সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
বরষাবিষণ্ণ বেলা কাটালাম উন্মন আবেশে।
জনশূন্য হৃদয়ের কবাট উদ্ঘাটি
স্মরণের চলাচল করিলাম সহজ, সরল।
দৃষ্টিহারা নেত্রপাতে দেখিলাম সন্নত আকাশে
এইমতো আর এক দিবসের ছবি।
অবিশ্রান্ত বৃষ্টির বিলাপে
শুনিলাম সে-কণ্ঠের স্নেহসম্ভাষণ
অৰ্গলিত বাতায়নে ঝটিকার নিরর্থ আক্রোশে
বিচ্ছেদবিধ্বস্ত হিয়া বাখানিল ক্ষুব্ধ অক্ষমতা
নির্বিকার, নিরুত্তর, রুক্ষ বিধাতারে।
এল সন্ধ্যা রিক্তবরিষণ;
দিনান্তের মুমূর্ষু বর্তিকা
প্রাক্নির্বাপণ দীপ্তি প্রজ্বলিত করিল সহসা
প্রাণের অন্তিম শক্তিব্যয়ে;
তার পর অন্তরে, বাহিরে
অন্ধকার বিস্তারিল শবপ্রাবরণী।
মনে হল আশা নাই,
মনে হল ভাষা নাই পিঞ্জরিত ব্যর্থতা বলার।
মনে হল
সংকুচিত হয়ে আসে মরণের চক্রব্যুহ যেন।
মনে হল ব্রহ্মচারী মূষিকের মতো
শটিত জঞ্জালকণা কুড়ায়েছি এত কাল ধ’রে
কৃপণের ভাণ্ডারে ভাণ্ডারে;
এইবার ফুরায়েছে পালা,
ঘাতক যন্ত্রের কারা অবরুদ্ধ হল অবশেষে;
এইবার উত্তোলিত সম্মার্জনীমূলে
পিষ্ট হবে অচিরাৎ অকিঞ্চন উঞ্ছবৃত্তি মম॥
৩০ জুন ১৯৩২
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন