১৮. উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যা (রা)

১৮. উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যা (রা)

রাসুল এর পবিত্র স্ত্রীগণ হলেন মুমিনদের জন্য মাতৃতুল্য। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন-

النبي اولى بالمؤمنين من السهم وازواجه أمهاتهم.

নবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা (সূরা-৩৩ আহযাব : আয়াত-৬)।

তাই মুমিনদের মাতা ও রাসূল (ﷺ)-এর পবিত্র স্ত্রীগণ জান্নাতে যাবে এটাই স্বাভাবিক। যাদের সাথে রাসূল (ﷺ)-এর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হয়েছে তারা জাহান্নামে যাবে আর রাসূল জান্নাতে থাকবেন এটা অসম্ভব কথাও বটে। তাই রাসূল (ﷺ) -এর সাথে তাদের সম্পর্কের কারণেই তারা জান্নাতে যাবেন, এটাই দলিল তাদের জান্নাতে যাওয়ার।

নাম ও পরিচয়

তাঁর প্রকৃত নাম যয়নব। প্রসিদ্ধ নাম সফিয়্যা। আরবের প্রথা অনুযায়ী যুদ্ধলব্ধ মাল বস্টনের সময় যে উৎকৃষ্ট বা উত্তম মাল দলপতির জন্য রাখা হতো তাকে সফিয়্যা বলা হতো। খায়বার যুদ্ধে প্রাপ্ত সকল কিছুর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন যয়নব। শেষ পর্যন্ত এ যয়নবকে রাসূল (ﷺ)-এর ভাগে দেয়া হয়। এজন্য তার নামকরণ করা হয় সফিয়া এবং এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হুওয়াই ইবনে আখতাব। তিনি ছিলেন হারুন ইবনে ইমরান (আ:)-এর অধস্তন পুরুষ।

বংশ

তাঁর বংশ তালিকা হল- যয়নব বিনতে হুওয়াই ইবনে আখতাব ইবনে সাঈদ ইবনে আমের ইবনে ওবাইদ ইবনে কাআব ইবনুল খাযরাজ ইবনে আবু হাবীব ইবনে নুছাইর ইবনে নাহহাম ইবনে মাইখুম। তার মায়ের নাম ছিল বাররা বিনতে সামওয়ান। এ সামওয়ান ইয়াহুদীদের সর্বশ্রেষ্ঠ গোত্র বনু কুরাইযার নেতা ছিলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে সফিয়্যা (রা)-এর পিতৃকুল নযীর ও মাতৃকুল বনু কুরাইযার ইয়াহুদীদের এক বংশে গিয়ে মিলিত হয়েছে।

পারিবারিক অবস্থান

সফিয়্যা (রা)-এর আব্বা ও দাদা উভয়েই ছিলেন তৎকালীন ইয়াহুদী জাতির সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। যে কারণে বনী ইসরাঈলের সমস্ত আরবীয় গোত্রের মধ্যে তাদেরকে আলাদা রকম সম্মান করা হতো। বিশেষ করে তার বাবা হওয়াই ইবনে আখতাবকে মর্যাদার শীর্ষে স্থান দেয়া হয়েছিল। ইয়াহূদীরা বিনা বাক্যে তার নেতৃত্ব মেনে চলতো। তার নানা সামওয়ান মান মর্যাদা শৌর্য বীর্য এবং বীরত্বের দিক দিয়ে সারা জাযিরাতুল আরবে ছিলেন সম্মানিত। অর্থাৎ সফিয়া (রা) ছিলেন সব দিক দিয়েই বিশিষ্টতার অধিকারিণী।

প্রথম বিবাহ

সফিয়্যা (রা)-এর প্রথম বিয়ে হয় আরবের প্রখ্যাত কবি ও সর্দার সালাম ইবনে মিশকাম আল কারাবীর সাথে। প্রথম দিকে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হলেও পরবর্তীতে মনোমালিন্য ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ফলে সফিয়্যা (রা) পিতৃগৃহে ফিরে আসেন।

দ্বিতীয় বিবাহ

এরপর কেনানা ইবনে আবুল আকীক-এর সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। আকূল আফীক ছিলেন খায়বারের নামকরা দুর্গ আল-কামুদ-এর সর্দার। এ সময় তার বয়স ছিল সতের বছর।

পিতা ও চাচার মৃত্যু

তাঁর পিতা ও চাচা আবু ইয়াসির রাসূল (ﷺ)-এর চরম শক্ত ছিল। তারা মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে চতুর্থ হিজরীতে খায়বারে গিয়ে কিনানা ইবনে আল রাবীর সাথে বসবাস করতে থাকেন। এখানে বসেই ইয়াই ইবনে আখতাব মুসলমানদের ক্ষতি করার সর্বপ্রকার চেষ্টা করতে থাকে। পরবর্তীতে রাসূল (ﷺ)-এর নেতৃত্বে খায়বার অভিযানকালে মুসলমানদের হাতে আলকামূস দুর্গের পতন ঘটে। যুদ্ধে ইয়াহুদীদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। বহু নেতৃস্থানীয় ইয়াহূদী মৃত্যুবরণ করে। কেননা ইবনে আবুল আকীক দুর্গের অভ্যন্তরে নিহত হন। এমন কি তাঁর পিতা হুওয়াই ইবনে আখতাবও নিহত হন। সফিয়্যা অন্যান্য পরিবার-পরিজনদের সাথে বন্দী হন।

বন্দীনী সফিয়্যা

সফিয়্যা বন্দীনী হিসেবে মুসলিম শিবিরে আসার পর আরবের নিয়ম অনুযায়ী সাহাবী দাহইয়া কলবীর আবেদন মোতাবেক তাকে তার ভাগে দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সফিয়্যা (রা) তার মর্যাদার দিক বিবেচনা করে সাহাবী দাহইয়া কালবীর ঘরে যেতে অস্বীকার করেন। এ সময়ে কতিপয় সাহাবী আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সফিয়া বনু কুরাইযা এবং বনু নজীরের মহিলা। এ নেতৃস্থানীয়া মহিলাকে দাহইয়ার হন্তে বাদী হিসেবে সমর্পণ করলেন তার মর্যাদা তো অনেক উঁচুতে আসীন। তিনি আমাদের নেতার জন্যই যথোপযুক্ত। রাসূল সাহাবীদের আবেদন কবুল করলেন এবং দাহইয়া কালবীকে অন্য একজন পরিচারিকা দান করলেন। সফিয়াকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিলেন।

রাসূলের নিকট আশ্রয় চাওয়া

সফিয়া কোথাও যেতে রাজি হলেন না। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর কাছে বিনীত আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ খায়বার যুদ্ধে আমার পিতা এবং স্বামী নিহত হয়েছেন। আমার নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরাও যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। আর আমি ইয়াহুদী ধর্ম ত্যাগ করে পবিত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছি। বর্তমানে আমার ইয়াহুদী আত্মীয়-স্বজন যারা বেঁচে আছে তাদের কেউই আমাকে আশ্রয় দেবে না এবং গ্রহণ করবে না। এ আশ্রয়হীন অবস্থায় আমি কোথায় যাবো কে আমার এ অসহায় অবস্থার সহায়ক হবে? কে আমাকে স্থান দিবে? ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আর কোথাও যাবো না, আমি আপনার অন্তঃপুরে একজন দাসী হয়ে থাকতে চাই। আপনি আমাকে আশ্রয় প্রদান করুন।

রাসূলের সাথে বিবাহের আকাঙ্খ

খায়বার যুদ্ধ বিজয়ের পর সফিয়া (রা) বন্দী হয়ে আসলে এক সময় তাকে রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, আমার ব্যাপারে তোমার কোন আগ্রহ আছে কি? তিনি উত্তরে বললেন, শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত থাকার সময় আমি এ আশা পোষণ করতাম। সুতরাং ইসলাম গ্রহণের দ্বারা আল্লাহ আমাকে আপনার সাহচর্য লাভের যে সুযোগ দিয়েছেন, সে সুযোগ আমি কীভাবে হারাতে পারি? অন্য বর্ণনায় এসেছে, সফিয়্যা (রা) যখন রাসূলের নিকট আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমার পিতা ইহুদী ছিলেন, যে আমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করত। অবশেষে আল্লাহ তাকে নিহত করলেন। তখন সফিয়্যা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন

ولاتزر وازرة وزر أخرى

অর্থ: ‘একজনের (পাপের) বোঝা অন্যের ওপর চাপানো হবে না। (আন’আম ১৬৪; ইসরা ১৫; ফাতির ১৮; যুমার ৭; নাজমা ৩৮)।

তখন রাসূল বললেন, তুমি যা পছন্দ কর, বেছে নেও। যদি তুমি ইসলামকে পছন্দ কর, তাহলে আমি তোমাকে আমার জন্য রেখে দিব। আর যদি তুমি ইহুদী ধর্ম মতকে পছন্দ কর, তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব, যাতে তুমি তোমার কওমের সাথে মিলিত হতে পার। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইসলামকে ভালবেসেছি, আপনি আমাকে দাওয়াত দেওয়ার পূর্বেই আমি আপনাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি, এমনকি আমি আপনার সওয়ারীতে চড়েছি। ইহুদী ধর্মের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ বা অনুরাগ নেই। আর সেখানে আমার পিতা, ভাই, কেউ নেই। আপনি কুফরী বা ইসলাম যে কোনটি গ্রহণের এখতিয়ার দিয়েছেন। আল্লাহ ও তার রাসূলেই আমার নিকট অধিক প্রিয় স্বাধীন হওয়ার চেয়ে এবং আমার কওমের নিকট ফিরে যাওয়ার চেয়ে। তখন তাকে রাসূলুল্লাহ নিজের জন্য রেখে দিলেন।

সফিয়াকে বিবাহের কারণ

বিভিন্ন কারণে রাসূলুল্লাহ সফিয়াকে বিবাহ করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিন্মরূপ-

১. আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী নিহত এবং নিজেও স্বীয় ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় সফিয়্যা শোক বিহবল ছিলেন। তার শোকাহত হৃদয়কে শান্ত করা ও তাকে দ্বীন ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য রাসুলুল্লাহর বিবাহ করেন।

২. এ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বনু নাযীর ও বনু কুরায়জার বিরোধিতা ও শক্রতা হ্রাসকরণ এবং প্রশমনের অভিপ্রায়ে রাসূলুল্লাহ সফিয়্যাকে বিবাহ করেন। যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়েছিল। সফিয়্যার যথাযথ সম্মান বজায় রাখা এবং এ নজীরবিহীন ইহসানের প্রতি লক্ষ্য করে ইহুদী সম্প্রদায় যাতে আল্লাহদ্রোহিতা থেকে ফিরে এসে ইসলাম কবুল করতে অনুপ্রাণিত হয়, এজন্য রাসূলুল্লাহ সফিয়্যাকে বিবাহ করেন।

রাসূলের সাথে বিয়ে

সবদিক বিবেচনা করে রাসূল সফিয়্যা (রা)-এর আবেদন মঞ্জুর করলেন এবং খায়বার থেকে মদীনায় ফেরার পথে যাবাহা’ নামক স্থানে তাকে বিবাহ করেন। এটা ছিল হিজরী সপ্তম সালের মহররম মাসের শেষ সপ্তাহ। এ বিয়েতে অলিমা অনুষ্ঠান অর্থাৎ খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক স্যার সৈয়দ আমীর আলী লিখেছেন, ইয়াহূদী রমণী সফিয়াকে খায়বারের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মুসলমানরা বন্দী হিসেবে এনেছিলেন। তাকেও মুহাম্মদ উদারতার সঙ্গে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং তাঁর সনির্বন্ধ অনুরোধের জন্য তাঁকে স্ত্রীত্বে বরণ করেছিলেন।

এ বিয়ের ফলে আশ্রয়হীনা সফিয়্যা (রা) সুন্দর ও সর্বোত্তম আশ্রয় লাভ করেন। সাথে সাথে এ বিয়ের ফলে ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কিছুটা প্রশমন হয়। এমনকি ধীরে ধীরে ইয়াহুদীদের অনেকেই ইসলাম কবুল করেন। সফিয়্যা (রা) সুন্দরী ও লাবণ্যময়ী ছিলেন। যে কারণে মদীনায় আসলে তাকে দেখার জন্য মহিলাদের ভীড় পড়ে যায়। এমনকি যয়নব বিনতে জাহাশ, হাফসা, আয়েশা এবং জুয়াইরিয়া (রা) তাঁকে দেখতে আসেন। দেখা শোনার পর সকলে যখন চলে যান তখন রাসূল আয়েশা (রা)-কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আয়েশা, তাকে কেমন দেখলে? তিনি বললেন, সেততা ইয়াহুদী নারী। বললেন, এমন কথা বলবে না। সে তো মুসলমান হয়েছে। এখন ইসলামে সে উত্তম।

স্বভাব-প্রকৃতি

সফিয়্যা (রা) ছিলেন ধীরস্থির মেজাজের চমৎকার একজন মহিলা। জনৈক দাসী অভিযোগ করলেন, তার মধ্যে এখনও ইয়াহূদীদের গন্ধ পাওয়া যায়। কারণ সে এখনো শনিবারকে ভালবাসে। এছাড়া ইয়াহুদীদের সাথে এখনও তার সম্পর্ক আছে। ওমর (রা) যখন অন্য লোকের মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই করতে চান, তখন তিনি বলেন, শনিবারের পরিবর্তে আল্লাহ যখন শুক্রবার দিয়েছেন তখন আর শনিবারকে ভালবাসার কোন প্রয়োজন নেই। ইয়াহুদীদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে বলেন, ইয়াহূদীদের সঙ্গে তো আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক। আত্মীয়তার প্রতি আমাকে লক্ষ্য রাখতে হয়। অতঃপর দাসীকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন-কে তোমাকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে সে বললো, শয়তান। এটা শুনে সফিয়্যা (রা) চুপ থাকেন এবং দাসীকে মুক্ত করে নেন। আল্লামা ইবনে আবদুল বার সফিয়্যা (রা)-এর স্বভাব প্রকৃতি সম্বন্ধে লিখেছেন, সুফিয়্যা ছিলেন বুদ্ধিমতী, মর্যাদাশীলা এবং ধৈর্যের অধিকারিণী।’ আল্লামা ইবনে কাসীর লিখেছেন, রাসূল (ﷺ)-এর স্ত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতি। রাসূল সফিয়াকে খুব ভালবাসতেন এবং তার সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির খোজ খবর রাখতেন।

সফিয়্যা-যয়নব-আয়েশার সাময়িক বন্ধ

একবার সফরকালীন সময়ে সফিয়্যার উটটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময়ে যয়নব (রা)-এর সাথে একটি অতিরিক্ত উট ছিল। রাসূল তাই যয়নবকে বললেন, যয়নব। তোমার অতিরিক্ত উটটি সফিয়্যার সাহায্যের জন্য দাও। যয়নব বললেন, “এ ইয়াহূদীর মেয়েকে আমি উট দিব না।’ এ কথায় রাসূল খুবই রাগ করলেন এবং একাধারে দুই মাস যয়নবের (রা)-এর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন। পরবর্তীতে আয়েশা (রা)-এর মধ্যস্থতায়-এর পরিসমাপ্তি ঘটে। অন্য একদিন রাসূল গৃহে ফিরে দেখলেন সফিয়্যা কাঁদছেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, “আয়েশী এবং যয়নব বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহর স্ত্রী এবং বংশ গৌরবের দিক থেকে এক রক্তধারার অধিকারিণী। সুতরাং আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। রাসূল বললেন, “তুমি কেন বললে না, আমি আল্লাহর নবী হারুনের বংশধর ও মূসার ভ্রাতুস্পুত্রী এবং রাসূল আমার স্বামী। অতএব তোমরা কোন দিক থেকে আমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পারো?

উদারতা

দয়া দক্ষিণার ক্ষেত্রেও তার উদার হাত ছিল। তিনি যখন প্রথম মদীনায় আসেন ও রাসূল (ﷺ)-এর অন্তপুরে প্রবেশ করেন তখন তাঁর সর্বাঙ্গে বহু মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার ছিল। তিনি সেসব অলঙ্কার নবী নন্দিনী ফাতিমা ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে দেন। ওসমান (রা) ৩৫ হিজরীতে বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হন। বিদ্রোহীরা প্রয়োজনীয় রসদপত্র এমন কি পানি সরবরাহ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় সফিয়্যা (রা) ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন এবং কিছু রসদপত্রসহ ওসমান (রা)-এর গৃহের উদ্দেশ্যে খচ্চরে চেপে বসেন। কিন্তু পথিমধ্যে বিদ্রোহীরা তাঁর খচ্চরটিকে আক্রমণ করে বসলে তিনি বলেন তোমরা আমাকে এভাবে অপমান করো না। আমি যাচ্ছি। এরপর তিনি গৃহে ফিরে আসেন এবং হাসান (রা)-কে দিয়ে দ্রব্য সামগ্রী পৌঁছে দেন। পরে যে কদিন ওসমান (রা) অবরুদ্ধ ছিলেন হাসান (রা)-কে দিয়েই প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিতেন। এখান থেকে পরিষ্কার হয় সফিয়্যা (রা) কত বড় দায়িত্ববোধ সম্পন্ন মহিলা ছিলেন। তিনি অসম্ভব সুন্দর রান্না করতে জানতেন। এমন কি এ ক্ষেত্রে আয়েশাও (রা) তার সমকক্ষ ছিলেন না। সফিয়্যা (রা) লেখাপড়া জানা মহিলা ছিলেন। তিনি প্রায়ই তার ইয়াহুদী আত্মীয়-স্বজনের কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরে চিঠি লিখতেন। আর এ দাওয়াতী কাজের ফলে অনেকেই ইসলাম কবুল করেন।

তিনি ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এ জন্য অনেকে তাঁর কাছ থেকে মাসয়ালা মাসায়েল জানতে চাইতেন ও জেনে নিতেন। ছহীরা বিনতে হায়দার হজ্জব্রত পালন করার পর সফিয়্যা (রা)-এর সাথে দেখা করতে এসে দেখেন যে, কুফার একদল মহিলা মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য তার কাছে উপস্থিত হয়েছেন আর তিনি সুন্দরভাবে সকলের জিজ্ঞাসার জবাব দিচ্ছেন। তিনি মাত্র কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যয়নুল আবেদীন ইসহাক ইবনে আবদুল্লাহ, মুসলিম ইবনে সাফওয়ান, কিনানা এবং ইয়াযিদ ইবনে মাআতাৰ প্রমুখগণ তার নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ওফাত

৬০ বছর বয়সে হিজরী ৫০ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাকে জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত করা হয়। তার অসিয়ত অনুযায়ী মৃত্যুকালে রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ তার ভাগিনাকে দেয়া হয়। বাকী সম্পত্তি গরীব মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করা হয়। জানা যায় মৃত্যুকালে তিনি নগদ এক লক্ষ দিরহাম রেখে যান।

সকল অধ্যায়

১. ১. উম্মুল মু’মিনীন খাদীজা (রা)
২. ২. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা)
৩. ৩. উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা)
৪. ৪. মারইয়াম (আ)
৫. ৫. আছিয়া (আ)
৬. ৬. উম্মু সুলাইম (রা)
৭. ৭. যয়নব বিনত রাসূলুল্লাহ
৮. ৮. রুকাইয়া বিনত মুহাম্মদ
৯. ৯. উম্মু কুলছুম বিনত নবী করীম (ﷺ)
১০. ১০. ফাতিমা বিনত রাসূলিল্লাহ
১১. ১১. সুমাইয়া (রা)
১২. ১২. উম্মুল মুমিনীন সাদা বিনতে যামআ (রা)
১৩. ১৩. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে খুযাইমা (রা)
১৪. ১৪. উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামা (রা)
১৫. ১৫. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে জাহাশ (রা)
১৬. ১৬. উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রা)
১৭. ১৭. উম্মুল মুমিনীন উম্মু হাবীবা (রা)
১৮. ১৮. উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যা (রা)
১৯. ১৯. উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা (রা)
২০. ২০. উম্মুল মুমিনীন রায়হানা (রা)
২১. ২১. উম্মুল মু’মিনীন মারিয়া কিবতিয়া (রা)
২২. ২২. হালীমা (রা)
২৩. নবী করীম (ﷺ)-এর বহু বিবাহের সমালোচনার প্রতিবাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন