অষ্টাদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, অষ্টাদশ খণ্ড

অষ্টাদশ অধ্যায় – (বিশ্বভারতী প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, অষ্টাদশ খণ্ড)

বিশ্বভারতীর রবীন্দ্ররচনাবলী সুলভ সংস্করণ আঠারোটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই শেষ বা অষ্টাদশ খণ্ডটি তুলনামূলকভাবে বেশ ছোট। প্রথম ছত্রের সূচী, শিরোনাম সূচী ইত্যাদি বাদ দিলে মোটামুটি তিনশত পৃষ্ঠার বই এটি। এই খণ্ডে যে লেখাগুলি আছে তাতে রামায়ণ মহাভারতের প্রসঙ্গ খুব কমই আছে। যেগুলি আছে সেগুলি নীচে উল্লেখ করা হলো।

‘৺সাম্রাজ্যেশ্বরী’ প্রবন্ধটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যু উপলক্ষে রচিত হয়। মৃত্যুকে কেউ পরিহার করতে পারে না। কবি লিখেছেন—”পৃথিবীর অতীতকালের রাজাধিরাজগণ অদ্য কোথায়! কোথায় দিগবিজয়ী রঘু, কোথায় আসমুদ্র ক্ষিতীশ ভরত—যদুপতেঃ ক্ক গতা মথুরাপুরী, রঘুপতেঃ ক্ক গতোত্তর কোশলা।”—রঘু অযোধ্যায় সূর্যবংশের প্রতাপশালী রাজা এবং শ্রীরামচন্দ্রের প্রপিতামহ। ভরত থেকে এই দেশের নাম হয়েছে ভারতবর্ষ।

তরুণ সতীশচন্দ্র রায় অল্প কিছুদিন রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। অল্পবয়সী এই মানুষটি রবীন্দ্রনাথের অপরিমিত স্নেহ পেয়েছিলেন কিন্তু মৃত্যু মাত্র একুশ বছর বয়সে এই উজ্জ্বল তরুণটিকে পৃথিবী থেকে অপসারিত করে দিল। সতীশচন্দ্রের নামাঙ্কিত এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন যে সতীশচন্দ্র মহাভারতের উতঙ্কের কাহিনী অবলম্বনে গুরুদক্ষিণা নামে একটি ক্ষুদ্রগ্রন্থ রচনা করেছিলেন।—উতঙ্ক বেদ ঋষির শিষ্য। তিনিই রাজা জনমেজয়কে সর্পযজ্ঞ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

মনোমোহন ঘোষকে নিয়ে লিখিত প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—”কালিদাস, বেদব্যাস প্রভৃতি সকল মহাকবি সমস্ত পৃথিবীর মানুষের কাছে ভারতের চিত্তজ্যোতিষ্ককে প্রকাশ করেছেন। সকলেই বলেছেন, এ কবি আমাদেরও কবি।”

‘অরবিন্দ ঘোষ’ নামাঙ্কিত প্রবন্ধে কবি কথাপ্রসঙ্গে রামায়ণ গ্রন্থের রাম-সীতার কথা উল্লেখ করেছেন—”সুদীর্ঘ নির্বাসন ব্যাপ্ত করে রামচন্দ্রের একটি সাধনা সম্পূর্ণ হয়েছিল। যতই দুঃখ পেয়েছেন ততই গাঢ়তর করে উপলব্ধি করেছেন সীতার প্রেম। তাঁর সেই উপলব্ধি নিবিড়ভাবে সার্থক হয়েছিল যেদিন প্রাণপণ যুদ্ধে সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করে আনলেন।

কিন্তু রাবণের চেয়ে শত্রু দেখা দিল তাঁর নিজেরই মধ্যে। রাজ্যে ফিরে এসে রামচন্দ্র সীতার মহিমাকে রাষ্ট্রনীতির আশু প্রয়োজনে খর্ব করতে চাইলেন—তাঁকে বললেন, সর্বজন-সমক্ষে অগ্নিপরীক্ষায় অনতিকালেই তোমার সত্যের পরিচয় দাও। কিন্তু এক মুহূর্তে জাদুর কৌশলে সত্যের পরীক্ষা হয় না, তার অপমান ঘটে। দশজন সত্যকে যদি না স্বীকার করে, তবে সেটা দশজনেরই দুর্ভাগ্য, সত্যকে যে সেই দশজনের ক্ষুদ্র মনের বিকৃতি অনুসারে আপনার অসম্মান করতে হবে এ যেন না ঘটে। সীতা বললেন, আমি মুহূর্তকালের দাবি মেটাবার অসম্মান মানব না, চিরকালের মতো বিদায় নেব। রামচন্দ্র এক নিমিষে সিদ্ধি চেয়েছেন, একমুহূর্তে সীতাকে হারিয়েছেন। ইতিহাসের যে উত্তরকাণ্ডে আমরা এসেছি এই কাণ্ডে আমরা তাড়াতাড়ি দশের মন-ভোলানো সিদ্ধির লোভে সত্যকে হারাবার পালা আরম্ভ করেছি।”

‘শরৎচন্দ্র’ নামাঙ্কিত রচনায় কবি লিখেছেন যে তিনি স্কুলে ‘সীতার বনবাস’ গ্রন্থটি পড়েছিলেন। রাম ও রাবণের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে কবি লিখেছেন—”রামের ভয়ংকর ভক্ত যেমন রাবণ।”

‘কামাল আতাতুর্ক’ প্রবন্ধে কবির উক্তি—”একসময়ে এশিয়াতে যে শিখা প্রজ্বলিত ছিল, তার নির্বাপণের দিন এল, ক্রমে ঘনীভূত হয়ে এল প্রদোষের অন্ধকার। তখন ভিতরের লজ্জা গোপন আর অন্তরের গৌরব রক্ষার জন্য আমরা বার বার নাম জপ করেছিলুম ভীষ্ম, দ্রোণ, ভীমার্জুনের, আর তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলুম, বীর হামীর, রানা প্রতাপ এমন-কি বাংলাদেশের প্রতাপাদিত্য পর্যন্ত।”

ঈ. বী. হ্যাভেলকে স্মরণ করে কবি যে প্রবন্ধ লিখেছেন তার একজায়গায় আছে—”অশ্বত্থামা পিটুলিগোলা জল খেয়ে দুধ খেয়েছি মনে করে নৃত্য করেছিলেন এ বিবরণ পড়লে চোখে জল আসে।”—অশ্বত্থামা কুরু-পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র। হস্তিনাপুরের রাজকুমারদের অস্ত্রশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হবার পূর্বে দ্রোণাচার্য অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। তাঁর শিশুপুত্র অশ্বত্থামা একবার দুধ খাওয়ার জন্য বায়না করেছিল। সেই সামান্য দুধও কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না দ্রোণাচার্যের। শিশুকে ভোলানোর জন্য জলে পিটুলি গুলে তাকে দেওয়া হয়েছিল। দুধের মতো পিটুলিগোলার রঙ ছিল সাদা এবং দুধ মনে করে সেটাই পান করে শিশু আনন্দে নৃত্য করেছিল।

১৩৪৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় কবি যে প্রবন্ধটি লিখেছিলেন তার এক জায়গায় আছে—”তিনি যাত্রীদলের অগ্রদূত। নূতন পন্থী রচনায় সৃজনের দুঃসহ দুঃখ তাঁর। তাঁর দুঃখ তোমরা এখন বুঝবে কী করে? তখন বাংলা ছিল সংস্কৃতের দাসী। গরুড়ের মতো তিনি বিনতার দাস্য মোচন করলেন। দাসীবৃত্তি ছাড়লেও যে তার নিজস্ব ঐশ্বর্য তার অন্তরের মধ্যেই নিহিত আছে তা বঙ্কিম দেখিয়ে দিলেন।”

গরুড়-বিনতার কাহিনী মহাভারতে আছে। কদ্রু ও বিনতা ঋষি কাশ্যপের স্ত্রী। সর্পকুল কদ্রুর থেকে উৎপন্ন হয়েছে আর বিনতার পুত্র মহাবলশালী পক্ষী গরুড়। গরুড়ের জন্মের আগে কদ্রু ও বিনতা একটা ব্যাপারে পণ করেছিল—যে হারবে সে অপরের দাসী হবে। কপট করে কদ্রু এই পণে বিনতাকে হারিয়ে দেয়। গরুড় তার জন্মের পর মাকে দাসীবৃত্তি করতে দেখে খুব দুঃখ বোধ করতো। তাই সে কদ্রুর সন্তান নাগদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল কী করলে মায়ের দাসীত্ব থেকে মুক্তি হবে। তারা বলেছিল যে গরুড় যদি স্বর্গলোক থেকে নাগেদের জন্য অমৃত এনে দিতে পারে তবে বিনতাকে তারা দাসীত্ব থেকে মুক্ত করে দেবে। গরুড় এই দুঃসাধ্য কাজটা করেছিল—স্বর্গলোক থেকে অমৃত এনে নাগদেরকে দিয়েছিল। সে অমৃত অবশ্য নাগদের ভোগে লাগেনি। অমৃত আনার পরই বিনতা দাসীত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছিল।

রামচন্দ্র শর্মার কর্মের প্রতি সমর্থন রেখে কবি একটি ছোট লেখা লিখেছিলেন, নাম ‘রামচন্দ্র শর্মা’। জয়পুরী ব্রাহ্মণ পণ্ডিত রামচন্দ্র শর্মা কালীঘাট কালীমন্দিরে ছাগবলি বন্ধ করবার উদ্দেশ্য নিয়ে ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ তারিখ থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। দেবতার নামে পশুবলির নৃশংসতা রবীন্দ্রনাথ কোনোদিনই পছন্দ করেন নি। রামচন্দ্র শর্মার এই কাজের জন্য কবি আন্তরিক শ্রদ্ধান্বিত ছিলেন। এই ছোট্ট রচনাটিতে কবি লিখেছিলেন—”তাঁহার আত্মবলিদানে আমরা ব্যথিত হইব, কিন্তু তাঁহার আত্মত্যাগের জন্য ওই মূল্যই আমাদের দিতে হইবে। তিনি আত্মবলি দিলে কী ফল ফলিবে, তাহা আমি জানি না, কিন্তু তাঁহার দৃষ্টান্ত যে ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ হইয়া থাকিবে, সেই বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পার্থের মন অবসন্ন হইয়া পড়িলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে যে উপদেশ দিয়াছিলেন, এই সম্পর্কে তাহাই আমার মনে হইতেছে। …. পণ্ডিত রামচন্দ্র শর্মা তাঁহার কর্তব্য ভালোই জানেন, তিনি আরও জানেন যে, নিজ নিজ বিশ্বাসের জন্য জীবন উৎসর্গ করাও বাঞ্ছনীয়। শ্রীহীরেন্দ্রনাথ দত্ত কবিকে অনুরোধ করেছিলেন রামচন্দ্র শর্মাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতে। কবি প্রথমে এইরকম অনুরোধ করবার ইচ্ছা করলেও পরে সেরকম অনুরোধ করেন নি। হীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তিনি লিখেছিলেন—’পণ্ডিত রামচন্দ্র শর্মাকে প্রায়োপবেশন থেকে নিরস্ত করবার অনুরোধ জানিয়ে আপনি আমাকে পত্র লিখেছেন। তদনুসারে অনুনয় করে একটা চিঠি রচনা করেছিলুম। কিন্তু তাঁর মহৎ সংকল্পের তুলনায় আমার অনুরোধটার দৈন্য এতই কৃশ বলে আমার চোখে ঠেকল যে, লজ্জায় সেটাকে আপনাদের কাছে পাঠাতে পারলুম না। তিনি যে ব্রত নিয়েছেন সে চরম আত্মোৎসর্গের ব্রত, আমরা দুর্বলচিত্তে তার ফলাফল বিচার করবার অধিকারী নই। বাংলাদেশে শক্তিপূজায় জীবরক্তপাত রোধ করা সহজ নয় সে কথা নিশ্চিত—এই মহাত্মার প্রাণ উৎসর্গ করার আশু উদ্দেশ্য সফল হবে না জানি, কিন্তু এই উৎসর্গ করারই যে সার্থকতা তার তুলনা কোথায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের সাধারণ আদর্শ অনুসারে চিন্তা করা খাটবে না। তাঁর প্রাণ-উৎসর্গে আমরা বেদনা বোধ করব সন্দেহ নেই, কিন্তু এই বেদনাতেই সেই উৎসর্গের মূল্য। কালীঘাটের মন্দিরে তাঁর আত্মদানের কী ফল ফলবে জানি নে, কিন্তু এই দান আমাদের ইতিহাসের রত্নভাণ্ডারে নিত্যসঞ্চিত থাকবে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধারম্ভে অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ মনে পড়ল—নিদারুণতার দ্বারা অভিভূত হয়ে পার্থের মনে যে ক্লৈব্য দেখা দিয়েছিল—পণ্ডিত রামচন্দ্র শর্মা জানেন কী তাঁর স্বধর্ম এবং তিনি জানেন স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ, আমরা কী জানি!

এই ব্যাপারে অন্য একটা জায়গায় তিনি লিখলেন—জানসাধারণের মধ্যে চরিত্রের দুর্বলতা ও ব্যবহারের অন্যায় বহুব্যাপী, সেই জন্যে শ্রেয়ের বিশুদ্ধ আদর্শ ধর্মসাধনার মধ্যে রক্ষা করাই মানুষের পরিত্রাণের উপায়। নিজেদের আচরণের হেয়তার দোহাই দিয়ে সেই সর্বজনীন ও চিরন্তন আদর্শকে যদি দূষিত করা যায় তাহলে তার চেয়ে অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। ঠগীরা দস্যুবৃত্তি ও নরহত্যাকে তাদের ধর্মের অঙ্গ করেছিল। নিজের লুব্ধ ও হিংস্রপ্রবৃত্তিকে দেবদেবীর প্রতি আরোপ করে তাকে পুণ্য শ্রেণীতে ভুক্ত করাকে দেবনিন্দা বলব। এই আদর্শ-বিকৃতি থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে যিনি প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রবৃত্ত, তিনি তো ধর্মের জন্যেই প্রাণ দিতে প্রস্তুত; শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই ধর্মের উদ্দেশ্যেই প্রাণ দিতে স্বয়ং উপদেশ দিয়েছিলেন। সেই উপদেশই রামচন্দ্র শর্মা পালন করছেন। সাধারণ মানুষের হিংস্রতা নিষ্ঠুরতার অন্ত নেই—স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ তাকে সম্পূর্ণ রোধ করতে পারেননি—তবুও ধর্ম অনুষ্ঠানে হিংস্রতার বিরুদ্ধে আত্মোৎসর্গের মতো দুস্কর পুণ্যকর্ম আর কিছু হতে পারে কি না জানি নে, কিন্তু সেই প্রাণ-উৎসর্গই একটি মহৎ ফল। রামচন্দ্র শর্মা আপনার প্রাণ দিয়ে নিরপরাধ পশুর প্রাণ-ঘাতক ধর্মলোভী স্বজাতির কলঙ্ক ক্ষালন করতে বসেছেন এই জন্যে আমি তাঁকে নমস্কার করি। তিনি মহাপ্রাণ বলেই এমন কাজ তাঁর দ্বারা সম্ভব হয়েছে। ইতি ২৪ ভাদ্র, ১৩৪২’।

হিন্দীভাষী মানুষের কাছে এবং আরো অনেকের কাছেই তুলসীদাস অত্যন্ত শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। বাল্মীকির রামায়ণ তিনি হিন্দীতে ভাবানুবাদ করেছিলেন। ‘তুলসীদাস’ নিবন্ধে কবি, তুলসীদাস এবং তাঁর রামায়ণের প্রতি নিজের মত প্রকাশ করেছেন। ”তুলসীদাস তাঁর ‘রামচরিতের’ উপকরণ সংগ্রহ করেছিলেন বাল্মীকির রচনা থেকে; সেই উপকরণকে তিনি সম্পূর্ণ নিজের ভক্তিতে রসসমৃদ্ধ করে নতুন করে দান করেছেন। ….. ভক্তিদ্বারা যে ব্যাখ্যায় তিনি রামায়ণকে নতুন পরিণতি দিয়েছেন সেটা সাহিত্যে অসাধারণ দান। ….. হিন্দী সাহিত্যে তুলসীদাসের দানকে সকলের চেয়ে বড়ো বলে গণ্য করা হয়েছে এবং চিরকাল তাঁর সে গৌরব অক্ষুণ্ণ থাকবে। ….. আমার মনে পড়ে বাল্যকালে প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ীর দারোয়ানরা তুলসীদাসের রামায়ণ গান করত। তারা সেই গান থেকে যেন অমৃত লাভ করে সমস্ত দিনের ক্লান্তি দূর করত—তাদের অবসর সময়কে রসময় করে তুলত।”

মঞ্চাভিনেতা শিশিরকুমারের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসটির নাট্যরূপ দান করেন। সেই নাটকটি রবীন্দ্ররচনাবলীর এই খণ্ডে স্থান পেয়েছে। ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস নিয়ে আগে আলোচনা করা হয়েছে।

কুমুদিনী বৌদি, নবীন দেবর ও মোতির মা নবীনের স্ত্রী। প্রিয় পরিবেশে এটা একটা খুনসুটি মতো। নবীন কুমুদিনীকে বলছে যে মোতির মা নবীনের বই লুকিয়ে রেখেছে। কারণ জানতে চাইলে নবীন বলছে—

”ঈর্ষ্যা। যেহেতু নিজে ইংরেজী পড়তে পারেন না। আমি স্ত্রী-শিক্ষার পক্ষে, উনি কিন্তু স্বামী জাতির এডুকেশনের বিরোধী। আমার বুদ্ধির যতই উন্নতি হচ্ছে, ওঁর বুদ্ধির সঙ্গে ততই গরমিল হয়ে যাওয়াতেই ওঁর রাগ। এত করে বোঝালাম, অত বড়ো যে সীতা তিনিও রামচন্দ্রের পিছনে পিছনেই চলতেন, বিদ্যেবুদ্ধিতে আমি তোমার [চেয়ে] অনেক এগিয়ে চলেছি, এতে বাধা দিয়ো না।”

অন্য জায়গায় কুমুদিনী মোতির মাকে বলছে—

”তুমি দময়ন্তীর কথা পড়েছ। শুভক্ষণে তাঁর বাঁ চোখ নেচেছিল, কিন্তু আগে তো জানতেন না যে নল রাজাকেই তিনি পাবেন; তবু যাঁকে পাবেন তাঁর জন্যেই সর্বান্তঃকরণের অর্ঘ্য সাজিয়ে রাখলেন। তারপর যখন নল রাজাকে পেলেন তখন মনে হল এইজন্যেই বুঝি তাঁর বাঁ চোখ নেচেছিল।” নল-দময়ন্তীর কথা আগে আলোচনা করা হয়েছে।

ব্যঙ্গকৌতুক অংশে ‘স্বর্গে চক্রটেবিল বৈঠক’ নাটিকাটি রয়েছে। চরিত্ররা হচ্ছেন ব্রহ্মা, ইন্দ্র, বৃহস্পতি, মরুৎ, প্রজাপতি, বায়ু, অশ্বিনীকুমার, ভোলানাথ, চিত্রগুপ্ত, সরস্বতী প্রভৃতি। এঁরা সবাই পৌরাণিক চরিত্র হলেও এই নাটিকাটিতে রামায়ণ মহাভারতের কোনো কাহিনী নেই। এটি একটি কৌতুকনাটিকা।

বাঁশরি নাটকের প্রাথমিক গল্পরূপ ‘ললাটের লিখন’। এই গ্রন্থে লেখবার মতো কোন বিষয় এই গল্পে নেই।

সকল অধ্যায়

১. প্রথম অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, প্রথম খণ্ড
২. দ্বিতীয় অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, দ্বিতীয় খণ্ড
৩. তৃতীয় অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, তৃতীয় খণ্ড
৪. চতুর্থ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড
৫. পঞ্চম অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, পঞ্চম খণ্ড
৬. ষষ্ঠ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, ষষ্ঠ খণ্ড
৭. সপ্তম অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, সপ্তম খণ্ড
৮. অষ্টম অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, অষ্টম খণ্ড
৯. নবম অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, নবম খণ্ড
১০. দশম অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, দশম খণ্ড
১১. একাদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, একাদশ খণ্ড
১২. দ্বাদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, দ্বাদশ খণ্ড
১৩. ত্রয়োদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, ত্রয়োদশ খণ্ড
১৪. চতুর্দশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, চতুর্দশ খণ্ড
১৫. পঞ্চদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, পঞ্চদশ খণ্ড
১৬. ষোড়শ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, ষোড়শ খণ্ড
১৭. সপ্তদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, সপ্তদশ খণ্ড
১৮. অষ্টাদশ অধ্যায় : রবীন্দ্ররচনাবলী—সুলভ সংস্করণ, অষ্টাদশ খণ্ড
১৯. ঊনবিংশ অধ্যায় : বিশ্বভারতী প্রকাশিত মূল রবীন্দ্ররচনাবলী দ্বাত্রিংশ খণ্ড এবং কুরুপাণ্ডব
২০. বিংশ অধ্যায় : চিঠিপত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন