পঞ্চদশ অধিকরণ (তন্ত্রযুক্তি)

পঞ্চদশ অধিকরণ। প্রকরণ ১৮০।

তন্ত্রযুক্তি নামক পঞ্চদশ অধিকরণের একটি প্রকরণ বা আলোচ্য বিষয়ের বক্তব্য হলো, একটিমাত্র অধ্যায়ে এই অধিকরণের আলোচনা সীমাবদ্ধ। এই গ্রন্থের প্রথম থেকে চতুর্দশ অধিকরণে সমাজজীবনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। শেষোক্ত অধিকরণে উদ্ধৃত হয়েছে অর্থশাস্ত্রের অর্থ নির্ণয়ের উপযোগী যুক্তিসমূহ।

প্রথম অধ্যায় ॥ ১৮০ প্রকরণ ॥

এই অধিকরণকে বলা হয়েছে ‘তন্ত্রযুক্তয়’। একটিমাত্র অধ্যায়ে এই অধিকরণের আলোচনা সীমাবদ্ধ। এই গ্রন্থের প্রথম থেকে চতুর্দশ অধিকরণে সমাজজীবনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। শেষোক্ত অধিকরণে অর্থ শাস্ত্রের অর্থ নির্ণয়ের উপযোগী যুক্তিসমূহ উদ্ধৃত হয়েছে।

১৫-০১-০১ মানুষের জীবিকাকে বলা হয় অর্থ, সেই নিরিখে মানুষের জীবিকা ও জীবনাচার সম্পর্কিত শাস্ত্রকেই বলা হয় অর্থশাস্ত্র। অর্থশাস্ত্র বত্রিশটি যুক্তিসম্পৃক্ত। যুক্তিগুলো হলো-অধিকরণ তথা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। বিধান তথা অধিকরণের অন্তর্গত আলোচনাক্রম। যোগ তথা বিষয়ের অর্থ ব্যাখ্যার বাক্য যোজনা। পদার্থ তথা একটি পদের অর্থ। হেতুর্থ তথা অর্থের সিদ্ধিকারক হেতু। উদ্দেশ তথা বাক্যের সার-সংক্ষেপ। নির্দেশ তথা বিস্তৃত বাক্যের বিন্যাস। উপদেশ তথা উপদেশমূলক নির্দেশনা। অপদেশ তথা অন্যের বক্তব্য উদ্ধৃতকরণ। অতিদেশ তথা পূর্বে কথিত বক্তব্যের পুনরুল্লেখ। প্রদেশ তথা ভবিষ্যতে প্রদত্ত বক্তব্যের আগাম প্রকাশ। উপমান তথা বিদ্যমান বিষয়ের উদ্ধৃতিক্রমে ভবিষ্যতের না জানা বিষয় সম্পর্কিত ইঙ্গিত প্রদান। অর্থাপত্তি তথা কথিত বিষয় হতে না বলা বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞান। সংশয় তথা দ্বৈত ভাবার্থক বক্তব্য। প্রসঙ্গ তথা অন্য বক্তব্যের সাদৃশ্যপূর্ণ বক্তব্য। বিপর্যয় তথা বক্তব্যের বিপরীত কিছুর নির্দেশনা। বাক্যশেষ তথা বাক্যের মাধ্যমে বক্তব্যের সমাপ্তি। অনুমত তথা অন্যের বাক্যের সাথে দ্বন্দ্বহীনতা। ব্যাখ্যান তথা সিদ্ধবিষয়ের অত্যধিক যৌক্তিক বর্ণনা। নির্বাচন তথা গুণ অনুসারে শব্দের নিষ্পত্তি। নিদর্শন তথা দৃষ্টান্তের উদ্ধৃতিক্রমে দৃষ্টান্ত প্রদান। অপবর্গ তথা বিস্তারিত বক্তব্য হতে অপসৃতির মাধ্যমে বক্তব্যের সঙ্কোচন। স্বসংজ্ঞা তথা শব্দের সংকেত অন্য বস্তুতে অপ্রবর্তিত। পূর্বপক্ষ তথা বাক্যের প্রতিষেধক। উত্তরপক্ষ তথা পূর্ব পক্ষের নির্ণায়ক বাক্য। একান্ত তথা অপরিত্যাজ্য যা সর্বকালের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। অনাগতাবেক্ষণ তথা ভবিষ্যতে এভাবে করা যাবে বলা। অতিক্রান্তাবেক্ষণ তথা পূর্বে এভাবে কোনোকিছু সম্পাদিত হয়েছে বলা। নিয়োগ তথা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কোনোকিছু সম্পাদনার ইঙ্গিত। বিকল্প তথা বিবিধভাবে কর্ম সম্পাদনের ইঙ্গিত। সমুচ্চয় তথা দ্বৈতভাবে কর্ম সম্পাদনের পদ্ধতি এবং উহ্য তথা না বলা কথার উদ্ধৃতিকরণ।

শেষান্তে তিনটি শ্লোকের মাধ্যমে এ বার্তা প্রদান করা হয়েছে যে ইহকাল ও পরকালের সুখ প্রাপ্তির জন্য শাস্ত্র সম্পর্কিত এই গ্রন্থটি প্রণীত হয়েছে। এই শাস্ত্র ধর্ম, অর্থ ও কামের বিকাশ সাধনে সহায়ক এবং অধর্ম নাশক। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যিনি অস্ত্র ও শাস্ত্রের মাধ্যমে নন্দরাজের বিনাশ করে রাজ্য উদ্ধার করেছিলেন, সেই তিনি তথা কৌটিল্য এই গ্রন্থের প্রণেতা। শাস্ত্রকারদের বহুরৈখিক বিতর্ক অবসানকল্পে স্বয়ং বিষ্ণুগুপ্ত তথা কৌটিল্য নিজ সূত্রানুযায়ী এ গ্রন্থের ভাষ্য রচনা করেছেন।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন