ঘরোয়া ভূত – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

ঘরোয়া ভূত

কতরকমের কত ভূতের কথা আমরা শুনিয়াছি। প্রথম একটি অতি সাধারণ হইতে আরম্ভ করা যাক।

আমাদের গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে একটা পুকুরের পাড়ে প্রকাণ্ড একটা বটগাছ আছে, অনেকে বলে গাছটায় নাকি ভূতের আড্ডা। শ্যাম কবিরাজ একদিন অন্য গ্রামের রুগী দেখিয়া রাত্রে ওই পথ দিয়া বাড়ি ফিরিতেছিল। অন্ধকার রাত্রি। সঙ্গে লোকজন কেহ নাই। যেই সে বটগাছটার তলায় আসিয়াছে, পিছনে শব্দ হইল ‘ঝুপ্’। কবিরাজ আতঙ্কে শিহরিয়া উঠিলেন। ভয়ে ভয়ে চারিদিক চাহিয়া কাহাকেও দেখিতে না পাওয়ায় আবার সাহস করিয়া অগ্রসর হইলেন। অমনি কে যেন ডাকিল, ‘কোবরেজ?’

কবিরাজ পিছন ফিরিয়া বলিল, ‘কে রে?’

আর কোনো সাড়া-শব্দ নাই। দেখিল, প্রকাণ্ড লম্বা কালো রঙের একটা লোক তাহারই দিকে আগাইয়া আসিতেছে। অন্ধকারে ভালো চিনিতে পারা গেল না।

কবিরাজের সাহস একটুখানি বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করিল, ‘কে রে তুই?’

লোকটা অত্যন্ত কাছে আসিয়া বলিল, ‘আঁমি!’

গলার আওয়াজ শুনিয়া কবিরাজের আপাদমস্তক শিহরিয়া উঠিল। অনুনাসিক হইলেও স্পষ্ট পরিষ্কার বুঝিতে পারা গেল, এ কণ্ঠস্বর গ্রামের রতন স্যাকরার। অথচ দিন কুড়ি পঁচিশেক আগে রতন স্যাকরা মরিয়াছে। অসুখের সময় সে তাহারই ঔষধ খাইতেছিল। মৃতদেহটা সে তাহার নিজের চোখে দেখিয়া আসিয়াছে। কবিরাজের মুখ দিয়া আর কথা বাহির হইল না। গলার ভিতরটা পর্যন্ত শুকাইয়া কাঠ হইয়া গেল। মনে মনে ‘রাম রাম’ বলিতে বলিতে সে প্রাণপণে ছুটিতে আরম্ভ করিল।

দৌড়ের অন্ত নাই, পিছনে পদশব্দেরও শেষ নাই। কবিরাজ দু-একবার চাহিয়া দেখিল—নাগাল কতদূর; কিন্তু প্রথমবারের সেই হাতখানেক ব্যবধানকেই প্রাণহীন প্রাণীটি যেন কীসের একটা বাধায় অতিক্রম করিতে পারিতেছিল না।

অন্তরের ভয় এ অবস্থায় কেবল এইটুকুতে, শান্ত হইবার নহে। কাজেই কবিরাজের গতি দ্বিগুণ বৃদ্ধি হইল। পশ্চাতের পদশব্দও সমান তালে আসিতে লাগিল।

খানিকদূর ছুটিয়া আসিয়া যেই সে গ্রামে ঢুকিয়াছে, পশ্চাতে একবারে পিঠের কাছে শুনিল, রতন যেন ‘হি হি’ করিয়া হাসিতেছে! এবার পিছন ফিরিতে কবিরাজের আর সাহস হইল না। ‘বু বু’ করিয়া চিৎকার করিতে করিতে আবার সে ছুটিতে লাগিল।

নিস্তব্ধ গ্রাম। কোথাও কাহারো সাড়াশব্দ নাই। হঠাৎ দেখিল, সম্মুখে একটা লণ্ঠন হাতে লইয়া কে যেন তাহারই দিকে আগাইয়া আসিতেছে। এতক্ষণে কবিরাজের ধড়ে যেন প্রাণ আসিল। পশ্চাতে শোনা গেল, রতন বলিতেছে, ‘তোমার সঙ্গে এঁকটা কঁথা ছিল কোবরেজ, আচ্ছা, আজ যাও।’

লণ্ঠন লইয়া কেদার চাটুয্যে ওপাড়া হইতে দাবা খেলিয়া বাড়ি ফিরিতেছিল। কবিরাজ তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া ঠকঠক করিয়া কাঁপিতে লাগিল।— বাঁচালে ভাই, আজ তুমি আমায় বাঁচালে।’

তাহার পর অনেক কথা। কেদার চাটুয্যে সেদিন তাহাকে লণ্ঠন লইয়া বাড়ি পৌঁছাইয়া দিয়া আসিল।

সেইদিন হইতে সন্ধ্যা হইলে কবিরাজকে কেহ আর বাড়ির বাহির করিতে পারে না। হাজার কাজ থাকিলেও আজকাল দেখি, কবিরাজ অধিকাংশ সময় ঘরের মধ্যে লোকজন জড়ো করিয়া বসিয়া বসিয়া গল্প করে।

ঘরের বাহিরে, এমনি কোথাও হয়তো কোনো মাঠের মাঝে, কিংবা কোনো নদীর ধারে, কিংবা কোনো পথের পাশে ভূতের আস্তানার কথা শুনিতে পাওয়া গিয়াছে। আজ আমরা দৃষ্টান্তস্বরূপ বাহিরের যে গেছো ভূতটির কথা বলিলাম, ইহা অত্যন্ত অকিঞ্চিৎকর। এমনি আরো অনেক অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর কাহিনি আমরা ক্রমশ প্রকাশ করিব।

এইসব বাহিরের ভূতগুলা বরং পথে আছে; সে পথ দিয়া না চলিলেই হয়, কি____ এক রকমের ভূতের কথা আমরা জানি, যাহারা বাড়ির মধ্যেই বাস করে। ইহারাই সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। যে ঘরে দিবারাত্রি মানুষ বাস করিতেছে সেই ঘরেই যদি ভূতের উপদ্রব শুরু হয়, তাহা হইলে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হইয়া উঠিবারই কথা।

এমনি একটি ঘরোয়া ভূতের কাহিনিই আজ আপনাদের বলিব।

দূর সম্পর্কের আমার এক পিসেমশাই মাইল চারেক দূরের একটি গ্রামে ডাক্তারি করেন। ছোটখাটো গ্রামখানিও যেমন, পিসেমশাই আমার ডাক্তারও তেমনি। ক্যাম্বেল হাসপাতালে কম্পাউন্ডারি পরীক্ষায় ফেল করিয়া রানিগঞ্জের কোনো একটা কলিয়ারিতে প্রথমে ডাক্তারি করিতেন, সেখানে তেমন প্রভাব-প্রতিপত্তি না হওয়ায় এই গ্রামখানিতে আসিয়া ডাক্তারখানা খুলিয়া বসিয়াছেন। এখানে পসার তাঁহার বেশ জমিয়া উঠিয়াছে। তিন বছরের প্র্যাকটিসে ইহারই মধ্যে ছোট সেই গ্রামখানির পূর্বদিকে একতলা একটি দালান বাড়ি তৈরি করিয়া পিসিমা এবং ছেলেমেয়ে সকলকে আনিয়া বেশ সুখে স্বচ্ছন্দেই দিন কাটাইতেছেন।

হঠাৎ একদিন শুনিলাম, আমার সেই পিসেমশাই-এর নাকি ভয়ানক অসুখ। আমাকে তিনি একবার দেখিতে চান। খবর যখন পাইলাম, তখন সূর্যাস্ত হইয়াছে। স্ত্রী বলিলেন, ‘যাওয়া তোমার উচিত।’

তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া পড়িলাম। শীতকালের বেলা। গ্রাম পার হইয়া বেশিদূর যাইতে না যাইতেই সন্ধ্যা হইল। অন্ধকার রাত্রি। জোরে জোরে পা চালাইয়া পথ চলিতেছি। সুমুখে ছোট একটি খালের মতো নদী। বর্ষাকাল ছাড়া জল তাহাতে থাকে না। শুকনো বালি ভাঙিয়া পার হইতে হয়। নদীটা পার হইয়া ওপারে কয়েকটা কাঠালগাছের মাঝখান দিয়া পথ। একে অন্ধকার, তাহার উপর গাছের তলায় অন্ধকার যেন বেশ একটুখানি গাঢ় হইয়াছে।

হঠাৎ সেই গাছের তলায় পিসেমশাই-এর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা! একেবারে অবাক হইয়া গিয়া মিনিটখানেক ‘হাঁ’ করিয়া তাঁহার মুখের পানে তাকাইয়া বলিলাম, ‘বা, এই না শুনলাম আপনার ভয়ানক অসুখ। আপনার সঙ্গে দেখা করতেই তো যাচ্ছি।’

পিসেমশাই বলিলেন, ভুল শুনেছিস, অসুখ তোর পিসিমার। তারই জন্যে ভালো একটি ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি শহরে।’

বলিয়া তিনি আমার মুখের পানে অন্ধকারেই কিয়ৎক্ষণ তাকাইয়া রহিলেন, তাহার পর বলিলেন, ‘যা’, তাহলে তোর পিসিমাকেই একবার দেখে আয়। কাছেই রয়েছিস, ওদের তুই দেখাশোনা করিস বাবা।’

বলিয়াই তিনি আর আমার জবাবের অপেক্ষা না করিয়া হনহন করিয়া চলিয়া গেলেন।

গ্রামে পৌঁছিতে রাত্রি হইল। কিন্তু অবাক কাণ্ড! শুনিলাম গত রাত্রে পিসেমশাই মারা গিয়াছেন। ছেলেমেয়েরা আমাকে দেখিয়াই কাঁদিতে লাগিল। বড় মেয়ের বয়স বছর পনেরো। বিবাহ এখনো হয় নাই, নাম—সাবিত্রী। কাঁদিল সে-ই সবার চেয়ে বেশি। দেখিলাম, পিসিমার সত্যই অসুখ। একসঙ্গেই তাঁহারা দু’জনে অসুখে পড়িয়াছিলেন। পিসেমশাই মারা গেলেন।

পিসিমার বাঁচিবার আশা এখনো খুব কম। অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় পড়িয়া আছেন। পিসেমশাইয়ের মৃত্যু সংবাদ এখনো তাঁহাকে জানানো হয় নাই।

আহা বেচারা সাবিত্রী! ওইটুকু মেয়ে ছোট ছোট ভাইবোনগুলিকে লইয়া অত্যন্ত বিব্রত হইয়া পড়িয়াছে। একদিকে মরণাপন্ন মা-র দেখাশোনা, অন্যদিকে ভাইবোনগুলির জন্য রান্না করা। খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো—নাকালের একশেষ!

মনে পড়িল, পিসেমশাই আমায় সেইজন্যই আজ সন্ধ্যায় দেখা দিয়া বলিলেন, ‘কাছেই রয়েছিস, ওদের তুই দেখাশোনা করিস বাবা।’

কথাটার অর্থ তখন বুঝিতে পারি নাই। এতক্ষণে বুঝিলাম, কেন তিনি সে কথা আমায় বলিয়াছিলেন।

পিসেমশাইয়ের সঙ্গে যে আমার দেখা হইয়াছে কাহাকেও তাহা জানাইলাম না। ভাবিলাম কী জানি, নিতান্ত ছেলেমানুষ, ইহারা হয়তো কথাটা শুনিয়া ভয় পাইতে পারে।

সাবিত্রী স্টোভ জ্বালিয়া আমার জন্য চা তৈরি করিতেছে। বলিলাম, ‘বড় কষ্ট তোর সাবিত্রী, কাল তোর বউদিকে এখানে পাঠিয়ে দিই, পিসিমা যতদিন সেরে না ওঠেন ততদিন সে এইখানেই থাক।’

সাবিত্রী হেঁটমুখে চুপ করিয়া কিয়ৎক্ষণ কী যেন ভাবিল। ভাবিয়া ম্লান একটুখানি হাসিয়া বলিল, ‘বউদিরও তো কষ্ট হবে দাদা, তার চেয়ে কাল সকালে তুমি একটি কাজ যদি করতে পার তো বড় ভালো হয়। এ গাঁয়ের একটি চাষাদের মেয়ে সারাদিন আমার কাছে থাকে, কাজকর্ম করে দেয়। রাত্রেও সে থাকতে পারে কিন্তু তার বাড়িতে এক কাকা আছে তাকে বলতে হবে। তুমি যদি তার কাকাকে কাল একবার বুঝিয়ে বলো! গরিব মানুষ, দু-চার টাকা মাইনে পেলেই রাজি হবে। আর একজন ভালো ডাক্তার…।’

ডাক্তার আমি কাল সকালে শহর হইতে লইয়া আসিব ঠিক করিয়াছিলাম। বলিলাম, ‘বেশ, তাই হবে। কিন্তু টাকাকড়ির ব্যবস্থা কেমন করে হচ্ছে…।’

কথাটা আমাকে শেষ করিতে হইল না। সাবিত্রী বলিল, ‘বাবা কিছু রেখে গেছেন। কিন্তু দাদা, মা-ও যদি না বাঁচে।

বলিতে বলিতে ঠোট দুইটি তাহার থর থর করিয়া কাপিয়া উঠিল, চোখ দিয়া দর দর করিয়া জল গড়াইয়া আসিল।

সান্ত্বনা দিবার কী-ই বা আছে! বলিলাম, ‘চুপ কর সাবিত্রী, কাঁদিসনে, পিসিমা সেরে উঠবেন। ভালো একজন ডাক্তার কাল আমি সকালেই নিয়ে আসব।’

বসিয়া বসিয়া কাঁদিলে সাবিত্রীর চলে না। দেখিলাম, সেকথা সে জানে। এত দুঃখেও তৎক্ষণাৎ সে চোখ মুছিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। ওধারে তাহার মাকে একবার দেখিয়া আসিয়া আমায় চা দিতে বসিল।

অনেক রাত্রি পর্যন্ত পিসিমার কাছে আমিই বসিয়াছিলাম। সাবিত্রী এই বয়সেই পাকা গৃহিণী হইয়া পড়িয়াছে। কোন্ সময় যে সে খাবার তৈরি করিয়াছে বুঝিতেই পারি নাই। ভাইবোনগুলিকে খাওয়াইয়া, শোওয়াইয়া আমাকে খাইতে দিয়া নিজে আবার সে মা-র কাছে গিয়া বসিল।

সাবিত্রী ও আমি—দুজনে পালা করিয়া রাত্রি জাগিব কথা হইল। সাবিত্রী প্রথমে রাজি হয় না। বলে, ‘না দাদা, তুমি শোওগে। আমার এসব অভ্যেস হয়ে গেছে।’

হাসিয়া বলিলাম, ‘পাগল!’

পিসিমার কপালে জলের পটি দেওয়া হইয়াছে। মাঝে-মাঝে একবার করিয়া জ্ঞান হয়, আবার কিয়ৎক্ষণ পরেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়েন।

আহারাদির পর সাবিত্রীকে জাগিতে বলিয়া আমি নিজে একটুখানি গড়াইয়া লইলাম। চোখে ঘুম আসিল না। খানিক পরে উঠিয়া পিসিমার কাছে গিয়া বলিলাম, ‘যা সাবিত্রী, ঘুমোগে যা।’

সাবিত্রীর উঠিবার ইচ্ছা ছিল না, তবু তাহাকে উঠাইয়া দিলাম। কত রাত্রি পর্যন্ত রোগিণীর শিয়রে বসিয়াছিলাম জানি না, সাবিত্রী ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকিয়া বলিল, ‘যাও দাদা, এবার তোমার কষ্ট হচ্ছে।’

আমিও উঠিব না, সেও ছাড়িবে না! অবশেষে কী আর করি, সাবিত্রীকে বসাইয়া রাখিয়া আমার যে ঘরে বিছানা হইয়াছিল, সেই ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িলাম। বাহিরে ডিসপেন্সারি ঘরে ঘড়ি ছিল। কটা বাজিয়াছে ঠিক বুঝিলাম না। তবে রাত্রি যে অনেক, তাহাতে আর কোনো সন্দেহ নাই। চারিদিকে সোঁ সোঁ করিয়া বাতাস বহিতেছে। শীতে একেবারে জড়সড় হইয়া লেপ মুড়ি দিয়া শুইয়া পড়িলাম। আলো নিভাইয়া দিয়াছি। ঘর অন্ধকার। দরজা খুলিয়াই রাখিয়াছিলাম। যদি কোনো প্রয়োজনে সাবিত্রী ডাকিতে আসে।

কখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছি জানি না। একে শীতকাল, তায় আবার রাত্রি জাগিয়াছি। ঘুম বোধকরি একটুখানি বেশিই হইয়াছিল। কী যেন একটা স্বপ্ন দেখিতেছিলাম। হঠাৎ কে যেন আমায় একটা ঝাঁকানি দিয়া উঠাইবার চেষ্টা করিল। ঘুমের ঘোরেই বলিলাম, ‘কে?’

সাবিত্রীর কথা আমার মনে ছিল না। আমি যে রোগীর শুশ্রূষা করিতেছি সেকথাও হয়তো স্বপ্নের ঝোঁকে ভুলিয়া গিয়াছিলাম। আবার কে যেন আমায় জাগাইবার জন্য নাড়া দিল। এবার ঘুমটা আমার একটুখানি ভাঙিল বলিয়া মনে হয়। হাত বাড়াইতেই একটা হাতের সঙ্গে আমার হাত ঠেকিল। আধঘুমন্ত অবস্থায় হাতটা চাপিয়া ধরিয়া নিজের দিকে টানিয়া আনিবার চেষ্টা করিলাম, কিন্তু পারিলাম না।

এইবার ঘুম ভাঙিয়া গেল। অন্ধকার ঘর। হাতে চুড়ি নাই, সুতরাং সাবিত্রী নয় সেকথা সত্য। শক্ত পুরুষের হাত বলিয়া মনে হইল। ডান হাতে হাতখানা চাপিয়া ধরিয়া বাঁহাত দিয়া একটু একটু করিয়া অনুভব করিতে করিতে তাহার কনুই পর্যন্ত আগাইয়া গেলাম। তাহার পর হাত দিতে গিয়া দেখি—ফাঁকা। কনুই পর্যন্ত মাত্র একখানা হাত। লেপের মধ্যেও ভয়ে একেবারে রোমাঞ্চিত হইয়া শুকাইয়া কাঠ হইয়া গেলাম। মাথা হইতে পা পর্যন্ত ঝিমঝিম করিতে লাগিল।

চিৎকার করিয়া ডাকিয়া উঠিলাম, ‘সাবিত্রী।’

বুঝিলাম, ঘরে রোগী রহিয়াছে। চিৎকার করা উচিত নয়। অথচ অন্ধকারে বিছানা হইতে উঠিয়া যে রোগীর ঘরে যাইব—তাহারও ক্ষমতা নাই। অতি কষ্টে উঠিতে হইল। মরিবাঁচি করিয়া একরকম চোখ বুজিয়াই রোগীর ঘরে গিয়া দেখি, মা-র শয্যার পাশে সাবিত্রী মাথা লুটাইয়া বোধকরি রাত্রি জাগরণের ক্লান্তির জন্যই ঘুমাইয়া পড়িয়াছে।

পিসিমার জ্ঞান হঠাৎ কখন হইয়াছে কে জানে। অনুচ্চ এবং অস্পষ্টকণ্ঠে তিনি বলিতেছেন, ‘জল! জল! একটু জল।’

কে জাগাইয়াছে না বুঝিলেও আমায় যে কেন জাগানো হইয়াছে বুঝিলাম।

সকল অধ্যায়

১. ভয় – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
২. প্রেতপুরী – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৩. ভয়ঙ্কর – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৪. ভূতুড়ে বই – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৫. কি? – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৬. নমস্কার – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৭. অসম্ভব – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৮. ন্যাড়া নন্দী – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
৯. ভূতের গল্প – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১০. ভীষণ কাণ্ড – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১১. যবনিকা – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১২. আতঙ্ক – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৩. প্রেতিনী – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৪. জীবন নদীর তীরে – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৫. সত্যি নয় – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৬. ভূতুড়ে খাদ – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৭. ঘরোয়া ভূত – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৮. কে তুমি? – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন