ইমানুল হক
‘মিথ’ মানে অতিকথন৷ ‘মিথ্যা’র সঙ্গে মিথের উচ্চারণগত মিল আছে শুধু নয়, বহু মিথ, আসলে মিথ্যার বাবাঠাকুর, ‘মিথ’ শব্দটি সাধারণভাবে আমাদের সমাজে ভালো অর্থে প্রযুক্ত হয়৷ নানা অলৌকিক, অতিলৌকিক অনুষঙ্গ তাতে যুক্ত করা হয়৷ কিছু ‘মিথ’ ও মিথ্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক৷ বর্তমান সময়ে এটি খুব জরুরি কাজ৷
ইতিহাসগত মিথ : ১ আর্যরা ভারতে আগমন করেছিল, মুসলমানরা ভারত আক্রমণ করেছিল, আর ব্রিটিশরা ভারত শাসন করেছিল৷
দেখুন, ইতিহাসের এই বহুল প্রচলিত বাক্যাংশে কী পরিমাণ অজ্ঞতা ও বিদ্বেষ লুকিয়ে আছে৷ আর্য একটা জাতি৷ ইংরেজিতে যাকে বলে রেস (Race)৷ তাঁরা মোটেও দয়া করে ভারতে আগমন করেনি৷ পরিস্থিতির চাপে বাঁচার তাগিদে এদেশে আসে৷ এদেশের আদি বাসিন্দাদের আক্রমণ করে৷ তাদের সঙ্গে লড়ে, জিততে হয়েছে৷ বহু মানুষ নিহত, আহত, বন্দি অপমানিত এবং অবমানিত হয়েছে৷
এ দেশের আদি বাসিন্দাদের আদিবাসী নাম দিয়ে খাটো করে জঙ্গলে ঠেলে দেওয়া হয়েছে৷ মাত্র ৪% আর্যর জন্য বাকিদের তথা ৯৬%-কে বলা হতে লাগল অনার্য৷ কী ভয়ংকর অসভ্য প্রবণতা৷ অথচ আর্যদের আমরা সভ্য বলি৷ যদিও আর্যরা মোটেও সভ্য ছিল না৷ তারা ছিল যাযাবর জাতি৷ নগর গড়তে জানত না৷ আর্যদের রাজা তথা দেবতা ইন্দ্রের অপর নাম ‘পুরন্দর’৷ কারণ, তিনি নগর অনুসন্ধান করে ধ্বংস করতে পারঙ্গম ছিলেন৷
‘বৃত্র’ শব্দের অর্থ জলাধার৷ জলাধার ধ্বংস করে সভ্য আদিম বাসিন্দাদের বাড়ি ও নগরে আগুন লাগিয়ে বাধ্য করেন পরাস্ত হতে৷ এই আর্যদের ‘আগমনে’ দেশ ধন্য হবে কেন? আর্যরা লিপির ব্যবহার জানত না৷ শুনে শুনে বেদ মনে রাখত৷ দ্রোণাচার্যরা একলব্যদের বঞ্চিত করার জন্য আঙুল পর্যন্ত কেটে নিত৷ শম্বুককে হত্যা করা হয়েছে জ্ঞান লাভের প্রয়াসী হওয়ার জন্য।
দ্বিতীয়ত, মুসলমান কোনো জাতির নাম নয়৷ ‘ইসলাম’ একটা ধর্ম৷ এক ধর্মেই বহুভাগ৷ শিয়া-সুন্নি ছাড়াও ১০০-র বেশি ভাগ আছে৷ ইংরেজদের ক্ষেত্রে কিন্তু ‘রেস’ বা রিলিজিয়ন কোনটাই বলা হল না৷ এখানে ইংরেজ হল ‘নেশন’৷
ইতিহাসের এই বিদ্বেষমূলক ব্যাখ্যা তৈরি হয় ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদকে বাঁচিয়ে রাখতে৷ সেই কারণেই ইংরেজ ঐতিহাসিকরা বলেছেন, আর্যরা দেশের ভালো করেছিল৷ তারপর তথাকথিত মুসলিম অন্ধকারযুগ ও অস্ত্রের হানাহানি৷ তাঁদের আমল সুশাসনের৷ আসলে কিন্তু ধনী ভারতকে গরিব, দরিদ্র, হীনবল ভারতে পরিণত করার ইতিহাস ইংরেজদের৷ লুণ্ঠন, শোষণ, হত্যা, প্রতারণার ইতিহাসে ভরা ইংরেজ আমল৷ ভারতে মুসলমান রাজত্ব নিয়ে কত কথা৷ তরবারির জোরে ভারতে ইসলাম নাকি প্রচারিত৷ ভারতে ‘মুসলমানরা’ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়েছে৷ (৬৯৫-৭১৫ খ্রি:) মহম্মদ বিন কাশেম সিন্ধু আক্রমণ করেছিলেন৷ তখন সিন্ধুর রাজা ছিলেন দাহির (৬৬৩-৭১২ খ্রি:)৷ তাঁর সেনাপতিরা দাহিরের বিরুদ্ধাচরণ করেন৷ দাহিরের পক্ষ নিয়ে তাঁরা মহম্মদ বিন কাশেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি৷ মহম্মদ বিন কাশেম কিন্তু রাজ্য দখলের জন্য যুদ্ধ করেননি৷ আরব এবং ভারতের মধ্যে তখন বাণিজ্য প্রচলিত ছিল৷ কিছু সিন্ধুপ্রদেশীয় জলদস্যু আরব বণিকদের জাহাজ লুঠ করে৷ সেই জাহাজে শ্রীলঙ্কা তথা সিংহলের রাজার প্রেরিত মূল্যবান উপহার ছিল৷ সুলতান হাজাজ দাহিরকে এর প্রতিকার করার জন্য বলেন৷ দাহির কর্ণপাত করেন না৷ ফলে ক্রোধান্ধিত হাজাজ সৈন্য প্রেরণ করলেন৷ প্রথম দুবার ব্যর্থ হল হাজাজের সেনাদল৷ শেষে নিজের জামাতা মহম্মদ বিন কাশেমকে পাঠালেন এক শক্তিশালী সেনা দল নিয়ে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে৷ সেই তৃতীয় যুদ্ধে দেবল দখল করলেন মহম্মদ বিন কাশেম৷ তারপর একে একে দখল হল নিরুন, রেওয়ার, ব্রাহ্মণাবাদ, আলোর এবং মুলতান৷ ক্রমে সমগ্র সিন্ধুপ্রদেশ৷ এর মধ্যে সুলতান হাজাজ মারা গেলেন৷ সিংহাসনে বসলেন তাঁর ভাই৷ হাজাজের ভাই ছিলেন সুলতান হাজাজের পরিবারের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ৷ তিনি হাজাজের জামাতা মহম্মদ বিন কাশেমকে হত্যার আদেশ দেন৷
তবে মনে রাখতে হবে, মহম্মদ বিন কাশেমের আগেই রাজা দাহির একজন মুসলিমকে বরণ করেন সেনাপতিরূপে—তাঁর শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য৷ তাঁর নাম মহম্মদ হারিস আল্লাফি৷ আল্লাফি মাকরান শাসর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজা দাহিরের আশ্রয় প্রার্থী হয়েছিলেন৷ দাহিরের হয়ে আল্লাফি ৫০০ সাহসী সৈন্য নিয়ে রাতের অন্ধকারে মাকরান দখল করে দেন৷ এবং আল্লাফি ও দাহির পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন৷
সিন্ধুর ইতিহাস
দাহিরের রাজবংশের সূত্রপাতের মূলে আছে বিশ্বাসঘাতকতা ও রক্তের অনিবার্য ইতিহাস। সিন্ধুর অতীত রাজা ছিলেন বৌদ্ধ৷ নাম রাজা সহিসি৷ সহিসির ছিল একজন ব্রাহ্মণ মন্ত্রী দেওয়ান রাম৷ একদিন রাজা সহিসি মন্ত্রী দেওয়ান রামকে ডেকে পাঠান একটি চিঠি লেখার জন্য৷ দেওয়ান রাম বাইরে ছিলেন৷ তিনি তাঁর পরিবর্তে পাঠান চাচ নামে একজন যুবককে৷ রাজা সহিসি চাচের কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে উপমন্ত্রী বানিয়ে দিলেন৷ একদিন রাজা সহিসি রানির সামনেই চাচকে ডেকে পাঠালেন৷ চাচের রূপ এবং দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে রানি প্রেমে পড়ে গেলেন চাচের৷ গোপনে বার্তা পাঠালেন ব্যক্তিগত দূতকে দিয়ে৷ প্রেমের প্রস্তাব চাচ প্রত্যাখ্যান করেন৷ বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে রাজার সঙ্গে৷ রানি কিন্তু হাল ছাড়লেন না৷ বললেন, প্রেম না করুন, দৈনিক অন্তত একবার দেখা দিক চাচ৷ রানিকে৷ চাচ রাজি হলেন৷ ইতিমধ্যে চাচের ওপর রাজার আস্থা আরও বেড়ে গেল৷ এর কিছুদিন পর রাজা অসুস্থ হয়ে পড়লেন৷ এই অসুস্থতার সময় রানি সোনি চাচকে ডেকে বললেন, আমার একটা পরিকল্পনা আছে, সেই অনুযায়ী চললে তুমি রাজা হবে আর আমাকেও পাবে৷ অন্য কেউ রাজা হলে আমাকে মেরে ফেলবে, তোমারও মুশকিল৷
রানির পরামর্শে ৫০টি শেকল ও তালা জোগাড় করা হল৷ এরপর মৃত্যুশয্যায় থাকা রাজার বিশ্বস্ত সহচরদের বলা হল অপেক্ষা করতে৷ তারপর রাজাকে লুকিয়ে রেখে সহচরদের জানান হল, রাজা মৃত৷ শোকাচ্ছন্ন সহচরদের এই দুঃখজনক মুহূর্তে বন্দি করে ফেলে রানি সোনি ও চাচের গোপন অনুচরেরা৷ তারপর একে একে অন্য আত্মীয় ও অমাত্যদের খবর পাঠানো হল, রাজা তাঁদের সঙ্গে শেষ দেখা করে কথা বলতে চান৷ তাঁরা এলে তাঁদেরও বন্দি করে শেকল তালায় বেঁধে ফেলা হল৷ শেষে খবর দেওয়া হল রাজার দুর্বল আত্মীয়দের৷ তাঁরা এলে বলা হল, রাজা আদেশ দিয়েছেন এই বন্দিদের হত্যা করে তাঁদের অর্থ সম্পত্তি দখল করতে৷ তাই করল রাজার দুর্বল আত্মীয়রা৷ হত্যা ও লুঠের পর তাঁরা সমবেত হলে, তাঁদের বলা হল, অসুস্থ রাজা সহিসি চাচকেই রাজকার্য চালানোর ভার দিয়েছেন৷ রাজার দুর্বল আত্মীয়রা ব্রাহ্মণ চাচকেই দক্ষ বলে মেনে নিল৷ এর মধ্যে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে রাজা সহিসি বন্দি অবস্থায় সত্য সত্যই মারা গেলেন৷ তখন চাচ রাজা হলেন এবং বিধবা রানি সোনিকে বিয়ে করে নিলেন৷
যা সেকালের ক্ষেত্রে ছিল চরম নিয়মবিরুদ্ধ৷ ইতিমধ্যে রাজা সহিসির মৃত্যুর ছয় মাস পর তাঁর ভাই বৌদ্ধ রাজা মেহরথ খবর পেলেন এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর দাদার মন্ত্রী ষড়যন্ত্র করে রাজাকে মেরে ক্ষমতা দখল করেছেন৷ রাজা সহিসির রাজ্য পুনর্দখলের জন্য তিনি অভিযান চালালেন৷ যুদ্ধের আগে বৌদ্ধ রাজা মেহরথ প্রস্তাব দিলেন অকারণ রক্তক্ষয় করে লাভ নেই৷ তাঁদের মধ্যে অশ্বহীন অবস্থায় একক যুদ্ধ হোক৷ যিনি জিতবেন, তিনিই রাজা হবেন৷ দুজনে মুখোমুখি হলেন৷ রাজা মেহরথ এলেন ঘোড়া ছাড়াই৷ ব্রাহ্মণ রাজা চাচের পিছন পিছন এল তাঁর ঘোড়া৷ হঠাৎ যুদ্ধ শুরুর আগে ব্রাহ্মণ চাচ ঘোড়ায় চড়ে পদাতক ঘোড়াহীন রাজা মেহরথের গলায় তলোয়ারের কোপ দিয়ে কেটে ফেললেন৷
এমন অনৈতিকভাবে রাজা চাচ যুদ্ধে জিতলেন৷ সমগ্র সিন্ধুর রাজা হলেন৷ ৪০ বছর রাজত্ব করলেন৷ রানি সোনি ছাড়াও বহু বিবাহ করলেন৷ কিন্তু রানি সোনি সূত্রে পেলেন দুই পুত্র জয়সিনা ও দাহির৷ রাজপুত এক রমণীর গর্ভে জন্মাল এক কন্যা বাই রানি৷
এরপর চাচ একে একে জয় করলেন উত্তর সিন্ধু, পালুতার, মেহস্তান, বোধিয়া, কারমান এবং মাকরান৷ ব্রাহ্মণাবাদ জয় করার পর সেখানকার বিধবা রানি আঘম লোহানাকেও বিয়ে করলেন৷ এই রানির মেয়ের নামই বাই রানি৷ বাই রানির জন্মের সময়ই ভবিষ্যদ্বাণী হল বাই রানির স্বামীই হবেন রাজ্যের রাজা৷ কিন্তু এটা গোপন রাখা হল৷
এর মধ্যে ভবিষ্যৎ বিদ্রোহ দমন করার জন্য লোহানা এবং জাঠদের সামাজিক অবনমন ঘটানো হল৷ তাঁদের বলা হল শূদ্র৷ এবং তাঁদের রেশম এবং দামি অলঙ্কার পরা নিষিদ্ধ করা হল৷ নিষিদ্ধ হল ঘোড়ায় চড়া৷ ভালো ঘরদোরে থাকাও নিষিদ্ধ করা হল৷ কিছু বিদ্রোহ দেখা দিল৷ কিন্তু চাচ সেগুলি কঠোরভাবে দমন করলেন৷
৬৭১ খ্রিস্টাব্দে চাচের মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ভাই চন্দর হলেন রাজা৷ প্রখ্যাত লেখক ড. মোবারক লিখেছেন, রাজা হয়ে চন্দর সবাইকে বৌদ্ধ হতে বাধ্য করেন৷ কেন? তার ব্যাখ্যা আজও অজ্ঞেয়৷ সামাজিক বৈষম্য ও অনাচার কমানোর জন্যই রাজা চন্দর করেছিলেন বলে অনেকের মত৷ যদিও তিনি নিজে ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ, মন্দিরের পূজারি ও রাজা চাচের উপমন্ত্রী৷
এর মধ্যে আরবের শাসক পাত্তা গোপনে কুঞ্জের রাজার কাছে গিয়ে রজা মেহরিসকে উত্তেজিত করে বললেন, রাজা চন্দর যত না শাসক তার চেয়ে বেশি ধর্মদ্রোহী৷ ওকে খতম করা উচিত৷
আক্রান্ত হল রাজা চন্দরের রাজ্য৷ রাজা চন্দর সফলভাবে দুর্গ রক্ষা করলেন৷ এবং যুদ্ধে কৃতিত্ব দেখিয়ে রাজা চন্দরের দাদা চাচের পুত্র দাহির আরোড়ের শাসক হলেন৷ আর চন্দরের নিজের ছেলে দেওয়ান ব্রাহ্মণাবাদের রাজা৷ ৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা চন্দরের মৃত্যুর পর চন্দরের বড় ছেলে জয়সিনা রাজা হলেন৷ অভিষেকের সময় যদিও উপস্থিত ছিলেন দাহির৷ তিনি মানলেন না সিদ্ধান্ত৷ ঘোষণা করলেন তিনি সমগ্র সিন্ধুর রাজা৷
সমস্যা বাধল অচিরে৷ বাই রানির বিয়ের সময়৷ দাহিরের ভাই জয়সিনা বাই রানির বিয়ের ঠিক করার জন্য বললেন দাহিরকে৷ এদিকে ঠিক হয়ে আছে, বাই রানির স্বামী হবে রাজা৷ ভবিষ্যৎ বক্তাকে ডাকা হল৷ তিনিও একই কথা বললেন৷ তখন দাহিরের মন্ত্রী বুদ্ধিমান পরামর্শ দিলেন বাই রানিকে বিয়ে করার৷ দাহির রাজি হলেন না৷ সৎ বোনকে বিয়ে করতে পরামর্শ দিয়ে বুদ্ধিমান বললেন, মানুষের স্মৃতি খুব ক্ষণস্থায়ী, দু’দিন আলোচনা করবে৷ তারপর ভুলে যাবে৷
দাহির বিয়ে করে ফেললেন নিজের সৎ বোন বাই রানিকে৷ এতে ভাই জয়সিনা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলেন৷ যুদ্ধ ঘোষণা করলেন৷ এলেন সসৈন্যে৷ এসে দেখেন বুদ্ধিমানের পরামর্শে আত্মহত্যার ভান করে তোরণে ঝুলে আছেন রাজা দাহির৷ জয়সিনা ভাবলেন দাহির আত্মহত্যা করেছেন৷ ফিরে গেলেন মনের দুঃখে৷ শোকে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন৷ দাহিরের আর কোনও বাধা রইল না৷ ৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থানসহ কুঞ্জের হিন্দু রাজা রামল দাহিরের রাজ্য সিন্ধু আক্রমণ করেন৷ দাহিরের হয়ে যুদ্ধ লড়লেন মুসলমান সেনাপতি আল্লাফি৷ মুহাম্মদ হারিস আল্লাফি মাকরানের শাসককে হত্যা করে দাহিরের আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন৷ সেই আল্লাফি ৫০০ সাহসী সৈন্য ও হাতি নিয়ে হারিয়ে দিলেন ‘হিন্দু’ রাজা রামলকে৷
তাহলে মুহম্মদ বিন কাশেম প্রথম সিন্ধু আসেননি৷ সিন্ধুর রাজার হয়ে লড়েছেন এক মুসলমান সেনাপতি এটা এড়িয়ে যাওয়া কেন? এরপর খলিফার সঙ্গে বিরোধ বাধে দাহিরের৷ কারণ শ্রীলঙ্কার রাজা খলিফাকে জাহাজে উপহার পাঠাচ্ছিলেন৷ তা লুঠ হয়৷ জাহাজে ছিল বহু মুসলিম রমণীও৷ দাহিরকে তা ফেরত দিতে বলা হয়৷ দাহির অস্বীকার করেন৷ তখন যুদ্ধ বাধে৷ দুবার জেতেন দাহির৷ তৃতীয়বার পরাজিত ও নিহত হন৷ ৭১২ খ্রিস্টাব্দে৷ দাহিরের হারেমে সন্ধান মেলে ওই অপহৃতা ও লুণ্ঠিতা তুর্কি রমণীদের৷
কথিত আছে, পারসিকরা সিন্ধুকে ‘হিন্দু’ নামে উচ্চারণ করায় এই এলাকার নাম হয় হিন্দু ও আদিবাসীদের নাম হিন্দু৷ যদিও মুঘল আমলের আগে এই শব্দ জনপ্রিয়তা লাভ করেনি৷
সাধারণভাবে, স্বয়ংসেবকীয়রা মুসলমানদের বলে থাকে—‘বাবর কি আওলাদ’—মানে বাবরের সন্তান৷ বাবর ভারতে এলেন ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে৷ হারালেন কাকে? ইব্রাহিম লোদিকে৷ তিনি জন্মসূত্রে মুসলমান৷ লোদি বংশের আগে বহু মুসলিম রাজবংশ দিল্লি শাসন করেছে৷ ঘোরি, বলবন, খিলজি, দাস, তুঘলক ইত্যাদি৷ ১১৯২-এ দিল্লি দখল করেন মহম্মদ ঘোরি৷ কিন্তু তিনিই কি ভারতে মুসলমান নিয়ে এলেন? না৷
আমরা দেখেছি হিন্দু রাজা দাহিরের সেনাপতি আল্লাফি রাতের অন্ধকারে আরেক হিন্দু রাজা রামলকে আক্রমণ করে পরাজিত করেছেন৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভারতে মুসলমান আসে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে। হজরত মহম্মদের জীবদ্দশাতেই ভারতে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে কেরলে৷ প্রথম যিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন তিনি রাজা৷ হিন্দু রাজা৷ শেষ চেরামন পেরুমল৷ রাজার দেহরক্ষীরা ব্রাহ্মণ৷ অমাত্যরা ব্রাহ্মণ৷ তাঁরা প্রজাদের প্রতি অন্যায় করলে কোনও প্রতিকার মিলছে না৷ চার বেদ পঞ্চম বেদ কোথাও ব্রাহ্মণদের শাস্তি বিধানের প্রসঙ্গ নেই৷ রাজা চিন্তিত, ক্ষুব্ধ, বিচলিত৷ এই সময় আরব থেকে আসা কিছু বণিকের কাছে শুনলেন, এক নতুন ধর্মের কথা৷ যেখানে রাজা থেকে প্রজা সবাই সমান৷ সবার সমান অধিকার—জাতিভেদ নেই, বর্ণভেদ নেই, বৈষম্য নেই৷ রাজা চেরামন ইসলাম ধর্মগ্রহণে করে গেলেন মক্কা, হজ করতে৷ ঠিক করলেন ফিরে রাজ্যের সব প্রজাকে বলবেন, ইসলাম গ্রহণ করে৷ ফেরার সময় জাহাজডুবিতে মৃত্যু হল তাঁর৷ কিন্তু ইসলামের বিজয় থামল না৷ আরব বণিক যাঁরা ব্যবসা করতে এলেন তাঁরা বিয়ে করতে লাগলেন স্থানীয় নারীদের৷ অনেকে বসবাস করতে শুরু করলেন৷ নাম হল স্থানীয় ভাষায় মোপলা৷ মালায়ালম ভাষায় ‘মাপ্পিলিয়া’ বা ‘মাপ্পিলাই’—মানে নব বিবাহিত বর। এই মোপলাদের বিখ্যাত বিদ্রোহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল৷ ত্রিশ হাজার মানুষ শহিদ হয়েছিলেন৷
রবীন্দ্রনাথের ‘কালান্তর’-এ আছে মালাবারের এক রাজা পরিবারের একজনকে মুসলমান হওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন৷ বাণিজ্যের স্বার্থে৷ হিন্দুদের যেহেতু মনুবাদী তথা ব্রাহ্মণ্যবাদী বিধানে কালাপানি বা সমুদ্র পার হওয়া নিষেধ৷ অতএব মুসলমান হয়ে বাণিজ্য রক্ষা৷
কেরল একটি অসামান্য দেশ৷ ভারতে প্রথম মসজিদ৷ ভারতে প্রথম চার্চ এখানে খ্রিস্টিয় প্রথম শতকেই৷ ইহুদির প্রথম উপাসনালয় এখানে৷
মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
তাঁরা বহিরাগত, ভারতে ধর্ম প্রচার করেছে তরবারির জোরে৷
তাঁরা ঐক্যবদ্ধ৷ হিন্দুদের ওপর জোট বেঁধে হামলা করে৷
মুসলমান পুরুষরা ৪টি করে বিয়ে করে৷
মুসলমানরা কথায় কথায় তালাক দিয়ে দেয়৷
মুসলমান ধর্মে মেয়েদের কোনো স্বাধীনতা নেই৷
বোরখা পরিয়ে রাখে, হিজাব পরায়।
সব জঙ্গিই মুসলমান৷
মুসলমানরাই গোমাতাকে সম্মান করে না৷ গরু খায়৷
মুসলমানদের মধ্যে অপরাধী বেশি৷
একে একে উত্তর শোনা যাক—
মুসলমানরা তরবারির জোরে ইসলাম প্রচার করেছে
উত্তর : এটি চরম মিথ্যা৷ প্রথম ইসলাম ধর্মগ্রহণকারী ব্যক্তি রাজা চেরামন পেরুমল, ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে। তখনও ভারতে কোনো তথাকথিত মুসলিম আক্রমণ হয়নি৷ প্রথম আক্রমণ হয় ৭১২ খ্রিস্টাব্দে৷ ৬৩৬-এ একটি অভিযান হয়েছিল৷ খলিফা ওমরের আপত্তিতে তা বন্ধ হয়৷ মুঘল আমলে আগ্রার জনসংখ্যার মাত্র ১% ছিল মুসলিম৷ তথাকথিত ৭০০ বছরের মুসলিম শাসনের পরও দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ১৩%৷ ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ মিলিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা—১৬ + ২৩ + ১৬ কোটি = ৫৪ কোটি৷ যেখানে জন্ম সূত্রে হিন্দু জনসংখ্যা ১১০ কোটি৷ তরবারির জোরে ধর্মান্তরিত করলে ১১২ কোটি হিন্দু ভারতীয় উপমহাদেশে থাকত? ১৮৭৩-এ প্রথম জনগণনা হয়৷ তাতে দেখা যায় অবিভক্ত বাংলায় হিন্দুর সংখ্যা মুসলমানের চেয়ে বেশি৷
ইংরেজ আমলে ১৮৮১-তে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ল৷ কেন? বিবেকানন্দ বলছেন, ব্রাহ্মণ জমিদারদের অন্যায় ও অত্যাচারের ফলে৷
মুসলমানরা খুব ঐক্যবদ্ধ?
উত্তর : তাহলে ইরাক-ইরানে ঝামেলা কেন? আইসিস যে ১০ লাখ মানুষ মেরেছে তার ৯৯.৫% মুসলমান৷ সিরিয়া, ইরাক, ইরানে তাঁরা হামলা করছে৷ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একটা গোলাও ছোড়েনি৷ যদিও আইসিস আসলে সি আই এ এবং ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দ্বারা তৈরি৷ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হল কেন? শিয়া-সুন্নি কুর্দরা পরস্পরের সঙ্গে মারামারি করে কেন? তালিবানরা আফগানিস্তানে হামলা চালায় কেন? কাদের মারে? পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা কারা করে? কারা মরে? বাংলাদেশে জামাত এত মুসলমান মারে কেন?
মুসলমান পুরুষরা চারটি করে বিয়ে করে
ভারতে ২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী নারী পুরুষের ১০০০ জন পুরুষে ৯৩৬ জন নারী৷ মুসলমানদের মধ্যে নারীর সংখ্যা একটু বেশি৷ যেহেতু মুসলিম ধর্মে কন্যাভ্রূণ হত্যা পাপ৷ ১০০০ জন পুরুষে ৯৫৬ জন নারী৷ তা সব পুরুষ তো বিয়ে করারই মেয়ে পান না৷ একজন চারটে বিয়ে করবেন কী করে? আর বলুন তো, কতজন মুসলিম পুরুষকে আপনি বা আপনারা দেখেছেন চারটি বউ নিয়ে ঘর করতে৷ নিদেন পক্ষে দুটি?
২০১১-র ভারতের জনগণনা রিপোর্ট বলছে হিন্দুদের মধ্যে বহু বিবাহ বেশি৷ ৫.৩৬ শতাংশ৷ আর মুসলমানদের মধ্যে ৪.২%৷ বিজেপি সরকারের প্রয়াত মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের দুই স্ত্রী৷ করুণানিধির তিন স্ত্রী৷ রামচন্দ্রনের ছিল দুই স্ত্রী৷ এন টি রামা রাওয়ের তিন স্ত্রী৷ গোয়ায় হিন্দুদের মধ্যে বহুবিবাহ আইন প্রচলিত৷ দক্ষিণ ভারতেও এই প্রথা আছে৷ ভাগ্নিকে পর্যন্ত মামা বিয়ে করতে পারে৷ দেবদাসী প্রথা আজও বিদ্যামান৷ কোথায় কোথায় ব্রাহ্মণ পুরোহিত ধর্মের নামে উলঙ্গ রাখে নারীকে৷ যখন তখন ভোগ করতে পারে৷
মুসলমানরা কথায় কথায় তালাক দিয়ে দেয়
এটি একটি বহুল প্রচারিত মিথ্যা৷ কোরানের মতে সবচেয়ে অপ্রিয় কাজ তালাক৷ এতে খোদার আসন কেঁপে ওঠে৷ একসঙ্গে তিন তালাক বললেই তালাক হয় না৷ রাগের মাথায় বা নেশার ঝোঁকে, বা হোয়াটসঅ্যাপে তালাক গ্রাহ্য নয়৷ মুসলিমধর্মের সব বিবাহই লিখিত৷ তালাক বা বিচ্ছেদও লিখিত হতে হয়৷ মৌখিক তালাক মূল্যহীন৷ বিয়ের সময় দেনমোহর তথা কন্যাপণ দিতে হয় লিখিতভাবে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী হিন্দুদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছিন্ন তথা ডিভোর্সি তথা তালাক প্রাপ্তার সংখ্যা ০.৫৬% আর মুসলিমদের মধ্যে ০.২৩%৷
‘হিন্দু’দের মধ্যে সর্বোচ্চ শাসকের স্ত্রীর মতো প্রায় ২০ লাখ নারী আছে যাঁরা স্বামী পরিত্যক্তা৷ তাঁরা মাথায় সিঁদুর দেন৷ কিন্তু স্ত্রীর অধিকার পান না৷ প্রসঙ্গত সংঘ পরিবার মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার এবং ডিভোর্সের অধিকারের তীব্র বিরোধী ছিল৷ এঁদের ও হিন্দু মহাসভার চাপে এই অধিকার সংক্রান্ত বিল পাশ করাই যায়নি৷ আম্বেদকর আইনমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন৷ শেষে জহরলাল নেহরু পদত্যাগের হুমকি দিয়ে মেয়েদের সম্পত্তি ও ডিভোর্সের অধিকারে বিল পাশ করান৷ তবু মনে রাখবেন, বহু মহিলাই বাপের বাড়িতে যেতে পারবেন না বা ভাইফোঁটা জামাইষষ্ঠীতে ডাক পাবেন না—ভেবে সম্পত্তি নেন না৷ মুসলিম মহিলারা কিন্তু বিয়ের সময়ই ফারাজ বা পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার পান—এটা জেনে যান৷ শতকরা ৯৯% মহিলা তা পানও৷
মুসলমান ধর্মে মেয়েদের কোনও স্বাধীনতা নেই
বাংলাদেশে গত ৩২ বছর ধরে শাসনক্ষমতায় হাসিনা, নয় খালেদা৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো৷ মেয়েরা সম্পত্তির অধিকার পান৷ পুরুষকে তালাক তথা ডিভোর্স দিতে পারেন৷ এর পোশাকি নাম খোলা (Khola)৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে তালাক৷ নারীদের ক্ষেত্রে খোলা৷ বিয়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে মুসলিম নারীদের শাদি কবুল না বলে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার অধিকার আছে৷ আমার নিজের মা আজ থেকে ৬৮ বছর আগে ১৯৫৫-তে এই অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন৷ পাত্রপক্ষকে বিয়ের আসর থেকে ফিরে যেতে হয়৷ পরে আমার বাবার সঙ্গে বিয়ে হয়৷ মুসলিম ধর্মে পতিতা, লগ্নভ্রষ্টা এসব প্রথা নেই৷ বিধবা বলে কোনও আনন্দ অনুষ্ঠানে বঞ্চিত হওয়া নেই৷ নারীরাও নামাজ পড়তে পারেন৷ পড়াতে পারেন৷ বিবাহিতা কন্যা সন্তানের মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী নয়, তাঁর সম্পত্তির অধিকারী হন তাঁর মা৷ পিতা নন, মা৷ বোরখা বাংলার শতকরা ৯৯% মহিলা পরেন না৷ তবে ইদানীং হিজাব বাড়ছে। ঘোমটা সব সম্প্রদায়েই আছে৷ মুসলিম নারীকে কোনও সিঁদুর, শাখা, পলার মতো কোনও বিশেষ বিবাহ চিহ্ন ধারণ করে ঘুরে বেড়াতে হয় না৷ দেখে বোঝার উপায় নেই কোন মুসলিম মহিলা বিবাহিত, আর কে নয়? উল্টোটাই কিন্তু হিন্দু সমাজে প্রচলিত৷ তবে ইদানীং সব ধর্মেই ধর্মান্ধতা বাড়ছে৷ আরবিয় সংস্কৃতিও বাড়ছে৷ হিজাব বোরখাও বাড়ছে৷
সব জঙ্গিই মুসলমান
এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কিছু নেই৷ ভারতে ১১টি রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চলছে৷ মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, অরুণাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং কাশ্মীর৷ ১২টির মধ্যে একটি মাত্র মুসলিম অধ্যুষিত৷ কাশ্মীর। আমেরিকায় গোয়েন্দা সংস্থা এফ বি আই সন্ত্রাসী সংগঠনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে৷ এর মধ্যে মাত্র ৫% সংস্থা মুসলিম পরিচালিত৷ পৃথিবীর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ৫% মাত্র মুসলিমদের দ্বারা৷ ইহুদিদের দ্বারা ২৪%৷ খ্রিস্টানদের দ্বারা ২৬%৷ কিন্তু সে নিয়ে কোনও কথা নেই৷ আর আইসিস তো ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেই দিয়েছেন আমেরিকা আর ইজরায়েলের দ্বারা তৈরি৷ আইসিসের প্রধান বাগদাদির আসল নাম জন ইলিয়ট৷ ইনি ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট৷ তালিবান, লস্কর-ই-তৈবা, আল কায়েদা সব কমিউনিস্ট ঠেকাতে সি আই এ-র অর্থ ও মদতে তৈরি৷
মুসলমানরাই গো মাতাকে সম্মান করে না,
তারাই কেবল গরু খায়
গরু আর্যরাও খেত৷ স্বয়ং রাম এবং সীতা খেয়েছেন৷ জামদগ্ন্য মুনির আশ্রমে গেলে তাঁদের গো-মাংস দিয়েই অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে৷
উপানায়ত ধর্মাত্মা গামর্ঘ্যমুদকং ততঃ৷
(অযোধ্যাকাণ্ডম্, চতুঃপঞ্চাশ সর্গ, শ্লোক ৮৯)
মহাভারতে ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে অষ্টাশিতম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘পিতৃশ্রাদ্ধে গো-মাংস দিলে এক বৎসর তৃপ্তি লাভ হইয়া থাকে’৷ (দ্রষ্টব্য : লেখকের ‘সূক্ষ্ম সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতা’ গ্রন্থ)। ভারতে ১৭ কোটি মুসলমান৷ এদের সবাই গো-মাংস খান না৷ তবু দেশে গো-মাংস ভক্ষণকারীর সংখ্যা ৭৫ কোটির বেশি৷ কেরলে ৮ জুন ২০১৫ বিধানসভার অধিবেশন শুরুই হয়েছে গো-মাংস খেয়ে৷ শতকরা ৯০% মানুষ কেরলে গো-মাংস খান৷ বিজেপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক্তন কিরণ রিজিজু স্বয়ং গো-মাংস খান৷ মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, মণিপুরের অধিকাংশ মানুষ গো-মাংস খান৷ খান সিকিম, নেপালের হিন্দুরাও৷ বিজেপি নেতা কেরলে ভোট দিলে ভালো গো-মাংসের কসাইখানা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ ভারতের সেরা ছয়টি কসাইখানার মালিক হিন্দু বা জৈন৷ এবং তাঁরা আর এস এস নেতা৷ উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে ফ্রিজে গো-মাংস আছে বলে আকলাখকে পিটিয়ে মারা বিজেপি নেতা সঙ্গীত সোমের গো-মাংস কারখানা আছে৷
২০১৪ খ্রিস্টাব্দে বিজেপি আসার আগে ভারত পৃথিবীতে গো-মাংস রপ্তানিতে চতুর্থ ছিল৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর পৃথিবীতে গো-মাংস রপ্তানিতে দ্বিতীয় হয়েছে৷ ক্যাপসুল, ইনসুলিনসহ ১০০ রকমের ওষুধ তৈরি হয় গরু এবং গো-মাংস দিয়ে৷ পুজোর ঢাক বাজে গোরুর চামড়ায়৷ পায়ের জুতোটিও৷
মুসলমানরা অপরাধী বেশি
হ্যাঁ, বেশিরভাগ পকেটমার, কাজ না পেয়ে পকেটমারি করে, কাগজে তাঁদের নাম বের হয়, তাঁরা মুসলমান৷ কত টাকা পায় পকেটমারি করে? দাউদ ইব্রাহিম মুসলমান৷ কিন্তু বাকি নামগুলো হাওয়ালা, গাওয়ালা, শেয়ার কেলেঙ্কারি, সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ, আজমীর বিস্ফোরণ, মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ, গুজরাত গণহত্যা, থানে গণহত্যা—কারা দায়ী? মুসলিম পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রম দেখেছেন? বাবা-মাকে পিটিয়ে পুড়িয়ে মেরে ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা নামের ১%-ও মুসলিম? বধূ পুড়িয়ে, মারার ঘটনায় কি ১%-ও কি মুসলিম? কন্যা, আত্মীয়া, ভাইঝি, ভাগ্নি, নাতনিকে ধর্ষণকারীদের ২%-ও কি মুসলিম?
‘মুসলমান’ নাম হলে ছাপা হয়, ‘হিন্দু’ নাম চেপে যায় মিডিয়া৷ ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা যারা মেরে দিচ্ছে সেই আদানি, আম্বানি, মালিয়া, ললিত মোদিরা কেউ মুসলিম? ওষুধে ভেজাল, ভেজাল তেলের কারখানা গড়ছে—কতজন মালিক মুসলিম? পি এফ ফাঁকি দিচ্ছে—লক আউট ছাঁটাই করছে৷ কতজন মুসলিম? এগুলি অপরাধ নয়? শুধু পটেকমারি আর ছিঁচকে চুরি অপরাধ? স্বামীকে খুন করানো মনুয়া যদি মুসলিম হতো, তাহলে দেখতেন প্রথম পাতায় খবর প্রতিদিন থাকত৷
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন