একাদশ অধিকরণ। প্রকরণ ১৬০-১৬১।
সঙ্ঘবৃত্ত (সম্মিলিত জোট) নামক একাদশ অধিকরণের দুটি প্রকরণ বা আলোচ্য বিষয় হলো—
১. রাজার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার্থে জোটভুক্ত পক্ষসমূহে পরস্পরিক বিভাজন বা ভেদ সৃষ্টি ২. উপাংশুদণ্ড তথা গোপনে অন্তর্ঘাতমূলক হত্যাযজ্ঞ।
এই অধ্যায়ে সঙ্ঘবৃত্ত, সঙ্ঘ বিশেষের উপায়, এর প্রয়োগ ও গুপ্তহত্যার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এছাড়াও এ পর্যায়ে কত ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে রাজার গুপ্তচররা রাজবিরোধী সঙ্ঘমুখ্যদের বিনাশ করবে, সেসব বিষয়ও আলোচিত হয়েছে।
১১-০১-০১ সঙ্ঘলাভ, দণ্ডলাভ (সৈন্য) এবং মিত্রলাভ। এই তিনটি লাভের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচারে সঙ্ঘলাভ সবদিক দিয়ে অধিক লাভজনক। কারণ, সঙ্ঘভুক্ত হলে এমনিতেই সৈন্য ও মিত্রলাভ করা যায়। সঙ্ঘভুক্ত হয়ে অবস্থানকালে শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হবার ভীতি দূরীভূত হয়। রাজা নিরাপদে অবস্থান করতে সক্ষম হয়ে থাকেন। এ কারণে তিনি মিত্র মনোভাবাপন্ন নৃপতিদের সাম ও দান প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের আয়ত্তাধীনে রাখবেন। অমিত্র মনোভাবাপন্নদের বিরুদ্ধে ভেদনীতি ও বল প্রয়োগের নীতি প্রয়োগ করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবেন। কাম্বোজ এবং সুরাষ্ট্র জনপদের বৈশ্য ও ক্ষত্রিয় শ্রেণির লোকেরা ব্যবসায়ী এবং শস্ত্রজীবী হয়ে জীবিকার্জন করে থাকে। যে কারণে এরা বণিক ও শস্ত্র সঙ্ঘভুক্ত হয়। অন্যদিকে লিচ্ছিবিক, ব্রজিক, মল্লক, মদ্রক, কুকুর, কুরু এবং পাঞ্চাল, এই সাতটি দেশের সঙ্ঘভুক্তরা রাজনামধারী সঙ্ঘপোজীবী।
১১-০১-০২ এই উভয় প্রকার সঙ্ঘভুক্তের যেসব সঙ্ঘমুখ্যরা রাজার বশীভূত নয়, তাদের মধ্যে বিভেদের বীজবপনের জন্য রাজা তার সত্রী নামক গুপ্তচরদের নিয়োগ করবেন। গুপ্তচররা সঙ্ঘের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে মুখ্যদের পরস্পরের বিকৃতঅঙ্গ, পারস্পরিক দ্বেষ, ক্ষোভ ও কলহের কারণ অনুসন্ধান করে চতুরতার মাধ্যমে সঙ্ঘ প্রধানের আস্থা অর্জন করবে এবং অন্যদের সঙ্গে তার বিদ্বেষ সৃষ্টি করাবে। গুপ্তচররা এদের একের বিরুদ্ধে অপরকে প্ররোচিত করে পারস্পারিক বিভেদ সৃষ্টি করাবে। আচার্য বা শিক্ষকের ছদ্মবেশধারী গুপ্তচররা পরস্পরের বিরুদ্ধে রোষাক্রান্ত সদস্যদের বিদ্যাশিক্ষা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ, জুয়াখেলা, প্রশ্নোত্তর বা ক্রীড়া উৎসবের উসিলায় একের বিরুদ্ধে অপরের বিবাদ সৃষ্টি করাবে। যেমন, শিষ্যত্বগ্রহণকারী একজন মুখ্যকে শিক্ষকবেশধারী গুপ্তচর বলবেন, ‘অমুক তোমাকে মূর্খ বলেছে’। ফলে উক্ত মুখ্যদ্বয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ নামক গুপ্তচররা গণিকালয়ে বা সুরালয়ে উপস্থিত হয়ে কোনো এক মাতাল বা বেশ্যাকে দিয়ে কোনো এক মুখ্যের বিরোধী তথা অন্য মুখ্যের প্রশংসা করিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ এবং বিভেদের সৃষ্টি করাবেন। অথবা সঙ্ঘমুখ্যদের প্রতি যারা ক্রুদ্ধ, ভীত, লুব্ধ বা তৎকর্তৃক অপমানিত, গুপ্তচররা সুকৌশলে তাদের অনুকূলিত করবে এবং মুখ্যদের সঙ্গে তাদের বিরোধ ঘটাবে। এছাড়া গুপ্তচররা স্বল্পস্বাচ্ছন্দভোগকারী মুখ্যের কুমারদের অধিক স্বাচ্ছন্দ ভোগকারী রাজকুমারদের বিরুদ্ধে সুখ বঞ্চনার অজুহাতে প্ররোচিত করে পরস্পরের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করিয়ে বিভাজিত করাবেন।
১১-০১-০৩ গুপ্তচররা সঙ্ঘস্থ হীনজনদের সঙ্গে সম্ভ্রান্তজনদের একাসনে ভোজন এবং আন্তঃপারিবারিক বিয়ে নিরোধ করে পরস্পরের মধ্যে বিরোধ উৎপাদন করাবে। অথবা এর বিপরীত ভূমিকার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে বিরোধ ঘটাবে। অথবা সঙ্ঘে কোনো সিদ্ধান্ত ন্যায্যভাবে নির্ণিত হলেও গুপ্তচররা অন্যদের তা না মানার জন্য প্ররোচিত করে পারস্পরিক আস্থা বিনষ্ট করিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করাবে। অথবা সঙ্ঘস্থিত সদস্যদের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিবাদ উপস্থিত হলে তীক্ষ্ণ নামক গুপ্তচররা এক পক্ষের পশু ও সহায় সম্পদ কৌশলে বিনষ্ট করে অপরপক্ষের উপর তার দায় চাপিয়ে উভয়ের মধ্যে বিদ্বেষের বীজ বপন করবে। সকল ধরনের কলহস্থলে গুপ্তচররা উপস্থিত হয়ে হীনপক্ষকে আর্থিক ও সেনা সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বশীভূত করবে এবং তাদের দিয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যা করাবে। সঙ্ঘচ্যুতদের রাজা বিভিন্ন প্রদেশে প্রেরণ করে পুনর্বাসনার্থে পাঁচ বা দশটি পরিবারকে একস্থানে কৃষিকাজে নিয়োজিত করবেন। এদের সকলকে কোনো একটি স্থানে পুনর্বাসিত করবেন না, এতে করে তারা জোটবদ্ধ হয়ে রাজার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে পারে। তদুপরি তারা যদি রাজার বিরুদ্ধে জোট পাকাতে সচেষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে তিনি তাদের বিরুদ্ধে দণ্ড আরোপ করবেন।
১১-০১-০৪ সঙ্ঘস্থ অবরুদ্ধ গুণবান ও অভিজাত রাজকুমারকে রাজা রাজপুত্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে স্বপক্ষভুক্ত করাবেন। অতঃপর রাজার নিয়োগকৃত কার্তান্তিক তথা দৈবজ্ঞ ও সামুদ্রিক শাস্ত্রবিশারদগণ উক্ত রাজপুত্রকে রাজত্ব গ্রহণের উপযুক্ত হিসেবে অভিহিত করে তার গুণকীর্তণ করবে এবং উক্ত রাজপুত্রের প্রতি রাজানুগত্য প্রকাশের জন্য সঙ্ঘস্থ অন্যান্য মুখ্যগণকে প্ররোচিত করবে। এভাবে মুখ্যরা রাজা কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে সঙ্ঘচ্যুত হয়ে উক্ত রাজকুমারের পেছনে সমবেত হলে সঙ্ঘের ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে। অতঃপর রাজবিদ্বেষী সঙ্ঘভুক্তরা রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হলে সুরা বিক্রেতার বেশধারী গুপ্তচররা স্বীয় স্ত্রী বা পুত্রের মিথ্যে মৃত্যুর কথা প্রকাশ করে ছলনার মাধ্যমে তদীয় আত্মার উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত বিষযুক্ত মদ সরবরাহ করবে এবং এ প্রক্রিয়ায় প্রতিপক্ষের লোকদের বিষাক্ত মদ্য পান করিয়ে হত্যা করাবে।
১১-০১-০৫ সঙ্ঘস্থ সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভেদ সৃষ্টির নিমিত্ত সত্ৰী নামক গুপ্তচররা যজ্ঞস্থান বা দেবন্দিরের প্রবেশ পথে কিংবা সংরক্ষণ স্থানে রাজমোহরযুক্ত মূল্যবান দ্রব্য, স্বর্ণে পরিপূর্ণ পাত্র বা অর্থের থলি লুকিয়ে রাখবে। অতঃপর সঙ্ঘস্থ লোকেরা এ ব্যাপারে অনুসন্ধিৎসু হলে গুপ্তচররা রাজমোহর প্রদর্শনপূর্বক এ সমস্ত সম্পদ রাজার বলে দাবি করে তাদের উপর দোষারোপ করবে এবং চৌর্যবৃত্তির অপরাধে অভিযুক্ত করে তাদের হত্যা করবে। অথবা রাজা সঙ্ঘের সম্পদ ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে অনতিকালেই তা সবার অজান্তে সঙ্ঘপ্রধানের কাছে প্রত্যর্পন করবেন। অতঃপর সঙ্ঘের লোকেরা তা ফেরত প্রদানের জন্য রাজার কাছে অনুরোধ জ্ঞাপন করলে, ইতিমধ্যেই তা সঙ্ঘমুখ্যের কাছে প্রত্যার্পিত হয়েছে বলে তাদের অবহিত করবেন। এর ফলে সঙ্ঘমুখ্যের সঙ্গে অন্যান্য সদস্যদের পারস্পারিক অবিশ্বাসের বীজরোপিত হবে এবং তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে।
১১-০১-০৬ অথবা সত্রী নামক গুপ্তচররা সঙ্ঘমুখ্যের কোনো শৌর্যবান আত্মপ্রত্যয়ী অভিমানী পুত্রকে একথা বলে প্ররোচিত করবে যে, সে একজন রাজার পুত্র, শত্রুর ভয়ে ভীত হয়ে তাকে সঙ্ঘমুখ্যের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে। গুপ্তচরদের এ ধরনের চাতুরিপূর্ণ কথায় অভিভূত হয়ে উক্ত পুত্রকর্তৃক তাদের প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করা হলে রাজা তাকে অর্থ ও সৈন্য সহায়তা প্রদান করে তার মাধ্যমে সঙ্ঘের উপর আঘাত হানাবে। অতঃপর রাজা তার স্বার্থ হাসিলের পর পুত্রটিকে কৌশলে হত্যা বা নির্বাসনে প্রেরণ করাবেন।।
১১-০১-০৭ নট, নর্তক, যাদুকর বা ঐন্দ্রজালিকের বেশধারী গুপ্তচররা চতুরতার মাধ্যমে অপরূপসুন্দরী নারীদের দিয়ে সঙ্ঘমুখ্যগণকে মোহগ্রস্ত করাবে। অতঃপর সঙ্ঘের কোনো মুখ্য এরূপ কোনো নারীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়লে, কাঙ্ক্ষিত নারীর সঙ্গে অচিরেই মিলনের আশ্বাস প্রদান করে গুপ্তচররা তার আস্থা অর্জন করবে এবং পরবর্তী সময় কামাসক্ত মুখ্যের সমীপে এ কথা ব্যক্ত করবেন যে তার কাঙ্ক্ষিত নারীটি অন্য এক মুখ্য কর্তৃক বলপূর্বক অপহৃত হয়েছে। এভাবে গুপ্তচররা মুখ্যদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করাবে। অতঃপর তারা দ্বন্দ্বমুখর কোনো একজন মুখ্যকে কৌশলে হত্যা করবে এবং অপরজনের উপর সেই হত্যাকাণ্ডের দায় চাপিয়ে একথা প্রচার করবে যে এক কামুক বা লম্পট কর্তৃক অপর লম্পট নিহত হয়েছে।
১১-০১-০৮ এহেন প্রেক্ষাপটে কোনো সঙ্ঘমুখ্য যদি দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি পরিহার করে নীরবতা অবলম্বনের পন্থা গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুন্দরী নারীটি তার সমীপে উপস্থিত হয়ে বলবে, ‘আমি আপনার প্রণয়াসক্ত কিন্তু অমুক মুখ্যের বিরোধিতার কারণে আপনার সমীপে সমর্পিত হতে পারছি না, উক্ত মুখ্য জীবিত থাকাকালে আমি আপনার হতে পারব না, অতএব আমাকে পেতে হলে উক্ত মুখ্যকে হত্যা করুন’। এভাবে গুপ্তচররা ছলনার মাধ্যমে এক মুখ্যকে দিয়ে অপর মুখ্যকে হত্যা করাবে। অথবা এরূপ ছলনাময়ী সুন্দরী নারী কোনো সঙ্ঘমুখ্য কর্তৃক বলপূর্বক অপহৃতা হয়ে অরণ্যকুঞ্জে বা ক্রীড়াগৃহে উপভোগের নিমিত্তে আনীত হলে, উক্ত নারী কৌশলে তীক্ষ্ণনামক গুপ্তচরদের দিয়ে বা বিষ পান করিয়ে উক্ত মুখ্যকে হত্যা করাবে এবং একথা প্রচার করাবে যে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো এক কামাসক্তের দ্বারা তার মনের মানুষটি ঘাতিত হয়েছে।
১১-০১-০৯ অথবা বিশুদ্ধ পুরুষের ছদ্মবেশধারী কোনো গুপ্তচর কামাসক্ত বা লম্পট মুখ্যকে তার কাঙ্ক্ষিত নারীকে বশীভূত করানোর জন্য বিশেষ ঔষধ পান করানোর উসিলায় কৌশলে বিষাক্ত পানীয় পান করিয়ে হত্যা করে সুকৌশলে গা ঢাকা দিবে। অতঃপর অন্যান্য গুপ্তচররা এ কথা প্রচার করবে যে উক্ত কামাসক্ত মুখ্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো এক লম্পাট মুখ্যকর্তৃক ঘাতিত হয়েছে।
অথবা কোনো ধনবতী সুন্দরী বিধবা বা গোপনে ব্যাভিচারে মত্তা সুন্দরীর ছদ্মবেশধারী গুপ্তচরদের সহায়ক নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা করিয়ে নেয়ার উসিলায় বিবাদরত অবস্থায় সঙ্ঘমুখ্যদের সমীপে উপস্থিত হবে এবং রূপ যৌবনের আকর্ষণে তাদের মোহগ্রস্ত করবে, অথবা দেবতার চিত্র প্রদর্শন করে জীবিকা নির্বাহকারী অদিতি নারী, কৌশিক বা বেদেনি নারী, নর্তকী এবং গায়িকার বেশধারী গুপ্তচরদের সহায়ক সুন্দরীরা রূপের জৌলুসে আকৃষ্ট করে সঙ্ঘমুখ্যদের কামভাবে আসক্ত করাবে। অতঃপর কামাসক্ত সঙ্ঘমুখ্যরা যৌনাবেদনে মোহগ্রস্ত হয়ে উক্ত নারীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সম্ভোগের অভিপ্রায়ে রাত্রিতে কোনো গোপন স্থানে উপস্থিত হলে আগের থেকে ওত্ পেতে থাকা তীক্ষ্ণ নামক গুপ্তচররা কৌশলে তাদের হত্যা করবে বা অপহরণ করবে।
১১-০১-১০ অথবা সত্রী নামক গুপ্তচররা লম্পট সঙ্ঘমুখ্যকে এ কথা বলে উদ্বেলিত করবে যে কোনো এক গ্রামে দরিদ্রবংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি অপরূপা স্ত্রীকে রেখে জীবিকার সন্ধানে বিদেশে চলে গেছে, অপরূপা উক্ত নারীটি রাজভোগের উপযুক্তা এবং তার স্ত্রীর মর্যাদায় আসীন হবার যোগ্য, তিনি তাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে পারেন। অতঃপর কথিত নারীটি সঙ্ঘমুখ্য কর্তৃক স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃত হলে, দিন পনেরো পর বিশুদ্ধ লোকের ছদ্মবেশধারী কোনো এক গুপ্তচর রাজার বিরোধিতাকারী সঙ্ঘমুখ্যদের সমাবেশ উপস্থিত হয়ে ক্রন্দন করতে করতে এ কথা প্রকাশ করবে যে উক্ত সঙ্ঘমুখ্য কর্তৃক তার স্ত্রী, বোন বা পুত্রবধূ সম্ভোগের নিমিত্ত বলপূর্বক অপহৃত হয়েছে। অতঃপর উক্ত সঙ্ঘমুখ্য রাজবিরোধী সঙ্ঘমুখ্যদের দ্বারা নিগৃহীত হলে রাজা তাকে নিজপক্ষভুক্ত করে সহায়তা প্ৰদান করবেন এবং তার মাধ্যমে বিরোধী সঙ্ঘমুখ্যদের হত্যা করাবেন। কিন্তু উক্ত মুখ্য যদি রাজবিরোধী মুখ্যদের মাধ্যমে নিগৃহীত না হয়, সেক্ষেত্রে অন্যান্য গুপ্তচররা বিশুদ্ধ লোকের বেশধারীকে (সাধারণত হত্যা করার জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের এ ধরনের গুপ্তচর বৃত্তির কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়) কৌশলে হত্যা করে উক্ত সঙ্ঘমুখ্যের উপর এই হত্যা ও ব্যাভিচারের দায় চাপিয়ে তাকেও হত্যা করাবে।
১১-০১-১১ কার্তান্তিক বা জ্যোতিষীর ছদ্মবেশধারী কোনো এক গুপ্তচর সঙ্ঘমুখ্যদের কোনো একজনের বাগদত্তা স্ত্রী সম্পর্কে অন্য একজনের কাছে ভবিষ্যত বাণীর ছল করে বলবে, ‘উক্ত নারী একদিন রাজরানি হবে এবং তার গর্ভজাত সন্তান হবে রাজত্বের উত্তরাধিকারী, অতএব যিনি উক্ত নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন তিনি হবেন রাজা। এ অবস্থায় আপনি আপনার সর্বস্ব ত্যাগ করে কিংবা বলপ্রয়োগ করে হলেও উক্ত নারীকে কব্জা করুণ।’ এভাবে প্ররোচিত হয়ে উক্ত সঙ্ঘমুখ্য যদি ওই নারীকে হাসিল করতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে গুপ্তচররা তার সঙ্গে পূর্বোক্ত বাগদত্তা স্বামীর বিরোধ বাধিয়ে দিবে। এর অন্যথা হলেও উভয়ের মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে গুপ্তচররা পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে তাদের কার্যসিদ্ধি করবে।
১১-০১-১২ অথবা ভিখারিনীর ছদ্মবেশধারী কোনো এক গুপ্তচর স্ত্রীর প্রেমে প্রমত্ত কোনো এক সঙ্ঘমুখ্যকে বলবে, ‘অমুক কামাসক্ত যুবক আপনার স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্ভোগের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য প্রেমপত্র ও গহনাসহ আমাকে দূত হিসেবে প্রেরণ করেছে, আমি তার ভয়ে ভীত হয়ে আপনার সমীপে হাজির হয়েছি, আপনার স্ত্রী নিষ্কলুষ, এ অবস্থায় আপনি উক্ত যুবককে হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহণ করুন এবং আমাকে রক্ষা করুন।’ এভাবে উভয় সঙ্ঘমুখ্যের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হলে রাজা স্বল্পশক্তিসম্পন্ন মুখ্যের পক্ষাবলম্বন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন এবং তার মাধ্যমেই অন্য মুখ্যকে হত্যা করাবেন।
১১-০১-১৩ এই ধরনের নানাবিধ চাতুর্যপূর্ণ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে রাজা নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস গ্রহণ করবেন এবং ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে সঙ্ঘে অবস্থান করে নিজেকে রক্ষা করে চলবেন। তিনি সঙ্ঘপ্রধান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ধর্মসম্মতভাবে ন্যায়বৃত্তি অনুসরণপূর্বক প্রজাহিতকারী হিসেবে সকলের প্রিয়ভাজন হয়ে রাজত্ব পরিচালনায় প্রবৃত্ত হবেন।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন