সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
দহনক্লান্ত দুপুরবেলার ঝাঁজে
অন্যমনে চলেছিলুম রিক্ত পথের মাঝে।
ছিল নাকো অন্তরে আর আশা;
দুঃস্থ মাথার চিন্তাগুলো কণ্ঠে খুঁজে পাচ্ছিল না ভাষা;
হচ্ছিল বোধ অবুঝ হৃদয়খানা
কুলায়বিমুখ চিলের মতো মুক্তাকাশে প্রসার ক’রে ডানা
দিচ্ছে পাড়ি মৃত্যু-অভিযানে
আত্মঘাতী ঊর্ধ্বরবির অগম চিতার পানে;
বক্ষে খালি
হুমকে ওঠে শূন্যতা আর ফল্গুনাশা বালি
আত্মগ্লানির ঘূর্ণিবেগে আপনাকে দেয় উড়িয়ে দিগন্তরে
যেথায় অবিরত
নেচে নেচে গাজনপাগল বৈরাগীদের মতো
দশা পেয়ে শীর্ণ হাওয়া মরে।
এমন সময় আড়াল থেকে রঙ্গনিপুণ নাগরিকার প্রায়
প্রাণদেবতা হঠাৎ ছুঁড়ে মারলে আমার গায়
পীত-লোহিতের চূর্ণমুঠি গুলমৌরের ফুলে।
চমকে উঠে দেখলুম চোখ তুলে;
মনে হল পত্রবিরল গাছের অন্তরালে
কোন্ চরণের সোনার নূপুর বেজে বারেক নাম-না-জানা তালে
লুকিয়ে গেল ধরা পড়ার আগে;
রোমাঞ্চিত হল শরীর কিসের অনুরাগে।
জানি না সে স্বপ্ন কিনা; কিন্তু যদি স্বপ্ন বলেই মানি,
নয় কি আরও অসার স্বপন আর বছরের শুকনো মালাখানি?
১৪ মার্চ ১৯৩১
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন