ছোবল (১৯৮৬)

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

ইশতেহার

পৃথিবীতে মানুষ তখনো ব্যক্তিস্বার্থে ভাগ হয়ে যায়নি।
ভূমির কোনো মালিকানা হয়নি তখনো।
তখনো মানুষ শুধু পৃথিবীর সন্তান।

অরন্য আর মরুভূমির
সমুদ্র আর পাহাড়ের ভাষা তখন আমরা জানি।
আমরা ভূমিকে কর্ষন কোরে শস্য জন্মাতে শিখেছি।
আমরা বিশল্যকরনীর চিকিৎসা জানি।
আমরা শীত আর উত্তাপে সহনশীল
ত্বক তৈরি করেছি আমাদের শরীরে।
আমরা তখন সোমরস, নৃত্য আর
শরীরের পবিত্র উৎসব শিখেছি।

আমাদের নারীরা জমিনে শস্য ফলায়
আর আমাদের পুরুষেরা শিকার করে ঘাই হরিন।
আমরা সবাই মিলে খাই আর পান করি।
জ্বলন্ত আগুনকে ঘিরে সবাই আমরা নাচি
আর প্রশংসা করি পৃথিবীর।
আমরা আমাদের বিশ্বাস আর সুন্দরগুলোকে বন্দনা করি।

পৃথিবীর পূর্নিমা রাতের ঝলোমলো জোস্নায়
পৃথিবীর নারী আর পুরুষেরা
পাহাড়ের সবুজ অরন্যে এসে শরীরের উৎসব করে।

তখন কী আনন্দরঞ্জিত আমাদের বিশ্বাস।
তখন কী শ্ৰমমুখর আমাদের দিনমান।
তখন কী গৌরবময় আমাদের মৃত্যু।

তারপর—
কৌম জীবন ভেঙে আমরা গড়লাম সামন্ত সমাজ।
বন্যপ্ৰানীর বিরুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য অস্ত্রগুলো
আমরা ব্যবহার করলাম। আমাদের নিজের বিরুদ্ধে।
আমাদের কেউ কেউ শ্রমহীনতায় প্রশান্তি খুঁজে পেতে চাইলো।
দুর্বল মানুষেরা হয়ে উঠলো আমাদের সেবার সামগ্ৰী।
আমাদের কারো কারো তর্জনী জীবন ও মৃত্যুর নির্ধারক হলো।

ভারি জিনিশ টানার জন্যে আমরা যে চাকা তৈরি করেছিলাম
তাকে ব্যবহার করলাম। আমাদের পায়ের পেশীর আরামের জন্যে।
আমাদের বন্য অস্ত্ৰ সভ্যতার নামে
গ্রাস কোরে চল্লো মানুষের জীবন ও জনপদ।

আমরা আমাদের চোখকে সুদূরপ্রসারি করার জন্যে দূরবীন
আর সূক্ষ নিরীক্ষনের জন্যে অনুবীক্ষন তৈরি করলাম।
আমাদের বাহুর বিকল্প হলো ভারি যন্ত্র আর কারখানা।
আমাদের পায়ের গতি বর্ধন করলো। উড়ন্ত বিমান।

আমাদের কন্ঠস্বর বর্ধিত হলো,
আমাদের ভাষা ও বক্তব্য গ্ৰন্থিত হলো,
আমরা রচনা করলাম আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিহাস।
আমাদের মস্তিষ্ককে আরো নিখুঁত ও ব্যাপক করার জন্যে
আমরা তৈরি করলাম কম্পিউটর।

আমাদের নির্মিত যন্ত্ৰ শৃংখলিত করলে আমাদের
আমাদের নির্মিত নগর আবদ্ধ করলে আমাদের
আমাদের পুঁজি ও ক্ষমতা অবরুদ্ধ করলো আমাদের
আমাদের নভোযান উৎকেন্দ্ৰিক করলো আমাদের।

অস্তিত্ব রক্ষার নামে আমরা তৈরি করলাম মারনাস্ত্র।
জীবন রক্ষার নামে আমরা তৈরি করলাম
জীবনবিনাশী হাতিয়ার।
আমরা তৈরি করলাম পৃথিবী নিৰ্ম্মল-সক্ষম পারমানবিক বোমা।

একটার পর একটা খাঁচা নির্মান করেছি আমরা।
আবার সে-খাঁচা ভেঙে নোতুন খাঁচা বানিয়েছি।
আবার খাঁচা ভেঙেছি, আবার খাঁচা বানিয়েছি—
খাঁচার পর খাঁচায় আটকা পড়তে পড়তে
খাঁচার আঘাতে ভাঙতে ভাঙতে, টুকরো টুকরো হয়ে
আজ আমরা একা হয়ে গেছি।
প্ৰত্যেকে একা হয়ে গেছি।

কী ভয়ংকর এই একাকিত্ব!
কী নির্মম এই বান্ধবহীনতা!
কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা!

এই সৌরমন্ডলের
এই পৃথিবীর এক কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে
যে-শিশুর জন্ম।
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে ছুটে বেড়ানোর অদম্য স্বপ্ন
যে-কিশোরের।
জোমা যাকে প্লাবিত করে।
বনভূমি যাকে দুর্বিনীত করে।
নদীর জোয়ার যাকে ডাকে নেশার ডাকের মতো।

অথচ যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ঔপনিবেশিক জোয়াল
গোলাম বানানোর শিক্ষাযন্ত্র।
অথচ যার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে
এক হৃদয়হীন ধর্মের আচার।
অথচ যাকে শৃংখলিত করা হয়েছে স্বপ্নহীন সংস্কারে।

যে-তরুন উনসত্ত্বরের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
যে-তরুন অস্ত্ৰ হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছে।
যে-তরুনের বিশ্বাস, স্বপ্ন, সাধ,
স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভেঙে খান খান হয়েছে।
অন্তরে রক্তাক্ত যে-তরুন নিরুপায় দেখেছে। নৈরাজ্য,
প্রতারনা আর নির্মমতাকে।
দুর্ভিক্ষ আর দুঃশাসন যার নিভৃত বাসনাগুলো
দুমড়ে মুচড়ে তছনছ করেছে।

যে-যুবক দেখেছে এক অদৃশ্য হাতের খেলা।
দেখেছে অদৃশ্য এক কালো হাত।
যে-যুবক মিছিলে নেমেছে।
বুলেকেটের সামনে দাঁড়িয়েছে
আকন্ঠ মদের নেশায় চুর হয়ে থেকেছে
অনাহারে উড়নচন্ডি ঘুরেছে।
যে-যুবক ভয়ানক অনিশ্চয়তা আর বাজির মুখে
ছুঁড়ে দিয়েছে নিজেকে।

যে-পুরুষ এক শ্যামল নারীর সাথে জীবন বিনিময় করেছে।
যে-পুরুষ ক্ষুধা, মৃত্যু আর বেদনার সাথে লড়ছে এখনো,
লড়ছে বৈষম্য আর শ্রেনীর বিরুদ্ধে—
সে আমি।

আমি একা।
এই ব্ৰহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা।
আমার অন্তর রক্তাক্ত।
আমার মস্তিষ্ক জর্জরিত।
আমার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রিত।
আমার শরীর লাবন্যহীন।
আমার জিভ কাটা।
তবু এক নোতুন পৃথিবীর স্বপ্ন আমাকে কাতর করে,
আমাকে তাড়ায়

আমাদের কৃষকেরা
শূন্য পাকস্থলি আর বুকে ক্ষয়কাশ নিয়ে মাঠে যায়।
আমাদের নারীরা ক্ষুধায় পীড়িত, হাড্ডিসার।
আমাদের শ্রমিকেরা স্বাস্থ্যহীন।
আমাদের শিশুরা অপুষ্ট, বীভৎস-করুন।
আমাদের অধিকাংশ মানুষ ক্ষুধা, অকালমৃত্যু আর
দীর্ঘশ্বাসের সমুদ্রে ড়ুবে আছে।

পৃথিবীর যুদ্ধবাজ লোকদের জটিল পরিচালনায়
ষড়যন্ত্রে আর নির্মমতায়,
আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা
আর চরম অসহায়ত্বের আবর্তে আটকা পড়েছি।
কী বেদনাময় এই অনিশ্চয়তা!
কী বীভৎস এই ভালোবাসাহীনতা!
কী নির্মম এই স্বপ্নহীনতা!

আজ আমরা আবার সেই
বিশ্বাস আর আনন্দকে ফিরে পেতে চাই।
আজ আমরা আবার সেই
সাহস আর সরলতাকে ফিরে পেতে চাই।
আজ আমরা আবার সেই
শ্রম আর উৎসবকে ফিরে পেতে চাই।
আজ আমরা আবার সেই
ভালোবাসা আর প্রশান্তিকে ফিরে পেতে চাই।
আজ আমরা আবার সেই
স্বাস্থ্য আর শরীরের লাবন্যকে ফিরে পেতে চাই।
আজ আমরা আবার সেই
কান্নাহীন আর দীর্ঘশ্বাসহীন জীবনের কাছে যেতে চাই।
আজ আমরা শোষন আর শঠতা
অকালমৃত্যু আর ক্ষুধার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে চাই।

আমাদের সমৃদ্ধ এই বিজ্ঞান নিয়ে
আমাদের অভিজ্ঞতাময় এই শিল্পসম্ভার নিয়ে
আমাদের দূরলক্ষ্য আর সূক্ষ বীক্ষন নিয়ে
আমাদের দ্বন্দ্বময় বেগবান দর্শন নিয়ে
আমরা ফিরে যাবো আমাদের বিশ্বাসের পৃথিবীতে,
আমাদের শ্রম, উৎসব, আনন্দ আর প্রশান্তির পৃথিবীতে।

পরমানুর সঠিক ব্যবহার
আমাদের শস্যের উৎপাদন প্রয়োজন তুল্য কোরে তুলবে।
আমাদের কারখানাগুলো কখনোই হত্যার অস্ত্র তৈরি করবে না।
আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান নিরোগ করবে পৃথিবীকে।
আমাদের মর্যাদার ভিত্তি হবে মেধা, সাহস আর শ্রম।

আমাদের পুরুষেরা সুলতানের ছবির পুরুষদের মতো
স্বাস্থ্যবান, কর্মঠ আর প্রচন্ড পৌরুষদীপ্ত হবে।
আমাদের নারীরা হবে শ্রমবতী, লক্ষীমন্ত আর লাবন্যময়ী।
আমাদের শিশুরা হবে পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পদ।
আমরা শস্য আর স্বাস্থ্যের, সুন্দর আর গৌরবের
কবিতা লিখবো।
আমরা গান গাইবো
আমাদের বসন্ত আর বৃষ্টির বন্দনা কোরে।
আমরা উৎসব করবো শস্যের।
আমরা উৎসব করবো পূর্নিমার।
আমরা উৎসব করবো
আমাদের গৌরবময় মৃত্যু আর বেগবান জীবনের।

কিন্তু—
এই স্বপ্নের জীবনে যাবার পথ আটকে আছে
সামান্য কিছু মানুষ।
অস্ত্ৰ আর সেনা-ছাউনিগুলো তাদের দখলে।
সমাজ পরিচালনার নামে তারা এক ভয়ংকর কারাগার
তৈরি করেছে আমাদের চারপাশে।

তারা ক্ষুধা দিয়ে আমাদের বন্দি করেছে।
তারা বস্ত্ৰহীনতা দিয়ে আমাদের বন্দি করেছে।
তারা গৃহহীনতা দিয়ে আমাদের বন্দি করেছে।
তারা জলুম দিয়ে আমাদের বন্দি করেছে।
বুলেট দিয়ে বন্দি করেছে।

তারা সবচে’ কম শ্ৰম দেয়।
আর সবচে’ বেশি সম্পদ ভোগ করে।
তারা সবচে’ ভালো খাদ্যগুলো খায়
আর সবচে’ দামি পোশাকগুলো পরে।
তাদের পুরুষদের শরীর মেদে আবৃত, কদাকার।
তাদের মেয়েদের মুখের ত্বক দ্যাখা যায় না, প্রসাধনে ঢাকা।
তারা আলস্য আর কর্মহীনতায় কাতর, কুৎসিত।

তাদের ঈর্ষা কুটিলতাময়।
তাদের হিংসা পর্বতপ্ৰমান।
তাদের নির্মমতা ক্ষমাহীন।
তাদের জুলুম অশ্রুতপূর্ব।
তারা আমাদের জিভ কেটে নিতে চায়।
তারা আমাদের চোখ উপড়ে ফেলতে চায়।
তারা আমাদের মেধা বিকৃত করতে চায়।
তারা আমাদের শ্রবন বিধির কোরে দিতে চায়।
তারা আমাদের পেশীগুলো অকেজো কোরে দিতে চায়।
আমাদের সন্তানদেরও তারা চায় গোলাম বানাতে।

একদা অরন্যে
যেভাবে অতিকায় বন্যপ্ৰানী হত্যা কোরে
আমরা অরন্য জীবনে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি,
আজ এইসব অতিকায় কদাকার বন্যমানুষগুলো
নির্মূল কোরে
আমরা আবার সমতার পৃথিবী বানাবো।
সম্পদ আর আনন্দের পৃথিবী বানাবো।
শ্রম আর প্রশান্তির পৃথিবী বানাবো ॥

১০.০৩.৮৩ মুহম্মদপুর ঢাকা

সকল অধ্যায়

১. মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)
২. রচনাকাল : ১৯৭৪
৩. এক গ্লাস অন্ধকার (১৯৯২)
৪. উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯)
৫. ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম (১৯৮১)
৬. মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪)
৭. ছোবল (১৯৮৬)
৮. গল্প (১৯৮৭)
৯. দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
১০. আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
১১. দিন গ্যালো দিন গ্যালো রে
১২. আমরা পাড়ি দেবো
১৩. ছিঁড়িতে না পারি দড়াদড়ি
১৪. ঢোলক বাজাও দোতারা বাজাও
১৫. মাঠে কিষান সুর তুলেছে
১৬. শৃংখল মুক্তির জন্যে কবিতা আজ
১৭. নূর হোসেনের রক্তে লেখা
১৮. ভাঙাচোরা মন, বল
১৯. যদি চোখে আর চোখ রাখা না-ই হয়
২০. ইতর
২১. সোনালি শিশির
২২. উপন্যাসের খসড়া
২৩. নিজস্ব লড়াই
২৪. নিসঙ্গতা
২৫. কৃষ্ণচুড়ার মৃতদেহে একখানি রঙিন ইনভেলাপ
২৬. যেখানে নরকে গোলাপ
২৭. সিগারেট এবং কতিপয় ব্যক্তিগত স্কেচ
২৮. শিরোনামহীন (অসম্পূর্ণ গল্প)
২৯. চলচ্চিত্র কাহিনী
৩০. চিত্রনাট্য
৩১. সম্পাদকীয়-১
৩২. সম্পাদকীয়-২ : উপলিকা সম্পর্কিত উপস্থাপনা
৩৩. সম্পাদকীয়-৩ : প্রবেশক
৩৪. এক দশকের কবিতা
৩৫. সাহিত্যচিন্তা
৩৬. নব্য জসীমিজম ও বহমান লোককাব্যধারা
৩৭. প্রতিক্রিয়া
৩৮. জাতীয় কবিতা পরিষদের ভূমিকা
৩৯. ভিন্নস্বর অন্যমত
৪০. বাংলাদেশের কবিতা সংকলন প্রসঙ্গে
৪১. কাফের লেখকদের সম্পর্কে
৪২. অগ্রদূত ক্রীড়া চক্র : ঘোষনাপত্র
৪৩. অন্যান্য গদ্য
৪৪. উপদ্রুত উপকূল গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে স্বাগত ভাষন
৪৫. নবীন বরন উপলক্ষে
৪৬. শুভেচ্ছা বক্তব্য
৪৭. সাক্ষাৎকার-১
৪৮. সাক্ষাৎকার-২
৪৯. সাক্ষাৎকার-৩
৫০. সাক্ষাৎকার-৪
৫১. সাক্ষাৎকার-৫
৫২. সাক্ষাৎকার-৬
৫৩. সাক্ষাৎকার-৭
৫৪. সাক্ষাৎকার-৮
৫৫. পত্র-০১
৫৬. পত্র-০২
৫৭. পত্র-০৩
৫৮. পত্র-০৪
৫৯. পত্র-০৫
৬০. পত্র-০৬
৬১. পত্র-০৭
৬২. পত্র-০৮
৬৩. পত্ৰ-০৯
৬৪. পত্র-১০
৬৫. পত্র-১১
৬৬. পত্র-১২
৬৭. পত্র-১৩
৬৮. পত্র-১৪
৬৯. পত্র-১৫
৭০. পত্র-১৬
৭১. পত্ৰ-১৭
৭২. প্রস্তুতি পর্বের রচনা (কবিতা)
৭৩. প্রস্তুতি পর্বের রচনা (গল্প)
৭৪. প্রস্তুতি পর্বের রচনা (গদ্য)
৭৫. রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ : জীবনপঞ্জি
৭৬. রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ : গ্রন্থপঞ্জি
৭৭. গ্রন্থ ও রচনাপরিচয়
৭৮. রুদ্র বিষয়ক রচনাপঞ্জি
৭৯. প্রস্তুতি পর্বের রচনা (নাটিকা)
৮০. খুটিনাটি খুনশুটি ও অন্যান্য কবিতা (১৯৯১)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন