ত্রয়োদশ অধিকরণ (দুর্গলম্ভোপায়)

ত্রয়োদশ অধিকরণ ॥ প্রকরণ ১৭১-১৭৬

দুর্গলম্ভোপায় তথা শত্রুর দুর্গ (নগর) দখলের কৌশলনামক ত্রয়োদশ অধিকরণের ছয়টি প্রকরণ বা আলোচ্য বিষয় হলো—

১. উপজাত তথা শত্রুপক্ষের বিভেদ সাধন ২. বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশে শত্রুর নগর হতে নিষ্ক্রমণ ৩. অপসর্গ তথা বিভিন্ন ছদ্মবেশে গুপ্তচরদের শত্রু দেশে অবস্থান ৪. পর্যুপাসনকর্ম তথা সৈন্যদের মাধ্যমে শত্রুর নগরবেষ্টন ৫. অবমর্দ তথা শত্রুর নগর দখল ৬. লব্ধপ্রশমন তথা দখলকৃত নগরে শান্তি স্থাপন

প্রথম অধ্যায় ॥ ১৭১ প্রকরণ ॥

এই অধ্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে উপজাপ। উপজাপ অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে শত্রুপক্ষের লোকদের বিভাজিতকরণ। এ পর্যায়ে রাজা কোন কোন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের লোকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাবে, সেসব বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।

১৩-০১-০১ শত্রুর গ্রামস্থ লোকদের বশীভূতকরণের নিমিত্ত রাজা নিজেকে সর্বজ্ঞাতা এবং দেবতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে উপস্থাপন করে তার প্রতি তাদের উৎসাহিত এবং উদ্বিগ্ন করাবেন। নিম্নোক্ত উপায় অবলম্বনের মাধমে তিনি নিজেকে সর্বজ্ঞাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস গ্রহণ করবেন—

১. তিনি গুপ্তচরদের মাধ্যমে পদস্থ রাজপুরুষদের পারিবারিক গোপনীয়তা সম্পর্কে অবহিত হয়ে তা প্রকাশ করবেন। ২. তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের সম্পর্কে পরিজ্ঞাত হয়ে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন। ৩. তাকে প্রদেয় উপঢৌকনের বিষয়ে পরিজ্ঞাত হয়ে প্রাপ্তির পূর্বেই সে বিষয়ে সকলকে অবহিত করবেন। ৪. বিদেশে সংঘটিত বিশেষ বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে পূর্বাহ্নে পরিজ্ঞাত হয়ে সংবাদপ্রাপ্তির পূর্বেই তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন। এভাবেই রাজার এহেন গুণসমূহ পর্যবেক্ষণ করে শত্রু দেশের লোকেরা তাকে সর্বজ্ঞাতা হিসেবে বিবেচনা করবে।

১৩-০১-০২ নিম্নোক্ত উপায়ে রাজা তার সঙ্গে দেবতাদের যোগসূত্রের বিষয়টি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস গ্রহণ করবেন—

১. রাজার গুপ্তচররা অগ্নিদেবতার মন্দিরে প্রবেশ করত প্রতিমার ভেতর অবস্থান করবে, অতঃপর রাজা মন্দিরে উপস্থিত হয়ে দেবতারূপী উক্ত গুপ্তচরদের সঙ্গে কথা বলবেন। রাজার সঙ্গে দেব প্রতিমার এহেন কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করে উপস্থিত লোকেরা বিস্মিত হবেন এবং রাজার সঙ্গে দেবতাদের সম্পৃক্তার বিষয়টি স্বীকার করে তার ক্ষমতার প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করবে। ২. গুপ্তচররা সর্প ও বরুণ দেবতার বেশধারণ করে জলাশয় থেকে উত্থিত হবে এবং রাজা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন ও তাদের পূজা করবেন। ৩. গুপ্তচররা প্রতারণার মাধ্যমে কোনো জলাশয় হতে রাত্রিতে যাদুবিদ্যার মাধ্যমে অগ্নিমাল্য প্রদর্শন করে এসব দেবতাদের কীর্তি বলে প্রচার করবে। ৪. পানির নিচে মজবুত ভিত্তিস্থাপন করে রাজা তার উপর দাঁড়িয়ে থেকে একথা প্রমাণ করাবেন যে স্রোতময় জলের উপরও তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম। ৫. রাজার গুপ্তচররা পানি নিরোধক বস্ত্রাদি পরিধান করে তার উপর কাঁকড়া, কুমির, শুশুক বা উদ্রমাছের তেল লেপন করে জলাশয়ে বিচরণ করবে এবং সর্প ও বরুণ দেবতার কন্যাদের স্বরে রাজার সঙ্গে কথা বলবে। ৬. রাজা ক্ষুব্ধ হলে ঔষধির মাধ্যমে নিজের মুখ থেকে ধোঁয়া বা অগ্নি উদ্গীরণ করে তা দেবতার কীর্তি বলে প্রচার করবেন।

১৩-০১-০৩ রাজার নিযুক্ত সহায়তাকারী, জ্যোতির্বিদ, পুরাণ কথক, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ভাগ্যবক্তারা দেশ ও বিদেশের সর্বত্র তার এ সব গুণাবলি প্রচার করবে এবং এই মর্মে মন্তব্য বা ভবিষ্যত বাণী প্রকাশ করবে যে এসব গুণাবলির কারণে রাজা বিজিত হবে এবং শত্রুপক্ষ বিপর্যস্ত হবে। তারা শত্রুপক্ষের পতনের নমুনা হিসেবে যাদুবিদ্যার মাধ্যমে কৌশলে আকাশে উল্কাপাত ঘটাবে।

১৩-০১-০৪ দূতের ছদ্মবেশধারী গুপ্তচররা শত্রুপক্ষের মুখ্যব্যক্তিদের একথা বলে পরিতুষ্ট করবে যে রাজা তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। অতঃপর তারা তাদের কাছে স্বীয় রাজার শক্তি সামর্থের কথা উপস্থাপন করে শত্রুপক্ষের দুর্বল দিকগুলো উদ্ধৃত করবে এবং একথাও বলবে যে তারা রাজার অধীনস্থ হলে তুলনামূলকভাবে অধিক নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হবেন। প্রয়োজনে বিপত্তিকালে রাজা তাদের পরিবার পরিজনকেও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সব ধরনের সহায়তা প্ৰদান করবেন। এভাবে দূতরূপী গুপ্তচররা শত্রুনৃপতির উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের কাছে স্বীয় রাজার মাহাত্ম্য প্রচার করে তাদের বশীভূতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

১৩-০১-০৫ পূর্বোক্ত উপায়ের মতো রাজা শত্রুপক্ষের রাজপুরুষদের মধ্যে পারস্পরিক ভেদ সৃষ্টিতে সচেষ্ট থাকবেন। এছাড়াও তিনি অন্যভাবেও শত্রু নৃপতির সঙ্গে তার অমাত্যদের দূরত্ব সৃষ্টির প্রয়াস গ্রহণ করবেন—

১. শত্রু নৃপতির আজ্ঞাবহ অমাত্যদের স্বীয় নৃপতির প্রতি বিদ্বেষ উৎপাদন ও নিজের প্রতি অনুকূলিত করার প্রত্যয়ে রাজা তাদের এই বলে কটাক্ষ করবেন যে গাধারা যেমন সারা জীবন পরিশ্রম করেও কিছু পায় না, তারাও তেমনি গাধার মতো জীবনভর প্রভুর জন্য শ্রম ব্যয় করবেন কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পাবেন না। এভাবে কটাক্ষপূর্ণ কথার মাধ্যমে রাজা তাদের প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উৎপাদন করাবেন।

২. শত্রুপক্ষের সৈনিকদের রাজা একথা বলে স্বীয় নৃপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করবেন যে, লাঠি দিয়ে গাছে আঘাতের মাধ্যমে যে ফল নিপতিত হয় তা যেমন লাঠির ভোগ্য না হয়ে অন্যের ভোগ্য হয়, তেমনি সৈনিকরা যুদ্ধের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জন করবে তার সুফলও ভোগ করবে তাদের নৃপতি।

৩. শত্রুপক্ষের যেসব রাজপুরুষ স্বীয় নৃপতির ভয়ে শঙ্কিত থাকবে রাজা তাদের যূথভ্রষ্ট মেষের সাথে তুলনা করে একথা বলবেন যে, যূথভ্রষ্ট মেষ যেমন নিরাশার গহ্বরে পতিত হয়ে কারো দ্বারা ধৃত বা নিহত হয়ে থাকে তেমনি উদ্বিগ্ন অমাত্যরাও সহজে শত্রুর দ্বারা ঘাতিত হতে পারে, এ কথা বলে তিনি তাদের স্বীয় নৃপতির সান্নিধ্য হতে বিচ্ছিন্ন হতে প্ররোচিত করবেন।

৪. শত্রুর যে সব অমাত্য স্বীয় প্রভু কর্তৃক অপমানিত হবে, রাজা তাদের বজ্রপাতে হত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করে এ কথা বলবেন যে সম্মানের যোগ্য রাজপুরুষদের স্বীয় প্রভু কর্তৃক অপমানিত হওয়া বজ্রাঘাতের সমতুল্য। এ কথা বলে তিনি তাদের মন শত্রু নৃপতির বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলবেন।

৫. শত্রু নৃপতির ভগ্ন হৃদয়ের রাজপুরুষদের রাজা ফলহীন বেত বা জলহীন মেঘের সাথে তুলনা করে স্বীয় প্রভুর সঙ্গে ভেদ সৃষ্টিতে প্ররোচিত করবেন।

৬. যে রাজপুরুষরা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শত্রুনৃপতির কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার পেয়ে তা পূজ্যরূপে গণ্য করবেন, তাদের রাজা এ কথা বলে স্বীয় নৃপতির বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবেন যে স্বর্ণলঙ্কারগুলো আদতে স্ত্রীদ্বেষকারী স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত স্বর্ণালঙ্কার তুল্য।

৭. শত্রুনৃপতি কর্তৃক যেসব রাজপুরুষ প্রতারিত হবে, রাজা তাদের এ কথা বলে স্বীয় নৃপতির বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবেন যে, তারা নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও প্রভু কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন বিধায় তারা স্বীয় নৃপতি হতে বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

৮. যেসব রাজপুরুষ শত্রু নৃপতির উপকারে নিযুক্ত থাকবে, তিনি তাদের একথা বলে স্বীয় প্রভুর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবেন যে, তাদের অবস্থা পীলু নামক তিক্তরসযুক্ত ফল ভক্ষণের মতো অথবা গর্দভীর দুগ্ধ মন্থনের মতো, যেখান থেকে শত মন্থনেও দুগ্ধ নিসৃত হয় না।

১৩-০১-০৬ এভাবে প্ররোচিত হয়ে শত্রুপক্ষের যেসব রাজপুরুষ স্বীয় নৃপতিকে পরিত্যাগ করে রাজার পক্ষে যোগ দিবেন, রাজা তাদের সম্মান ও আর্থিক সহায়তা প্রদানপূর্বক যথার্থভাবে পুনর্বাসিত করবেন। তাদের খাদ্য বা সম্পদের সংকট হলে তিনি তাদের অনুগৃহীত করবেন। আত্মমর্যদার কারণে তারা যদি রাজা কর্তৃক অনুগৃহীত হতে সঙ্কোচবোধ করেন, সেক্ষেত্রে রাজা তাদের স্ত্রী বা সন্তানদের অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করবেন। শত্রুর রাজ্যে দুর্ভিক্ষ, চোর ভয় বা বন্যদের উপদ্রব দেখা দিলে সেখানকার লোকদের স্বীয় নৃপতিকে পরিত্যাগ করতে রাজার গুপ্তচররা উস্কানি প্রদানার্থে বলবে, ‘আসুন আমরা আমাদের রাজার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করি, অতঃপর তিনি প্রার্থিত অনুগ্রহ প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে আমরা অন্যত্র গমন করব।’ এভাবে বিপর্যস্ত লোকেরা স্বীয় নৃপতির কাছ থেকে সহায়তা লাভে ব্যর্থ হলে রাজা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে শত্রু নৃপতির সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টি করাবে।

দ্বিতীয় অধ্যায় ॥ ১৭২ প্রকরণ ॥

এই অধ্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কপট উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে নগর হতে শত্রুর বিতাড়ন তথা বিভিন্ন কৌশলে শত্রু নৃপতিকে প্রতারণার মাধ্যমে হত্যা করার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

১৩-০২-০১ এক্ষেত্রে মুণ্ডিতমস্তক বা জটাধারী সাধুর ছদ্মবেশী কোনো গুপ্তচর পর্বতের গুহায় অবস্থান গ্রহণ করে শিষ্যদের দিয়ে এ কথা প্রচার করাবেন যে তিনি চারশ বছর বয়স্ক একজন কামেল সাধু। অতঃপর পর্যাপ্ত সংখ্যক জটাধারী শিষ্যসহ উক্ত সাধুশত্রু রাজার নগরে প্রবেশ করবে এবং শিষ্যদের মাধ্যমে শত্রু নৃপতি ও তার অমাত্যদের প্রচুর ফল ও ফুল উপহার দিয়ে সাক্ষাতের নিমিত্ত আমন্ত্রণ জানাবে, শত্রু নৃপতি এভাবে আমন্ত্রিত হয়ে সাধুবেশী গুপ্তচরের সঙ্গে মিলিত হলে, পূর্ব হতে নৃপতির পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে পরিজ্ঞাত জটাধারী সাধু নৃপতির ইতিহাসের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করে তাকে তাক লাগিয়ে দিবে। অতঃপর নৃপতিকে এ কথাও জানাবে যে প্রতি একশ বৎসর পর পর অগ্নিতে প্রবেশ করে তিনি পুনঃযৌবন লাভ করে থাকে। এবারও শত বৎসর পূর্তিতে তাদের উপস্থিতিতে তিনি অগ্নিতে প্রবেশ করবে এবং সে উপলক্ষে নৃপতিকে সম্মানিত করণের জন্য তিনটি বরপ্রদান করবে। এ সমস্ত কথা বলে নৃপতিকে আস্থায় এনে উৎসব ও ভোজনের আয়োজন করতে বলে অগ্নিতে প্রবেশ পর্যবেক্ষণ ও বর গ্রহণের জন্য তার সঙ্গে পরিজনসহ সাতরাত্রি অবস্থানের আহ্বান জানাবে। এর পর শত্রু নৃপতি যখন সাধুর কথায় প্রীত হয়ে তার সান্নিধ্যে অবস্থান করবে, তখন সাধুর শিষ্যের বেশধারী রাজার নিযুক্ত গুপ্তচররা তাকে কৌশলে হত্যা করবে।

১৩-০২-০২ একইভাবে শিষ্য পরিবেষ্টিত সাধুবেশী গুপ্তচর কোনো এক স্থানে বা কীটের ঢিবিতে আগে থেকেই মূল্যবান স্বর্ণমুদ্রা লুকিয়ে রেখে বিশেষ কৌশলে তা উত্তোলন করে সকলের কাছে একথা প্রমাণ করাবে যে তিনি গুপ্তধনের অবস্থান সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত। অতঃপর শত্রু নৃপতির জ্ঞাতার্থে এ কথাও নিবেদন করাবেন যে, এ সমস্ত গুপ্তধন নাগরাজের হেফাজতে সুরক্ষিত থাকে এবং নাগদেবতাকে পূজার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করা হলে তা হাসিল করা যেতে পারে। সাধুর কথায় শত্রু নৃপতি আস্থা জ্ঞাপন করলে, তিনি তাকে নাগ দেবতাকে পূজা করার মাধ্যমে প্রীত করার জন্য পরিজনসহ তার সঙ্গে সাতরাত্রি অবস্থানের আহ্বান জানাবে, শত্রু নৃপতি এমত পরিস্থিতিতে সাধুর সঙ্গে অবস্থান করতে প্রবৃত্ত হলে, গুপ্তচররা সুযোগ বুঝে পরিবার সমেত তাকে হত্যা করবে।

১৩-০২-০৩ অথবা শিষ্যরা শত্রুনৃপতির সমীপে একথা জানাবে যে তাদের সাধু গুপ্তধনের অবস্থান সম্পর্কে সর্বজ্ঞাতা। নৃপতি ইচ্ছে করলে উক্ত সাধুর শরণাপন্ন হয়ে কাঙ্ক্ষিত গুপ্তধনের সন্ধান লাভ করতে পারেন। অতঃপর শিষ্যের ছদ্মবেশধারী গুপ্তচররা নৃপতিকে মোহাবিষ্ট করে গুপ্তধনের সন্ধানার্থে সাধুর সান্নিধ্যে সাতরাত্রির জন্য সমর্পিত করাবে এবং কৌশলে পরিবারসহ তাকে হত্যা করবে।

১৩-০২-০৪ অথবা সাধুর বেশধারী গুপ্তচররা শত্রু রাজ্যের কোনো এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দেব মন্দিরে মহাসমারোহে তুষ্টিভোজনাদি উৎসবের আয়োজন করে শত্রুনৃপতি ও তদীয় অমাত্যদের সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবে এবং ক্রমান্বয়ে সাধুর প্রতি আস্থাশীল করে এক পর্যায়ে নৃপতিকে পরিবারসহ হত্যা করবে। অথবা সাঁতারে পারদর্শী জলে সঞ্চরণশীল শ্বেতবর্ণের জটাওয়ালা সাধুর বেশধারী গুপ্তচররা যখন তৈলাক্ত অবস্থায় বিশেষ সাজে সজ্জিত হয়ে ডাঙায় বা জলমুখে অবস্থান করবে তখন শিষ্যের বেশধারী গুপ্তচররা তাদের বরুণ দেবতা বা নাগরাজ হিসেবে অভিহিত করে শত্রুনৃপতির মনে এই মর্মে বিশ্বাস জাগ্রত করাবে যে তাদের কাছে কোনোকিছু যাচ্‌ঞা করা হলে তা সহজেই লাভ করা যায়। অতঃপর শিষ্যরা উক্ত নৃপতিকে মোহবিষ্ট করে সাধুর সমীপে সাতরাত্রির জন্য সমর্পিত করাবে এবং গুপ্তচররা কোনো এক পর্যায়ে পরিজনসহ তাকে কৌশলে হত্যা করবে।

১৩-০২-০৫ অথবা সিদ্ধপুরুষের বেশধারী গুপ্তচররা সীমান্ত প্রদেশে অবস্থান গ্রহণ করে শত্রু দেশের নৃপতিকে সীমান্তবর্তী প্রদেশে শত্রুদর্শনের জন্য ছলনার মাধ্যমে আহ্বান জানাবে। অতঃপর নৃপতি শত্রুদর্শনে আগ্রহান্বিত হয়ে উক্তস্থলে উপস্থিত হলে গুপ্তচররা কোনো এক আবদ্ধ স্থানে একটি কুশপুত্তলিকা স্থাপন করে নৃপতিকে তা দর্শন করানোর জন্য নিয়ে যাবে এবং কৌশলে তাকে হত্যা করবে। অথবা অশ্ব বণিকের বেশে গুপ্তচররা শত্রুনৃপতির সমীপে বিক্ৰেয় অশ্ব নিয়ে উপস্থিত হয়ে আনীত অশ্বসমূহ ক্রয় অথবা দান হিসেবে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করবে, অতঃপর তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে নৃপতি যখন অশ্বসমূহ সরেজমিন পর্যক্ষণের জন্য প্রবৃত্ত হবেন তখন ওত্ পেতে থাকা অন্য গুপ্তচররা কৌশলে তাকে হত্যা করে অশ্ব দিয়ে পদদলিত করিয়ে একথা সর্বত্র প্রচার করাবে যে অশ্বে পদদলিত হয়ে নৃপতি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন।

১৩-০২-০৬ অথবা গুপ্তচররা শত্রুরাজার নগরে উপস্থিত হয়ে রাত্রিতে কোনো এক পবিত্র বৃক্ষে আরোহণ করবে এবং বিভিন্ন ধরনের বাঁশের চোঙা ব্যবহারের মাধ্যমে কণ্ঠস্বর বিকৃত করে রাক্ষসের ছদ্মবেশ ধারণ করে নৃপতি বা তার অমাত্যদের মাংস ভক্ষণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে তাদেরকে পূজা করার জন্য হুঙ্কার প্রদান করবে। অতঃপর জ্যোতিষের বেশধারী গুপ্তচররা কথিত রাক্ষসের সমীপে পূজা প্রদানের জন্য নৃপতিকে প্ররোচিত করবে। তাদের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে নৃপতি রাক্ষসদের সন্তুষ্টি বিধানকল্পে পূজার্চনায় প্রবৃত্ত হলে গুপ্তচররা তাকে সন্তর্পণে হত্যা করবে।

১৩-০২-০৭ অথবা রাত্রিতে নাগদেবতার ছদ্মবেশধারী গুপ্তচররা কোনো এক পবিত্র জলাশয়ে অবস্থান গ্রহণ করে লৌহের ঘর্ষণে অগ্নি প্রজ্বলন করতে করতে পূর্বেকার রাক্ষসদের মতো শত্রুনৃপতি ও তার অমাত্যদের মাংস ভক্ষণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে হুঙ্কার প্রদান করবে। অথবা ভালুকের চামড়ায় শরীর আচ্ছাদিত করে রাক্ষসবেশী গুপ্তচররা কৃত্রিম উপায়ে মুখ দিয়ে আগুন ও ধোঁয়া নিসৃত করতে করতে নগরকে বামে রেখে তিনবার প্রদক্ষিণ করবে এবং কুকুর ও শৃগালের মতো শব্দ উচ্চারণ করে একইভাবে নৃপতি ও তার অমাত্যদের শরীরের মাংস ভক্ষণের অভিলাষ ব্যক্ত করবে। অথবা গুপ্তচররা কোন মন্দিরস্থ দেবীর শরীরে দাহ্য তেল লেপন করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে নিভৃতে থেকে একই প্রক্রিয়ায় দেবী কর্তৃক অমাত্য ও নৃপতির শরীরের মাংস ভক্ষণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করাবে। অথবা গুপ্তচররা বহুল পূজনীয় কোন দেবপ্রতিমার শরীর থেকে কৌশলে অনর্গল রক্তের (মেষ বা ঐ জাতীয় প্রাণীর রক্ত) প্রস্রবন ঘটাবে। এসব কৃতকর্মের মাধ্যমে গুপ্তচররা এ কথা রটিয়ে দিবে যে এ সমস্ত আলামত মোটেও শুভকর নয়, এ সবই অকল্যাণের আলামত এবং এতে করে এই আশঙ্কাই অনুভূত হচ্ছে যে আসন্ন যুদ্ধে নৃপতি তার প্রতিপক্ষের কাছে পরাভূত হবে। এভাবে গুপ্তচররা শত্রুরাজ্যে আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করাবে এবং শত্রু নৃপতিকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিপর্যস্ত করবে।

১৩-০২-০৮ অথবা পূর্ণিমা বা অমাবশ্যার পর্বরাত্রিতে গুপ্তচররা শত্রুনৃপতিকে কোনো এক শ্মশানস্থ চিতায় উর্ধাঙ্গ ভক্ষিত শবদেহ প্রদর্শন করাবে। অতঃপর শ্মশানে অবস্থানরত রাক্ষস বেশধারী গুপ্তচর ভক্ষণের জন্য নৃপতির কাছে মানুষ চাইবে। এ সময় কোনো বলবান দুঃসাহসী ব্যক্তি রাক্ষস হত্যার জন্য অগ্রসর হলে বা অতি কৌতূহলী শৌর্যবান কেউ রাক্ষস দর্শনের জন্য অগ্রসর হলে, গুপ্তস্থানে লুকায়িত গুপ্তচররা তাদের কৌশলে ধারালো বর্শার আঘাতে ঘাতিত করবে এবং একথা রটিয়ে দিবে যে তারা রাক্ষস কর্তৃক ঘাতিত হয়েছে। অতঃপর নৈমিত্তিক এবং মৌহূর্তিকের বেশধারী গুপ্তচররা রাক্ষসের কোপানল থেকে প্রজাসাধারণের জীবন রক্ষার্থে শত্রু নৃপতিকে সাতরাত্রি মন্ত্রজপ, বলিদান ও যজ্ঞহোম করার জন্য অনুরোধজ্ঞাপন করবে, নৃপতি তদানুযায়ী উপরোক্ত ধরনের পূজার্চনায় প্রবৃত্ত হলে গুপ্তচররা কৌশলে তাকে হত্যা করবে।

১৩-০২-০৯ অথবা বিজয়াকাক্ষী রাজা নিজের উপর বা নিজ রাজ্যে উপরোক্ত প্রতারণার কৌশলসমূহ প্রয়োগ করিয়ে সার্থকভাবে তার প্রতিবিধান করবেন এবং এসব ক্রিয়াদির উদ্ধৃতিক্রমে গুপ্তচররা শত্রুর দেশে তা অনুসরণার্থে শত্রুনৃপতিকে প্ররোচিত করবে। শত্রু নৃপতি গুপ্তচরদের পরামর্শে বিমোহিত হয়ে উদ্ভূত বিপত্তিসমূহের প্রতিকারকল্পে রাজার অনুসৃত পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রবৃত্ত হলে গুপ্তচররা তাকে কৌশলে হত্যা করবে। অথবা হস্তিলোলুপ বা শিকারে আসক্ত শত্রুনৃপতিকে গুপ্তচররা উন্নত প্রকৃতির হস্তি প্রদান বা লোভনীয় শিকারের জন্য প্রলুব্ধ করবে। অতঃপর লোভার্ত নৃপতি হস্তি হাসিল বা শিকারের জন্য গুপ্তচরদের নির্দেশিত পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুষ্প্রবেশ্য অরণ্যে উপস্থিত হলে গুপ্তচররা তাকে হত্যা করবে বা দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে বন্দি অবস্থায় রাজার সমীপে সমর্পণ করবে।

১৩-০২-১০ শত্রু নৃপতি যদি ধনলোলুপ বা নারীলোলুপ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে গুপ্তচররা তার কাছে উত্তরাধিকার বা জমাকৃত সম্পত্তির বিবাদ সংক্রান্ত উদ্ভূত বিপত্তি নিষ্পত্তির উসিলায় যৌবনবতী অবিধবা কোনো এক নারীকে প্রেরণ করবে। অতঃপর নৃপতি উক্ত নারীর রূপ-যৌবনে প্রলুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে মিলনাকাঙ্ক্ষায় উদগ্রীব হয়ে পড়লে উক্ত নারী তাকে গোপনস্থানে মিলনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে, সে অনুযায়ী নৃপতি নির্ধারিত গোপনস্থানে উপস্থিত হলে তথাস্থ লুকায়িত গুপ্তচররা তাকে কৌশলে বিষপ্রয়োগ করে বা অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করবে। অথবা শত্রুনৃপতি যখন সাধুপুরুষের অবস্থান স্থলে বা প্রব্রজ্যা গ্রহণকারী ভিক্ষুকের কাছে বা মন্দিরের দেবদেবী দর্শনের জন্য ওইসব স্থানে নিয়মিত যাতায়াত করবেন, তখন তীক্ষ্ণ নামক গুপ্তচররা সুড়ঙ্গ পথে বা দেয়ালের ফাঁক দিয়ে কৌশলে সেস্থানে হাজির হয়ে নৃপতিকে একান্তে হত্যা করে গা ঢাকা দিবে।

১৩-০২-১১ অথবা শত্রুনৃপতি যখন নৃত্য-অভিনয় উপভোগ, উদ্যানের প্রমোদ ভ্রমণ, জলক্রীড়া, আনুষ্ঠানিক উৎসব, প্রীতি ভোজনোৎসব বা জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে গমন করবেন অথবা নিরাপত্তা প্রহরী ব্যতিরেকে অতিবর্ষণযুক্ত স্থানে, জনবহুল স্থানে, ভুলপথে, নগরে অগ্নিকাণ্ডকালে বা কোনো নির্জন স্থানে একাকী বিচরণ করবেন, তখন গুপ্তচররা বিভিন্ন ছদ্মবেশে তাকে অনুসরণ করবে এবং সুবিধাজনক সময়ে হত্যা করবে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকৃতির ছদ্মবেশী গুপ্তচররা যেভাবে হত্যাকাণ্ডের স্থানে অনুপ্রবেশ করবে কার্যসিদ্ধির পর ঠিক সেভাবেই সন্তর্পণে সে স্থান থেকে নিষ্ক্রান্ত হবে।

তৃতীয় অধ্যায় ॥ ১৭৩ প্রকরণ ॥

শত্রু রাজ্যে রাজার গুপ্তচর ও নিয়োগকৃত লোকেরা কোন প্রক্রিয়ায় প্রেরিত ও পদায়িত হবে, অতঃপর কীভাবে রাজার স্বার্থসিদ্ধি করবে, শত্রুকে দুর্বল করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক কর্মে প্রবৃত্ত হবে, ইত্যাকার বিষয়ের উপর এই অধ্যায়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

১৩-০৩-০১ রাজা নিজের বিশ্বস্ত কোন পদস্থ অমাত্যর উপর লোক দেখানো অভিযোগ উত্থাপন করে ছলনার মাধ্যমে তাকে নিজ রাজ্য থেকে বহিষ্কার করাবে। অতঃপর তথাকথিত ওই বহিষ্কৃত অমাত্য শত্রু নৃপতির সমীপে নিজেকে সমর্পিত করে তার অধীনে আশ্রয় প্রার্থনা করে স্বীয়-চাতুর্যবলে নৃপতির আস্থা অর্জন করবে। এভাবে শত্রু নৃপতির আস্থাভাজন হয়ে ওঠার পর উক্ত অমাত্য নৃপতিকে সহায়তার অজুহাতে নিজ রাজ্যের গুপ্তচরদের তার অধীনে পদায়িত করবে এবং নৃপতির অনুমতিক্রমে সেসব গুপ্তচরদের দিয়ে নিজ রাজার বিরোধিদের কৌশলে নিপাত করাবে। অথবা তিনি শত্রু রাজ্যের কোনো প্রান্তে অবস্থান করে আটবিক বা সীমান্ত সেনাদের সমবেত করিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে তাদের হত্যা করবে, শত্রু নৃপতির পদস্থ অমাত্যদের বশীভূতকরণে সচেষ্ট হবে, এভাবে শত্রুনৃপতির শক্তি ও সমর্থতা বিপর্যস্ত করে নিজ রাজাকে উক্ত রাজ্য আক্রমণের আহ্বান জানাবে এবং রাজার সঙ্গে সমন্বিত হয়ে শত্রুকে ধ্বংস করবে।

১৩-০৩-০২ রাজা তার শত্রুপক্ষের সঙ্গে প্রতারণামূলক মিত্রতার সম্পর্কে সম্পর্কিত হয়ে নিজের অমাত্যদের লোক দেখানো কর্মচ্যুতি বা তিরস্কৃত করবেন। অতঃপর উক্ত প্রকৃতির তথাকথিত নিগৃহীত অমাত্যরা নিজ রাজার কোপানল থেকে নিষ্কৃতি লাভের অভিপ্রায়ে শত্রু নৃপতিকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করবে, তৎপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে শত্রুনৃপতি কর্তৃক রাজাকে অমাত্যদের রক্ষার্থে অনুরোধ জ্ঞাপন করা হলে, রাজা তা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অপর রাজ্যের হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট অমাত্যদের মুখ্যকে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করবেন। এরপর উক্ত বহিষ্কৃত অমাত্য শত্রুনৃপতির শরণাপন্ন হয়ে তার আশ্রয়গ্রহণ করে বিশ্বাস উৎপাদনের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করবে এবং রাজ্যের নানা শ্রেণির অপরাধিদের সংগ্রহ করে তাদেরকে নৃপতির সহায়কশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। অতঃপর ওই অমাত্য নৃপতির বীরসেনা, অমাত্য ও অন্তপালদের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার মিথ্যে অভিযোগ আরোপ করে নৃপতির সম্মতিক্রমে নিয়োগকৃত অপরাধিদের দিয়ে তাদের হত্যা করাবে। এভাবে নানা কূটকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বিপর্যস্ত করে উক্ত আশ্রিত অমাত্য একসময় নিজ রাজার স্বার্থসিদ্ধির জন্য শত্রু নৃপতিকে সমূলে উৎখাত করবে।

১৩-০৩-০৩ অথবা রাজা শত্রুপক্ষের ভীত, ক্ষুব্ধ বা লোভার্ত অমাত্যদের অনুকূলিত করে শত্রুর কোনো অমিত্ররাজকে দিয়ে নিজ রাজ্যে আক্রমণ করিয়ে তার বিরুদ্ধে যৌথ প্রতি আক্রমণ পরিচালনার জন্য শত্রুনৃপতির প্রতি প্রস্তাবজ্ঞাপন করবেন। শত্রুনৃপতি রাজা কর্তৃক প্রদত্ত প্রস্তাবে সম্মত হলে, রাজা তাকে সম্মান প্রদর্শন ও উপহার প্রেরণপূর্বক নিজ রাজ্যে আমন্ত্রণ জানাবে, অতঃপর শত্রুনৃপতি তার অমিত্রের বিরুদ্ধে যৌথ আক্রমণের অভিলাষে রাজার রাজ্যে উপস্থিত হলে রাজা কূটকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে শত্রুর অমিত্রকে দিয়ে শত্রুনৃপতিকে হত্যা করাবেন।

এক্ষেত্রে শত্রুনৃপতি যদি স্বয়ং উপস্থিত না হয়ে রাজার সাহায্যার্থে শুধু তার সৈন্যদের প্রেরণ করেন, সেক্ষেত্রে রাজা শত্রুর অমিত্র সেনাদের দিয়ে প্রেরণকৃত সৈন্যদের হত্যা করাবেন এবং রাজা শত্রুর অমিত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে দুপাশ থেকে সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুনৃপতিকে উৎপীড়িত করে হত্যার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এ পর্যায়ে শত্রুনৃপতি যদি রাজার প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করত নিজেই তার অমিত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে প্রবৃত্ত হন, সেক্ষেত্রে রাজা শত্রুর অমিত্রকে সহায়তা প্রদান করে নিজ শত্রুর সৈন্যদের হত্যা করাবে অথবা শত্রু নৃপতি যখন রাজধানী ত্যাগ করে তার অমিত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে গমন করবে, রাজা তখন তার সৈন্যদের মাধ্যমে অন্যদিক দিয়ে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুনৃপতির রাজধানী দখল করে লুণ্ঠনে প্রবৃত্ত হবেন

১৩-০৩-০৪ অথবা রাজা তার মিত্রের ভূমি দখল করে সমান ভাগে ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে শত্রুকে মিত্রভূমি আক্রমণের আহ্বান জানাবে। এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে শত্রুনৃপতি রাজার মিত্রকে আক্রমণে প্রবৃত্ত হলে রাজা কূটকৌশলে তার মিত্রকে দিয়ে আক্রমণের মাধ্যমে নিজের ক্ষতি করিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতি আক্রমণ পরিচালনা করবেন। এ সমস্ত আক্রমণ, প্রতিআক্রমণের সবই করা হবে শত্রুকে ফাঁদে ফেলবার জন্য। এভাবে শত্রু নৃপতি প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়ার পর রাজা তাকে কৌশলে হত্যা করাবে।

অথবা রাজা যখন দেখবেন, তার মিত্রের ভূমির প্রতি শত্রুনৃপতির লোলুপদৃষ্টি পড়েছে, তখন তিনি তার মিত্রের ভূমিতে অভিযান পরিচালনার জন্য শত্রু নৃপতিকে পর্যাপ্ত সৈনিক সহায়তা প্রদান করবেন। অতঃপর শত্রুনৃপতি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাজার মিত্রভূমি অধিকারের জন্য অগ্রসর হলে রাজা তার মিত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে শত্রুকে ঘাতিত করবে। অথবা রাজা তার মিত্রকে নিয়ে বিপদাপন্ন অবস্থায় শত্রুকে দুদিক থেকে আক্রমণ করে বিপর্যস্ত করে হত্যা করবে বা তাকে জীবন্ত পাকড়াও করে জীবনের বিনিময়ে তার রাজ্য কেড়ে নিবে।

১৩-০৩-০৫ রাজা যদি কোনোপ্রকারে শত্রু ও শত্রুর মিত্রের মধ্যে বিদ্বেষের বীজবপনে সমর্থ না হন, সেক্ষেত্রে তিনি উভয়কে উভয়ের ভূমি দখলের জন্য প্ররোচিত করে শত্রুতার সৃষ্টি করাবেন। অতঃপর উভয়বেতনধারী গুপ্তচরদের দিয়ে উভয়পক্ষকে রাজা কর্তৃক ভূমি কেড়ে নেওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে স্বতন্ত্রভাবে রাজার বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনার জন্য প্ররোচিত করবে, এভাবে প্ররোচিত হয়ে কোনো পক্ষ কর্তৃক রাজা আক্রান্ত হলে তিনি অপরপক্ষের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করে যৌথভাবে আক্রমণকারীকে পরাভূত করে হত্যা করবে।

অথবা রাজা তার দুর্গ প্রধান, জনপদ প্রধান বা সেনা প্রধানকে পরিকল্পিতভাবে দুশ্চরিত্রবান আখ্যা দিয়ে স্বীয় রাজ্য থেকে বিতাড়িত করাবেন। অতঃপর রাজার বিরাগভাজন হিসেবে বিতাড়িতরা শত্রুনৃপতির অনুগৃহীত হয়ে আস্থার সাথে তার রাজ্যে অবস্থান করবে এবং শত্রুপক্ষের সেনা সমর্থতা, রণকৌশল ও যুদ্ধ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে সুযোগ বুঝে শত্রুপক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করবে। কিংবা শত্রুনৃপতির প্রতি ক্ষুব্ধ অমাত্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের দিয়ে শত্রুপক্ষের লোকদের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ সৃষ্টি করিয়ে শত্রুনৃপতিকে বিপদাবস্থায় নিপতিত করাবে।

১৩-০৩-০৬ অথবা শিকারির বেশধারী রাজার নিযুক্ত গুপ্তচররা মাংস বিক্রির ছলে শত্রুনৃপতির নগরে উপস্থিত হয়ে এ কথা প্রচার করবে যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চোর ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে গেছে, তারা নগরেও যে কোনো সময় আক্রমণ চালাতে পারে, এ ধরনের প্রচারণা চালানোর পর গুপ্তচররা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একদল জনপদে চোর-ডাকাতের বেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হবে, অতঃপর শত্রুনৃপতির মনে দেশে চোর ডাকাতের উপদ্রব বিষয়ক ধারণা বদ্ধমূল হলে গুপ্তচরদের অপর দল অকস্মাৎ নগরে আক্রমণে প্রবৃত্ত হবে। এভাবে চোর ডাকাতের বেশে ধ্বংসযজ্ঞ সাধন করে গুপ্তচররা চোর-ডাকাত দমনের জন্য নৃপতির কাছে সৈনিক সহায়তা যাচ্ঞা করবে, অতঃপর নৃপতির প্রদত্ত সৈন্যদের অন্যত্র সরিয়ে অন্য গুপ্তচররা চোর ডাকাত দমিত হয়েছে বলে দ্বার রক্ষীদের সঙ্গে অবস্থানরত গুপ্তচরদের সহায়তায় নগরে প্রবেশ করবে এবং ব্যাপক পরিসরে অন্তর্ঘাতমূলক কাজে মত্ত হবে।

১৩-০৩-০৭ অথবা রাজা শত্রুনৃপতির দুর্গে কারিগর, শিল্পী, বিধর্মী, কুশীলব বা বণিকের বেশধারী সৈন্যদের প্রেরণ করাবেন, অতঃপর নগরে খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি, তৃণ বা দেব প্রতিমা প্রেরণের ছলে তাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করবেন, এরপর ছদ্মবেশী সৈনিকরা সশস্ত্র হয়ে নগরাভ্যন্তরে ব্যাপক লুট তরাজ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়ে শত্রুনৃপতির সৈন্যদের হত্যা করবে।

১৩-০৩-০৮ অথবা দুর্গম পথ লঙ্ঘনে সহায়তাকারী, শকটবাহক, কন্যাবহনকারী পুরুষ, অশ্ব ও পণ্যদ্রব্যের বণিক, নানা দ্রব্য বহনকারী, ধানের ক্রেতা ও বিক্রেতা, সন্ন্যাসি ও দূতের ছদ্মবেশধারী গুপ্তচরদের দিয়ে শত্রু সৈন্যদের অন্যত্র সরিয়ে এবং তাদের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক স্থাপন করে শত্রুনৃপতিকে বিভ্রান্ত করে কুপিত করাবে।

১৩-০৩-০৯ রাজার নিযুক্ত গুপ্তচররা দস্যুর বেশে শত্রু নৃপতির গবাদি পশুররক্ষক এবং বণিকদের সঙ্গে ছল-চাতুরির মাধ্যমে সখ্যস্থাপন করে সুবিধা মতো সময়ে তাদের ঘাতিত করবে। এছাড়াও তারা গো-রক্ষক ও বণিকদের খাদ্য ও পানীয়ে কৌশলে বিষ মিশিয়ে খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের হত্যার ব্যবস্থা করে গা ঢাকা দিবে। অথবা গুপ্তচররা মুণ্ডিত মস্তক বা জটাধারী সাধুর ছদ্মবেশ ধারণ করে ভোজন উৎসবের আয়োজন করে পরিবেশিতব্য মদ্যে বিষ মিশিয়ে রাখবে, অতঃপর শত্রু রাজ্যের আটবিকগণ বিষমিশ্রিত মদ্য পানের পর বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়লে গুপ্তচররা আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে তাদের হত্যা করবে। অথবা গুপ্তচররা আটবিকগণকে শত্রু রাজ্যের নগর আক্রমণের জন্য আহ্বান জানিয়ে তাদের কৌশলে বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করাবে এবং সুবিধাজনক সময়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যা করাবে।

চতুর্থ অধ্যায় ॥ ১৭৪-১৭৫ প্রকরণ ॥

এই অধ্যায়ে কখন কোন পদ্ধতিতে শত্রুদুর্গের চারিদিকে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে হবে, দুর্গ অবরুদ্ধ করতে হবে, দখল করতে হবে এবং শত্রুনৃপতিকে হত্যা করতে হবে, সেসব বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।

১৩-০৪-০১ শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনী এবং সম্পদ ধ্বংসের পর রাজা দুর্গ অবরোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। শত্রু সেনাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রাক্কালে জনপদের সাধরণ প্রজারা যেন উৎপীড়িত না হয়, সে বিষয়ে রাজাকে সচেতন থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শত্রুরাজ্য অধিকৃত হবার সময় যেসব প্রজা প্রতিরোধে প্রবৃত্ত না হয়ে সরে দাঁড়াবে, পরবর্তী সময়ে রাজা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে উক্ত ভূমিতে পুনর্বাসিত করবেন এবং কর রেয়াতি সুবিধা প্রদান করবেন। কিন্তু যারা দখলি স্বত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে রাজা তাদের প্রতি কোনো অনুগ্রহ প্রদর্শন বা কর রেয়াতি সুবিধা প্রদান করবেন না কিংবা তাদের দেশ থেকে তাড়িয়েও দিবেন না, তিনি তাদের দূরবর্তী স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাবেন। কারণ, কৌটিল্য মনে করেন—জনগণ ব্যতিরেকে জনপদ গঠন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি জনপরহিত রাজ্য গঠনও কখনো সম্ভব নয়।

১৩-০৪-০২ শত্রুকে বিপর্যস্তকরণ—শত্রুর জনপদ সংকটে বিপর্যস্ত হলে রাজা শত্রু রাজ্যের শস্যবপন প্রক্রিয়া, ভূমিস্থ ফসল এবং বনজসম্পদ ধ্বংস করে দিবেন। এভাবে শত্রুর সম্পদ বিনাশ করা সম্ভব হলে, জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর সম্ভব হলে বা শত্রুনৃপতিকে গোপনে হত্যা করা সম্ভব হলে শত্রুর অমাত্য — প্রকৃতিরও বিনাশ সাধন সম্ভব হয়। শত্রুর দুর্গাদি অবরোধকরণ—রাজা যখন মনে করবেন, তিনি খাদ্যশস্যে, বনজ সম্পদে, অস্ত্রশস্ত্রে, সেনা সক্ষমতায়, যুদ্ধের সহায়ক উপকরণাদিতে যথেষ্ট সমর্থবান, যুদ্ধাভিযানের জন্য ঋতু তার অনুকূল ও শত্রুর প্রতিকূল এবং ব্যাধি বা দুর্ভিক্ষে শত্রুপক্ষ বিপর্যস্ত, শত্রুর ভাড়াটে সৈন্য ও মিত্র সৈন্যরা পরিশ্রান্ত, তখন তিনি শত্রুর দুর্গ অবরোধকল্পে অগ্রসর হবেন

১৩-০৪-০৩ রাজা নিজরাজ্যের সেনানিবাস, খাদ্যশস্য, মিত্রসেনা ও রসদ সরবরাহ পথের সুরক্ষা নিশ্চিত করে শত্রুরাজ্যের দুর্গ বা নগর অবরোধ করবেন। অবরোধ প্রাক্কালে শত্রুর ব্যবহার্য জলে বিষ মিশিয়ে তা দূষিত করাবেন, পরিখাগুলো কেটে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করাবেন বা পরিখাগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করে দিবেন। দুর্গের সুড়ঙ্গ পথ বিনষ্ট করাবেন এবং হস্তির আক্রমণের মাধ্যমে নিরাপত্তা দেয়াল ধ্বংস করাবেন।

১৩-০৪-০৪ নিজ সৈন্যদের চলাচলের সুবিধার্থে তিনি শত্রু দেশের নিম্নাঞ্চল মাটি দিয়ে ভরাট করাবেন। শত্রুদুর্গের যে অংশে অধিকসংখ্যক সৈন্য সমবেত থাকবে, রাজা সে অংশ যান্ত্রিক আঘাতের মাধ্যমে বিপর্যস্ত করাবেন। অবরোধকালে পলায়নপর শত্রুসৈন্যদের পাকড়াও করে অশ্ব দিয়ে পদদলিত করিয়ে হত্যা করাবেন। শত্রুপক্ষ যদি সাহসিকতা প্রদর্শনপূর্বক প্রতিরোধ যুদ্ধ অব্যাহত রাখে, সেক্ষেত্রে রাজা সাম-দান’র মাধ্যমে অভীষ্ট অর্জনে সচেষ্ট হবেন। রাজার গুপ্তচরেরা অগ্নিতে শত্রুদুর্গ ভস্মীভূতকরণের উদ্দেশ্যে বাজ, কাক, নপ্‌তা, চিল, শুক, সারিকা, পেঁচা ও কবুতর পাখির পুচ্ছে অগ্নিপ্রজ্বালন উপযোগী উপাদান সংযুক্ত করে দুর্গে ছড়িয়ে দিবে।

১৩-০৪-০৫ রাজা দূরবর্তী শিবিরে অবস্থান করে উত্তোলিত পতাকা ও ধনুর মাধ্যমে শত্রুর নিক্ষিপ্ত অগ্নি হতে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে শত্রুদুর্গ জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্নিনিক্ষেপ করাবে। শত্রুদুর্গের বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য অভ্যন্তরে অবস্থানরত রাজার গুপ্তচররা বেজি, বানর, বিড়াল ও কুকুরের লেজে অগ্নিউৎপাদক উপাদান যুক্ত করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিবে। অথবা গুপ্তচররা নগরে আগুন লাগানোর জন্য শুটকি মাছের পেটে বা শূকরের শুকনো মাংসের ভেতর আগুনের ফুলকি রেখে কাকসহ বিভিন্ন পাখির মাধ্যমে তা নগরের অভ্যন্তরে পরিবাহিত করাবে এবং এ প্রক্রিয়ায় নগরের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ছড়িয়ে দিবে।

১৩-০৪-০৬ প্রিয়ালবৃক্ষের চূর্ণ, অবজ, শেফালিকা, মোম এবং অশ্ব, গর্দভ, উট ও গরুর গোবর মিশ্রণজাত উপাদান অগ্নিনিক্ষেপের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। লৌহ ধাতুরচূর্ণ, কুম্ভী, সীসা, রাঙের চূর্ণ, নিম ও পলাশফুল, গন্ধধুপ, তৈল, মোম ও দেবদারুর তেল ব্যবহার করে যে কোনো অগ্নিনিরোধক স্থাপনাতেও অগ্নি সংযোগ সম্ভব হয়।

১৩-০৪-০৭ তদুপরি, যুদ্ধাবস্থায় রাজা কখনো উপরোক্ত উপায়ে অগ্নিসংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন না। কারণ, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ফলে শত্রুপক্ষের সামগ্রিক ধন সম্পদ বিনষ্ট হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেও রাজা লাভবান হতে পারবেন না। রাজা যখন যুদ্ধের জন্য সবদিক দিয়ে যথার্থভাবে সক্ষম থাকবেন এবং তার শত্রু বিপর্যস্ত অবস্থায় নিপতিত থাকবে, শত্রুর অমাত্যর যথার্থভাবে স্বীয় প্রভুর প্রতি অনুগত থাকবে না, শত্রুপক্ষ দুর্গ নির্মাণ বা সংস্কার হতে বিরত থাকবে, খাদ্যশস্য মজুদ করা হতে বিরত থাকবে, মিত্ররহিত অবস্থায় থাকবে, তখন রাজা কর্তৃক শত্রুর দুর্গ দখলের সময় উপস্থিত হয়েছে বলে মনে করতে হবে।

১৩-০৪-০৮ যখন শত্রুর দুর্গ (নগর) অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অথবা শত্রু শিবিরে সাড়ম্বরে ভোজন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে অথবা শত্রু সেনারা অভিনয়, নৃত্যগীত দর্শনে মগ্ন থাকবে অথবা তাদের মধ্যে মদ্যপানজনিত কারণে কলহ দেখা দিবে অথবা একটানা যুদ্ধের কারণে শত্রুর সৈন্যরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে অথবা বহুদিন যুদ্ধ করার ফলে শত্রুপক্ষের বিপুলসংখ্যক সৈন্য আহত ও নিহত হবে অথবা নিরবচ্ছিন্ন জাগরণের প্রভাবে শত্রুর সৈন্যরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে অথবা বর্ষণজনিত কারণে পরিবেশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে অথবা বন্যার প্রভাবে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে অথবা শত্রুর শিবির কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে, তখন রাজা শত্রুর দুর্গে আঘাত হানার জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হবেন। অথবা রাজা বনাঞ্চলে লুকিয়ে থেকে দুর্গ হতে নিষ্ক্রান্ত শত্রুদের হত্যা করবেন।

১৩-০৪-০৯ অথবা রাজার নিযুক্ত গুপ্তচররা শত্রুর মিত্র বা মিত্রের সেনামুখ্যদের বেশধারণ করে শত্রুনৃপতির সঙ্গে সখ্য স্থাপন করে জাল (নকল) পত্রের মাধ্যমে তার শত্রু তথা রাজার দোষ-ত্রুটি তুলে ধরবে কিংবা তাদের সহায়তায় রাজাকে হত্যা করার জন্য তাকে প্ররোচিত করবে, গুপ্তচরদের এহেন প্রতারণাপূর্ণ প্ররোচনায় মোহাবিষ্ট হয়ে শত্রুনৃপতি রাজাকে হত্যার জন্য দুর্গ হতে নিষ্ক্রান্ত হলে অন্যান্য গুপ্তচররা তাকে দুদিক থেকে আক্রমণ করে হত্যা করবে বা তাকে বন্দি করে দুর্গ ধ্বংসসহ শত্রুর সেনাপতিদের হত্যা করবে।

১৩-০৪-১০ অথবা আটবিকের বেশধারী গুপ্তচররা শত্রুনৃপতিকে এই মর্মে অবহিত করবে যে, আপনার শত্রু ব্যাধিপীড়িত হয়েছে এবং তিনি পাগ্ৰিাহ তথা পাশ্চাদের শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে, এক্ষণে তিনি অন্য কোনো রাজ্যে চলে যেতে ইচ্ছুক, শত্রুনৃপতি কর্তৃক এ সব কথায় আস্থা স্থাপন করা হলে, অবরোধকারী রাজা নিজের সেনাশিবিরে আগুন লাগিয়ে অন্যস্থানে অপেক্ষা করবে, অতঃপর শত্রুনৃপতি দুর্গ হতে বের হলে পূর্বোক্ত কায়দায় গুপ্তচররা তাকে হত্যা করবে বা বন্দি করে প্রাণের বিনিময়ে রাজ্য ছিনিয়ে নিবে, অথবা তার নগর ধ্বংস করে সেনা মুখ্যদের হত্যা করবে অথবা বিষমিশ্রিত খাদ্য খাইয়ে তাকে হত্যা করবে অথবা গুপ্তচররা শত্রুনৃপতির কোনো মিত্রের মিথ্যে পত্র দাখিল করে অবরোকারী রাজাকে হত্যার জন্য অবরুদ্ধ নৃপতিকে দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্ররোচিত করবে এবং নৃপতি এই প্রতারণায় আস্থা জ্ঞাপন করে দুর্গ হতে নির্গত হওয়ামাত্র গুপ্তচররা তাকে পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে হত্যা করবে।

১৩-০৪-১১ অথবা রাজার নিয়োগকৃত গুপ্তচররা জাল অনুমতি পত্র নিয়ে মিত্র তথা শত্রুনৃপতির সঙ্গে সাক্ষাতের অজুহাতে দুর্গে প্রবেশ করবে এবং কৌশলে দুর্গ দখল করবে। অথবা মিত্রের বেশধারী গুপ্তচররা শত্রুনৃপতির কাছে এই মর্মে সংবাদ প্রেরণ করবে যে, অমুক সময় অমুক স্থানে অমুক দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিত হবে, তিনিও যেন সে আক্রমণে তার মিত্রের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। শত্রুনৃপতি এ ধরনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে শরিক হলে রাজার গুপ্তচররা এ কথা প্রচার করবে যে, প্রবল আক্রমণের কারণে তাদের সেনাশিবিরটি বিপর্যস্ত হয়েছে, এহেন অবস্থায় রাত্রিতে শত্রুনৃপতি শিবির হতে নিষ্ক্রান্ত হলে গুপ্তচররা কৌশলে তাকে হত্যা করবে।

১৩-০৪-১২ অথবা রাজা অবরুদ্ধ নৃপতির মিত্র আটবিককে আমন্ত্ৰণ জানিয়ে স্বপক্ষভুক্ত করাবেন এবং অবরুদ্ধ নৃপতির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে তার ভূমি দখলের জন্য উৎসাহিত করবেন। অতঃপর উক্ত আটবিক অবরুদ্ধ নৃপতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলে, রাজার গুপ্তচররা তাকে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা করে এ হত্যার দায় অবরুদ্ধ নৃপতির উপর চাপিয়ে দিবেন, এতে করে অবরুদ্ধ নৃপতি মিত্রহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হবে, ফলে অন্যান্য মিত্ররা তার প্রতি প্রদত্ত সমর্থন প্রত্যাহার করে নিবেন এবং এভাবে অবরুদ্ধ নৃপতি মিত্রহীন হয়ে নিঃসহায় হয়ে পড়বে। অতঃপর রাজা সহজেই অভীষ্ট অর্জন তথা তাকে পরাভূত করতে সক্ষম হবেন। অথবা মিত্রের বেশে রাজার গুপ্তচররা কপট পত্রের মাধ্যমে শত্রুনৃপতির জ্ঞাতার্থে এ কথা জানাবেন যে তার আটবিক মিত্র তাকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে, এধনের ছলচাতুরির মাধ্যমে গুপ্তচররা নৃপতির আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর কৌশলে তার বীরপুরুষদের হত্যা করবে।

১৩-০৪-১৩ অথবা রাজা তার শত্রুনৃপতির সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করে নিজ ভূমিতে বসবাসের সুযোগ প্রদান করবেন, অতঃপর শত্রুনৃপতি কর্তৃক সেই ভূমিতে জনপদ সৃজিত হলে রাজা কৌশলে তা ধ্বংস করে দিবেন। অথবা রাজা তার সন্দেহভাজন সৈন্য ও আটবিকদের দিয়ে শত্রুনৃপতির একাংশের উপর আক্রমণ চালাবে, তৎপ্রেক্ষিতে শত্রুনৃপতির সৈন্যরা প্রতি আক্রমণের জন্য দুর্গ হতে নিষ্ক্রান্ত হলে সেই সুযোগে রাজা দুর্গ আক্রমণ করে দখল করে নিবেন। শত্রুনৃতির যে রাজদ্রোহী ও বিরোধী আটবিকরা তাকে পরিত্যাগের পর রাজা কর্তৃক সম্মানিত ও পুরস্কৃত হয়ে পুনর্বার তার সমীপে প্রত্যাবর্তন করবে, দুর্গ আক্রমণ প্রাক্কালে তারাই রাজাকে বিভিন্ন সঙ্কেতের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করতে পারে।

১৩-০৪-১৪ শত্রুর দুর্গে বা সেনাশিবিরে আক্রমণ পরিচালনার সময় রাজার পক্ষের লোকেরা রণক্ষেত্রে নিপতিত, যুদ্ধে পরাঙ্মুখ, আত্মসমর্পিত, অস্ত্রধারী, অস্ত্রহীন, ভীত এবং যুদ্ধে বিরত সৈনিকদের অভয়দান করবেন এবং রক্ষা করবেন। শত্রুর দুর্গ অধিকারের পর রাজা প্রথমে তথাস্থ শত্রুপক্ষীয় লোকদের উচ্ছেদ করাবেন এবং দুর্গের বাহির ও ভেতর থেকে অন্তর্ঘাতমূলক আক্রমণের সম্ভাবনা অনুভূত হলে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাবেন, অতঃপর নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে নিজে দুর্গে পদার্পণ করবেন। এভাবে শত্রুর ভূমি অধিকারের পর তিনি মধ্যম রাজার দুর্গ ও ভূমি অধিকারের জন্য প্রলুব্ধ হবেন, অতঃপর মধ্যমকে কব্জা করতে সক্ষম হলে উদাসীন রাজাকে পরাভূত করতে সচেষ্ট হবেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি পৃথিবী জয়ের প্রথম স্তর অতিক্রম করবেন। মধ্যম ও উদাসীন নৃপতির অনুপস্থিতিতে রাজা তার প্রজ্ঞার প্রভাবে শত্রুর অমাত্যদের বশীভূত করে নিজের প্রতি অনুরক্ত করাবেন, অতঃপর শত্রুর ধনভাণ্ডার ও অন্য প্রকৃতিগুলো নিজ অধিকারে আনয়নে সচেষ্ট হবেন, এভাবে তিনি পৃথিবী জয়ের দ্বিতীয় স্তর অতিক্রম করবেন।

১৩-০৪-১৫ দশরাজমণ্ডলের অনুপস্থিতিতে রাজা নিজের শত্রুর মাধ্যমে শত্রুর মিত্রকে এবং নিজের মিত্রের মাধ্যমে শত্রুকে উভয়দিক হতে উৎপীড়িত করে অনুকূলিত করতে সচেষ্ট হবেন এবং এভাবে তিনি পৃথিবী জয়ের তৃতীয় স্তরে উপনীত হবেন। অথবা তিনি শক্য তথা হীনবল হেতু সহজেই জয়যোগ্য এবং একজন মিত্রহীন সামন্ত নৃপতিকে নিজের আয়ত্তাধীন করবেন। এভাবে দ্বিগুণ বলবিশিষ্ট হয়ে দ্বিতীয় এক সামন্ত নৃপতিকে আয়ত্তাধীন করবেন, এভাবে ত্রিগুণ বলবিশিষ্ট হয়ে তৃতীয় কোনো সামন্ত নৃপতিকে আয়ত্তাধীন করবেন, এ প্রক্রিয়া অবলম্বনের মাধ্যমে রাজা পৃথিবী জয়ের চতুর্থ স্তরে উপনীত হবেন। এভাবে পৃথিবী তথা রাজ্য জয় করে তিনি রাজধর্মানুসারে বর্ণ ও আশ্রমসমূহের যৌক্তিক বিন্যাসের মাধ্যমে পৃথিবী তথা রাজ্য ভোগ করবেন।

গোপন প্ররোচনা, গুপ্তচরদের কার্যকলাপ, শত্রুকে দুর্গ থেকে অপসারণ, চারিদিক থেকে শত্রুর দুর্গ অবরোধ এবং শত্রুর দুর্গ ধ্বংসকরণ। এই পাঁচটি উপায়ে শত্রুর দুর্গ অধিকার বা হস্তগত করা যায়।

পঞ্চম অধ্যায় ॥ ১৭৬ প্রকরণ ॥

এই অধ্যায়ে রাজা কর্তৃক বিজিত ভূমিতে শান্তি স্থাপনের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। বিজিত ভূমির জনগণ বিজিত রাজার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় নিপতিত হতে পারে, এক্ষেত্রে রাজা জনগণের এ ধরনের ভীতি দূরীকরনার্থে অভয়দান করবেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে বসবাসের ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিত করবেন।

১৩-০৫-০১ যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে রাজা দুই প্রকৃতির ভূমি লাভ করতে পারেন। এর একটি হলো, অটবি তথা বনাঞ্চল এবং অন্যটি হলো, জনপদ বা নগর। এ ধরনের ভূমি লাভ আবার তিন ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন—১. শত্রুর কাছ থেকে দখলকৃত নতুন ভূমি ২. শত্রু কর্তৃক অধিকৃত ভূমির পুনর্দখল এবং ৩. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির প্রত্যর্পন।

দখলকৃত ভূমির জনপদে রাজা তার গুণের কথা এবং শত্রু তথা ভূতপূর্ব রাজার দোষের কথা বহুলভাবে প্রচার করাবেন। এ ধরনের জনপদে বিজিত রাজা জনগণকে নিজেদের স্বধর্ম পালনে বাধা প্রদান করবেন না। কৃষিকাজের জন্য কৃষকদের ঋণ মঞ্জুর করবেন। জনগণকে কর রেয়াতি সুবিধা প্ৰদান করবেন। ভূমি দান করবেন। পূর্ববর্তী রাজার মতো প্রজাদের হিতার্থে জনকল্যাণমূলক কাজ করবেন। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ভূতপূর্ব রাজবিরোধী ও তার সহায়কগণকে ধনসম্পদ দানের মাধ্যমে পরিতৃপ্ত করবেন। যারা তার উপকার করেছে তাদের প্রসন্ন করবেন। কারণ, তিনি যদি উপকারকদের প্রীত না করেন তাহলে তাদের কাছে ওয়াদাভঙ্গকারী হিসেবে ধিকৃত হতে পারেন। তিনি নিজ দেশের মতো বিজিত জনপদের প্রজাদের চরিত্র, বেশভূষা, ভাষা ও জীবনাচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। বিজিত জনপদের ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব এবং আনন্দ উৎসবের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করবেন। এ সমস্ত নীতিকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তিনি বিজিত জনপদের আপাময় জনসাধারণের হৃদয় জয় করতে সচেষ্ট থাকবেন।

১৩-০৫-০২ রাজার নিযুক্ত সত্রী নামক গুপ্তচররা বিজিত রাজ্যের গ্রামে, নগরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রধানদের কাছে ভূতপূর্ব রাজার গর্হিত কার্যকলাপ বারংবার উত্থাপন করবেন এবং বিজিত রাজার উদারনৈতিক দিকগুলো বিশেষ করে নাগরিক অধিকার, কর রেয়াতি/অবমুক্তির সুবিধা এবং অন্যান্য জনহিতকর কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে তার মাহাত্ম্য প্রচার করবে। রাজা বিজিত জনপদের সকল দেবতা ও আশ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। পণ্ডিতশ্রেণি, শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ও প্রখ্যাত ধার্মিকগণকে ভূমি ও সম্পদ দান করে সন্তুষ্ট করবেন এবং কর রহিতের সুবিধা প্রদান করবেন।

তিনি দীনহীন ও অনাথদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন। কারারুদ্ধ ব্যক্তিদের মুক্তিদান করবেন। প্রতি চারমাসে পনেরো দিন প্রাণীহত্যা নিষিদ্ধ করবেন, এছাড়াও সারা বছর পূর্ণিমার সময় প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করবেন, রাজ্যাভিষেক এবং দেশজয়ের তিথিতেও প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করবেন। এছাড়াও তিনি সকল প্রকার স্ত্রীজাতীয় ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধসহ প্রাণীর পুরুষত্বনাশ (খাসিকরণ) নিষিদ্ধ করাবেন।

১৩-০৫-০৩ রাজার কাছে বিজিত জনপদের যে সমস্ত আচার প্রথা রাজস্ব, অনুশাসন ও ধর্মের জন্য ক্ষতিকারক বলে প্রতীয়মান হবে, তিনি সেগুলো অপসৃত করবেন এবং ধর্মানুগ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবেন। সমাজের হিতার্থে চোর ও ম্লেচ্ছদের একস্থানে দীর্ঘদিন বসবাস করতে দিবেন না। ভূতপূর্ব নৃপতির আস্থাভাজন মন্ত্রী, অমাত্য ও পুরোহিতদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে বসবাসের ব্যবস্থা করাবেন। বিজিত জনপদে বসবাসকারীদের মধ্যে যারা রাজার জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হবে, তাদের তিনি গোপনে হত্যা করাবেন। তিনি ভূতপূর্ব রাজার বিশ্বস্ত জনদের গুরুত্বপূর্ণ পদ হতে অপসারণ করে বিরোধী বা ভূতপূর্ব রাজার প্রতি অসন্তুষ্ট জনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত করবেন।

১৫-০৫-০৪ শত্রুর বংশোদ্ভূত কোনো রাজপুরুষ যদি রাজ্যস্থ কোনো ভূমি অধিগ্রহণ করতে সমর্থ হয় অথবা কোনো অভিজাত ব্যক্তি যদি সীমান্ত প্রদেশে অবস্থান করে বিজিত রাজাকে মোকাবেলা করার সমর্থতা অর্জন করে, সেক্ষেত্রে রাজা উক্ত প্রকৃতির ব্যক্তিগণকে অনুর্বর ভূমি বা উর্বরা ভূমির এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারেন। বিনিময়ে তিনি তাদের থেকে অর্থ ও সেনাসহায়তা গ্রহণ করবেন। অতঃপর রাজা উক্ত প্রকৃতির ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জনপদের বাসিন্দাদের ক্ষেপিয়ে তুলবেন এবং প্রজাবিদ্রোহের মাধ্যমে হত্যা করাবেন। অমাত্যদের দ্বারা নিন্দিত রাজকর্মচারীদের রাজা দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন।

১৩-০৫-০৫ যে কারণে রাজার ভূমি ইতিপূর্বে শত্রু কর্তৃক অধিকৃত হয়েছিল, রাজা সেসব কারণ অনুসন্ধানপূর্বক তা নিবারণে সচেষ্ট হবেন এবং যে প্রজ্ঞার মাধ্যমে হৃতভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সে প্রজ্ঞা বা গুণাবলি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করবেন। পূর্বপুরুষের যেসব দুর্বলতার কারণে পিতৃভূমি শত্রু কর্তৃক অপহৃত হয়েছিল রাজা সেসব দুর্বলতা উৎপাটিত করবেন এবং পূর্বপুরুষের অন্যান্য গুণাবলি উদ্ভাসিত করণে সচেষ্ট হবেন। পূর্বে ধর্মানুগ বিধিবিধান প্রবর্তিত না হয়ে থাকলে তিনি তা প্রবর্তনে সচেষ্ট হবেন এবং পূর্বোক্ত শাসকের ধর্মানুগ আচার আচরণ যথারীতি অনুসরণ করবেন। রাজা কখনোই ধর্মহীন আচার আচরণ অনুমোদন করবেন না, অন্যদের দ্বারা এ জাতীয় বিষয় আচরিত হলে তিনি তা নিবৃত্তকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন