নারী দিবস

তসলিমা নাসরিন

নারী দিবসটা একটা বোরিং জিনিস। এ অনেকটা ইস্কুলের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে রবোটের মতো দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মতো। গাইতে হয় তাই গাওয়া। গাওয়ার সময় দেশের প্রতি কারও ভালোবাসা বাড়ে না। ওই সঙ্গীত গেয়ে দেশের কোনও উন্নতিও হয়না। তবে হ্যাঁ, ‘নারী দিবস’টা আছে বলে নারীর উন্নতির জন্য নানা কর্মসূচি নিতে পারে লোকেরা। কিন্তু, নারীর উন্নতির জন্য কিছু করতে কি নারী দিবসের দরকার হয় নাকি? বছরের তিনশ’-পয়ষট্টি দিনই তো তা করা যায়। নারী-বিরোধী সমাজে বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারীর সমানাধিকারের কথা লিখছি আজ তিরিশ বছর। আমি আর কতটুকু করেছি! হাজারো নারীবাদীরা আরও শত বছর আগে থেকেই নারীর সমানাধিকারের জন্য হেন কাজ নেই করেননি। তাতেও নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পায়নি আজও।

নারী দিবসটা যদি উৎযাপন করতেই হয়, তবে নারীদের নয়, উৎযাপন করা উচিত পুরুষদের। কারণ নারীদের একা একা চেঁচিয়ে চিল্লিয়ে কোনও লাভ নেই। প্রাপ্য অধিকার থেকে নারীদের বঞ্চিত করছে পুরুষেরা। এই পুরুষেরা যেদিন নারীদের সমানাধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, যেদিন নারীদের বঞ্চিত করা বন্ধ করবে, সেদিনই নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে। যেদিন পুরুষেরা নারীদের অত্যাচার করা বন্ধ করবে, যেদিন যৌন হেনস্থা করা বন্ধ করবে, ধর্ষণ করা বন্ধ করবে, খুন করা বন্ধ করবে, সেদিনই বন্ধ হবে নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য জঘন্য নির্যাতন। নারীদের চেঁচিয়ে চিল্লিয়ে কোনও লাভ হয়নি এতকাল, হবেও না। কিছুই হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত কর্তাদের টনক নড়ে। কর্তারা চিরকালই পুরুষ। সুতরাং চিৎকার করতে হবে পুরুষদের। পুরুষের চিৎকার পুরুষ-কর্তাদের কর্ণকুহরে দ্রুত পৌঁছোয়। পুরুষেরা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে চেয়েছিল, বন্ধ হয়েছে। পুরুষেরা বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে চেয়েছিল, বেশির ভাগ অঞ্চলে বাল্য বিবাহ বন্ধ হয়েছে। পুরুষেরা নারী শিক্ষা চালু করতে চেয়েছিল, চালু হয়েছে। এই কাজগুলো যদি নারীরা করতে চাইতো, শত বছর কেটে গেলেও কিছুই হয়তো সম্ভব হতো না। ভোটের অধিকারের জন্য নারীরা আন্দোলন করেছিল, সেটা পেতে নারীদের শত বছর লেগেছে। সমাজে নারীর স্থান অত্যন্ত নিচে, নিচু স্তরের মানুষের কথা শুনতে উঁচু স্তরের মানুষ অভ্যস্ত নয়। পুরুষেরা উঁচু স্তরের। নারীবাদী-পুরুষরাও পুরুষ হওয়ার কারণে উঁচুস্তরের। পুরুষেরা দাবি করলে সেই দাবি মেটাতে এগিয়ে আসে পুরুষেরা, তাদের হাতেই নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো-বাড়ানোর ক্ষমতা কিনা। পুরুষকেই তো দূর করতে হবে তাদের নারীবিদ্বেষী মানসিকতা! পুরুষকেই তো শুদ্ধ হতে হবে! তা না হলে নারী কিভাবে ফিরে পাবে নারীর সম্মান।

মানুষই মানুষকে নির্যাতন করছে, মানুষই মানুষের অধিকারের জন্য লড়ছে। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচানোর দায় নারীর একার নয়। এ বৈষম্য ঘোচানোর দায় সব মানুষের। যে মানুষেরা সচেতন, যে মানুষেরা চেঁচালে, চেষ্টা করলে বৈষম্য ঘোচে, দায়িত্বটা তাদেরই নিতে হবে। নারী-পুরুষের বৈষম্য যতদিন থাকবে ততদিন মানবজাতিকে সভ্য জাতি বলার কোনও যুক্তি নেই।

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই নারীবিরোধী পুরুষেরা ‘পুরুষরক্ষা সংগঠন’, ‘পুরুষাধিকার সংগঠন’ ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। এসব সংগঠন নারীবিরোধিতা, নারীবিদ্বেষ, নারীঘৃণা প্রচার করতে সারাক্ষণই ব্যস্ত। আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি পুরুষেরা ‘নারী দিবস’ পালন করছে, নারীর অধিকারের পক্ষে পথে নামছে। এই পুরুষদের সংখ্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু আজ নারী দিবসে আমার একান্ত চাওয়া, এই পুরুষদের সংখ্যাটা বাড়ুক। এই সংখ্যাটা বাড়লেই সমাজে পরিবর্তন আসবে, আসতে বাধ্য। যে পুরুষেরা নারীকে ধর্ষণ করে, খুন করে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক আজ থেকে কোনও নারীকে তারা ধর্ষণ করবে না বা খুন করবে না। যে পুরুষেরা নারীকে নারী বলে নির্যাতন করে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক নারীকে আর নির্যাতন করবে না। যে পুরুষেরা যৌন হেনস্থা করে, তারা আজ থেকে বন্ধ করুক যৌন হেনস্থা। আজ থেকে পুরুষ আর নারীর সংসারের কাজ, নিজেদের সন্তান-পালন, নিজেরা মিলে ঝিলে করুক। আজ থেকে বাইরের দুনিয়ার কাজ নারী-পুরুষ উভয়ে করুক, স্বনির্ভর আর পরনির্ভরের সংসারের বদলে সংসার হয়ে উঠুক দু’জন স্বনির্ভর মানুষের সংসার। আজ থেকে নারী আর পুরুষের সমতা আসুক সংবিধানে, রাষ্ট্রে, আইনে, সমাজে, পরিবারে, অফিসে, আদালতে, রাস্তা-ঘাটে, বাসে, ট্রেনে, জাহাজে, লঞ্চে সর্বত্র। নারী পুরুষের মধ্যে গড়ে উঠুক সত্যিকারের বন্ধুতা। প্রভু-দাসির সম্পর্কটা, উঁচু-নিচুর সম্পর্কটা সম্পূর্ণ নির্মূল হোক।

দু’দিন আগে কিছু আফগান পুরুষ নীল বোরখা পরে, হাতে ব্যানার নিয়ে, কাবুলের রাস্তায় হেঁটেছে। তারা নারী নির্যাতন বন্ধ হোক চায়। কী চমৎকার এই দৃশ্য! নারী- নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পুরুষের মিছেলের দৃশ্য, নারীর মিছিলের দৃশ্যের চেয়ে, বেশি সুন্দর, বেশি যৌক্তিক, বেশি মানবিক। অত্যাচারের বিরুদ্ধে অত্যাচারিত গোষ্ঠির রুখে দাঁড়ানোর চেয়ে অত্যাচারী গোষ্ঠীর রুখে দাঁড়ানোটা জরুরি। কাবুলের রাস্তায় মাত্র পনেরো-কুড়িজন আফগান ছেলে নেমেছে। এই সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ুক। রাস্তার পুরুষেরা নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পুরুষের উদ্যোগ দেখুক, শিখুক। এই দৃশ্য টিভিতে দেখাক। ইন্টারনেটে ছেয়ে যাক। লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখুক, শিখুক।

পাশ্চাত্যের পুরুষেরা মেয়েদের জুতো পরে রাস্তায় হাঁটে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘পুট ইওরসেল্ফ ইন মাই সুজ’। মানে, আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করো। তারা আক্ষরিক অর্থে প্রচলিত বাক্যটি নিয়েছে। সত্যি সত্যি পায়ে মেয়েদের জুতো পরে, এক মাইল পর্যন্ত হাঁটে। এই হাঁটার পেছনে উদ্দেশ্য হলো, মেয়েদের বিরুদ্ধে যত যৌন-হেনস্থা-নির্যাতন পুরুষেরা করে, সেসব বন্ধ হোক, নারী-পুরুষের মধ্যে যত বৈষম্য আছে, সব দূর হোক। শুধু মেয়েদের হাই-হিল পরে হাঁটা নয়, পুরুষরা তুরস্কে, ভারতে, মেয়েদের স্কার্ট পরে মেয়েদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাস করা এই সচেতন পুরুষদের সংখ্যাটা লক্ষাধিক হোক। কোটি ছাড়িয়ে যাক। এবারের ‘নারী দিবসে’ এটিই আমার আশা, আমার স্বপ্ন।

সকল অধ্যায়

১. লিঙ্গসূত্র
২. যৌবনে ছেলেরা ডেয়ারিং
৩. পতিতা প্রথা বন্ধ হোক
৪. অপ্রত্যাশিত
৫. বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি?
৬. পুরুষ নিয়ে মেয়েদের কাড়াকাড়ি বাড়াবাড়ি
৭. নারীর যৌন কামনা থাকতে নেই
৮. দেশ আর দেশ নেই
৯. আমার গৌরব, আমি স্বেচ্ছাচারী
১০. ধর্মে নেই, উৎসবে আছি
১১. বেলা যায় মেলা যায়
১২. তোমাকে অভিবাদন, এলফ্রিডা
১৩. যাই বল নইপল
১৪. আমার দেহ নিয়ে আমি যা খুশি করব
১৫. বাবা
১৬. সেক্সবয় (গল্প)
১৭. সকল গৃহ হারালো যার
১৮. অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে থাকে
১৯. মেয়েদের শরীর পুরুষের চোখে
২০. পৃথিবীর প্রাচীনতম নির্যাতন
২১. পেছনের দিনগুলো ধুসর ধুসর
২২. খারাপ মেয়ের গল্প (গল্প)
২৩. হুমায়ূন : পুরুষতন্ত্রের সম্রাট
২৪. তুই নিষিদ্ধ তুই কথা কইস না
২৫. অনুমতি না নিয়ে আমার শরীর স্পর্শ করেছিলেন সুনীল
২৬. পৃথিবীর পথে
২৭. পৃথিবীর পথে ২
২৮. মিডিয়া এবং মানুষ
২৯. নারীবিদ্বেষের কারণ পুরুষতন্ত্র
৩০. সন্ত্রাস
৩১. বিহারি সমস্যা
৩২. রঘু রাই এবং শরণার্থী
৩৩. এ লড়াই প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের নয়
৩৪. বেড়ালের গল্প
৩৫. ফিলিস্তিন এক টুকরো মাটির নাম
৩৬. পর্নোগ্রাফি
৩৭. সেইসব ঈদ
৩৮. কামড়ে খামচে মেয়েদের ‘আদর’ করছে পুরুষেরা
৩৯. সুন্দরী
৪০. ধর্ম থাকবে, নারীর অধিকারও থাকবে, এটা হয় না
৪১. সানেরার মতো মেয়ে চাই- আছে?
৪২. প্রতিবেশি দেশ
৪৩. বামপন্থীদের ভুল
৪৪. বাঙালির বোরখা
৪৫. শাড়ি ব্লাউজ
৪৬. বিয়ের বয়স
৪৭. সেইসব ঈদ
৪৮. ন্যাড়া কি বেলতলা যায়
৪৯. লতিফ সিদ্দিকী এবং মানুষের ধর্মানুভূতি
৫০. বাকস্বাধীনতার অর্থ কি এতটাই কঠিন?
৫১. কেন পারি না
৫২. নাবালিকা ধর্ষণ
৫৩. রেলমন্ত্রীর বয়স এবং বিয়ে
৫৪. চুমু চুমু চুমু চুমু
৫৫. এত ঘৃণা করে ওরা মেয়েদের!
৫৬. সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবির সুমন
৫৭. তারপর কী হলো
৫৮. কিছু প্রশ্ন। কিছু উত্তর।
৫৯. দূর থেকে হয় না
৬০. আরীব মজিদরা জেলের বাইরে থাকলে আমরা অনেকেই নিরাপদ নই
৬১. এতদিনে ভারতে সভ্য আইন
৬২. বোয়াল মাছের গল্প
৬৩. মেয়ে বলে ‘কম মানুষ’ নই
৬৪. উপন্যাস : ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
৬৫. প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ব্যক্তিগত চিঠি
৬৬. ধর্মান্তরণ
৬৭. গণধর্ষণ
৬৮. নির্বাসিত একটি ছবির নাম
৬৯. শার্লি আবদো
৭০. কল্পনার রাজ্য
৭১. কোকো, খালেদা আর দেশের দগ্ধ সন্তানেরা
৭২. গরিবের গ্রেনেড
৭৩. বাংলা একাডেমির অসভ্যতা
৭৪. অভিজিৎকে যেভাবে চিনি
৭৫. নারী দিবস
৭৬. বাঘ আর বেড়াল
৭৭. বাংলাদেশিদের দেশপ্রেম
৭৮. বাক স্বাধীনতা
৭৯. স্যানিটারি প্যাডে প্রতিবাদ
৮০. বাংলাদেশের কী কী করা উচিত ছিল এবং ছিল না
৮১. বাংলা সংস্কৃতি চলবে কী চলবে না
৮২. ঢাকাও কমাতে পারে জ্যাম আর দূষণ
৮৩. গ্যালিলিও এবং তার ‘জারজ মেয়ে’
৮৪. লজ্জাহীনতা
৮৫. প্রচলিত নারীবিদ্বেষী শব্দ ও প্রবাদ
৮৬. নিজের গোলা শূন্য
৮৭. শৃংখল ভেঙেছি আমি
৮৮. দেশপ্রেম না থাকাও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার
৮৯. ঢাকার বইমেলা ও একটি প্রেমের গল্প
৯০. খুব কাছে ওত পেতে আছে আততায়ী
৯১. নারী দিবস
৯২. ভারত এবং গরু
৯৩. আমার প্রথম সংসার
৯৪. খাজুরাহোর অভিজ্ঞতা
৯৫. চীনের অভিজ্ঞতা
৯৬. আমার জন্য কথা বলার কেউ নেই…
৯৭. সমাজ কি থেমে আছে?
৯৮. পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ
৯৯. কিছু প্রশ্ন, কিছু আশা
১০০. এই বাংলাদেশ আমার অচেনা
১০১. দেশের ভবিষ্যৎ
১০২. রোজা রাখার স্বাধীনতা
১০৩. চারদিকে প্রচুর ওমর মতিন
১০৪. আমার চোখের জলের ঈদ
১০৫. যদি পুরুষ হতাম
১০৬. জাকির নায়েকের বাকস্বাধীনতা
১০৭. কিছু সেলিব্রিটি মেয়ে তো ফাটাফাটি
১০৮. বিরুদ্ধ স্রোত
১০৯. মেয়েরা সেরা
১১০. মেয়েদের কাপড় চোপড়
১১১. মেয়েদের কাপড় চোপড়
১১২. সত্য বললে বিপদ
১১৩. আমরা আর তারা
১১৪. এরা কি মানুষ!
১১৫. লজ্জা বইটি এখনও নিষিদ্ধ কেন?
১১৬. বায়ু দূষণ
১১৭. সাঁওতালদের কথা
১১৮. হাতে টাকা নেই
১১৯. শিশুদের জন্য লোভের জিভ
১২০. যৌনকর্ম নাম দিয়ে পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার ষড়যন্ত্র
১২১. বুদ্ধিজীবী দিবস
১২২. সন্ত্রাস কোনো সমস্যার সমাধান নয়
১২৩. বাংলা একাডেমির হয়েছেটা কী
১২৪. যে বই তোমায় দেখায় ভয়, সে বইও পড়া উচিত
১২৫. পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন
১২৬. দঙ্গলের মেয়ে
১২৭. নিষিদ্ধের তো একটা সীমা আছে
১২৮. ভারতে অসহিষ্ণুতা
১২৯. মেয়েদের পোশাক নিয়ে লোকের এত মাথাব্যথা কেন?
১৩০. ভ্যালেন্টাইন ডে’র ভাবনা
১৩১. উদারতার চেয়ে মহান কিছু নেই
১৩২. নারীবাদী হওয়া সহজ নয়
১৩৩. নেপাল থেকে বলছি
১৩৪. বাংলাদেশ বদলে গেছে
১৩৫. কেন আত্মঘাতী বোমারু হতে ইচ্ছে করে
১৩৬. অপুরা যেন হেরে না যায়
১৩৭. শেখ হাসিনার জন্য দুশ্চিন্তা
১৩৮. ওরা কেন আমাদের চেয়েও ভালো
১৩৯. ধর্ষকদের পৃথিবীতে বেঁচে যে আছি, এই তো অনেক
১৪০. চাই ধর্ষণহীন দিন
১৪১. আমার গ্রিন কার্ড, আমেরিকার ট্রাম্প কার্ড

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন