ব্ল্যাক লিস্ট – ৯

কাজী আনোয়ার হোসেন

নয়

ধোঁয়ায় ভরা ধূসর এক গ্রহ থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে রানা। খুব কঠিন সেখানে দম নেয়া। যে-কোন সময়ে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়বে। তারপর ভয়ঙ্কর পতন হলো ওর। ধড়মড় করে উঠে বসতে চাইল। আর তাতেই টের পেল, এইমাত্র চেতনা ফিরে এসেছে ওর। টনটন করছে মাথার তালু। বেকায়দাভাবে শুয়ে আছে সংকীর্ণ কোন জায়গায়। ব্যথা করছে হাত-পায়ের হাড়-মাংস।

বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাস নেয়া খুব কষ্টকর। চোখ মেলে কিছুই দেখতে পেল না রানা। ভীষণ জ্বলছে চোখের পাতা। উঠে বসতে গিয়ে বুঝল, ও আছে এক ফোক্সভাগেন বিটলের সামনের সিটে। ঘড়ঘড় শব্দে চলছে ইঞ্জিন। যদিও কোথাও যাচ্ছে না গাড়িটা।

কেশে উঠে গলা পরিষ্কার করতে চাইল রানা। যদিও তাতে কোন লাভ হলো না। গাড়ির ভেতরে ভকভক করে ঢুকছে সাইলেন্সার পাইপের কটু ধোঁয়া। বামের প্রায়-বন্ধ জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে ঢুকেছে হোস পাইপ। ওটা দিয়ে এসে গাড়ি ভরে গেছে নীলচে ধোঁয়ায়।

ফোক্সভাগেন বিটল ভাল করেই চেনে রানা। ওগুলো প্রায় রাতাস-পানি নিরোধক। তার ওপরে ভেতরে জমেছে কার্বন- মনোক্সাইড। সেজন্যে দম আটকে মরতে বসেছে ও।

জবাইয়ের আগে গবাদি পশুকে যেভাবে মাটিতে ফেলে বাঁধা হয়, সেভাবেই বেঁধে রাখা হয়েছে ওকে। ইঞ্জিন বন্ধ করতে দু’গোড়ালি দিয়ে ইগনিশনের চাবি ধরতে চাইল রানা। তবে ছোট্ট জায়গায় সেটা করা গেল না।

হাপরের মত শ্বাস নিচ্ছে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রানা। বুঝে গেছে, তাজা বাতাস না পেলে একটু পর খুন হতে হবে। বাইরে কোথাও অপেক্ষা করছে কিউলেক্স। হয়তো দশ মিনিট পর এসে ঢুকবে গ্যারাজে। বন্ধ করে দেবে ইঞ্জিন। তারপর ওর লাশ গাড়ি থেকে বের করে ফেলে দেবে কোথাও।

আরও অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল ওর!

ডানহাতে গোড়ালি স্পর্শ করতে পারছে রানা। আরেকটু ওপরে হাত তোলা গেলে গোড়ালিতে টেপ দিয়ে আটকে রাখা স্টিলেটো ধরতে পারবে। শরীর মুচড়ে সিট ছেড়ে গিয়ার শিফটের ওপরে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল রানা। তাতে আরেকটু হলে বেঁকে যেত লোহার দণ্ড।

হ্যাঁ, এবার ধরতে পেরেছে স্টিলেটোর বাঁট। কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সচেতনতা। কয়েক সেকেণ্ড পর আবারও ফিরল ওর জ্ঞান। ভীষণ কাশছে রানা। ব্যথায় মুচড়ে উঠছে বুকের ভেতরটা। বুঝে গেল, যে-কোন · সময়ে খাঁচা ছেড়ে উড়াল দেবে প্রাণপাখি। গোড়ালি হাতড়াতে গিয়ে আবারও ধরল স্টিলেটোর হাতল। ছোরাটা বের করে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল গোড়ালির বাঁধন কাটতে। গাড়ির ভেতরে ফুরিয়ে গেছে শেষটুকু অক্সিজেন। আর দম নিতে পারছে না রানা। চারপাশ থেকে যেন ওকে ঘিরে ধরছে কালো এক বড় চাদর। খুব ধীর হয়ে গেছে ওর মগজ। নড়তে চাইছে না স্টিলেটো ধরা আঙুল। দম আটকে রেখে ছোরা দিয়ে দড়ির ওপরে পৌঁচ দিচ্ছে। গাড়ির ভেতরে ঢুকছে আরও কার্বন-মনোক্সাইড।

দড়ির ওপরে চেপে বসেছে স্টিলেটোর ফলা। কিন্তু কিছু কাটছে কি না বোঝার সাধ্য আর রানার নেই। একবার মনে হলো হাত থেকে পড়ে গেছে ছোরাটা। তারপর হঠাৎ করেই ছিঁড়ে গেল ওর দু’গোড়ালির বাঁধন। ঝটকা দিয়ে সামনে দু’পা পাঠাল রানা। ডানপায়ের পাতা চেপে বসল অ্যাক্সেলারেটর প্যাডেলের ওপরে। অবশ্য গিয়ার দেয়া হয়নি গাড়িটাতে। বাড়ল ইঞ্জিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ।

শরীর মুচড়ে গিয়ার শিফটের লাট্টু ধরল রানা। ওটা বামে ঠেলে চাপ দিল নিচে। পরক্ষণে ক্লাচ চেপে পেছনে নিল লাট্টু। ক্লাচ ছাড়তেই পেছনে রওনা হয়ে গেল ফোক্সভাগেন। মাত্র তিন সেকেণ্ডে চড়াও হলো গ্যারাজের বন্ধ দরজার ওপরে। তাতে ফাটল ধরলেও ভাঙল না কাঠের ভারী দরজার কবাট।

এবার সামনের গিয়ার ফেলল রানা। গুড়গুড় আওয়াজে গ্যারাজের পেছন-দেয়ালের দিকে চলল গাড়িটা। বাতাসের অভাবে চারপাশে আঁধার দেখছে রানা। বুক ও পাঁজর আঁকড়ে আসছে ভীষণ ব্যথায়। একবার বিষাক্ত বাতাস টেনে নিলে…

ব্রেক করে আবারও পেছনের গিয়ার ফেলল রানা। দড়াম করে গ্যারাজের দরজার ওপরে আছড়ে পড়ল ফোক্সভাগেনের পেছনদিক। জোর এক ঠাস্ আওয়াজে দু’দিকে খুলে গেল গ্যারাজের দরজার ভারী দুই পাল্লা। বাইরে রাতের অন্ধকার। চওড়া ড্রাইভওয়েতে বেরিয়ে এসেছে ফোক্সভাগেন। আবারও ব্রেক করে গাড়ি থামাল রানা। জানালার সরু ফাঁক দিয়ে ঢুকছে সামান্য তাজা হাওয়া। ওর ডানে হঠাৎ করেই দেখতে পেল কমলা এক ফুলকি। পরক্ষণে এল গুলির জোরাল ‘কড়াৎ!’ আওয়াজ।

পাশের সিটে থাকা স্টিলেটো নিয়ে কবজির বাঁধন কাটতে লাগল রানা। সেকেণ্ড তিনেকের ভেতরে পট করে ছিঁড়ল দড়ি। দেরি না করে হ্যাণ্ডেলে টান দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে নিল ও। ফুসফুসের জমা শ্বাস ভুস্ করে ছেড়ে বুক ভরে টেনে নিল তাজা বাতাস। মাত্র পাঁচ সেকেণ্ডে নিজেকে সামলে নিল রানা। হেডলাইট জ্বেলে’ গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা চলল বাগান লক্ষ্য করে। ওখানেই দেখেছে আগুনের কমলা স্ফুলিঙ্গ।

বাগানে চিৎকার করল কে যেন!

আবার গর্জে উঠল পিস্তল!

ড্রাইভওয়ে পার করে ঝোপঝাড় মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে ফোক্সভাগেন। সামনের এক ঝোপ থেকে বেরিয়ে ঝেড়ে দৌড় দিল এক লোক। তার দিকে গাড়ির নাক তাক করল রানা। দৌড়াতে দৌড়াতে একবার ঘুরে তাকাল লোকটা।

হেডলাইটের আলোয় তার আতঙ্কিত চেহারা দেখতে পেল রানা। দৈর্ঘ্যে সে বড়জোর সাড়ে পাঁচ ফুট। মাথার চুল কালো। চেহারা চাঁদের মত গোল। ঝোপের মত ঘন দুই ভুরু। জুলফি লম্বা। চোয়ালে দু’দিন না কাটা নীলচে দাড়ি। লোকটা যে কিউলেক্স তাতে মনে কোন সন্দেহ থাকল না রানার।

গাড়ির দিকে গুলি পাঠালেও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মিস করল লোকটা। অ্যাক্সেলারেটরে চাপ আরও বাড়াতেই রানাকে নিয়ে লাফ দিয়ে এগোল ফোক্সভাগেন।

প্রাণভয়ে এঁকেবেঁকে ছুটছে কিউলেক্স। বাগানটা এত বড় নয় যে চট্ করে লুকিয়ে পড়বে কোথাও। অ্যাক্সেলারেটর দাবিয়ে গাড়ির গতি আরও বাড়াল রানা। বিশ গজ দূরে বাগানের ইঁট দিয়ে গাঁথা দেয়ালের কাছে পৌঁছে গেছে কিউলেক্স। দেয়ালে উঠে লাফ দিয়ে নেমে গেল ওদিকে। দেয়ালের কাছে পৌঁছে ব্রেক করতেই পিছলে গেল গাড়ির চার চাকা। একরাশ ঘাস উপড়ে দেয়ালের একদিকে ঘষা দিল ফোক্সভাগেন। দপ করে নিভে গেল দুই হেডলাইট। দেরি না করে গাড়ি থেকে নেমে এল রানা। উঁকি দিল ইঁটের দেয়ালের ওদিকে। ওপাশে আরেক বাড়ির ঝোপ ও আগাছায় ভরা পরিত্যক্ত বাগান। আশপাশে কেউ নেই। এখন আর সুযোগ নেই যে ধরবে রানা পুরুষ মশা কিউলেক্সকে।

আবার বাড়িতে গিয়ে ঢুকল রানা। চলে এল বেডরুমে। একবার দেখল নিজে কোথায় ছিল, তারপর ওখানে গিয়ে মেঝে থেকে তুলে নিল ওয়ালথার। ভাবছে, এ-বাড়িতে কোথায় ফাঁদ পাতলে ধরতে পারবে কিউলেক্সকে। ওর মনে হচ্ছে, আগে হোক আর পরে, এখানে আবারও ফিরবে লোকটা।

লিভিংরুমে এসে হঠাৎ রানা আবিষ্কার করল, ও একা নয়!

এইমাত্র করিডর পেরিয়ে ভেতরে ঢুকেছে এক লোক। ওর দিকে চেয়ে আন্তরিক হাসছে সে!

পরস্পরের দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছে ওরা দু’জন।

আগন্তুকের হাতের অস্ত্রটা প্রচণ্ড শক্তিশালী পিস্তল ওয়েবলি মার্ক সিক্স। লোকটার বয়স হবে আন্দাজ পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ। পরনে বেল্ট দেয়া রেইনকোট। আস্তে করে পিস্তল নামাল সে। কড়া ব্রিটিশ সুরে বলল, ‘হাউ ডু ইউ ডু?’

‘আই অ্যাম ফাইন। হু দ্য হেল আর ইউ?’ ওয়ালথার নামাল রানা।

‘মনে হয় না কিউলেক্স আর ফিরবে। এসো, সোফায় বসে এ-বিষয়ে আলাপ সেরে নিই,’ সোফা দেখাল লোকটা। দৈর্ঘ্যে রানার চেয়ে এক ইঞ্চি উঁচু সে। লম্বাটে মুখ। চোখের মণি কালো। কপালে এসে পড়া মাথার চুল ঢেউ খেলানো। ঠোঁটে হাসি থাকলেও চোখে-মুখে নিস্পৃহ একটা ভাব। ব্রিটিশদের ভঙ্গিতে দুঃখ-প্রকাশের সুরে বলল, ‘পাখি উড়াল দিয়েছে। বোকার মত ওকে পালিয়ে যেতে দিলে তুমি, বন্ধু!’

‘ভুল বললে,’ বিরক্তি নিয়ে বলল রানা। ‘তুমি এ-বাড়িতে না এলে সতর্ক হতো না। ঠিকই ওকে ধরতে পারতাম।’

‘হয়তো,’ উদাস সুরে বলল আগন্তুক। রেইনকোটের পকেটে রাখল ওয়েবলি। ‘দেখে তো মনে হচ্ছে না তুমি এই দেশের মানুষ। আবার ইউরোপেরও কেউ নও। তা হলে তুমি আসলে কে?’

‘আগে বলো তুমি কে,’ বলল রানা।

‘আমি ব্রিটিশ নাগরিক। বেড়াতে এসেছি। আর তুমি?’

‘আমিও সাধারণ একজন ব্রিটিশ ট্যুরিস্ট,’ বলল রানা।

ওর দিকে চেয়ে চওড়া হাসল লোকটা। ওপরে-নিচে নেচে চলেছে অ্যাডাম্‌স্‌ অ্যাপল। তাকে টিপিকাল ব্রিটিশ বলেই মনে হলো রানার। সামনে ঝুঁকে বসল লোকটা। ‘আমার নাম কার্সন। জন কার্সন। তোমার নাম কী?’

‘আমি স্যামি কিং,’ বলল রানা।

‘মিথ্যা বলার আর জায়গা পাও না!’ আবারও হেসে ফেলল কার্সন।

‘কেন খামোকা মিথ্যা বলব, বলো তো?’ ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল রানা। তাকাল লিভিংরুমের চারপাশে। ‘এখানে খুব অন্ধকার। তুমি কি এখানে অপেক্ষা করতে চাও কিউলেক্সের জন্যে?’

‘তা করা যায়, ‘কিং।’ পকেট থেকে এক প্যাকেট স্প্যানিশ সিগারেট বের করল কার্সন। একটা শলা ঠোঁটে তুলে জ্বেলে নিল লাইটার দিয়ে। ‘স্মোক করলে কোন আপত্তি নেই তো, কিং? দেব একটা? ভাল জিনিস।’

মাথা নাড়ল রানা। ‘কিছু দিন আগে ছেড়ে দিয়েছি।’

‘কিউলেক্সের সঙ্গে জড়ালে কীভাবে?’ হঠাৎ করেই জানতে চাইল কার্সন।

‘কার কথা বলছ?’ রানা নিজেই বুঝল, ওর কথা হাস্যকর শোনাচ্ছে।

‘তুমি কি নিজের ব্যাপারে কিছুই বলবে না?’ হতাশ সুরে বলল জন কার্সন।

চট্ করে নিজের জন্যে কাভার স্টোরি তৈরি করল রানা। মুখ খুলল, ‘আমি আসলে জড়িয়ে গিয়েছি ম্যালাগার এক ভদ্রমহিলার দুর্ভাগ্যের জন্যে। বড়লোক এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী সে। আর এই ব্যবসায়ী আবার আমার বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে রক্ষিতার সঙ্গে সুইট্যারল্যাণ্ডে ফূর্তি করতে যেতেই এক ভবঘুরের পাল্লায় গিয়ে পড়েছে আমার বন্ধুর স্ত্রী। আর সেই হারামজাদার কথাই বলছ তুমি। কিউলেক্স। মহিলাকে এখন ব্ল্যাকমেইল করছে সে। প্রচুর টাকা না দিলে অন্তরঙ্গ ছবি তুলে দেবে মহিলার স্বামীর হাতে। আর সেজন্যে আমার সাহায্য চেয়েছে সেনোরা। ছবিগুলো আদায় করতে চাই কিউলেক্সের কাছ থেকে।’

এঁকেবেঁকে ওপরে উঠছে জন কার্সনের সিগারেটের ধোঁয়া। অন্ধকারেও রানা টের পেল, নিঃশব্দে হাসছে সে। একবার খুক করে কেশে উঠে বলল, ‘তুমি তো দেখি সহজেই সবসময় খুঁজে ‘নিচ্ছ বড় ধরনের ঝামেলা! নামটা তা হলে কিং? ঠিক তো? আমার তো তা মনে হয় না। মিথ্যা না হয় না-ই বা বললে।’

‘তুমি জানতে চেয়েছ সত্যিকারের ঘটনা, আর আমি কোন দিনও কোন মিথ্যুক মানুষ ছিলাম না, বলল রানা, ‘এর চেয়ে বেশি সত্য বোধহয় আর কিছুই নেই। …আর তুমি? তোমার কাহিনীটা কী?

‘আর আমি…’ বড় করে শ্বাস নিল জন কার্সন। ‘নানান কারণেই হন্যে হয়ে খুঁজছি কিউলেক্সকে। অবশ্য একটা কথা বলতে পারি, তোমার এসব কথা একেবারেই ডাহামিথ্যা। কোন কালেই দক্ষ প্রেমিক ছিল না সে।’

‘সেটা জানে শুধু আমার পরিচিতা সেনোরা, কাঁধ ঝাঁকাল রানা।

‘কিউলেক্স বা অ্যালবার্ট কিউলেককে ভাল করেই চিনি আমি, কারণ তার ছবি আগেও কয়েকবার দেখেছি। সে দক্ষ একজন খুনি। আসল নাম সোলনি দে নায়েসুরা। রোম থেকে স্পেনে একজনকে খুন করতে পাঠানো হয়েছে তাকে। কিউলেক্স এসেছে নিয়োপলিটান এলাকা থেকে।’

‘কিন্তু তুমি কেন তাকে খুঁজছ?’

‘ব্যাপারটা প্রথমে প্যারামিলিটারি বিষয় ছিল না। কিন্তু ছয় সপ্তাহ আগে রোমে সে খুন করেছে আমাদের দলের একজনকে।

‘তোমাদের একজন মানে?’

‘ব্রিটিশ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স,’ গম্ভীর কণ্ঠে বলল কার্সন। ‘ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে প্রচুর ড্রাগ ঢুকছে বলে সতর্ক ছিলাম আমরা। এসব ড্রাগ ভূমধ্যসাগর দিয়ে আসে, তাই ওদিকে চোখ ছিল মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের। বিশ্বাসযোগ্য সূত্র পেয়ে নেপলসের এক ওয়্যারহাউসে রেইড দিয়ে খুন হলো জ্যাক। ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে আমরা জানলাম, ওকে খুন করে গেছে কিউলেক্স।’

ভাবনার ভেতরে যেন তলিয়ে গেল কার্সন

‘বুঝলাম,’ বলল রানা।

‘গত সপ্তাহে কিউলেক্সের পিছু নিয়ে এসে ঢুকেছি স্পেনে। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, সে এখন আছে ম্যালাগায়। যদিও তাকে খুঁজে পাইনি। তারপর আমাদের একজনের কাছ থেকে সূত্র পেয়ে আজ মাঝরাতে গেলাম এক নাইট ক্লাবে। ওখানে ব্যবসা করে এক পতিতা। তার পেট থেকে সব বের করব, এমন সময় টের পেলাম তাকে ভাড়া করেছ তুমি। অপেক্ষায় থাকলাম নাইট ক্লাবে। তারপর সে ফিরে আসতেই তার কাছ থেকে সব জেনে নিয়ে দেরি করিনি এই বাড়িতে আসতে।’

‘মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স?’ বলল রানা, ‘অর্থাৎ এমআই-সিক্স?’

‘আসলে ফাইভ,’ হাসল কার্সন, ‘এসপিয়োনাজের জন্যে বেশিরভাগ মানুষ কেন যেন চেনে এমআই-সিক্সকে। তবে কাউন্টার এসপিয়োনাজের কাজ কিন্তু ফাইভের। আমার কথা বুঝতে পেরেছ? যা-ই হোক, আমি তোমাকে কোন চাপাচাপি করব না যে তুমি আসলে কোন্ দেশের হয়ে কাজ করছ। আমরা যে ধরনের কাজ করি, তাতে সিকিউরিটির ব্যাপারে আমাদেরকে সবসময় সতর্ক হতে হয়। তুমি বা আমি আলাদা দলের হয়ে কাজ করলেও আমরা আসলে একই কাজে এসেছি। আমাদের উদ্দেশ্যও এক। যেভাবে হোক হাতের মুঠোয় পেতে হবে কিউলেক্সকে।’

‘কিউলেক্সের ব্যাপারে কী ধরনের নির্দেশ আছে তোমার, ওপরে?’ জানতে চাইল রানা।

‘আমাকে বলা হয়েছে, হারামজাদাকে যেন দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিই।’

‘এটা কি জানো, তার পেছনে কে বা কারা আছে?’ জানতে চাইল রানা।

‘আমার মনে কোন সন্দেহ নেই, তাকে ব্যবহার করছে মাফিয়ার ডনেরা। আগেও বহুবার তাকে কাজ দিয়েছে তারা।’

‘জ্যাকের অকাল মৃত্যুর জন্যে আমি দুঃখিত,’ বলল রানা।

‘জ্যাক?’ ফাঁকা চোখে ওকে দেখল জন কার্সন।

‘তোমাদের সহযোগী, যাকে কিউলেক্স খুন করেছে।’ —ও, ওর আসল নাম রবসন। পুরো নাম জ্যাক রবসন। বেচারা।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল কার্সন। ‘তবে ও ভাল করেই জানত, ড্রাগের ব্যাপারে কাজ করলে কী ধরনের বিপদ হবে।’

অন্ধকারে জন কার্সনের দিকে চেয়ে আছে রানা। ঠোঁট শক্ত করে বসে আছে ব্রিটিশ লোকটা।

‘তুমি নিজে এসব থেকে কী পাবে?’ জানতে চাইল কার্সন। ‘সেই মহিলা কি তোমার সঙ্গে বিছানায় গেছে? বা টাকা দেবে বলে কথা দিয়েছে?’

‘তা নয়,’ মাথা নাড়ল রানা। ‘নিজেকে রবিন হুডের মত দুঃসাহসী বীর বলে মনে করি না, তবে এ-ও ঠিক যে বিপদগ্রস্ত এক মহিলাকে বাঁচাতে গিয়েই এখানে এসেছি।’

‘সত্যিকারের এক সাদা মনের মানুষ তুমি।’

নীরবতা নামল দু’জনের মাঝে।

চুপচাপ একঘণ্টা বসে থাকার পর ওরা সিদ্ধান্ত নিল, অন্তত আজ রাতে আর এই বাড়িতে ফিরবে না কিউলেক্স।

ঠাণ্ডা-মাথার খুনির ফোক্সভাগেনে চেপে বাড়ি ত্যাগ করল ওরা। একঘণ্টা পর হোটেলের দু’ শ’ গজ দূরে গাড়িটা ফেলে রেখে ঢুকে পড়ল রানার সুইটে।

দু’গ্লাসে সুপার ডিলাক্স স্কচ উইস্কি ঢেলে নিয়ে মুখোমুখি সোফায় বসল ওরা। ততক্ষণে রানা হয়ে গেছে কার্সনের প্রিয় বন্ধু কিং। আর অবলীলায় কার্সনকে জনি বলে ডাকছে কিং। যদিও কার্সনের ব্যাপারে মনের ভেতরে গভীর সন্দেহ কাজ করছে রানার। ভাবছে, এই লোক আরও তথ্য দিলে বহু কিছুই পরিষ্কার হবে ওর কাছে।

একটু পর গ্লাসের টুং-টাং আওয়াজে পাশের ঘরের দরজায় এসে থামল মারিয়া। ওর পরনে বুক-খোলা’ রোব। কুঁচকে গেছে ভুরু। চোখে জন্মের ঘুম।

‘এ-কী মোহনীয় এক দৃশ্য!’ উইস্কি ভরা গ্লাস ওপরে তুলল জনি। ‘এ যেন গভীর রাতে স্বর্গ থেকে পতিত বা উদয় হওয়া এক অপ্সরা!’

‘ও আসলে মারিয়া,’ পরিচয় দিল রানা।

‘ইনিই কি তোমার বলা সেই সেনোরা? উঠে দাঁড়িয়ে মস্ত বাউ দিল জনি। দুই গ্লাস উইস্কি গিলে প্রায় মাতাল।

‘তা নয়,’ বলল রানা। ‘মারিয়া আমার স্ত্রী।’

অবিশ্বাস নিয়ে ওকে দেখল জনি। তারপর চোখ বড় করে চেয়ে রইল মারিয়ার দিকে। ঢোক গিলে বলল, ‘তা-ই নাকি? সত্যিই রুচি আছে তোমার, কিং! দুনিয়া-সেরা মেয়েটাকে তুমি জিতে নিয়েছ!’

‘কথাটা বলার জন্যে ধন্যবাদ, জনি,’ রানা উঠে দাঁড়াল। ‘মারিয়া, সরি। এসো, পরিচয় করিয়ে দিই। ও জনি। আমার বহু পুরনো বন্ধু। ওর সঙ্গে দেখা হয়ে যেতেই ভাবলাম, গভীর রাত হয়ে গেলেও ওকে নিয়ে আসি আমাদের সুইটে।’

‘সেনোরা, এই হতভাগ্যের নাম জন কার্সন, ‘ আফসোসের সুরে বলল জনি। ‘যে কি না আগে আপনাকে দেখতে না পেয়ে বিয়ে করতে পারল না!’

‘আমার স্ত্রীর পুরো নাম মারিয়া কিং,’ বলল রানা।

রানা ও জনির নাটকীয়তা দেখে পূর্ণ সচেতন হয়ে গেছে মারিয়া। এদিকের ঘরে পা রেখে রানার কাছে জানতে চাইল, ‘বলো তো, আসলে কী হয়েছে?’

‘পরে সব খুলে বলব, ডার্লিং,’ বলল রানা। ‘আপাতত শুধু এটা জেনে রাখো, আমাদের প্রিয় বন্ধু কাজ করে ব্রিটিশ এমআই-সিক্সে। অনেক দিন পর আবারও দেখা।’

‘এমআই-ফাইভ,’ ওর পাতা ফাঁদ এড়িয়ে গেল জনি।

‘ফাইভ হোক বা সিক্স, হবে একটা,’ মৃদু হাসল রানা। আড়াই গ্লাস উইস্কি গিলেও মগজ ওর টনটনে। ‘এসো, মারিয়া, আমাদের সঙ্গে বসে পড়ো।’

‘অনেক রাত হয়ে গেছে,’ আপত্তির সুরে বলল মারিয়া। ‘খুব ক্লান্তি লাগছে।

‘আপনাকে দেখে তো মোটেই ক্লান্ত বলে মনে হচ্ছে না, মারিয়ার সামনে গিয়ে থামল জনি। ‘মনে হচ্ছে আপনি যেন স্বর্গের অচেনা এক সুন্দর ফুল!’ ঝড়ের বেগে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিল সে। ওটার ভেতর থেকে একটা শলা বের করে গুঁজে দিল মারিয়ার দু’ঠোঁটের ফাঁকে। লাইটার জ্বেলে ধরিয়ে দিল সিগারেট।

কয়েক সেকেণ্ড জনি কার্সনকে দেখল মারিয়া, তারপর বড় করে টান দিল সিগারেটে। মুখে ফুটেছে আন্তরিক হাসি। দু’চোখে জনির জন্যে একরাশ আগ্রহ। রানার উপস্থিতি যেন মনেই নেই। অথবা নিজের দিকে ওকে টেনে নিতে অভিনয় করছে মেয়েটা।

স্বামীর সামনে অপর পুরুষের প্রতি কতটা আকর্ষণ দেখাবে ওর স্ত্রী, সেটা দেখার জন্যে সোফায় ধপ করে বসে পড়ল রানা।

জনির চোখে চোখ রেখে তার গায়ে ঢলে পড়ল মারিয়া। অস্ফুট স্বরে বলল, ‘তুমিও আমার মতই ব্রিটিশ, তা-ই না?’

আমাদের জনি আসলে বুড়ো এক সিংহ,’ মাতালের হাসি হাসল রানা।

‘সিংহ হয়েই বা কী লাভ হলো আমার?’ আফসোস করল জনি। ‘তুমি তো আগেই জয় করে নিলে দুনিয়ার সেরা মেয়েটাকে!’

‘কী যে বলো,’ ভদ্রতা করে মাথা নাড়ল মাতাল রানা।

একবার ওকে দেখে নিয়ে জনির চোখে তাকাল মারিয়া। ‘তুমি কি তা হলে সত্যিই এমআই-ফাইভ, মানে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের একজন অফিসার?’

‘অথচ দুনিয়ার সবচেয়ে রূপসী মেয়েটাকে পেল না এই বেচারা,’ মাথা নাড়ল জনি। মারিয়ার চোখে তাকাল। ‘এক কাজ করলে কেমন হয়, বলো তো? তুমি এসে সামান্য ড্রিঙ্ক করলে আমার বাড়িতে গিয়ে? আমি কিন্তু খুবই খুশি হব!’

এ-কথায় ঝলমলে হাসি দিল মারিয়া। ‘আমারও তো খুব ভাল লাগবে।’

ক্লান্ত হাসি দিয়ে রাজি হয়ে গেল রানা। ‘বেশ, আমরা ঘুরে আসব জনির বাড়ি থেকে।’

‘তুমিও বরং তা হলে চল, কিং,’ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল জনি। ‘মনে হয় না ঠকবে।’

‘ঠিক আছে,’ পরাজিত, ব্যর্থ এক স্বামীর সুরে বলল রানা।

.

জন কার্সনের ব্যাপারে জরুরি তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব মনে মনে মারিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে রানা। কার্সনকে যেমন বড়শি দিয়ে তুলতে চাইছে মেয়েটা, তেমনিভাবে ওর কাছ থেকেও সব জানতে চাইবে সে।

জন কার্সনের ভাড়া নেয়া বিলাসবহুল বিশাল ভিলা সাগরের তীরে। সামনের ঘরে জ্বলছে উজ্জ্বল সাদা আলো। দামি এক সোফায় গা ছেড়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে রানা। একটু পর পর তুলছে বড় সব হাই। যে-কেউ বুঝবে, বেহেড মাতাল হয়ে গেছে ও।

একবার ওকে দেখে নিয়ে জনির চোখে তাকাল মারিয়া, ভেজা ঠোঁটে আমন্ত্রণের মুচকি হাসি। মাতাল রানাকে একবার দেখে নিল জনি, তারপর একটু সরে দু’হাতে নিজের বুকে টেনে নিল মারিয়াকে। পরস্পরকে গভীরভাবে চুমু দিল ওরা। চোখের প্রায় বন্ধ পাতার ফাঁকে সবই দেখছে রানা। মনে মনে বলল, মারিয়া হ্যারল্ড দেখি সত্যিই খরস্রোতা নদীর তুখোড় কোন ঘড়িয়াল!

‘কী যে রূপ তোমার, ডার্লিং!’ মারিয়ার ঠোঁটে আরেকটা চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল কার্সন। ‘আমি স্রেফ খুন হয়ে যাব! তোমাকে না পেলে বেঁচে থেকে আমার কী লাভ!’

‘তা-ই?’ নিজে থেকে কার্সনকে চুমু দিল মারিয়া।

পরস্পরকে আবারও জড়িয়ে ধরল ওরা।

হঠাৎ করে ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে পেছন-দরজার দিকে তাকাল রানা, চোখে মাতালের ঘোর। দরজায় এসে থেমেছে সুন্দরী এক যুবতী। বুকের ওপরে ভাঁজ করে রেখেছে দু’হাত। মেয়েটার এলো চুল ও চোখের মণি বাদামি রঙের।

ওকে দেখেও মারিয়ার কাছ থেকে সরল না জনি। সহজ সুরেই বলল, ‘ক্যাথি, এরা কিং আর মারিয়া।’

‘তা-ই,’ মৃদু আপত্তির সুরে বলল ক্যাথি।

কার্সনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মেয়েটাকে দেখল মারিয়া। নিচু গলায় বলল, ‘এই মেয়ে আসলে কে?’

একবার রানার দিকে তাকাল জনি কার্সন। ঢুলু-ঢুলু চোখে ওকেই দেখছে রানা। মারিয়ার চোখে চেয়ে বলল কার্সন, ‘ও আসলে আমার স্ত্রী।’

‘তুমি কেমন করে এলে এই দুনিয়ায়, আমার স্বর্গের হুর পরী?’ জড়ানো কণ্ঠে ক্যাথিকে বলল রানা।

‘আমি ক্যাথি মোনালিসা,’ ওর দিকে চেয়ে হাসল যুবতী। মোহনীয় ভঙ্গিতে সুগঠিত কোমর দুলিয়ে হেঁটে এসে বসল . রানার পাশে।

দু’সেকেণ্ডের জন্যে কালচে হলো মারিয়ার মুখ। কিন্তু জনি ওর ঠোঁটে চুমু দিতেই কেটে গেল ঝড়ের সেই কালো মেঘ। আলতো করে মারিয়ার হাত ধরে মৃদু চাপ দিল জনি। সোফা ছেড়ে পাশের ঘরে গেল ওরা। এক মিনিট পেরোবার আগেই ওদিকের ঘর থেকে এল গ্লাস-বোতলের টুং-টাং শব্দ। ঘাড় কাত করে ক্যাথিকে দেখল রানা। খুব ধীরে কাঁধ থেকে নাইট গাউন একটু সরিয়ে দিল মেয়েটা। দেখা যাচ্ছে দুই পর্বতের মাঝের বাদামি গভীর গিরিখাদ। মনে মনে স্বীকার করল রানা, মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের লাল নেইল পলিশ করা সুন্দর নখ পর্যন্ত একেবারে নিখুঁত এই মেয়ে!

‘তুমি কি সত্যিই জনির স্ত্রী?’ নিচু গলায় বলল রানা। মৃদু হাসল ক্যাথি। ‘হলেই বা কী?’

‘তা হলে কিছুই না?’ মাতালের হাসি দিল রানা।

‘এসো, ওরা যা করতে গেছে পাশের ঘরে, আমরাও সেটাই করি,’ রানার নাকের ডগায় ছোট্ট চুমু দিল ক্যাথি।

সোজা হয়ে বসে ওর পেলব কাঁধে দু’হাত রাখল রানা। কাছে টেনে নিল ক্যাথিকে। তবে চুমু দেয়ার আগেই মেয়েটা বলল, ‘তোমার স্ত্রী কিন্তু সত্যিই খুব সুন্দরী। ওকে বড্ড পছন্দ করে ফেলেছে জনি।’

‘তুমি তো ওর চেয়েও রূপসী,’ ক্যাথির লোভনীয় ভেজা ঠোঁটে নেমে এল রানার নিষ্ঠুর ঠোঁট।

কয়েক পলক পর পিছিয়ে বসল ক্যাথি। পাশের ঘরে থেমে গেছে টুং-টাং আওয়াজ। পরের দু’মিনিটে ড্রিঙ্ক নিয়ে এল না কেউ। ওদিকের ঘরে শুরু হয়েছে স্প্রিঙের ক্যাঁচকোঁচ বিশ্ৰী শব্দ।

চট করে উঠে গিয়ে ঘরের বাতি নেভাল ক্যাথি। বদলে জ্বেলে দিল সোফার কাছের রঙিন এক টেবিল-ল্যাম্প। আবছা আলোয় রাজকন্যার মত হেঁটে এসে সোফায় বসল মেয়েটা। হঠাৎ করেই ওর গা থেকে খসে গেল স্বচ্ছ নাইট গাউন। নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিতে যেন উন্মাদিনী হয়ে গেছে যুবতী। দ্রুত হাতে খুলল রানার পোশাক। শার্টের কাঁধে হোলস্টার ও ওয়ালথার দেখে একটু দ্বিধা করেও ওগুলো খুলে সরিয়ে রাখল পাশের টেবিলে। রানার ওপরে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত ঝাঁপিয়ে পড়ল সুন্দরী ক্যাথি। গভীর এক উত্তপ্ত সাগরে ডুবে যেতে যেতে রানা ভাবল, কার্সনের কাছ থেকে জরুরি কিছু জানতে পারবে তো মারিয়া?

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন