বিনোদ ঘোষাল

এত সস্তায় যে রেডিয়ো পাওয়া যায় স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি রতন। রতনের পুরো নাম রতনতনু ঘোষ। আর পুরো ঠিকানা—প্রযত্নে হারাধন ঘোষ, গ্রাম—পাকুরিয়া, পোস্ট অফিস—সেকুল, জিলা—বর্ধমান।
রতনের বাবা হারাধন বেজায় গরিব মানুষ। সেই সূত্রে রতনের মা'ও গরিব, রতনের বোনও গরিব এবং রতনও গরিব। গ্রামে হারাধনের মুদির দোকান চলে কি চলে না। এহেন পাকুরিয়া গ্রামও আগের থেকে একটু একটু করে উন্নত হয়েছে। গ্রামের মানুষ শহুরে জিনিস হাতে পাচ্ছে। তাই গ্রামের রুগ্ন ছোট দোকান আর চলে না।
ছোটবেলা থেকেই রতনের মাথা ছিল সাফ। পড়াশোনায় বেশ ভালো। কিন্তু হলে হবে কি? ক্লাস এইট পাশ করতেই রতনের বাবা ছেলেকে তার এক বন্ধুর হাত ধরে পাঠিয়ে দিল কলকাতায় এক বাবুর বাড়িতে ফাইফরমাস খাটতে।
ইচ্ছে না থাকলেও বাপ-মা আর বোনের কথা ভেবে কলকাতায় চলে এসেছিল রতন। পড়াশোনা আর এগোয়নি। তবে মালিক ভালো। রতনকে একেবারে কাজের লোক হিসেবে ভাবেনি কখনও। তাই সেখানেই থেকে গেছে ও। তবে পড়াশোনা আর এগোয়নি।
সেই রতন এখন উনিশ বছরে পা দিল। মাসে সতেরোশো টাকা মাইনে। যদিও খাওয়াদাওয়া ফ্রি, কিন্তু তাও ওই সামান্য মাইনে থেকে দেশের বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে হাতে আর প্রায় কিছুই থাকে না।
প্রায় বছর কয়েক ধরেই রতন বাবুর কাছে টাকা বাড়ানোর কথা বলেছিল, কিন্তু দিচ্ছি দেব করে মালিক এখনও বাড়াতে পারেনি। সে জন্য অবশ্য মালিককে পুরো দোষ দেওয়া যায় না।
মল্লিকবাজারের মুখে মালিকের ইলেকট্রনিক জিনিস সারানোর দোকান। আগে রমরমিয়ে চলত, কিন্তু ইদানিং বছর কয়েক ধরে ব্যবসায়ে বেশ ভাটা। বাড়িতে লোক বলতে মালিক সুরজপ্রসাদ, তার স্ত্রী এবং ওদের একমাত্র ছেলে রাহুল প্রসাদ। ছেলেটা জন্ম থেকেই পঙ্গু। এবং রতনেরই বয়েসি।
আগে রতন যখন এসেছিল তখন বাবুর ব্যবসা বেশ রমরমিয়ে চলত। কিন্তু এখন অনেক বসে গেছে। লোকের টিভি আর আগের মতো খারাপ হয় না। হলেও তারা আর সারায় না বোধহয়, নতুন কিনে নেয়। আর রেডিয়োর বাজার তো প্রায় নেই-ই। এখন শুধু কম্পিউটার আর মোবাইল ফোন। ওই দুটোর কোনওটাই রতনের নেই। লাগেও না।
যাই হোক ব্যবসা পড়ে যাওয়ার কারণে রতনের আর এখন টাকা বাড়ানোর কথা বলতে ইচ্ছে করে না। রতন চাইলেই এখন কলকাতায় অন্য কোনও চাকরি জুটিয়ে নিতে পারে এর থেকে বেশি মাইনের। এতদিনে এই যোগাযোগ ওর হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা করতে বিবেকে বাধে। এতদিন ধরে যে ফ্যামিলির ভাত খেয়েছে আজ তাদের অবস্থা পড়ে গেছে বলে ছেড়ে চলে যাবে সেটা কেমন দেখায়? তাই রয়ে গেছে।
আজ সকালে বাবু বলল রতন তোকে একটু চাঁদনি যেতে হবে। কিছু স্পেয়ার পার্টস কিনতে হবে। বাড়ির কাজ ছাড়াও দোকানের টুকটাক কাজ রতন করে থাকে। সেই সুবাদে চাঁদনি মার্কেটে ওর অনেকদিন ধরেই আনাগোনা।
টাকা নিয়ে বেলার দিকে চলে এল মার্কেটে। দরকারি জিনিসগুলো কিনে চলে আসছে এমন সময় পিছন থেকে ডাক, নিয়ে যান দাদা জলের দরে রেডিয়ো নিয়ে যান। এমন সুযোগ পাবেন না।
ঘাড় ফেরাল রতন। একটা লোক ফুটপাতে বসে রয়েছে। সামনে কতগুলো পুরোনো রেডিয়ো। পুরোনো মানে বেশ পুরোনো মডেল সবক'টার। কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। কিংবা তাকালেও নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বরং একবার পেছন ফিরতেই দোকানদার বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল একবার কাছ থেকে দেখে যান দাদা, এ জিনিস আর কোথাও পাবেন না, বিলকুল অ্যান্টিক জিনিস আছে।
অ্যান্টিক মানে রতন খুব ভালো করেই জানে। ধুলো মাখা বহু পুরনো মডেলের ইয়া বড় বড় গোবদা রেডিয়োগুলোকে অ্যান্টিক বলে চালানোর চেষ্টা করছে দোকানদার। শুনে রতন মিচকি হাসল।
দোকানদার বুঝতে পেরে বলল, হাসছেন তো দাদা। বাড়ি নিয়ে যান। নসিব ভালো থাকলে এইসব মালের একদিন অনেক কিমত পাবেন। বলে রাখলাম।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু এগুলো কি বাজে আদৌ? মানে চলতা হ্যায়?
হাঁ-হাঁ, বিলকুল চলতা হ্যায়। কোই ভি পসন্দ কিজিয়ে, চালাকে দিখা দেতা হুঁ।
রতন এমনিই একটা মাঝারি সাইজের রেডিয়ো হাতে নিল। দেখুন তো।
বহুত আচ্ছা চিজ উঠায়া আপনে। বিলকুল জহুরিকা আঁখ হ্যায় বাবু আপকো। লে যাইয়ে।
আরে আগে চালিয়ে তো দেখান।
হাঁ-হাঁ-হাঁ-ও-ভি দিখাবে বলে লোকটা রতনের হাত থেকে রেডিয়োটা নিয়ে ব্যাটারি ভরল। ক্যাঁ-এ-এ-এ-এ করে উঠল রেডিয়োটা, চ্যানেলের নবটা ঘোরাতেই কেউ একজন ভারী গলায় কবিতা পড়ছে শোনা গেল। পরিষ্কার সাউন্ড। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিল দোকানদার। ঠিক হ্যায় তো?
রেডিয়োটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করল রতন। পুরোনো মডেল, তবে ভাঙাচোরা নয়। কত দাম নেবে?
একশো টাকায় রফা করে বুক পকেট থেকে নোটটা বার করে রেডিয়ো বগলে নিয়ে ফিরতে ফিরতে রতন বেশ কয়েকবার ভাবল একশোটা টাকা জলে গেল না তো? কী জানি কপালে কী আছে...
রাতের সব কাজ হয়ে যাওয়ার পর খেয়েদেয়ে নিজের ঘরে ঢুকল রতন। দোতলার সিড়ির পাশে ছোট একটা ঘরে ওর একার সংসার। জিনিসপত্র বলতে একটা তক্তোপোষ, বিছানাপত্তর, একটা টিনের বাক্স আর কিছু জামাকাপড়, টুকটাক। ব্যস। নতুন অতিথি এই রেডিয়ো।
বিছানায় বেশ আয়েশ করে বসে রেডিয়োটা নিল। অন করার সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই ক্যা অ্যা অ্যা অ্যা শব্দ। চ্যানেলের নব ঘোরাতে ঘোরাতে একটা চ্যানেলে শব্দ শোনা গেল। গান হচ্ছে। হেমন্ত-লতার ডুয়েট। গানটার শেষে একজন ঘোষণা করল আজ পনেরোই জুলাই দু-হাজার পনেরো। একটু পরে খবর পড়বেন নৃসিংহপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তারপর...গড়গড় করে অনুষ্ঠানসূচি বলে গেলেন মহিলা। ঘরে টাঙানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাল রতন। ঠিক তাই যা ভেবেছে ও, মহিলা আজকের তারিখটা ভুল বলেছেন। আজ মোটেই পনেরোই জুলাই নয়, আজ চোদ্দোই জুলাই।
রোজের ডেট খুব ভালো করেই খেয়াল করে রতন, কারণ বাবুর দোকানে ডেস্কে রাখা ডেট কালেন্ডার আজ দীর্ঘ বছর ধরে ও নিজে হাতে বদলায়। কাজেই ডেট ভুল হওয়ার কোনও চান্সই নেই।
কিন্তু আজকাল কী অবস্থা হয়েছে। রেডিয়োর মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যদি তারিখই ভুল বলে তা হলে কী করে চলবে? রেডিয়ো স্টেশনে চিঠি দেওয়া উচিত। ভাবতেই ভাবতেই খবর পড়া শুরু হল। কী আবোলতাবোল খবর! আজ নাকি কলকাতায় প্রচণ্ড ঝড় হয়েছে। অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। হে-হে-হে এটা আদৌ খবরের চ্যানেল না বোকা বানাবার অনুষ্ঠান কে জানে। বেশ কিছুক্ষণ শুনে তারপর ঘুমিয়ে পড়ল রতন।
পরদিন সকালে উঠে আর আগের রাতের কথা কিছু মনে থাকল না। কিন্তু সারাদিন গুমোট গরমের পর যখন দুপুরের পর থেকে আকাশ কালো করে প্রবল ঝড় শুরু হল তখন একটু মনে খটকা লাগল রতনের। এ কী রে ভাই...আজ তো পনেরোই জুলাই, আর গতকাল রাতের সেই খবরে বলেছিল প্রবল ঝড় হয়েছে। কেসটা কী? একটু গুলিয়ে গেল রতনের।
ঝড় মানে সে সাংঘাতিক ঝড়। সন্ধের পর ঝড় থামল। লোড শেডিং। রাতে নিজের ঘরে ঢুকে রেডিয়ো চালাল রতন। তখন ঠিক রাত সাড়ে দশটা। গতকাল রাতে এই সময়েই খবর পড়া হয়েছিল এই রেডিয়োতে।
অন করার সঙ্গে সঙ্গেই খবর শুরু। যথারীতি খবর পড়ার আগে ডেটটা পড়ল একদিন পরের। এবং আশ্চর্যের কাণ্ড পুরো খবরে কোথাও ঝড়-বৃষ্টির উল্লেখ নেই। গা শিরশির করে উঠল রতনের। রোঁয়া খাড়া হয়ে গেল। এটা কেমন রেডিয়ো? এ কেমন অলৌকিক কাণ্ড! খবরের পরে আবার গানের অনুষ্ঠান। আধুনিক বাংলা গান। রতন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল।
আসল ঘটনাটা ঘটল ঠিক কিছুদিন পরেই। রোজের মতো রাত্রে রেডিয়োতে খুব গান শুনছিল রতন। ভয়টা কেটে গিয়ে বেশ মজা লাগে এখন। রেডিয়োটা ভূতুড়ে তাতে সন্দেহ নেই, তবে ক্ষতি করে না উলটে বেশ আগের দিনের ঘটনা জানিয়ে দেয়। এই যেমন পরশুদিন রাত্রে খবরে জানল রাজধানী এক্সপ্রেস নাকি খুব অল্পের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছে। পরদিন সত্যি সত্যিই তাই হল। খুব অল্পের জন্য মস্ত অ্যাকসিডেন্টের হাত থেকে বাঁচল রাজধানী এক্সপ্রেস। রতন উত্তেজিত।
এমন অদ্ভুত একটা রেডিয়ো পেয়েছে কাকে বলা যায় বুঝে উঠতে পারছিল না। তবে জিনিসটা যে অমূল্য সেটা ভালোই বুঝেছিল। তবে রেডিয়োটার মজা হল সারাদিনে অন্যান্য পাঁচটা রেডিয়োর মতোই সেদিনের খবর, গানের অনুষ্ঠান ইত্যাদি হয়। শুধু রাত সাড়ে দশটার নিউজটাই একদিন এগিয়ে।
তো আজও রেডিয়োতে আগামিকালের খবর শুনছিল ও। হঠাৎই একটা খবরে শিউরে উঠল ও। গোটা শরীর বেয়ে যেন হিমস্রোত নেমে গেল। 'আজ দুপুর তিনটে নাগাদ মৌলালী ক্রসিং-এ বাসে পিষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। মৃতের নাম...। খবরটা পুরো শেষ হল না। তার আগেই রেডিয়ো বন্ধ হয়ে গেল। এ কী হল! কী হল রেডিয়োটার! দম আটকে বার বার অফ অন করল রেডিয়ো কিন্তু কোনও সাড়া নেই।
বুকের ভেতর যেন পাথর চেপে বসেছে। সারা রাত জেগে রইল রতন। এবার...এবার কী হবে? একটা মৃত্যুকে কীভাবে আটকানো যায়? কিচ্ছু মাথায় আসছে না। ভোর রাতের দিকে রতনের মনে হল আছে, উপায় আছে, মরার হাত থেকে একজনই বাঁচাতে পারে। সেই লোকটা, যে রতনকে রেডিয়োটা বিক্রি করেছিল। ওর কাছে কাল যে করেই হোক পৌঁছাতে হবে। মল্লিক বাজার থেকে চাঁদনি অটোতে যাওয়া যায় তার জন্য মৌলালী হয়ে যেতে হয় না। নোনাপুকুর ট্রামডিপোর মোড় থেকে অটো বাঁ দিকে ঢুকে যায়। সুতরাং...
সারাদিন অসম্ভব উত্তেজনায় কাটিয়ে বেলা বারোটার সময়েই চাঁদনির দিকে রওনা দিয়ে দিল রতন। আজ ও অত্যন্ত সাবধানি। চারদিকে সজাগ দৃষ্টি।
চাঁদনি পৌঁছে ঠিক ওই জায়গাতে গেল। কিন্তু লোকটা কই? মুহূর্তে আবার ঘেমে উঠল রতন। ওইখানটা ফাঁকা। কেউ নেই বসে, তাহলে কী হবে? প্রায় দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর দেখল ওই জায়গায় একটা অন্য ছেলে এসে বসল টুনি বালবের পসরা নিয়ে। ওর কাছেই এগিয়ে গেল রতন।
ভাই এখানে একজন লোক আগে বসত, পুরনো রেডিয়ো সব বিক্রি করত, সে কোথায় এখন জানেন?
নেহি মালুম, বলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল লোকটা। রতন উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। এই হাজার হাজার দোকান, ভিড়ের মধ্যে কোথায় খুঁজবে লোকটাকে? ঘামতে শুরু করল উত্তেজনায়।
তখনই ওই ছেলেটার পাশের দোকানদারটা জিজ্ঞাসা করল আপ কেয়া চৌধুরীকো ঢুঁঢতে হ্যায়?
নাম তো জানি না দাদা। রোগা মতো মাঝবয়েসি। পুরোনো রেডিয়ো, টর্চ এইসব বিক্রি করত।
সমঝা হ্যায়। উয়ো অভি মৌলালী মে ব্যায়ঠতা হ্যায়।
মৌলালী। বুকের ভেতরটা ছাৎ করে উঠল রতনের।
হাঁ, উয়ো যো যুবা কেন্দ্র হ্যায় না উসি বিল্ডিংকে নীচে ফুটপাত মে মিলেগা উনকো।
রতন ঘড়ি দেখল। একটা চল্লিশ। রেডিয়োতে বলেছিল তিনটে নাগাদ অ্যাক্সিডেন্টটা ঘটার কথা। তার মানে হাতে এখনও অনেকটা সময় আছে। তার আগে মিটিয়ে ফেলতে পারবেই ও। চাঁদনি থেকে মৌলালী বাসে মিনিট পনেরোর পথ। লাফ দিয়ে একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়ল ও।
বুকের ভেতর ধক ধক করে শব্দ হচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে মৌলালীতে না যাওয়াই উচিত। যদি ওখানেও না থাকে। তার পরেই মনে হচ্ছে, যার কপালে মৃত্যু লেখা আছে তা কি আদৌ ঠেকানো যায়? রোজ তো কত কত মানুষ মরছে, খুন হচ্ছে, ক'জনকে আটকাতে পারছে ও? তবু জেনেশুনে একটা মানুষকে মরে যেতে দেব। রেডিয়োটাকে একবারের জন্য হলেও মিথ্যে প্রমাণ করে দেওয়া দরকার। খুব দরকার।
বাস ওয়েলিংটন-এর মোড়ে আসার পরেই তুমুল জ্যাম। কী একটা মিছিল যাচ্ছে। ব্যস। কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে কে জানে। কোনও গাড়ি নড়ছে না, শুধু রতনের হাতঘড়িটা লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে। ঘামছে রতন। প্রায় আড়াইটা। আর দেরি করা ঠিক না। বাস থেকে নেমে জোর কদমে হাঁটতে শুরু করল। যে ভাবেই হোক লোকটাকে বাঁচাতেই হবে।
ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে এগোতে এগোতে একসময় যখন মৌলালীর মোড়ে এসে পৌঁছাল তখন বুক হাপরের মতো ওঠা-নামা করছে। রাস্তার দিকে তাকাল রতন। ওপারে মৌলালী যুবকেন্দ্র। তার নীচেই লোকটার বসার কথা।
রাস্তা ক্রস করতে যাবে তখনই উত্তর দক্ষিণের সিগনাল ছেড়ে দিল ট্রাফিক। আর তখনই শিউরে উঠল রতন। একটা লোক কানে মোবাইল নিয়ে আপন মনে কথা বলতে বলতে রাস্তা ক্রস করছে। কতগুলো গাড়ি যে হাঁ হাঁ করে ছুটে আসছে সেটার দিকে খেয়ালই নেই। এই তাহলে সেই লোকটা। আর সময় নষ্ট করা ঠিক নয়, রতন দৌড়ে রাস্তার মাঝখানে গিয়ে পড়ল। লোকটাকে এক ঠেলা দিয়ে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে গিয়েই পায়ের হাওয়াই চপ্পলটা ছিঁড়ে গিয়ে রাস্তায় উপুর হয়ে পড়ল রতন, আর উঠে দাঁড়াতে পারল না। একটা বাস...
আগের দিন রেডিয়োতে যে খবরটা পুরো শুনতে পারেনি রতন, তা হল 'মৃতের নাম রতনতনু ঘোষ'।

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন