বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)
মৎস্যব্যবসায়ী আবদুলের বাড়ি শহর থেকে প্রায় মাইল চারেক দূরে। সেখানে একটা খোলার ঘরে সে সপরিবারে বাস করে। ডাক্তার সদাশিবের মোটর তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আর মোটরটা ঘিরে দাঁড়িয়েছিল একপাল উলঙ্গ ছেলে-মেয়ে
সদাশিব রমজুকে একটা ইনজেকশন দিয়ে বেরিয়ে এলেন খোলার ঘর থেকে। আর তাঁর পিছু-পিছু বেরিয়ে এল এক পলিতকেশা বৃদ্ধা। আবদুলের নানী, অর্থাৎ ঠাকুমা। অনেক শোক পেয়েছে সে। স্বামী পুত্র নাতি নাতনী সবই প্রায় মারা গেছে। বেঁচে আছে কেবল আবদুল আর তার ছেলে রমজু। বুড়ীর পরনের কাপড় ছেঁড়া ময়লা। মুখের ভাবে কোন স্নিগ্ধতা নেই। আছে একটা ‘মরিয়া’ ভাব। সদাশিব মোটরের ভিতর থেকে কয়েকটি গুলি বার করে তার হাতে দিয়ে বললেন— “চার ঘণ্টা অন্তর খাওয়াবে। দেখি, তোমার চোখের খবর কি—”
চোখের পাতা তুলে দেখলেন।
“পাকতে দেরি আছে এখনও। আগামী শীতে কেটে দেব তোর ছানি।”
বুড়ী ঝাঁজিয়ে উত্তর দিলে—”দরকার নেই আমার চোখ কাটিয়ে। পারো তো আমার কান দুটোও কালা করে দাও। আমি কিছু দেখতেও চাই না, শুনতেও চাই না—”
ডাক্তার সদাশিব বুড়ীর থুতনিটি নেড়ে হেসে বললেন—“এত রাগ কেন নানী? ভগবানকে ভুলে গেছিস্?”
এই কথায় ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল নানী। ময়লা কাপড় দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললে—“আমি ভগবানকে ভুলিনি ডাক্তারবাবু, ভগবানই আমাকে ভুলেছেন।”
সদাশিব করুণ দৃশ্য এড়িয়ে চলতে চান।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে উঠে বললেন—“আলী, হাজিপুর হাটে চল।”
“বহুত খু”—
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন