১১. সুমাইয়া (রা)

১১. সুমাইয়া (রা)

برا أن باران موعدكم الجنة.

হে ইয়াসিরের পরিবাব ধৈর্যধারণ কর। তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত রয়েছে।

ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া (রা) একজন মহিলা সাহাবী। তার বংশ পরিচয় তেমন একটা পাওয়া যায় না। ইবনে সা’দ তাঁর পিতার নাম ‘খুববাত’ বলেছেন, (তাবাকাত-৮/২৬৮) কিন্তু বালাজুরী বলেছেন, ‘খায়্যাত’। (আনসারুল আশরাফ-১/১৫৭) প্রখ্যাত শহীদ সাহাবী আম্মার ইবন ইয়াসির (রা)-এর মা এবং মক্কার আবু হুজাইফা ইবন আল-মুগীরা আল-মাখযুমীর দাসী ছিলেন সুমাইয়া (রা)। (তাবাকাত-৮/২৬৮)।

আল-ওয়াকিদীসহ একদল বংশবিদ্যা বিশারদ বলেছেন, আমার (রা)-এর পিতা ইয়াসির বনু মাখযুমের আযাদকৃত দাস। ইয়াসির তার দু’ভাই-আল হারিছ ও মালিককে সংগে নিয়ে তাদের নিখোজ চতুর্থ ভাইয়ের সন্ধানে মক্কায় আসেন। আল-হারিছ ও মালিক স্বদেশ ইয়ামনে ফিরে গেলেন, কিন্তু ইয়াসির মক্কায় থেকে যান। মক্কার রীতি অনুযায়ী তিনি আবু হুজাইফা ইবন আল-মুগীরা আল-মাখযুমীর সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে থাকেন।

আবু হুজাইফা তার দাসী সুমাইয়া (রা)-কে ইয়াসিরের সাথে বিয়ে দেন এবং তাঁদের ছেলে আমারের জন্ম হয়। আবু হুজাইফা আম্মারকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে নিজের সাথে রেখে দেন। যতদিন আবু হুজাইফা জীবিত ছিলেন আম্মার তার সাথেই ছিলেন। (সীরাত ইবন হিশাম-১/২৬১; টীকা-৪; আনসাবুল আশরাফ-১/১৫৭) উল্লেখ্য যে, এই আবু হুজাইফা ছিলেন নরাধম আবু জাহলের চাচা। (আল-আ’লাম-৩/১৪০)।

সুমাইয়া (রা) যখন বার্ধক্যে দুর্বল হয়ে পড়েছেন তখন মক্কায় ইসলামী দাওয়াতের সূচনা হয়। তিনি প্রথম ভাগেই স্বামী ইয়াসির ও ছেলে আম্মারসহ গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। মক্কায় তাদের এমন কোন আত্মীয়-বন্ধু ছিল না যারা তাদেরকে কুরাইশদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচাতে পারতো। আর তাই তারা তাঁদের উপর মাত্রা ছাড়া নির্যাতন চালাতে কোন রকম ক্রটি করেনি।

ইমাম আহমাদ ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন : সর্বপ্রথম যারা ইসলামের ঘোষণা দান করেন, তাঁরা সাত জন। রাসূলুল্লাহ, আবু বকর, আম্মার, আম্মারের মা সুমাইয়া, সুহাইব বিলাল ও আল-মিকদাদ (রা)। আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহকে তার চাচার দ্বারা এবং আবু বকরকে তার গোত্রের দ্বারা নিরাপত্তা বিধান করেন। আর অন্যদেরকে পৌত্তলিকরা লোহার বর্ম পরিয়ে প্রচণ্ড রোদে দাঁড় করিয়ে রাখতো। (আল-বিদায়-৩/২৮; কানূষ আল উম্মাল-৭১৪; আল-ইসাবা-৪/৩৩৫; হায়াতুস সাহাবা-১/১২৮৮)

জাবির (রা) বলেন, একদিন মুশরিকরা যখন আম্মার ও তার পরিবারবর্গকে শাস্তি দিচ্ছিল তখন সেই পথ দিয়ে রাসূল্লাহ কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি তাদের অবস্থা দেখে বলেন; হে ইয়াসিরের পরিবার-পরিজন! তোমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। (হায়াতুস সাহাবা-১/২৯১)।

ইবনে আব্বাস (রা)-এর বর্ণনায় একথাও এসেছে যে, সুমাইয়া (রা)-কে আবু জাহল বঙ্গম মেরে হত্যা করে। অত্যাচার, উৎপীড়নে ইয়াসিরের মৃত্যু হয় এবং আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াসিরকে তীরবিদ্ধ করা হয়, তাতেই তিনি মারা যান। উছমান (রা) বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে ‘আল-বাহা’ উপত্যকায় হাঁটছিলাম। তখন দেখতে পেলাম, আম্মার ও তার পিতা-মাতার উপর উত্তপ্ত রোদে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আমারের পিতা রাসূলকে দেখে বলে ওঠেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! কালচক্র এ রকম? রাসূল বললেন,

হে ইয়াসিরের পরিবার-পরিজন! ধৈর্য ধর। হে আল্লাহ! ইয়াসিরের পরিবারবর্গকে ক্ষমা করুন। (তাবাকাত-৩/১৭৭; কান্য আল-উম্মাল-৭/৭২)।

সারাদিন এভাবে শাস্তি ভোগ করার পর সন্ধ্যায় তারা মুক্তি পেতেন। শাস্তি ভোগ করে সুমাইয়া প্রতিদিনের মত একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেন। পাষণ্ড আবু জাহল তাঁকে অশালীন ভাষায় গালি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তার পশুত্বের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যায়। সে সুমাইয়া (রা)-এর দিকে বর্শ ছুড়ে মারে এবং সেটি তাঁর যৌনাঙ্গে গিয়ে বিদ্ধ হয় এবং তাতেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। (তাবাকাত-৮/২৬৫; আল-বিদায়া-৩/৫৯; সিফাতুস সাফওয়া-২৩২)

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মায়ের এমন অসহায় অবস্থায় মৃত্যুবরণ ছেলে আম্মারের দুঃখের অন্ত ছিল না। তিনি রাসূলুল্লাহ-এর নিকট এসে বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখন তো জুলুম-অত্যাচারের মাত্রা ছাড়া রূপ নিয়েছে। রাসূল তাকে ধৈর্য ধরার উপদেশ দিলেন। তারপর বললেন: হে আল্লাহ, তুমি ইয়াসিরের পরিবারের কাউকে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি দিওনা। (সীরাত ইবন হিশাম-১৩১৯; টীকা-৫)

সুমাইয়া (রা) শাহাদাতের ঘটনাটি হিজরতের পূর্বের। এ কারণে তিনি হলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। মুজাহিদ (রহ) বলেন : ইসলামের প্রথম শহীদ হলেন আম্মারের মা সুমাইয়া। (তাবাকাত-৮/২৬৫; আল-বিদায়া-৩/৫৯; সিফাতুস সাফওয়া-২৩২)

বদর যুদ্ধে নরাধম আবু জাহল নিহত হলে রাসূল আম্মাকে বললেন : আল্লাহ তোমাদের মায়ের ঘাতককে হত্যা করেছেন। (আল-ইসাবা-৪/৩৩৫) সুমাইয়া (রা)-এর শাহাদাতের ঘটনাটি ঘটে ৬১৫ খ্রীস্টাব্দে। (আল-আ’লাম-৩/১৪০)

সকল অধ্যায়

১. ১. উম্মুল মু’মিনীন খাদীজা (রা)
২. ২. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা)
৩. ৩. উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা)
৪. ৪. মারইয়াম (আ)
৫. ৫. আছিয়া (আ)
৬. ৬. উম্মু সুলাইম (রা)
৭. ৭. যয়নব বিনত রাসূলুল্লাহ
৮. ৮. রুকাইয়া বিনত মুহাম্মদ
৯. ৯. উম্মু কুলছুম বিনত নবী করীম (ﷺ)
১০. ১০. ফাতিমা বিনত রাসূলিল্লাহ
১১. ১১. সুমাইয়া (রা)
১২. ১২. উম্মুল মুমিনীন সাদা বিনতে যামআ (রা)
১৩. ১৩. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে খুযাইমা (রা)
১৪. ১৪. উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামা (রা)
১৫. ১৫. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে জাহাশ (রা)
১৬. ১৬. উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রা)
১৭. ১৭. উম্মুল মুমিনীন উম্মু হাবীবা (রা)
১৮. ১৮. উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যা (রা)
১৯. ১৯. উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা (রা)
২০. ২০. উম্মুল মুমিনীন রায়হানা (রা)
২১. ২১. উম্মুল মু’মিনীন মারিয়া কিবতিয়া (রা)
২২. ২২. হালীমা (রা)
২৩. নবী করীম (ﷺ)-এর বহু বিবাহের সমালোচনার প্রতিবাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন