আমরা আর তারা

তসলিমা নাসরিন

আমরা সবাই দেখেছি বদরুল কী করে কুপিয়েছে খাদিজাকে। যখন কোপাচ্ছিল, বদরুলের মনে হয়নি সে কোনো অন্যায় করছে। বদরুল কি মানসিক রোগী? না, বদরুল কোনো মানসিক রোগী নয়। বদরুল সুস্থ মস্তিষ্কেই কোপানোর কাজটি করেছে। সুস্থ মস্তিষ্কে সে চাপাতি কিনেছে, সুস্থ মস্তিষ্কে সে ভেবেছে ওই চাপাতি দিয়ে সে কুপিয়ে মারবে খাদিজাকে, কারণ খাদিজা তার আদেশ এবং উপদেশ কোনোটিই মেনে নিচ্ছে না। কোপানোর দৃশ্যটি দেখতে ভয়ঙ্কর হলেও ওটিই সমাজের চিত্র। সমাজের সত্যিকার চিত্রটি ভয়ঙ্কর। এভাবেই পুরুষ নারীকে কোপায়, পেটায়, লাথি মারে, চাবুক মারে, জুতো মারে, প্যান্টের বেল্ট খুলে মারে,  উঠোনে ফেলে হাতের কাছে বাঁশ ডাল লোহা লাকড়ি যা পায় তা দিয়েই মারে, পাথর ছুড়ে মারে, অ্যাসিড ছুড়ে মারে। এভাবেই পুরুষ নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মারে, কড়িকাঠে ঝুলিয়ে মারে, জলে ফেলে দিয়ে মারে, সাততলা থেকে ধাক্কা দিয়ে মারে। খাদিজা ‘লাইফ সাপোর্টে’ আছে, আমরা নারীরাও পুরুষের এই সমাজে ‘লাইফ সাপোর্টে’ আছি। আমরা মৃত। কারণ পুরুষেরা আমাদের মৃত দেখতে ভালোবাসে। আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো নড়লে চড়লে, আমাদের খুশিমতো বাঁচলে পুরুষেরা আমাদের হত্যা করে, তাই আমাদের ইচ্ছেগুলোর ডানা কেটে দিয়ে আমরা মৃত হয়ে থাকি, পুরুষেরা আমাদের ‘লাইফ সাপোর্ট’ দিয়ে রাখে, ‘লাইফ সাপোর্ট’, তারাও জানে এবং আমরাও জানি, যে কোনো সময় বন্ধ করে দিতে পারে তারা। পুরুষেরা যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায়, মেরে ফেলতে পারে। তারা যদি আমাদের হেনস্থা করতে চায়, অপদস্থ করতে চায়, করতে পারে। তারা চাইছে বলেই করছে। আজো তারা প্রতিদিন আমাদের হত্যা করছে, হেনস্থা করছে, অপদস্থ করছে। পুরুষেরা তাদের প্রয়োজনে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আমরা আমাদের প্রয়োজনে বেঁচে থাকতে পারি না। পুরুষের এই  পৃথিবীতে সে অধিকার আমাদের নেই।

আমি জানি পুরুষেরা বলবে, ‘সব পুরুষ এক নয়’। আমি নিশ্চিত বদরুলও বলেছে এমন কথা। বলেছে সব পুরুষ এক নয়। তা ঠিক সব পুরুষ এক নয়, সব পুরুষ রাস্তাঘাটে ধর্ষণ করছে না বা খুন করছে না। অনেকে যে ইচ্ছে করেই করছে না তা নয়। অনেক পুরুষই ধর্ষণ করার বা খুন করার সুযোগ পাচ্ছে না বলেই করছে না। কিন্তু যদি রাগ ওঠে, বদরুলের মতো হঠাৎ রাগ, তাহলে কিন্তু অনেকেই করে ফেলতে পারে। কে ফেলবে, কে ফেলবে না কেউ বলতে পারে না। আমরা পারি না। আমরা পারি না বলে আমরা চাই না আমাদের ওপর কোনো পুরুষ রাগ করুক। সব পুরুষকেই খুশি রাখতে চাই আমরা। ঘরের পুরুষকে তো বটেই, বাইরের পুরুষকেও। পুরুষদের খুশি না রাখলে আমাদের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা তাই নারীর ওপর বিভিন্ন কারণে অখুশি হলেও পুরুষদের ওপর কোনো কারণেই অখুশি হই না। আমরা নারীকে গালি দিলেও পুরুষকে গালি দিতে ভয় পাই। গালি দিলে পুরুষেরা আমাদের জীবন পুরো নরক করে দেবে। নারীদের নরক করার শক্তি অতটা নেই বলে নারীর বিরুদ্ধে প্রায়ই খড়গহস্ত হই।

পুরুষেরা যা চায়, আমরা তাই করি। তারা যখন চায় না আমরা লেখাপড়া শিখি, আমরা লেখাপড়া শিখি না, তারা যখন চায় আমরা ইস্কুলে যাই, আমরা ইস্কুলে যাই, তারা যখন চায় না আমরা চাকরি-বাকরি করি, আমরা চাকরি-বাকরি করি না, তারা যখন চায় করি, আমরা করি। যা কিছুই আমরা করি, পুরুষেরা রাজি বলেই করি। যা কিছুই করা থেকে আমরা নিজেদের বিরত রাখি, পুরুষেরা চায় না বলেই রাখি। আমরা তাদের ক্রীতদাসী। ক্রীতদাসী শব্দটা শুনতে খারাপ শোনায় বলে আমরা বিভিন্ন নামে নিজেদের ডাকি, নিজেদের আমরা পুরুষের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা, বান্ধবী, প্রতিবেশী,পরিচিতা ইত্যাদি বলে ডাকি।

পুরুষেরা আমাদের কাছে যা চায়, তা যদি আমরা না করি, তাহলে আমাদের কী হাল হয়, তা নিশ্চয়ই আমরা সবাই জানি। আমরা নির্যাতিত হবো, আমরা নির্বাসিত হবো। আমরা ধর্ষিতা হবো, খুন হবো। অথবা আমাদের আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হবে। আমি আজ নির্বাসিত, কারণ পুরুষের এঁকে দেওয়া সীমা আমি লঙ্ঘন করেছি। আমি সেসব কথা বলেছি, যেসব আমার বলার কথা নয়। আমি নারীর অধিকারের দাবি করেছি, পুরুষের তৈরি ধর্মগুলো মানবো না বলে ঘোষণা দিয়েছি। আমি আজ নির্বাসিত, কারণ আমি পুরুষের অবাধ্য হয়েছি।

আমি জানি অনেকে বলবে, কই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো নারী, বিরোধী দলের প্রধানও নারী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীও নারী।   কে বলেছে নারীর সুযোগ-সুবিধে নেই? আমি কিন্তু বলি, ওঁরা নারী নন। যে যাই বলুক, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম আসলে শেখ মুজিবুর রহমান, বিরোধী দলের প্রধানের নাম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাম জিয়াউর রহমান।

আমি যখন খাদিজাকে কোপানোর ভিডিওটা দেখছিলাম, আমার মনে হচ্ছিল খাদিজাকে নয়, আমাকে কোপানো হচ্ছে।   বদরুল নামের ছেলেটির প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হইনি বলে আমাকে কুপিয়ে মেরে ফেলছে বদরুল। যদি রাজি হতামও, যদি বদরুলের সঙ্গে প্রেম করতাম অথবা তাকে বিয়ে করতাম, তাহলেও কোপাতো। আমাকে সংসারের খাঁচায় বন্দী করতো। প্রতিদিন আমার ইচ্ছেগুলোর ওপর কোপ পড়ত।

বদরুল জানে মেয়েদের মারলে শাস্তি পেতে হয় না, তাই মেরেছে। প্রতিদিন মেয়েরা মার খাচ্ছে পুরুষের হাতে, কোনও পুরুষই শাস্তি পাচ্ছে না। স্বয়ং ঈশ্বরই বলে দিয়েছেন মেয়েদের ঘাড়ের রগ একটু ত্যাড়া, ওদের শাসন করতে হয়, কথা না শুনলে মারতে হয়। মেয়েরা ঘরে বাইরে প্রতিদিনই মার খাচ্ছে। মার খাওয়াটা তাদের অনেক আগেই গা সওয়া হয়ে গেছে। বদরুল ঈশ্বরের উপদেশ মেনেই মেরেছে। অথবা সমাজের প্রথা মতোই মেরেছে। কিন্তু মারটা নিয়ে মিডিয়া চিৎকার করেছে বলেই মারের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ জড়ো হয়েছে। এটা নিয়ে মিডিয়া চুপ হয়ে গেলে মানুষ ভুলে যাবে খাদিজাকে, বদরুল মুক্তি পেয়ে আরও মেয়েদের কোপাতে থাকবে, শারীরিক না হলেও মানসিক। কত শত মেয়েকে কত শত পুরুষেরা নির্যাতন করেছে, এখনো করছে। পৃথিবীর কত কিছু ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে, শুধু মেয়েদের ওপর পুরুষের আধিপত্যেরই কোনো হেরফের হয়নি। সম্ভবত এটি থেকেই যাবে পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত। অথবা একটা সময় আসবে, যখন মেয়ে বলে কিছু আর থাকবে না। পৃথিবীজুড়ে শুধু থাকবে পুরুষ, পুরুষ আর পুরুষ।

সোর্স : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ অক্টোবর, ২০১৬

সকল অধ্যায়

১. লিঙ্গসূত্র
২. যৌবনে ছেলেরা ডেয়ারিং
৩. পতিতা প্রথা বন্ধ হোক
৪. অপ্রত্যাশিত
৫. বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি?
৬. পুরুষ নিয়ে মেয়েদের কাড়াকাড়ি বাড়াবাড়ি
৭. নারীর যৌন কামনা থাকতে নেই
৮. দেশ আর দেশ নেই
৯. আমার গৌরব, আমি স্বেচ্ছাচারী
১০. ধর্মে নেই, উৎসবে আছি
১১. বেলা যায় মেলা যায়
১২. তোমাকে অভিবাদন, এলফ্রিডা
১৩. যাই বল নইপল
১৪. আমার দেহ নিয়ে আমি যা খুশি করব
১৫. বাবা
১৬. সেক্সবয় (গল্প)
১৭. সকল গৃহ হারালো যার
১৮. অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে থাকে
১৯. মেয়েদের শরীর পুরুষের চোখে
২০. পৃথিবীর প্রাচীনতম নির্যাতন
২১. পেছনের দিনগুলো ধুসর ধুসর
২২. খারাপ মেয়ের গল্প (গল্প)
২৩. হুমায়ূন : পুরুষতন্ত্রের সম্রাট
২৪. তুই নিষিদ্ধ তুই কথা কইস না
২৫. অনুমতি না নিয়ে আমার শরীর স্পর্শ করেছিলেন সুনীল
২৬. পৃথিবীর পথে
২৭. পৃথিবীর পথে ২
২৮. মিডিয়া এবং মানুষ
২৯. নারীবিদ্বেষের কারণ পুরুষতন্ত্র
৩০. সন্ত্রাস
৩১. বিহারি সমস্যা
৩২. রঘু রাই এবং শরণার্থী
৩৩. এ লড়াই প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের নয়
৩৪. বেড়ালের গল্প
৩৫. ফিলিস্তিন এক টুকরো মাটির নাম
৩৬. পর্নোগ্রাফি
৩৭. সেইসব ঈদ
৩৮. কামড়ে খামচে মেয়েদের ‘আদর’ করছে পুরুষেরা
৩৯. সুন্দরী
৪০. ধর্ম থাকবে, নারীর অধিকারও থাকবে, এটা হয় না
৪১. সানেরার মতো মেয়ে চাই- আছে?
৪২. প্রতিবেশি দেশ
৪৩. বামপন্থীদের ভুল
৪৪. বাঙালির বোরখা
৪৫. শাড়ি ব্লাউজ
৪৬. বিয়ের বয়স
৪৭. সেইসব ঈদ
৪৮. ন্যাড়া কি বেলতলা যায়
৪৯. লতিফ সিদ্দিকী এবং মানুষের ধর্মানুভূতি
৫০. বাকস্বাধীনতার অর্থ কি এতটাই কঠিন?
৫১. কেন পারি না
৫২. নাবালিকা ধর্ষণ
৫৩. রেলমন্ত্রীর বয়স এবং বিয়ে
৫৪. চুমু চুমু চুমু চুমু
৫৫. এত ঘৃণা করে ওরা মেয়েদের!
৫৬. সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবির সুমন
৫৭. তারপর কী হলো
৫৮. কিছু প্রশ্ন। কিছু উত্তর।
৫৯. দূর থেকে হয় না
৬০. আরীব মজিদরা জেলের বাইরে থাকলে আমরা অনেকেই নিরাপদ নই
৬১. এতদিনে ভারতে সভ্য আইন
৬২. বোয়াল মাছের গল্প
৬৩. মেয়ে বলে ‘কম মানুষ’ নই
৬৪. উপন্যাস : ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
৬৫. প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ব্যক্তিগত চিঠি
৬৬. ধর্মান্তরণ
৬৭. গণধর্ষণ
৬৮. নির্বাসিত একটি ছবির নাম
৬৯. শার্লি আবদো
৭০. কল্পনার রাজ্য
৭১. কোকো, খালেদা আর দেশের দগ্ধ সন্তানেরা
৭২. গরিবের গ্রেনেড
৭৩. বাংলা একাডেমির অসভ্যতা
৭৪. অভিজিৎকে যেভাবে চিনি
৭৫. নারী দিবস
৭৬. বাঘ আর বেড়াল
৭৭. বাংলাদেশিদের দেশপ্রেম
৭৮. বাক স্বাধীনতা
৭৯. স্যানিটারি প্যাডে প্রতিবাদ
৮০. বাংলাদেশের কী কী করা উচিত ছিল এবং ছিল না
৮১. বাংলা সংস্কৃতি চলবে কী চলবে না
৮২. ঢাকাও কমাতে পারে জ্যাম আর দূষণ
৮৩. গ্যালিলিও এবং তার ‘জারজ মেয়ে’
৮৪. লজ্জাহীনতা
৮৫. প্রচলিত নারীবিদ্বেষী শব্দ ও প্রবাদ
৮৬. নিজের গোলা শূন্য
৮৭. শৃংখল ভেঙেছি আমি
৮৮. দেশপ্রেম না থাকাও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার
৮৯. ঢাকার বইমেলা ও একটি প্রেমের গল্প
৯০. খুব কাছে ওত পেতে আছে আততায়ী
৯১. নারী দিবস
৯২. ভারত এবং গরু
৯৩. আমার প্রথম সংসার
৯৪. খাজুরাহোর অভিজ্ঞতা
৯৫. চীনের অভিজ্ঞতা
৯৬. আমার জন্য কথা বলার কেউ নেই…
৯৭. সমাজ কি থেমে আছে?
৯৮. পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ
৯৯. কিছু প্রশ্ন, কিছু আশা
১০০. এই বাংলাদেশ আমার অচেনা
১০১. দেশের ভবিষ্যৎ
১০২. রোজা রাখার স্বাধীনতা
১০৩. চারদিকে প্রচুর ওমর মতিন
১০৪. আমার চোখের জলের ঈদ
১০৫. যদি পুরুষ হতাম
১০৬. জাকির নায়েকের বাকস্বাধীনতা
১০৭. কিছু সেলিব্রিটি মেয়ে তো ফাটাফাটি
১০৮. বিরুদ্ধ স্রোত
১০৯. মেয়েরা সেরা
১১০. মেয়েদের কাপড় চোপড়
১১১. মেয়েদের কাপড় চোপড়
১১২. সত্য বললে বিপদ
১১৩. আমরা আর তারা
১১৪. এরা কি মানুষ!
১১৫. লজ্জা বইটি এখনও নিষিদ্ধ কেন?
১১৬. বায়ু দূষণ
১১৭. সাঁওতালদের কথা
১১৮. হাতে টাকা নেই
১১৯. শিশুদের জন্য লোভের জিভ
১২০. যৌনকর্ম নাম দিয়ে পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার ষড়যন্ত্র
১২১. বুদ্ধিজীবী দিবস
১২২. সন্ত্রাস কোনো সমস্যার সমাধান নয়
১২৩. বাংলা একাডেমির হয়েছেটা কী
১২৪. যে বই তোমায় দেখায় ভয়, সে বইও পড়া উচিত
১২৫. পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন
১২৬. দঙ্গলের মেয়ে
১২৭. নিষিদ্ধের তো একটা সীমা আছে
১২৮. ভারতে অসহিষ্ণুতা
১২৯. মেয়েদের পোশাক নিয়ে লোকের এত মাথাব্যথা কেন?
১৩০. ভ্যালেন্টাইন ডে’র ভাবনা
১৩১. উদারতার চেয়ে মহান কিছু নেই
১৩২. নারীবাদী হওয়া সহজ নয়
১৩৩. নেপাল থেকে বলছি
১৩৪. বাংলাদেশ বদলে গেছে
১৩৫. কেন আত্মঘাতী বোমারু হতে ইচ্ছে করে
১৩৬. অপুরা যেন হেরে না যায়
১৩৭. শেখ হাসিনার জন্য দুশ্চিন্তা
১৩৮. ওরা কেন আমাদের চেয়েও ভালো
১৩৯. ধর্ষকদের পৃথিবীতে বেঁচে যে আছি, এই তো অনেক
১৪০. চাই ধর্ষণহীন দিন
১৪১. আমার গ্রিন কার্ড, আমেরিকার ট্রাম্প কার্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন