রাস্কিন বন্ড
রাস্কিন বন্ডের A Season of Ghosts বইটির শিরোনামে ‘Ghosts’ শব্দটি থাকলেও, লেখক বইটিতে নয়টি ভৌতিক, অলৌকিক ছোটোগল্পের সঙ্গে একটি উপন্যাসিকা অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা আদপেই কোনো ভৌতিক গল্প নয়। তিনি বইটির ভূমিকাতে বলেই নিয়েছেন, ‘This novella included in this book is not a ghost story but rather a light-hearted attempt at writing a detective story.’ ইংরেজি ভাষায় উপন্যাসিকাটির নাম ‘Who Killed the Rani?’ মূল বইটির ভূমিকায় লেখক রাস্কিন বন্ড এ বিষয়ে একটি ছোট্ট কাহিনির অবতারণা করেছেন যা এইবেলা বলে রাখা দরকার।
কাহিনির প্রেক্ষাপট মূল লেখারও বেশ কিছু বছর আগের মুসৌরি শহর। সে-শহরে তখনও রাস্তাঘাট উন্নত হয়নি, পুলিশকে পাথুরে পথে পায়ে হেঁটে তদন্তে যেতে হয়, কিন্তু সেখানে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অপরাধ প্রায় হত না বললেই চলে। কিন্তু হঠাৎই একদিন শিরোনামে উল্লিখিত রানিমা খুন হয়ে যান এবং তাঁর তদন্তে নামে লোকাল থানার ইনস্পেকটর কিমাত লাল। তবে এই অফিসার মোটেই সাহিত্যজগৎ কাঁপানো গোয়েন্দাদের মতো নন, বরং বেশ অলস প্রকৃতির, আবার মাথায় বেশ বুদ্ধি ধরেন। আর তার জোরেই শেষ পর্যন্ত খুনিকে পাকড়াও করেন। তবে খুনির পরিচয় জানবার মুহূর্তে তিনি এক ভয়ানক ঘটনার মুখোমুখি হয়েও স্রেফ বুদ্ধি এবং অস্বাভাবিক ক্ষিপ্রতার জোরে প্রাণে বাঁচেন। আবার এই সংকটের মুহূর্তেই আমরা তাঁর চরিত্রের এক অচেনা দিক আবিষ্কার করি।
তবে বাস্তবে এই উপন্যাসিকায় বর্ণিত গল্পটিতে জড়িয়ে আছে এক মর্মান্তিক ইতিহাস। লেখক রাস্কিন বন্ড দাবি করেছেন, এই ‘কিমাত লাল’ কিংবা ‘রানিমা’ আসলে বাস্তবেরই চরিত্র। তবে রানিমাকে গল্পে হত্যা করা হলেও এই গল্প লেখার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্য এবং একইসঙ্গে দুঃখজনক ঘটনাটি হল, গল্পে বর্ণিত রানিমা এই কাহিনি প্রকাশের প্রায় এক বছর বাদে বাস্তবেও রহস্যজনকভাবে প্রাণ হারান। উক্ত ঘটনায় লেখক মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পান, কারণ তিনি সত্যিই ভদ্রমহিলার এমন করুণ পরিণতি চাননি। গল্প কখনো সত্যি হয়? নাকি এটা নিছক কাকতালীয়? নাকি অজানা ভবিষ্যতের পূর্বাভাস? নাকি কোনো কোনো সময়ে আমাদের অন্তরের ভাবনা-চিন্তা এত শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে তা বাইরের ঘটনাবলিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর লেখক দিতে পারেননি। আমিও পারব না। বর্তমান ‘ভয়সমগ্র’-তে আমিও পূর্বে উল্লিখিত রাস্কিন বন্ড রচিত দুটি বইয়ের মোট সতেরোটি ভৌতিক, অলৌকিক ও অতিপ্রাকৃত গল্পের অনুবাদের সঙ্গে এই উপন্যাসিকাটিকে রেখেছি। তার মূল কারণ, লেখক বর্ণিত এই কাহিনি। অনেক সময় লিখিত গল্পকে ছাপিয়ে যায় তার প্রেক্ষাপট কিংবা বাস্তবজীবনে তার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব, যেখানে কল্পনাপ্রসূত গল্প বাস্তবরূপ নিতে শুরু করে। লেখকের মতে, এর কোনো ব্যাখ্যা নেই, একে অলৌকিক কিংবা অতিপ্রাকৃত তকমা দেওয়া ছাড়া আর কী উপায়? তাই এমন দুর্লভ ঘটনার বিবরণকে আমার মাতৃভাষায় লিপিবদ্ধ করার লোভ সামলাতে পারিনি।
অনুবাদক
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন