শার্লি আবদো

তসলিমা নাসরিন

বেশ কয়েক বছর আগে শার্লি আবদোর সম্পাদক এবং এক ঝাঁক কার্টুনশিল্পী আমাকে তাঁদের অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্যারিসের যে কোনও ছোটখাটো পত্রিকা অফিসের মতোই শার্লি আবদোর অফিস। কার্টুনিস্টদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বাক স্বাধীনতার পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওদের লড়ে যাওয়াটা অনেকটা আমার লড়ে যাওয়ার মতো। ফতোয়া আসছে, মৃত্যুর হুমকি আসছে, কিন্তু ওঁরা থামছেন না। যা বলতে ইচ্ছে করছে, তা বলছেন। মৌলবাদীরা শাসিয়ে গেছে ইসলাম নিয়ে কোনও কটু কথা বললে ওঁদের জবাই করবে, তারপরও ওঁরা কটু কথা বলছেন। পয়গম্বরের কার্টুন আঁকলে খুন করবে, তারপরও আঁকছেন। আগুন-বোমা পড়লো অফিসে, আল কায়দার ওয়ান্টেড লিস্টে নাম উঠলো, তারপরও ম্যাগাজিন বন্ধ করলেন না। চমৎকার মানুষ ওঁই কার্টুনিস্টরা। হাসাতে যেমন জানেন, হাসতেও জানেন প্রচণ্ড। ওঁরা কেউই ঈশ্বরে, মৌলবাদে, সন্ত্রাসে আর সহিংসতায় বিশ্বাস করেন না। আমি যেমন। ফতোয়া, নিষেধাজ্ঞা, নির্বাসন কিছুই আমাকে ভাঙতে পারেনি। ওঁরা আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ওঁরা বাস করেন সর্বোচ্চ গণতন্ত্রের দেশে, তাই নিজেদের নিয়ে দুশ্চিন্তাটা ওঁদের অতটা ছিল না। আমি কি আর বুঝেছি তখন যে, কোনও একদিন এই অফিসেই বন্দুক হাতে একদল সন্ত্রাসী ঢুকে ওঁদের সবাইকে এক এক করে নৃশংসভাবে হত্যা করবে! আমি কি আর বুঝেছি তখন যে, আসলে পৃথিবীর কোনও দেশই, কোনও অঞ্চলই এখন আর নিরাপদ নয়। সন্ত্রাসীরা সর্বত্র বিরাজ করছে।

শার্লি আবদো বন্ধ হবে না। বন্ধ হয়ে গেলে বা কার্টুনিস্টরা ভয় পেলেই জিতে যাবে সন্ত্রাসীরা। শুনে ভালো লাগছে যে শার্লি আবদোর পরবর্তী সংখ্যাটা ছাপা হবে দশ লক্ষ কপি। শার্লি আবদোর প্রকাশই মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিপক্ষে একটি বিশাল আন্দোলনের মতো। সন্ত্রাসী হওয়ার জন্য দক্ষতার দরকার হয় না। অটোমেটিক রাইফেল চালিয়ে মানুষ মারতে কোনও প্রতিভার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সাংবাদিক বা কার্টুনশিল্পী প্রতিভা ছাড়া হওয়া যায় না। এতগুলো প্রতিভাকে নিতান্তই অসভ্য, অশিক্ষিত আর বর্বর কিছু লোক হত্যা করেছে তাদের ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য, অথবা বেহেস্তবাসী হওয়ার জন্য।

শার্লি আবদোর কার্টুনিস্টদের মেরে ফেলেছে ইসলামি সন্ত্রাসীরা, এই খবর পাওয়ার পর থেকে আমি শোকস্তব্ধ বসে রয়েছি। আমার কেবল মনে হচ্ছে, ঠিক এভাবে একদিন আমাকেও মেরে ফেলবে ওরা। আমি হয়তো কোনও কবিতা বা উপন্যাস লিখতে থাকবো, আর অতর্কিতে আমার ঘরেও ঢুকে ওরা আমাকে জবাই করবে, নয়তো মাথা লক্ষ্য করে গুলি করবে, ‘আল্লাহু আকবর’ বলতে বলতে। কেবলই মনে হচ্ছে, প্যারিসের মতো শহরে নিরাপত্তারক্ষী থাকার পরও যদি খুনের ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে দিল্লিতে না ঘটার কোনও তো কারণ নেই। যত দুশ্চিন্তাই করি না কেন, আমার লেখা কিন্তু বন্ধ হবে না। ঠিক যেভাবে শার্লি আবদোর কার্টুনের মতো কার্টুন আঁকাও বন্ধ হবে না।

পাশ্চাত্যের বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগই বেশিরভাগ সময় মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন, যতই সন্ত্রাস মুসলিমরা করুক না কেন। পাশ্চাত্যের লিবারেল ট্রাডিশান রক্ষা করাটা তাঁদের দায়িত্ব বলেই মনে করেন। মুসলিমরা সংখ্যালঘু বলে আফগানিস্তানে, ফিলিস্তিনে, ইরাকের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে, সম্ভবত একটা সহানুভূতি কাজ করে। শার্লি আবদোর বুদ্ধিজীবীরা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ওঁরা কিন্তু কারও সঙ্গে আপস করেননি। কোনও রাজনীতিবিদ, কোনও ধর্মগুরু, কোনও পয়গম্বর- কারও সঙ্গেই নয়। ক্রিশ্চান ধর্ম বা ইহুদিধর্ম নিয়ে যেমন কটাক্ষ করেছেন, ইসলাম ধর্ম নিয়েও করেছেন। মাঝে মাঝে কার্টুন শিল্পীরা যিশু, মুসা এবং অন্যান্য পয়গম্বর নিয়ে কৌতুক করতেন, ইসলামের পয়গম্বর নিয়েও করতেন। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত সেসব কৌতুক।

জানি প্রচুর লোক আজ শার্লি আবদোর পক্ষে দাঁড়াবে। তারা খুনিদের দিকে নিন্দা ছুড়বে এবং বলবে খুনিদের ইসলাম সত্যিকারের ইসলাম নয়। সত্যিকার ইসলাম কোনও বিধর্মীকে বা নাস্তিককে খুনের ইন্ধন জোগায় না। ইসলাম শান্তির ধর্ম ইত্যাদি। কেউ কিন্তু বলবে না, কোরানের সুরা আল বাকারা, আল নিসা, আল আনফাল, আল তওবা এরকম অনেক সুরায় ইসলামে-অবিশ্বাসীদের কতল করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে মুসলিমদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে বিধর্মীদের হত্যা করার জন্য। অনেক হাদিসও বলেছে একই কথা। মুসলিম হওয়ার শর্ত কোরানে অর্থাৎ আল্লাহর বাণীতে নিঃশর্ত বিশ্বাস।

ইসলামের ইতিহাস বলে ইসলামের পয়গম্বর প্রচুর যুদ্ধ করেছেন। আরবের বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর লোককে তখন ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হতো। বানুকোরাইজা নামের এক ইহুদি গোষ্ঠীর আটশ পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল, শুধু তারা মুসলিম ছিল না বলে। এখনও পয়গম্বরের কিছু অনুসারী তার পদাঙ্ক আক্ষরিক অর্থে অনুসরণ করতে চায়। অন্যান্য ধর্মের মতো ইসলামের অর্থ যুগোপযোগীভাবে বিবর্তিত হয়নি। অনেকের মনেই ইসলাম রয়ে গেছে ১৪০০ বছর আগের ইসলামের মতোই। মুহম্মদের অনুসারীরা সত্যিকার ইসলামে বিশ্বাস করে, তারা বিশ্বাস করে পুরো পৃথিবীতে তারা সত্যিকার ইসলামি সাম্রাজ্য তৈরি করবে, যে সাম্রাজ্যে সত্যিকার মুসলিম ছাড়া আর কারোর ঠাঁই নেই। তারা বিশ্বাস করে, ইসলাম নিয়ে যে মানুষই কটাক্ষ করবে, তাদের মেরে ফেলার অধিকার তাদের আছে। আজ পৃথিবীতে সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে আল কায়দা, আইসিস, বোকো হারাম, আল শাবাব ইত্যাদি সন্ত্রাসী দল। এদের সবারই আদর্শ এক এবং অভিন্ন। যেন তাদের পথই সত্যিকার ইসলামের পথ।

ইসলামি মৌলবাদী কোনও ছোটখাটো সমস্যা নয়। এই বড় সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে মূলে যেতে হবে। মত প্রকাশের অধিকারের বাণী শুনিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সন্ত্রাসীরা কী মন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, কী মন্ত্র তাদের শেখাচ্ছে অস্ত্র হাতে নিতে, মানুষ খুন করতে, জানতে হবে।

আমার মনে হয়, যতদিন ইসলামকে এভাবে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হবে, ততদিন সন্ত্রাস থাকবে।

সকল অধ্যায়

১. লিঙ্গসূত্র
২. যৌবনে ছেলেরা ডেয়ারিং
৩. পতিতা প্রথা বন্ধ হোক
৪. অপ্রত্যাশিত
৫. বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি?
৬. পুরুষ নিয়ে মেয়েদের কাড়াকাড়ি বাড়াবাড়ি
৭. নারীর যৌন কামনা থাকতে নেই
৮. দেশ আর দেশ নেই
৯. আমার গৌরব, আমি স্বেচ্ছাচারী
১০. ধর্মে নেই, উৎসবে আছি
১১. বেলা যায় মেলা যায়
১২. তোমাকে অভিবাদন, এলফ্রিডা
১৩. যাই বল নইপল
১৪. আমার দেহ নিয়ে আমি যা খুশি করব
১৫. বাবা
১৬. সেক্সবয় (গল্প)
১৭. সকল গৃহ হারালো যার
১৮. অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে থাকে
১৯. মেয়েদের শরীর পুরুষের চোখে
২০. পৃথিবীর প্রাচীনতম নির্যাতন
২১. পেছনের দিনগুলো ধুসর ধুসর
২২. খারাপ মেয়ের গল্প (গল্প)
২৩. হুমায়ূন : পুরুষতন্ত্রের সম্রাট
২৪. তুই নিষিদ্ধ তুই কথা কইস না
২৫. অনুমতি না নিয়ে আমার শরীর স্পর্শ করেছিলেন সুনীল
২৬. পৃথিবীর পথে
২৭. পৃথিবীর পথে ২
২৮. মিডিয়া এবং মানুষ
২৯. নারীবিদ্বেষের কারণ পুরুষতন্ত্র
৩০. সন্ত্রাস
৩১. বিহারি সমস্যা
৩২. রঘু রাই এবং শরণার্থী
৩৩. এ লড়াই প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের নয়
৩৪. বেড়ালের গল্প
৩৫. ফিলিস্তিন এক টুকরো মাটির নাম
৩৬. পর্নোগ্রাফি
৩৭. সেইসব ঈদ
৩৮. কামড়ে খামচে মেয়েদের ‘আদর’ করছে পুরুষেরা
৩৯. সুন্দরী
৪০. ধর্ম থাকবে, নারীর অধিকারও থাকবে, এটা হয় না
৪১. সানেরার মতো মেয়ে চাই- আছে?
৪২. প্রতিবেশি দেশ
৪৩. বামপন্থীদের ভুল
৪৪. বাঙালির বোরখা
৪৫. শাড়ি ব্লাউজ
৪৬. বিয়ের বয়স
৪৭. সেইসব ঈদ
৪৮. ন্যাড়া কি বেলতলা যায়
৪৯. লতিফ সিদ্দিকী এবং মানুষের ধর্মানুভূতি
৫০. বাকস্বাধীনতার অর্থ কি এতটাই কঠিন?
৫১. কেন পারি না
৫২. নাবালিকা ধর্ষণ
৫৩. রেলমন্ত্রীর বয়স এবং বিয়ে
৫৪. চুমু চুমু চুমু চুমু
৫৫. এত ঘৃণা করে ওরা মেয়েদের!
৫৬. সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবির সুমন
৫৭. তারপর কী হলো
৫৮. কিছু প্রশ্ন। কিছু উত্তর।
৫৯. দূর থেকে হয় না
৬০. আরীব মজিদরা জেলের বাইরে থাকলে আমরা অনেকেই নিরাপদ নই
৬১. এতদিনে ভারতে সভ্য আইন
৬২. বোয়াল মাছের গল্প
৬৩. মেয়ে বলে ‘কম মানুষ’ নই
৬৪. উপন্যাস : ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
৬৫. প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ব্যক্তিগত চিঠি
৬৬. ধর্মান্তরণ
৬৭. গণধর্ষণ
৬৮. নির্বাসিত একটি ছবির নাম
৬৯. শার্লি আবদো
৭০. কল্পনার রাজ্য
৭১. কোকো, খালেদা আর দেশের দগ্ধ সন্তানেরা
৭২. গরিবের গ্রেনেড
৭৩. বাংলা একাডেমির অসভ্যতা
৭৪. অভিজিৎকে যেভাবে চিনি
৭৫. নারী দিবস
৭৬. বাঘ আর বেড়াল
৭৭. বাংলাদেশিদের দেশপ্রেম
৭৮. বাক স্বাধীনতা
৭৯. স্যানিটারি প্যাডে প্রতিবাদ
৮০. বাংলাদেশের কী কী করা উচিত ছিল এবং ছিল না
৮১. বাংলা সংস্কৃতি চলবে কী চলবে না
৮২. ঢাকাও কমাতে পারে জ্যাম আর দূষণ
৮৩. গ্যালিলিও এবং তার ‘জারজ মেয়ে’
৮৪. লজ্জাহীনতা
৮৫. প্রচলিত নারীবিদ্বেষী শব্দ ও প্রবাদ
৮৬. নিজের গোলা শূন্য
৮৭. শৃংখল ভেঙেছি আমি
৮৮. দেশপ্রেম না থাকাও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার
৮৯. ঢাকার বইমেলা ও একটি প্রেমের গল্প
৯০. খুব কাছে ওত পেতে আছে আততায়ী
৯১. নারী দিবস
৯২. ভারত এবং গরু
৯৩. আমার প্রথম সংসার
৯৪. খাজুরাহোর অভিজ্ঞতা
৯৫. চীনের অভিজ্ঞতা
৯৬. আমার জন্য কথা বলার কেউ নেই…
৯৭. সমাজ কি থেমে আছে?
৯৮. পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ
৯৯. কিছু প্রশ্ন, কিছু আশা
১০০. এই বাংলাদেশ আমার অচেনা
১০১. দেশের ভবিষ্যৎ
১০২. রোজা রাখার স্বাধীনতা
১০৩. চারদিকে প্রচুর ওমর মতিন
১০৪. আমার চোখের জলের ঈদ
১০৫. যদি পুরুষ হতাম
১০৬. জাকির নায়েকের বাকস্বাধীনতা
১০৭. কিছু সেলিব্রিটি মেয়ে তো ফাটাফাটি
১০৮. বিরুদ্ধ স্রোত
১০৯. মেয়েরা সেরা
১১০. মেয়েদের কাপড় চোপড়
১১১. মেয়েদের কাপড় চোপড়
১১২. সত্য বললে বিপদ
১১৩. আমরা আর তারা
১১৪. এরা কি মানুষ!
১১৫. লজ্জা বইটি এখনও নিষিদ্ধ কেন?
১১৬. বায়ু দূষণ
১১৭. সাঁওতালদের কথা
১১৮. হাতে টাকা নেই
১১৯. শিশুদের জন্য লোভের জিভ
১২০. যৌনকর্ম নাম দিয়ে পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার ষড়যন্ত্র
১২১. বুদ্ধিজীবী দিবস
১২২. সন্ত্রাস কোনো সমস্যার সমাধান নয়
১২৩. বাংলা একাডেমির হয়েছেটা কী
১২৪. যে বই তোমায় দেখায় ভয়, সে বইও পড়া উচিত
১২৫. পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন
১২৬. দঙ্গলের মেয়ে
১২৭. নিষিদ্ধের তো একটা সীমা আছে
১২৮. ভারতে অসহিষ্ণুতা
১২৯. মেয়েদের পোশাক নিয়ে লোকের এত মাথাব্যথা কেন?
১৩০. ভ্যালেন্টাইন ডে’র ভাবনা
১৩১. উদারতার চেয়ে মহান কিছু নেই
১৩২. নারীবাদী হওয়া সহজ নয়
১৩৩. নেপাল থেকে বলছি
১৩৪. বাংলাদেশ বদলে গেছে
১৩৫. কেন আত্মঘাতী বোমারু হতে ইচ্ছে করে
১৩৬. অপুরা যেন হেরে না যায়
১৩৭. শেখ হাসিনার জন্য দুশ্চিন্তা
১৩৮. ওরা কেন আমাদের চেয়েও ভালো
১৩৯. ধর্ষকদের পৃথিবীতে বেঁচে যে আছি, এই তো অনেক
১৪০. চাই ধর্ষণহীন দিন
১৪১. আমার গ্রিন কার্ড, আমেরিকার ট্রাম্প কার্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন