তরুণ ভারত

ইমানুল হক

খ্রিস্টিয়/সাধারণ নববর্ষের প্রথম দিনটি শুরু হয়েছিল চরম দক্ষিণপন্থী বলসেনোরোর ব্রাজিলে ক্ষমতাসীন হওয়ার সংবাদে। পরে শুনতে হবে আমাজনের অরণ্য পুড়িয়ে দেওয়ার সংবাদ।

শুরু থেকেই এরপর একের পর এক ঘটনা/দুর্ঘটনা দেশ বিদেশ জুড়ে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সকালের কাগজে পড়লেন ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে। দুর্জনেরা বললেন, এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৯১ হাজার কোটি টাকা জমা ছিল আই এল এফ এসে। তারা দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বহু সঞ্চয়ী মানুষের। খবর হজম হতে না হতেই বিকেলে খবর এল কাশ্মীরে সেনা কনভয়ে হামলায় ৪২ জন জওয়ান বিস্ফোরণে নিহত। কারা ঘটাল বিস্ফোরণ, কীভাবে এবং ভবিষ্যতে আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য তদন্ত কমিশন জরুরি। উঠল দাবি। ২৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সন্দেহ প্রকাশ করে বললেন, এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তদন্ত জরুরি। ওইদিন মধ্যরাতেই পাকিস্তানের বালাকোটে হয়ে গেল সার্জিক্যাল আক্রমণ। কতজন মরল সে নিয়ে বিতর্ক চলল—কিন্তু লেখা হয়ে গেল ভারতের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ। ৩০২ আসনে বিপুল ভাবে জিতল ভাজপা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। শরিকের ওপর নির্ভর নয়। রাজ্যসভায় যদিও বেশ কম। কিন্তু ইডি, সিবিআই, আয়কর, ঘুষ, পদ ইত্যাদি ব্যবহার করতে ওস্তাদ ভাজপার সভাপতি অমিত শাহ।

নজিরবিহীন সংসদীয় নির্লজ্জতায় কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে রাজ্যের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হল। শোনা হল না কাশ্মীরি জনতার স্বর। পাঁচ দিনে সব ঠিক হবে বলার পরও আজও ইন্টারনেট বন্ধ। এই লেখা ছাপা পর্যন্ত ৪২৫ দিন বন্ধ ইন্টারনেট। টিভি নেই। কাশ্মীরে কারও এখন হোয়াটসঅ্যাপ নেই। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ডিজিটাল ভারতে ইন্টারনেট টিভি সংবাদপত্রের সুবিধাহীন। ১৮ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা বন্ধ।

দেশে ঢক্কানিনাদ। জোর শিবারব। ডিজিটাল ভারত। অথচ এদেশে ১৫৭ বার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে সরকারি আদেশে। এগুলো লিখিত। অলিখিত কত কেউ জানে না। এর মাঝে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজেপি শিবসেনা জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে টানাটানিতে শিবসেনা বেরিয়ে গেছে ভাজপার কবল থেকে। এক বিপরীতমুখী জোট হয়েছে। শিবসেনা এন সি পি কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। জোটের মূল কারিগর বৃদ্ধ শারদ পাওয়ার। রিপাবলিকান টিভির অর্ণব গোস্বামীকে জেলে পাঠিয়েছে।

এখনও পর্যন্ত এই সরকারের কাজ ইতিবাচক। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেলানো ঠিক হয়নি, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। দু’লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মওকুফ করেছে সরকার। মানতে রাজি হয়নি সংবিধান বিরোধী সর্বনাশা ক্যা আইন। যদিও ক্যাব বিলের পক্ষে লোকসভায় ভোট দিয়েছে তারা। রাজ্যসভায় অনুপস্থিত।

ক্যা-তে বলা হয়েছে পাকিস্তান আফগানিস্তান বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান জৈন পারসিকরা নাগরিকত্ব পাবেন। ২০১৪-এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এলে। মুসলিমরা সেখানে বাদ। বাদ প্রকৃতি পূজারী আদিবাসী সম্প্রদায়। আসামে ১৪ লাখ হিন্দুর নাম বাদ এন আর সি-তে তারাও ক্যা-র সুবিধা পাবেন না। মণিপুর, অরুণাচল, মেঘালয়, মিজোরামে কার্যকর হবে না ক্যা। সেখানকার উদ্বাস্তুরা বঞ্চিত হবেন তো! দেশ এরপর প্রত্যক্ষ করেছে এক নজিরবিহীন আন্দোলন ও আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাজধানী দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র, দরিয়াগঞ্জের অধিবাসীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায় পুলিশ ও পুলিশের পোশাক পরা আর এস এস ক্যাডাররা।

ফলে কাশ্মীরে কী ঘটছে সহজেই অনুমেয়।

এরপর দেশ জুড়ে গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ। ভারতের প্রতিটি বড় শহরে পঞ্চাশ হাজার থেকে তিন লাখ মানুষের মিছিল হয়েছে। যাতে সিংহভাগ তরুণ তরুণী। আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ—সর্বত্র বিক্ষোভ। অশান্তি। পুলিশের গুলিতে নিহত আসামে ছয় জন।

আর উত্তরপ্রদেশ যেখানে অশান্তি প্রায় হয়নি, সেখানে গুলিতে নিহত ২৩ জন। পুলিশ ও আর এস এসের ক্যাডাররা বাইক ভাঙচুর করছে স্কুটারে আগুন লাগাচ্ছে, বাড়ি লুঠ করছে, ৭২ বছরের বৃদ্ধকে পেটাচ্ছে।

মুখে বলছে—মুসলিমকে লিয়ে দো স্থান—পাকিস্তান কবরিস্থান।

১৬৫০০ জন গ্রেফতার।

এদের মধ্যে আছেন একতা আর শেখর নামের এক দম্পতি। যাদের ১৪ মাসের শিশু সন্তান আছে। এই অত্যাচার নিয়ে একটি অনুসন্ধানী দল যায় উত্তরপ্রদেশে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর ‘পুলিশি বর্বরতার’ প্রসঙ্গ তুলে মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মান্দার জানান, মনে হচ্ছে গোটা রাজ্য (উত্তরপ্রদেশ) এক শ্রেণির নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র নেতা যোগেন্দ্র যাদব বললেন, উত্তরপ্রদেশে আতঙ্করাজ চলছে। তথ্য অনুসন্ধান আয়োগের সদস্য কবিতা কৃষ্ণণও হর্ষ মান্দারের সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেন, সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ মাটিতে মিশিয়ে দিতে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে যোগীর রাজ্যের পুলিশ। কার্যত পুলিশ রাজ চলছে—বলছে ‘হাফ পোস্ট’।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব বলেছেন, আন্দোলনকারীদের এ রকম অত্যাচার ব্রিটিশ পুলিশও করেনি।

স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। একজন ব্রিটিশ অফিসারকে মারে ছাত্ররা। ওই অফিসার তবু পুলিশ ডাকেননি। বলেন, এতে শান্তি ফিরবে না। অথচ স্বাধীন ভারতের যোগী পুলিশ বিনা প্ররোচনায় আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে অত্যাচার ভাঙচুর করেছে। সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, মিরাটে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে পুলিশ গুলি চালিয়ে পাঁচজনকে মেরেছে। স্বয়ং পুলিশ সুপার বলছেন, কবরস্থান অথবা পাকিস্তান মুসলিমদের জায়গা। তার ভিডিও ফুটেজ আন্তর্জালে এখনও লভ্য। পুলিশ মৃতদের নিয়মমাফিক শেষকৃত্য পর্যন্ত করতে দেয়নি।

 আলিগড় জামিয়া—দুই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভূতবিদ্যার পাঠক্রম। সেখানে সংস্কৃত শিক্ষকের নাম মুসলিম হওয়ায় তাঁকে চাকরিতে যোগ দিতে দেয়নি মোদি শাহ যোগীর দলের ছাত্র সংগঠন এ বি ভি পি। এখানে প্রতিবাদ হয়েছে। বেনারস হিন্দু বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৫০ জন অধ্যাপক বিবৃতি দিয়েছেন পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। অজয়কুমার বিস্ট ওরফে যোগী আদিত্যনাথের স্বৈরাচারী শাসনে বিরক্ত হয়ে খোদ বিধানসভা ভবনে ১৫০-এর বেশি বিজেপি বিধায়ক ধর্না দিতে শুরু করেন। তা ঢাকতেই পুলিশি অত্যাচার রাজ্যজুড়ে। বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু সেকথা প্রচার করবে কে? দি টেলিগ্রাফ, হিন্দু, আনন্দবাজার এবং কিছুটা ‘জনসত্তা’ ছাড়া সবাই বিকিয়ে গেছে মোদি শাহের কাছে।

এন ডি টি ভি স্বাধীনভাবে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও খবর করে যাচ্ছে।

প্রিন্ট, ক্যারাভ্যান স্ক্রোল এখনও স্বাধীন।

দেশে অঘোষিত সুপার এমার্জেন্সি চলছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় সেন্সারশিপ চাপিয়েছেন নিজের ও নিজেদের ওপর। কিন্তু জনতার কণ্ঠস্বর চির অপরাজেয়। এর মাঝে ভারত থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে জার্মান নাগরিক লিন্ডেনথালকে। প্রশ্ন উঠেছে খালি/অক্ষয়কুমার বিদেশি নাগরিক হয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচার করতে পারেন, অক্ষয় কুমার আয়কর দপ্তরের হয়ে বিজ্ঞাপন করতে পারেন, জার্মান নাগরিক মিছিলে গেলে দোষ?

মোদি বিদেশি হয়ে আমেরিকার ট্রাম্পকে ভোট দিন বলতে পারেন কী করে? (যদিও ট্রাম্প হেরেছেন নির্বাচনে। জিতেছেন জো বাইডেন)।

এদিকে ক্যা, এন আর সি বিরোধী আন্দোলনের জেরে মোদি অমিত শাহকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করতে হয়েছে। বলতে হয়েছে, এন আর সি নিয়ে নাকি কোন আলোচনাই হয়নি। মোদি নিজে পশ্চিমবঙ্গের রাণাঘাটে ১৯ এপ্রিল ২০১৯ বলেন, এন আর সি হবেই। অমিত শাহ তো সব সভায়। দেশের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁর লিখিত ভাষণে ২০ জুন বলেন, অনুপ্রবেশকারী অধ্যুষিত এলাকায় এন আর সি হবে।

আর জনতাকে বিস্মিত করে ২২ ডিসেম্বর মোদি বললেন, বিরোধীরা মিথ্যা প্রচার করছে। এন আর সির কথা ওঠেইনি।

যে অমিত শাহ বাঙালিকে উইপোকা, ঘুসপেটিয়া ইত্যাদি বলেছিলেন, তিনি এখন হেঁ হেঁ-তে ব্যস্ত। যে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, লাশের ওপর দিয়ে এন আর সি হবে—তিনি বলছেন, এসব বলিনি।

আসলে মিথ্যা বলা ফ্যাসিবাদীদের চির ঐতিহ্য।

বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল—

প্রতি হাতে কাজ।

২৫ শতাংশ দাম কমানো।

১৫ লাখ করে টাকা দেওয়া।

প্রতি খেতে জল।

পেঁয়াজ মহারাষ্ট্রের চাষি বেচেছিলেন ৫ পয়সা প্রতি কেজি দরে।

আপনি কিনতে গেলে (ডিসেম্বর ২০১৯-এ) দেখেছেন ১৫০ টাকা কেজি। বেঙ্গালুরুতে ২০০ টাকা কেজি।

গত পাঁচ বছরে ২ কোটি লোকের চাকরি গেছে। নতুন চাকরি দূরস্থান। করোনোর পর ১৪ কোটি কর্মহীন।

বি এসএন এল এর ৭০ হাজার কর্মী বাদ।

রেলে চাকরি নাই। তিন লাখ বাদ। ১৩ লাখকেই স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার পরিকল্পনা।

জেট এয়ারওয়েজ উঠে গেল।

২৪০০০ কর্মীর কাজ নাই।

গর্বের নবরত্ন বেচে ফেলা হচ্ছে।

শিক্ষা সেসের টাকা ২ লাখ কোটি আপনি দিয়েছেন।

অথচ শিক্ষা ক্ষেত্রে ৩০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে।

১০ থেকে ৫০ গুণ করে বেতন বাড়ছে ছাত্র ছাত্রীদের।

ম্যানেজমেন্ট পড়াতে পারবেন না কোন সৎ উপার্জনকারী।

আই আই টি-র খরচ বহুগুণ বেড়েছে।

নোট বন্দির ৫০ দিনে সব লাইন উঠে যাওয়া বলার পর সব জায়গায় লাইন।

আধার, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, এন পি আর, এন আর সি। (আবার শুনছি এক দেশ এক কার্ড আসবে)।

ডিসেম্বর ২০১৯-এ তো পেঁয়াজের দোকানেও লাইন—যা বাপের জন্মেও ভাবেননি।

কাশ্মীরে সব সমস্যা সমাধান সাত দিনে বলেছিল।

৩০০ দিন পার।

ইন্টারনেট বন্ধ।

সব নেতারা জেলে।

আসাম ৩৫ বছর পর আবার জ্বলছে।

ত্রিপুরা মণিপুর মিজোরাম নাগাল্যান্ড সর্বত্র বাঙালি বিদ্বেষ বাড়ছে।

ত্রিপুরা আসামে সেনা মোতায়েন বাড়ছে।

ইন্টারনেট বন্ধ আসাম ত্রিপুরা মণিপুর অরুণাচল প্রদেশে।

অবস্থা এমন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অরুণাচল প্রদেশ মণিপুর মেঘালয় যেতে ভয় পাচ্ছেন। নিজের রাজ্য গুজরাট পর্যন্ত যেতে পারেননি।

বলেছিল, দেশ ঝুঁকবে না। চীন গালওয়ান উপত্যকায়। নেপাল গুলি ছুঁড়ে বিহারী মারছে। ভূটান জল বন্ধ করে দিয়েছে।

এখন ভারত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ‘রেপ ক্যাপিটাল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’।

এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশ।

পাকিস্তানের চেয়েও আর্থিক প্রগতি কম। জিডিপিতে বাংলাদেশ—৫.২৫, পাকিস্থান ৩.২৫, ভারত ২৩.৯।

একইসঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি—অভাবনীয়।

পেঁয়াজ ৮০—২০০ টাকা।

নতুন আলু ৪০—৪৫ টাকা।

পোস্ত ১৬০০ টাকা।

মজুতদারদের সরকার চালাচ্ছে ফ্যাসিবাদীরা।

১১ ডিসেম্বর ২০২০, নাগরিকদের গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না এমন এক বিল পেশ হয়েছে সংসদে।

চাকরির নিরাপত্তা বলে কিছু থাকবে না—এমন বিল আসছে।

নতুন অস্ত্র আইনে বাজারে অস্ত্র বাড়বে।

বাড়বে খুন জখম হিংসা।

ত্রিপুরায় ৮২১ বিদ্যালয় বেসরকারি হাতে যাচ্ছে।

উত্তরপ্রদেশে শিক্ষকদের বেতন হচ্ছে না। উত্তর দিল্লিতে মার্চ ২০২০ থেকে জুন বেতন বন্ধ। ৯০০০ শিক্ষকের।

পাঁচ লাখ দু’হাজার কোটি টাকা দামের ভারত পেট্রোলিয়াম বেচার চেষ্টা হচ্ছে ৭৪ হাজার কোটি টাকায়।

কমিশন নেবে ডলারে।

সুইস ব্যাংক থেকে কালো টাকা আসেনি।

সুইস ব্যাংকে উল্টে অ্যাকাউন্ট বাড়ছে।

হিন্দু মুসলমান কাশ্মীর পাকিস্তান ছাড়া কোনও কথা নাই।

অরুণাচল প্রদেশের ৫০ কিমি ভিতরে ঢুকে পড়েছে চীন।

বলেছেন বিজেপির সাংসদ।

টুঁ শব্দটি নাই।

ক্যা আরো সর্বনাশ ডাকবে। যাঁরা নাগরিক—তাঁরা যদি আবার শরণার্থী বলে আবেদন করেন জালিয়াত প্রমাণিত হবেন। তাঁর সম্পত্তি চাকরি পেনশন ভিটে মাটি সব কাড়বে সরকার।

মেলাবেন।

৩৩ কোটি ৬৬ লাখ জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। বলা হয়েছিল, এক পয়সা না থাকলেও চলবে। কিন্তু সেই কথা রাখা হয় নি। মিনিমাম ব্যালেন্স রাখতে না পারায় জরিমানা করা হয়েছে। এতে ১২০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে সরকারের। (আর সরকার তা জনকল্যাণে নয়, খরচ করছে মোদির মুখ দেখাতে ও বিদেশ ভ্রমণে, বিলাস ব্যসনে। সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য তাঁর ১৫ মিনিট পরার চশমার দাম এক লাখ ৬২ হাজার টাকা)।

আর সরকার রাজ্যসভায় ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসে জানিয়েছে, ২০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট কাজ করছে না। বন্ধ। আর বন্ধ করতে গেলে ৭৫০ টাকা করে গুণাগার দিতে হয়েছে গরিব জনধন অ্যাকাউন্ট থাকা গ্রাহককে।

তা ৭৭৩২০০০০ (সাত কোটি তিয়াত্তর লাখ বিশ হাজার) মানুষের থেকে ৭৫০ টাকা করে মারলে কত টাকা মারা হয়?

মিজোরাম নাগাল্যান্ড অরুণাচল প্রদেশের পর মেঘালয় মণিপুরে ইনার লাইন পারমিট শুরু হচ্ছে।

দেশের মধ্যে আপনি বিদেশি।

এই ‘বি-দেশে’ কাশ্মীরে বিদেশি দক্ষিণপন্থী সাংসদরা যেতে পারবেন, ভারতীয় রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজারা যেতে পারবেন না।

তবে লোকে মোদি অমিত শাহকে বিদেশে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। দেশজোড়া আন্দোলন ও ধর্মঘট তার প্রমাণ। উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য ছাড়াও বিহার গুজরাটে ক্যা আইন বিরোধী সফল ধর্মঘট। ১১টি রাজ্য বলেছে এন আর সি করব না। পশ্চিমবঙ্গ কেরল বলেছে এন পি আর স্থগিত।

আর ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক ঝাড়। বিপুল ভাবে হেরেছে। টাকায় সব হয় না—প্রমাণ করে দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মানুষ। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা পরিকল্পনা করে কমানো হয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষ এখন ২৬ শতাংশ।

ঝাড়খণ্ডে ঝাড়ের কারণ?

* বিনাশ হয়েছে বিকাশ নয়।

* আদানির স্বার্থে জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে আদিবাসীদের গবেষণা। আপত্তি করলেই মিথ্যা মামলা। গ্রেফতার। ৩০০০০ আদিবাসীর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের মামলা চলছে। গুজরাটের পর যা সর্বোচ্চ।

* প্রতিবাদী ২০ জন বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের মামলা।

* প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকট। নতুন চাকরি নেই। কাজ নেই। এমনকী টাটার কারখানায় ছাঁটাই হয়েছে।

* জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দফায় দফায়।

* ছোটনাগপুর, সাঁওতাল পরগনায় আদিবাসীদের জমি না কেনার যে আইন আছে ৩৭০ ধারার মতো, তা তুলে দেওয়ার কথা বলেন এক ভাজপা সাংসদ।

* মানুষের স্বাধিকার ছিল না। সব কিছু চাপিয়ে দেওয়া।

* বিজেপির নেতাদের চরম ঔদ্ধত্য।

* ক্যা ও এন আর সি-র ভীতি। আদিবাসিন্দাদের বেশিরভাগের জমির দলিল নাই। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেলা ঠিক-ই বলেছেন, নাগরিকপঞ্জি হলে অর্ধেক বাসিন্দা কাগজ দেখাতে পারবেন না।

* চরম দুর্নীতি। মানুষকে মানুষ মনে না করা।

* তোলাবাজি।

* বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা।

* বিজেপি যে ভোট পেয়েছে তা অবশ্য তা সামান্য হলেও শতাংশে বেড়েছে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি-র মিম যদি প্রার্থী না দিত এবং প্রায় এক শতাংশ ভোট না ভাগ করে দিত তাহলে বিজেপির আসন ২৫ থেকে কমে ১৫ হয়ে যেত। তৃণমূল এখানে ২৬টি আসনে প্রার্থী দেয়। পায় .৩৬ শতাংশ ভোট।

২০১৪-তে বিজেপিশাসিত রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ৩৯.৮ শতাংশ। পরে ২০১৭-তে তা ৬৭.৮ শতাংশ। বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৫৭ শতাংশ। এলাকা হিসেবে ভারতের ৭৩.৯ শতাংশ ছিল বিজেপি শাসিত। বর্তমানে তা অনেক কমে হয়েছে ৩৮.৫ শতাংশ। তবে একটা বিষয় না দেখলে বিপদ বাড়বে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির। গ্রামাঞ্চলে বিজেপির ভোট বেড়েছে ২.২ শতাংশ (মোট ৩১.৯ শতাংশ)। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা কংগ্রেস জোটেরও বেড়েছে .০১ শতাংশ (মোট ৩২.৫ শতাংশ)। আধা গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির কিন্তু কমেছে ০.৭ শতাংশ (মোট ৩৪.৯ শতাংশ)। বেড়েছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা কংগ্রেস জোটের। ১.১ শতাংশ (মোট ৩৮.৪ শতাংশ)। আর আধা শহর এলাকায় বিজেপির কমেছে বিপুল—৮.৪ শতাংশ (মোট ৩০.৮ শতাংশ)। জোটের বাড়েনি বা কমেনি (মোট ৪০.৬ শতাংশ)। শহরে উলটো ঘটনা। বিজেপির ভোট কমেছে ৪ শতাংশ (মোট ৪০.৪ শতাংশ)। কংগ্রেস জোটের বৃদ্ধিও ৪ শতাংশ (মোট ৩৫.৫ শতাংশ)।

যেখানে আদিবাসী বাসিন্দা কম, ৩০ শতাংশ-এর নীচে সেখানে বিজেপির ধস নেমেছে। কমেছে ২.৩ শতাংশ ভোট। ৩০-৫০ শতাংশ আদিবাসী যেখানে থাকেন সেখানে বেড়েছে ১.৫ শতাংশ। আর ৬০ শতাংশ-এর বেশি আদিবাসী থাকা এলাকায় বিজেপির ভোট বৃদ্ধি ০.৪ শতাংশ। কংগ্রেস জোটের ক্ষেত্রে এটা যথাক্রমে ০.১ শতাংশ, ১.৬ শতাংশ, -০.২ শতাংশ।

বিজেপি-র ভোট ৩৯ আসনে কমেছে ২০১৪-র তুলনায়। বেড়েছে ৪০ আসনে।

সমীক্ষা জরুরি কেন এটা ঘটল। আদিবাসী—অ-আদিবাসী মেরুকরণ না আর এস এসের বনবাসী পরিষদের নিবিড় সংগঠন, বাড়ি বাড়ি বিস্তারকদের যাওয়া, টাকা বিলি, বিদ্বেষ প্রচার—নাকি অন্য কিছু? পশ্চিমবঙ্গে বাইরে থেকে ৩০ হাজার বিস্তারক আসছে। তারা বাড়ি বাড়ি যাবে। এ নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ভাবতে হবে। শুধু মিটিং মিছিল পদযাত্রা দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। হুইস্পারিং ক্যাম্পেন ও ঘর ঘর বারবার যাওয়া খুব জরুরি। বিজেপি কী কী ধংস করেছে জানাতে হবে—পরিকল্পনা কমিশন, রিজার্ভ ব্যাংক, নির্বাচন কমিশন, সিবি আই, আই বি, ই ডি, নিরপেক্ষ মিডিয়া, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, আর্থ ব্যবস্থা, আমলাদের মনোবল, এবং সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক সম্পর্কহীনতা। ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান এনার্সি-ক্যা-বিরোধী গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ২৬ ডিসেম্বর। আর ৩০ ডিসেম্বর তিনি হয়ে গেলেন দেশের কমান্ডার ইন চিফ। চাকরির মেয়াদ বেড়ে গেল পাঁচ বছর। কথায় কথায় পাকিস্তানকে বিরোধী সাজানো ফ্যাসিবাদীরা পাকিস্তানের মতোই ‘ফৌজি কালচার’ চালাতে চায়। এদের চিন্তাতেই ‘হিন্দু পাকিস্তান’। গণতন্ত্রহীন সাম্প্রদায়িক শাসন। আফগানিস্তানের তালিবানদের মতো ধ্বংস করতে চায় ভাস্কর্য। বাবরি মসজিদের পর লক্ষ তাজমহল, কুতুব মিনার ইত্যাদি। আদানি আম্বানির স্বার্থে পরিচালিত এই সরকার চায়, হিন্দু রাষ্ট্র নয়, চোরপোরেট ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র বানাতে।

তবে সুখের কথা এই, দেশ জাগছে। আমরা ব্যঙ্গ করে বলতাম নিউ ইন্ডিয়া, নতুন ভারত এখন এটা ইতিবাচক অর্থ নিয়ে হাজির।

ওদের নতুন ভারতে ওরা হিন্দু মুসলিম ভাগ করতে চেয়েছিল। তা উলটে জুড়ে দিয়েছে। পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন ৪.৬৯ কোটি মুসলিম। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভরসা রেখে অথবা ভিটের টানে থেকে গিয়েছিলেন বেশি সংখ্যক মানুষ—৪.৮৯ কোটি। পূর্বপুরুষদের মান রেখেছেন নতুন প্রজন্ম। লাখে লাখে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। শুধু জে এন ইউ যাদবপুর নয়, ভারতের টাটা সমাজ গবেষণা কেন্দ্র (টিস) সহ সব আই আই টি নেমেছে রাস্তায়। সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। মধ্যপ্রদেশের ভূপাল শুনিয়েছে বিজেপির সন্ত্রাসী নেত্রীকে শ্লোগান—সন্ত্রাসবাদী দূর হটো—।

কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রজত সিংহ ক্যা, এন পি আর এবং এন আর সি-র প্রতিবাদে ডিগ্রি নিলেন না, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে ক্যা আইন ছিঁড়ে ছাত্রী তুললেন হজরত মোহানির দেওয়া শ্লোগান—ইনাকিলাব জিন্দাবাদ, এটাই আসল ধর্মনিরপেক্ষ ভারত।

এই ভারত তরুণ ভারত।

এরাই বর্তমান ভারতের আশাদীপ।

করোনা পরবর্তীকালে ১৪ কোটি কর্মহীন মানুষ নিয়ে টিকে থাকা ভারতকে এরা কোন পথে নিয়ে যান—সেটাই দেখার। কোন পথ বেছে নেন? কে হবেন মুখ এদের? মার্কস মোদি না মমতা?

অধ্যায় ২০ / ২০

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন