ব্ল্যাক লিস্ট – ১৯

কাজী আনোয়ার হোসেন

উনিশ

কিছুক্ষণ পর তুষারে ভরা পাহাড়ি ঢালে এল গার্ডিয়া সিভিলের চার অফিসার। এদের ভেতরে আছে রানার পরিচিত সেই গোঁফওয়ালা লোকটা। দলের অন্য তিনজনকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে কী যেন বলল সে। তারপর মৃত মোরেলি আর রানার সামনে এসে বলল, ‘ঠিক আছে, সেনোর, আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না। আপনি হোটেলে ফিরে যেতে পারেন।’

নিজে থেকেই এলিনা পার্কারসনের তুষারের নিচে চাপা পড়ার বিষয়টা তাকে জানাল রানা। জবাবে অফিসার বলল, কোদাল এনে মেয়েটাকে খুঁড়ে তুলবে তারা।

আর কিছু করার নেই সেটা বুঝে স্কিয়িং করে নিচে রওনা হলো রানা’। ভাবছে, শেষ হয়ে গেছে ওর মিশন ব্ল্যাক লিস্ট। এবার ফিরে যেতে হবে হোটেলে। নিজের কামরায় গিয়ে শাওয়ার নেবে। স্পেন ত্যাগ করবে বলে আগেই গতকাল রাতে গুছিয়ে নিয়েছে লাগেজ। এই দেশে ওর আর কোন কাজ নেই।

বিশ মিনিট পর হোটেলে পৌছুল রানা। সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল ওদের সুইটের সামনের করিডরে। তালা খুলে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল নিজের কামরায়। দরজা আটকে পোশাক ছেড়ে পা রাখল বাথরুমে। দশ মিনিট উষ্ণ জলে ভিজে দেহ- মন থেকে দূর করল সব ক্লান্তি। একটু পর কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এল বাথরুম থেকে। গিয়ে থামল বেডপোস্টে ঝুলন্ত শোল্ডার হোলস্টারের কাছে। চামড়ার খাপ থেকে নিল ওয়ালথার। দ্রুত চেক করল গুলি আছে ম্যাগাযিনে।

পা শুকিয়ে গেছে ওর। গোড়ালিতে টেপ দিয়ে আটকে নিল স্টিলেটো। গায়ে দিল আরামদায়ক সুতির রোব। আবার ফিরল বাথরুমের দরজার সামনে। বাষ্পে ঘোলা হয়ে গেছে আয়না। অবশ্য অভিজ্ঞতা থেকে চিরুনি দিয়ে মাথার চুল আঁচড়ে নিল রানা। ঘুরে দেখল ওর ট্র্যাভেল ব্যাগ। গতকাল ওটার ভেতরে সব গুছিয়ে রেখেছে। একবার ভাবল, ছাড়া পোশাক ওটার ভেতরে গুঁজে তারপর টোকা দেবে মারিয়ার কামরার দরজায়। পরক্ষণে উড়িয়ে দিল ভাবনাটা। কাপড় পরে ভরবে ব্যাগে। দৃঢ়পায়ে গিয়ে নক করল পাশের দরজায়।

‘কান ইন,’ পাশের ঘর থেকে এল চাপা মেয়েলি কণ্ঠ।

‘তুমি কি ম্যালাগায় যাওয়ার জন্যে রেডি?’

ওদিকের ঘর থেকে জবাব দিল না কেউ।

দরজা খুলে পাশের কামরায় ঢুকল রানা। পেছনে কবাট আটকে দিয়ে ফিরে চেয়ে বিস্মিত হলো। একটু দূরেই চেয়ারে বসে আছে মারিয়া, সম্পূর্ণ উলঙ্গ! রুমাল দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে ওর মুখ। দু’হাত পেছনে বাঁধা। পা দুটোও দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে চেয়ারের পায়ার সঙ্গে। অসহায় চোখে রানার দিকে চেয়ে আছে মারিয়া।

চট্ করে অর্ধেক ঘুরে ডোর নব ধরল রানা। কিন্তু তখনই নরম সুরে বলে উঠল এক নারীকণ্ঠ: ‘ভুলেও দরজা খুলবে না!’

দুলে উঠেছে ঘরের জানালার পর্দা। ওটার পেছন থেকে বেরোল এলিনা পার্কারসন, হাতে বড় একটা পিস্তল!

মেয়েটার হাতে বেমানান দেখাচ্ছে জন কার্সনের ওয়েবলি মার্ক সিক্স।

এলিনার পরনে এখনও স্কি ড্রেস। তুষারের তলা থেকে উঠে আসতে গিয়ে ভিজে গেছে। মেয়েটার চোখে খেপা দৃষ্টি।

‘হ্যালো, ডার্লিং রানা,’ বাঁকা হাসল এলিনা।

‘তা হলে ভালই আছ, লিনা,’ সহজ সুরে বলল রানা।

‘ভাল? তা বলতে পারো। অ্যাভালাঞ্চ তৈরি করেও খুন করতে পারোনি আমাকে।’

‘তা-ই তো দেখছি।’

ঘুরে উলঙ্গ মারিয়ার দিকে তাকাল রানা। জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মেয়েটার দুই স্তনবৃন্ত। একপলকে রানা বুঝে গেল, এলিনার ভেতরে আছে স্যাডোম্যাসোকিস্টিক স্ট্রেইন। সাধারণত ওটা থাকে লেসবিয়ানদের ভেতরে। একই সঙ্গে সঙ্গে এরা হয়ে ওঠে ছিঁচকে চোর বা নিমফোম্যানিয়াক।

‘তুমি আসলে অসুস্থ মানসিকতার মেয়ে, লিনা, শান্ত স্বরে বলল রানা। ‘মানুষকে কষ্ট দিয়ে তোমার আসলে লাভ কী?’

বোমার মত বিস্ফোরিত হলো এলিনা পার্কারসন। ‘গাধা মোরেলি চেয়েছে ড্রাগ চেইন নষ্ট করে দিতে! অথচ, দুনিয়ার সেরা বড়লোক হওয়ার সুযোগ ছিল তার সামনে! কী করে যেন নষ্ট হয়ে গেল হারামজাদার মাথা, নইলে এমন বোকার কাজ করবে কোন্ উন্মাদ?’

‘ড্রাগের কারণে মারা গিয়েছিল ওর মেয়ে।’

টিটকারির হাসি হাসল এলিনা। ‘ওই বেটি তো দুনিয়ার অন্যসব মাতারির মতই পাকা বেশ্যা! ইউনিভার্সিটিতে এমন কোন ছেলে ছিল না, যার সঙ্গে সে শুয়ে দেখেনি!’

‘নোংরা কল্পনায় এসব তুমি দেখো, লিনা,’ ঠাণ্ডা স্বরে বলল রানা। ‘আমার মনে হয় তোমার উচিত ভাল একজন মানসিক ডাক্তার দেখানো।’

মাথা পেছনে নিয়ে অট্টহাসি দিল এলিনা পার্কারসন। ‘তুমি আসলে বড় বোকা, রানা! জানোই তো না মেয়েমানুষ কত খারাপ হয়! অবশ্য আমার কথা আলাদা!’

ওর নিজের ঘরে বেডপোস্টে হোলস্টারে ওয়ালথার রয়ে গেছে, সেটা মনে পড়ল রানার। এখন সত্যি নিজেকে বোকা বলেই মনে হচ্ছে ওর। বিপজ্জনক মিশনে অসতর্ক হওয়া একদম উচিত হয়নি। আর সেজন্য এবার হয়তো বেকায়দায় পড়ে খুন হবে।

‘দিয়ে দাও মাইক্রোফিল্ম, রানা,’ পর্দার কাছ থেকে সরে এল এলিনা। ‘মোরেলির সঙ্গে তোমাকে দেখেছি। সে নিশ্চয়ই ওটা তোমার হাতে দিয়েছে। রানা, লক্ষ্মী ছেলের মত দিয়ে দাও। নইলে হাসতে হাসতে খুন করব তোমাকে।’

‘অনেক দেরি করে ফেলেছ, লিনা,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল রানা। ‘ওটা তুলে দিয়েছি দলের আরেকজনের হাতে। তবুও যদি মারিয়া আর আমাকে খুন করতে চাও, তো কিছু বলার নেই।’

‘মিথ্যা কথা বলবে না!’ গর্জে উঠল এলিনা। ‘তোমরা খুন হবে কি না তা নিয়ে আমার কোন, মাথা-ব্যথা নেই! তোমাদেরকে ছেড়েও দিতে পারি। তবে আগে আমাকে দিতে হবে মাইক্রোফিল্ম!’

ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল রানা। ‘ওই যে বললাম, দেরি করে ফেলেছ!’

সকালের রোদ পড়া হিমবাহের মত জ্বলজ্বল করছে এলিনার নীল দু’চোখ। মেয়েটার স্কি ড্রেসের দিকে চেয়ে রানার মনে পড়ল দু’রাত আগে গ্রানাডার হোটেলের সেই অদ্ভুত সুন্দর রাতটির কথা।

ওয়েবলি পিস্তলের নল মারিয়ার বুকে তাক করল এলিনা। খুন করবে ভেবে অসুস্থ খুশিতে চকচক করছে চোখ। ভয়ে মুখ বিকৃত করে ফেলেছে মারিয়া। থরথর করে কাঁপছে হাত-পা। ওর গাল বেয়ে পিস্তলের নল নিচের দিকে নামাল এলিনা।

‘তুমি সত্যিই ভয়ঙ্কর এক পিশাচী,’ শান্ত স্বরে বলল রানা। ‘মারিয়াকে বন্দি করার পর আগুনে পোড়ালে ওর বুক। তোমার কুকীর্তি দেখে এখন আমার মনে হচ্ছে, তুমি আসলে চিরকাল ধরেই ছিলে মানবীর রূপে ভয়ঙ্কর এক রাক্ষসী।’

জবাবে কাঁধ ঝাঁকাল এলিনা। ‘আমি তিন গোনার আগেই মাইক্রোফিল্ম দেবে, রানা; নইলে আমার হাতে খুন হবে মারিয়া। গুনতে শুরু করলাম: এক!’

‘বিশ্বাস করো, আমার কাছে সত্যিই মাইক্রোফিল্ম নেই, ‘ অসহায় সুরে বলল রানা। মনে খেলে গেছে একটা চিন্তা। ওর বোধহয় উচিত এলিনাকে বুঝিয়ে দেয়া, মাইক্রোফিল্ম ওর কাছে আছে বলেই বেশি বেশি প্রতিবাদ করছে ও।

চোখ সরু করে ওকে দেখছে এলিনা। ‘আমি নিজের চোখে তোমাকে মোরেলির সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। আর তখনই ওর কাছ থেকে নিয়েছ জিনিসটা। তোমার সঙ্গে মাত্র একবার দেখা করতে চেয়েছিল। আর সেটা করতে পেরেছে। অর্থাৎ, মাইক্রোফিল্ম এখন তোমার কাছে। ভুলেও মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করবে না, রানা!’

করুণ চেহারায় ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল রানা। ‘আমার কথা শোনো, এলিনা। মাইক্রোফিল্ম ডাক-বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে মোরেলি। সেটা নিজে বলেছে আমাকে।

‘ডাক-বিভাগকে কখনও বিশ্বাস করত না মোরেলি!’ চোখে আগুন নিয়ে ওকে দেখছে এলিনা। ‘মিথ্যা বলার আর জায়গা পাও না! …দুই!’

‘লিনা, এটাই আসলে সত্যি! বিশ্বাস করো!’ অতি নার্ভাস ভঙ্গিতে তার দিকে কয়েক পা এগোল রানা। ‘দয়া করে অস্ত্রের নল সরাও। এসো, চেয়ার থেকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিই মারিয়াকে। বেচারি ভয়ঙ্করভাবে আহত।’

আধপাক ঘুরে ওর বুকে পিস্তল তাক করল এলিনা। আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘ভুলে যেয়ো না এটা .৪৫৫ ক্যালিবার ওয়েবলি! এত কম রেঞ্জে এক গুলিতে ছিঁড়েখুঁড়ে যাবে তোমার বুক! আর তখন মাইক্রোফিল্মের জন্যে এই গোটা সুইট কষ্ট করে সার্চ করতে হবে আমাকে। তাই ভালর জন্যেই বলছি, রানা, দিয়ে দাও ওটা!’

নীরবে কাঁদতে শুরু করেছে মারিয়া।

একদিকে সামান্য সরে গেল রানা।

‘খবরদার! আর এক পা নড়বে না!’ গর্জে উঠল এলিনা। ঝট্ করে পিস্তল ঘুরিয়ে নল তাক করল মারিয়ার মাথায়। ‘হয় মাইক্রোফিল্ম দেবে, রানা, নইলে এখনই খুন হবে মেয়েটা!

তার চোখ দেখে বুঝল রানা, চরম খেপেছে মেয়েলোকটা।

‘আমি কিন্তু দুই পর্যন্ত গুনেছি, রানা! এবার শেষবারের মত বলব। আর তারপরই…’ বড় করে শ্বাস নিল এলিনা।

‘ঠিক আছে,’ হার মেনে নিল রানা, ‘ওটা আছে আমার রুমে।’

‘আমি তোমাকে একফোঁটা বিশ্বাস করি না!’ টিটকারির হাসি হাসল এলিনা। ‘নিশ্চয়ই তোমার কাছেই আছে! এত দামি জিনিস অন্য কোথাও রাখবে না তুমি!!

এলিনার কথা শুনে ঝুলে গেল রানার নিচের চোয়াল। বোকা-বোকা চেহারায় কাঁপা গলায় বলল, ‘তুমি এত নিশ্চিত হয়ে গেলে কীভাবে?’

চালিয়াতির হাসি হাসল মেয়েটা। ‘ভাল করেই জানতাম! : আর কোথায় রাখবে!’ রানার দিকে এগোল সে। ‘দেরি না করে জলদি ওটা বের করে দাও!’

রোবের পকেটের দিকে হাত নিল রানা। ‘লিনা…’

‘পকেটে সাবধানে হাত ঢোকাবে!’ ওর ঘাড় লক্ষ্য করে পিস্তলের নল তাক করেছে মেয়েটা।

ভয়ে এক পা পেছাল রানা। ‘ও… ওটা আছে আমার পকেটে…’

সতর্ক চোখে ওকে দেখছে এলিনা। ঝড়ের বেগে ভাবছে এবার কী করবে। ‘ঠিক আছে, তো খুলে ফেলো তোমার রোব। এরপর সাবধানে পকেট থেকে বের করে মেঝেতে রাখবে মাইক্রোফিল্ম।’

ধীরে ধীরে রোবের বেল্ট খুলছে রানা। ভাবছে, ওটা তো পকেটে নেই! সেক্ষেত্রে না পেয়ে ওকে খুন করবে পিশাচীটা। আর ওর মৃত্যুর পর দানবীটার হাত থেকে বাঁচবে না মারিয়া। অবশ্য…

‘খোলো তোমার রোব!’ চিৎকার করে ধমক দিল এলিনা।

দূরত্ব অনেক বেশি বলে রোব খুলে মেয়েটার মুখে ছুঁড়ে দিতে পারবে না রানা। সেটা যদি পারত, এক লাফে গিয়ে তার হাত থেকে কেড়ে নিত ওয়েবলি। তিক্ত মনে কাঁধ থেকে রোব সরিয়ে সরসর করে ওটাকে মেঝেতে নেমে যেতে দিল রানা। দাঁড়িয়ে আছে উলঙ্গ এক সঙের মত।

‘রোব তুলে ছুঁড়ে দাও বেডের ওপরে!’

ঝুঁকে রোব তুলে নির্দেশ পালন করল রানা।

ওর বুক-পেটের দিকে পিস্তল তাক করে বেডের সামনে গেল এলিনা। রোবের পকেটে বামহাত ভরে খুঁজতে শুরু করেছে মাইক্রোফিল্ম।

কিন্তু পকেট খালি!

এবার অন্য পকেটে হাত ভরল সে। তিন সেকেণ্ড পর রানার চোখে চোখে চেয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘মিথ্যুক কোথাকার! ওটা কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছ!’

এলিনার নীল দুই মণিতে জ্বলছে নরকের আগুন। রানার শরীরের দিকে চেয়ে আছে মেয়েটা। কাঁধ আর বুক পার করে চোখ নেমে গেল পা বেয়ে। সামান্য সরে দাঁড়াল রানা। যেন চাইছে না এলিনা দেখুক ওর গোড়ালিতে অ্যাডহেসিভ টেপ।

দৃষ্টি অনুসরণ করে ওর ডান পায়ের ওপরে স্থির হলো এলিনার চোখ। দ্রুত কী যেন ভাবছে। আরও সতর্কতার সঙ্গে চোখ বোলাল রানার পা দুটোর ওপরে। চোখ আটকে গেল ওর গোড়ালির অ্যাডহেসিভ টেপের ওপরে।

‘ওই তো!’ ধমকে উঠল এলিনা, ‘টেপ দিয়ে আটকে রেখেছ! ওটা দাও, রানা! নইলে এক গুলিতে……

‘সত্যি বলছি, এলিনা, ওখানে কিছুই নেই!’ কেমন যেন কেঁপে গেল উলঙ্গ রানার গলা।

‘আর দেরি করলে এক গুলিতে খুন করে তারপর বুঝে নেব আমার মাইক্রোফিল্ম!’

একটা কথাও মিথ্যা বলছে না মেয়েটা, বুঝে গেল রানা। আর কিছু করার নেই এমন একটা চেহারা করে ডান গোড়ালির দিকে ঝুঁকে গেল ও। একটু আগে শাওয়ার নিয়েছে বলে ভিজে আছে টেপ। এক সেকেণ্ডে ওর হাতে উঠে এল স্টিলেটো।

‘আমাকে এক্ষুণি ওটা দাও!!’ সামনে কয়েক পা এগিয়ে বামহাত বাড়িয়ে দিল এলিমা।

সোজা হয়ে মুঠো করা বামহাত সামনে বাড়াল রানা। অতি লোভে আরেক পা এগোল এলিনা। তার দিকে বাম মুঠো এগিয়ে দিল রানা। আরাধ্য জিনিস পাবে ভেবে রানার মুঠো খামচে ধরল মেয়েটা। আর তখনই খপ করে তার কবজি ধরল রানা। একই সময়ে ওর ডানহাতের স্টিলেটো খচ্ করে ঢুকল এলিনার কানের নিচে ঘাড়ের ভেতরে। গলায় গড়গড়ার বিদঘুটে আওয়াজ তুলে পিস্তলের ট্রিগার টিপে দিল মেয়েটা।

হোটেলের রুমের দেয়াল ভেদ করে পাশের কামরায় গিয়ে বিধল বুলেট। আগুনের কমলা হলকায় পুড়ে গেছে রানার বুকের রোম। ঝটকা দিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেছে। ওর পায়ের কাছে ঝুপ করে মেঝেতে পড়ল এলিনা। আর্টারিয়াল ঘন লাল রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সোনার মত সোনালি ঊর্ধ্বাঙ্গ।

অপূর্ব রূপসী এক মেয়ের কী দুঃখজনক পরিণতি!

থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে এক. চোখ খুলে রানাকে দেখল এলিনা। ফিসফিস করে বলল, ‘রানা! আমি তো সত্তর বছর বাঁচতাম না-তা-ই না?’

‘তুমি খুব ভুল পেশা বেছে নিয়েছিলে,’ বলল রানা।

একবার ঝাঁকি খেয়ে শিথিল হলো এলিনা পার্কারসনের দেহ। ওর লাশ থেকে সরে মারিয়ার চেয়ারের কাছে গেল রানা। ব্যস্ত হাতে খুলল মেয়েটার হাত-পায়ের দড়ির বাঁধন। মুখের রুমালের গিঁঠ খুলে সাহায্য করল পোশাক পরে নিতে। কাজটা শেষ করে নিজের ঘরে গিয়ে ড্রেস পরল।

পাঁচ মিনিট পর ফিরে এল পাশের ঘরে। এখন ওর হাতে ক্যানন এইট-ফিফটি এমএম এসটিএম লেন্সের ওইএস নাইণ্টিডি থার্টি-টু এমপি ডিএসএলআর। মিশনে কাভার আইডি অনুযায়ী রানা একজন পেশাদার ফোটোগ্রাফার। ক্যামেরা দিয়ে পটাপট তুলে নিল মারিয়ার কয়েকটা ছবি।

‘বলো তো, রানা, মোরেলির সেই মাইক্রোফিল্ম এখন কোথায়?’ জানতে চাইল মারিয়া।

‘আর কোথায়, ভাল ক্যামেরাম্যান কি কখনও নিজের ক্যামেরা হাতছাড়া করে?’ ক্যানন ক্যামেরা দেখাল রানা।

জিভ বের করে ওকে ভেঙচি কাটল মারিয়া।

এ-ছবিটাও তুলে নিয়েছে রানা। দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে বলবে ফোটোগ্রাফার হিসেবে ও ভাল নয়। অবশ্য মারিয়া কখনও জানবে না, রানার প্যান্টের পকেটে নকল সিগারেটের প্যাকেটের ভেতরে আছে মোরেলির মাইক্রোফিল্ম।

আজ রাতেই ওটা পৌঁছে যাবে বিসিআই হেডকোয়ার্টারে!

***

অধ্যায় ১৯ / ১৯

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন