অর্পিতা সরকার
অন্ধকার নিঃস্তব্ধ ঘর, অন্ধকার মানে ইচ্ছাকৃত ভাবেই লাইট জ্বালা হয়নি। হেড ফোনে নিজের পছন্দের একটা গান শুনছিল চয়নিকা। আজকাল কারোর সঙ্গে আর খেজুরে আলাপ করতে মন সাড়া দেয় না।
তন্ময় অফিস থেকে ফিরে নিজের ল্যাপটপে কোনো প্রজেক্টের কাজে ব্যস্ত। তিন্নিটাও কলেজ এক্সকারসনে। বড্ড নিঃসঙ্গ চয়নিকা… কিন্তু এই নিঃসঙ্গতা কি ওর উপযাচিত হয়ে আহ্বান করা নয়!
পাশের ফ্ল্যাটের বউদি আগের দিন শপিং-এ যাবার জন্য কত অনুরোধ করল। না, রাজি হয়নি ও। অথচ এই শপিংয়ের লাল নীল রংগুলো ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকত একসময়। হালকা গোলাপিতে নিজেকে জড়িয়ে যখন কলেজ যেত তখন একজোড়া মুগ্ধ দৃষ্টি চয়নিকাকে লজ্জা জড়ানো সুখ দিত। আজকাল আর রঙিন প্রজাপতির ডাকে উদ্বেল হয় না ওর অভিজ্ঞ মন।
তন্ময়ের সাথে বিয়ের কয়েকমাস পর থেকেই দূরত্ব শুরু… কোনো ঝগড়া, মান-অভিমান নেই, শীতল একটা অলস অনুভূতি ওদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থেকেও কখনো ওদের স্বামী-স্ত্রীর জোর গলার আওয়াজ কেউ শুনতে পায়নি। ওরা যে-কোনো পার্টিতে একসঙ্গেই যায়। মুখে কৃত্রিম হাসির প্রলেপ ঝুলিয়ে অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে ওঠে চয়নিকা আর তন্ময়। আন্তরিক মান-অভিমানের কোনো স্থান নেই, ওদের এই হিমশীতল সম্পর্কে।
দুই
ফোনটা বাজছে অনেকক্ষণ ধরে,
একাকীত্বের নিরবিচ্ছিন্ন সুখানুভূতি থেকে ক্ষণিকের ছুটি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করল চয়নিকা। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে কেউ একজন প্রশ্ন করুক, কেমন আছে চয়নিকা? আবার মনে হয় কী হবে কারোর যান্ত্রিক প্রশ্নে, সাজানো উত্তর ‘ভালো আছি’ বলে! কয়েক পলকের জন্য হৃদস্পন্দন থমকে গেল যেন! ”কেমন আছো চয়নিকা?”
উত্তাল সমুদ্রের একরাশ জলরাশির গম্ভীর গর্জনকে ভ্রুক্ষেপ না করেই যেন সেই গলার স্বর চয়নিকার অন্তরে প্রবেশ করল। ”আমি কলকাতায় চয়নিকা। আসতে পারবে কাল একবার?” অস্ফুটে শুধু একটা আওয়াজ বেরোলো ওর ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে, ”কোথায় যেতে হবে?”
”তোমার সুবিধা মতো… আগের সেই ক্যাফেতে হলে, মন্দ হয় না।” বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা। শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠানামার শব্দরা দ্রুতগামী দুজনেরই।
তিন
অনেকদিন পর সকাল দশটায় কলেজের বদলে অন্য কোনো কারণে বেরোচ্ছে চয়নিকা। একটা জংলিছাপ পিওর সিল্ক পরে, হালকা মেকআপে নিজেকে গুছিয়ে নিল, কিছু সিলভার লাইনের অস্বস্তিকর উপস্থিতিই শুধু জানান দেয় বয়সের হিসাব। কায়দা করে চুলটা আঁচড়ে কয়েক বছর কমানো গেল যা হোক।
এতদিন পর আবার সেই ক্যাফেতেই কেন যে নীলাভ ডাকল। আচ্ছা শুধুই কী নীলাভর ডাক! চয়নিকার তীব্র ইচ্ছাটা কী নির্দোষ? ও নিজেও চাইছিল একবার নীলাভর মুখোমুখি হতে।
নীলাভর সামনে আরেকবার গিয়ে জিজ্ঞেস করতে চায়, সুখের অর্থ কী? নীলাভ কি আদৌ তার দর্শন পেয়েছে? নাকি শেকল ছাড়া পাখি হয়ে উড়তে পারেনি সে নীলাকাশে। বিয়ে করবে না বলেও সেই বাঁধনে নীলাভও কীসের সন্ধান করতে চেয়েছিল?
বিয়ের পর যে ক-বার তন্ময়ের সাথে শারীরিক মিলন হয়েছে সেটাকেও বিবাহিত জীবনের অলিখিত শর্ত বলা চলে। নিরুত্তাপ, শীতল শরীর, কেউ সাড়া দেয়নি কারোর ডাকে। চয়নিকা বা তন্ময় কোনোদিনই জীবনের অপরিহার্য বিষয় ভাবেনি এই দৈহিক মিলনকে।
গলায় মুক্তোর হারের লকটা ঠিক করতে করতেই, সন্ধ্যামাসিকে ডাকল চয়নিকা। সন্ধ্যা এ বাড়ির বহু পুরোনো কাজের মেয়ে। তাই ও জানে তন্ময় কী খেতে পছন্দ করে বা কী করে না। বড্ড বেমানান লাগছিল ওর আজকের এই সাজগোজ। ভীষণ উদ্দেশ্যবিহীন। মনের ভিতর একটা ভয়মিশ্রিত কষ্ট দলা পাকাচ্ছে চয়নিকার। এটা কী শুধু কষ্ট নাকি কষ্ট কষ্ট সুখ? এতবছর পরও নীলাভ একই রকম ভাবে চয়নিকাকে দেখতে চায়, এটাই কী কারণ নয় ওর মনের মধ্যের এই কালবৈশাখীর?
ভাবনাটা নিজের থেকে খুব দ্রুত অপসারিত হল। হঠাৎ মনে হল তিন্নির কথা কি জানে নীলাভ?
চার
একই কলেজে পড়াত নীলাভ আর চয়নিকা। খুব স্বাভাবিক বন্ধুত্ব ছিল দুজনের মধ্যে। হয়তো বাড়তি একটু ভালোলাগা ছিল মিশে। এমনকী চয়নিকার বিয়েতে সমস্ত কলিগের সাথে নিমন্ত্রিত ছিল নীলাভ।
হাতে রক্ত গোলাপের একরাশ শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাঝেই সতৃষ্ণ দৃষ্টিতে চয়নিকার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে নীলাভ স্খলিত গলায় বলেছিল, ”আমাকে একা করে দিলে চয়নিকা?” কিছু একটা অস্বাভাবিকতা ছিল ওর গলায়, সব হারানোর যন্ত্রণা। ঠিক সেই মুহূর্তে চয়নিকার মনে হয়েছিল, খুব নিজের, খুব আপন কাউকে হারিয়ে ফেলল।
পাঁচ
রেলের চাকরিটা মাত্র একমাস হল ছেড়ে দিয়েছে অয়ন। না, চাকরি ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না, সমস্যাটা ছিল ওর নিজের অস্তিত্বের বিকাশে। অয়ন লেখক হতে চায়, সারাদিন চাকরি করে লেখার সময় বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল।
তাছাড়া বহ্নিও বারবার বলছিল, তোমাকে পারতেই হবে। দশটা পাঁচটার চাকরি নাকি অয়নের জন্য নয়।
পরিচয়টা সেই ক্লাস টুয়েলভের বিজনবাবুর কোচিং ক্লাসে। কোচিংয়ের সবচেয়ে সুন্দরী আর ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে ছিল বহ্নি, তাই প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ওকে কেউ না কেউ প্রপোজ করত।
অয়ন কোনোদিন ওই ধার মাড়ায়নি, কারণ যার মা সেলাই করে ওদের দুই ভাইকে মানুষ করছেন, তাদের অন্তত প্রেম করার বিলাসিতা মানায় না। পড়ার বইয়ের বাইরে অয়নের একটাই জগৎ ছিল, গল্প লেখা বা গদ্য কবিতা লেখা, যদিও অয়ন ওর লেখার খাতাটা কোনোদিনই কারোর সামনে বের করেনি।
ওটা ওর একান্ত নিজের, অন্তরের অন্তঃস্থলের গোপন কুঠুরির সমস্ত গভীর নিঃশ্বাসের সাক্ষী ওর লেখার খাতাটা।
ছয়
ক্লাস ফাইভে যেদিন প্রথম খবর পেল ওর বাবা ভিড় ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে কাটা পড়ে মারা গেছেন, যেদিন ওর মা ওদের দুই ভাইকে জড়িয়ে ধরে প্রথম চিৎকার করে কেঁদেছিল, সেদিনই ওরা বড় হয়ে গিয়েছিল এক ঝটকায়। নীলাভ ছিল বছর দুয়েকের বড়। ছোট থেকেই সে বুঝেছিল অনেক টাকা রোজগার করতে হবে, তবে মুদির দোকানে ধার হবে না, দুধওয়ালা অপমান করবে না।
আত্মসম্মান যে দারিদ্রের কাছে হেরে যায় সেটা নীলাভ বুঝেছিল, স্কুলের ফার্স্ট বয় যখন সরস্বতী পুজোর চাঁদা দিতে পারছিল না তখন গোটা ক্লাসের সামনে, জগদীশ স্যার বলেছিলেন, ”শুধু ফার্স্ট হলেই চলে না নীলাভ ভদ্রতাটাও শিখতে হয়। পুজোর চাঁদা না দিয়ে স্কুলে খেতে আসাটা এক ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি।”
নম্বরের প্রতিযোগিতায় হারাতে না পারা ছেলেগুলো চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল কৌতুক। নীলাভ মাটির দিকে স্থির তাকিয়ে ছিল। এক ফোঁটাও জল বেরোয়নি ওর অভাবী শুকনো চোখ দিয়ে।
সাত
অয়ন ছিল কল্পনা বিলাসী, সে ভাবত ছাপার অক্ষরে তার নাম থাকবে, তার কল্পনাগুলোর শামিল হবে হাজার হাজার মানুষ।
রণিতই একমাত্র জানত তার এই লেখার কথা। ওর গল্প পড়ে রণিত খুব প্রশংসাও করত। একদিন কোচিং থেকে ফেরার পথে হঠাৎই অয়নের সামনে এসে দাঁড়ায় বহ্নি, তুমি নাকি লেখো? চূড়ান্ত বিরক্ত হয়ে রণিতের দিকে তাকাতেই দেখল রণিত দন্ত বিকশিত করে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।
তোমার লেখা কী আমি পড়তে পারি? সেই গুরু, দুটো তরুণ হৃদয়ের কল্পনার জাল বোনা। কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে গিয়ে প্রথম ‘তারুণ্য’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় অয়নের একটা ছোট গল্প। বহ্নিই ওকে বলেছিল ম্যাগাজিনটায় গল্প দিতে। যতবার অয়ন ভেবেছে লেখা ছেড়ে দেবে, অনেক ব্যর্থতার গ্লানি মেখে লেখনীতে ছুটি দিতে চেয়েছে ঠিক তখনই বহ্নি ওর অনুপ্রেরণা হয়ে এগিয়ে এসেছে। নিজের শরীরের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে লেখনী সত্তাকে।
কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর, আর বোধহয় বহ্নির থেকে ওর বিয়েটা ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অয়নের দাদা কলেজে চাকুরি নিয়ে এখন বাড়ি ছাড়া।
অয়ন সবে রেলের চাকরিটা পেয়েছে, মা খানিক নিশ্চিন্ত।
অতর্কিতেই আঘাতটা এসেছিল অয়নের জীবনে… ওকে একদম নিঃস্ব করে দিয়ে চিরনিদ্রার দেশে পাড়ি জমালো জীবন সংগ্রামে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া মা। হয়তো মা নিজের ভিতরের ক্ষয়টাকে কোনোদিনই বাইরে আসতে দেয়নি। দুই ছেলের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব বইতে বইতে ক্লান্তির ঘুমটুকুকেও বিসর্জন দিয়েছিল মা।
বাড়ির সকলের অমতে সর্বস্ব ছেড়ে সেদিন অয়নের কাছে চলে এসেছিল বহ্নি। নমঃ নমঃ করে রেজিস্ট্রি ম্যারেজটাও সেরে নিয়েছিল। মাস্টার্সের পর হন্যে হয়ে বহ্নি একটা চাকরি জোগাড় করেছিল। সংসার চলছিল নির্দিষ্ট নিয়মে।
বহ্নিই অয়নের লেখার অনুপ্রেরণা। সারাদিনের একঘেয়েমি অফিসের কাজের পর ও যখন ক্লান্ত অবসন্ন মনে নিজের লেখার ডায়েরিতে অবসাদের আঁকিবুঁকি কাটত তখন বহ্নির শরীরের উত্তপ্ত আগুনই অয়নকে নতুন করে লেখার শব্দ জোগাতো। বহ্নির চোখের উৎসাহী চাহনিই অয়নের উপন্যাসে জীবন্ত চরিত্রের রূপ পেত।
আট
তমালিকাকে সবাই তিন্নি নামেই বেশি চেনে। ছোট্ট থেকে বাবার উদাসীনতা আর মায়ের অত্যন্ত সচেতনতা তমালিকাকে স্বেচ্ছাচারী করে তুলেছে। মায়ের এই শাসনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে ও যখনই বাবার সান্নিধ্যে একটু উষ্ণতা চেয়েছে তখনই পেয়েছে একটা স্বেচ্ছাকৃত উদাসীনতা।
তিন্নিকে মা কিছুতেই ছাড়তে চায়নি এই কলেজের এক্সকারসনে, কিন্তু মা জানে না এই মন্দারমনিতে এসে ও ওদের প্রত্যেকবারের লোক দেখানো ফরেন ট্যুরের থেকে অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছে।
তমালিকা যখন লাল কাঁকড়ার সাথে লুকোচুরি খেলায় ব্যস্ত তখন ও খেয়ালই করেনি দূর থেকে একজোড়া মুগ্ধ দৃষ্টি ওকে লক্ষ্য করছে। তমালিকার ভিজে বালিতে প্রত্যেকটা পদচিহ্ন সে মেপে চলেছে। কোনটাতে তরুণীর, কোনটাতে কিশোরীর উচ্ছ্বাস লুকিয়ে আছে। খুঁজে চলেছে দূরের আকাশনীল টপ আর জিন্স করা মেয়েটার হঠাৎ অন্যমনস্ক হওয়ার কারণটা।
তমালিকা গুনগুনিয়ে উঠছিল মাঝেমাঝে। খুব নিখুঁত সুরে নয়, মনের খুশিতে।
নয়
অয়নের এতদিনের পরিশ্রম মনে হয় বিফলে গেল, ‘উৎসব’ পত্রিকায় বোধহয় ওর উপন্যাসটা মনোনীত হয়নি। নিজের ব্যর্থতার থেকেও বহ্নির কষ্টটা ওকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। বহ্নির ঐকান্তিক ইচ্ছায় এই উপন্যাসটা শুরু করা। প্রতিটা লাইনে মিশে আছে ওর আকাঙ্ক্ষারা। বহ্নি শুনলে খুব আঘাত পাবে। শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছে চরিতার্থ করার জন্য চাকরি ছেড়ে বহ্নির ওপর সংসারের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে এই কল্পনার জাল বোনা কি ঠিক হচ্ছে? ভাবনার অতলে ডুব দেয় অয়ন।
অয়ন আর বহ্নির দৃঢ় ধারণা হয়েছিল দাদা কোনোদিন বিয়ে করবে না। যদি বা করে তাহলে কোনো কলেজের প্রফেসরকেই করবে।কিন্তু হঠাৎ বিনা নোটিশে একই বাসে যাতায়াতের সূত্রে স্বল্প পরিচিত এক সেলস গার্লকে বিয়ে করে বসল নীলাভ। রিসেপসনের পার্টিতে গিয়ে বহ্নিকে সবার আড়ালে দাদা বলেছিল, ”জীবনের সব ইচ্ছে পরিপূর্ণতা লাভ করে না। তাই তো না পাওয়াগুলো এত মূল্যবান।”
দশ
চয়নিকা বা তমালিকা দুজনেই তন্ময়ের বড্ড কাছের, তবু কেন যে ও নিজের আড়ষ্টতার খোলস ভেঙে বেরোতে পারল না এতগুলো বছরেও এটা ওর নিজের কাছেও বিস্ময়। আসলে নিজের স্ত্রী হলে কী হবে চয়নিকা কর্তব্যের বাইরে মানুষ তন্ময়কে জানার চেষ্টাই করেনি কোনোদিন, সে জন্য অবশ্য আংশিকভাবে ও নিজেও দায়ী। মেয়ের সাথেও ওর দূরত্ব তৈরি হয়েছে ওর স্বভাব দোষে। তিন্নি যখন বাবি বলে ওকে জড়িয়ে ধরত ওর পিতৃহৃদয় পূর্ণ হত এক অনাস্বাদিত তৃপ্তিতে। তিন্নি যত বড় হয়েছে ওদের দুজনের মধ্যে একটা অভেদ্য দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে চয়নিকার কারণহীন জেদ।
আজকাল চয়নিকার শীতল ব্যবহার সেই দেওয়ালটাকে মজবুতভাবে গেঁথে দিয়েছে। তন্ময়ের কাছে বাড়িটা এখন একটা লোক দেখানো আবাসন মাত্র। দিন শেষে প্রাণহীন ফেরার জায়গা। তবুও তন্ময় ফেরে, ফিরতে বাধ্য হয়, কিছুটা হয়তো অভ্যাস আর কিছুটা টান।
এগারো
মন্দারমনির নিঃশব্দ পরিবেশে নিস্তরঙ্গ ঢেউয়ের আনাগোনা আনমনে গুনছিল তিন্নি। আচমকা ‘এক্সকিউজমি’ শুনে ঘুরে দাঁড়াতেই উস্কোখুস্কো চুলের গ্রিক ভাস্কর্যের মতো একটা লম্বাটে মুখের ছেলের চোখে দৃষ্টি আটকে গেল তিন্নির। হাই আমি নীলাদ্রি, নীলাদ্রি সান্যাল। এমবিবিএস ফোর্থ ইয়ার স্টুডেন্ট।
তমালিকা রায় খুব সচেতনভাবে নিজের পরিচয় দিয়ে অপরিচিত ছেলেটির কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখল।
বারো
বিয়ের পর চয়নিকা একটা চারচাকা কিনেছিল, কলেজের কলিগদের একটা ছোট্ট ট্রিট দিয়েছিল। নীলাভ আলতো করে বলেছিল, সবার ভিড়ে মিশতে চাই না। তোমার খুশিতে সামিল হতেই পারি কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে। চয়নিকা মজার ছলেই জানতে চেয়েছিল, সেটা কেমন? নীলাভ দৃষ্টি স্থির রেখেই বলেছিল, দূর দিগন্তে হারাতে চাই কয়েক ঘণ্টা শুধু তোমার সাথে। শুধু কী বন্ধুত্বের অধিকারেই সেদিন রাজি হয়েছিল চয়নিকা নীলাভর সাথে লং ড্রাইভে যেতে, নাকি তন্ময়ের সাথে বিবাহিত জীবনের ধরাবাঁধা একঘেয়ে জীবন থেকে বেরিয়ে কয়েক ঘণ্টার মুক্তি চেয়েছিল! বিয়ের পর অন্যের সংসারে বাস করেও নীলাভ আর চয়নিকার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা থেকেই গিয়েছিল।
চয়নিকা বুঝতে পারছিল তন্ময়ের সাথে ওর সম্পর্কটা ঠিক আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মতো নয়। কেন নয় তা ওদের দুজনের কাছেই অজানা।
সেই বৃষ্টির বিকেলের কথাটা ভাবলেই কেমন ভালোলাগায় আর লজ্জায় আবিষ্ট হয়ে যায় চয়নিকা। নীলাভর দু-দিনের জ্বরের কারণে কলেজে অ্যাবসেন্ট ছিল, ফোনে খবরটা পেয়ে চয়নিকা নীলাভর ফ্ল্যাটে চলে যায় কলেজ ছুটির পরে।
উদ্দেশ্য একটাই, ফাঁকা ফ্ল্যাটে মানুষটার আর তো কেউ নেই। তখনও বেশ দুর্বল নীলাভ, চয়নিকাই কফি আর টোস্ট বানিয়ে দিল, ফ্ল্যাটে ঢোকার পর থেকেই অঝোরে আকাশ ফুঁড়ে বৃষ্টি নেমেছে থামতেই চায় না যেন।
বাড়ি ফেরার জন্য ঘন ঘন ঘড়ি দেখছিল চয়নিকা, একটু উত্তপ্ত শরীরে নীলাভ আকর্ষণ করেছিল চয়নিকাকে ওই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে। দুজনের কেউই বুঝতে পারেনি কী ঘটতে চলেছে, দুটো শরীরের মিলন সম্পূর্ণ হয়েছিল অমোঘ নিয়ম মেনে।
চয়নিকা লজ্জায় আরক্ত হয়েছিল, না, দোষ দেয়নি নীলাভকে তবে আর কোনো যোগাযোগ রাখতে চায়নি ও।
বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল নীলাভ, বিফলে গিয়েছিল ওর বৃথা পরিশ্রম।
ও হঠাৎই খবর পেয়েছিল নীলাভ একজন ডিভোর্সি মহিলাকে বিয়ে করেছে, শুনেছিল তার একটা বাচ্চাও আছে। ততদিনে কলেজের চাকরি ছেড়ে কোনো এক বিদেশি কোম্পানি জয়েন করেছিল নীলাভ।
আজ এতগুলো বছর পর হঠাৎ নীলাভর ফোনে স্মৃতির পাতারা বিদ্রোহ করছে। এতদিনের ভুলে থাকার চেষ্টারা ব্যর্থ হয়েছে। নীলাভর গলায় নিজের নামটা শোনায় সেই বিকেলের মাদকতা মিশে ছিল কী!
তেরো
জানে না অয়ন এটা ঠিক করেছে কিনা, বহ্নির সাথে নয় এটা যেন নিজের চির পরিচিত অস্তিত্বের সাথেই লুকোচুরি।
রায়নার এই ব্যক্তিত্ব, কথা বলার ধরন কীভাবে যেন অয়নকে আকর্ষণ করে চলেছে। ‘সময়হীন’ এর এডিটর রায়না। বেশ নাম করা পত্রিকা। অয়নের ‘ফেরিওয়ালা’ উপন্যাসটা ‘উৎসব’ পত্রিকায় রিজেক্ট হবার পর ‘সময়হীনে’ পাঠিয়েছিল অয়ন। সেই সূত্রেই রায়নার সাথে পরিচয়। সময়হীনে ‘ফেরিওয়ালা’ উপন্যাসটা সিলেক্ট হবার পর বার চারেক রায়নার সাথে দেখা হল অয়নের।
বহ্নিই ওর অনুপ্রেরণা, ওর লেখনি শক্তি, বহ্নিই তো ওর সবটা জুড়ে আছে তবুও যে কেন কোন ছিদ্র দিয়ে রায়না ঢুকে পড়েছে, অয়ন বুঝতে পারছে না।
রায়না সিগারেট খায়, কিছুদিন আগেও লিভটুগেদার করত সুব্রত বলে একটা ছেলের সাথে। কোনো কারণে বনিবনা না হওয়ায় এখন সিঙ্গেল থাকে।
ওর ওই চালচলনই অয়নের আকর্ষণের কারণ। রায়না যদি পাহাড়ি খরস্রোতা ঝরনা হয় তো বহ্নি খুব শান্ত শীতল নদী।
চোদ্দো
আজকাল অয়নের এই পার্থক্যটা বেশ চোখে লাগছে বহ্নির। কিছুই লিখছে না তবু স্টাডিতে গিয়ে আঁকিবুকি কাটছে। বহ্নির কাছ থেকে দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। বিস্মিত হয়ে যায় বহ্নি, এত চেনা অয়নের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখে। লেখা নিয়ে অয়নের একাত্ম হয়ে যাওয়া বহ্নির অচেনা নয়। তবে আজকের অয়নের এই চাহনি বড় অচেনা ঠেকছে বহ্নির। অয়নের সব লড়াই, সব হেরে যাওয়ার চিহ্নগুলো বহ্নির কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার। কিন্তু অয়নের এই অপরাধীর মতো দৃষ্টিটা বহ্নির খুব অপরিচিত। কিছু লোকাতে চাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় ও যেন কিছুটা উদ্ভ্রান্ত।
পনেরো
বেশ সময় নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিল চয়নিকা, নীলাভর বলে দেওয়া ক্যাফেতে যখন পৌঁছল সেখানে একটা টেবিলে নীলাভ আনমনে বসে আছে। সামনে একটা কফি মাগ।
বেশ বুড়িয়েছে নীলাভ, ঝুলপির কাছে রুপালি রেখারা বয়েস জানিয়ে দিচ্ছে, চোখে মোটা গ্লাসের চশমাটাও তার সঙ্গ দিচ্ছে।
সে তুলনায় চয়নিকা অন্তত দশ বছর কমিয়ে রেখেছে নিজের নিপুণতায়। সামনে আসতেই সেই অদ্ভুত আড়ষ্টতা। নীলাভর চোখে আগের মতোই বিহ্বলতা। একই রকম আছে চয়নিকা, সেই সুন্দরী, আকর্ষণীয়া।
ক-দিনের ছুটি তোমার? আর হঠাৎ এই তলব?
এমনি দেখতে ইচ্ছা করছিল। গোপা চলে গেল বিনা নোটিশে বছর খানেক হল। গোপা মানে নীলাভর স্ত্রী! চমকে উঠল চয়নিকা। খুব ধীর গলায় গল্প বলার ঢঙে বলছে নীলাভ, ছেলেটা মায়ের বেশি ভক্ত ছিল, আমার মতো কাঠখোট্টা আর কে পছন্দ করবে বল, একতরফা শুনল চয়নিকা। হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যেমন ভাবে বলে, ঠিক সেরকম ভাবে নীলাভ বলে উঠল, তোমার কোনো সন্তান নেই চয়নিকা?
একটাই মেয়ে, ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে, তিন্নি।
আমারও খুব মেয়ের শখ ছিল জানো।
ভিতরে ভিতরে উদ্বেগটা মাথাচাড়া দিচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে চয়নিকার। নীলাভ কোনোদিন জানবে না তিন্নি আসলে ওরই সন্তান। কোনোদিন না, কিছুতেই না।
সেই বিকেলের পর মাত্র দু-মাসের মধ্যে টের পেয়েছিল নিজের গর্ভে ভ্রূণের উপস্থিতি। না, চয়নিকা নিশ্চিত তিন্নি তন্ময়ের ঔরসজাত নয়। তন্ময়ও ঠিক ক্যালকুলেট করতে পারেনি হয়তো, শুধু চয়নিকা জানে।
নীলাভর থুতনির এই নিখুঁত ভাজটা তিন্নির মুখে স্পষ্ট।
ছেলের গল্পই বেশি করল নীলাভ। ফিরে আসার সময় শুধু একটা কথাই বলল ও, মাঝে সাঝে যোগাযোগ করো চয়নিকা, একেবারে ভুলে যেওনা।
ষোলো
না না করে বন্ধুত্বটা হয়েই গেল নীলাদ্রি আর তমালিকার। বেশ মিশুকে ছেলে নীলাদ্রি। তিন্নির সাথে অনর্গল কথা বলে গেল ফেরার পথে। ফোন নম্বর আদান প্রদানও হল। শুধু কী বন্ধুত্ব? নাকি ওরা দুজনেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের বাইরে গিয়ে স্থাপন করতে চাইছে আরও গভীর একটা নাম না জানা সম্পর্ক।
সতেরো
কুয়াশা ঘেরা রাস্তার একটা নিজস্ব রহস্যময়তা আছে, তিনহাত দূরের মানুষ হয়ে যায় অচেনা। পরিচিত মানুষও ঢেকে যায় অপরিচিতের আড়ালে। তন্ময়ের সংসারটা যেন সবসময়ই শীতের কুয়াশার চাদরে ঢাকা, সে আবরণের গাঢ় পরদা সরানো তন্ময়ের সাধ্যের বাইরে। গতকাল সন্ধে থেকেই চয়নিকা এতটাই অন্যমনস্ক রয়েছে যে ফোনে তিন্নির সাথে ঠিক কর কথাও বলল না। রহস্যময়ী চয়নিকার মনের হদিস কোনোদিনই পায়নি তন্ময়। তবে তিন্নিকে ভীষণ মিস করে তন্ময়। বড় বাপ সোহাগী মেয়ে।
আঠারো
এই নীলাদ্রি ছেলেটার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই তিন্নির মধ্যে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে, একটা অচেনা মন খারাপের হাতছানি ছেলেটা মিশুকে হলেও ওর চোখদুটোতে লুকিয়ে রয়েছে শেষ বিকেলের বিষণ্ণতা। যেটাকে ও আপ্রাণ ঢাকা দেবার চেষ্টা করে। এমনকি নিজের সম্পর্কে বলেও খুব কম।
নীলাদ্রির কথা ভাবতে ভাবতেই ট্যাক্সিটা বাড়ির দরজায় হর্ন দিল। বেল বাজাতেই সন্ধ্যা মাসি দরজা খুলল। তিন্নি জানে এই সময়ে বাবা বা মা কেউই বাড়িতে থাকবে না কিন্তু ভিতরে ঢুকেই অবাক! ওর পরিপাটি মা বড্ড অগোছালো ভাবে শুয়ে আছে। তিন্নি আসতেই যেন প্রাণ ফিরে পেল চয়নিকা। তিন্নি অবাক, মা কোনোদিন এত কথা একসাথে বলে না।
উনিশ
হঠাৎ রাস্তায় রায়নাকে দেখে নিজেরই কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল অয়নের, একজনের বাইকে বড্ড বিশ্রীভাবে বসে আছে রায়না। মাঝে মাঝে ওর লেখার মতো ওর চোখ দুটোও অন্ধ হয়ে যায়, ঠিক সেই সময় বহ্নির আগুনে নিজের সংশোধন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আজ বহুদিন পর আবার আগের অয়ন ফিরে যায় বহ্নির কাছে। বহ্নিও বোধহয় আর অকারণে কারণ জানতে চায়নি, কাছে টেনে নেয় চির চেনা অয়নকে।
কুড়ি
আর মাত্র একসপ্তাহ বাকি আছে তিন্নির জন্মদিনের। তন্ময় অফিসের বেশ কিছু কলিগকে নিমন্ত্রণ করে প্রতিবছরই। এবারে নতুন পিএ বহ্নি আর ওর হাজবেন্ডকেও নিমন্ত্রণ জানালো। চয়নিকার কলেজের কয়েকজন আসেন বাদ বাকি তিন্নির বন্ধু।
একুশ
কয়েকদিন ধরেই নীলাভর পুরোনো দিনে ফিরে যেতে মন চাইছে। চয়নিকা যেন সেই আগের মতোই আছে। নিজের ছেলে নীলাদ্রিকে আজকাল বড়ো অচেনা মনে হয় বাবা হয়ে। অন্যমনস্ক, কল্পনার জগতে বিচরণ করে যেন। আজ বিকালে একটা মিষ্টি মেয়ে এসে তার জন্মদিনে নীল আর ওকে আমন্ত্রণ করে গেল। আঙ্কেল বলে কী মিষ্টি করে ডাকছিল, এই কদিনে নীলের যে কলকাতায় বান্ধবী হয়ে গেছে কে জানত! ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্টু হাসি খেলে যায় নীলাভর।
বাইশ
জন্মদিনের দিন সকাল থেকেই চয়নিকার ব্যস্ততার সীমা নেই। কিছুটা যেন নিজেকে আড়াল করার জন্যই এই ব্যস্ততা। মায়ের কথা শুনে তমালিকা আজ একটা আকাশনীল শাড়ি পরেছে। নিজেই মুগ্ধ হল নিজের অবয়ব দেখে।
দরজাটা খুলেই চমকে উঠল চয়নিকা, নীলাভ আজ এ বাড়িতে? ভয়ে গলা শুকিয়ে যাবার জোগাড় চয়নিকার। কিছু বলার আগেই উচ্ছ্বল তিন্নি এসে আঙ্কেল আর ছেলে নীলাদ্রিকে সাদরে ভিতরে নিয়ে এল।
বহ্নি আর অয়নও খানিক আশ্চর্য হল দাদা আর ভাইপোকে এখানের পার্টিতে দেখে। তিন্নিই পরিচয় করিয়ে দিল, নীলাদ্রির সাথে মন্দারমনিতে বন্ধুত্ব হবার গল্পটিও গোচরে আনল।
তন্ময় বেশ সহজভাবেই কথা বলছে ওদের সাথে। তমালিকা তাহলে চয়নিকার মেয়ে? সত্যিই পৃথিবীটা বড় ছোট।
প্রমাদ গুনল চয়নিকা। নীলাদ্রি তিন্নির ঠিক কেমন বন্ধু এর উত্তর খুঁজতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে চয়নিকার মন। একটা অদম্য আক্রোশ চয়নিকার মনে। নীলাভর উপস্থিতি ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। ওর একমাত্র বাঁচার আলোর রেখা তিন্নিকেও কী পর করে দেবে নীলাভ? তিন্নি কী মা কে ঘৃণা করবে? ছোট্ট তিন্নির কচি হাতগুলোর স্পর্শ অনুভব করল চয়নিকা আজ ওর ১৯ বছরের জন্মদিনে। বাঁচতে চায় চয়নিকা একজন মা হয়ে। তন্ময় বা নীলাভ নয় শুধু তিন্নিকে আগলে রাখতে চায় ও। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের উপস্থিতি, চোখের ঘোলাটে দৃষ্টি দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে কী ভীষণ মানসিক দ্বন্দ্ব চলছে চয়নিকার মনে। শুধু একটা বিকেলের ক্ষণিকের দুর্বলতা কী ওর এত বছরের তিলতিল করে সযত্নে গড়ে তোলা বাগানটা তছনচ করে দেবে?
তেইশ
এই বন্ধুত্ব আর কোনো সম্পর্কের দিকে এগোতেই পারে না, কিছুতেই না। কথাগুলো নিজের কানেই বড্ড অচেনা লাগল। নিস্তেজ লাগছে চয়নিকার শরীর, চোখের সামনে তিন্নি, নীলাভ, তন্ময়, নীলাদ্রির মুখগুলো মিশে গিয়ে একটাই অবয়ব সৃষ্টি করছে সেটা ওর নিজের। নিজের পরিচিত মুখটাতে আজ অসংখ্য বলিরেখার ছায়া।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন