অভীক সরকার
স্তম্ভিত হয়ে গেল বিদ্রোহী বাহিনী। তাদের প্রধান নেতাকে নিহত হতে দেখে তাদের মধ্যে পরাজয়ের ভয় চারিয়ে গেল।
কালকূটসেনা দ্বিগুণ উৎসাহে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হল। তারা তখন জয়ের গন্ধ পাচ্ছে।
পরিস্থিতি বুঝলেন পদ্মসম্ভব। তিনি উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে উঠলেন, ‘বাংলাদেশের সন্তানদল, তোমরা ভয় পাচ্ছ? ভয় পেও না। ওই দেখ, সমগ্র গৌড়বঙ্গ আজ তোমাদের দিকে চেয়ে আছে। ওঠো, জাগো, উঠে দাঁড়াও। ফিরে তাকাও, প্রত্যাঘাত করো। ওরা চায়, ওদের দেখে আমরা কাঁপতে থাকি। আমরা কি ওদের সেই আশা পূর্ণ করব? আমরা কি সেই মায়ের ছেলে? মনে রেখো, এই দেশ তোমার জন্ম দিয়েছে, তোমাকে ধারণ করেছে, লালন পালন করেছে। আর আজ তোমরা সেই দেশের জন্য প্রাণ দিতে পিছপা হচ্ছ? সামনে তাকিয়ে দেখো, কয়েক হাজার কাপুরুষ দাস এক লোভী ঐন্দ্রজালিকের জন্য অস্ত্র ধরেছে। আর নিজেদের দিকে তাকাও, দেখো—আমরা নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাব বলে অস্ত্র ধরেছি। এসো, দেখিয়ে দিই আমরা কতটা ভয়ঙ্কর! ওদের মনে করিয়ে দাও যে আমরা সিংহজাতক, আমরা এই বঙ্গদেশের নির্ভীক দামাল সিংহজাতক…’
মরতে মরতেও উজ্জীবিত হয়ে উঠল কিরাতশবরসেনা। শেষবারের মতো অস্ত্র তুলে ধরল তারা। তাদের চেতনার মধ্যে চারিয়ে গেল এই মহামন্ত্র—হয় স্বাধীনতা নয় মৃত্যু।
বঙ্গদেশের ভূমিপুত্ররা তাদের মাতৃভূমির নামে সংশপ্তক যুদ্ধে রত হল।
মৎস্যেন্দ্রনাথ দ্বৈরথ সমরে রত হলেন প্রকাশচন্দ্রের সঙ্গে। প্রকাশচন্দ্রের মুখে তখন ব্যঙ্গের হাসি। তাঁর মনোবল দ্বিগুণ। তিনি যেন অনেকটা খেলাচ্ছলেই প্রতিহত করতে লাগলেন মৎস্যেন্দ্রনাথের প্রতিটি আক্রমণ।
এদিকে বিদ্রোহীদের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায়। অধিকাংশই আহত বা নিহত। কালকূটসেনা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, অনেক বেশি রণদক্ষ, অনেক বেশি কৌশলী। তাদের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। তারা পুনরায় ছোট ছোট বৃত্তে ঘিরে ধরতে লাগল প্রতিটি বিদ্রোহী নেতাদের।
দেদ্দদেবী আর পারছেন না। তাঁকে ঘিরে অন্তত দশজন কালকূটসেনা। তাদের আড়ালে তাঁকে আর দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে যুদ্ধ করতে করতে পড়ে গেলেন শান্তরক্ষিত। দ্রুত তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলল একদল সৈন্য।
পদ্মসম্ভব আর মন্দর্ভা পাশাপাশি যুদ্ধ করছিলেন। ক্লান্ত শ্রান্ত পদ্মসম্ভব যতটা পারছিলেন আড়াল করে রাখছিলেন মন্দর্ভাকে। কিন্তু তাঁর অস্ত্রচালনা ক্রমেই লক্ষ্যহীন, অব্যবস্থিত, বিশৃঙ্খল হয়ে উঠছিল। জয়ের গন্ধ পেয়ে কালকূটসৈন্যরা দ্বিগুণ বেগে আক্রমণ করল তাঁকে। সুযোগ বুঝে কেউ একজন সজোরে আঘাত করল তাঁর ডান হাতে। তাঁর দা’ও ছিটকে পড়ে গেল। অন্য হাতের অসিটি বহু আগেই ভগ্ন হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনিও পারলেন না। দশজন ঝাঁপিয়ে পড়ল তাঁর ওপর। তাঁর দু’হাত চেপে ধরল চার জন বলশালী সৈন্য। পায়ে বেড়ি বেঁধে দিল কেউ।
মন্দর্ভার হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে কেউ একজন সজোরে চপেটাঘাত করল তাঁর গালে। তিনি পড়ে গেলেন। তাঁর মুখ ফেটে রক্ত বেরিয়ে এল।
যুদ্ধ করতে করতে হঠাৎ থেমে গেলেন প্রকাশচন্দ্র। থমকে গেলেন মৎস্যেন্দ্রনাথও। নিজের মহাখড়্গ তুলে সেই দৃশ্যটি মৎস্যেন্দ্রনাথকে দেখালেন প্রকাশচন্দ্র। তারপর শান্তস্বরে বললেন, ‘কী যোগীবর, এখনও যুদ্ধের সাধ আছে?’
সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ নির্নিমেষে তাকিয়ে রইলেন মৎস্যেন্দ্রনাথ। তাঁর হাত থেকে ত্রিশূলটি মাটিতে পড়ে গেল ঝনঝন শব্দ তুলে।
অবশেষে তিনি পরাজিত। সর্বাংশে, সামূহিকভাবে পরাজিত। এই ধুরন্ধর ঐন্দ্রজালিকের কূটকৌশলের কাছে পরাস্ত হয়েছে তাঁর যাবতীয় পরিকল্পনা, সমস্ত যুদ্ধপ্রস্তুতি। তাঁর বিপ্লবকল্পনার নায়কেরা সকলেই পরাজিত। মহাবীর জয়াপীড় অজ্ঞান, নিশ্চেষ্ট। যোদ্ধৃশ্রেষ্ঠ বপ্যট নিহত। খুব সম্ভবত গোপালদেবও ইতিমধ্যেই নিহত। পদ্মসম্ভব, শান্তরক্ষিত, মন্দর্ভা, দেদ্দদেবী ধৃত। অন্যান্য শৈবযোগী এবং সহজিয়া সাধকদের অধিকাংশই মৃত অথবা সাঙ্ঘাতিকভাবে আহত। তাঁর সমস্ত পরিকল্পনা এখন উলঙ্গ, মৃত বরাহের মতো অনাবৃত শুয়ে আছে নির্মম কসাইয়ের সামনে।
প্রকাশচন্দ্রের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন মৎস্যেন্দ্রনাথ। দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই সমস্ত কর্মকাণ্ড আমারই ইঙ্গিতে চালিত হয়েছে আর্য প্রকাশচন্দ্র। আমিই এর একমাত্র দায়ভাগী, একমাত্র অপরাধী। যা শাস্তিবিধান এদের যোগ্য হয়, সে শুধু মাত্র আমারই প্রাপ্য। আমার কাতর অনুরোধ, এদের ছেড়ে দিন। বিনিময়ে আপনি আমাকে বন্দি করুন। কথা দিচ্ছি, যা শাস্তি দেবেন, মাথা পেতে নেব।’
মৎস্যেন্দ্রনাথের বুকে সজোরে লাথি মারলেন প্রকাশচন্দ্র। মৎস্যেন্দ্রনাথ ছিটকে পড়ে গেলেন সামান্য দূরে। ধীরে ধীরে সেখানে এসে দাঁড়ালেন প্রকাশচন্দ্র। একটা অশ্রাব্য শব্দ উচ্চারণ করলেন৷ তারপর নীচু হয়ে বাঁহাতে লোকেশ্বর মৎস্যেন্দ্রনাথের চুলের মুঠি ধরে তাঁকে সেই ধূলিধূসরিত রণভূমি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে চললেন মন্দর্ভা আর পদ্মসম্ভবের দিকে।
.
ধীরে ধীরে বনচর মানুষটি উঁকি দিল গিরিপথের পাথরের আড়াল থেকে। তার মুখ দেখে তার মনোভাব বোঝা ভার।
তারপর তার পাশে মাথা বাড়াল আরও কয়েকটি উলঙ্গ নারী। তাদের মুখে এক দুর্বোধ্য হাসি ফুটে উঠল।
তারা যখন যুদ্ধের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত, তখন একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছিল চণ্ডকীর্তি। আশা করা যায় যে এই পিশাচী ডাকিনীদলের কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে৷ এবার সে নিশ্চিন্তে তার পৈতৃক প্রাণটি নিয়ে সরে পড়তে পারে।
ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছিল সে। আর একটু ডানদিকে, ব্যস। তারপরেই একটি গোপন গিরিগুহা আছে, যার মধ্যে ঢুকে পড়তে পারলেই সে একেবারে নিশ্চিন্ত। গুহামুখটি চট করে বোঝা যায় না। আর পাথর দিয়ে বন্ধ করে দিলে তো কথাই নেই, এরা আর তার নাগাল পাবে না। গুহার অন্য মুখটি শালিবন বিহারের পিছনে মেঘান্দর তীরে কোথায় উন্মুক্ত হয়, তা সে ভালোভাবেই জানে।
আর দু’পা। আর একটা বাঁক। মুক্তি ঠিক তার সামনে।
ডানদিকে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সে। গুহামুখ খালি। কেউ নেই।
ডানদিকে ঘুরল চণ্ডকীর্তি। আর একটি মাত্র পদক্ষেপ। তারপরেই সে মুক্ত।
ঠিক তখনই পিছন থেকে কে যেন টেনে ধরল তার চুল। আর একটা বীভৎসদর্শন খড়্গ সবেগে নেমে এল তার কণ্ঠার ওপর। একেবারেই মুক্তি পেয়ে গেল চণ্ডকীর্তি।
.
মাটিতে পড়ে ধুঁকছিলেন পদ্মসম্ভব। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন শ্রান্তক্লান্ত পরাজিত সিংহকে ঘিরে ধরেছে একদল রক্তপিপাসু তরক্ষু।
প্রবল রক্তক্ষরণে অজ্ঞানপ্রায় দেদ্দদেবীর চুলের মুঠি ধরে টেনে আনল একদল কালকূটসেনা। তারপর হিংস্র শ্বাপদের দল ঘিরে ধরল কয়েকটি শ্রান্তক্লান্তক্ষিপ্ত মৃতপ্রায় শরীরকে।
মৎস্যেন্দ্রনাথকে সামান্য ভিক্ষুকের মতো টেনে আনতে দেখে উৎসাহে উল্লাসে ফেটে পড়ল সেই শ্বাপদের দল। তারপর তারা দাঁড়াল প্রকাশচন্দ্রকে ঘিরে।
নিজের রক্তস্নাত মহাখড়্গ কোষবদ্ধ করলেন প্রকাশচন্দ্র। তারপর প্রসন্নমুখে বললেন, ‘অভিনন্দন, হে বিজয়ী বীরেরা। তোমাদের বলদর্পেই এই বিশ্বাসঘাতক বিদ্রোহীকূল পরাস্ত হয়েছে৷ এসো, এবার তোমাদের বিজয়স্মারক গ্রহণ করো। আপাতত এই দুই যুদ্ধবন্দিনী নারীদের ভোগ করে তোমাদের কামতৃষা মিটুক। জেনে রাখো, যুদ্ধবন্দিনী ধর্ষণ অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত, কারণ আমি, একেশ্বর প্রকাশচন্দ্র, তাকে বৈধ করেছি তোমাদের জন্য…’
বলতে বলতেই নীচু হয়ে মন্দর্ভার ঊর্ধ্বাঙ্গের বস্ত্র টেনে নিলেন প্রকাশচন্দ্র। মন্দর্ভার বরাঙ্গের স্তনদুখানি অনাবৃত হয়ে পড়ল। নিরূপায় ব্যর্থ ক্রোধে চিৎকার করে উঠলেন পদ্মসম্ভব। সেই জান্তব চিৎকার শুনে কালকূটসেনার উল্লসিত হয়ে উঠল। তাদের অশ্লীল শিবারবে মুখরিত হয়ে উঠল চারিদিক।
মৎস্যেন্দ্রনাথ সজল আঁখিদুখানি বন্ধ করলেন। হা, ঈশ্বর এও দেখতে হবে তাঁকে?
তারপর তিনি ধ্যানস্থ হলেন।
.
এই তো! এই তো সেই যন্ত্র!
গোপালদেব অতি দ্রুত সেই যন্ত্রটি হাতে তুলে নিলেন। তিব্বতের পোনপুরোহিতদের গোপন গুহা থেকে উদ্ধার করে আনা সেই মহাস্ত্র, চন্দ্রবজ্র সব কিছু ঠিক আছে তো?
ধীরে ধীরে সেই নগ্ন, শীর্ণ, ক্লান্ত নারীশরীর ফিরে তাকাল তাঁর দিকে।
একখানি দীপ তখনও জ্বলছিল দীপাধারে। গোপালদেব তাঁর যন্ত্রের পলিতাটি থরথর হাতে সেই দীপালোকে সংযুক্ত করলেন।
.
.
হা-হা করে হেসে উঠলেন প্রকাশচন্দ্র। ব্যঙ্গস্বরে বললেন, ‘মহামান্য কুমার পদ্মসম্ভব দেখছি বীরগতি প্রাপ্তির জন্য বড়ই উতলা হয়ে পড়েছেন। ওরে, কে আছিস, এই অর্বাচীনের দেহটি এর প্রেয়সীর ওপরে ফেল। ওই বহুভর্তৃকা ডাকিনীকে ওর প্রেমাস্পদের রক্তে স্নান করা। তবেই তো আনন্দ অধিক হবে রে!’
কয়েকজন কালকূটসেনা টেনে হিঁচড়ে পদ্মসম্ভবের দেহটি উপুড় করে তুলে দিল মন্দর্ভার দেহের ওপর। বাকিরা উল্লাসে চিৎকার করে উঠল।
পদ্মসম্ভবের রক্তস্নাত চোখ দু’খানি চেয়ে রইল মন্দর্ভার দিকে। কত শতাব্দ-সহস্রাব্দের সঞ্চিত কথা যেন বয়ে গেল মৃত্যুক্ষুধাতুর দুই মানুষ মানুষীর দৃষ্টিসঙ্কেতে।
অত যন্ত্রণার মধ্যেও পদ্মসম্ভব ফিসফিস করে বললেন, ‘আর্যা, দেখা হবে শীঘ্রই।’
চোখ বুজলেন মন্দর্ভা। এই মুহূর্ত থেকেই তিনি মৃত।
প্রকাশচন্দ্র পদ্মসম্ভবের মুণ্ডচ্ছেদের জন্য তরবারি তুললেন৷
.
বহু কষ্টে ফিরে তাকাল সেই নগ্ন শীর্ণ নারী শরীর। তার সারা দেহ ভেঙে পড়েছে শ্রান্তিতে। প্রতি বিষপ্রয়োগের পর এই মৃত্যুগ্রাসী শ্রান্তি তাঁকে গ্রাস করে। তবে প্রতিবার সেই শ্রান্তিক্ষতে প্রলেপ দেয় একটি দৃশ্য। বিছানায় বা মেঝেতে শায়িত একটি মৃতদেহ।
এদিক ওদিক তাকালেন তিনি। কোথায় সেই কাঙ্ক্ষিত মৃতদেহ?
তারপর দৃষ্টি সামান্য ওপরে তুললেন তিনি।
তাঁর দুই ভ্রূর মধ্যে লক্ষ্যস্থির করে রয়েছে একটি ধাতব নল।
.
প্রকাশচন্দ্র তাঁর মহাখড়্গ তুললেন।
আর ঠিক সেই সময়েই একটি মহিষশিঙার তীক্ষ্ণ ধ্বনি সচকিত করে তুলল চারিদিক।
থেমে গেলেন প্রকাশচন্দ্র। স্তব্ধ হল কালকূটসেনাও। কোথা থেকে আসছে এই ধ্বনি? কে যুদ্ধহুঙ্কার তোলে কালকূটসেনার বিরুদ্ধে?
প্রত্যেকের দৃষ্টি ঘুরে গেল লালিম্ববন পাহাড়ের দিকে।
লালিম্ববনের ঠিক মধ্যস্থানে একটি উন্মুক্ত চাতাল। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশালকায় নগ্নদেহ বনচারী মানুষের অবয়ব। তার ঠিক পিছনে অস্ত যাচ্ছেন দেব দিবাকর।
পদ্মসম্ভব বহুকষ্টে সেদিকে তাকালেন একবার। তারপর অস্ফূটস্বরে বললেন, ‘শবরবজ্র!’
কজঙ্গলের অরণ্যসম্রাট শবরবজ্র দুহাত ওপরে তুলে ধরলেন। তারপর ভীমনাদে চিৎকার করে উঠলেন, ‘কালী, কালী রে!’
মুহূর্তপর একটি খর্বকায় অথচ অতি সুঠাম নারীশরীর এসে দাঁড়াল তাঁর ডানপাশে। তার কোমরে বন্যবাকলের আবরণ। ঊর্ধ্বাঙ্গের অতি সুডৌল স্তন দুটি অনাবৃত। কুঞ্চিত কেশরাশিদাম নেমে এসেছে কটিদেশ অবধি।
চোখ ভয়ঙ্কর লাল। তার গলায় ঝুলছে নরকরোটির মালা। তার ডানহাতে একটি অতি বৃহৎ, অতি বীভৎস, অতি ভয়াল দা’ও।
আর তার বাঁ-হাতে একটি মুণ্ড। চণ্ডকীর্তির কাটা মুণ্ড।
ধীরে ধীরে সেই উলঙ্গিনী খড়্গধারী নারীমূর্তির পাশে এসে দাঁড়াল আরও শত শত উলঙ্গ রমণীর দল।
কালী নামের নারীটি একবার মুখ তুলে তীক্ষ্ণ উলু উলু ডাক তুলল। সঙ্গে সঙ্গে অন্য নগ্ন ডাকিনীরাও সমস্বরে ডেকে উঠল উলু উলু ধ্বনিরবে। ডেকে উঠল শত শত শৃগালের দল।
সেই সমবেত তীব্র-তীক্ষ্ণ ভয়াল চিৎকারে চমকে উঠল লালিম্ববন পাহাড়। চমকে উঠল কলস্বিনী মেঘান্দ। চমকে উঠল বিশ্বচরাচর।
তারপর তারা নেমে আসতে থাকল লালিম্ববনের দেহ বেয়ে।
প্রকাশচন্দ্র স্তম্ভিত চোখে দেখলেন—লালিম্ববন পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে শত শত নগ্ন নারীদের দল। নেমে আসছে বন্যার মতো, উল্কার মতো, দাবানলের মতো, ধ্বংসের মতো। তাদের মুখে সেই হাড়হিম করে দেওয়া উলু উলু ধ্বনি।
আর তাদের সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে আসছে ক্ষুধার্ত, হিংস্র, বন্য শিবাদল!
প্রকাশচন্দ্র ধীরে ধীরে পিছতে লাগলেন। পিছু হটতে লাগল তাঁর গর্বের কালকূটসেনাদলও। কারণ বন্য শিবাদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেই।
.
বাতাস কেটে ভেসে আসা অগ্নিপিণ্ডটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন মহারানি। মুহূর্তের মধ্যেই তাঁর ভ্রূমধ্যে আছড়ে পড়ল সেই মৃত্যুর অগ্নিদূত। চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল তাঁর কপাল। আর সেখান থেকে ছিটকে বেরোল একরাশ তরল।
না, লাল নয়, সেই রক্তের রঙ কালো। ঘন অন্ধকারের মতো কালো।
বঙ্গদেশের একচ্ছত্রাধিপ রানির দেহটি পড়ে গেল মাটিতে। আর ধীরে ধীরে সেই নগ্ন শীর্ণ দেহ গলে যেতে লাগল, মিশে যেতে লাগল সেই একরাশ ঘনকৃষ্ণ তরলের মধ্যে।
.
নিজের বাম হাতের তর্জনী তুলে ধরলেন প্রকাশচন্দ্র। কালো হয়ে গেছে সেটি।
তার মানে রানি মৃত? কিন্তু, কিন্তু কী করে?
অবাক হওয়ারও সময় পেলেন না প্রকাশচন্দ্র। সেই নরমাংসলোলুপ ডাকিনীর দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁর সৈন্যদের ওপর। ঝাঁপিয়ে পড়েছে রক্তপায়ী শৃগালের ঝাঁক।
উল্টোদিকে ফিরে ছুটতে শুরু করলেন প্রকাশচন্দ্র। এরা তাঁকে ধরতে পারবে না। দৌড়তে দৌড়তে তাঁর রথের বাহন একটি ষণ্ডকে সামনে পেয়ে গেলেন তিনি। তার ওপর চড়ে বসলেন প্রকাশচন্দ্র। তাঁর অবয়ব মিলিয়ে গেল বহুদূর।
আর খানিকক্ষণ থেকে গেলে দেখে যেতে পারতেন প্রকাশচন্দ্র, শালিবন বিহারের সামনের প্রান্তর থেকে অতি ভীমনাদে, শত সহস্র ভৈরবীকণ্ঠে জয়ধ্বনি উঠছে, ‘জয় গৌড়, জয় বঙ্গ, জয় শশাঙ্ক।’
.
সেই মহাযুদ্ধের প্রায় এক পক্ষকাল পর এক শুক্ল ত্রয়োদশী। একদিন পূর্বেই খণ্ডিতারাতি বপ্যটসহ সমস্ত মৃত বিদ্রোহী নায়কদের শ্রাদ্ধবিধি সুসম্পন্ন হয়েছে৷ আচার্য শান্তরক্ষিত স্বয়ং সেই শ্রাদ্ধকার্যের ভার নিয়েছেন। মাতৃভূমির ধর্ম রক্ষার্থে, স্বাধীনতা রক্ষার্থে উৎসর্গীকৃত প্রতিটি প্রাণ যেন তুষিতস্বর্গে স্থান পায়, অবলোকিতশ্বরের কাছে এই কামনাই করেছেন তিনি।
সেইদিন প্রভাত থেকেই বজ্রযোগিনী মন্দিরের সামনে ভেঙে পড়েছে উৎসাহী মানুষের ঢল। চারিদিকে স্বতস্ফুর্ত উৎসবের রেশ। প্রতিটি গৃহবাসী নিজ নিজ বাসস্থান ফুলমালা আর শোলার সাজে সাধ্যমত সাজিয়েছে। হেমন্তশেষের মৃদু উষ্ণ বাতাসে বসন্তের আগমনের বার্তা সুস্পষ্ট। সেই বাতাসে মুক্তির স্বাদ, স্বাধীনতার আস্বাদ। আর তারই ছোঁয়া পেতে দলে দলে শিশু বৃদ্ধ যুবক যুবতী ভিক্ষু বণিক সন্ন্যাসী সংসারী সবাই ছুটে চলেছে মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের সামনে।
মন্দিরের ঠিক সামনে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গদেশের রাজসিংহাসন। প্রশস্ত সিংহাসনটি স্বর্ণনির্মিত। তার চার কোণে চারটি অনুচ্চ রৌপ্যস্তম্ভ। স্তম্ভগুলি বহুবিচিত্র কারুকার্যখচিত। প্রতিটি স্তম্ভের মাথায় একটি করে সিংহমূর্তি।
সেই সিংহাসনের একদিকে বসে আছেন গোপালদেব। তাঁর পরিধানে পায়ের কণ্ঠা অবধি লম্বিত একখানি কাপাসবস্ত্রের ধুতি। তার শেষপ্রান্তটি ঘুরিয়ে এসে সামনে কটিবন্ধের সামনে দুলছে। তাঁর সুবিশাল ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত। তাঁর ঘনকুঞ্চিত কেশদাম নেমে এসেছে কাঁধ অবধি৷ তাঁর উদ্ধত গ্রীবাদেশে, প্রশস্ত স্কন্ধে, আর চন্দনচর্চিত বলিষ্ঠ বাহুদেশে রাজলক্ষণ সুস্পষ্ট। তাঁর ভুজবন্ধে সুবর্ণ অঙ্গদ। তাঁর গলায় সোনার হার। তাঁর চোখদুটি শান্ত, গভীর এবং সমাহিত।
গোপালদেবের বাঁ পাশে বসে আছেন দেদ্দদেবী। দেদ্দদেবীর পরণে একখানি অতি শুভ্র রেশম শাড়ি, তার পাড় এবং আঁচলটি লাল রঙে ছোপানো। কোমল বক্ষ পটবস্ত্র আবৃত। শাড়ি এবং স্তনপট্ট মন্দর্ভার, তিনি ভগিনীসমা দেদ্দদেবীকে উপহার দিয়েছেন। দেদ্দদেবীর চোখ দু’খানি কাজলে আঁকা৷ কপালের মধ্যিখানে একখানি রক্তচন্দনের টিপ, তাকে ঘিরে অতি অপূর্ব শ্বেতচন্দনের কল্কা। দেবীর পায়ে লাক্ষারস অলক্তক। তাঁর দুহাতে অতি শীর্ণ দুখানি লৌহকঙ্কন, দুটি শঙ্খবালা এবং দুটি রক্তলাল প্রবালের চুড়ি। তাঁর সর্বাঙ্গে আর্দ্র চন্দনপঙ্কের চিত্রকলা। ঘনকৃষ্ণ কেশদাম সুউচ্চ চূড় করে বাঁধা। এই কবরীবন্ধন বড় সাধ করে বেঁধে দিয়েছেন শবরবজ্রের সঙ্গে আগত ভৈরবীরা। এই খোঁপা কজঙ্গলের নারীদের বড় প্রিয়।
একটু পরেই একটি অতি বৃহৎ জলপূর্ণ ঘট নিয়ে এগিয়ে এলেন আচার্য শান্তরক্ষিত। ঘট গোপালদেবের পায়ের কাছে রাখলেন। আর একে একে দশজন এগিয়ে এলেন তাঁদের হাতে ধরা মৃত্তিকাখণ্ড নিয়ে।
প্রথমে এগিয়ে এলেন শবরবজ্র, কজঙ্গলের বরাহদন্তমৃত্তিকা নিয়ে। তারপর এগিয়ে এলেন কমলাঙ্ক গ্রামের শবরপ্রধান, হস্তিদন্তমৃত্তিকা নিয়ে। ভিক্ষুণী মন্দর্ভা নিয়ে এলেন গঙ্গামৃত্তিকা। কুমার পদ্মসম্ভব নিয়ে এলেন লালিম্ববন পাহাড়ের মাটি। কুমার জয়াপীড় নিয়ে এলেন প্রকাশচন্দ্রের রথষণ্ড দুটির শৃঙ্গধূলা। রাজবৈদ্য কুল্লুকভট্ট নিয়ে এলেন রাজপ্রাসাদদ্বারের প্রস্তরখণ্ড। মহাসামন্ত ধর্মসেন নিয়ে এলেন বল্মীকস্তূপের মাটি।
সবশেষে এলেন ভাঁড়ুদত্ত আর তাঁর প্রিয়তম কিঙ্কিণী মায়া! আর এলেন বিশুদ্ধকীর্তি এবং তাঁর সাধের নন্দিনী। বহুবিধ মরণান্তিক অভিজ্ঞতার পর তাঁরা দুজনেই ফিরে এসেছেন কর্মান্তবাসকে। মায়া নিয়ে এসেছেন তাঁর গৃহদ্বারের মৃত্তিকা। বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা!
আচার্য বিশুদ্ধকীর্তি, আচার্য শান্তরক্ষিত এবং লোকেশ্বর মৎস্যেন্দ্রনাথ সেই সব মৃত্তিকাংশ মিশিয়ে দিলেন জলপূর্ণ ঘটটিতে৷ তারপর সেই কলসটি তুলে ধরলেন মৎস্যেন্দ্রনাথ। ধারাস্নানে অভিষিক্ত করে দিতে লাগলেন গোপালদেবকে। সঙ্গে চলতে থাকল মন্ত্রপাঠ, ‘ওঁ রাজাধিরাজায় প্রসহয় সাহিনে। নমো বয়ং বৈশ্রবণায় কুর্মহে…’
ধারাস্নানে ভেসে যাচ্ছিল গোপালদেবের মস্তক। সেইদিকে তাকিয়ে চোখ বুজলেন শান্তরক্ষিত। তিনি পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ, এই উপচারের প্রতিটি অর্থ জানেন। রাজা পর্বতশিখরস্থ মৃত্তিকা দ্বারা মস্তক শোধন করবেন, অর্থাৎ শীতল মস্তিষ্কের দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করবেন। বল্মীকস্তূপমৃত্তিকা দ্বারা কর্ণশোধন করবেন, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ও যেন তাঁর গোচরে আসে। হস্তিদন্তমৃত্তিকা শোধন করবে তাঁর দক্ষিণহস্ত, যাতে তাঁর বাণিজ্য বিষয়ে মতি হয়। ষণ্ডদন্তমৃত্তিকায় বর্ধিত হবে তাঁর বাহুবল, সৈন্যশক্তি। রাজপ্রাসাদদ্বারের মৃত্তিকাস্পর্শে রাজ্যাধিকার বিষয়ে সম্যকরূপে অবগত হবেন৷ আর বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকায় তিনি রাজ্যের সর্ববিধ রূপগুণের উৎকর্ষসাধনে রত হবেন।
রাজ্যাভিষেকস্নান শেষ হওয়ার পর এগিয়ে এলেন বিনয়াদিত্য জয়াপীড়। প্রকাশচন্দ্রের মন্ত্রঃপূত অজেয় খড়্গ তুলে রাখলেন গোপালদেবের পায়ের কাছে। হাতজোড় করে নতমস্তকে বললেন, ‘আশা করি এতদিনে পিতামহের কলঙ্কমোচন করতে সমর্থ হয়েছি। আজ থেকে কাশ্মীরবাসীরা বঙ্গদেশের কাছ হতে ঋণমুক্ত হল। আমি, কাশ্মীর নরেশ বিনয়াদিত্য জয়াপীড়, বঙ্গদেশের অধীশ্বর গোপালদেবকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাচ্ছি।’
এগিয়ে এলেন মহাসামন্ত ধর্মসেন, নিজের কটিবন্ধনটি খুলে গোপালদেবের পায়ের কাছে রাখলেন। তারপর অতি বিনীতভাবে বললেন, ‘আজ হতে বঙ্গদেশের অনন্তসামন্তচক্র সম্রাট গোপালদেবের আজ্ঞাধীন হল। আমি, মহাসামন্ত ধর্মসেন, ন্যায় ও ধর্মের পথে থেকে সম্রাট গোপালদেবের জন্য জীবনপাত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রইলাম।’
এগিয়ে এলেন বৃদ্ধ গৌড়াধিপতি জয়ন্ত। স্মিতহাস্যে বললেন, ‘আমি পুত্রহীন, উত্তরাধিকারীহীন। আমার জামাতা মহাবীর জয়াপীড় স্থির করেছেন যে তিনি সস্ত্রীক কাশ্মীরে ফিরে যাবেন, গৌড়শাসনের ভার তিনি নেবেন না। তাই গৌড় ও পুণ্ড্রের শাসনভার আমি এই দণ্ডেই মহামতি গোপালদেবের শ্রীহস্তে সমর্পণ করলাম।’
চারিদিক মহাহর্ষধ্বনিতে পরিপূর্ণ হল। বহুজনের বহুদিনের লালিত অখণ্ড গৌড়বঙ্গের স্বপ্ন এবার সত্য হতে চলেছে। কে যেন চিৎকার করে বলে উঠল, ‘জয় গৌড়, জয় বঙ্গ, জয় শশাঙ্ক। পালশাসন দীর্ঘজীবী হোক।’ উপস্থিত জনতা তাতে মুহুর্মুহু সায় দিল।
কোলাহল কিছু স্তিমিত হতে একে একে উঠে দাঁড়ালেন কজঙ্গল হতে আগত চৌষট্টিজন ভৈরবী ডাকিনী। তাঁরা সিংহাসন ঘিরে বিচিত্র আরণ্যস্তোত্র উচ্চারণে, বিচিত্রতর পূজা সমারোহে, অত্যদ্ভুত নৃত্য প্রদর্শনে আশ্চর্য মায়া সৃষ্টি করলেন। উপস্থিত জনতা মোহিত হয়ে সেই আশ্চর্য নৃত্যাভিষেক দেখতে লাগল।
নৃত্যাভিষেক শেষ হলে পর আটজন প্রধান যোগিনী একের পর এক দেদ্দদেবীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে গেলেন। তাঁর উজ্জ্বল গোধূমবর্ণ গণ্ডদেশ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। গোপালদেব মৃদু-মৃদু হাসতে লাগলেন।
তারপর বিভিন্ন উপচার হাতে এগিয়ে এলেন কর্মান্তবাসকের সাধারণ জনবৃত্ত, সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিরা। সামন্ত থেকে আচার্য, বণিক থেকে কৃষক, সন্ন্যাসী থেকে সৈন্য, কৃষক থেকে কর্মকার, কুম্ভকার থেকে শৌণ্ডিক, শবর থেকে কিরাত, জালিক থেকে কৈবর্ত…
সবার উপহার নিবেদন শেষ হলে উঠে দাঁড়ালেন গোপালদেব। তাঁর পিছনে চক্রাকারে ঘিরে দাঁড়ালেন সহজিয়া বৌদ্ধ এবং শৈবযোগীদের দল।
উদাত্ত মন্ত্রকণ্ঠে গোপালদেব বললেন, ‘আমি, সর্ববিদ্যাবিশারদ দয়িতবিষ্ণুর পৌত্র, মহাবল খণ্ডিতারাতি বপ্যটের পুত্র গোপালদেব, পরম কারুণিক তথাগত, ভগবান আদিনাথ, একাদশ রুদ্র এবং দশদিকাধিপতিদের সাক্ষী রেখে শপথ করছি, আজীবন সত্য, ন্যায় এবং ধর্মের পথে থেকে গৌড়বঙ্গের সেবা করব। আমি মনে রাখব, দেশের মাটির থেকে বড় মন্দির নেই, দেশের মানুষের থেকে বড় ঈশ্বর নেই, দেশসেবার থেকে বড় ধর্ম নেই। আপনারা আশীর্বাদ করুন, আমার রাজশাসন যেন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, দীনাতিদীন মানুষেরও সেবায় সমর্থ হয়…।’
সবার শেষে একটি বৃক্ষের আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন একজন পুরুষ এবং এক নারী। পুরুষটি বামদিকে সামান্য ঝুঁকে বললেন, ‘আর্যা, ওই রাজ্ঞীর আসনে কিন্তু আপনাকেও মন্দ মানাত না।’
মন্দর্ভা ছদ্মকোপে বক্তার বুকে কিল মারতে গেলেন। পদ্মসম্ভব সেই হাত দুটি ধরে তাঁকে নিজের কাছে টেনে নিলেন। মন্দর্ভা চক্ষু বন্ধ করে বললেন, ‘আপনার জন্য আমি ইন্দ্রাণীর পদও প্রত্যাখ্যান করতে পারি নাথ। রাজশাসন তো তুচ্ছ।’
পদ্মসম্ভব তাঁর ঠোঁটদুটি ডুবিয়ে দিলেন প্রেয়সীর অধরে। মন্দর্ভা দুই হাত দিয়ে পদ্মসম্ভবের গলা জড়িয়ে ধরলেন।
সমাপ্ত
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন