অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
দুর্গাপদ হাত বাড়িয়ে মায়ের ফটো ছুঁয়ে, হাতটা নিজের কপালে ঠেকাল । তারপর বউয়ের ফটো ছুঁয়ে হাতটা ঠোঁটের কাছে এনে চুমুর মতো একটা শব্দ করল । তারপর ফোম লেদারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়াতেই একেবারে সুষমার মুখোমুখি । দুর্গাপদ একনজর দেখেই বুঝে গেছে তাকে ধরবে বলেই সুষমা আগে থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছে ।
সুষমা যেন সবে রান্নাঘর থেকে বেরিয়েছে, শব্দ করে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল, দাদা কি তবে একেবারে মামলা মিটিয়ে ফিরবেন?
মামলার কথা কে বলতে পারে! বলে সে পকেট থেকে চাবি বের করল ।
দুর্গাপদ তার এই ভাইয়ের বউটিকে বিশেষ পছন্দ করে না । আজ কী মতলবে কে জানে!
সে নিচু হয়ে নিজের দরজায় তালা লাগাতে লাগাতে কান খাড়া করে অপেক্ষা করছে, সুষমা বলল, দিদির সেলাইকলটা ক’দিনের জন্য আমাকে দিয়ে যাবেন?
দুর্গাপদ পিঠ টান করে ফট করে বলে দিল, ও মেশিন তো কবে থেকে ছুঁচ ভেঙে পড়ে আছে ।
—তাই বুঝি! ইস, অত ভালো মেশিনটা!
—তা আর কী করা যাবে! হরি উঠেছে? একবার ডাকো দেখি ।
বলে দুর্গাপদ নিজেই হরিপদর ঘরের দিকে এগিয়ে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়ল, হরি, এই হরি । আর কত ঘুমোবি রে! ওঠ, ওঠ, উঠে পড়! উঠলি?
হরিপদ ধুতিতে গিঁট দিতে দিতে বাইরে এসে দাঁড়াল, তার দুচোখ এখনও কোঁচকান । ওইভাবেই বলল, এখনই চললে?
—সুবলকে রিকশা আনতে পাঠিয়েছি । শোন হরি, ফিরতে আমার ক’দিন দেরি হতে পারে । কোর্ট-কাছারির ব্যাপার । এদিকে একটু নজর রাখিস । দিনকাল তো ভালো না ।
—সুবলকেও নিয়ে যাচ্ছ নাকি?
—ওর বড় মামা তো সেই রকমই লিখেছেন । অনেক সময় ছোটদের সাক্ষীতে বেশি কাজ হয় । ওর একটু দেখে-শুনে আসাও হবে ।
হরিপদ রকের ধারে বসে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিতে দিতে বলল, সব ঠিকমতো হয়ে গেলে, ওখানে দুয়েকখানা ঘর যদি পাও, মানে বৌদির অংশটা তো তুমিই পাবে, তাহলে কি ওখানেই থাকবে নাকি তুমি?
—পাওয়া-পাওয়ি অনেক পরের কথা । অতবড় মানি লোকের বাড়ি, আগে তো শ্মশানের কাঠ বেচা বন্ধ হোক— তারপর ধর, এই কোর্টে হারলে আবার হয়তো ওপরের কোর্টে যাবে, ওই বাড়ির ছেলে হলে হবে কী, শুনি তো একেবারে চণ্ডাল!
—না, ধরো, তোমার শালারা ছোট ভাইয়ের হাত থেকে বাড়িটা উদ্ধার করল, তখন তো তার ও-বাড়িতে বসে রাত-বিরেতে আর কাঠ বেচা চলবে না, তখন বাড়ি নিশ্চয়ই ভাগ হবে— ভাগ হলে এক ভাগ তো বৌদিরই প্রাপ্য—
—বুদ্ধিটা তোর বরাবর মোটাই রয়ে গেল । পৈতৃক ভিটে ছেড়ে আমি যাব বিদেশে! শ্রীরামপুর আমাদের কাছে বিদেশ ছাড়া আর কী!
হরিপদ গেঞ্জি আনতে ঘরে ঢুকেছিল, বাইরে এসে গেঞ্জিতে মাথা গলিয়ে বলল, বৌদির ভাগটা তাহলে ছেড়ে দেবে?
বাইরে রিকশার শব্দ । দুর্গাপদ উঠোনে নামতে নামতে বলল, সম্পত্তি-টম্পত্তি বাজে কথা । আমাকে যেতে হচ্ছে শ্বশুরমশায়ের বাড়ি রাহুমুক্ত করতে । যতদিন বেঁচেছিলেন, লোকের প্রণাম কুড়িয়েছেন । সেই লোকের বাড়ির এই অবস্থা! অরূপদা তো লিখেছে, এবার একটা ডিসিশান হবার নাকি খুব সম্ভাবনা । চলি রে ।
২
মেঘলা আকাশেও এক ধরনের মৃদু আভা আছে । তাতেই গঙ্গায় বাড়িটার ঘোলাটে ছায়া পড়েছে । দুর্গাপদ হাতের সিগারেট জলে ছুড়ে দিয়ে বলল, বৃষ্টি হলে কিন্তু এ-ছায়া আর দেখা যাবে না ।
সুবল এতক্ষণ গঙ্গার জলে মামাবাড়ির আবছা ছায়ার দিকে চেয়ে ছিল, বাবার চোখ এড়ায়নি । নৌকো চড়া তার জীবনে এই প্রথম । এতদিন সে শুধু বাবার ছেলেবেলায় ভোররাতে চুঁচুড়ো থেকে শ্রীরামপুর নৌকোযাত্রার গল্প শুনেছে, আজকাল যখন হাওড়া থেকে আধ ঘণ্টায় ইলেক্ট্রিক ট্রেনে শ্রীরামপুর যাওয়া যায় তখন আচমকা নৌকো চড়ার সুযোগ পেয়ে তার প্রায় রোমাঞ্চ লাগছে । ভাগ্যিস, বালিতে ট্রেন বিগড়েছিল!
বাবার চেষ্টা ছিল, বালি থেকে বাস ধরবে । বাসে অস্বাভাবিক ভিড়, একটার পর একটা বাস ছেড়ে দিয়েও সুবিধে করা যাচ্ছে না । বাবা হঠাৎ বললেন, চ’ সুবল, আমরা নৌকোয় যাই । না হয় সন্ধেই হবে, তাই বলে এই গা-বমি করা ভিড়ে যাওয়া যায় না । তাছাড়া তোরও একটা অভিজ্ঞতা হবে । জলের ওপর ভাসতে ভাসতে যাওয়া— তার স্বাদই আলাদা । চিরকাল তো মাটির ওপর দিয়েই যাওয়া-আসা করলি!
সুবলের একটু খটকা ছিল, বলল, গঙ্গায় নৌকো ডুবে যাবে না তো?
—তোর জলে ডোবার ফাঁড়া ছিল, কেটে গেছে । ভয় কী!
দিনের আভা মুছে গিয়ে চারদিক ক্রমশ খয়েরি হয়ে আসছে । সজল, মলিন আকাশ । ঘোলাটে জল ছুঁয়ে সব সময় একটা শিরশিরে হাওয়া বইছে । সুবল দু-হাতের বেড়ে দু-হাঁটু জাপটে গুটিসুটি মেরে বসে গঙ্গার ডানদিকে বারাকপুর, বাঁদিকে শ্রীরামপুর দেখছিল । বাঁদিকে কিছু দূরে, জলের ওপর মামাবাড়ির ময়লা ছায়া তিরতির করছে ।
একটু পরে মামার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে সুবল নৌকো থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে বাড়িটা দেখে অবাক— এই বাড়িতে নাকি মানুষ থাকে! এ তো একেবারে গল্পের বইয়ের পোড়োবাড়ি!
সুবল মুখ ফিরিয়ে এনে দেখল, বাবার চোখে ঘোর । বলল, আচ্ছা বাবা, তুমি ছোটবেলায় এখানে এদের সঙ্গে থাকতে কেন?
দুর্গাপদ দু-এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে যেন প্রশ্নটা বোঝবার চেষ্টা করল । তারপর মৃদু হেসে বলল, তোর ঠাকুরদা একটু নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন । কারণে-অকারণে বড্ড প্রহার করতেন । মারের ভয়ে আমি প্রায়ই চুঁচুড়োয় আমার মামার বাড়ি পালিয়ে আসতাম । তাঁদের সঙ্গে আবার তোর দাদুর কীরকম জানাশোনা ছিল । একদিন তোর দাদু আমার মার খাওয়ার কথা শুনে বাবাকে চিঠি লিখে আমাকে নিজের কাছে এনে রাখলেন । খুব যত্ন করে পড়াতেন । ছেলেবেলাটা এই শ্রীরামপুরের বাড়িতেই কেটে গেল । তোর মা তখন ছ-সাত বছরের ।
কথা বলতে বলতে দুর্গাপদ তার শৈশবের শ্রীরামপুরে ঢুকে পড়েছে— একটু আগে কালীবাবুর ঘাট দেখলি না? এখন তো গঙ্গাও শীর্ণ, ঘাটও ভাঙা । ছোটবেলায় ওই ঘাটে দাঁড়িয়ে ওপারে বারাকপুর দেখতাম— ঘরবাড়ি, গাছপালা এই এতটুকু-টুকু । লোকজনকে দেখাত ঠিক যেন গালিভার্স ট্র্যাভেলস-এর ছোট্ট ছোট্ট মানুষের মতো । বিজয়া দশমীর দিন বেলা থাকতে থাকতে আমরা চট বিছিয়ে কালীবাবুর ঘাটের সিঁড়িতে জায়গা দখল করতাম— সন্ধে হলেই ঝাঁক ঝাঁক জোড়া-নৌকোয় আলো-ঝলমল দুর্গাঠাকুরে গঙ্গা একেবারে ভরে যেত । ঘাটের পাশেই শ্মশান । শ্রীরামপুরে ওই একটা আমার ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল— মড়া পোড়ানোর গন্ধ জীবনে আর ভুলতে পারলাম না ।
দুর্গাপদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল— তোর চণ্ডালমামা শুনি এখন এই শ্মশানে মড়া পোড়াবার কাঠ সাপ্লাই করে । তোর দাদু ছিলেন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র । সেই মানুষের বাড়িতে যখন-তখন শ্মশানযাত্রীরা দরজার কড়া নেড়ে হাঁক দেয়— ভটচাজমশাই, দু-মণ কাঠ দাও গো! এরকম দেখতে হবে ভাবিনি!
সুবল হাঁটুতে থুতনি রেখে বাবার কথা শুনছিল । মুখ না তুলেই সে কী ভেবে বলল, শোনা কথা আর ঘটনা সব সময় এক হয় না ।
—তুই কী বলছিস, কী! মামারা সবাই মিথ্যে বলছে?
—তা বলছি না । ভুলও তো হতে পারে । আর এক ভাই-ই শুধু কালো, আর ন-ভাইয়ের আটজনই একদম ধবধবে সাদা ঠিক বিশ্বাস হয় না ।
বলতে বলতে সুবল হঠাৎ চাপা রাগে ঝেঁঝে উঠল— চণ্ডাল কখনও ছোটদের পেট ভরে জিলিপি খাওয়ায়? ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে দেয়? ছোটবেলায় একবার জামাইষষ্ঠীতে বড় মামি পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল, বাড়িতে রান্না হল না, তখন ছোট মামা আমাকে দাশুবাবুর দোকানে নিয়ে গিয়ে একঝুড়ি জিলিপি খাইয়েছিল । পৌষ সংক্রান্তির আগে কতবার আমার সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে দিয়েছে । সবুজ বোতল যোগাড় করে কাচ গুঁড়িয়ে দিয়েছে, শিরীষের আঠা কেনবার পয়সা দিয়েছে— ছোট মামা আমাকে খুবই ভালোবাসত । মা যদি এখন বেঁচে থাকত, মা ঠিক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ছোট মামাকে ভালো করে দিতে পারত । মা বেঁচে থাকলে ছোট মামা কক্ষনো খারাপ হতে পারত না । মাকে প্রণাম করবার সময় ছোট মামা কতক্ষণ মা’র পা ছুঁয়ে থাকত তুমি তো দেখোনি ।
ছইয়ের আড়ালে মাঝি গুড়ুক গুড়ুক শব্দে হুকো টানছে । দুর্গাপদ অনেকক্ষণ কথা না বলে ওই শব্দ শুনতে লাগল । তারপর একটু ঝিমনো গলায় বলল, তোর মা পুণ্যাত্মা মানুষ, তাকে এসব দেখতে হল না ।
দুর্গাপদ গঙ্গার হাওয়া বাঁচিয়ে সস্তার সিগারেট ধরাল । একটু দামি সিগারেটের প্যাকেটটা বেশ খানিকটা খরচ হয়ে গেছে, সেটা আলাদা করে সরিয়ে রাখল । শ্বশুরবাড়িতে তো আর খুব সস্তার সিগারেট বার করা চলে না । ধীরে-সুস্থে ধোঁয়া ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তোকে যদি সাক্ষী-টাক্ষী দিতে হয়, ছোট মামার স্নেহ-প্রেমের কথা যেন বলতে যাস না । যখনকার কথা বললি, তখনও ওর চাকরি ছিল । আপিসে টাকা-পয়সার গোলমাল করে চাকরিটা গেল, তারপর থেকেই আপিসের মামলার ভয়ে বছর দুয়েক কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াল । ফিরল যখন একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে । তোরা তখন খুবই ছোট । এসব তোদের জানার কথাও না । ও যে এতদূর নামবে, কেউ ভাবেনি ।
সুবলের এমনিতেই শীত-শীত করছিল । এবার দুই হাঁটুতে কপাল রেখে চোখ-মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলল ।
ব্যাপারটা দুর্গাপদর চোখে এড়ায়নি । সে কৈফিয়ত দেবার মতো করে বলল, তোর অন্য মামারা তো ওকে বাড়িছাড়া করতে চায়নি । তারাই বরং যে যার সুবিধে মতো আলাদা আলাদা বাড়ি করে উঠে গেছে । তাদের ইচ্ছে ছিল বাড়িটাকে একটা অবৈতনিক স্কুল-টুল করে দেবে । তা ছোটটা তখন কষ্টে পড়েছে, ও আর কোথায় যাবে! ঠিক হল, যদ্দিন কিছু সুবিধে করতে না পারে এখানেই থাকুক । একা মানুষ, বিয়ে-থা করেনি । তাছাড়া বাড়িটাও একটু দেখাশোনা হবে । তা দেখাশোনা তো দূরের কথা । নৌকো থেকেও যতটুকু দেখলি, ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কী? তাও না হয় বোঝা গেল, তাই বলে বাড়ির মধ্যে চিতাকাষ্ঠের গুদাম! শুনি তো গোড়ায় গোড়ায় দরজা-জানলার কাঠও নাকি খুলে খুলে বেচেছে ।
৩
ভদ্রেশ্বরে অরূপকুমার ভট্টাচার্যের প্রকাণ্ড বাড়িতে সুন্দরীদের মেলা বসেছে । অরূপকুমার বড় ভাই, তাঁর অনূঢ়া তিন কন্যা তো আছেই, বিবাহিতা দুজনও এসেছে । একজন শান্তিনিকেতন, একজন সাতনা থেকে । জয়পুর থেকে মেজো ভাই স্বরূপকুমারের দুই কন্যা তাদের বাবার সঙ্গে চলে এসেছে । সেজো ভাই অভিরূপ থাকে কল্যাণীতে, তার কোনও সন্তান নেই, সে সস্ত্রীক এসেছে । ন-ভাইয়ের বাড়ি কলকাতায়, এখন আপিসের ট্যুরে বাইরে, খুব শিগগিরই ফেরার সম্ভাবনা নেই, তার স্ত্রী ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে ছেলে আর ননদকে নিয়ে এসেছে । গুয়াহাটি থেকে এসেছে সস্ত্রীক রাঙাভাই । তার পরের ভাই অশোককুমার এসেছে রাউরকেল্লা থেকে । ভটচাজ পরিবারের সব মেয়ে-বউদের মধ্যে কেবল এরই স্ত্রী ততটা চোখে পড়ার মতো সুন্দরী নয় । অন্য তিন ভাই থাকে কাছাকাছি, একজন বৈদ্যবাটি, একজন রিষড়ায়, আরেকজন হরিপালে । তাদের বউয়েরা সকালে স্বামীদের অফিসের ভাত দিয়ে সোজা বড় ভাশুরের বাড়ি চলে এসেছে । স্বামীরা যে যার অফিস ফেরত এসে যাবে । এই তিন বউ মাঝে মাঝে পরস্পরকে পোস্টকার্ড লিখে শেওড়াফুলির উদয়নে বা শ্রীরামপুরের মানসীতে মিলিত হয়ে একসঙ্গে ম্যাটিনি দেখে সন্ধের আগে যে যার বাড়ি ফিরে যায় ।
কাল থেকে প্রায় সারাদিনই চা হচ্ছে । একেক দল এসে পৌঁছচ্ছে আর নতুন করে চায়ের জল চড়ছে । অরূপকুমার বিলিতি কোম্পানির টি-টেস্টার । বাড়িতে অঢেল চায়ের স্যাম্পেল । ভাইয়েরাও কেউ চানাচুর, কেউ মিষ্টি, কেউ পেস্ট্রি এনেছে । মেজো ভাই এনেছে জয়পুরের পাঁপড় । সাত ভাইয়ের জন্য সাত কেজি ছাড়াও বাড়তি তিন কেজি । অতএব চায়ের সঙ্গে খাবারও অফুরান । রাতে মাংস হবে, রান্নাঘরে শিবের মা দুপুর থেকে বাটনা বাটছে ।
বাড়িময় মজলিশী আবহাওয়া । কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে জোর আড্ডা চলছে । ভাইয়েরা রাজনীতি, আপিস, আপিসের রাজনীতি নিয়ে তর্ক জুড়েছে । বউয়েদের মধ্যে শাড়ি, গয়না, স্বচ্ছলতা, সন্তানের প্রতিভা, যে যেখানে থাকে সেখানকার গুণাগুণ, লোডশেডিং কম না বেশি ইত্যাদি নিয়ে সূক্ষ্ম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমশ রূপটান, কেশচর্চা, ত্বকপরিচর্যার ভালো-মন্দে এসে দিব্যি জমে উঠেছে । কম-বয়েসীরা নিজেদের মধ্যে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বিনিময় ও হৈ হুল্লোড় নিয়ে মেতে আছে ।
অরূপকুমার অবেলায় আহার সেরে একটু বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন, এখন রাঙাভাইয়ের বউয়ের হাত থেকে চা নিয়ে ভাইদের মধ্যে এসে তার নিজস্ব আরামকেদারায় আধশোয়া হয়ে বললেন, দুর্গা এখনও এসে পৌঁছল না, ভাববার কথা ।
মেজ স্বরূপকুমার দাদাকে আসতে দেখেই সদ্য-ধরানো সিগারেটটা অ্যাশ-ট্রের ওপর নামিয়ে রেখেছিল । সেদিকে একবারও না তাকিয়ে দাদাকে বলল, তুমি কি চিঠি দিয়েছিলে, না টেলিগ্রাম করেছ?
টেলিগ্রামও করেছি, আবার চিঠিও দিয়েছি । এ তো বেশ মুশকিল হল । সাড়ে সাতটায় উকিল এসে যাবে । দুর্গাকে খানিকটা রিহার্স করা দরকার ।
আরেকটু দেখা যাক ।
বলে স্বরূপকুমার দাদার সামনেই অ্যাশ-ট্রে থেকে সিগারেটটা তুলে বেরিয়ে গেল ।
অন্যান্য ভাইয়েরা সকলে সকলের সামনে সিগারেট খায় । এমনকি পরস্পরের কাছ থেকে চেয়েও নেয় । কিন্তু বড়দার ঠিক সামনে কেউ সিগারেট খায় না ।
স্বরূপকুমার দাদার চেয়ে আট বছরের ছোট । দাদার পর তিন বোন । তিনজনের কেউই বেঁচে নেই । দুজন জামাইবাবু আসলে দুই ভাই । তাঁরা ওপার বাংলার বাসিন্দা । অনেক কাল আগেই তাঁরাস্ট্যাম্প পেপারে লিখে দিয়েছেন— তাঁদের স্ত্রীদের পৈতৃক বাড়িতে তাঁদের কোনও রকম দাবি নেই । শ্যালকদের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগও আর নেই ।
বাইরের গেটে রিকশার শব্দ শোনা গেল । অরূপকুমার ভাইদের দিকে তাকিয়ে বললেন, দ্যাখ তো, দুর্গা কিনা ।
দুর্গাপদ নয়, ঘরে ঢুকল অতুল, যে বৈদ্যবাটিতে থাকে । সোজা অফিস থেকে চলে এসেছে । সকলের ওপর এক পলক চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, বাব্বা, এ যে একেবারে ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন!
অশোককুমার বাঁ হাতের তালুতে বাঁ কান চেপে ডান হাতের তালু মুখের পাশে এনে বাড়ির ভেতরের দিকে হাঁক পড়ল অতুল এসেছে! চা—
অরূপকুমার সোজা হয়ে বসে অতুলকে জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি পাঁচটা আঠারোয় এলি?
—চারটে একচল্লিশের ট্রেন ছাড়ল পাঁচটা পঁচিশে । দুপুরে মাঝে কোথাও ট্রেন আটকে ছিল । তারপর থেকে সব ট্রেনই কিছু না কিছু লেট । দুর্গাদাকে দেখছি না!
—বড়দা সেটা নিয়েই ভাবছে । ন-ভাইয়ের উত্তর ।
দুই বউ দুটো প্লেট ভরে মোচার চপ নিয়ে এসেছে । পিছনে নতুন ভাইয়ের বউয়ের হাতে মাস্টার্ড সসের শিশি । আর এক কাপ চা । কাপ-শিশি টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, বড়দি বললেন— অশোকদা তো মাংস খান না, রাতে কী খাবেন?
অরূপকুমার যদিও মুখে এক ধরনের হাসি ফোটালেন, কিন্তু মনে মনে উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত হয়ে বললেন, বউমা আজ কি আমার শ্রাদ্ধের ভোজ? খাওয়া নিয়ে অত কী ভাবছ তোমরা?
অশোক চট করে বলল, রাতে আমার একটু দুধ-মুড়ি হলেই চলবে । বড়বৌদিকে বল, কাল ভালোয়-ভালোয় কোর্ট থেকে ফিরে গঙ্গার ইলিশ দিয়ে ভুরিভোজ করব ।
স্বরূপকুমার ফুঁ দিয়ে দিয়ে গরম মোচার চপ খাচ্ছিল, ওই অবস্থায়ই বলল, কাল কি তুই বাড়ি উদ্ধার করে ফিরবি নাকি? কাল আমাদের উকিল দুর্গাদা আর দুর্গাদার ছেলেকে সাক্ষী হাজির করবে । তারপর আমাদের সকলকে হাজিরা দিতে হবে । তবে, তেইশ তারিখের মধ্যে ফয়সালা না হলে মুশকিল । টুয়েন্টি ফিফথ আমাকে জয়পুরে ফিরতেই হবে ।
অরূপ এবারও গেটে রিকশার শব্দ শুনে অপেক্ষা করছিলেন, না দুর্গা না, ন্যাপা অর্থাৎ অনুপ এল, দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে বললেন, এসব ঝামেলা হতই না, বাবা কী বুদ্ধিতে যে ওরকম একটা উইল করতে গেলেন— না হলে কে এসব মামলা-মোকদ্দমায় যেত-মাড়োয়ারি-টাড়োয়ারি দেখে বাড়িটা বেচে দিলেই ল্যাটা চুকে যেত, দেখতাম তখন বাড়ি কেমন আগলে রাখে । শ্মশানের কাঠ বেচাও বন্ধ হত । আসলে বাবার মাথায় কে ঢুকিয়েছিল, বাড়ির কোনও অংশ বিক্রি করার অধিকার দিলে ছেলেরা যে যার অংশ বেচে আলাদা হয়ে যাবে ।
আমার মনে হয় বড়দা, অনুপ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, দুর্গাজামাইবাবুকে একবার ও বাড়িতে পাঠালে হয় না? শেষবারের মতো একবার বোঝাবার চেষ্টা করা যেত ।
অরূপকুমারের অধৈর্য ও উদ্বেগ বাড়ছিল । তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, তোরা কি আবার গোড়া থেকে শুরু করতে চাস নাকি? ওসব ছাড় । শোন, উকিল বলছিল— আমাদের একটা উইক পয়েন্ট আছে । অনল দাবি করছে আমরা সব ভায়েরা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে এসেছি । ও বলছে— নিজেদের সুবিধের কথা ভেবে, নিজেদের স্বার্থে আমরা ও-বাড়ি ছেড়েছি । আমরা ফিরে গেলে ও কোনও আপত্তি করবে না বা বাধা দেবে না । বাড়ি তো আর বিক্রি করা যাবে না! তাহলে ওকে উচ্ছেদ করা যাবে কোন আইনে? ও বলছে, ও তো ও বাড়ির ভাড়াটে নয়?
ফিরে যাবার তো প্রশ্নই ওঠে না ।
ও বাড়িতে কে গিয়ে থাকবে?
স্বরূপ ও অভিরূপ কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্যটি বলল ।
অশোক বলল, থাকা না থাকার কথা না, বাবার স্মৃতি হিসেবে বাড়িটাতে ভালো কিছু হোক— শুধু এইটুকু চাইছি । আইনের চোখে এটা কোনও ন্যায্য দাবি নয়?
অরূপকুমার ডানহাত বাড়িয়ে দিলেন, যেন সকলকে একটা পথ দেখাবেন । বললেন, উকিলের কাছে এটা শোনা থেকে আমি এই পয়েন্টটা নিয়ে ভেবেছি । আমি যে-বছর ও-বাড়ি ছেড়ে আসি—
কথার মাঝখানে ছোটরা এসে হঠাৎ টিভি খুলে দেওয়ায় অরূপকুমার বিরক্ত হয়ে তাদের ধমকে ওঠেন— আঃ । বন্ধ কর তো!
অরূপকুমারের ছোট মেয়ে নিজেরই বাড়িতে অন্যদের সামনে হঠাৎ বাবার ধমক খেয়ে রীতিমতো আহত ও অপমানিত বোধ করল । সে-ই সকলকে টিভি দেখতে নিয়ে এসেছে । সে খানিকটা জেদীভাবে বলল, আমরা এখন খেলা দেখব!
—এখান থেকে নিয়ে গিয়ে যত খুশি খেলা দ্যাখ!
—এত বড় টিভি কে বয়ে নিয়ে যাবে! তাছাড়া এ ঘরে সকলে মিলে দেখবার সুবিধে । স্বরূপকুমারের বড় মেয়ে বলল, তোমরা কথা বল না, আমরা সাউন্ড কমিয়ে খেলা দেখব ।
বলে সে টিভি প্রায় নিঃশব্দ করে দিল ।
বড়দের সিরিয়াস কথার মধ্যে ছোটদের উপস্থিতি নিয়ে স্বরূপ কিছু বলতে যাচ্ছিল, অরূপ তাকে হাতের ইঙ্গিতে থামিয়ে দিয়ে আগের কথার জের ধরলেন— আমি যে বছর চলে এলাম, আমাদের বলতে হবে, সে বছর আমি ওখানে থাকতে থাকতেই অনল আমাদের তাড়াবার ষড়যন্ত্র করে । রীতিমতো অত্যাচার শুরু করে । আমি ওর অত্যাচারের একটা নমুনা ভেবেছি । আমরা বলব, একদিন রাতে আমরা যখন ঘুমোচ্ছি, অনল আমাদের পায়খানার ময়লা-ভরা গামলাটা আমাদের রান্নাঘরে টেনে এনে মেঝের ওপর উল্টে দেয় । ওর এইসব অত্যাচার দিনে দিনে বাড়তে থাকে । অসহ্য হওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে একে একে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে আসি ।
অভিরূপ বলল, শ্রীরামপুরে কি খাটা পায়খানা আছে?
—তখন ছিল । তাহলে বলি, গত মাসে কোর্ট যখন কমিশন বসায় তখন এটা কমিশনের কাছে রেকর্ড করানো হয়নি । গত হপ্তায় আমাদের উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশনের উকিলকে আর অনলের উকিলকে একটু মিষ্টিমুখ করিয়ে এই কমপ্লেনটা ইনসার্ট করিয়ে দিয়েছি । অত্যাচারের ঘটনার সাক্ষী হিসেবে দুর্গার ছেলেটার নামও দিয়ে দিয়েছি । আমি বাড়ি ছাড়বার আগে সুবল কিছুদিন তোদের বৌদির কাছে এসে ছিল । ওর তখন আট-ন’বছর বয়েস ।
স্বরূপের ছোট মেয়ে নন্দিনীর বয়েস পনেরো । সে মোটেই খেলা দেখছে না, কেউ লক্ষ করেনি । হঠাৎ প্রায় একটা আশ্চর্য সুন্দর সারসের মতো সে বড় জেঠুর কাছে এগিয়ে গিলে বলল, জেঠু, উইল ইউ প্লিজ টেল মি হোয়াই ছোটকা টেক্স অল দা ট্রাবল— তোমরা একবার ভেবে দেখেছ— ছোটকা কেন একটা অ্যাবানডান্ট হাউসে পড়ে থাকে? কেন রাত জেগে বসে বসে বার্নিং ঘাটের লোকদের কাছে কাঠ বিক্রি করে? জাস্ট টু আর্ন হিজ ব্রেড! ইজ নট ইট?
ঘরসুদ্ধ বড়রা বোবা । দু-এক মুহূর্ত কেউ কিছু বলে উঠতে পারল না । সেই সুযোগে নন্দিনী আবার বলল, অল অব ইউ আর হিজ এল্ডার ব্রাদার্স । হি ইজ দ্য ইয়াংগেস্ট অব অল । ওকে তোমরা তাহলে কেন প্রত্যেকে ফিফটি রুপিজ পার মানথ দাও না? ইভন হোয়াই নট হান্ড্রেড রুপিজ ইচ? দেখবে ছোটকা তখন তোমাদের কত ভালোবাসবে । বাড়িতেও আর ওই সব খারাপ কাজ করবে না । আমি বলছি— দেখো—
অরূপকুমারের হতভম্ব ভাব পুরো কেটে গেছে, তিনি বোধহয় রাগে ফেটে পড়তে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই গেটে উকিলবাবুর মরিস মাইনরের আওয়াজে তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে কেবল বাড়ির ভেতরের উদ্দেশে একটি হাঁক ছাড়লেন— মেজবউমা!
মেজবউ পাশের ঘরে বোধহয় খুব হাসি-ঠাট্টার মধ্যে ছিলেন, মুখের হাসি প্রাণপণে মুছতে মুছতে তিনি দৌড়ে এলেন ।
অরূপ নন্দিনীর দিকে আঙুল তুলে খুব স্বাভাবিক গলায় বললেন, একে নিয়ে যাও ।
উকিলবাবু ঘরে ঢুকতেই অরূপকুমার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আসুন, আসুন । বসুন ।
উকিলবাবু একবার সকলের মুখে চোখ বুলিয়ে সোফায় বসতে বসতে বললেন, এঁদের মধ্যে কোনজন আপনার ব্রাদার-ইন-ল?
অরূপকুমার বললেন, ট্রেনের গোলমালে দুর্গার একটু দেরি হচ্ছে, এবার এসে যাবে । এদের আমি আপনার সেই পয়েন্টটা বোঝাচ্ছিলাম । এরা সব আমার ভাই ।
৪
গঙ্গায়, গঙ্গার ঘাটে দুই পারে পুরোপুরি সন্ধে নেমেছে । আকাশে তারা নেই ।
সুবল হাঁটুতে মুখগুঁজে বসে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে । একটানা মেঘলা সন্ধ্যার মধ্যে নিমাইতীর্থ ঘাট ঝাঁক ঝাঁক জোনাকির মতো আলোয় সেজে দূর থেকে কাছে এসে আবার পিছনে চলে গেল । সুবল জানতে পারল না ।
—নিমাইতীর্থ ঘাটে লোকেরা বাঁক সাজাচ্ছে, তুই তো কিছুই দেখছিস না, এবার সব পায়ে হেঁটে তারকেশ্বর যাবে ।
সুবলের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে দুর্গাপদ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ রেগে উঠল সুবলের ওপর । না নিজের ওপর কে জানে? বলল, নৌকোয় এত সময় লাগবে আমি জানতাম নাকি? তোর কথা ভেবেই আমি নৌকোয় যাওয়া ঠিক করলাম । কোথায় তর-তর করে এগিয়ে যাবে, তা না, যেন গরুর গাড়ি চলেছে! এ গঙ্গা সে গঙ্গাই না! একটা শিক্ষা হল বটে! মাঝি ব্যাটারাও তেমনই! দাঁড় মারছে, না হাতা দিয়ে পায়েস রাঁধছে!
বাবার চড়া গলার কথায় সুবলের তন্দ্রা ভেঙে গেল । সে মাথা তুলে এপাশ ওপাশ দেখে নিয়ে বলল, ভদ্রেশ্বর যেতে আমার ইচ্ছে করছে না ।
—তা বললে হয়? তোর মামারা সব এসেছেন । বড়মামা অত করে লিখেছেন!
—আমাকে ফেরার ট্রেনে তুলে দিয়ে তুমি যাও ।
দুর্গাপদ প্রায় ধমকে ওঠে— তোর হল কী বল তো?
সুবল আবার হাঁটুতে মুখ গুঁজল ।
লোকালয় ছাড়িয়ে নদী এবার একটু চওড়া । বাঁ দিকের তীর ঘেঁসে অন্ধকার গাছপালা । ঘরবাড়ি থাকলেও চোখে পড়ে না । দাঁড়ের শব্দ আর নদীর ছলছলানি ছাড়া কোথাও কোনও শব্দ নেই ।
দুর্গাপদর সস্তা, দামী-দুরকম সিগারেটই শেষ । এতটা সময় লাগবে সে ভাবেনি । মাঝিদের কাছ থেকে একটা বিড়ি চেয়ে নিলে হয় । হালের মাঝি একটু আগেই বিড়ি খেয়েছে, দুর্গাপদ গন্ধ পেয়েছিল । কিন্তু সুবলের সামনে ঠিক হবে না । সে সামনের মাঝিকে রাগ চেপে নরম গলায় বলল, কী রে, রাত যে কাবার করে ফেললি! আর পনেরো মিনিটে পৌঁছে দে তো দেখি!
নৌকো অনেকটা বাঁ দিকের তীর ঘেঁসে চলেছে । দুর্গাপদর মনে নানা চিন্তা । হরির বউ চাবিঅলা ডেকে ডুপ্লিকেট চাবি বানাচ্ছে না তো? একটু আগে কিছুটা অন্যমনস্কভাবে সামনের অন্ধকার স্রোতে সে একটা জোর পতনের শব্দ শুনেছে, দ্বিতীয়বার একই রকম শব্দ শুনে মাঝিকে জিজ্ঞেস করল, কিসের শব্দ রে?
মাঝি তাল মিলিয়ে দাঁড় বাইতে বাইতে বাইতে বলল, গঙ্গার পাড় ভাঙছে । ভাঙনের শব্দ কখনও শোনেননি নাকি?
দুর্গাপদ এই সামান্য কথায় প্রায় খেঁকিয়ে উঠল— তোকে আর শেখাতে হবে না! জোরে জোরে দাঁড় টান । চ’রে সুবল, এসে গেলাম বলে ।
মাঝিকে বকা সুবলের ভালো লাগেনি । বাবার বিরুদ্ধে তার মনে কী রকম একটা আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে । এক ধরনের প্রতিবাদ থেকে সুবল মনে মনে ভাবল নদীর বিষয়ে মাঝি জানে না তো কে জানে!
নৌকো ঝাঁকুনি খাচ্ছে, ডাঙা ছুঁতে আর অল্পই বাকি ।
প্রথম প্রকাশ: শারদীয় যুগান্তর, ১৯৯৩
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন