বিনোদ ঘোষাল

একটা ছোটগল্প লিখতে বসেছিলাম। প্লট মাথায় রেডি। প্রধান চরিত্র একজন প্রৌঢ় মানুষ, তার মাথায় চুল প্রায় নেই, যে কয়গাছি আছে সেগুলো সাদা, ভারী চেহারা, ভুঁড়ি রয়েছে, সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরেন। মুখ গোলগাল, পান খান। মুখের মধ্যে বেশ কিছু কালো তিল রয়েছে, পায়ে পাম্পশু। হাইট মাঝারি।
সেই ভদ্রলোকের জীবনের কিছু অলৌকিক ঘটনা নিয়ে গল্পটা লিখব ভেবে বসেছিলাম। কিন্তু চরিত্রের নাম ভাবিনি। লিখতে বসে ভাবলাম কী নাম দেওয়া যায়? চরিত্রটি মনে মনে ভাবা ছিল, মনে হল যদি জগবন্ধু নাম দিই কেমন হয়? ভাবামাত্রই পিছিয়ে গেলাম অনেক অনেকগুলো বছর আগে। সেই নয়ের দশকের গোড়ায়।
তখন আমি ক্লাস এইট। মফসসলের বেঙ্গলি মিডিয়ম বয়েজ স্কুল। হই-হুল্লোড় করার বয়স। স্কুলের প্রায় প্রতিটি স্যারের একটি করে নাম দেওয়া হয়েছিল।
যেমন জুলফি, কারণ সেই স্যার ছাত্রদের জুলফি টেনে শাস্তি দিতেন। ছিলেন হিরোয়ানি। সেই সময়ের ইন্ডিয়ান ক্রিকেট প্লেয়ার হিরোয়ানির মতো দেখতে ছিল সেই স্যারকে।
তা ছাড়া ছিলেন হিট। উনি আমাদের প্রকৃতি বিজ্ঞান পড়াতেন। বই-এর তাপ মানে হিট চ্যাপ্টারটি প্রায় একমাস ধরে পড়িয়েছিলেন।
কিছুতেই আর সেই চ্যাপ্টারের বাইরে বেরোচ্ছিলেন না তাই তার নাম দেওয়া হয়েছিল হিট। এমন আরও অনেক নাম ছিল।
নামগুলো কোনও এক ক্লাস থেকে দেওয়া হত তারপর বংশপরম্পরায় (পড়ুন ক্লাস পরম্পরায়) মুখে মুখে ফিরতে থাকত। এমনই একজন স্যার ছিলেন আমাদের যার নাম দেওয়া হয়েছিল গ্লোব। উনি ভূগোল পড়াতেন।
যে গল্পটা লিখতে শুরু করব ভেবেছিলাম তার প্রধান চরিত্রের নাম জগবন্ধু ভাবতেই আমাদের সেই জগবন্ধু স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক আমি যেমনটি ভেবেছিলাম, জগবন্ধু স্যারকেও অবিকল তেমনি দেখতে ছিল। খুব রসিক।
ছাত্রদের সঙ্গে ভারি মজার মজার কথা বলতেন। এমনকী কিশোর বয়েসের ছেলেদের মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে ওইসময় গোপনে একটু-আধটু আলোচনা হত তিনি সেই বয়েসেও পড়ার ফাঁকে টুক করে ঢুকে পড়তেন সেইসব আলোচনায়। তবে খুব বেশিদূর যেতেন না, খানিক গিয়েই আবার ফিরে আসতেন পড়ার বিষয়ে।
গল্প করতে করতে ভূগোল শেখাতেন তিনি, আর সেইসব গল্প এমনই মজাদার ছিল যে অন্যান্য ক্লাস থেকেও ছেলেরা এসে পিছনের বেঞ্চে ঘাপটি মেরে বসে থাকত স্যারের ক্লাস করবে বলে। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
তো সেই জগবন্ধু স্যারের হাতে সবসময় থাকত একটি বেত, যা তিনি জীবনে কোনওদিনই ব্যবহার করেননি, সত্যিই কোনওদিনই নয়, শুধু একদিন করেছিলেন আর সেই দিনটার সাক্ষী ছিলাম আমরা। এমনই একটি কাণ্ড হয়েছিল যে স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়েছিল সেদিন। সেই গল্পটাই বলতে ইচ্ছে করছে আজ। বলি?
জগবন্ধু স্যারের হাতে একটি বেত ছাড়া থাকত একটি গ্লোব। সেই গ্লোবটা ছিল স্পেশ্যাল। যে ক্লাসেই যেতেন কোলের মধ্যে গ্লোবটিকে নিয়ে যেতেন। আর এমনভাবে নিতেন যে মনে হত নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘুরছেন। গ্লোবটারও একটা নাম দেওয়া হয়েছিল। জগবন্ধু-পুত্র ওরফে জপু।
সেই নাম স্যারের কানে পৌঁছোনোমাত্র স্যার নিজেও সেই গ্লোবের নাম দিয়ে ফেললেন জপু। ফলে ব্যাপারটা আরও মজার হয়ে গেল। তো এই জপুকে নিয়ে স্যারের আদিখ্যেতার কোনও সীমা ছিল না।
কী যে স্নেহ করতেন তিনি ওই পুরোনো হলদেটে হয়ে যাওয়া গ্লোবটাকে যে নিজে চোখে না দেখলে সেই যত্ন ভাবা কঠিন। ক্লাসে নিজের চেয়ারে বসে খুব সাবধানে তিনি ওই গোল কাঠের স্ট্যান্ডে খুব সরু লোহার রডে তেরছা করে এফোড়-ওফোড় হ্যাং করা গ্লোবটাকে টেবিলের ওপর রাখতেন। তারপর শুরু করতেন পড়ানো।
পড়ানোর মাঝে মাঝেই ধুতির খুট দিয়ে পরম যত্নে এমনভাবে গ্লোবটাকে মুছে দিতেন যেভাবে শিশুসন্তানকে মা দুধ খাওয়ানোর পর মুখ মুছিয়ে দেয়।
স্যার ছিলেন কাঠ বাঙাল। একেবারে বিশুদ্ধ বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন তিনি। আমাদের সকলকে মনু বলে ডাকতেন। মনু অর্থে, মনা। 'কী মনু পড়া করসো?'
সম্ভবত ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। ভূগোলে একটি অংশ ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র নিয়ে। জগবন্ধু স্যার ভুটান, নেপাল, মায়নমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান সব পড়ালেন। সেই সব দেশের আবহাওয়া থেকে কৃষজ খনিজ সবকিছু আমরা জেনে গেলাম কিন্তু বাংলাদেশ পড়ালেন না।
আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় দিব্যেন্দু বলল, স্যার বাংলাদেশ পড়ালেন না?
স্যার উত্তর দিলেন না। দিব্যেন্দু আবার জিজ্ঞাসা করায় স্যার বেশ অস্বস্তি নিয়ে মুখে তেতো করে উত্তর দিলেন নিজে পইড়্যা নিয়ো।
কেন স্যর?
ক্যান মানে? পড়তে পারো না। চোক্ষে দেহো না নাকি? কানা পুলা।
স্যারকে এতটা উত্তেজিত হতে আমরা কোনওদিন দেখিনি।
সেদিনের মতো দিব্যেন্দু চুপ হয়ে গেছিল ঠিকই কিন্তু স্যারকে ছেড়ে কথা বলেনি। আফটার অল সে ফার্স্টবয় বলে কথা, অকারণ সব স্টুডেন্টদের সামনে এমন ঝাড় খেয়ে সেন্টুতে লেগে গেছিল। সুতরাং ক্লাস শেষ হওয়ার পরই সটান হেডস্যারের ঘরে গিয়ে নালিশ।
হেডস্যার ছিলেন পাঁড় ঘটি। ছাত্রদের কাছে কানাঘুসোয় খবর আসত ঘটি-বাঙাল কালচার নিয়ে নাকি জগবন্ধু স্যার আর হেডস্যারের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ডুয়েল চলত।
ইলিশ-চিড়িং, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান থেকে সাহিত্য, শিক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ে, ঘটি বড় না বাঙাল তা নিয়ে মারকাটারি তর্ক চলত। তবে সেসব ছাত্রদের কানে পৌঁছোত না।
টিচার্সরুমের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এমনকী এটাও শোনা যেত এই ঘটি-বাঙালের কারণে হেডস্যার আর জগবন্ধু স্যারের পারস্পরিক সম্পর্কটা খুব মধুর ছিল না।
সেই আশা নিয়েই দিব্যেন্দু গেছিল অভিযোগ জানাতে। আশা করেছিল হেডস্যার একটা গুরুতর স্টেপ নেবেন এবং দিব্যেন্দুর অপমানের জ্বালা মিটবে। কিন্তু সেই হেডস্যার পুরোটা শুনে দিব্যেন্দুকে খুব শান্তভাবে বলেছিলেন, জানি উনি ওটা পড়ান না। তোরা নিজেরা পড়ে নিস, কোনও কিছু অসুবিধা হলে আমাকে বলিস, বুঝিস দেব। কেন পড়ান না জিজ্ঞাসা করায় হেড স্যার বলেছিলেন তোরা বুঝবি না।
তার পরেও বোঝার গোঁ ছাড়েনি দিব্যেন্দু। তক্কে তক্কে ছিল কী করে জগবন্ধুস্যরকে প্যাঁচে ফেলা যায়। আমরা বন্ধুরা অনেকবার ওকে বুঝিয়েছিলাম স্যার এমনিতে এত ভালো মানুষ, কি দরকার তাঁর পিছনে লেগে? বাংলাদেশ পড়াতে চান না যখন থাক না। কিছু কারণ থাকবে নিশ্চয়ই। কিন্তু ফার্স্টবয় দিব্যেন্দু নিজের লক্ষে অনড়। শোধ সে নেবেই। পড়ান না মানে? কেন পড়াবেন না? সিলেবাসে রয়েছে যখন উনি পড়াতে বাধ্য। সুযোগ এসেও গেল একদিন।
জগবন্ধু স্যারের স্বভাব ছিল একটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর অন্য কোনও ক্লাস থাকলে তিনি আর টিচার্সরুমে যেতেন না সরাসরি সেই ক্লাসে চলে যেতেন।
আর মাঝে বাথরুম যাওয়া কিংবা জল-টল খাওয়ার থাকলে ক্লাসের ফাঁকেই গিয়ে সেরে আসতেন। এমনই একদিন স্যার আমাদের ক্লাস নিতে নিতে বললেন, বান্দরগুলান এট্টু চুপ কইর্যা থাহো, আমি আইতাসি। স্যার, বেরিয়ে গেলেন। টেবিলের ওপর রাখা স্যারের সেই অতিপুরাতন গ্লোব মানে জপু যা কোনওদিনই তিনি পড়ানোর সময় ব্যবহার করতেন না অথচ কোলে নিয়ে ঘুরতেন। সেই টেবিলের গ্লোবের দিকে এগিয়ে গেল দিব্যেন্দু। খুব খুঁটিয়ে গ্লোবটা দেখে হো হো করে হেসে উঠল। আমরা অবাক। ব্যাপার কী রে?
পাগল পাগল পুরো পাগল স্যারটা। দাঁড়া আসুক তারপর কেমন মুরগি করি দেখবি আজ।
ভয়ে আমাদের বুক দুরু দুরু। কী করবে কে জানে। মন সায় দিচ্ছিল না কারোরই। স্যার ঢোকামাত্র দিব্যেন্দু জিজ্ঞাসা করল স্যার আপনি যে এই গ্লোবটা নিয়ে ঘোরেন এতে বাংলাদেশটা কোথায় একটু দেখাবেন?
ক্যান?
দেখতে চাইছি।
বাংলাদেশ বইল্যা কোনও আলাদা দ্যাশ নাই।
সে আবার কী কথা! বইতে যে আছে। এই তো। বলে বইয়ের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারটা বার করে তুলে ধরল দিব্যেন্দু।
স্যার চুপ।
আপনার গ্লোবে স্যার বাংলাদেশ নেই?
না নাই।
কেন নেই স্যার?
স্যার প্রসঙ্গ বদলাতে চেষ্টা করলেন কিন্তু দিব্যেন্দু নাছোড়। এটা কবেকার গ্লোব স্যার? গ্লোবটা ভুল আছে স্যার।
আর সহ্য হল না স্যারের। কী কইলি হারামজাদা ভুল আসে? এই গ্লোবে ভুল আসে? এত্ত বড় সাহস তোর। হাতে বেতটা নিয়ে উন্মাদের মতো দিব্যেন্দুর দিকে ছুটে এলেন আমাদের প্রিয় জগবন্ধু স্যার। আর আমরা ক্লাসশুদ্ধু সবাই বিস্ময়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দেখতে থাকলাম জগবন্ধু স্যার, আমাদের সকলের প্রিয় জগবন্ধু স্যার যে কি না জীবনে কোনওদিন কোনও ছাত্রর কানটা পর্যন্ত ধরেননি, তিনি পাগলের মতো দিব্যেন্দুকে বেত দিয়ে মেরে চলেছেন।
নিশ্চুপ ঘরটায় শুধু ক্রমাগত সপ সপ করে শব্দ। আমরা নিশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছিলাম। হাঁ করে তাকিয়ে দেখছিলাম দিব্যেন্দুর গোটা ফরসা শরীর বেতের প্রহারের লাল লাল দাগ। শুধু বেত নয় বাঁ-হাত দিয়ে মাঝে মাঝে ঠাসিয়ে চড়ও মারছিলেন স্যার, ঠোঁট কেটে রক্ত বেরোচ্ছিল দিব্যেন্দুর। আমরা ভাবছিলাম কতক্ষণে শেষ হবে, দিব্যেন্দু বুঝি মরেই যাবে। স্যার মারছিলেন আর ওর চোখ দিয়ে দরদর করে জল গড়িয়ে পড়ছিল। ফুঁপিয়েও উঠছিলেন মাঝে মাঝে। দিব্যেন্দু দাঁত চেপে দাঁড়িয়েছিল। তারপর একসময় আচমকাই মেঝেতে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলেন জগবন্ধু স্যার।
দিব্যেন্দুকে হাসপাতালে যেতে হয়নি, তবে বেশ কয়েকদিন বাড়িতে আন্ডার ট্রিটমেন্ট থাকতে হয়েছিল। সময়টা নয়ের দশক বলে থানা-পুলিশ কিংবা অভিভাবকদের কিংবা পাড়ার লোকেদের দ্বারা স্কুল ঘেরাও-ও হয়নি। তবে জগবন্ধু স্যার জীবনের প্রথম কার্ডিয়াক অ্যাটাকটা সামলানোর পর আর কোনওদিন স্কুলে আসেননি। আর বছর দুয়েক বাকি ছিল ওর রিটায়ারমেন্টের, কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ভল্যান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিয়েছিলেন। তবে আমরা পরে জানতে পেরেছিলাম অসুস্থতাটা প্রধান নয়, আসলে তিনি আর স্কুলে ঢুকতেই চাননি।
এই ঘটনার কিছুদিন পর দিব্যেন্দুর বাবা হেডস্যারের সঙ্গে দেখা করে ছেলেকে নিয়ে গেছিলেন জগবন্ধু স্যারের বাড়িতে। পরের বাকিটুকু শুনেছিলাম দিব্যেন্দুর কাছে। স্যার নাকি দিব্যেন্দুকে দেখামাত্রই ওকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেছিলেন আর বারবার আমারে ক্ষমা করিস বাপ, বড় ভুল কইর্যা ফ্যালাইসি। এমন পশুর মতো পিটাইসি তোরে ভগবান আমারে কোনওদিন ক্ষমা দিব না বলে যাচ্ছিলেন ক্রমাগত। স্যারের চোখের জলে দিব্যেন্দুর শার্ট ভিজে গেছিল সেদিন। আমিও মাইরি আর চোখের জল আটকাতে পারিনি। অত বয়স্ক একটা মানুষ একেবারে বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদছিল। তারপর ওর মুখেই জানতে পেরেছিলাম কারণটা। যা হেড স্যার বলেছিলেন দিব্যেন্দুর বাবাকে।
জগবন্ধু স্যার ছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। বরিশালের জয়শ্রীতে একটি ইশকুলের টিচার ছিলেন। একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধে লড়াইও করেছেন। তারপর প্রাণ বাঁচাতে সপরিবার চলে এসেছিলেন কাঁটাতার পেরিয়ে। কিন্তু শরীর পেরোলেও নিজের মন, আত্মা আটকে গেছিল ওই কাঁটাতারের ওপারেই। জীবনে কোনওদিন ভুলতে পারেননি নিজের দেশকে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ যে ভারতের থেকে আলাদা একটা দেশ সেটাও কখনও মেনে নিতে পারেননি তিনি।
তাঁর হাতের ওই গ্লোবটা ছিল তাঁর বাবার। যখন ভারত বাংলাদেশ দুটো আলাদা দেশ ছিল না। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় ওই গ্লোবটাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তারপর এই দেশে এসে স্কুল মাস্টারি পেলেন একসময়। কিন্তু ওই গ্লোবটাকেই সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। ওটাই ছিল তাঁর আসল মানচিত্র। যেখানে দুটো দেশ আলাদা নয়। সারাক্ষণ সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। সেই কারণে ভূগোলে বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র তিনি ভাবতে পারতেন না। পড়াতেনও না।
এই কথাটা শুধু জানত তাঁর পরিবার আর স্কুলের সিনিয়র টিচাররা। কিছু বলতেন না তাঁরা। একটা মানুষ যদি তাঁর পুরোনো স্মৃতিকে এইভাবে নিয়ে বাঁচতে চায় তো বাঁচুক না।
জগবন্ধু স্যার আর বেশিদিন বাঁচেননি। বছর দেড়েক পর উনি মারা যান। শেষদিকে নাকি মাথার একটু গোলমালও হয়ে গেছিল। সারাদিন নাকি সেই গ্লোবটাকে নিয়ে শুয়ে থাকতেন আর সেটার সঙ্গে বিড়বিড় করে কথা বলতেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতেন। আদর করতেন, চুমু খেতেন।
তিনি মারা যাওয়ার পর স্কুলে শোকসভায় দিব্যেন্দু ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলেছিল। যার শেষ লাইনটা ছিল এইরকম, 'হয়তো আমরা কোনওদিন এমন একটা গ্লোব পাব যেখানে দেশগুলোর আর কোনও আলাদা নাম থাকবে না।' আমার আজও মনে রয়েছে সেই লাইনটা। গ্লোবটা কি এখনও রাখা আছে স্যারের বাড়িতে? জানি না।
তবে আমি জানি আমার আর কোনও গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম আমি জগবন্ধু রাখব না। তাহলে আবার অন্য গল্পের বদলে এই গল্পটাই লিখতে হবে আমাকে আবার...আবারও।

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন