সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
জনাকীর্ণ রঙ্গালয়। ধূমাঙ্কিত তরল আঁধারে
বাক্যহীন গুঞ্জরণ মাথা ঠুকে মরে চক্রাকারে
মাতাল অন্ধের মতো। অলক্ষিত, আতপ্তশরীর,
নাগরকীর্তনমুগ্ধ, বিদেশিনী প্রতিবেশিনীর
সবিরাম মূঢ় হাস্য করিতেছে ইন্দ্রিয়গোচর
কামার্ত নারীর সত্তা। শুভ্র পটভূমিকার ’পর
আসে যায় জীবনের দ্বিরায়তনিক অনুকৃতি।
নিঃসার ছায়ার ছায়া, অকিঞ্চন মুহূর্তের স্মৃতি
বাস্তবেরে ব্যঙ্গ করে। দৈনন্দিন ব্যর্থতার শেষে
নপুংসক গড্ডলিকা আসিয়াছে রসালু আবেশে
সচিত্র স্বপ্নের রাজ্যে খিন্ন দেহে, সর্বভুক মনে।
ধ্রুপদী সংগতি, সত্য বিতাড়িত দূর নির্বাসনে
ও-বিপ্লবী চিত্র হতে। অর্বাচীন খেয়ালের সারি
উপদ্রুত হট্টমাঝে ফিরে যেন অবাধে চিৎকারি
অনভিজাতিক দম্ভে।।
অসংবদ্ধ তুচ্ছ আখ্যায়িকা
শেষ হয় অকস্মাৎ, জ্ব’লে ওঠে লক্ষ দীপশিখা
উদ্বেজিত গৃহমাঝে; ঐকতানে কাংস্য কোলাহল
দর্পভরে দাবি করে সম্রাটের ঐহিক মঙ্গল
আশ্রিত বিধির কাছে; ঘন ঘন দিয়ে করতালি
পরিতপ্ত প্রেক্ষণিক বাহিরায় মদনাগ্নি জ্বালি
আনগ্ন নাগরীসাথে। আমি শুধু সে-বাচাল ভিড়ে
স্বতন্ত্র দাঁড়ায়ে থাকি, শৈল যথা পরিচ্ছিন্ন শিরে
নিষ্প্রাণ, নির্লিপ্ত রহে উদ্বেল ঊর্মির আলিঙ্গনে।।
সহসা আমার অঙ্গ ভ’রে গেল দিব্য রোমাঞ্চনে;
ভেসে এল ছিন্ন হয়ে উতরোল জনস্রোত হতে
তোমার আননখানি নয়নের পিণ্ডীর সৈকতে,
হে চির অপরিচিতা। একবার তরল কৌতুকে
বাঁকায়ে উন্নত গ্রীবা, অপাঙ্গে তাকায়ে মোর মুখে
তিমিরে মিলালে তুমি দীপান্বিত দেহলী উত্তরি।।
অন্তগূঢ় প্রত্যাদেশে বেষ্টনীর বৈরিতা পাসরি
ছুটিনু পদাঙ্কে তব। সহসা সম্মুখে জুড়ে দ্বার
উন্মার্গবিবাগী কোনও সদ্যশুদ্ধ সর্ববল্লভার
বয়স্থ বিশাল বপু বিস্তারিল বর্ধিষ্ণু বিচ্ছেদ
তোমার আমার মাঝে। অতিক্রমি সে-মণ্ডিত মেদ
দেখিনু বাহিরে আসি, পরিপূর্ণ রাজপথমাঝে
উত্তাল ঘূর্ণির মতো শূন্যকেন্দ্র জনতা বিরাজে;
শুধু তুমি অন্তর্হিত; ভ্রষ্ট লগ্ন; সমাপ্ত সুযোগ।
আবার নিষ্ফল হল আজন্মের বিরাট উদ্যোগ।
২০ ভাদ্র ১৩৩৫
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন