ইমানুল হক
২০১৮-য় খ্রিস্ট্রিয় নববর্ষের প্রথম দিন বিশ্বের ২৮ কোটি বাঙালির কাছে নিয়ে আসে অশনি সংকেত। আসামে ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৩৯ লাখের নাম বাদ দেওয়া হয় তথাকথিত নাগরিকপঞ্জির নামে। প্রতিবাদ করারও উপায় রাখেনি আসামের ভাজপা ও অসম গণপরিষদ সরকার। রাস্তা, সড়ক, শহর, গ্রাম জুড়ে দেওয়া হয় সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীতে। বাদ যাওয়া নামের মধ্যে লাখ দুই আদি-চীনা, বিহারী বা অসমীয়া থাকলেই ৯৮ শতাংশ নাম ছিল বাঙালির। আজও ৩৯ লাখ বাঙালি তার মধ্যে ‘হিন্দু’ ৮ লাখ ‘মুসলিম’ ৭ লাখ উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা সঙ্গী করে বাঁচছেন। বহু মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। এর মধ্যে ২ বছরের দুধের শিশু থেকে ১০২ বছরের বৃদ্ধ ও আছেন।
প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে বংশলতিকা এমনকী ১৯৬৬-র আগের জমির দলিলও মানছে না উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারী প্রতীক হাজেলারা। মিজোরামে বাঙালিদের জন্য বসেছে চেকপোস্ট। রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়া আফরাজুল শেখকে খুন করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে খুনি শম্ভুলাল রেগার কুপিয়ে খুন করার ও আগুন জ্বালানোর ভিডিও পোস্ট করে এখন সঙ্ঘ নায়ক। তার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সে নাকি এবার নির্বাচনে প্রার্থী হবে জেল থেকে। আদালত চত্বর ভাঙচুর হয়েছে শম্ভুলালের মুক্তির দাবিতে। সব মিলিয়ে সাতজন বাঙালি শ্রমিক নিহত হয়েছেন ভারতে। গুজরাতে, দিল্লিতে, মধ্যপ্রদেশে, কেরলে, রাজস্থানে, ঝাড়খণ্ডে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে অন্য রাজ্য থেকে আগত মানুষের সংখ্যা বাড়ছেই। এমনকী এখন ভাজপা মিছিলের সিংহভাগ মুখ বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা। এরা বাসে আগুন লাগাচ্ছে। ২৭-২৯ মার্চ ২০১৮ আসানসোল, রাণীগঞ্জ, কাঁকিনাড়া, নৈহাটি, চন্দননগর, মালদহে দাঙ্গা করেছে আর আস্ফালন করেছে। রামের নামে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় অনুব্রতকে হনুমান বানিয়ে রামপুরহাট শহরের দখল পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার।
ত্রিপুরায় নির্বাচনে হল টাকা, বিদ্বেষ ও সংঘ ক্যাডারের সুনিয়ন্ত্রিত খেলা। বাঙালি ও উপজাতি অধ্যুষিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সুভাষিত বচনে হিন্দির উল্লাস। লেনিন মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ত্রিপুরায় বিলোনিয়ায় আগরতলায়। তখনও মুখ্যমন্ত্রীকে আটকে রাখা হল নির্বাচনের গণনাকেন্দ্রে। এখন তাঁর সভা সমিতি করাই দায়। ৯৬ শতাংশ পঞ্চায়েত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে ভা-জ-পা।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একদা দোসর তৃণমূল ৩৪ শতাংশ আসনে ভোট হতে দেয়নি। থানা পুলিশ চুপ। বিডিও অফিস, ডি এম অফিসের সামনেও চলেছে মার। শ্লীলতাহানি নিগ্রহ। বামপন্থীরা মিছিল করছে। কিন্তু এলাকায় বা বাড়িবাড়ি আসলে নেই। তৃণমূল বিরোধী ক্ষোভ জমা হচ্ছে বিজেপির বাক্সে।
বাংলায় দলিত-মুসলিম ঐক্যের নামে বিজেপির বকলমায় ভোট বিভাজনের রাজনীতিও হচ্ছে।
কাশ্মীরে সাত জন মানুষ পিছু একজন সৈন্য। তবু নাকি সন্ত্রাসবাদী গুলি নয় অত্যাচার, অবিচার, অসম্মান, অবমাননার বিরুদ্ধে পাথর ছুঁড়ছে কাশ্মীরের আম-জনতা। বুলেটে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবাদ। ২২৩ জনকে খুন করা হয়েছে সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে। পেলেট গানে বিদ্ধ হচ্ছে দু’বছরের শিশু, সত্তর বছরের বৃদ্ধা। এরাও নাকি সন্ত্রাসবাদী। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অসহনীয় হয়ে উঠছে। তার মাঝে বিজেপি জোট সরকার ভেঙেছে। পাকিস্তানের বন্ধু সন্ত্রাসবাদী সাজ্জাদ লোনকে সামনে রেখে সরকার গানের খেলা চালিয়েছে। সাজ্জাদ লোনের দলের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র দুই। ওমর ফারুক কংগ্রেস মেহবুবা মুফতি এক হয়ে সরকার গড়তে চাইলে রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দিয়েছেন। গণতন্ত্র বটে। ২০১৯-এ বাতিল করা হয়েছে ৩৭০ ধারা? কাশ্মীর এখন স্তব্ধ।
আসানসোলে ইমামের ছেলেকে কুচি কুচি করে কেটে দাঙ্গা বাধাতে চেয়েছিল আর এস এস। সন্তানের পিতা ইমাম রশিদি তা ব্যর্থ করে দিয়েছেন শান্তির আবেদনে। দিল্লিতেও লাভ জেহাদের নামে দাঙ্গার চেষ্টায় সামিল হননি এক জন্মসূত্রে ‘হিন্দু’ তরুণের বাবা-মা। এরাই ভারতবর্ষে আলো দেখাবেন।
উত্তরপ্রদেশ নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই মঙ্গল। শিশুদের রক্ষক ডাক্তার কাফিলকে গ্রেপ্তার করে ফেলা হল। আখলাক হত্যায় সঠিক তদন্ত করা পুলিশ অফিসার সুবোধকুমারকে সবার সামনে পিটিয়ে অজ্ঞান করে গুলি করে মারা হল। এ পর্যন্ত ১১২৩ জনকে মিথ্যা সংঘর্ষে খুন করেছে অজয় কুমার বিস্ট ওরফে যোগী সরকারের পুলিশ। সুখের কথা, ভোগী যোগীর নিজের এলাকা গোরক্ষপুরে উপনির্বাচনে বিজেপি হেরেছে। দীর্ঘ দু’দশক পরে একদা নেহরুর কেন্দ্র ফুলপুরে জিতেছে সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী।
২০১৯-এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা যাতে না থাকে তার জন্য আয়কর, সি বি আই, এনআইএ এভাবে সবাইকে লেলিয়ে দিয়েছে ক্ষ্যাপা বিজেপি।
পেট্রোল ডিজেলের দাম বিশ্ববাজারে কমছে। ভারতে বাড়ছে। ফুলে ফেঁপে উঠছে আদানি আম্বানি। নোটবন্দিতে সাধারণ মানুষ ১৫৮ জন প্রাণ হারিয়ে, রোদে জলে ভিজে সারিবদ্ধভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে টাকা জমা দিলেন ব্যাঙ্কে। এর থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালাল। মেহল চোকাসি নীরব মোদির দল। কালোটাকা ফেরেনি। কিন্তু দেশের ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার সারা। বিদেশি মুদ্রা আইন শিথিল করেছে অনাবাসী ভারতীয়দের স্বার্থে। আর দেশপ্রেমের জ্ঞান দিচ্ছে কানাডার নাগরিক অক্ষয়কুমারদা। বিরাট কোহলি অনুষ্কার বিয়ে প্রিয়াঙ্কার শাদিতে মগ্ন মিডিয়া দেখতে পায় না ঝাড়খণ্ডের আধার কার্ড না থাকা না খেয়ে মরা মেয়েটির মৃত মুখ।
পাবলিক খাবে না যে।
চাষী দাম পাচ্ছে না। রসুন ৭৫ পয়সা কেজি দরে বেচছে গুজরাতের চাষী—আমি আপনি কিনছি ১০০ টাকা কেজি দামে। ঝাড়খণ্ডে টমাটো ৫০ পয়সা শহরে ৪০ টাকা কিলো। মহারাষ্ট্রের নাসিকে পেয়াঁজ ২ টাকার নীচে বাজারে ২৫-৩০। পশ্চিমবঙ্গের চাষী আলু বেচল ১-২ টাকা কেজি দরে আজ ২০-২২ টাকা দাম।
কৃষকের জন্য মন কী বাত আছে মানি কি বাত নেই। দেশীয় সংস্কৃতি, দেশীয় ঐতিহ্য দেশীয় খাদ্য দেশীয় রুচি ভোলানোর চেষ্টা হচ্ছে। নানা নন ইস্যুকে ইস্যু বানানো হচ্ছে। খোদ কলকাতায় নববর্ষ উৎসব পণ্ড করার চেষ্টা হচ্ছে। বি এস এন এল-এর মতো ৫টি ব্যাঙ্ককে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন নিয়োগ নেই। আড়াই লাখ ছাঁটাই তথ্যপ্রযুক্তি থেকে, দু-লাখ সৈন্য ছাঁটাই, ২৭৪ জন আই এ এস অফিসারকে ছাঁটাই, আর সরকারি দোকানে বিক্রি হচ্ছে গো-মূত্র তাতে নাকি ক্যান্সার সারবে। অথচ গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এমনকী ‘বাবা’ রামদেবও ছোটেন চিকিৎসার জন্য বিদেশি হাসপাতালে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর হাঁটুতে অস্ত্রোপ্রচারে লেগেছিল মার্কিনি আয়োজন। বাজপেয়ী দীর্ঘ রোগভোগের পর চলে গেলেন। চলে যাওয়ার পর তাকে ঘিরে আবেগ জাগানোর চেষ্টা বিসর্জন দিলেন মানুষ। ‘আরেকরকম’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কিংবদন্তী লেখক মূর্ত বিবেক অশোক মিত্র চলে গেলেন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে, ১লা মে।
এদেশ দেখেছে বিদ্রোহ। কাশ্মীরের কাঠুয়ায় ছোট্ট ফুলের মতো মেয়ে আসিফা দিনের পর দিন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুরোহিত, পুলিশ, আইনজীবীদের দ্বারা। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার বাণী ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তার জন্য লড়েছেন দীপিকা ও জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ পুলিশ অফিসার। যদিও আজও বিচার পাননি আসিফার পরিবার। বিচারপতি লোয়ার পরিবার। খুন করেছে অমিত শাহের লোক। মোট তিনজন খুন হয়েছে অমিত শাহের খুনে বাহিনীর হাতে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দীপক মিশ্র পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। নজিরবিহীনভাবে ইমপিচমেন্ট করার চেষ্টা হয়েছে। বিদ্রোহ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি চেলামেশ্বররা সাহস দেখিয়েছেন মাঝে প্রশ্ন করার।
প্রশ্ন অনেক। উত্তর কম। মহারাষ্ট্রে কৃষকরা ঐতিহাসিক লং মার্চ করেছেন। লং মার্চ পৌঁছেছে দিল্লি। সিঙ্গুর থেকে কলকাতা এসেছে বাম জনতা। চাষী ন্যায় না পেলে দেশ বাঁচবে না। চাষীর ঋণ মকুব হয় না, আদানি আম্বানিদের ৩.৯৪ লাখ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে ওদের চৌকিদার ও ভাগীদার মোদি।
রাফায়েল দুর্নীতি বোফর্সের দাদা ঠাকুর। ৩৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। ৫২৫ কোটি টাকার বিমান কেনা হচ্ছে ১৬০০ কোটি দরে। অনিল আম্বানিদের পাইয়া দেওয়া হচ্ছে। সরকার প্রতিষ্ঠানগুলির হাল খারাপ করে দিয়ে। একটার পর একটা লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাঙ্ক, বীমা, প্রাতরক্ষা রেল তুলে দেওয়া দেশি-বিদেশি লুঠেরাদের কাছে।
সেসব ভোলাতে ধর্মের নামে অধর্ম। হিন্দু ধর্মের কলঙ্ক বিজেপি। তাজমহল ধ্বংস প্রচেষ্টায় নিমগ্ন। দীর্ঘকাল চলে আসা নামাজ বন্ধ করে পূজা হয়েছে তাজমহলে। মেক ইন ইন্ডিয়ার নামে শঙ্খনিনাদ। এদিকে চীন থেকে এসেছে প্যাটেল মূর্তি। ৩৬০০ কোটি ধ্বংস, ধ্বংস পরিবেশ ও এলাকার ৭০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা। রাম শ্যাম মূর্তি হবে। মূর্তিই নাকি সমাধান। ডি. এ দেওয়ার নাম নেই। মেলা খেলা উৎসব আছে সঙ্গে দোসর সিঙ্গুর শহিদ বেদি বহুমূল্য কলকাতা গেট। রিজার্ভ ব্যাঙ্কেও ঘটেছে বিরল ঘটনা ২০১৮-য়। বিরল মুখ খুলেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপ-পরিচালক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৩.২৬ লাখ কোটি দিয়ে দিতে চায় বেসরকারি সংস্থাকে। তা হতে দেননি। বশংবদতারও সীমা আছে—প্রমাণ করেছেন এমনকী গুজরাত বংশোদ্ভূত উজ্জিত প্যাটেলও। স্বাধিকার সম্পূর্ণ বিসর্জন দেননি। যদি নোটবন্দিতে না পুতলি হয়েছিলেন (এখন পদত্যাগী)। নোট বন্দি যে অর্থনীতি বন্দি তা জানিয়েছেন মোদির প্রিয় অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম। এখন তিনি প্রাক্তন। প্রাক্তন—ঘনিষ্ঠ সহযোগী পি এন ভগবতীও। যশবন্ত সিনহা, আদবানি, যোশি, শত্রুঘ্ন সিনহা, রাম জেঠমালানিরা প্রাক্তন। সবাই নন—কিন্তু সমালোচনা মুখর। বাজপেয়ির মেয়ে প্রার্থী হতে অস্বীকার করেছেন। সুষমা স্বরাজ উমা ভারতীও নারাজ। দলে দলে বিজেপি ছাড়ার হিড়িক। উপনির্বাচনে হেরে এমনিতে ২৭২-এর নীচে। এবার তিন সাংসদ ও এক মন্ত্রী দল ছাড়লেন। গুজরাতে হার্দিক প্যাটেল জিগনেশ মেবানিরা হৃদকম্প জাগিয়ে রেখেছেন। তামিলনাড়ুতেও স্ট্যালিন ইস্পাতদৃঢ়ভাবে কংগ্রেসের পাশে। চন্দ্রবাবু নাইডুও বেসুরো। নীতিশ নীতিহীনভাবে লালু সঙ্গ ছেড়ে অধিকতম দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপির হাত ধরায় মাশুল দিয়েছেন একের পর এক উপনির্বাচনে।
টাকা দিয়েও মোদি অমিত শাহের জনসভায় লোক আনা যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে একটু ভিন্ন চিত্র। তৃণমূলী শাসক ও বামফ্রন্টের সাংগঠনিক ব্যর্থতা দেশভাগজনিত চাপা বিদ্বেষে বিজেপি একটু সুবিধে পাচ্ছে। তবে দাড়িভিটেতে যেভাবে অপকাণ্ড চলেছে, চালিয়েছে তা আগামীদিনে শিক্ষণীয়।
শিক্ষা নিতে হবে ভাঙড় থেকেও। রাজনৈতিক মতাদর্শ মনে রেখে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে আস্থা রেখে লড়াই না চালালে হতাশ হতেই হয়।
ইতিহাস জানা খুব জরুরি।
খুবই।
কলেজে ভর্তি দুনীর্তির একটি অবশ্য অঙ্গ। ইদানীং হাজিরাও। টোকাটুকিতে দড় হচ্ছেন অনেকে। সি বি সি এস প্রস্তুতি ছাড়া চালু করা হয়েছে। পাশ ফেল নাকি ফিরবে? গরিবের কী হবে? মিড ডে মিলের দরকার কলেজেও সেখানেও তো বহু না খাওয়া ছাত্র। বেকার ক্রমবর্ধমান। সমাধান কই?
পাঞ্জাবে কংগ্রেস বড় জয় পেয়েছে। নানা উপনির্বাচনেও। কিন্তু কংগ্রেসের অর্থনৈতিক নীতি সাম্রাজ্যবাদী হলে তো লাভ নেই। বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক হতে হবে। নরম হিন্দুত্ব কখনও সমাজতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না। তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ হয়েছে। স্বাগত। কিন্তু শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতীদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়াকে স্বাগত জানাতে অনীহা কেন? বিজেপিকে কেন সংবিধান বিরোধী বলে আদালতে যাবে না কোনও দল? দূষণ বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাজি পুড়ল কলকাতায়। বিধাননগরে নিউটাউনে সারারাত। কলকাতা দিল্লির চেয়েও দূষিত শহর। কয়লার উনুনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। গ্যাস কোথায়? দাম যা চড়া।
চড়া পর্দায় এখন সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ লড়াই। আস্থানায় বেশি আস্থা বিজেপির। তাই সি বি আই প্রধানকে রাতারাতি ছুটিতে পাঠানো হল। নজিরবিহীন।
নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বিদেশে। ১ জানুয়ারিই ট্রাম্পের সহযোগীকে ছাঁটাই করলেন ট্রাম্প সাহেব। নিষেধাজ্ঞা আনলেন মুসলিম ও অভিবাসীদের ওপর। যুদ্ধের হুমকি। হুমকি উত্তর কোরসির কিম ইল জংয়েরও। পত্রবোমা। সাক্ষাৎকার। শেষে ভয়ে গুটিয়ে বলতে হল, কিম আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। সিরিয়ায় একটি সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের সরকার চালান আসাদ। তাই আইসিস এবং আমেরিকা—সবার রাগ। ধ্বংস করা হচ্ছে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, শস্যক্ষেত্র।
সৌদি আরবে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। প্রতিবাদীদের ধর্মদ্রোহী বলে খুন নিত্য ঘটনা। সাংবাদিক জামাল খাসোগি খুন। ঝড় দুনিয়ায়। আল জাজিরা নিষিদ্ধ।
কাবুলে আটক রয়টায়ের সাংবাদিক। মিশরে গণতন্ত্র নেই। বসন্ত অত সহজে আসে না। আসেনি তিউনিশিয়াতেও।
ইরাকে নির্বাচন হল। কিন্তু লাভ কী? ইয়েমেনেতে মার্কিন মদতে মেরে ফেলা হচ্ছে। উলঙ্গ কঙ্কালসার শিশুর দল। বিশ্ববিবেক ঘুমাচ্ছে। ইজরায়েল প্যালেস্টাইন রাখতে চায় না। আমেরিকাও। ইংল্যান্ডে বিক্ষোভ বাড়ছে। বাড়ছে সুদানেও। ব্রাজিলে ক্ষমতায় এল নয়া ট্রাম্প, বোলসেনারো। চরম দক্ষিণপন্থী। ভেনেজুয়লাকে মেরে ফেলার চেষ্টা। তেলের দাম জলের থেকেও কম। ভারত তবু কিনবে না। ডলার নয় টাকার বেচতে চায় ভেনেজুয়েলা তবুও।
মোদি ২০১৮-য় বিশ্ব রেকর্ড করলেন দেশভ্রমণে। বিজ্ঞাপনেও ৪৬০০ কোটি খরচ। বুলেট ট্রেন ফাঁকা আওয়াজ। কৃষকরা নিমরাজি জমি দিতে। শবর মরে অনাহারে। অপুষ্টি বাড়ছে। কন্যাশ্রী সবুজশ্রীতে সাফল্য আছে। কিন্তু নীচু ও মাঝেরতলায় দুর্নীতি ও ঔদ্ধত্য সীমাহীন।
সীমা ছাড়াতে নেই।
দেখাচ্ছে ফ্রান্স। জ্বলছে।
আগুন জ্বলছে মনে মনে।
এদেশেও।
রামমন্দির দেখিয়ে নাম পরিবর্তনের নাটক করে তাকে ঠেকানো যাবে না।
কৃষকদের লং মার্চ দীর্ঘজীবী হোক।
কিন্তু যতদিন না কৃষক শ্রমিকরা ক্ষমতা দখল করতে না পারছেন? ততদিন মধ্যপন্থী বাম সোস্যাল ডেমোক্রাট বা মমতাদের ওপর ভরসা করতে মানুষ কার্যত বাধ্য।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন