সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
অধোমুখ আকাশের পানপাত্র থেকে
আবার মাথায় ঝরে নীলারুণ সন্ধ্যার মাধুরী
সুরাসম স্বচ্ছ, ফেনোজ্জ্বল।
পুনরায় পরিপুত প্রতি রোমকূপে
মাগে অন্ধ উন্মাদনা রুক্ষ মর্মে অবাধ প্রবেশ।
অন্তরের আগ্নেয় গহ্বরে
শত জন্ম-জন্মান্তের নির্বিকার অভাব সহসা
আমগ্ন কি স্বপ্নবিষ্ট ঘুমে?
জীবনগণিকা
ঘৃণ্য সংক্রামক ব্যাধি প্রসাধনে ঢেকে,
সার্বজন্য অভিসারে ডেকে
ভুলাবে কি আত্মহারা পুরাণপুরুষে?
ভাগী হয়ে মর্ত্যের কলুষে
ষড়যন্ত্রীদের সঙ্গে সমস্বরে সেও কি রটাবে,
পৃথ্বীর বিষাক্ত স্তন পীন সুধাস্রাবে?
রে মোহিনী,
এবারে হবে না স্থায়ী মায়ার চাতুরী।
বশীকরণের মদে উচ্ছ্বসিত নীলার পেয়ালা
ইতিমধ্যে পদান্তে লুটায়;
উবে যায় মহাশূন্যে বুদ্বুদের চিত্রল বিলাস।
আজি আর
মুদিব না অবসাদে তমন্ত্ৰমু আঁখি;
শর্বরীর রুগ্ণ মুখ ভ’রে গেলে মারী গুটিকায়
ভাবিব না উৎসুক অমরা
আমাকে ও-পার থেকে আরাত্রিকে আহ্বান পাঠায়;
ছাড়িব না হিংসাব্রত;
গুহাবাসী নৃসিংহেরে বাঁধিব না শীলের শৃঙ্খলে,
পরাব না সভ্যতার শ্লীল ছদ্মবেশ;
ঢাকিবারে গলিত শবের গন্ধ
রজনীগন্ধার গুল্ম করিব না শ্মশানে রোপণ;
নারীরূপী কঙ্কালের প্রলোভনে ভুলে
বীর্যের অনন্তশয্যা পাতিব না বিকচ মশানে;
চাহিব না পাসরিতে প্রাক্তন পিপাসা
অহরহ অনির্বাণ
ঘৃতপুষ্ট সন্তুষ্টির তপ্ত রক্ত বিনা।।
ভগবান, ভগবান, য়িহুদির হিংস্র ভগবান,
ভুলেছ কি আজি দুঃশাসনে?
ধেয়ে এসো রুদ্র রোষে, ধেয়ে এসো উন্মত্ত হুংকারে,
ধেয়ে এসো
এলায়ে বিশাল জটা, অরুন্তুদ অশনি আস্ফালি,
ধেরে এসো চণ্ড ক্ষোভে দ্বৈরথ সমরে।
দাও মোরে দাও শত্রু দাও।
সহে না সহে না আর জনতার জঘন্য মিতালি।
প্রণয়ের মমত্ববন্ধনে,
পতঙ্গের সাম্যবাদে, কৃপাজীবী ক্লীবের ক্রন্দনে,
হে ভৈরব, জীবন দুঃসহ
দহো সৃষ্টি দহো,
শতপ্রসূ ধরিত্রীরে নাশো,
ঊষর মরুর মাঝে স্তরে স্তরে সাজাও কঙ্কাল।
মহাকাল,
আজিকে উদ্গীর্ণ করো উদ্বেষ্টিত উপকণ্ঠ হতে
প্রাগৈতিহাসিক বিষ;
পাতালের পথ থেকে তুলে নাও সকল অৰ্গল।
পদাহত ব্ৰহ্মাণ্ড আবার
ডুবে যাক আচম্বিতে অনাদি অমায়।।
চাহি না মৃত্যুরে আমি; স্বপ্নগর্ভ সেও নিদ্রাসম
সখার সংসর্গে দুঃস্থ, আত্মীয়ের বিলাপে বিহ্বল।
হানো তীক্ষ্ণ সর্বনাশ, তীব্র ক্ষতি, বৈরিতা নির্মম;
জুগুপ্সার শক্তি দাও, দাও মোরে নির্গুণ নিৰ্বাণ।।
২৮ ফেব্রুআরি ১৯৩১
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন