেছিল কিনা। তাহলে তো দীপা আর ওর মা’র পরিচয় তন্ত্রাচার্যের কাছে আর গোপন নেই। ওদের অ্যাটাক করে বসবেন না তো সুবিনয় মুস্তাফি?
তবে আর বেশিক্ষণ চিন্তা করতে হল না। সবেমাত্র বুধোদা কাউন্টারে গিয়ে বলেছে দুটো ‘ডেভিলস-ওন’ দেবেন, অমনি কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন মণিকাকিমা আর দীপা। বুধোদা দুটোর জায়গায় চারটে ডেভিলস ওনের অর্ডার দিয়ে টেবিলে ফিরে এল।
দীপা আর মণিকাকিমা আমাদের মুখোমুখি বসলেন। কফি আসার আগেই দুজনে যেভাবে একচুমুকে জলের গ্লাস শেষ করলেন, যেভাবে দোপাট্টা দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন আর থমথমে মুখে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তাতে আমার আর বুধোদার বুঝতে অসুবিধে হল না যে, ওনাদের অভিজ্ঞতাটা সহজ হয়নি।
বুধোদা নরম স্বরে জিগ্যেস করল, কী হল কাকিমা? কোনো ট্রাবলের মধ্যে পড়েছিলেন নাকি?
উঁহু। কাকিমা ঘাড় নাড়লেন। কিন্তু যা দেখলাম, সেটা এখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি কোনোদিন অলৌকিকে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু একে যদি অলৌকিক না বলি, তাহলে আর কীভাবে ব্যাখ্যা করব?
কাকে অলৌকিক বলছেন, একটু বলবেন।
কাকিমা যেন স্বপ্নের মধ্যে কথা বলছেন এইভাবে বলে গেলেন—
ঘরটা প্রায় অন্ধকার ছিল, বুঝলে বোধিসত্ব। শুধু একটা লাল নাইট ল্যাম্প জ্বলছিল। একটা গোল টেবিল ঘিরে পাঁচটা কাঠের চেয়ার, এছাড়া ঘরটার মধ্যে আর কোনো আসবাব ছিল না। ভিজিটর ছিলাম আমরা সাতজন। আমাকে আর দীপাকে বাদ দিলে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে আরও পাঁচজন ছিলেন। টুকটাক কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারলাম, সকলেই এমন সব সমস্যা নিয়ে এসেছেন এমনিতে যার সমাধান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারুর সন্তানের দুরারোগ্য অসুখ, কারুর মামলা-মোকদ্দমায় জমিবাড়ি সব বেহাত হয়ে গেছে, কারুর বা আবার ব্যবসা ডুবে গেছে। মানে এককথায় সকলেই হতাশ মানুষ।
আমরা সাতজন ছাড়া ওই ঘরে ছিলেন কেবল সুবিনয়বাবু আর ওনার মিডিয়াম—যার ওপরে প্রেত ভর করবে।
মিডিয়াম মেয়েটাকে দেখলেই কেমন যেন গা শিরশির করে ওঠে। মেয়েটা খুব রোগা, ফ্যাকাশে গায়ের রং। চোখদুটো আধবোজা। দেখলে মনে হয় ও নিজেই যেন একটা মৃতদেহ।
সিয়াঁসের কথা এর আগে অনেক গল্প-উপন্যাসে পড়েছি। কাজেই আত্মাকে আহ্বান করার জোগাড়যন্ত্র খুব একটা অচেনা লাগছিল না। আমাদের মধ্যে চারজনকে উনি ডেকে নিলেন টেবিলের পাশে বসার জন্যে। সেই চারজনের মধ্যে আমিও ছিলাম, আমি নিজেই এগিয়ে গিয়েছিলাম। এত কাছ থেকে বুজরুকি দেখবার চান্সটা কেন মিস করব, বলো।
আমরা চারজন আর সুবিনয়বাবু নিজে—টেবিলের চারিদিকে সাজিয়ে রাখা পাঁচটা চেয়ার এতেই ভরে গেল। সুবিনয় মুস্তাফি আমাদের দেখিয়ে একটা রাইটিং-প্যাড টেবিলের ওপরে রেখে দিলেন। প্যাডটার পাতাগুলো যে সাদাই ছিল তাতে সন্দেহ নেই। আমি নিজের হাতে উলটেপালটে দেখে নিয়েছিলাম। প্যাডটার পাশে একটা পেনসিলও রাখলেন। আমি জিগ্যেস করলাম, আপনার মিডিয়াম এখানে বসবেন না? সুবিনয় মুস্তাফি বললেন, না। আমার সিয়াঁসে মিডিয়াম নিজের হাতে উত্তর লেখে না। উত্তর লেখে অদৃশ্য হাত। আত্মা শুধু ওই লেখালেখির কাজটুকু করার জন্যে মিডিয়ামের শরীর থেকে এক্টোপ্লাজম টেনে নেয়।
সত্যিই মিডিয়াম মেয়েটি ঘরের অন্য একটা কোনায় গিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে বসে রইল। একগোছা ধূপ জ্বালিয়ে দিয়ে সুবিনয় মুস্তাফি কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য ভাষায় কীসব মন্ত্রটন্ত্র পড়লেন। তারপর আমাদের বললেন মন দিয়ে একটা নরকরোটির কথা ভাবতে, মানে মানুষের মাথার খুলির কথা। ওনার পোষা সেই ভূতের চেহারাটা নাকি সেইরকমই। কাজেই নরকরোটিকে ডাকলেই সে চলে আসবে।
এই অবধি সব ঠিকই ছিল, বুঝলে বোধিসত্ত্ব। কিন্তু মিনিট পাঁচেক পর থেকেই শুরু হল নানান অদ্ভুত কাণ্ড। প্রথমেই মনে হল আমাদের খুব কাছে দাঁড়িয়ে, কে যেন বিড়বিড় করে কীসব বলে যাচ্ছে। অথচ দীপারা বসেছিল অনেক দূরে। ওদের মধ্যে কেউই যে চেয়ার ছেড়ে ওঠেনি সেটা প্ল্যানচেটের টেবিলে বসেই দেখতে পাচ্ছিলাম। মিডিয়াম-মেয়েটিও আমাদের দিকে পিছন ফিরে তার নিজের জায়গাতেই বসেছিল। তাহলে কে টেবিলটার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে কথা বলছিল?
এর পরেই আমরা সবাই আঁতকে উঠলাম, কারণ দেখলাম পেনসিলটা নিজে থেকেই খাড়া হয়ে উঠেছে। নিজে থেকেই প্যাডের পাতার বাঁদিক থেকে ডানদিক, ওপর থেকে নীচে ঘোরাফেরা করে লিখে চলেছে। একটা করে পাতা ভরে গেলে, সুবিনয়বাবু সঙ্গে-সঙ্গেই পরের পাতাটা খুলে দিচ্ছেন…
এইখানে বুধোদা হঠাৎ কাকিমার কথার স্রোতে বাধা দিয়ে বলল, আপনি কাগজের ওপরে পেনসিলের শিষ ঘসার ‘খসখস’ শব্দটা পরিষ্কার শুনতে পেয়েছিলেন, তাই না?
কাকিমা অবাক হয়ে বললেন, হ্যাঁ, মানে পেয়েছিলাম তো। পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?
ঠিক। আপনি বলে যান, তারপর কী হল।
কাকিমা ভুরু কুঁচকে বললেন, জানি না তুমি কী সন্দেহ করছ। তবে একটা কথা সত্যের খাতিরে বলতেই হচ্ছে—সুবিনয় মুস্তাফির দুটো হাতই কিন্তু টেবিলের ওপরে উপুড় করে পাতা ছিল, ঠিক আমাদেরই মতন। ও ব্যাপারটা আমি খেয়াল রেখেছিলাম।
যাই হোক, প্রায় পনেরোমিনিট ধরে সেই পাগল-পেনসিল প্যাডের পাতার ওপরে দৌড়োদৌড়ি করে তারপর একসময় আছড়ে পড়ল মেঝের ওপরে। সুবিনয় মুস্তাফি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালেন। ঘরের আলো জ্বেলে আমাদের সবার গায়ে-মাথায় শান্তিজল ছিটিয়ে দিলেন। তারপর প্যাডটা খুলে ধরলেন আমাদের সামনে।
সপ্তদ্বীপা ডেভিলস ওনের গ্লাসটা মুখ থেকে নামিয়ে বলল, তখন কিন্তু আমাদেরও উনি ডেকে নিয়েছিলেন। আমরাও দেখলাম—একটু আগে যে প্যাডের প্রতিটা পাতা ছিল দুধের মতন সাদা, সেই পাতাগুলোই বাংলা অক্ষরে ভরে গিয়েছে। একের পর এক ছ’জন ভিজিটরের ছ’রকম প্রবলেমের সলিউশন লেখা ছিল। তবে…কথাটা শেষ না করেই দীপা মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে ফেলল।
বুধোদা মজা-পাওয়া মুখ করে বলল, কী হল রে? এত হাসছিস কেন?
আমাদের জন্যে পোষা ভূত কী লিখে গিয়েছিল জানো? লিখেছিল, বাবাকে নর্থ-ইস্টের টেররিস্টরা কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে। উনি যাতে ভালোয়-ভালোয় ফিরে আসেন তার জন্যে তন্ত্রাচার্যকে দিয়ে একটা যজ্ঞ করাতে হবে।
কাকিমা বললেন, যজ্ঞের আর দরকার পড়বে না মনে হয়। ওই দেখো, কিডন্যাপড লোকটা এখানে এসে হাজির হয়েছে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন