২০. উম্মুল মুমিনীন রায়হানা (রা)

২০. উম্মুল মুমিনীন রায়হানা (রা)

রাসূল (ﷺ)-এর পত্রিীগণ হলেন মুমিনদের জন্য মাতৃতুল্য। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন

النبى اولى بالمؤمنين من أنفسهم وأزواجه أمهاتهم.

নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা (সুরা-৩ আহযাব : আয়াত-৬)। তাই মুমিনদের মাতা ও রাসূল (ﷺ)-এর পবিত্র গ্রীগণ জান্নাতে যাবে এটাই স্বাভাবিক। যাদের সাথে রাসূল (ﷺ)-এর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হয়েছে তারা জাহান্নামে যাবে আর রাসূল জান্নাতে থাকবেন এটা অসম্ভব কথাও বটে। তাই রাসূল (ﷺ)-এর সাথে তাদের সম্পর্কের কারণেই তারা জান্নাতে যাবেন, এটাই দলিল তাদের জান্নাতে যাওয়ার।

নাম ও পরিচয়

তার নাম রায়হানা। পিতার নাম শামউন। তিনি ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ ইয়াহূদী বনু নাযীর গোত্রের মেয়ে। বংশ তালিকা হল- রায়হানা বিনতে শামউন ইবনে যায়েদ, অন্য মতে রায়হানা বিনতে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে খানাফা ইবনে শামউন ইবনে যায়েদ।

প্রথম বিবাহ

তাঁর প্রথম বিয়ে হয় বনু কুরায়জা গোত্রের হাকামের সাথে। কিছুদিন পর হাকামের মৃত্যু হয়। ৬ষ্ঠ হিজরী সালে যখন মুসলমানরা বনু নাযীর ও বনু কুরায়জা গোত্রের সব কিছু দখল করে নেয় তখন রায়হানাকে যুদ্ধ বন্দী হিসেবে নিয়ে আসা হয়। এরপর কিছুদিন তাকে কায়েসের কন্যা উম্মু মুনফিরের কাছে রাখা হয়।

বিয়ে করতে রাসূল (ﷺ)-এর ইচ্ছা প্রকাশ

রাসূল (ﷺ) বিদ্রোহী ইয়াহুদী গোত্রগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য সমগ্র আরবে শাস্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রায়হানাকে আশ্রয় দিতে ও বিয়ে করতে মনস্থ করেন এবং তাকে বলেন, ‘তুমি আল্লাহ এবং রাসূলকে গ্রহণ করলে আমি তোমাকে আমার জন্য উপযুক্ত মনে করি। রায়হানা বিনতে শামউন রাসূল (ﷺ)-এর এ প্রস্তাব আনন্দে গ্রহণ করেন। রায়হানা (রা) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ছিলেন কুরায়জা গোত্রের আল-হাকাম এর স্ত্রী, মুসলমানদের সাথে কুরায়জা গোত্রের সন্ধি চুক্তি ছিল। কিন্তু আহ্যাব যুদ্ধে কুরায়জা গোত্রে বিশ্বাসঘাতকতা করে মুশরিক কুরাইশদের পক্ষ গ্রহণ করে। ফলে আল্লাহর নির্দেশে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ দিন তাদেরকে অবরোধ করে রাখলে অনন্যোপায় হয়ে তারা আত্মসমর্পণ করে।

অত:পর তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করা হয় এবং মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করা হয়। এ সূত্রে রায়হানা-এর স্বামী আল হাকাম নিহত হয় এবং তিনি বন্দিনী হন। প্রথমত তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি উহা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং স্বীয় ইয়াহুদী ধর্মে বহাল থাকতে পছন্দ করেন। অতঃপর তাকে পৃথক করে উম্মুল মুনযির বিবৃত কায়েস-এর গৃহে রাখা হয়। কিছু দিন পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

রায়হানা (রা)-এর ইসলাম গ্রহণ

রাসূলুহ (ﷺ)-এর সাথে তার বিবাহ হওয়ার বর্ণনা নিজেই প্রদান করেয়াছেন, যা ইবন সা’দ স্বীয় গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন রায়হানা (রা) বলেন, বন্দীদেরকে হত্যার পর রাসূলুল্লাহ আমার নিকট আগমন করেন, অতঃপর আমাকে কাছে বসিয়ে বললেন, তুমি যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গ্রহণ কর তা হলে রাসূলুল্লাহ নিজের জন্য তোমাকে গ্রহণ করবেন। আমি বললাম, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গ্রহণ করলাম। আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ আমাকে আলাদা করে দেন এবং আমার তার অন্যান্য পত্নীদিগের ন্যায় ১টি গৃহেই আমাদের বাসর হয়। তিনি অন্যান্য স্ত্রীর ন্যায় সমভাবে পালা বন্টন অনুযায়ী আমার গৃহে আগমন করতেন এবং আমার ওপর পর্দার হুকুম আরোপ করেন।

অপর এক বর্ণনা মতে প্রথমত তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি অস্বীকার করেন। এতে রাসূলুল্লাহ-মননক্ষুন্ন হন। অতঃপর তিনি একদিন সাহাবীদের নিয়ে তিনি বসলেন। তখন পিছন হতে জুতার আওয়াজ শুনে তিনি বললেন, ছালাবা ইবনে প্রভা রায়হানা ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। অতঃপর ঠিকই তিনি এসে রাসূলুল্লাহকে রায়হানার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ দিল।

অপর বর্ণনা মতে, অতঃপর রাসূল তাকে স্বাধীন করে দেন। অতঃপর তাকে বিবাহ প্রস্তাব দেন এবং হিজাব (পর্দা) মান্য করার কথা বলে। রায়হান তার উত্তরে বলেন, হে রাসূল ! বরং আমাকে দাসী হিসেবে আপনার মালিকানা রাখুন। উহাই আপনার জন্য এবং আমার জন্য সহজতর হবে। তখন রাসূল তাকে দাসী হিসেবে রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে যুক্তির কষ্টিপাথরে এ মতটি জোরালো বলে মনে হয় না। কারণ প্রান্ত ও স্বাধীন এ মহিলাকে যিনি দৈবক্রমে বন্দী ও দাসী হয়ে গিয়েছেন, আযাদ হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলে তিনি যে উক্ত কাঙ্খিত প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বন্দীদশাকেই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করবেন, ইহা এক রকম অসম্ভব।

রায়হানা ছিলেন অপরূপ সুন্দরী এবং অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার ও পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারীণী। রাসূল ও তার প্রতি খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি যা চাইতেন রসূলতাকে তা প্রদান করতেন। ফলে রাসূল তাকে মুক্ত করে ৪০০ দিরহাম মোহরানা প্রদান করে বিয়ে করেন।

ওফাত

ইবনে সা’আদের বর্ণনা মতে হিজরী ৬ষ্ঠ সালের মুহররম মাসে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ বিয়ের ফলে ইয়াহুদী গোত্রগুলোর সাথে মুসলমানদের সম্পর্কের চমৎকার উন্নতি হয়। উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুসম্পর্কও প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাকের মতে রাসূল (ﷺ)-এর ইন্তেকালের দশ মাস পূর্বে রায়হানা (রা) ইন্তেকাল করেন।

সকল অধ্যায়

১. ১. উম্মুল মু’মিনীন খাদীজা (রা)
২. ২. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা)
৩. ৩. উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা)
৪. ৪. মারইয়াম (আ)
৫. ৫. আছিয়া (আ)
৬. ৬. উম্মু সুলাইম (রা)
৭. ৭. যয়নব বিনত রাসূলুল্লাহ
৮. ৮. রুকাইয়া বিনত মুহাম্মদ
৯. ৯. উম্মু কুলছুম বিনত নবী করীম (ﷺ)
১০. ১০. ফাতিমা বিনত রাসূলিল্লাহ
১১. ১১. সুমাইয়া (রা)
১২. ১২. উম্মুল মুমিনীন সাদা বিনতে যামআ (রা)
১৩. ১৩. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে খুযাইমা (রা)
১৪. ১৪. উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামা (রা)
১৫. ১৫. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে জাহাশ (রা)
১৬. ১৬. উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রা)
১৭. ১৭. উম্মুল মুমিনীন উম্মু হাবীবা (রা)
১৮. ১৮. উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যা (রা)
১৯. ১৯. উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা (রা)
২০. ২০. উম্মুল মুমিনীন রায়হানা (রা)
২১. ২১. উম্মুল মু’মিনীন মারিয়া কিবতিয়া (রা)
২২. ২২. হালীমা (রা)
২৩. নবী করীম (ﷺ)-এর বহু বিবাহের সমালোচনার প্রতিবাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন