অর্পিতা সরকার
ওরে তোরা কেউ আমাকে হাওড়া ব্রিজের ওপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দে। তোরাই আমার প্রকৃত বন্ধু রে। তোরা বলেছিলি ওই সুরভীর প্রেমে কিছুতেই না পড়তে! তবু আমার দু-দুটো বছর নষ্ট হল, ওই মেয়ের পাল্লায় পড়ে। এখন বলে কিনা তোমার যা কেরিয়ারের অবস্থা, তাতে চাকরি তুমি তো জোটাতেই পারবে না। তাই বিয়ের স্বপ্ন দেখাও পাপ।
হ্যাঁরে রাজীব, তুই কোন আক্কেলে সুরভীর সঙ্গে প্রেম করতে শুরু করলি! তোরা না আমার কাছের বন্ধু?
আমি মনুমেন্টের ওপর থেকে লাফ দেব আর বাঁচতে চাই না। কী হবে সুরভী ছাড়া বেঁচে। রাজীব অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে, বন্ধু অর্কর দিকে। অর্কর দু-বছরের প্রেমিকা এখন ওকে ভালো বাসছে। যদিও সুরভীর সাথে রাজীবের এখনও সামনা-সামনি কথা হয়নি। তবে ও জয়েন্টে চান্স পাবার পরে নাকি সুরভী অর্কর কাছে বলেছে, রাজীব তোমার থেকে অনেক বেটার। তোমার থেকে তো রাজীবকে ভালোবাসা ভালো।
অর্ক বলল, আমি ভিক্টোরিয়ার পরীটার ওপর থেকে ঝাঁপ মেরে জীবন শেষ করতে চাই। অনেকক্ষণ ধরে ময়দানে বসে প্রতাপ শুনছিল প্রাণের বন্ধু অর্কর কথা। এতক্ষণ পরে মুখ খুলল প্রতাপ।
কষ্ট করে মনুমেন্টের মাথায় বা ভিক্টোরিয়ার পরী অবধি পৌঁছানো ভীষণ চাপের, তার থেকে তুই এক কাজ কর অর্ক, তুই হাওড়া ব্রিজেই চল আমরা জনা তিনেক গিয়ে তোকে ঠেলে দিয়ে আসি।
অর্ক মিইয়ে পড়া মুখে বলল, লজ্জা করে না, আগের বার ক্রিসমাসেও তো আমার জন্মদিনে পাওয়া টাকায় পার্কস্ট্রিটে ফূর্তি মারলি তোরা। এখন আমার প্রাণ নিতে চাইছিস? আমি মরলে তোদের তিনটেকে মেরে মরব। আসলে গতকাল জয়েন্টের রেজাল্ট বেরিয়েছে। প্রতাপ, রাজীব, অনিরুদ্ধ আর অর্ক চারজন বন্ধুর মধ্যে একজনই একেবারে শেষের দিকে র্যাঙ্ক করেছে সেটা হল ওদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় অর্ক। উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট হলেও জয়েন্টে ধেরিয়েছে ও। তাছাড়া ওর একই ক্লাসে পড়া প্রেমিকা বলেছে, এত বাজে রেজাল্টের কাউকে নাকি ওর পাশে মানায় না।
অর্কর এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বাবাও বলেছে, আদৌ কি অর্ক তার ছেলে?
প্রশ্নটা যেহেতু মায়ের দিকে তাকিয়ে করা হয়েছিল, তাই অর্কর ফিজিক্সের প্রফেসর মা তেড়েফুঁড়ে বলেছিল, এখন তো আমার পুরো বিশ্বাস হল ও তোমারই ছেলে। কারণ ফার্স্ট বার জয়েন্টে তুমি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চান্স পাওনি। তোমাকেও আরেকবার বসতে হয়েছিল জয়েন্টে!
বাবা ধপধপ করে পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মা বোধহয় আজ কলেজে যাবে না।
সকলে জানতে চাইবে অর্ক জয়েন্টে কত র্যাঙ্ক করেছে, আর মা লজ্জায় কিছুই বলতে পারবে না কলিগদের, তাই আজ আর বেরোবে না মা।
এরপরও কি অর্কর বেঁচে থাকার অধিকার আছে?
অনিরুদ্ধ একটু জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিতে পছন্দ করে। ও বলল, দেখ অর্ক, আমার মনে হয় তুই ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রি নিয়ে কোনো একটা কলেজে ভর্তি হয়ে থাক। তারপর না হয় পরের বছর ফুল প্রিপারেসন নিয়ে জয়েন্টে বসবি।
ওদের পাশ দিয়ে একটা নিম্ন বর্ণের আদিবাসী মেয়ে কাগজ কুড়াতে কুড়াতে যাচ্ছিল।
অর্ক তখন মরে যাব… বাঁচতে চাই না বলে কেঁদে চলেছে।
মেয়েটির বয়স বছর বারো কী তেরো। গায়ের রং বেশ বার্নিশ করা কালো, অপুষ্ট শরীর, জট পাকানো চুল… শুধু এক জোড়া ঝকঝকে চোখ। চোখ দুটো এখনও এই নোংরা পৃথিবীর কালিমা মুক্ত।
মেয়েটি পায়ে পায়ে অর্কর কাছে চলে এসেছে। নিজের হাতে আধ খাওয়া পাউরুটিটা দিয়ে মেয়েটি বলল, কাঁদিস না খিদের বড় জ্বালা, আমিও বুঝি রে।
এই নে, এটা খেয়ে নিয়ে অনেকটা জল খেয়ে নে।
মেয়েটা চলে গেল, অর্কর হাতে ওর পাউরুটির টুকরো।
অর্কর কান্নার একটাই মানে বোঝে মেয়েটি, সেটা খিদের জ্বালা।
অদ্ভুত ব্যাপার তো! নিজের খাদ্য নেই, তবুও ও এসেছে আরেকজন ক্ষুধার্ত মানুষের উপকার করতে? অর্ককে ও ক্ষুধার্তই ভেবেছে।
পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের জল মুছে নিয়ে এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে পড়ল অর্ক। বলল, জয়েন্ট-সায়েন্স ক্যানসেল… আমি লিটারেচার নিয়ে পড়ব।
রাজীব, প্রতাপদের মুখ হাঁ হয়ে গেছে। এর থেকে যদি অর্ক মনুমেন্টের মাথা থেকে লাফ দিত তাহলেও হয়তো ওরা এতটা অবাক হত না।
যোধপুর বয়েজের ফার্স্ট বয় শেষপর্যন্ত সিটি কলেজে বাংলা নিয়ে ভর্তি হল।
অর্কর বাবা শুভেন্দু মিত্র আর মা পামেলা মিত্র দুজনেই আপাতত অর্কর সাথে মৌনব্রত পালন করছেন। তাদের একমাত্র সন্তান তাদের ইচ্ছায় জল ঢেলে দিয়ে, পরিবারের মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। শেষপর্যন্ত লোককে বলতে হচ্ছে, অর্ক মিত্র বাংলা নিয়ে পড়ছে! মা বলল এই দেখার আগে নাকি মৃত্যু শ্রেয় ছিল। বাবা বোধহয় সামনের মাসেই নিজের কাউন্সিলিঙের জন্য সুজন সেনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছেন। বাবা নাকি দিনকে দিন ডিপ্রেশনের পেশেন্ট হয়ে যাচ্ছেন, তার কারণও নিজের সন্তান অর্ক।
সুরভী বন্ধুদের কাছে হেসে বলছে, আমি জানতাম অর্ক এমন একটা কাজ করবে। তাই আমি ওকে সরিয়ে দিয়েছি আমার লাইফ থেকে।
অনিরুদ্ধ, প্রতাপ আর রাজীবই সঙ্গে আছে। বাংলা নিয়ে পড়ে ও ডঃ সুকুমার সেন বা শংকরী প্রসাদ বসু হবে, এমন আশা অবশ্য ওরা জাগায়নি। শুধু লঝঝড়ে ভবিষ্যতের একটা ছেলেকে বন্ধু হিসাবে ওরা মেনে নিয়েছে আর কী!
একমাত্র রাজীব ইঞ্জিরিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হয়েছে, বাকিরা মেডিক্যাল-এ। সুরভীও পড়ছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে।
অর্ক প্রায় সন্ধ্যার দিকে গিয়ে বসে থাকে ময়দান চত্বরে। সেই আদিবাসী মেয়েটার নাম ঝুমুর। ওর সাথে এখন অর্কর বেশ পরিচয় হয়ে গেছে। প্লাসটিকের বোতল আর কাগজ কুড়ানোর ফাঁকে সে অর্কর সাথে গল্পও করে। একদিন অর্ক গিয়েও ছিল ঝুমুরের ঝুপড়িতে। বারো বছরের মেয়েকে একদিন অর্ক একটা বড়সড় চকোলেট দিয়েছিল, ঝুমুর চকোলেট পেয়ে প্রথমেই আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিল কিন্তু পরক্ষণেই ওর চোখে নেমে এসেছিল দুঃখের ছায়া।
মেয়েটা অর্ককে বলেছিল, এই লজেনের কত দাম রে?
একশো ত্রিশ টাকা শুনে চকোলেটটা অর্কর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ঝুমুর বলেছিল, তুই বরং এটা দোকানে ফেরত দিয়ে একটু দুধ কিনে দে। তাহলে আমার দু-বছরের ভাইটা আর খিদের জ্বালায় কাঁদবে না।
অর্ক বলেছিল, তোর তো কোনো ভাই বোন নেই রে?
ঝুমুর একমুখ হেসে বলল, আমার মায়ের পেটের ভাই নয়, কিন্তু ওই যে আমাদের পাশের ঘরের আমীন জেঠুর ছেলেটা, ওই তো আমার ভাই। দিন রাত খিদের জ্বালায় কাঁদে রে।
অর্কর দু-চোখে জল এসে গিয়েছিল। নিজেদের লাঞ্চ আর ডিনার টেবিলে প্রতিদিনের অপচয়ের হিসেবটা মনে পড়ে গিয়েছিল নিমেষে।
দু-দিন অর্ক ময়দানে না এলেই ঝুমুর অভিমানী গলায় বলে, কী রে আসিসনি কেন? আমি টাকা চাইব বলে!
অর্কর ওকে টুকিটাকি জিনিস দেওয়া থেকে ঝুমুরের ধারণা হয়েছে অর্ক রাজা লোক।
যদিও অর্কর আর্থিক অবস্থা সত্যিই ঈর্ষণীয় কিন্তু ওর নিজস্ব কিছু নেই এখনও। সব সম্পর্কের একটা টান থাকে। বিশেষ করে যদি সেটা নিঃস্বার্থ হয়। ঝুমুরের পকেটভর্তি কাঁচা আম। বোশেখ মাসের ঝড়ে পড়া আম ও কুড়িয়ে এনেছে অর্কর জন্য। কৃতজ্ঞতা বলেও তো একটা কথা আছে। অর্ক প্রায়ই কিছু না কিছু দেয় ওকে, বিনিময়ে এটুকু না দিলে কী করে চলে! অর্ক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বার্নিশ কালো ঝুমুরের দিকে। একটা অশিক্ষিত, হত দরিদ্র, কৃতজ্ঞতা না বোঝা মেয়েও অদ্ভুতভাবে ফিরিয়ে দিতে জানে! ঋণ শোধের কী আপ্রাণ চেষ্টা!
গ্র্যাজুয়েশনে ফার্স্টক্লাস পেয়েও অর্ক কাউকেই খুশি করতে পারল না। খুশি করার ইচ্ছেটাও ওর আর নেই। কতগুলো নম্বরের সমষ্টি যে জীবন নয়, সেটা অর্ক এখন বুঝেছে। জীবনকে ভীষণ কাছ থেকে দেখে বুঝেছে।
ঝুমুরের সূত্রে ওদের গোষ্ঠীর অনেকের সাথেই পরিচিত হয়েছে অর্ক মিত্র। মাঝে মাঝেই অর্ক ওদের ত্রিপলের নীচের ছোট্ট খেলনা বাড়িতে গিয়ে সময় কাটায়।
অর্ক এগুলির নতুন নাম দিয়েছে খেলনা বাড়ি। খুব ঝড়ে বা অতিবৃষ্টিতে ভেঙে যায় এদের আস্তানা। তবুও এরা বাঁচে। ভেঙে যাওয়া জিনিস দিয়ে নতুন করে তৈরি করে আরেকটা খেলনা বাড়ি। ওরাও মিশে গেছে অর্কর সাথে। ওরা জানেই না অর্কর স্ট্যাটাস আর ওদের জীবনযাত্রায় ঠিক কতটা অমিল! অর্ক কখনো বুঝতেই দেয়নি যে ও ওদের থেকে আলাদা। তবে অর্ককে নিয়ে ঝুমুরের একটা আলাদা গর্ব আছে, যেহেতু ঝুমুরের সাথেই অর্কর বেশি ভাব তাই।
মাসটার্সে ভর্তির পর থেকে একদিনও ঠিকমতো ইউনিভার্সিটি যায়নি অর্ক। যায়নি বললে ভুল বলা হবে, ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ঝাঁকড়া কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে বসে ও এক মনে কী যেন করে। ক্লাস মিস করে রোজই।
স্বাভাবিকভাবেই মাস্টার্সের ফার্স্টটার্মের রেজাল্ট উল্লেখযোগ্য হল না ওর। যদিও অর্কর বাবা-মা আর অর্কর ওপর কোনো ভরসা রাখেননি। স্পয়েল্ড বয় বলেই ধরে নিয়েছেন ওকে।
***
প্রথমেই সমালোচনাটা চোখে পড়ল সুরভীর। বরাবরই ওর একটু বই পড়ার নেশা। ‘বইয়ের দেশ’ ঘেঁটে বইয়ের লিস্ট বানাতে বানাতেই চোখে পড়ল ‘অর্ক মিত্র’র নাম। ‘খেলনা বাড়ির মেয়ে’ উপন্যাসের রাইটার অর্ক মিত্র। নাম আর সারনেম এভাবেই মিলেও তো যায় কখনো কখনো। রাজীবকে ফোন করে জানতে পারল, ওর প্রাক্তনই এই পুরস্কার প্রাপ্ত বইয়ের লেখক।
অর্ক! আনন্দ পুরস্কার পাচ্ছে! ভাবতেই রক্তে শিহরণ খেলে গেল সুরভীর।
বই মেলার আগেই ওর দু-হাজার কপি বই শেষ হয়ে গেছে। সাহিত্যিকদের সমালোচনা বয়ে যাচ্ছে, বেস্ট সেলার হতে যাচ্ছে ‘খেলনা বাড়ির মেয়ে’।
বইটির রিভিউতে লেখা আছে, ঝুমুর বলে একটি মেয়ের জীবন কাহিনি। রাতের অন্ধকারে পাশের বস্তির সাত বছরের রিঙ্কুর ইজ্জত নিতে আসা তিনটে ছেলেকে একা জখম করেছে এই ঝুমুর। কাগজ কুড়ানি ঝুমুরের লোকের ওয়ালেট ফেরত দেবার বর্ণনা আছে ‘খেলনা বাড়ির মেয়ে’ উপন্যাসে। ঝুমুরের যে আসল মা সে নাকি মারা গিয়েছিল ঝুমুর যখন মাত্র তিন দিনের। সেদিন থেকেই ঝুমুর বড় হয়েছিল একজন বৃহন্নলার কাছে। তারপর ঝুমুরের সেই পালিতা মাও অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। এরপর ঝুমুরের অভিভাবক ঝুমুর নিজেই। এতটাই নিখুঁত বর্ণনা আছে ওই বস্তির, যে পাঠকের মনে হচ্ছে তারাও ওদের সাথেই এদের পরব পালন করছে।
অর্কর বাবা আজ চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। মা কলিগদের বলে দিয়েছেন যে তিনি আজ কলেজে আসতে পারবেন না। ছেলে আনন্দ পুরস্কার নিতে যাচ্ছে আর মা কলেজে বসে থাকবে, তা হতে পারে না।
সকালে অর্ক নিজের পড়ার ঘরে বসেছিল। লেখালিখি করছিল মন দিয়ে।
হঠাৎ খুব পরিচিত গলায় কেউ ডাকল, অর্ক…!
চোখ তুলে তাকাতেই দেখল, এক মুখ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুরভী। ওর হাতে অর্কর লেখা ‘খেলনা বাড়ির মেয়ে’ উপন্যাসের দুটো কপি।
খুব ক্যাজুয়ালভাবে সুরভী বলল, একটা আমি আমার কাছে রাখব আর অন্য কপিটা বন্ধু, পরিচিতদের পড়তে দেব। তোমার বই বলে কথা, সকলকে জানাতে হবে না?
অর্ক একটু ক্লান্ত ভাবে হাসল। চোখের সামনে দুবার মানুষের রং-রূপ সব পালটাতে দেখল ও। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে আবার পরিবর্তিত হল মানুষগুলো। নিজের বাবা-মা, আত্মীয় এবং সুরভী।
না রাজীব, অনিরুদ্ধ আর প্রতাপের তেমন পরিবর্তন নেই। জয়েন্টে চান্স পায়নি বলে সেদিন দুঃখ করেছিল ওর সাথেই, আজ অর্ক খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বলে আনন্দে নাচছে ওরা। এত কম বয়সের কোনো সাহিত্যিকের প্রথম বই পুরস্কৃত হচ্ছে এই প্রথম। এটাও অবশ্য আলোচনার বিষয়।
সুরভী আহ্লাদী গলায় বলল, পয়লা বৈশাখ যেদিন আনন্দ পুরস্কারের ঘোষণা হল আর তোমার নাম দেখলাম, সেদিনই ঠিক করেছি গ্র্যান্ড হোটেলে আমিও তোমার সাথে পুরস্কার আনতে যাব।
অর্কর সাথে পুরস্কার আনতে যাওয়ার লিস্টে আর একটা নাম সংযোজিত হল… সুরভী দত্ত।
বৈশাখের একুশ তারিখে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে গ্র্যান্ড হোটেলে। বিখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আনন্দ পুরস্কার তুলে দেবেন অর্কর হাতে।
বাইরে গাড়ি নিয়ে বাবা-মা রেডি। অর্কর জন্য অপেক্ষা করছে সকলেই। সুরভীও এসে উপস্থিত অর্কর বাড়িতে।
অর্ক বাইরে এসে বলল, তোমরা এগোও আমি আসছি। স্যুট না পরে অর্ক পাঞ্জাবি পরেছে দেখে মা বিরক্ত। কিন্তু আজ আর কিছু না বলেই গাড়ি স্টার্ট করলেন অর্কর বাবা ডক্টর শুভেন্দু মিত্র।
ডায়াসে অর্কর ছোট্ট বক্তৃতার ফাঁকেই অর্ক সুরভীর বদলে ডেকে নিয়েছে ওর গল্পের নায়িকা ঝুমুরকে।
ঝুমুরকে আজ বড় পবিত্র লাগছে। একটা সাদা চুড়িদার পরেছে ও। চোখে কোনো জড়তা নেই, শুধু এত বড় জায়গায় এসে একটু ভয় করছে। তবে দাদা যেখানে আছে সেখানে ওর ভয় কীসের?
অর্কর হাতটা চেপে ধরে আছে ‘খেলনা বাড়ির মেয়ে’- নায়িকা। পুরস্কার অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের ভিড়ে ঝুমুর হকচকিয়ে গেছে। তারপর আবার কোনো এক সিনেমা পরিচালক নাকি মুভি করতে চান খেলনা বাড়ির মেয়ের গল্প নিয়ে। আর সেখানে নায়িকার ভূমিকায় ওরা ঝুমুরকেই চাইছেন। আজই সাইন করাতে চাইছেন পরিচালক।
অর্কর হাতটা টেনে ঝুমুর বলল, এই দাদা ভয় করছে রে! অর্কর ওর মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল, ঝুমুর তোর আর দাদার পথ চলা এই সবে শুরু।
সুরভী বুঝে গেছে এই অর্ক আর তার প্রাক্তনের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সুরভী আর চেষ্টা করেও ছুঁতে পারবে না নবীন সাহিত্যিক অর্ক মিত্রকে। অর্কর কলম এখন তলোয়ারের মতোই বিদ্ধ করবে আপামর পাঠক শ্রেণিকে।
অনিরুদ্ধ আস্তে আস্তে বলল, চল অর্ক আজ মনুমেন্টের মাথা থেকে ঝাঁপ দিবি?
অর্ক হেসে উত্তর দিল, অবশ্যই ঝাঁপ দেব। তবে মনুমেন্টের মাথা থেকে নয়, ওর নীচে বসে থাকা ভিখারিদের মধ্যে আর কোনো ঝুমুর আছে কি না খোঁজার জন্য ঝাঁপ তো দিতেই হবে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন