প্রেমের সাইডএফেক্ট – অর্পিতা সরকার

অর্পিতা সরকার

আজ নির্ঘাত দীপ্তর চাকরিটা যাবে। যাবেই…

বার দুয়েক যেতে যেতেও যায়নি ঠিকই। কিন্তু আজ ওর চাকরিটা বাঁচাবে এমন ক্ষমতা বোধহয় স্বয়ং ভগবানেরও নেই। মাত্র এক বছর বেসরকারি ফার্মের চাকরিতে গুনে গুনে একুশটা ছুটি নিয়েছে ও। বিবেক অনেকক্ষণ আগে থেকেই ওয়ার্নিং দিচ্ছে, ওরে দীপ্ত আর মায়া বাড়াস না এই কোম্পানির ক্যান্টিনের অনিয়ন সুপ আর ভেজ বার্গারটার। নিজের স্কাইব্লু তোয়ালে ঢাকা চেয়ারটার দিকে করুণ চোখে তাকাল দীপ্ত। কাল থেকেই এখানে নতুন কেউ বসবে, বসবেই। একটু পরেই অভিজিৎ চ্যাটার্জীর পার্সোনাল সেক্রেটারি বিপস এসে নিজের কালার করা চুলের সামনে ঝুঁকে পড়া লাভলক্সটা আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলবেন, মিস্টার দীপ্ত রায় আপনাকে স্যার কল করেছেন, ভেরি আর্জেন্ট।

বিপসের চোখের চাহনিতে থাকবে দীপ্তর চাকরি চলে যাবার পূর্ণ ইঙ্গিত।

কী করবে এবার দীপ্ত! আগের ছ’দিনের ছুটিটা মায়ের অসুস্থতার কারণে নিয়েছিল বলে ম্যানেজ করেছিল। পরের দশদিনটা ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছিল সেই টেঁপিপিসির কোমর ভেঙেছেন কারণ ছিল। আজ তো কোনো কারণ ও দেখাতে পারবে না। অভিজিৎ চ্যাটার্জীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে দীপ্তর বাবা যে ব্যাংকে চাকরি করেন সেই ব্যাংকে। বাবা যে পুরো সুস্থ আছেন সেটা উনি ভালো মতোই হয়তো জানেন।

বাবা কোনোদিনই দীপ্তর কোনো কাজে আসবেন না এটা জানাই ছিল। এখন যদি ওর চাকরিটা চলে যায়, তাহলে দু’বেলা অপদার্থ বলার জন্য বাবা রেডি। উফফ, আর ভাবতে পারছে না দীপ্ত। একটা কাজ করা যেতে পারে, অভিজিৎ স্যার কিছু বলার আগেই যদি স্যারেন্ডার করা যায়! আদৌ কি তাতে কিছু লাভ হবে?

মার্কেটিংয়ের সেলস ম্যানেজার হয়েছে যখন তখন পেট খারাপ হলে কালমেঘের রস খেয়েও অফিসে আসতে হত দীপ্তকে। এখন আর এই আটদিনের টানা ছুটিকে ম্যনেজ করা সম্ভব নয়। পিয়ালী ফোন করছে। এদিকে ওর চাকরি চলে যাচ্ছে আর প্রেমিকার শাসন শুনতে কার ভালো লাগে! ফোনটা ধরেই দীপ্ত বলল, শোন পিয়ালী এতদিন আমার পয়সায় অনেক বিরিয়ানি গিলেছিস, যতদিন পর্যন্ত আমি আবার নতুন চাকরি না পাই ততদিন পর্যন্ত তুই আমার সিগারেটের খরচা দিবি!

ওদিক থেকে ঝরনার মতো হেসে পিয়ালী বলল, জবটা কি আছে! না গেছে?

এখনও নোটিশ আসেনি শুনে পিয়ালী বলল, তোর জন্য জান লড়িয়ে দেবে তোর এই অবলা প্রেমিক। এই জন্যই তোকে বলি দীপ্ত, তোর ওই বসের সেক্রেটারি টিপসটাকে একটু হাতে রাখ।

দীপ্ত বিরক্ত হয়ে বলল, ওর নাম টিপস নয় পিয়ালী, বিপস।

ওই হল, তুই তো আবার মেয়ে দেখলেই শত হাত দূরে থাকিস। এই দুর্দিনে মেয়েরাই সহায় হয়। মেয়েরা মায়ের জাত, তাদের মনটাই যে মারাত্মক সফট হয় রে।

তুই থামবি! শোন পিয়ালী, আমার এই কঠিন অবস্থায় তোর ওই ফেমিনিজমের লেকচারগুলো মারা বন্ধ করবি প্লিজ, তুই প্রথম লাভার যে ওর বয়ফ্রেন্ডকে অন্য মেয়ের সথে ইন্টিমেশি করতে বলছে।

তুই তো আর অভিজিৎ চ্যাটার্জিকে চিনিস না! ভদ্রলোক নিজের বউকেও ভয় পায় না, তো আবার পি এ কে! কাজে সিরিয়াসনেস না থাকলে অভিজিৎ স্যার ওই বিপসকে বিপাসা রানী মিত্র বানাতে বেশি সময় নেবে না বুঝলি।

আহ, দীপ্ত এতগুলো বছরেও কেন যে তোকে মানুষ করতে পারলাম না, মুখে আফসোসের একটা চিক চিক আওয়াজ করে বলল পিয়ালী।

ওকে, জাস্ট কুল বেবী, আমি ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তোর বস চ্যাটার্জিকে একটা চুমু খেতে যাচ্ছি।

বলেই পিয়ালী ফোনটা রেখে দিল।

সত্যি বাবা এই মেয়েকে নিয়ে কী করে যে সংসার করবে দীপ্ত তা ঈশ্বরই জানেন। দীপ্তর মা বলে, পাগলরা নাকি ইউনিটি খোঁজে, তাই দীপ্তর সঙ্গে পিয়ালীর সম্পর্কটা তৈরি হয়েছে। দুজনেই নাকি পুরো পাগল।

সেই স্কুল বয়স থেকে পিয়ালী ওর ঘাড়ে চেপেছে এই আঠাশে এসেও যখন নামেনি তখন আটাত্তরেও যে নামবে না সেটা দীপ্ত ভালোই জানে। পিয়ালীর মা মাঝে মাঝে দীপ্তকে বলেন, আমার মেয়েটা পুরো পাগল। তুমি একটু দেখেশুনে রেখো।

এই মেয়েকে কন্ট্রোল করা নাকি দীপ্তর মতো সাধারণ ছেলের কম্ম! পিয়ালীও দীপ্তর মতোই আইটি সেক্টারে চাকরি করে। তবে অন্য কোম্পানিতে। কী করে যে বসকে ম্যানেজ করে রেখেছে পিয়ালী, এত কামাই করেও কেমন বহাল তবিয়তে অফিস যাচ্ছে পিয়ালী। আর সাতদিন কামাই করেই দীপ্তর প্যান্ট ঢিলে হতে বসেছে।

তবে এবারে অফিস কামাইটাতে দীপ্তর কোনো দোষ নেই। ওই বাউলদার পাল্লায় যদি না পড়ত তাহলে ও কিছুতেই এই ভুল করত না।

সেদিন অফিস ছুটির পর পিয়ালী আর ও মন্টুদার ঘুগনির স্টলে দাঁড়িয়ে শালপাতায় ঘুগনি খাচ্ছিল। এটা ওরা স্কুলের সময় থেকেই খেত।

এখনই বরং একটু লজ্জা লজ্জা করে। যতই হোক চ্যাটার্জি এন্টারপ্রাইজের সেলস ম্যানেজার হয়ে স্যুট টাই পরে ফুটের দোকানে দাঁড়িয়ে ঘুগনি খেতে একটু অস্বস্তি হয় বইকি, কিন্তু পিয়ালী শুনতে তো! সে রীতিমতো লিপস্টিক বাঁচিয়ে পাতাটা চেটে খেয়ে নিতে ওস্তাদ।

ওর পাল্লায় পড়ে, বেশ কিছু পাগলামিতে দীপ্তও ওকে সায় দেয়।

তো সেদিন ঘুগনির দোকানে একটা বাউল তার একতারা নিয়ে টুংটাং করতে করতে হাজির। মন্টুদা রেগে গিয়ে বলল, এখন যাও তো বাপু, সন্ধের সময় আর জ্বালিও না।

বাউল বলল, খুব খিদে পেয়েছে তাই একটা গান শোনাতে এলাম গো।

মন্টুদা একপাতা ঘুগনি আর একটা পাঁউরুটি ধরিয়ে দিয়ে বলল, খেয়ে বিদেয় হও।

লোকটি বলল, আমি ভিক্ষে নিই না।

অবাক চোখে ওই তালিমারা কমলা ড্রেস পরা লম্বাচুলের লোকটাকে দেখছিল দীপ্ত!

যা বাবা! ভিক্ষে করতে বেরিয়ে ভিক্ষে নেয় না এর মানেটা কী?

মন্টুদা বলল, তাহলে এখন ভাগো।

পিয়ালী মন্টুদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার? ইনি কে? মন্টুদা বিরক্ত মুখে বলল, আরে এই ভিড়ের সময় কে ওর বাউল গান শুনবে! বাউল গান না শুনলে উনি খাবেন না। গান না শুনিয়ে পয়সা নিলে নাকি ভিক্ষে করা হয়, তাই তেজ করে খাবার না নিয়েই চলে গেল। পাগল একটা।

দীপ্ত পকেট থেকে দাম মেটাতে গিয়ে দেখল পাশে পিয়ালী নেই।

বাউলটার পিছনে পিছনে ছুটছে।

এক পাগল আর এক পাগলকে ঠিক চিনেছে।

এখন এগারো বছরের প্রেমের দায় বহন করতে দীপ্তও পিয়ালীর পিছনে ছুটল।

উফ! কী কুক্ষণে যে ক্লাস ইলেভেনে এই মেয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল দীপ্ত! হঠাৎ টিফিন টাইমে ক্লাস টেনের পিয়ালী ইলেভেনের ক্লাস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ডেকেছিল দীপ্তকে। দীপ্ত বাইরে আসতেই বলেছিল, তুই ক্রিকেট খেলতে পারিস! একে তো নিচু ক্লাসের মেয়ে এই টোনে কথা বলছে, তার ওপর আবার তুই সম্বোধন, শুনে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল দীপ্তর।

দীপ্ত বলল, পারি, তাতে তোর কী?

পিয়ালী বলল, আমাকে শেখাবি!

দীপ্ত বলেছিল, মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে নেই। কিতকিত খেল গে যা।

ঠোঁট উলটে পিয়ালী বলেছিল, কেন রে ভয় করছে… যদি তোর কাছে শিখে তোকে হারিয়ে দিই বলে! সারাজীবন প্লেয়ার হয়ে না থেকে কোচ হতে শেখ। শেখানোর আনন্দ পাবি বুঝলি। আসলে তোদের মতো পাতি বাঙালি সেন্টিমেন্টাল ছেলেরা ভয়েই শেষ হয়ে গেল।

অপমানটা এসে বিঁধেছিল সতেরোর তাজা রক্তে। সেদিন বিকেল থেকেই পাড়ার মাঠে পিয়ালীকে ক্রিকেট শেখাতে লেগেছিল দীপ্ত। দু-দিন পর থেকেই বন্ধুরা রাগাতে শুরু করেছিল। চারদিকে তখন দীপ্ত আর পিয়ালী লেখার ছড়াছড়ি। দীপ্ত ভয় পেয়ে বলেছিল শোন আমার মা-বাবা শুনলে, আমাকে ঠেঙিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে। আমি আর তোকে ক্রিকেট শেখাতে পারব না।

পিয়ালী বলেছিল, আর যদি তোর বাবা-মায়ের আপত্তি না থাকে তাহলে?

পরের দিন টিউশানি থেকে ফিরে দীপ্ত দেখেছিল, পিয়ালী ওর মায়ের প্রায় কোলের কাছে বসে বসে চানাচুর খাচ্ছে। মাকে বলছে, আন্টি এই যে মেয়েদের নিয়ে লোকে এত হ্যাটা করে এটা তো মেয়েদের দোষেই নাকি! এই যে মেয়েরা ফুটবল, ক্রিকেট দেখলেই এত ভয় পায়! এই যে মেয়েরা সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেয়…

মায়ের খুব নরম জায়গায় গিয়ে আঘাতটা দিয়েছে পিয়ালী। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাবার জন্য মায়েরও আক্ষেপ কম নেই। তাই পিয়ালীর মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলছে, তুই তো দীপ্তর বন্ধু। আমি দীপ্তকে বলে দেব, তোকে যেন ক্রিকেট শেখায়। ওসব পাঁচজনের পাঁচ কথায় কী হবে! লোক তো আছেই বদনাম করার জন্য। সেদিন থেকেই ওই মেয়েকে একটু সমঝে চলে দীপ্ত। বিশেষ করে বাবা যেদিন বলল, পিয়ালীর মতো হতে শেখ। কী জেদ মেয়েটার। ক্রিকেট শিখে তবেই ছাড়বে।

বাবা তো আর জানে না, পিয়ালীর উদ্দেশ্য ক্রিকেট শিখে কোনো টিম জয়েন করা নয়। ওকে টুয়েলভের প্রদীপদা নাকি বলেছিল, মেয়েদের হাতে খুন্তিই মানায়। তাই সেই চ্যালেঞ্জ রাখতেই দীপ্তকে হাঁড়িকাঠে বলি করেছে পিয়ালী। বরাবরই মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে একটু বাধো বাধো লাগে দীপ্তর। তাই ওর মেয়ে বন্ধু কেউ নেই। সত্যি বলতে কী দীপ্তর বন্ধুই কম। ওই ক্রিকেট ডাংগুলির ফাঁকেই পিয়ালীর সাথে দীপ্তর একটা দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।

দীপ্ত যখন MBA-এর সেকেন্ড ইয়ারে তখন একদিন পিয়ালী এসে হাজির ওর কলেজ ক্যান্টিনে। দীপ্তকে ডিরেক্ট বলেছিল, বুঝলি দীপ্ত, সবাই প্রেম করছে। মানে আমার সব বন্ধুরাই প্রেম করছে। তাই ভাবলাম আমারও একটা প্রেম করা উচিত। অন্য কাউকে প্রোপোজ করার আগে তোকেই ফার্স্ট চান্সটা দিতে চাই আরকি। তাই তোকেই প্রোপোজ করলাম। যতই হোক ক্রিকেট শিখিয়ে প্রদীপদার কাছে তুই আমার মাথা উঁচু করে দিয়েছিলি। তারপর ব্যাট ধরার সময় অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তুই কোনো সুযোগের সদ্ব্যবহার করিসনি। দেখেই মনে হল তোকেই ফার্স্ট চান্স দেওয়া উচিত।

কোনো গল্প উপন্যাস বা বন্ধুদের প্রেম কাহিনি বর্ণনার সময়ও এমনভাবে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে কখনো শোনেনি দীপ্ত।

কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিল যেন।

ওর ওই নিশ্চুপ মুখের সুযোগ নিয়েই পিয়ালী বলেছিল, লজ্জার কিছু নেই। আমি তোকে কেন ফেবার করছি এসব ভেবে হীনমন্যতায় ভুগিস না। তোর মতো কেবলুরামকে কেন পছন্দ করলাম, সেটাও আর গভীরে গিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। তাহলে ওই কথাই রইল, আমি আর তুই আজ থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা।

কোনো শপিং মল থেকে বার্গেনিং করে সস্তায় জিনিস পেলে যেমন একটা খুশি খুশি মুখ হয়, পিয়ালীও তেমন মুখ করে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। দীপ্ত তখনও মাছি ঢুকে যাবার মতো হাঁ করে দাঁড়িয়েছিল।

বন্ধুরা এসে আওয়াজ দিল, তুই তো ছুপা রুস্তম বস। দারুণ স্মার্ট একটা মেয়ে যে তোমার গার্লফ্রেন্ড সেটা তো বলোনি। মুখের হাঁ-টা বন্ধ করে আলতো হেসেছিল দীপ্ত। সেদিন থেকেই ওই মারাত্মক পিয়ালী বলে মেয়েটা ভর করেছিল দীপ্তর কাঁধে। বাসে, ট্রেনে, টিকিট লাইনে, সিনেমা হলে সর্বত্রই অবশ্য পিয়ালীই আগে ঢুকে অন্যের সাথে ঝগড়া করে দীপ্তকে সুরক্ষিত করে রেখেছে এতকাল ধরে।

বাউল আর পিয়ালীর পিছনে ছুটে তখন বেশ হাঁপাচ্ছে দীপ্ত।

পিয়ালী বাউলকে ধরেছে।

বাউলের জীবনী রেকর্ড করছে। লোকটির নাম নাকি সদানন্দ। বয়স বছর চল্লিশ হবে। বাড়িতে কাজকর্ম করত না, শুধু বিভিন্ন সাইজের একতারা বানাত আর কোনটায় কেমন সুর ওঠে খুঁজত। সেই থেকেই গানের চর্চা শুরু। বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল সদানন্দরা। যেখানে সুর নেই সেখানে ও টিকতে পারে না। বীরভূম, বাঁকুড়া ঘুরে ঘুরে এই মাস খানেক হল কলকাতায় এসে হাজির হয়েছে সে।

না, মাধুকরী সে করবে না। তার গানের বদলেই সে অন্ন সংগ্রহ করবে। পিয়ালী বলল, আসলে শিল্পীরা একটু মুডি হয় বুঝলি দীপ্ত।

দীপ্তর ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিল ওই যন্ত্রটা হাতে নিয়ে বাজাবে আর ঘুরে ঘুরে গোড়ালির ওপর নাচবে। একবার বাবা-মায়ের সাথে শান্তিনিকেতনে গিয়ে ও দুবার বাজিয়েছিল ওই তারের বাদ্যটা। সেই বাউলটি দীপ্তকে বলেছিল, ওর হাতে সুর আছে। পিয়ালী ওরই মধ্যে বাউলকে বাউলদা বলে ডাকতে শুরু করেছে।

পিয়ালীর ডাক শুনেই হয়তো সদানন্দ গাইতে শুরু করল… পিয়ালী রেকর্ডিং শুরু করল… যদিও এদিকটা একটু নিরিবিলি, তবুও গাড়ির আওয়াজ আসছে বেশ…

”একমনে তোর একতারাতে একটি যে সুর সেইটি বাজা

ফুলবনে তোর একটি কুসুম

তাই নিয়ে তোর ডালি সাজা…”

আমাদের রবি বাউল বলেছেন, সন্তুষ্ট থাকতে। বুঝলে দিদিমণি সন্তুষ্ট থাকতে। অসন্তুষ্ট মন নিয়ে কি সুর বাঁধা যায় গো?

আমাদের এই একতারার একটা তারেও সুর ওঠে গো। বাগানের একটা ফুলেও যে সাজি ভরে ওঠে। কাগজের টাকা বেশি নিয়ে কী আর হবে। পেট ভরাতে যে অত চাইনে গো।

পিয়ালী বলল, রবি বাউল মানে আমাদের রবি ঠাকুর?

বাউলদা হেসে বললেন, হ্যাঁগো, উনিই যে এ গান লিখেছেন।

দীপ্তকে চোখের ইশারায় পিয়ালী বলল, কিছু খাবার নিয়ে আসতে। দীপ্তরও মনে হচ্ছে সত্যিই তো, ওই কাগজের নোটের পিছনে দৌড়ে দৌড়ে জীবনের অর্ধেক কাটিয়ে ফেলবে নাকি! এই তো বাউলদার কেমন স্বাধীন জীবন, বসের চোখ রাঙানি নেই, টার্গেট ফুলফিল করার প্রেসার নেই। শুধু ঘুরে বেড়ান নীল আকাশের নিচে। ছন্দময় অথচ ছন্দবিহীন তার জীবন। গোটা পৃথিবী জুড়েই নাকি তার বসতি। এমন এক ধরাবাধাহীন জীবনের স্বপ্ন যে দীপ্তও দেখত। এই দশটা-পাঁচটার ছকে ফেলা একঘেয়েমির বাইরে।

বাউলদার সামনে ঘুগনি আর পাঁউরুটি ধরতেই উনি বললেন, হ্যাঁ এবার আমি খেতে পারি। তোমরা আমার গান শুনেছো তাই। মাধুকরী আমি করি না। আমার গলার সুর দিয়ে পেটের ক্ষিদে মেটাই। বাউলদা হেসে বলল, বিনিময় প্রথা বুঝলে?

সেই বাউলদাকে সঙ্গে করে পিয়ালী ওর বাড়ি নিয়ে গেছে। পিয়ালীর জেদের কাছে অনেকদিন আগেই ওর বাবা-মা হার মেনেছেন। ও মেয়ে যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে। আর যত দিন না সেটা হচ্ছে ততদিন নিজেও শ্বাস নেবে না, আর দীপ্তকে নিঃশ্বাস ছাড়তে দেবে না।

ভালোবাসা বড় বিষম বস্তু। জীবনে যে না প্রেমে পড়েছে সে উপলব্ধি করতে পারেনি। এই পাগলিকে যে কেন এত ভালোবাসে সেটা ও নিজেও বুঝতে পারে না। পিয়ালীর ওই অভিমান ভরা চোখ দুটো দেখলেই দীপ্ত সব ভুলে যায়। আপাতত অফিস যাক ভাঁড় মে করে গত সাতদিন ধরে বাউলদাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে পিয়ালী আর দীপ্ত।

পিয়ালীর মাসতুতো বোনের ননদ নাকি কোন টিভি চ্যানেলে কাজ করে। প্রথমে তার বাড়ি যাওয়া হল। সে পাঠাল মিউজিক বাংলা চ্যানেলে কাজ করে সুনন্দা ঘোষ বলে এক মহিলার বাড়িতে। কোনোভাবে যদি বাউলদার একটা প্রোগ্রাম টিভি চ্যানেলে দেখানো যায় তাহলেই বাউলদা ফেমাস হবে। পিয়ালীর ধারণা! এই যার গলা, এরকম দুর্দান্ত যার গান সে কিনা মন্টুদার কাছে মুখ নাড়া খাবে? কিছুতেই নয়। রবি ঠাকুরের গান যে বাউল গাইতে পারে তাকে অবহেলা করা নাকি মহাপাপ, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েই সাতদিন ধরে দীপ্তকে নাকে দড়ি দিয়ে ছুটিয়ে বেরিয়েছে।

পিয়ালীর মাথার ভূতগুলো কিছুতেই দীপ্তকে ঘুমোতে দেয় না। মাঝরাতে ফোন করে পিয়ালী বলে, বুঝলি দীপ্ত… বাউলদার জন্য একটা সার্টিনের জামা অর্ডার করলাম। টিভিতে প্রোগ্রাম করবে আর অমন চটা জামা পরে তাই আবার হয়।

এদিকে বাউলদা আবার বলছে, তার নামের দরকার নেই। গোটা বিশ্বই তার ঘর। সর্বত্রই তার নাম ছড়ানো।

যার জন্য এত খাটাখাটুনি সেই বোধহয় ওদের প্ল্যানে জল ঢালবার ব্যবস্থা করছে।

এখন শেষপর্যন্ত ওই পাগলা বাউল টিভিতে মুখ দেখাবে না বললেই তো মহা কেলো।

এত সহজে যে পিয়ালী হাল ছাড়বে না সেটা দীপ্তর থেকে কে আর বেশি বোঝো!

পিয়ালীর এইসব অত্যাচার দীপ্ত হাসি মুখে সহ্য করে চলেছে। বাউলদা বলেছে ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না….’

দীপ্তরও হয়েছে এমনই অবস্থা।

পরের দিন ভোরে উঠেই দীপ্তর কাজ বাউলদাকে বোঝানো। টিভিতে প্রোগ্রাম করানোর জন্য রাজি করানো। পিয়ালী বলেছে, জীবনে নাকি একটা টাস্কও ঠিকঠাক করে করতে পারেনি দীপ্ত, তাই এটা দিয়েই হবে ওর পরীক্ষা। নরম সরম কথার জালে ফাঁসিয়ে বাউলদাকে রাজি করাতেই হবে।

একটা কথা কিছুতেই দীপ্তর মাথায় ঢুকছে না বাউলদা যদি নিজে নিজের পাবলিসিটি না চায় তো পিয়ালীর এত মাথা ব্যথার কারণটা কী?

পিয়ালীকে এই প্রশ্নটা করে লাভ নেই কারণ উত্তর দীপ্তর অজানা নয়। এত হিসেব-নিকেশ জটিল অঙ্ক কষে তো ব্যবসাদাররা জীবন চালায়, পিয়ালী তো অনুভূতির ফেরিওয়ালা, তাই জীবনের জটিলতম অঙ্কগুলোকে ও অমীমাংসিতই রেখে দিতে চায়। সেদিন পিয়ালীর বাবা বললেন, দীপ্ত তুমি কী বলতে পারো, এই বাউল পর্ব কতদিন চলবে?

আঙ্কেলের গলাটা বড্ড অসহায় লেগেছিল দীপ্তর। আহা রে, আঙ্কেল কী জানত তার ঔরসে এমন একটা দজ্জাল মেয়ের জন্ম হবে!

দীপ্ত চোখের ইশারায় জানিয়েছিল, সেও সঠিক জানে না। পিয়ালীর সৃষ্টিকর্তা যেখানে তিমিরে পরে আছেন সেখানে দীপ্ত আলোকপাত করতে পারবে এমন আশা দীপ্তও করে না।

অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর মিউজিক বাংলায় ‘বিলুপ্ত ঐতিহ্য’ বলে একটা অনুষ্ঠান অ্যারেঞ্জ করা সম্ভব হয়েছে সদানন্দ বাউলের জন্য।

আজ সন্ধেতে সেই অনুষ্ঠানের লাইভ হবে। তাই সকালে অফিসে আসতে পেরেছে দীপ্ত। যদিও আজ রেজিগনেশান দিতেই আসা হয়েছে অফিসে। নিজের চেয়ারে বসে কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রাখল দীপ্ত।

এবারের পুজোয় পাঞ্জাবির হিউজ কালেকসান করতে চেয়েছিল চ্যাটার্জী এন্টারপ্রাইজ। বাঙালি ছেলেরা যেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বাঙালিয়ানা বজায় রাখতে পারে। ব্যবসার সাথে সাথে সেটা কার্যকরী করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। প্রজেক্টটা হাতে নেওয়ার পর থেকেই দীপ্তর অবসর সময়ে মাথায় ঘুরছে এর সব প্ল্যান প্রোগ্রাম। পিয়ালীর সাথেও কথা বলেছিল, এই পাঞ্জাবির প্রতি ইয়াং জেনারেশানের আগ্রহ বাড়ানোর প্রচেষ্টা নিয়ে। পিয়ালী বলেছিল, চটা ফাটা জিনস ছাড়া তো কারও অঙ্গে আর কোনো বেশভূষা তো দেখাই যায় না। তোদের কোম্পানি কিন্তু এটা দারুণ ভেবেছে।

এই প্রজেক্ট নিয়ে আর বোধহয় ভাবার প্রয়োজন নেই দীপ্তর। ও জানে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যাক করে দেওয়া হবে ওকে।

বিপস এসে দাঁড়িয়েছে ওর পাশে। মিস্টার দীপ্ত আপনাকে মিস্টার চ্যাটার্জী কল করেছেন।

ফাঁসির হুকুম হয়েই গেছে, এবার শুধু ঝুলে পড়ার অপেক্ষা। কনভারসেশনটা শুরু হবে ঠিক এই ভাবে, দীপ্ত আপনার বয়স কম, অন্য কোম্পানিতে কাজ পেতে আশাকরি আপনার অসুবিধা হবে না। আমি আপনার কেরিয়ার নষ্ট করতে চাই না। আপনি ভীষণ রেসপন্সেবল পার্সেন এই কথাই লেখা থাকবে, যাতে অন্য কোথাও জব পেতে প্রবলেম না হয়। কিন্তু কোনো ইরেসপন্সেবেল সেলস ম্যানেজারকে চ্যাটার্জী এন্টারপ্রাইজ রাখবে না।

দীপ্ত জানে চ্যাটার্জী স্যার ঠিক কী বলবে। গার্মেন্টসের কোম্পানি, সেলসের অনেক চাপ থাকে।

দীপ্ত তবুও শেষ চেষ্টা করে বলল, স্যার এবারের মতো…

স্যার বললেন, তোমার মাসি, পিসি নিশ্চয়ই সকলেই সুস্থ আছেন! সূক্ষ্ম করেই অপমান করতে শুরু করেন বস, তারপর মাত্রা বাড়ান। এটাই ওনার নিজস্ব স্টাইল। বিপস এসে স্যারের কানের কাছে কিছু বললেন। স্যার বললেন, ওহ, ওনাকে বাইরে একটু ওয়েট করতে বলো। এখুনি ওনার ফিঁয়াসে সারাজীবনের মতো ছুটি পেয়ে যাচ্ছে।

প্রমাদ গুনলেন দীপ্ত। যদি বা মেজ মেসোর ম্যাসিভ অ্যাটাক বলে আটকানোর শেষ চেষ্টা করা যেত, তা নয় বাইরে মূর্তিমান সমস্যা নিজেই এসে হাজির। বিপস বলল, স্যার উনি তো আপনার সাথে মিট করতে চাইছেন, আর্জেন্ট।

অগ্নিদৃষ্টিতে একবার দীপ্তর দিকে তাকিয়ে পিয়ালীকে ভিতরে আনতে বললেন।

দীপ্তর পিঠের ভিতর দিয়ে ভয় নামক ঠান্ডা স্রোতটা নামতে শুরু করেছে।

পিয়ালী খুব স্মার্টলি ঢুকল। যদিও স্মার্টনেসটা ওর জন্মগত। খুব চাপের পরিস্থিতিতেও ও কনফিডেন্ট থাকতে পারে। দীপ্তর মতো তোতলায় না। তবে আজকের প্রেসারটা বোঝার ক্ষমতা পিয়ালীরও নেই। এইমাত্র দীপ্তর পেটের গুড়গুড়ে আওয়াজটা জানান দিচ্ছে দীপ্তর মাস গেলে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকার নিশ্চিন্ত জবটা চলে যেতে বসেছে। কাল থেকেই আবার ও সেই রেজাল্টের ফাইল হাতে বেকার।

ও বাবা, একে রামে রক্ষে নেই আবার বাউলদাকে সঙ্গে এনেছে পিয়ালী।

অভিজিৎ স্যারকে নমস্কার জানিয়ে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বলল, কী রে তোর কি কোনোদিন আক্কেল হবে না। আরে তুই তোদের গার্মেন্টস কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জন্য যে ইউনিক চিন্তাভাবনাটা করেছিস সেটা যে তোর বসকে বলছিস, তো মডেলকে আনতেই তো ভুলে গেছিস।

বাউলদাকে এই মুহূর্তে আর চেনাই যাচ্ছে না। মন্টুদা এই অবস্থায় দেখলে হয়তো সব কাজ ফেলে বাউলদার গান শুনতে বসে যেত। বাউলদার দাড়িটাও বেশ পালিশ করা, চুলে একটা বেশ সুন্দর রিবন বাঁধা, একটা দুর্দান্ত সিল্কের পোশাক পরে, হাতে একতারা নিয়ে ঢুলু ঢুলু চোখে পোজ দিচ্ছে।

অভিজিৎ চ্যাটার্জী ঘাবড়ে গেছেন, এমন দৃশ্য খুব কম সৌভাগ্যবানেরই চোখে পড়ে। আজ দীপ্ত তার মধ্যে অন্যতম। এই মুহূর্তে ওর সিংহ রাশির বসও চমকে চোদ্দো হয়ে দীপ্তর দিকে তাকালেন। দীপ্ত আরও অসহায়ভাবে পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে। এক মুহূর্ত আগেও অনুমান করা যায় না পিয়ালী ঠিক কী করতে চলেছে। এটাই বোধহয় এগারো বছরের অভিজ্ঞ প্রেমিক হিসেবে দীপ্তর ব্যর্থতা।

পিয়ালী বলল, আসলে কী হয়েছে স্যার, দীপ্ত বলছিল, এবারের পুজোয় নাকি চ্যাটার্জী এন্টারপ্রাইজ পাঞ্জাবির একটা দুর্দান্ত ইউনিক কালেকসান লঞ্চ করতে চলেছে। তবে ঠিক কীভাবে অ্যাড দেবে সেটাই ঠিক করতে পারছে না। তো সেই সুদূর কেন্দুলি থেকে এই সদানন্দ বাউলকে একদিনের জন্য আমরা ধরে এনেছি। যদি পাঞ্জাবি পরিহিত মডেলের পাশে সেই একঘেয়ে ঢাকের বাজনা না বেজে বাউলের গান হয় তাহলে কিন্তু অ্যাডটা পুরো জমে যাবে। জাস্ট ইমাজিন স্যার, আপনার মডেল এক একটা রঙের পাঞ্জাবি পরছে, আর সদানন্দ বাউল লাল মাটির রাস্তা দিয়ে তার একতারায় বাংলার গান গাইছে। এই জন্যই তো দীপ্ত এতদিন লিভ এ ছিল। কত সাধ্য সাধনা করে তবে দীপ্ত এই সদানন্দ বাউল মহারাজকে আনতে পেরেছে।

অভিজিৎ চ্যাটার্জীর চোখ বলছে, সে পিয়ালীর গুল গিলছে। উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, গ্রেট, ইউনিক আইডিয়া। ব্রাভো দীপ্ত।

পিয়ালী বলল, কিন্তু স্যার একটু প্রবলেম আছে। আজ সন্ধে সাতটায় সদানন্দ বাউলের টিভি প্রোগ্রাম আছে, মিউজিক বাংলায়। তাই উনি বোধহয় আজ বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না।

বাউলদা বোধহয় পিয়ালীর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই বললেন, দীপ্তকে আমি অন্য নজরে দেখি গো। ও যে খোলা আকাশের মতো নির্মল। ওর কোম্পানির কাজ আমি নিশ্চয়ই করে দেব।

বাউল মহারাজাকে দিয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন করাতে দেরি করতে চান না, অভিজিৎ চ্যাটার্জী, যদি এমন ট্যালেন্ট হাত ছাড়া হয়ে যায়, ভয় পাচ্ছেন বোধহয়।

পিয়ালী বলল, স্যার আমাদের একটু আগেই চ্যানেলের স্টুডিওতে পৌঁছতে হবে।

অভিজিৎ স্যার বললেন, নিশ্চয়ই। আমি গাড়ি অ্যারেঞ্জ করে দিচ্ছি। দীপ্ত কাল থেকে নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে ঢুকবেন। সদানন্দ বাউলের সাথে মডেলদের পরিচয়, অ্যাডটা পুরোটা তৈরি করতে হবে কিন্তু আপনাকেই।

কোম্পানির গাড়িতে বাউলদাকে সঙ্গে নিয়ে দীপ্ত আর পিয়ালী চলেছে মিউজিক বাংলার লাইভ শোতে। বাউলদা গাড়ির মধ্যেই গান ধরেছেন,

”পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না,

গোলেমালে গোলেমালে পিরিত করো না…”

সকল অধ্যায়

১. গেম ইজ ওভার – অর্পিতা সরকার
২. টুরিস্ট গাইড – অর্পিতা সরকার
৩. দ্য ড্রিম গার্ল – অর্পিতা সরকার
৪. দীর্ঘ প্রতীক্ষা – অর্পিতা সরকার
৫. পার্কের বেঞ্চটা – অর্পিতা সরকার
৬. স্বপ্নের পাসওয়ার্ড – অর্পিতা সরকার
৭. সেই টেলিফোন – অর্পিতা সরকার
৮. হিসেব না মেলা অঙ্ক – অর্পিতা সরকার
৯. লাইট ক্যামেরা অভিনয় – অর্পিতা সরকার
১০. অহংকার – অর্পিতা সরকার
১১. প্রেমের সাইডএফেক্ট – অর্পিতা সরকার
১২. পিতৃঋণ – অর্পিতা সরকার
১৩. অবয়ব – অর্পিতা সরকার
১৪. মধুচন্দ্রিমা – অর্পিতা সরকার
১৫. ভাড়াবাড়ির আত্মীয়রা – অর্পিতা সরকার
১৬. সময় থমকে গেছে – অর্পিতা সরকার
১৭. তেরোটা বছর – অর্পিতা সরকার
১৮. খেলনা বাড়ির মেয়ে – অর্পিতা সরকার
১৯. প্রসব বেদনা – অর্পিতা সরকার
২০. দেখা না দেখায় মেশা – অর্পিতা সরকার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন