বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)
হাজিপুরের হাট প্রকাণ্ড হাট। রাস্তার পাশেই প্রকাণ্ড একটা গাছ আছে। প্রচুর ছায়া। সেই ছায়াতে টেবিল আর চেয়ার পেতে রোগী দেখছিলেন সদাশিব। একটি ফোল্ডিং টেবিল আর ফোল্ডিং চেয়ারও থাকে তাঁর মোটরে। রোগী অনেক। অধিকাংশই সাধারণ রোগ। ম্যালেরিয়া, আমাশয়, চোখ-ওঠা, খোস, দাদ। যক্ষ্মাও আছে দু’একটা।
একটা খাতায় নাম, অসুখের লক্ষ্মণ এবং ওষুধের ব্যবস্থা লিখে নিজে হাতেই ওষুধ দেন সদাশিব। ওষুধের প্রকাণ্ড বাক্স একটা পাশেই থাকে। তাতে খোপ খোপ করা। কুড়িটা শিশি আঁটে। সব ওষুধই ট্যাবলেট-করা। পুরিয়া-করাও আছে কিছু কিছু। আর আছে ইনজেক্শন। সেগুলো আর প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি আলাদা একটা বড় ব্যাগে থাকে। স্টেথোস্কোপ, ব্লাড প্রেসার মাপবার যন্ত্র, থার্মোমিটার, ছোট একটা মাইক্রোসকোপ, স্লাইড, স্টেন এই সব। দরকার বুঝলে ওই গাছতলায় বসেই রক্ত, প্রস্রাব, কফ প্রভৃতি পরীক্ষা করে নেন সদাশিব। আর একটা তালাবদ্ধ বাক্সও থাকে তাঁর পিছন দিকে। সেটার ডালার উপরে লম্বাটে গোছের ছিদ্র আছে একটা। তাতে ওষুধের দাম বাবদ যে যা খুশি দিতে পারে। কারো কাছে তিনি দাবি করেন না কিছু, যার যা খুশি দেয়। কেউ যদি না-ও দেয় আপত্তি করেন না সদাশিব।
তিনি এই বাক্সের ব্যবস্থা করেছেন কারণ অনেক লোক বিনাপয়সায় চিকিৎসা করাতে চায় না। আত্মসম্মানে বাধে। তাদের সম্মান বাঁচাবার জন্যেই এই বাক্সটি। বাক্সে যে পয়সা রোজ পড়ে তাতে ওষুধের দাম তো উঠে যায়ই, পেট্রোলের দামও উঠে যায়।
সদাশিব রোগী-দেখা শেষ করে উঠতে যাচ্ছিলেন এমন সময় একটি রোগা আধ-ঘোমটা দেওয়া মেয়ে এগিয়ে এসে হঠাৎ তাঁর পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ল।
“এ কে”
পাশেই একটা ট্যারা লোক দাঁড়িয়েছিল, সে অকারণে একটু হেসে বললে—“ও কেব্লী।”
“কি চায়—”
“ওর আদমিকে থানায় ধরে নিয়ে গেছে। দারোগাবাবু আপনাকে খাতির করেন, আপনি যদি বলে দেন একটু ছাড়া পেয়ে যাবে।”
“হঠাং থানায় ধরে নিয়ে গেল কেন?”
“ছবিলাল মোড়লের বাড়ি চুরি হয়েছে। তিনি ওর নাম বলে দিয়েছেন দারোগাবাবুকে-–”
“ওর নামই বা বলতে গেলেন কেন শুধু শুধু।”
“কি জানি। কেব্লী বলতে পারবে-”
কেব্লী থেমে থেমে বললে—“ছবিলালবাবু আমার ‘আদমি কে তাঁর খাপরার ঘর ছেয়ে দিতে বলেছিলেন। গতবার মজুরি দেননি বলে এবার ও যায়নি। তাই উনি আমার এই সর্বনাশ করেছেন।”
কেব্লী কাঁদতে লাগল।
সদাশিবকে বলতে হল—“আচ্ছা, আমি চেষ্টা করে দেখব।”
সদাশিব তারপর হাটের ভিতর ঢুকলেন। কিছু কিনতে হবে। প্রতি হাটেই কিছু-না-কিছু কেনেন তিনি। তাঁর সংসারে খাবার লোক কেউ নেই, তবু কেনেন। এর জন্যে মালতীর কাছে বকুনি খেতে হয়। মালতী বলে—“এত সব খাবে কে। ঘরে পড়ে শুকোবে, না হয় পচবে!” সদাশিব হেসে উত্তর দেন—“খাবার লোকের কি অভাব আছে। দাই, চাকর, তাদের ছেলেমেয়েরা, ভিকিরি—সবাইকে খাওয়াও না।” “অত ঝক্কি আমি পোয়াতে পারব না”—মালতী বলে বটে, কিন্তু পোয়াতে হয়। রোজই বাড়িতে আট-দশটা পাতা পড়ে। আজবলাল এতে মনে মনে খুব খুশি হয়, কিন্তু মুখে গজগজ করে। বলে-“একি বাজে খরচা!”
হাটে ঢুকেই সদাশিবের দেখা হল বিলাতী সাহের সঙ্গে। চালের বড় ব্যবসাদার। চক্চকে টাক, প্রকাণ্ড ভুঁড়ি। ফতুয়া একটা পরেছে বটে, কিন্তু ভুঁড়ি ঢাকেনি। ভুঁড়ো নাক, নাকের নীচে কটা রঙের সামান্য গোঁফ। বেশ ভারী মুখ। হাসলে এবড়ো-থেবড়ো হলদে দাঁত বেরিয়ে পড়ে। সদাশিবকে দেখে ভক্তিভরে প্রণাম করলে বিলাতী সাহ।
“কেমন আছ বিলাতী?”
“হুজুরকা কিরূপা। চলে যাচ্ছে।”
“আমার জন্যে চাল রেখেছ?”
“ভালো চাল এলে নিজেই পাঠিয়ে দেব।”
“আচ্ছা।”
এগিয়ে গেলেন সদাশিব তরকারির বাজারের দিকে।
কয়েকটি বড় কুমড়ো তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কুমড়ো তিনি খান না। কিন্তু কুমড়োগুলোর নধর চেহারা দেখে কিনতে প্রবৃত্ত হলেন। যে বুড়ী কুমড়ো বিক্রি করছিল সে যেন কৃতার্থ হয়ে গেল। বেশ বড় দেখে ভালো একটা কুমড়ো বেছে দিয়ে বললে— “এইঠো লে যা বেটা”
“দাম কত?—”
বুড়ী দেহাতী হিন্দী ভাষায় বললে—“তোর যা খুশি তাই দে—”
সদাশিব তাকে দুটো টাকা দিলেন।
“ওত্ না দাম নেই হোতে, আট আনা দে”
সদাশিব হেসে বললেন তিনি কুমড়োর দাম দিচ্ছেন না, তিন টাকাটা দিচ্ছেন তার মেয়ে রৌশনকে। বছরখানেক আগে বিধবা হয়েছিল সে।
সদাশিব জিগ্যেস করলেন, “রৌশনকে দেখছি না, সে কোথা?”
“তার আবার বিয়ে দিয়েছি ডাক্তারবাবু। জোয়ান মেয়েকে কতদিন আর ঘরে রাখব।”
“বেশ করেছিস।”
সদাশিবের সম্মতি পেয়ে নিশ্চিন্ত হল বুড়ী।
তারপর সদাশিব অগ্রসর হলেন মাছের বাজারের দিকে। ভালো মৌরলা মাছ ছিল। তাই কিনলেন কিছু। মাছের বাজারে দেখা হল বাবুলাল মেথরের সঙ্গে।
“তোর এ বউ কেমন হল?”
একটু সলজ্জ হাসি হেসে বাবুলাল বলল—“ভালোই তো মনে হচ্ছে—”
“রাধিয়ার সঙ্গে মারপিট করছে না তো!”
“না। দুজনে খুব ভাব।”
প্রথম বউ রাধিয়ার ছেলে হয়নি বলে বাবুলাল আর একটি বিয়ে করেছে। বাবুলালই মৌরলা মাছগুলি তার গামছায় বেঁধে নিয়ে মোটরে পৌঁছে দিয়ে এল।
একটা ফেরিওলা লাল-নীল কাগজের তৈরী পাখি বিক্রি করছিল। পাখির পিঠে লম্বা রবারের সরু ফিতে আটকানো। ফিতে ধরে নাড়ালে পাখি নাচে। কয়েকটা কিনলেন সদাশিব। ‘কেঁদ’ বলে একরকম ফল বিক্রি হয় এদেশে। কালচে-কমলা রং। খেতে মিষ্টি। একটি লোক এককোণে কয়েকটি ‘কেঁদ’ নিয়ে বসে ছিল। সদাশিব সেগুলিও কিনে নিলেন। কিছু তরি-তরকারিও কিনলেন। দোকানদাররাই সে-সব পৌঁছে দিয়ে এল তাঁর গাড়িতে।
হাট থেকে বেরিয়ে তিনি গেলেন থানায় সিংহেশ্বর সিং দারোগার কাছে। নামে যদিও সিংহেশ্বর কিন্তু দেখতে জিরাফের মতো। ছিপছিপে রোগা, ঘাড়টা খুব লম্বা। গালে মুখে চোখের কোলে ধবল হয়েছে। সদাশিবই চিকিৎসা করছেন তাঁর। কথা বলার ধরনটা একটু বেশী রকম উচ্ছ্বসিত।
“আইয়ে আইয়ে ডাক্টার সাব। কেয়া সৌভাগ্য, কেয়া সৌভাগ্য~~”
চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন এবং একটু ঝুঁকে সদাশিবের হাত দুটি ধরে বললেন,—“আইয়ে, আইয়ে, আইয়ে
“কি খবর। ওষুধ খেয়ে কিছু উপকার হল?”
“দো একঠো সাদা দাগকা বিমে তো রং লগা হ্যায়।”
“তাহলে আস্তে আস্তে সারবে। সময় নেবে কিছু। আমি একটা অন্য দরকারে এসেছি। এখানকার নারায়ণ বলে একটা লোককে আপনি ধরে এনেছেন ‘
“হ্যাঁ।”
তারপর তিনি যা বললেন কেব্লী তা আগেই তাঁকে বলেছিল। ছবিলাল মোড়লের নির্দেশ অনুসারেই নারাণকে ধরতে হয়েছে।
“নারাণের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ আছে?”
“না। একোয়ারি চল রহা হা’
“ওকে ছেড়ে দিন। ও নির্দোষ।”
গম্ভীর হয়ে গেলেন সিংহেশ্বর। সরু গোঁফের উপর আঙুল বুলোতে লাগলেন। হাঁটু নাচালেন বারকয়েক। তারপর বললেন-“আপ যব কতে হেঁ তব জরুর দেঙ্গে—”
তারপর তাঁর লম্বা গলাটা বেঁকিয়ে সদাশিবের কানে কানে বললেন, ছবিলালবাবুকেও যদি সদাশিব অনুরোধ করতেন তাহলে তাঁর পক্ষে সুবিধা হত। সদাশিব বললেন-“ছবিলাল লোকটা সুদখোর মহাজন। ওর সঙ্গে আমার তেমন আলাপও নেই।”
সিংহেশ্বর এর উত্তরে হিন্দীতে যা বললেন তার বাংলা মর্মার্থ—”আলাপ করে রাখুন, আখেরে কাজ দেবে। উনি কংগ্রেসীদের পাণ্ডা, তারপর হরিজন, ওঁর একটা বাজেমার্কা ছেলে কেবল শিডিউল্ড্ কাস্ট বলে ভালো চাকরি পেয়েছে। ওই চাকরি ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের ভালো ভালো ছেলেরা পায়নি। ওদেরই এখন প্রতাপ খুব—আলাপ করুন ওর সঙ্গে।”
সদাশিব চুপ করে রইলেন।
তারপর বললেন—“আপনি নারাণের বিরুদ্ধে যদি প্রমাণ না পান, ছেড়ে দিন। দেবেন তো?”
“আপনি যখন বলছেন তখন দেব। কিন্তু ছবিলালজী ওর উপর চটেছেন কিনা, তাই একটু খতরা আছে,–দেখি।”
তারপর সিংহেশ্বর তাঁর ছোট ছেলে ‘মুন্না’কে এনে দেখালেন। সর্বাঙ্গে খোস হয়েছে। তাকে ওষুধ দিয়ে চলে গেলেন সদাশিব।
.
সেদিন সদাশিব তাঁর ডায়েরিতে লিখলেন-
“ইংরেজদের হাত থেকে শাসনভার আজকাল যাঁদের হাতে গেছে তাঁরা শুধু যে অকর্মণ্য তাই নন, তাঁরা অসাধুও। এঁদের শাসনকালে দেশের সত্যিকার উন্নতি কিছু হয়নি। স্কুল-কলেজে ছেলেদের শিক্ষা হয় না। তারা গুণ্ডা হচ্ছে। শিক্ষকদের মারে, ভদ্রলোকদের হুমকি দেয়, মেয়েদের প্রকাশ্যে রাস্তায় অপমান করে, বিনা টিকিটে ট্রেনে বাসে চড়ে। পুলিস এদের কিছু বলে না। যদি কোন পুলিস বলে তাহলে তারই সাজা হয়, এদের হয় না। কর্তৃপক্ষ এদের তোয়াজ করেন, কারণ ইলেকশনের সময় এদের উপরই ভরসা তাঁদের। বাজারে খাদ্যদ্রব্য এত দুর্মূল্য যে সাধারণ লোক তা কিনতে পারে না। দুধ মাছ মাংস ডিম খুব কম লোকে খায়। চাল ডাল, তরি-তরকারিও এত দুর্মূল্য যে পেট ভরে খেতে পায় না। অথচ শোনা যায় নাকি সদাশয় গভর্নমেন্ট চাষের উন্নতির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। টাকা খরচ হচ্ছে সন্দেহ নেই, কিন্তু সে টাকা ঢুকছে তাঁদের পেটোয়া লোকদের পেটে।
“এখানে একটা পোলট্রি ফার্ম আছে। সেখান থেকে সাধারণ লোকে মুরগী বা ডিম পায় না। সেখানকার একজন কর্মচারী বলেছিলেন— অফিসার আর মিনিস্টাররা সব মুরগী আর ডিম নিজেরা খেয়ে ফেলেন। পাবলিককে দেবার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকলে তো দেবে!’ বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা ধার করে এনে যে-সব বড় বড় কাণ্ড-কারখানা হচ্ছে এদেশে সে-সবের মধ্যেও চুরি-জোচ্চুরি এবং পেটোয়া-পোষণের ধুম পড়ে গেছে নাকি। আসল কাজ যতটা হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।
“সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে হরিজন আর শিডিউল্ড্ কাস্টের লোকেদের পোয়া বারো হয়েছে, অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়রা নিষ্পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। তাদের মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নেবার চেষ্টা করছেন ওঁরা। মুসলমান আমলে ফারসী আদালতের ভাষা ছিল, ইংরেজদের আমলে ছিল ইংরেজি—এঁদের আমলে এঁরা করছেন হিন্দী। অন্যান্য ভাষাকে পিষে হিন্দীর জগদ্দল রোলার চালিয়েছেন এঁরা। সাধারণ স্কুলে ইংরেজি অবহেলিত হচ্ছে। কিন্তু মিনিস্টারদের ছেলেরা বিলাতী স্কুলে, কনভেন্টে, কিন্টারগার্টেনে ইংরেজি ঠিক শিখছে। কারণ তারা জানে যে ইংরেজী না জানলে আধুনিক জগতে এক পা-ও চলা যাবে না। তারা চলবে, কিন্তু পিছনে পড়ে থাকবে হতভাগ্য তারা যারা হিন্দী ছাড়া আর কিছু শেখেনি
“আমাদের স্বাধীন ভারতে আর একটা ব্যাপারও হচ্ছে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়কে লোপ করে দেবার চেষ্টা করছেন কর্তৃপক্ষরা। তারা শিক্ষা পাচ্ছে না, চাকরি পাচ্ছে না। নানা অজুহাতে—কখনও জমিদারপ্রথা লোপ করে, কখনও বা জমির সিলিং করে তাদের বিষয়-সম্পত্তিও সরকার বাজেয়াপ্ত করছেন। মজুরদের মাইনে বা মজুরি সাতগুণ আটগুণ বেড়েছে-কিন্তু শিক্ষকদের, ডাক্তারের, কেবানীর, এমন কি গভর্নমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বেতনও সে অনুপাতে বাড়েনি। মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের ছেলেরাই এই সব কর্মে নিযুক্ত। এদের কারও চিত্তে সুখ নেই। সবাই মনে মনে গোমরাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ভুলে গেছেন যে স্বাধীনতা-সুখ আজ তাঁরা রাজার মতন ভোগ করছেন সে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়েরই ছেলেরা। তাদের ত্যাগ, তাদের আত্মবলিদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, কিন্তু দেশের কর্তৃপক্ষেরা সে ঋণ সম্বন্ধে উদাসীন।
“প্রাদেশিকতা উগ্রভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে প্রতি প্রদেশে। প্রতিটি প্রদেশই ছোট ছোট পাকিস্তানে পরিণত হয়েছে। সবাই সবাইকে হিংসা ও ঘৃণা করে।
“আমাদের কর্তৃপক্ষদের আজকাল প্রধান কাজ হচ্ছে বিদেশী তোষণ। রাশিয়া, আমেরিকা, ইংলণ্ড, ইজিপ্ট, চীন প্রভৃতি দেশের নেতারা প্রায়ই এদেশে আসছেন, মালা পরে খানা খেয়ে রাস্তার দুপাশে হুজুকে বেকার লোকদের ভিড় দেখে চলে যাচ্ছেন এবং এই মহৎ কর্মের জন্য আমাদের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতাকে নিরাপদ করবার জন্যে শক্তিশালী বিদেশী রাজ্যের সঙ্গে দহরম-মহরম রাখা হয়তো প্রয়োজন, কিন্তু দেশের স্বাধীনতা মূলত নির্ভর করে দেশের লোকের সদিচ্ছা এবং চরিত্রবলের উপর। এই কথাটা কর্তৃপক্ষেরা ভুলে গেছেন।
“আমি নানা স্থানে ঘুরি, নানা স্তরের লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়, বর্তমান গভর্নমেন্টের উপর কাউকে সন্তুষ্ট দেখি না। ধনী দরিদ্র সবাই এই শাসনব্যবস্থার উপর চটা। সকলের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে—এবং অনেক স্থলেই তা অমূলক নয়–যে আমাদের শাসনব্যবস্থার শীর্ষে যাঁরা অবস্থান করছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই অপদার্থ, স্বার্থপর এবং অসাধু। তাঁরা অসাধু বলেই তাঁরা দেশের অসাধুতা নিবারণ করতে পারছেন না, তাঁদের কথা মানছে না কেউ। সুতরাং চোর ডাকাত জুয়াচোর কালোবাজারীতে দেশ ভরে যাচ্ছে।
“ছাত্রদের উচ্ছৃঙ্খলতারও প্রধান কারণ তাদের সামনে নির্মল আদর্শনিষ্ঠ কোন নেতা নেই। নেতারা তোতাপাখির মতো যে-সব বুলি আওড়ান কার্যকালে ঠিক তার উলটো কাজটি করেন। সুতরাং তাঁদের কথায় কারও আস্থা নেই। আমার বিশ্বাস সামনে ভালো আদর্শ থাকলে এই ছেলেরাই অন্যরকম হত।
“ইতিহাসের পাতা ওলটালে জানা যায় অসাধুতা-অপটুতা-আত্মম্ভরিতার রাজত্ব বেশীকাল টেকে না। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা ভাবলে ভয় হয়। দুঃখও হয়। কোন্ অতলস্পর্শী গহ্বরের দিকে এগুচ্ছি আমরা!”
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন