অমৃতের সন্ধানে

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

দেহ নয় মন—এই সত্যটি যাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁদের পক্ষেই এই পৃথিবীতে কিছু করা সম্ভব হয়েছে। মন এমন এক পাখি, যা এই দেহখাঁচায় বসবাস করলেও, খাঁচার অধীন নয়। সুস্থ দেহেই সুস্থ মনের অধিষ্ঠান। আবার মন সুস্থ না হলে দেহ সুস্থ হতে পারে না।

মন হলো গৃহস্বামী। গৃহস্বামীর ওপর নির্ভর করে গৃহের অবস্থা। দেহটাকে মন্দির করে রাখব, না আঁস্তাকুড়, তা নির্ভর করছে মনের ওপর। আগে চাই মনের স্বাস্থ্য। মনের তো আর পেশি নেই। ডাম্বেল বারবেল ভাঁজলে মাসকুলার বডি হতে পারে। ওতে মনের কিছু হয় না। মনে একটা তামসিক অহঙ্কার আসে মাত্র। মানুষকে শরীর দেখাবার ইচ্ছা করে। নিজের শরীরের ওপর প্রচণ্ড একটা মোহ আসে। তখন নিজেকে নিয়েই মসগুল। নিজেকে নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত। সর্বক্ষণের দুর্ভাবনা। এই বুঝি বুক কোলাপ্স করল! হাতের গুলি নেমে গেল থাই ঝুলে গেল। এগজিবিশনের শরীর নিয়ে মহাসমস্যা। ওই শরীর দেশের দশের কোন কাজে লাগে না। ওকে বলে তোলা শরীর। ওই শরীর কারোর বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে না।

সুস্থ মনকে বহন করার জন্য যে সুস্থ শরীরের প্রয়োজন, তা এগজিবিশনের শরীর নয়। সেই শরীর হবে প্রভুভক্ত। বিশ্বস্ত, কর্মক্ষম, সুপটু ঘোড়ার মতো। মন সেই ঘোড়ায় আরোহণ করবে। বীর মন পরিচালনা করবে সেই অশ্বকে।

এইরকম একটি শরীর ও মনের জন্য প্রয়োজন যোগ। পশ্চিমী দুনিয়া, যাঁরা পেশীর ব্যায়ামে বিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা যোগের পথ ধরেছেন। দেহের ভিতর দেহের বিভিন্ন কল ও কব্জার কাছে পৌঁছাতে পারে একমাত্র যোগ। বারবেল, ডাম্বেল, নানা যন্ত্রপাতি সব বাইরেটা নিয়েই ব্যস্ত। মানুষের শরীরের পাঁচটা ডেলিকেট যন্ত্র হলো হার্ট, লাংস, কিডনি, লিভার ও জয়েন্টস। আরেকটি সাঙ্ঘাতিক জিনিস হলো, বিভিন্ন গ্ল্যান্ডস। তার চেয়েও সূক্ষ্ম হলো মন বা ‘সাইক’। আমার বিশাল শরীর, রিভস বা স্ট্যালোনের মতো, অথচ আমি পৃথিবীর চাপে পরিবারের চাপে ‘সিজোফ্রেনিক’। ‘প্যারানয়েড’। কি লাভ আমার অমন শরীরে!

যেকোন মুহূর্তে আমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আমার লাংস তার স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে আমাকে অ্যাজমেটিক করে তুলতে পারে। লিভার ক্রমশই কৃশ হতে হতে, আমাকে ইনডাইজেশনের শিকার করে তুলতে পারে। আমার অর্থের অভাব নেই, ভোগের অভাব নেই, কিন্তু আমি? আমার হজমশক্তি নির্বাপিত। আমার কিডনি বিকল। সারা শরীর টক্সিনে ভরে উঠেছে। আমার সুগার। আমার হাইপারটেনসান। আমার থাইরয়েড কাজ করছে না। সারা শরীর ফুলে উঠেছে কোলা ব্যাঙের মতো। আমি আমার মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি, টেনশন আমাকে শেষ করে দিচ্ছে! আমার অগোচরে বেড়ে যাচ্ছে আমার শরীরের সেল ডিভিশন। আমি জানি না, ক্যান্সার এসে আমার কোনখানটা ধরবে!

হঠযোগ, রাজযোগে ছিল সব সমাধান। দুর্ভাগ্য আমাদের, ফুসফুস আমার, আমি শ্বাস নিতে শিখিনি। গ্ল্যান্ডস আমার, তার থেকে আমি শিখিনি সঞ্জীবনী অমৃত নিঃসরণ করাতে। আমারই জয়েন্টস আমার কথা শোনে না। আরথ্রাইটিস, অস্টিয়োম্যালাইসিসে আমি পঙ্গু হয়ে আসছি।

যোগ বলছেন, সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত উঠেছিল, সেই সমুদ্র হলো তোমার দেহাভ্যন্তর, অমৃত হলো প্রাণশক্তি। সেই প্রাণ হলো, তোমার শ্বাস তোমার দেহগত নির্যাস।

সকল অধ্যায়

১. উট হবে না হাঁস হবে!
২. প্ৰতিধ্বনি
৩. পদ্মলোচনের শাঁখ
৪. একটু চেষ্টা
৫. ঠাকুরের কাছে দরবার
৬. কেন
৭. সেই আবেগে
৮. চিরগুরু
৯. কৃপা
১০. রামকৃষ্ণদাস
১১. স্বামীজীর ধর্ম
১২. গৃহীর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
১৩. হাসছে কেমন!
১৪. “পঞ্চভূতের ফাঁদে ব্রহ্ম পড়ে কাঁদে”
১৫. পুরুষ সাবধান
১৬. অংশে অংশ মিলে পূর্ণ
১৭. সাধনা
১৮. লজ্জা
১৯. পথ ও পথিক
২০. “ভক্তি যেন ভয়ে নাহি হয়, পদানত পৃথিবীর কারো কাছে”
২১. ডুডুও খাব টামাকও খাব
২২. কনফুসিয়াস
২৩. “খণ্ডন-ভব-বন্ধন জগ-বন্দন বন্দি তোমায়”
২৪. দস্তুরমতো পথ
২৫. শয়নে স্বপনে জাগরণে
২৬. আপনি আর আমি
২৭. হনুমান
২৮. চাকা
২৯. সরষে পেষাই
৩০. “চাঁদামামা সকলের মামা”
৩১. রামকৃষ্ণ নামের মাস্তুল
৩২. এগিয়ে চল
৩৩. “পাশবদ্ধ জীব পাশমুক্ত শিব”
৩৪. “মন-মত্তকরী”
৩৫. “নরেন শিক্ষে দিবে”
৩৬. দু-ফোঁটা চোখের জল
৩৭. মহাভাব
৩৮. মাপো আর জপো
৩৯. ভাব-ভালবাসা
৪০. বাহাদুর
৪১. আমার কুরুক্ষেত্র
৪২. মুখে বলি ‘হরি’
৪৩. ধর্মকর্ম
৪৪. “আপনাতে আপনি থেকো মন”
৪৫. মূর্ত মহেশ্বর
৪৬. গুরু-চৈতন্য বিজ্ঞান-বিচারী
৪৭. তত্র সর্বাণি তীর্থানি
৪৮. হাঁস
৪৯. হেডমাস্টার
৫০. বিশ্বাস! বিশ্বাস! বিশ্বাস!
৫১. “কপটতা ছাড়ো”
৫২. কবে হবে
৫৩. তোমাদের কী হবে
৫৪. বাছুর
৫৫. ‘সা-রে-মা’তে
৫৬. অরূপরতন
৫৭. বাক্সটাকে সাজাও
৫৮. “আধা-ছানার মণ্ডা”
৫৯. “ডাক ডাক ডাক্তার ডাক”
৬০. নারী ও শ্রীরামকৃষ্ণ
৬১. ভবরোগবৈদ্য
৬২. জ্ঞান ও বিজ্ঞান
৬৩. শ্রীরামকৃষ্ণ-কমণ্ডলু
৬৪. শ্রীরামকৃষ্ণের দণ্ড
৬৫. ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের আসন
৬৬. জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে
৬৭. প্রাণের লণ্ঠনে চৈতন্যের আলো
৬৮. আগে বিশ্বাস তারপর কর্ম
৬৯. সব ফেলে দাও, সব ছেড়ে দাও, উঠে এস
৭০. কেউ দশে, কেউ ছয়ে, কেউ পাঁচে
৭১. “মন্মনা ভব মদ্ভক্তো”
৭২. শ্রীরামকৃষ্ণের বিবেকানন্দ
৭৩. শুধু তোমাকেই চাই
৭৪. সুধাসাগর
৭৫. হাত ধর
৭৬. ব্যাকুলতা
৭৭. দুজনেই মার সখী
৭৮. শ্রীরামকৃষ্ণ বিজ্ঞানীও
৭৯. কাতরে কর করুণা
৮০. ধ্রুবতারা
৮১. কলকাতা এবং রামকৃষ্ণলোক
৮২. প্ৰণাম
৮৩. প্রশ্ন
৮৪. সাবধান
৮৫. কেন চোখের জলে
৮৬. মনের মতো পাগল পেলাম না
৮৭. “যেমন আমড়া, কেবল আঁটি আর চামড়া”
৮৮. মানুষ
৮৯. অমৃতের সন্ধানে
৯০. শরণাগত
৯১. সাধন দুর্গ
৯২. স্বামীজী আসছেন
৯৩. উচ্ছ্বাস থেকে শ্বাসে
৯৪. গানে গানে শ্রীরামকৃষ্ণ
৯৫. রামকৃষ্ণ মিশন
৯৬. পাথরের দেয়ালে পেরেক
৯৭. সার্জেন সাহেব
৯৮. বসে আছি
৯৯. রামকৃষ্ণ ভগবান
১০০. অঙ্কট-বঙ্কট
১০১. “আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল”
১০২. ‘আমি’ এক ঢিপি
১০৩. আমার জীবনে ‘উদ্বোধন’
১০৪. অনুলোম বিলোম
১০৫. মন্ত্র
১০৬. বারটা বাজাও
১০৭. চাকর রাখ
১০৮. খানদানী চাষা
১০৯. আত্মার আত্মহত্যা
১১০. শ্রীরামকৃষ্ণের মথুর
১১১. বিবেকের ছাঁকনি
১১২. ‘রামকৃষ্ণ মেল’
১১৩. “মাতাদেবী, আপনি হন আমাদিগের কালী!”
১১৪. “আমি দেখব”
১১৫. চির নবীন, চির নূতন, ভাস্বর বৈশাখ
১১৬. কুরুক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণ
১১৭. শ্রীরামকৃষ্ণের ‘অস্ত্রভাণ্ডার’
১১৮. গাজীপুরে শ্রীরামকৃষ্ণ
১১৯. বিদ্রোহী ভগবান
১২০. ইঁদুর
১২১. শরণাগতি
১২২. “আমি খাই-দাই আর থাকি, আর আমার মা সব জানেন”
১২৩. “আপনার পূজা আপনি করিলে, এ কেমন লীলা তব!”
১২৪. “ভক্ত্যা মামভিজানাতি”
১২৫. প্ৰেম
১২৬. মা
১২৭. কে তুমি বিবেকানন্দ
১২৮. ভগবানের মুখ
১২৯. ‘হলো না’-টাই ‘হলো’
১৩০. সংস্কার
১৩১. রামকৃষ্ণ-শক্তি
১৩২. এক জোড়া জুতো
১৩৩. বেদভূমিতে শ্রীরামকৃষ্ণ
১৩৪. শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামকৃষ্ণ
১৩৫. অখণ্ডের ঘরের কথা
১৩৬. “কে মা তুমি?”
১৩৭. নিজেকে দেখ
১৩৮. “আমি জানি তুমি কে”
১৩৯. পথের ধর্ম, ধর্মের পথ
১৪০. শ্রীরামকৃষ্ণ-সূর্যালোক
১৪১. মরে গিয়ে বেঁচে ওঠা
১৪২. ভয়ঙ্কর ঠাকুর
১৪৩. মা জানেন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন