রূপকথার পাহাড়

রাস্কিন বন্ড

রূপকথার পাহাড়

প্রায়ই দেখতাম পরীর পাহাড়ে উপরে বিন্দু বিন্দু সবুজরঙা আলো ঝিকমিক করছে। এর নির্ঘাত কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকবেই, এ ব্যাপারে আমি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলাম। আঁধার নামার পর আমরা নানা কিছু দেখি বা শুনি যা আপাতদৃষ্টিতে রহস্যময় বা অযৌক্তিক ঠেকে, কিন্তু দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সেইসব ভোজবাজি বা রহস্যের জট খুলে যায়।

বনের একেবারে প্রান্তে আমার ছোট্ট একচিলতে কুঁড়েঘর। রাত-বিরেতে যখন শহর থেকে ঘরে ফিরতাম, তখন কখনো-সখনো আমি ওই আলোর বিন্দু দেখেছি। এত দ্রুত তারা ছোটছুটি করত যে সেগুলি মোটেই কোনো মানুষের মশাল কিংবা লন্ঠন হতে পারে না। আর পরীর পাহাড়ের ওপরে কোনো রাস্তা নেই, তাই ওগুলি সাইকেল বা অন্য গাড়ির আলো হওয়াও সম্ভব নয়। কে যেন আমায় একবার বলেছিল, পাহাড়ের গায়ে নাকি প্রচুর ফসফরাস আছে আর গভীর রাতে পাহাড়ি এলাকায় ওই দ্যুতিমান আলোর নৃত্যের সম্ভাব্য কারণ ওই ফসফরাস। কিন্তু এই যুক্তি স্বভাবতই আমার মনে ধরেনি।

দিনের ফুটফুটে আলোয় একদিন ছোট্ট ছোট্ট মানুষগুলোকে আমি দেখেছিলাম।

এপ্রিলের এক সকালে হঠাৎই মাথায় খেয়াল চাপল, পরীর পাহাড়ে উঠব, তাই সেখানে গিয়ে চারপাশটা একটু মেপে নিলাম। হিমালয়ের পাদদেশে পাহাড়ি এলাকায় তখন বসন্ত নেমেছে। অফুরান প্রাণশক্তির প্রকাশ হচ্ছে চতুর্দিকে, গাছে গাছে, ঘাসে ঘাসে, বুনো ফুলে, আমার শিরায় শিরায়। আমি ওক বনের পথ ধরলাম, সে পথ চলে গেছে পাহাড়ের একদম তলদেশের ছোট্ট ঝরনার দিকে, তার ঠিক উপরেই শুরু হয়েছে পরীর পাহাড়। পাহাড়ের ঢাল অত্যন্ত খাড়া, প্রায় গুঁড়ি মেরে চুড়োয় পৌঁছাতে হয়।

এই পথ শেষ হয়েছে ঢালের নিম্নপ্রান্তে ওই ঝরনায়। আমাকে রীতিমতো কাঁটাঝোপ হাত দিয়ে সরিয়ে, ঘাসের ডগা খামচে উপরে উঠতে হচ্ছিল। ইতিউতি ছড়িয়ে আছে পাইন গাছের ভাঙা মাথা আর পথ সেখানে এতটাই পিচ্ছিল যে এগোনো খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল। তবু শেষমেশ একসময়ে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছালাম। পাহাড়ের মাথাটা চ্যাপটা, সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া বিস্তৃত প্রান্তর আর তা পাইন, আপেল জাতীয় মেডলার গাছে ঘেরা। এই সময়ে সাদা ফুলে ভরে আছে গাছগুলি।

চমৎকার একটি জায়গা, দেখলেই মন ভরে যায়। তবে বেশ গরম বোধ হচ্ছিল আর ঘামছিলাম, তাই জামাকাপড় যা পরেছিলাম বেশিরভাগটাই খুলে ফেললাম, তারপর একটা মেডলার গাছের তলায় বসে পড়লাম। একটু বিশ্রাম না নিলেই নয়। উঠতে গিয়ে যা খাটুনি হল। কিন্তু পরক্ষণেই এক ঝলক তাজা বাতাসে সে কষ্ট দূর হয়ে গেল। সারি সারি পাইন গাছের মধ্যে বাতাসের গুঞ্জন উঠছিল। সামনের ঘাস সোনালি রঙের ফুলে সিক্ত হয়ে আছে, ঝিঁঝিঁ পোকা আর ফড়িং-এর শব্দে চারদিক মুখরিত।

কিছুক্ষণ পরে উঠে দাঁড়িয়ে এই অভূতপূর্ব দৃশ্য প্রাণভরে দেখতে লাগলাম। উত্তরে ল্যান্ডোর শহর আর তার শ্যাওলা পড়া লালরঙা ছাতওয়ালা সব বাড়ি, দক্ষিণে অনেকটা বিস্তৃত উপত্যকা, ছোটো একটি নদীর রুপোলি ধারা চলে গেছে গঙ্গার দিকে। পশ্চিমে ঘিরে আছে পর্বতমালা, ইতিউতি সবুজ বনানী আর পর্বতের একটি ভাঁজে ছোট্ট এক গ্রাম।

আমার উপস্থিতিতে সচকিত হয়ে একটা বার্কিং ডিয়ার উলটো দিকের ঢালের খোলা প্রান্তরের দিকে দৌড় দিল। এক ঝাঁক লম্বা লেজওয়ালা নীলরঙা ম্যাগপাই পাখি এদিকের ওক বন থেকে উড়ে সামনের টিলাটা পেরিয়ে আরেকটা ওক বনের দিকে গেল।

আমি তখন একা, আকাশ বাতাসকে সঙ্গী করে একা দাঁড়িয়ে আছি। গত বহু মাস এমনকি বহু বছরেও এই এলাকায় মানুষের পা পড়েছে কিনা সন্দেহ। এখানে উচ্ছ্বল সবুজ ঘাসের আহ্বান উপেক্ষা করা যায় না। আমার পায়ের চাপে ওই ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পুদিনা, শুঁটিগুল্ম থেকে কোমল ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছিল। একটা গুবরে পোকা আমার পা বেয়ে উঠছিল, এবার শরীরময় ঘুরে বেড়াবে। পরক্ষণেই দেখলাম, এক ঝাঁক সাদা প্রজাপতি আমার চারপাশে ডানা মেলে দিল।

দেখতে দেখতে আমি একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

কতক্ষণ যে ঘুমিয়েছি তার হিসেব নেই। যখন চোখ মেললাম, মনে হল সারা শরীরে অন্যরকম এক অনুভূতি, বেশ আরাম বোধ হতে লাগল। মনে হল, সমস্ত শরীরে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে কেউ যেন মৃদু টোকা দিয়ে চলেছে।

ঘুম ঘুম ভাবটা পুরোপুরি কেটে গেলে, চোখ মেলে চারিদিক দেখলাম, একটা ছোট্ট মেয়েকে খুঁজছিলাম, নাকি কোনো পূর্ণবয়স্কা মহিলা?— ইঞ্চি দুয়েক লম্বা, আমার বুকের উপর জোড়াসন করে বসে একদৃষ্টে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছিল। মেয়েটির মাথায় লম্বা কালো চুল বিনুনি করা, গায়ের রঙ টাটকা মধুর মতো, ছোটো ছোটো ওক ফলের মতো দৃঢ় দুটি বুক। নিজের মাথার থেকেও বড় সাইজের একটা ঝুমকো হলুদ ফুল তার হাতে, ওইটি দিয়ে আমার শরীরে টোকা দিচ্ছিল সে।

সারা শরীর অনুরণিত হল আমার। সমস্ত ইন্দ্রিয় সচল হয়ে উঠল, আনন্দের ঢেউ খেলে গেল সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে।

একটা খুব ছোট্ট ছেলে নাকি লোক, কী বলা ঠিক হবে জানি না, একদম উলঙ্গ, এসে ওই মেয়েটির পাশে দাঁড়াল। তারপর দুজনে হাত ধরাধরি করে আমার চোখের দিকে চেয়ে রইল। দুজনে মিটিমিটি হাসছিল। ছোটো ছোটো মুক্তোর মতো তাদের দাঁত, পাম ফুলের কোমল পাপড়ির মতো ঠোঁট। তারা কি প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো আত্মা-টাত্মা? নাকি আমার স্বপ্নে দেখা সেই ফুলের পরী?

মাথা তুলতেই দেখলাম আমার শরীরের উপরে ওইরকম ছোটো ছোটো বহু মানুষ উঠে আসছে। শান্ত স্বভাবের ক্ষুদ্র মানুষগুলি আমার হাত, পা, শরীরের বাকি অংশ টিপে টিপে পরীক্ষা করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার আমার সারা দেহে শিশির, পরাগ বা কোনো প্রকার মনোরম সুগন্ধি ছড়িয়ে দিচ্ছিল। আমার আবার চোখ বুজে এল। এক অনাবিল দৈহিক সুখ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কোনোদিন আমার এ অভিজ্ঞতা হয়নি। এ যেন অনন্তকাল ব্যাপ্ত করে আছে, আমার সমস্ত চেতনাকে অধিকার করে নিচ্ছিল একে একে। মাথার উপর আকাশটা যেন পাক খেতে লাগল, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

ঘণ্টাখানেক বাদে যখন জ্ঞান ফিরল তখন ওই লোকগুলি চলে গেছে। বাতাসে তখনও সেই ফুলের সুঘ্রাণ। হঠাৎ মাথার উপরে গুড়গুড় শব্দে চমক ভাঙল। দেখি আকাশে কালো মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। এখুনি বৃষ্টি নামবে। মেঘ ডাকার আওয়াজে কি তারা সব পালিয়ে গেল? বোধহয় পাথর, গাছের শিকড়ের আড়ালে তাদের বাড়ি-ঘর, ওখানেই লুকিয়েছে কি সব? নাকি অচেনা অতিথির সঙ্গে খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছে? তবে তারা যে অত্যন্ত দুষ্টু এখন তা টের পেলাম, আমার জামা-কাপড় বেমালুম হাওয়া করে দিয়েছে হতভাগারা।

তবে মনের মধ্যে হঠাৎ ভয় চেপে বসল। পাগলের মতো এদিকে ওদিকে ছুটে বেড়ালাম, তন্নতন্ন করে খুঁজলাম ঝোপঝাড়, গাছের গুঁড়ির আড়াল, নাহ! কোনো লাভ হল না। ওই পরীর দলের সঙ্গে সঙ্গে আমার জামা-কাপড়ও গায়েব হয়ে গিয়েছে, যদিও জানি না ওরা সত্যিই পরী কিনা।

এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বড়ো বড়ো জলের ফোঁটা শুকনো পাথরের উপর আঘাত হানছিল। এরপর আরম্ভ হল শিলাবৃষ্টি। দেখতে দেখতে পাহাড়ের ঢাল বরফে ঢেকে গেল। মাথা গোঁজবার কোনো ঠাঁই পেলাম না। গায়ে তখন সুতোটিও নেই। পাহাড়ের ঢালের একদম নীচের দিকের ওই নদীটা লক্ষ করে নামতে শুরু করলাম, যত দ্রুত সম্ভব। এখানে কেউ আমায় দেখার নেই। শুধু কতগুলো পাহাড়ি ছাগল উলটো দিকে দৌড় দিল। বাতাসের প্রবল ঝাপটায় বৃষ্টির ধারা ওলোট-পালট হয়ে যাচ্ছিল, আর আমার মুখ, সারা শরীরের উপর ওই শিলাবর্ষণের আঘাত টের পাছিলাম। ঠকঠক করে কাঁপছি রীতিমতো তখন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে, কারণ হঠাৎ ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা বড়োসড়ো পাথর অন্য একটি পাথরের সঙ্গে আলগাভাবে লেগে এমনভাবে ঝুলে আছে যে একটা ভালোমতন আচ্ছাদন তৈরি হয়ে গিয়েছে, আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে সেটার তলায় দাঁড়িয়ে ঝড় থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম। দুর্যোগ যখন থামল তখন ধীরে ধীরে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে। দ্রুত পায়ে কটেজের দিকে রওনা হলাম, প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছিল চারদিক, তাই কারোর মুখোমুখি হতে হল না, নইলে লজ্জার একশেষ ছিল। শুধু একদল লেঙ্গুর আমার আমাকে দেখে হতচকিত হয়ে কিচিরমিচির শুরু করে দিল, বোধহয় আমাকে নিয়েই হাসাহাসি করছিল।

কাঁপুনিটা থামছিল না কিছুতেই, তাই বাড়ি ফিরেই সোজা শয্যা নিলাম। তারপর এক ঘুমে বিকেল পেরিয়ে সন্ধে ছাড়িয়ে রাত কাবার করে উঠলাম পরের দিন সকালে, তখন গায়ে ধুম জ্বর।

অভ্যাসমতো জামা-প্যান্ট পরে অল্প কিছু প্রাতরাশ সেরে নিলাম। সকালের মধ্যে কিছু টুকিটাকি কাজও সারতে হবে। গায়ের তাপমাত্রা মেপে দেখি ১০৪ উঠে গেছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে ব্রুফেন ট্যাবলেট খেয়ে আবার ঘুম দিলাম।

পিয়নের ডাকে ঘুম ভাঙল। দেখি সূর্য পাটে বসার তোড়জোড় করছে। বহুদিনের অভ্যাস ভাঙলাম সেদিন, চিঠির খামগুলো না খুলেই টেবিলে রেখে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

সে জ্বর ছিল প্রায় এক সপ্তাহ। জ্বর গেলে দেখলাম খুব দুর্বল আর নিস্তেজ হয়ে পড়েছি। আর ইচ্ছে থাকলেও পরীর পাহাড়ে ওঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই আর কী করি, জানলায় হেলান দিয়ে বসে দেখছিলাম ওই কালো পাহাড়টির মাথায় মেঘের দল ঘোরাফেরা করছে। দেখে মনে হবে নির্জন, জনশূন্য, কিন্তু আমি জানি আশ্চর্য সব জীবেরা ওখানে বাস করে। অন্ধকার নেমে এলে অপেক্ষা করছিলাম কখন ওই সবুজ পরীর আলোগুলি আবার জ্বলে উঠবে, কিন্তু সেদিন আর তারা দেখা দিল না।

অগত্যা ফিরে এলাম আমার লেখার টেবিলে, সেখানে আমার টাইপরাইটার অপেক্ষা করে আছে, অপেক্ষা করে আছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবে এমন কিছু আর্টিকল আর একরাশ চিঠিপত্র। নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছি সেসময়। বিয়েটাও টিকল না। আমার স্ত্রী ছিল উচ্চাভিলাষী, সমাজের উঁচুতলার লোকেদের সঙ্গে তার যাতায়াত, তার মতো মানুষ বনের মধ্যে একটা কটেজে এমন চালচুলোহীন লেখকের সঙ্গে বাস করবে কীভাবে? তাই সে নিজের পথ দেখে নিল, শুনেছি মুম্বাই পাড়ি দিয়ে এখন দুর্দান্ত জীবন কাটাচ্ছে। টাকা উপার্জনে কোনোদিনই আমার মন নেই, কিন্তু ও চাইত অনেক অনেক টাকা। তাই যা হবার হল। আমার বইপত্র আর আমার তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নকে ফেলে একদিন সে এই বাড়ি ত্যাগ করল।

আচ্ছা, পরীর পাহাড়ে যে আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হল তা কি শুধুই স্বপ্ন? কল্পনার মাত্রা বেড়ে ওই উচ্চমার্গের অশরীরী আত্মা-টাত্মার সঙ্গে মিলে মিশে কি নিছক ভোজবাজি? নাকি তারা পাহাড়ের দুর্লঙ্ঘ্য গর্ভে বাস করা মানুষজন? এও জানি যদি আমি আর পাঁচজনের মতো জীবন কাটাতে চাইতাম তবে আরো তীব্রভাবে জীবনের সাংসারিক দিকগুলির সঙ্গে জড়িয়ে পড়তাম— শহরে গিয়ে বাজার করা, ফুটো ছাদ সারানো, ইলেকট্রিসিটির বিল জমা দেওয়া, পোষ্টঅফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দেওয়া, পুরোনো চেকপত্তর জমা করার তারিখ মাথায় রাখা— এসব নিয়েই দিন কাটত। রুটিনে বাঁধা ওই নিষ্প্রাণ জীবনে একসময় আমি হাঁফিয়ে উঠতাম।

সত্যিটা হল, আমরা সাধারণত জীবন বলতে যা ভাবি তাকে মোটেই বেঁচে থাকা বলে না। প্রতিদিনের গতে বাঁধা কাজকর্মকে আমরা বলি জীবনের ধারা, কিন্তু তা আসলে জীবনের অভিশাপ। এসব আমাদের একঘেয়ে, গতানুগতিক বানিয়ে দেয়, বৈচিত্র্য কেড়ে নেয়। এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি, আসলে জীবনে একটু মর্যাদার জন্য হন্যে হয়ে যাই, চাই এমন কিছু যা আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণ করে, কিন্তু তা না পেলে কিছু সময়ের জন্য সব কিছু ভুলে থাকতে চাই, তখন সঙ্গী হয় মদ, ড্রাগ, নিষিদ্ধ যৌনতা এমনকি গলফ-কোর্স। তাই যদি মাটির নীচে ওই পরীরাজ্যে যেতে পারতাম তবে খুশিই হতাম। মানুষের হত্যালীলা থেকে বাঁচতে ওই ছোট্ট ছোট্ট মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে পৃথিবী মায়ের কোলে, ওরা ওই প্রজাপতি কিংবা ফুলগুলির মতোই আজ মহাবিপদের মধ্যে আছে। যা কিছু সুন্দর তাকে তো সহজেই ধ্বংস করা যায়।

চারপাশে গাঢ় অন্ধকার নেমে আসছিল, জানলার পাশে বসে এই উটকো ভাবনাগুলি লিখে রাখছি আমার নোটবুকে। আবার ওদের দেখতে পাচ্ছি, হাতে হাত ধরে এগিয়ে আসছে কুয়াশার আবর্ত থেকে। আবারও সামনে আলোর বিচ্ছুরণ, তবে এবার শুধু সবুজ নয়, রামধনুর সবকটি রঙে দীপ্যমান তারা, পরীর পাহাড় থেকে আমার জানলার প্রান্ত অবধি সেই আলোয় তৈরি হয়েছে দীর্ঘ এক রামধনু, সে পথ বেয়েই এগিয়ে আসছে তারা।

আমি যেতে প্রস্তুত, আমি তাদের সঙ্গে যেতে চাই তাদের অজ্ঞাত পৃথিবীতে, কিংবা উচ্চমার্গের কোনো স্থান— সে যাই হোক— আমাদের পৃথিবীর দমবন্ধ হয়ে আসা এই রুদ্ধ জীবন থেকে অনেক অনেক দূরে।

এসো তোমরা, এসো হে পরীরা, আমাকে নিয়ে যাও, গ্রীষ্মের সেই দিনের পরিপূর্ণ স্বাদ আমি আবারও আস্বাদন করতে চাই, ফিরিয়ে দাও সেই অনুভব আরো একবার।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন