অনীশ দেব
ওকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম!
মানুষ কেন ভালোবাসে? মানুষ কেন ভালোবাসে? কি অদ্ভুত লাগে যদি কেউ পৃথিবীতে শুধু একজনকেই দেখে, মনে একজনকেই ভাবে অন্তরে একজনকেই চায় এবং তাঁর ঠোঁটে থাকে শুধু একটাই নাম—যে নাম ক্রমাগত উঠে আসে ঝর্ণার জলের মতো, আত্মার গভীর স্তর থেকে পৌঁছে যায় ঠোঁটের সীমারেখা পর্যন্ত, যে নাম সে উচ্চারণ করে বার বার, অনলসভাবে সর্বত্র ফিস ফিস করে ঈশ্বরের প্রার্থনা-সঙ্গীতের মতো৷
আমাদের গল্পটা এবার আপনাদের বলব, কারণ প্রেমের গল্প বলতে শুধু একটাই, এবং সে গল্প বরাবর সেই একই৷ ওর সঙ্গে আমার দেখা হয় এবং তারপর থেকে আমি বেঁচে ছিলাম ওর কোমলতায়, ওর আদরে, ওর আশ্লেষে, ওর পোশাকে, ওর কথায়, একেবারে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্টে ওর প্রতিটি জিনিসে বাঁধা পড়েছিল যে আমাদের এই পৃথিবীতে রাত কি দিন তার পরোয়া আমি করিনি, এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবেনি আমি বেঁচে আছি কি মরে গেছি৷
আর তার পরই ও মারা গেল৷ কেমন করে? আমি জানিা না, তারপর থেকে থেকে আর কিছুই জানি না৷ কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ও ভিজে ফিরল বাড়িতে, এবং পরদিন থেকেই কাশতে শুরু করল, এক সপ্তাহ চলল এই কাশি, তারপরই ও বিছানা নিল৷ ঠিক কি যে হয়েছিল আমার এখন স্পষ্ট মনে নেই, তবে ডাক্তারবাবুরা এসেছে, লেখালেখি করেছে, আবার চলেও গেছে৷ ওষুধ কিনে আনা হল এবং অন্যান্য মহিলারা সে ওষুধ ওকে খাইয়ে দিল৷ ওর দুটো হাত গরম, কপাল যেন পুড়ে যাচ্ছে, আর দু’চোখ উজ্জ্বল ও বিষণ্ণ৷ আমি কথা বলতেই ও উত্তর দিল, কিন্তু কি কথা আমরা বলেছি আমার মনে নেই৷ সবকিছু আমি ভুলে গেছি, সবকিছু, সবকিছু! ও মরে গেল, আর আমার স্পষ্ট মনে আছে ওর সেই হালকা ক্ষীণ দীর্ঘশ্বাস৷ নার্স বলে উঠল, আহা রে! তখন আমি বুঝলাম, সব বুঝতে পারলাম!
আর কিছুই আমি জানি না, কিছু না৷ একজন ধর্মযাজকের সঙ্গে দেখা করতে তিনি বললেন, কে, আপনার প্রণয়িনী? আর আমার মনে হল উনি যেন ওকে অপমান করছেন৷ ও মরে গেছে, সুতরাং এ কথা বলার অধিকার এখন আর কারো নেই, সুতরাং আমি সেই ধর্মযাজকের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি৷ আর একজন এলেন, নরম ও দয়ালু প্রকৃতির৷ তিনি যখন ওর কথা আমাকে শোনাতে লাগলেন তখন আমি শুধু চোখের জল ফেলে চললাম৷
ওর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে সবাই আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, কিন্তু ওরা কে কি বলেছে কিছুই আমার মনে নেই, বরং কফিনের কথাটা আমার মনে আছে, মনে আছে ওকে শুইয়ে দিয়ে কফিনে ঠোকার হাতুড়ির শব্দ৷ ওঃ! ভগবান, ভগবান!
ওকে কবর দেওয়া হল! করব! ওকে! ওই গর্তে! কিছু কিছু লোক এল—মেয়ে বন্ধুর দল৷ আমি লুকিয়ে ছুটে পালিয়ে এলাম৷ ছোটা শেষ করে বিভিন্ন পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম, একসময় পৌঁছলাম বাড়িতে এবং পরদিনই পাড়ি দিলাম দেশান্তরে৷
গতকালই আমি প্যারিসে ফিরে এসেছি, এবং নিজের ঘরে ঢুকতেই নতুন এক দুঃখের ঢেউ নিষ্ঠুরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর, আমাকে গ্রাস করল, মনে হল, জানলা খুলে এখুনি লাফিয়ে পড়ি নীচের রাস্তায়৷ কারণ আমার চোখের সামনে আমাদের ঘর, আমাদের বিছানা, আমাদের আসবাবপত্র, কোন মানুষের মৃত্যুর পর তার জীবনের যতটুকু পড়ে থাকা সম্ভব তার সবটুকুই উপস্থিত৷ এসব জিনিসের মাঝে আমি আর একমুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, এই দেওয়াল একদিন ওকে ঘিরে ছিল, আশ্রয় দিয়েছিল, এই দেওয়ালের প্রতিটি অদৃশ্য ফাটলে রয়েছে ওর সহস্র পরমাণুর স্বাক্ষর, ওর ত্বক ও নিশ্বাসের অস্তিত্ব৷ সুতরাং টুপিটা তুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলাম, এবং সেই দরজার কাছে এসেছি চোখ পড়ল হলঘরের বিশাল আয়নাটায়৷ আয়নাটা ও-ই এখানে বসিয়েছিল, যাতে বাইরে বেরোবার সময় ও নিজের আপাদমস্তক দেখতে পায়, পরখ করতে পারে সাজগোজ ঠিক আছে কি না, সুন্দর দেখাচ্ছে কি না, পায়ের জুতো থেকে মাথার টুপি পর্যন্ত সবকিছু নিখুঁত হল কি না৷
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম আয়নাটার সামনে৷ এই আয়না কত বার ওর ছায়া বুকে ধরেছে—এত বহু বার যে সে ছায়া নিশ্চয়ই স্থায়ী হয়ে আছে আয়নার কাঁচের গভীরে৷ আমি সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁপতে শুরু করলাম, আমার চোখ কাঁচের ওপরে স্থির—সমতল, গভীর, শূন্য কাঁচে—যে কাচ ওকে গ্রহণ করেছে সম্পূর্ণ ভাবে, অধিকার করেছে আমারই মতো, আমার প্রণয়াচ্ছন্ন দৃষ্টির মতো৷ মনে হল যেন আয়নাটাকে আমি ভালোবাসি৷ ওটা স্পর্শ করলাম, ঠান্ডা৷ ওঃ, সেই স্মৃতি! বিষণ্ণ আয়না, জ্বলন্ত আয়না, ভয়ঙ্কর আয়না, তুমি মানুষকে কত যন্ত্রণা দাও! সেই মানুষই সুখী যার হৃদয় ভুলে যায় কতটুকু সে পেয়েছিল, কতটুকু সে দেখেছিল, তার গভীরে চোখ মেলে কে তাকিয়েছিল, ভুলে যায় তার অনুরাগে-ভালোবাসায় প্রতিফলিত হওয়া সবকিছু! সত্যি, কি কষ্টই না আমি পাচ্ছি!
সে সব কিছু না ভেবে, না জেনে আমি বেরিয়ে এলাম, রওনা হলাম কবরখানার দিকে৷ ওর সাদাসিধে সমাধি আমি খুঁজে পেলাম—একটা সাদা ক্রুশচিহ্ণ ও এই কটি কথা লেখা ঃ
‘ও ভালোবেসেছিল, ভালোবাসা পেয়েছিল, অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছে৷’
ওর ক্ষয়ে যাওয়া শরীর এর নীচেই শুয়ে রয়েছে! কী ভয়ঙ্কর! মাটিতে মাথা রেখে আমি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম, এবং অনেক অনেকক্ষণ বসে রইলাম সেখানে৷ তারপর এক সময় লক্ষ্য করলাম, অন্ধকার নেমে আসছে, এবং এক অদ্ভুত পাগল করা ইচ্ছে—হতাশ কোন প্রেমিকের ইচ্ছে—আমাকে গ্রাস করল৷ ইচ্ছে করল, ওর সমাধিতে চোখের জল ফেলে সারাটা রাত কাটিয়ে দিই, কাটিয়ে দিই শেষ একটা রাত৷ কিন্তু আমাকে এখানে দেখতে পেলেই বের করে দেওয়া হবে৷ কী করে সেটাকে রোধ করি? বুদ্ধি আমার আছে, সুতরাং উঠে দাঁড়িয়ে মৃতের শহরে ঘুরতে শুরু করলাম৷ হেঁটে চললাম, শুধু হেঁটে চললাম৷ যে শহরে আমরা বাস করি তার তুলনায় এই শহর কত ছোট৷ অথচ জীবিতদের চেয়ে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি৷ আমাদের দরকার হয় বিশাল বিশাল বাড়ি, চওড়া রাস্তা, যে চারপুরুষ একসঙ্গে দিনের আলো দেখে তাদের জন্যে চাই যথেষ্ট জায়গা৷
আর মৃতদের সমস্ত পুরুষের জন্যে, যে মনুষ্যত্বের ধারা নেমে এসে আমাদের ছুঁয়েছে, তাদের জন্যে প্রায় কিছুই দরকার হয় না, কিচ্ছু না৷ পৃথিবীর মাটি তাদের ফিরিয়ে নেয়, এবং বিস্মৃতি তাদের মুছে ফেলে৷ ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুন!
কবরখানার শেষপ্রান্তে পৌঁছে হঠাৎই বুঝতে পারলাম আমি একেবারে প্রাচীন অংশে এসে উপস্থিত হয়েছি৷ এখানে মৃতেরা শুয়ে আছে অনেক দিন ধরে, এবং ওদের দেহ এখন মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে, এখানকার ক্রশ চিহ্ণগুলো ক্ষয়ে গেছে কালের প্রকোপে, আর আগামীকাল থেকেই সম্ভবত নতুনদের এখানে এনে শোওয়ানো হবে৷ অযত্নে বেড়ে ওঠা অসংখ্য গোলাপ ও বিশাল কালো সাইপ্রেস গাছে জায়গাটা ছেয়ে আছে—এক বিষণ্ণ অথচ সুন্দর বাগান, নরমাংসে লালিত পালিত৷
আমি এখানে একা, সম্পূর্ণ একা৷ সুতরাং একটা সবুজ গাছের নীচে হামাগুড়ি দিয়ে বসলাম, ঘন ও মলিন শাখা-প্রশাখার মাঝে নিজেকে পুরোপুরি লুকিয়ে ফেললাম৷ জাহাজডুবি হওয়া কোন মানুষ যেমন করে ভাসমান কাঠের টুকরো আঁকড়ে ধরে, ঠিক তেমনি করে গাছটাকে জড়িয়ে ধরে আমি অপেক্ষায় রইলাম৷
যখন পুরোপুরি অন্ধকার হল, আমি আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে এলাম, এবং হালকা ধীর ও নিঃশব্দ পায়ে মৃত মানুষে আকীর্ণ ওই মাটিতে পায়চারি করতে শুরু করলাম৷ অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে বেড়ালাম, কিন্তু ওর সমাধি আর দ্বিতীয়বার খুঁজে পেলাম না৷ দু-হাত সামনে বাড়িয়ে, হাতে, পায়ে, হাঁটুতে, বুকে, এমন কি মাথাতেও পর্যন্ত বিভিন্ন সমাধির ধাক্কা খেয়ে আমি এগিয়ে চললাম, কিন্তু তবুও ওকে খুঁজে পেলাম না৷ অন্ধের মতো আমি পথ হাঁতড়ে চললাম, স্পর্শে অনুভব করলাম সমাধি-প্রস্তরগুলো, ক্রুশগুলো, তাদের লোহার রেলিং, ধাতুর মালা ও বিবর্ণ ফুলের অঞ্জলি! আঙুলে অনুভব করে অক্ষরে আঙুল বুলিয়ে, তাদের নামাগুলো আমি পড়তে লাগলাম৷ কী ভয়ঙ্কর রাত! কী ভয়ঙ্কর রাত! ওকে আমি আর খুঁজে পাচ্ছি না৷
আকাশে চাঁদ নেই৷ এ এক অদ্ভুত রাত! আমি ভয় পেলাম৷ কবরের দুই সারির মাঝে সরু পথটায় দাঁড়িয়ে আমি ভীষণ ভয় পেলাম৷ কবর! কবর! কবর! কবর ছাড়া আর কিছু নেই৷ আমার ডাইনে, বাঁয়ে, সামনে, চারপাশে, প্রতিটি জায়গায় শুধু কবর আর কবর! তারই একটার ওপরে বসে পড়লাম, কারণ আর আমি হাঁটতে পারছি না, আমার হাঁটু যেন ভেঙে পড়ছে৷ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি আমার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন! আর সেই সঙ্গে আরও একটা শব্দ কানে এলে৷ কীসের শব্দ? এক অস্পষ্ট, নাম-না-জানা শব্দ৷ শব্দটা কি আমার মাথার ভেতর থেকে আসছে, না কি এর জন্ম দিয়েছে অভেদ্য রাত, অথবা মানুষের মৃতদেহ রোপিত এই রহস্যময় মাটির গভীর স্তর? চারপাশে ভালো করে তাকালাম, কিন্তু কতক্ষণ যে ওখানে বসে ছিলাম বলতে পারি না, আতঙ্কে আমি তখন অসাড়, স্থবির, ভয়ে শরীর ঠান্ডা, চিৎকার করে ওঠার জন্যে আমি তৈরি, হয়তো মরবার জন্যেও৷
হঠাৎই মনে হল, যে মার্বেল পাথরের ওপর আমি বসে আছি সেটা নড়ছে৷ সত্যিই নড়ছে, যেন কেউ ওঠা আস্তে তুলে ধরছে৷ একলাফে আমি পাশের কবরে গিয়ে পড়লাম, এবং দেখলাম, হ্যাঁ, স্পষ্ট দেখলাম, এইমাত্র ছেড়ে আসা পাথরটা ওপরে উঠছে৷ তারপর দেখা গেল মৃত মানুষটাকে, এক উলঙ্গ কঙ্কাল, পিঠ কুঁজো করে পাথরটা ঠেলে তুলছে৷ রাত ঘন অন্ধকার, কিন্তু আমি পরিষ্কার সব দেখতে পেলাম৷ ক্রুশ চিহ্ণের ওপর লেখা আছে ঃ
‘এখানে শুয়ে আছেন জ্যাক অলিভ্যাঁ—একান্ন বছর বয়সে মারা গেছেন৷ পরিবারের সকলকে তিনি ভালোবাসতেন, তিনি দয়ালু ও সম্মানিত ছিলেন, এবং ঈশ্বরের করুণায় মুক্তি লাভ করেছেন৷’
সমাধি-প্রস্তরে লেখা কথাগুলো মৃত ব্যক্তিও পড়ল, তারপর রাস্তা থেকে একটা ছোট্ট ছুঁচলো পাথর সে কুড়িয়ে নিল, এবং অক্ষরগুলোকে অতি যত্নে ঘষে তুলতে লাগল৷ ধীরে ধীরে সে মুছে ফেলল লেখাগুলো, এবং সেখানে সেগুলো খোদাই করা ছিল, সেই জায়গাটা দেখতে লাগল চোখের অন্ধকার কোটর মেলে৷ তারপর, চকমকি দেশলাই দিয়ে ছোট ছোট ছেলেরা দেওয়ালে লেখে, সেই রকম করে তার তর্জনীর হাড়ের প্রান্ত দিয়ে উজ্জ্বল অক্ষরে সে লিখতে লাগল ঃ
‘এখানে বিশ্রাম করছেন জ্যাক অলিভ্যাঁ, একান্ন বছর বয়েসে মারা গেছেন৷ পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার বাসনায় তিনি তাঁর পিতার মৃত্যুকে নির্দয় ব্যবহারে ত্বরান্বিত করেছেন, নিজের স্ত্রীকে যন্ত্রণা দিয়েছেন, পুত্রকন্যাদের কষ্ট দিয়েছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, যাঁকে সম্ভব লুণ্ঠন করেছেন এবং চরম দুর্দশায় মৃত্যুবরণ করেছেন৷’
লেখা শেষ করে মৃত মানুষটি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, দেখতে লাগল নিজের সদ্যসমাপ্ত সৃষ্টি৷ ফিরে তাকিয়ে দেখি সমস্ত কবরই খোলা, আর সেখানে থেকে সমস্ত মৃতদেহগুলো বেরিয়ে এসেছে, সমাধি-প্রস্তরের ওপর থেকে মুছে দিয়েছে তাদের আত্মীয়দের লেখা সুন্দর কথাগুলো এবং পরিবর্তে লিখে দিচ্ছে নিখাদ সত্যিটুকু৷ আর আমি দেখলাম, প্রত্যেকেই তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়েছেন—বিদ্বেষপরায়ণ, অসাধু, ভণ্ড, মিথ্যেবাদী, দুর্বৃত্ত, কুৎসাপ্রিয়, পরশ্রীকাতর, দেখলাম, ওরা চুরি করেছে, প্রতারণা করেছে, কোন রকম লজ্জাকর ও জঘন্য কাজ বাদ দেয়নি, এই সব আদর্শ পিতারা, বিশ্বস্ত স্ত্রীরা, অনুরক্ত পুত্রেরা, চরিত্রবতী কন্যারা, এইসব সৎ ব্যবসায়ীরা, এই সব নারী ও পুরুষেরা, যাদের সকলে সমস্ত নিন্দার ঊর্ধ্বে বলে এতদিন জেনে এসেছে৷ নিজেদের চিরন্তন আবাসের প্রবেশ পথে ওরা সকলে একই সঙ্গে লিখে চলেছে সত্যি কথাটুকু ভয়ঙ্কর ও পবিত্র সত্য, ওরা বেঁচে থাকতে যা কেউ জানত না, অথবা না জানার ভান করে এসেছে৷
ভাবলাম, ও নিজেও হয়তো ওর সমাধি প্রস্তরে কিছু না লিখেছে, সুতরাং এখন নির্ভয়ে আধখোলা কফিন, মৃতদেহ ও কঙ্কালের সমারোহ ভেদ করে আমি ছুটে চললাম ওর কাছে, মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, এক্ষুনি ওকে খুঁজে বের করতে হবে৷ শবাচ্ছাদন-বস্ত্রে ওর মুখ ঢাকা ছিল, কিন্তু মুখ না দেখেও আমি ওকে পলকে চিনতে পারলাম, আর সেই মার্বেল পাথরের ক্রুশ চিহ্ণে, যেখানে একটু আগেও লেখা ছিল—
ও ‘ভালোবেসেছিল, ভালোবাসা পেয়েছিল, অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছে৷’
সেখানে এখন লেখা রয়েছে—
‘নিজের প্রেমিককে প্রতারণা করতে একদিন বৃষ্টিতে ও বেরিয়েছিল, তারপর সর্দির প্রকোপে মৃত্যুবরণ করে৷’
মনে হয়, পরদিন সকলে ওই কবরের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় ওরা আমাকে আবিষ্কার করে৷
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন